ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০

সম্পাদকীয় কলমে - শোভন অধিকারী

 

সম্পাদকীয় কলম:

শোভন অধিকারী

জন্ম, মৃত্যু, জরা, ব্যাধি এই চারটি প্রকারভেদের বিবর্তনেই ঘুরপাক খাচ্ছে গোটা জীব জগত। চাইলেও আমরা এটাকে এড়াতে পারব না, শেষের তিনটি বাস্তব অনেকটাই রুঢ়  যা ঘড়ির ঘন্টা সেকেন্ডের কাঁটা, হাসি- কান্না, ধনী – গরীব  কোনো পরিস্থিতি ই সে মানে না গর্জাতে না পারলেও নিয়তি মাফিক সে বর্ষাতে জানে। কালের নিয়মে বিনা মেঘে নামিয়ে আনে বজ্রপাতের ঘন্টা না আমরা সমাজের উন্নতম জীব হয়েও তাকে রুখতে পারিনা শত চেষ্টা করেও।তবে যেটা পারি সেটা হলো কম সময়ে রঙ্গ মঞ্চে নিজেকে ভালো রাখা সকলকে ভালোবাসা জীবনের চক্রবূহ্যে একটা পরিপূর্ণতার ছাপ রেখে যাওয়া। 




সাপ্তাহিক কলমে - সুনন্দ মন্ডল



  ত্রিতাপ ক্লেশ

  সুনন্দ মন্ডল


ক্লেশ মানেই জীবনের জাগতিক প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত। 

এক হস্তী শাবক

যার বড় বড় দাঁত, বিশাল দেহ কিংবা ঐ মোটা মোটা পায়ের ছাপ,

তবুও কিছু একটা থেকে বঞ্চিত!

তারও দুঃখ আছে, ক্লেশ আছে।


ভাষা জানি না, তাই ওদের কষ্ট বুঝিও না।

অবশ্য সব প্রাণীদেরই একই অবস্থা।

আসলে কথায় আছে না!

যে যা পায়, তা চায় না! 

আর যে যা চায়, তা পায় না।


আমরা তো নিমিত্ত মানুষ

কেবলই আত্মসুখে মগ্ন

একটু এদিক ওদিক হলেই 

বিস্বাদে ডুবিয়ে রাখি নিজেদের।


আমরা বুঝতেই চায় না, এই সমাজ ও প্রকৃতির সুখ পেতে গেলে স্বল্পতায় আবদ্ধ রাখতে হবে।

কোনোরকম অন্তহীন উচ্চাশা মানেই বঞ্চনা, হতাশা!


প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত দুঃখ হোক,

আর অন্য জীবের দ্বারা প্রাপ্ত অবহেলা

কিংবা নিজস্ব মন ও শরীর জাত কষ্টই হোক!

সবকিছুর মূলে আত্মদর্শন।


এই জরা থেকে মুক্তি পেতে গেলে বিলিয়ে দিতে হবে  সমাজদর্শনে, 

সবার মাঝে বিশ্বপ্রকৃতির সবুজ দোলনায়।

ভালোবাসতে হবে, দুঃখীদেরও আপন করতে হবে!

তখনই ত্রিতাপ ক্লেশ নয়, জাগতিক সুখটুকুই থেকে যাবে আমৃত্যু।

               





সাপ্তাহিক কলমে - পাখি পাল


"দুঃখের কিছু দাগ"

  পাখি পাল


আমি বলি দুঃখ,তুমি বলো কষ্ট,

সে বলে যন্ত্রনা, সত্যি এগুলো

ছাড়া জীবন ভাবাই যায় না,

প্রতিটা দিন মানুষ তো বাঁচতেই চায় নিজের মতো করে, কিন্তু কষ্ট-দুঃখ গুলো

তার পায়ে বেড়ির মতোই 

জড়িয়ে থাকে, পিছুটানে,

শিকলের দাগ যেমন লেগে

থাকে হাতে-পায়ে,ঠিক তেমনি

অদৃশ্যভাবে দুঃখের দাগ গুলো লেগে থাকে স্মৃতির গালিচায়, 

যেন প্রতিবার তারা আঘাত করে আমাদের মনোবল ভাঙতে চায়,

মনের গায়ে শত শত চাবুকের দাগ..দগদগে ক্ষত,

চোখ দুটো বুজে আসে, তবু ফুসফুস শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা চালায় অবিরত,

সাতরঙা রঙধনু ভাসে অল্পের জন্য,

জীবন-আকাশে রোদ-বৃষ্টির খেলায়,

এভাবেই চলে প্রতিনিয়ত বাঁচার লড়াই,

আর একটু..আর একটু..করে মনবলের চেষ্টায় ।





সাপ্তাহিক কলমে - শ্রেয়া রায়

 

অনুগল্প:-

শিরোনাম:-"ফিরে পাওয়া"

শ্রেয়া রায়



চার বছরের একটি ছোট্ট মেয়ে..গীত তার মায়ের সাথে দীঘার সমুদ্রের কাছে একটি ছোট্ট কুটিরে বাস করত। তার মা সমুদ্র থেকে মাছ ধরে তা বাজারে গিয়ে বিক্রি করতো এবং তা দিয়েই কোনো রকমে তাদের  দুজনের পেট চলত। মা আর মেয়ের দুনিয়াটা ছিল ভীষণ ছোট। আপনজন বলতে কেউই ছিল না। মায়ের সাথে সারাদিন গীত থাকতো, মা যেখানে যেখানে যেত গীতও মায়ের সাথে সাথে সেখানে যেত। সারাদিন কাজকর্মের পর সন্ধ্যা বেলা বাড়ি ফিরে আসত এবং রাতে ছোট্ট গীত মায়ের সাথে সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে বিভিন্ন গল্পে মেতে থাকতো। এই ভাবেই কেটে যেত তাদের সময়।


হঠাৎ একদিন এক ঝড় উঠল এবং তছনছ হয়ে গেল তাদের সাজানো জগৎ... স্বপ্নগুলো টুকরো টুকরো হয়ে গেল... বিচ্ছিন্ন করে দিলো তাদের এক দস্যু ঢেউ... ঘরবাড়ি তলিয়ে গেল জলের তলায়। মা আগলে রাখতে পারলেন না তাঁর ছোট্ট সন্তানটিকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেড়ে নিল সন্তানকে মায়ের কাছ থেকে। দিশেহারা মা পাগলের মত ঢেউয়ের সাথে লড়তে লড়তে সন্তানকে খুঁজে বেড়াতে লাগলেন... কিন্তু বারংবার চেষ্টার সত্বেও পেলেন না ছোট্ট শিশুটিকে খুঁজে। অবশেষে জ্ঞান হারিয়ে মা পড়ে রইলেন সমুদ্রের এক পাড়ে। এই ভাবেই কেটে গেল সেই দুর্যোগের দিনটা।


পরের দিন সকাল হতেই প্রথম সূর্যের কিরণে চোখ খুললেন মা.. চোখ খুলতেই সমুদ্রের চারপাশে তাকিয়ে দেখেন, তছনছ হয়ে গেছে সমস্ত কিছু, সবকিছুর ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে সমুদ্রের পাড়ে। তার মধ্যেই মা আবার অক্লান্ত ভাবে খুঁজে চলেছেন তার ছোট্ট শিশুটিকে। হঠাৎ এক পাশে দেখতে পেলেন তার শিশুটি অবচেতন ভাবে পড়ে রয়েছে। মা হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলেন শিশুটিকে দেখে এবং চিৎকার করে ডাকতে থাকলেন..জাগাতে থাকলেন তার সন্তানকে।অবশেষে মায়ের ডাকে চোখ খুলল ছোট্ট গীত এবং মা সন্তানটিকে বুকে আঁকড়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠে বললেন...

"শুনেছিলাম সমুদ্র যা কিছু নেয় তা সবই আবার ফিরিয়ে দিয়ে যায়... আজ তা স্বচক্ষে উপলব্ধি করতে পারলাম।"