ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

রবিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২১

 

শক্তি রূপেন সংস্থিতা..
শুভঙ্কর নস্কর




ভোর তখন ৪টে, মন্ডল বাড়ির রেডিওতে ভৈরবী রাগের সুর ভেসে আসছে।শুক্লা বাগদি বিছানার পাশে থাকা কেরোসিন লম্ফ'টাকে জ্বালিয়ে ঘুম জড়ানো চোখে উঠে পড়ে।উঠানের এক কোণে রয়েছে মাটির বেশ বড়ো পাত্র, সেখানে জাগানো রয়েছে বেশ কিছু লোনা প্রজাতির মাছ - বোরো, চোখ ডেমরা, গুলে, কেরালে, সোনা বোগো, সোনাবেলে প্রভৃতি।

শহুরে বাবুরা এগুলো দিয়ে তাদের অ্যাকোরিয়ামের শোভা বর্ধন করেন এবং খাদ্য গুনে সমৃদ্ধ হওয়ায় তাদের রসনা তৃপ্তিও করে থাকে। চার সন্তানের  এই ভরা সংসারে শুক্লার মৎস‍্য বিকিকিনিতে দু-পয়সা হাতে আসে।  সংসার ঘানির এই সুকঠিন ভারটা সে নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছে।

ক্যানিং থেকে ট্রেন ছাড়বে ভোর ৫ টায় তাই শুক্লার তাড়াও বেশ,কারণ সঠিক সময়ে শহরে এ মাছ পৌঁছে দিলে তবেই না সঠিক দাম পাবে।
বিরামহীন পথের সন্ধানী শুক্লা পথ চলতে থাকে ... গ্রামের পথ শেষে শুরু হয়েছে নদীর সরু পাড় , বেলে মাটির মধ্যে  তিরের ফলার মতো লুকিয়ে থাকা ঝিনুকও (জোমরা, কস্তুরো) পায়ের তলার কোমলতায় বারংবার আঘাত হেনে চলেছে কিন্তু শুক্লার গতি তাতে শ্লথ হওয়ার নয় ...।

পূব আকাশে নির্মল রক্তিম সূর্য-রশ্মির ছটায়  তন্দ্রালু পৃথিবী জেগে উঠছে ।এতোক্ষণে শুক্লা ও তার সাথী জেলেরা পৌঁছয় মৌখলির ঘাটে।এখান থেকে নৌকো ছেড়ে চালকড়ের কুল বেয়ে  মাতলা নদীর বুক চিরে  পৌঁছে যায় লর্ড ক্যানিং-এর পুরাতন নৌকা-ঘাটে। রোজ সাধন মাঝি নৌকা ছেড়েই দু-কলি ভাটিয়ালি গান ধরে..

"নাও ছাড়িয়া দে ,পাল উড়াইয়া দে / ছলছলিয়া চলুক রে নাও মাছ দরিয়া দিয়া, চলুক মাঝ দরিয়া দিয়া"

কিন্তু আজ যে  বিধি বাম।কারণ সাধন খুড়োর দেখা কই।মাথায় মাছের হাঁড়ির ভার  মুহূর্তে যেন বেড়ে যায় শুক্লার।অবস্থার গত্যন্তর বুঝে তার সঙ্গিনীরা ঘরের উদ্দেশ্য-এ রওনা দেওয়া শুরু করে কিন্তু শুক্লার মনে চলতে থাকে অন্য খেলা।মনস্থির করে ফেলে আজ সে মাতলার মাতাল জলরাশি সাঁতরে পার করে ওই কূলে পৌঁছবে।তার সঙ্গী মেনকা বাগদী ফিরে চলার অনুরোধ উপেক্ষা করে শুক্লা বলে- 'তুই ঘরে যা ম‍্যানকা, আমারে যে আজ  যেতিই হবে ওপারে'।


সাথে সাথেই পরনের আটপৌরে কোমর পিঠের কাপড়কে সে খাটো করে  জড়িয়ে নেয় কোমরে , মনের মধ্যে যেন যুদ্ধ জয় করার দৃঢ়তা অনুভব করে ।মাছের হাঁড়ি'কে সে ভাসিয়ে দেয় গঙ্গার বুকে ,সাথে নিজেও ঝাঁপিয়ে পড়ে মাতাল জলরাশির উপর। পাড়ের উপর থেকে মেনকা হাঁক পাড়ে - 'শুক্লা... তুই যাসনে ...ফিরে আয়...শুক্লা।'
কিন্তু শুক্লা আজ যেন 'মনসা মঙ্গল'-এর বেহুলা,  যে মা-গঙ্গার বুকে ভেলা ভাসিয়েছে,তার তিলে তিলে গড়ে তোলা সংসার-কে  বাঁচানোর জন্য। দেবী শক্তির প্রতিভূ হয়ে সে মাতলার দুরন্ত অগণিত ঢেউকে দু'পায়ে ঝাপটে পরাহত করে এগিয়ে চলে...।

 সম্পাদকীয় কলম




নমস্কার,

প্রথমেই সকলকে জানাই উৎসবের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। জলফড়িং ওয়েব ম্যাগাজিন-এর এবার তৃতীয় সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে নির্বাচিত বিষয় ছিল-"দেবী শক্তি"। আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গার একটি রূপ। শাক্তমতে তিনি বিশ্বব্রম্ভান্ড সৃষ্টির আদি কারণ। দেশবাসী যখন দেবী শক্তির আরাধনায় ব্রতী, তখন আমাদের জলফড়িং-ও লেখনী-পুষ্পে তার সাজি ভরিয়ে মাতৃ-চরণে নিবেদন করেছে তার ভক্তি ভরা প্রণাম আর জানিয়েছে আগামী দিনে সকলের সাথে এগিয়ে চলার প্রার্থনা।।


ধন্যবাদান্তে,

জয়ীতা চ্যাটার্জী ও পাখি পাল (যুগ্ম সম্পাদিকা)

 তুমি মা, তুমি শক্তি

পাখি পাল





তুমি মুক্তি, তুমি শক্তি

তুমি জাগ্রত ঈশ্বর,

তুমিই সকল যুক্তি দিয়ে

নিজেকে করেছো নশ্বর,

তুমি লক্ষ্মী, তুমি গঙ্গা

তুমিই পরম পবিত্র,

অসহ্য যন্ত্রনা সয়েও

টিকে আছো যত্রতত্র,

তুমি আলো, তুমি ভালো

তুমি যে সুমধুর ভাষিনি

তুমি মা , তুমি দেবী

তুমিই অশুভ বিনাশিনী।।


   

 

কালী বলে ডাকে
জয়দীপ রায়



এ কেমন মেয়ে
যে রাঁধতে জানে না
চুল বাঁধতে জানে না।
এলোমেলো মেলোড্রামায়
ভাসতে জানে,
নেশায় উন্মত্ত উন্মুক্ত
পঞ্চভূত ডুবে থাকে অন্ধকারে।
এ কেমন মেয়ে!
ভালোবাসতে জানে না
বাসা খোঁজে খড়কুটোয়
এদের কেউ কাছে টানেনা,
কাছে ডাকেনা..
এড়িয়ে চলে ছায়া মাড়ায় না
তবে এরা অবলা নয়
চুপ থাকেনা,
আশ্রয় হীন! তবে পরশ্রীকাতর নয়
আপোস মানে না
লুটিয়ে পড়েনা।
এরা অন্য এরা বন্য
দাপিয়ে বেড়ায়।
দাবিয়ে রাখতে জানে
এরা চণ্ডাল রূপ ধরে
এদের গর্জনে কেঁপে  ওঠে রূহু
শুনেছি এদের নাকি
লোকে কালী বলে ডাকে।

কবিতাঃ- জোনাকি

 বিশ্বনাথ দাস 




সৌন্দর্য খুঁজতে খুঁজতে জীবন ফেলে 

পালানোর কৃতিত্ব নেই কোনো

দাঁত বসিয়ে বিশ্বাস ভেঙেছো সামান্য নির্ভরতায় 

অস্তিত্বের বিষন্নতা নিয়ে নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দেখো চেনা মানুষ কেমন অচেনা অচেনা--- 

এক এক করে হারিয়ে যায় অনেক কিছু 

তবুও জীবন জীবন খোঁজে 

গানে গানে ভোরের পাখি শিস দেয় দিন আনে 

তোমার বিকলাঙ্গ মন না বুঝে ঘর পাল্টায় 

আমি শেষবারের মতো মিলিয়ে নিতে নিতে দেখি আমার বিশ্বাস মাটিতে মিশে যায় কথায় কথায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্লাস 

জলদার  চায়ের দোকান 

জুরোনো চায়ে চুমুক 

পা তুলে বেঞ্চে বসা 

সবই অতীত সেসব দিন 

দুজনেই দেখেছি দুজনার চোখের জল 

দেখেছি বাংলার মা সকল 

শুরু দুহাত দশ  কোরে  দেবীপক্ষ 

আমাদের উমাতে

পাখির প্রভাতে 

এইটুকু শুধু জেনে রাখো

 আরক্ত সন্ধ্যায় 

তুমি আজ পরাভূত---