ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১

এবারের কবিতার বিষয় ছিলো ভালোবাসা



সম্পাদকীয় কলম

নমস্কার,

            প্রথমেই সকলকে জানাই ভালোবাসা ভরা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমাদের সকলের আদরের 'জলফড়িং' ওয়েব ম্যাগাজিনের এবার চতুর্থ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে নির্বাচিত বিষয় ছিল-"ভালোবাসা"। হ্যাঁ এই মন্দবাসার দেশে যেটার ভীষণ অভাব। তবু ভালোবাসা পেতে কে না ভালোবাসি। এই ভালোবাসা নিয়ে বিভিন্নজনের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এবারের সংখ্যায় আমাদের 'জলফড়িং', পরিবারের ভিন্ন ভিন্ন সদস্যের নিজ নিজ অনুভূতি মিশ্রিত লেখনী সম্ভারে সজ্জিত হয়ে ভালোবাসার রঙে নিজেকে রাঙিয়ে মেলে দিয়েছে তার ডানা আরও আরও ভালোবাসা পাওয়ার আশায়।।



ধন্যবাদান্তে,

জয়ীতা চ্যাটার্জী ও পাখি পাল(যুগ্ম সম্পাদিকা)



১.)

ভালোবাসা

কলমেঃ- সুরভী চ্যাটার্জী


ও চোখের গহীন সাগরে 

প্রেম ঢেলেছিলাম ।

এই হৃদয়ের মরুতে

জাগিয়ে দিলে বাসনার নির্লজ্জতা..

তোমার কূলপ্লাবিনী শব্দোচ্ছ্বাসে

উতল এ মন বোধে নির্বোধে হলো স্বপনচারিনী

মন থেকে মনান্তরে  বাঁধল গিঁট

ভালোবাসা...


 ২.)

সেই প্রথম দিনটা

কলমেঃ- সাত্যকি সর্বাধিকারী


তোর সদ্য দেখা হাসি,

গভীর চোখের ওপর ঘন চুলের রাশি,

হাতের ওপর নরম হাতের ছোঁয়া,

কখনও বা হাতের ওপর এলিয়ে দেওয়া মাথা;

অনেক কথা বলার পরেও

না বলতে পারা অনেক কথা।


বসন্তের ওই উষ্ণ বিকেলে

কফি হাউসের ওই একটা টেবিলে,

একে অপরের দিকে চেয়ে বসে থাকা

যেন জলছবি।


হাতের ওপর ঠোঁটের নরম স্পর্শ,

ডুবিয়েছে অনুভূতির ঘোরে;

হাত ধরে এতটা রাস্তা হাঁটা,

আর গল্প-হাসি-ঠাট্টা,

এইরকমই থাকিস আর

আজীবন এইভাবেই ধরে রাখিস হাতটা।।



৩.) 

চাইলেই পারবো না..

কলমেঃ- জয়দীপ রায়


আনমনা হয়ে ইনবক্সের ম্যাসেজগুলো চেক করছিলাম,

হঠাৎ ঈশান কোণ বেয়ে একটা ঢেউ খেলানো রোদ

এসে পড়লো গালে,

অনুভূতি'টা চেনা খুব পুরোনো ছন্দের মতো,

আগে হলে চটপট লিখে রাখতাম ভালোবেসে।

এখন আর ইচ্ছেগুলো জাগে না ,

ঘুমিয়ে আছে বেশ জিয়ন কাঠির ছোঁয়ায়,

ইচ্ছে করে না প্রিয় ফাউন্টেন পেন'টা 

দোয়াতে চোবাতে।

মনের বিপরীত কোণ'টা প্রশ্ন করলো.. 

তাহলে একে ফেলে দিস না কেন ?

গলা খাঁকিয়ে বললাম,

উপহার'টা যে শুধু উপহার নয়

প্রিয় অনুভূতিও বটে।

চাইলেও পারবো না..

অজানা অধিকার আঁকড়ে আছে,

আজও পেন্সিল বাক্স'টা জুড়ে..।।


৪.)

এবং ভালোবাসা

কলমেঃ- শুভঙ্কর নস্কর




যখন তুমি পঞ্চভূতের কায়ায়

আঁতুর ঘরে জন্ম নিয়ে এলে,

মিষ্টি মুখের মিষ্টি হাসি দিয়ে

জগৎটাকে ভরিয়ে তুমি দিলে।


বাল্যকালের ওই যে মিষ্টি প্রেমে,

আদর শুধু আদর মাখা গালে

ভালোবাসা মুঠোয় ভরে তুমি

কুড়িয়ে গেলে অজান্তে-অক্লেশে।


যখন তোমার কৈশোরেতে প্রবেশ,

হাজার খুশির ভাবনা অশেষ,

বন্ধু-প্রীতির মাঝে তোমার

প্রেম হয়ে যায় ইতি। 


যৌবনেতে যখন ভাসলো ভেলা,

হাল ধরে বায় মন-মাঝি আজ

পাড়ের পানে তরীর খেলা 

নিত্যকে দেয় নাড়া।


শেষ বেলাতে ভালোবাসা

করুণ আঁখি মুদে,

মৃত্যুকে পান করার আশায়

ভালোবেসে ডাকে।

বেলাশেষের আলগা মুষ্টি

উদার কেবল উদার

দু-হাত ভরে, আশীর্বাদে

ভরিয়ে যে দেয় দেদার ।


৫.)

 ভালোবাসা

কলমেঃ- বিশ্বনাথ দাস


 সৎ জীবন বড্ড ভয় জন্ম দেয় আজকাল,

আগে এমনটা ছিল না..  ছায়া ঢাকা মুখ, বোকার তকমা, মন্থর চলন, না বোঝা চাউনি -এসব শুনে শুনে খাঁচার পাখির মতন ডানা ঝাপটায় মন ,

অথচ গাছ ,রাস্তার কুকুর  অদূরে মগডালে বসা লম্বা লেজওলা পাখিটা দেখে..তুমি  কুয়াশায় ঝাপসা হয়ে

যাও দিনের আলোতে---

 অবাক হই তোমার দিনরাত দেখে,

ছলে আর কৌশলে ভালোবাসা তোমার অবিশ্বাসের অন্ধকার 

ঘোষণা করেছো মৃত।

 ঐ দেখো মানুষটাকে---

মনে পড়ে কেমন দুলকি চাল নিয়ে বাড়ি ফিরতো..

আগুন নির্জন দুপুরে ভেজা শরীরে

তারপর--


বাতাস একটা ভুল প্রেমের কবিতা শুনিয়ে উধাও ,

তবু আজও 

তোমার গন্ধ বাতাসে অনুসরণ করে নিজের মধ্যে নিশ্চুপ থেকে সর্বনাশের মাঝখানে দাঁড়িয়ে একা একা ভাবি

মরিনি আমি,আমার অস্তিত্ব মরেনি!

 তবু কেন জীবনটাকে অমনোনীত কবিতা বলে মনে হয় আজকাল, 

মনে হয় যদি গাইতে পারতাম ছুটন্ত ট্রেনের গান পারতাম হতে ভুতুম ভগবান---



৬.) 

ভালোবাসা

কলমেঃ- গোবিন্দ নস্কর


 একদিন সন্ধ্যায়

     কোকিল এসে

    বললো কানে কানে

জানো তো ভাই তোমার উনি

    ব‍্যস্ত থাকেন ফোনে।


সত্যি বলছি রাগ করিনি

   কেন জানো তুমি?

কারণ আমার বিশ্বাস ছিল

ব‍্যর্থ হবে না প্রেম জানি।।


অনুভূতি'গুলো বলা হলো না

   ভাষা হারিয়েছি আমি

দুঃখে-কষ্টে ভরিয়ে দিলে

সাজানো বাগান তুমি।।


ভাবনা ছিল একদিন

     নিরালায় বসে

বলবো মনের কথা

ঝুলির ভিতর লুকানো আমার

    প্রেমের গোপন খাতা।


হলো না আর কিছুই

নিজের দেখা স্বপ্নগুলো

আবছা হলো সবই।


ভেবেছিলাম ওর অতীত ভুলিয়ে

       বর্তমানে বাঁচবো

কল্পনাতে থেকেই গেল

অন্ধকারে খুঁজবো।


অপেক্ষা করবো তোমার জন্য

  যদি আসো কখনো ফিরে

সেদিনও তুমি থাকবে আমার

      মনের হৃদয় জুড়ে।


আজ পড়েছো যার প্রেমে

কাল সে'তো যাবে ভুলে

আমার কথা মিলিয়ে নিও

কয়েকটা দিন গেলে।।


রাখবো আমি হাত বাড়িয়ে

       ধরতে যদি চাও,

মনে মনে আমিও ভাবি

   আমায় তুমি পাও।


ভালোবাসার সিংহাসনে

বসিয়ে তোমায় রাখবো

তোমার ছবি মনে নিয়ে

যতদিন আমি বাঁচবো।


সুখে থেকো তার প্রেমে

      জড়িয়ে ওর বুক

আমি না হয় তোমার থেকে

     সরিয়ে নেবো মুখ।।


৭.) 

সংগ্রামী চেতনায় প্রেমজ পরিচ্ছেদ 

কলমেঃ- সুনন্দ মন্ডল 


সংসারের চৌহদ্দি থেকে বেরিয়ে এসো,

কিছু ভুল আর ঠিকের সংগ্রাম 

আর বিষন্ন বিকেলের দরজা ছাড়িয়ে

দাঁড়িয়ে আছে রাত। 


উত্তীর্ণ বিছানায় একটুকরো প্রেম, 

আর আঁশটে গন্ধের ছাড়পত্রহীন কাঁথায়

গায়ে গায়ে লেপ্টে থাকে যৌবনিক বৃত্ত। 

মৌখিক আলাপের বেসুরো কাহিনিতে গাঁথা ভালবাসা। 


সংসারের চৌহদ্দি থেকে বেরিয়ে এসো,

চোখ মেলে দাও চোখে।

খুঁজে পাবে সারাদিনের ক্লান্তি আর হতাশার

জৈবনিক চরিতাবলী। 


সকালের ঠিকানায় মেলে দাও জোনাকি

পাখি হয়ে উড়ে যাক জীবন

সংগ্রামী চেতনার ভিড়ে একটুকরো বিনিময়ে  

বেঁচে থাকুক স্বামী-স্ত্রীর প্রেমজ পরিচ্ছেদ।


৮.)

ভালোবাসার রকমফের

কলমেঃ- পাখি পাল


চাকার তলায় পিষছে জীবন

তবু সিগন্যাল দেখে রাস্তা পার,

বাসা এখন হচ্ছে বদল

ভালো থাকাটা নাকি অঙ্গীকার।


সবুজ ঘাসে অশ্রু শিশির

সুস্থ থাকার অভাববোধ,

রাতের ক্ষত স্পষ্ট করে

ভোরের গায়ে নতুন রোদ।


বসন্তগুলো আগের মতোই

শিমুল, পলাশ ফোটায় ডালে,

শুধু চরিত্ররা পালটে যায়

ভালোবাসার মেঘের কোলে।।

     


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন