ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

মঙ্গলবার, ৩১ মার্চ, ২০২০

রিভিউ কলম "মুখার্জী দার বউ" কলমে অরূপ সরকার



ছবির নামঃ-
         মুখার্জি দার বউ 

উইন্ডোজ প্রোডাকশন 
প্রযোজকঃ- শিবপ্রসাদ,নন্দিতা
পরিচালনাঃ- পৃথা চক্রবর্তী 
চিত্রনাট্যঃ-  সাম্রাঞ্জী বন্দ্যোপাধ্যায়
সংগীতঃ-  ইন্দ্রদীপ দাসগুপ্ত 
চরিত্রঃ- কনীনিকার ব্যানার্জি,শংকর চক্রবর্তী  অনুসূয়া মজুমদার,
বাদশা মৈত্র,ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত  অপরাজিতা আঢ্য।

কিছু কিছু মানুষ  নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পাবার লড়াই চালায় ,বারবার হেরে গিয়েও উঠে দাঁড়ায়।
তবু তারা থেকে যায় অনামি । যেখানে তাদের পদবী টাই নিজের পরিচয় ,সেই পদবী টাও তাদের নিজের নয়। সেই গল্পই বারবার উপজীব্য হয়ে উঠেছে  এই ছবিতে।
যেখানে পুরুষতন্ত্র ও  নারীতন্ত্র  সমান্তরাল কিন্তু অসম।

প্রভুত্ব পিপাসা প্রতিটি মানুষের থাকে নিজের থেকে দুর্বলের প্রতি , সেই দুর্বলতা এই ছবিতে সাংকেতিক।  সমাজের নিজের তৈরী নিয়মেই বৈষম্য  তুমি ছেলে তোমার উপর সব দায়িত্ব , তুমি মেয়ে তুমি চাকরি করে করবে কী?  তোমার নিজের বাড়িও নেই।
সমাজের এই গতে বাঁধা ধারণার থেকেই উত্তরণের গল্প  "মুখার্জিদার বউ" ।

সাধারন মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প  একমাত্র রোজগেরে ছেলে শাশ্বত মুখার্জি (বিশ্বনাথ বসু) ,তার মা (অনুসূয়া মজুমদার) তার স্ত্রী  অদিতি(কণীনিকা  ব্যানার্জি) যিনি স্ত্রী ,মা ,পুত্রবধূ, যে  দায়িত্বের ভারে নিজের স্বপ্ন ভুলতে বসেছেন । যেখানে তার নিজের নামে ধুলো পড়ে যায় । স্বপ্ন  দেখে নিজের একক পরিচয়ের "নামটাই তো সব ,আমাদের নাম ধরে কজন ডাকে!" এই সংলাপেই স্পষ্ট হয় সমাজের চিত্রপট।

কিন্তু সে তার  স্বামী র সাথে চালিয়ে যায় সাম্যের ঠান্ডা লড়াই। Feminism এখানেই সার্থক ।

শাশুড়ির ভূমিকায় (অনুসূয়া মজুমদার ) যিনি  নিঃসঙ্গ। নিজে ভয় পান নিজের স্থান হারানোর । সমাজ তাকে যা দিয়েছে  তিনি ও সেটাই দিচ্ছেন তার পুত্রবধু কে।
দুই প্রজন্মের দুজনের বিরোধ হয় ।
অদিতি যার  বিনা অনুমতি তে নিজের  জিনিস  কেনারও অধিকার নেই। এখানে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে 'অনিতা দেশাইয়ের' একটি উপন্যাস যেখানে একজন স্ত্রীর  কোনো আধিকার থাকেনা স্বামীর টাকার উপরই।
আর একদিকে আছে পুতুল  (অপরাজিতা আঢ্য) যিনি অভিনয় করে যাচ্ছেন সব ঠিক আছের অতচ যার সম্পর্ক ছিঁড়ে গেছে।
সেও বেঁচে ওঠে  নিজের পরিচয়ে ।

আর দুই প্রজন্মের মধ্যে সেতুবন্ধনের  কাজ টা করে গেলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ  ডক্টর আরাত্রিকা ভট্টাচার্য।  গলল তাদের বরফ অর্থাৎ শ্বাশুড়ি এবং বৌমার কাছাকাছি আসল দুজন। এবং স্বামী স্ত্রীর যা বলা যেতো না তা বলে দিয়ে  পূর্ণ হল  তাদের না বলা কথা ।
ছবির শেষ অংশে দু জন নারীর ছক ভাঙা উত্তরণ যা  আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে শেষে  কবিতার ব্যবহারে।  এসবের পর বলতে হয় এজন্যই যোগ্য ছবি হিসেবে  মনোনীত হল জেন্ডার এন্ড সেনসিটিভিটি পুরস্কার । অতঃপর মুখার্জি দার বউ  হয়ে উঠল এক উত্তরণের গল্প ।     আর "মুখার্জি দার বউ" এভাবেই হয়ে উঠে এক সাম্যের  গল্প ।


🖋Arup sarkar

শনিবার, ২৮ মার্চ, ২০২০

আজ দাদার জন্মদিনে দাদার বই-এর রিভিউ দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাঠালাম জলফড়িং থেকে। অনেক অনেক ভালো থাকো আর যেটা বলার সেই একই কথা আজও বলব, দাদা তুমি বুড়ো হবে না শুধু বড়ো হয়ে যাও...আমাদের গান শুনিয়ে। তোমার সুসস্থা ও সাফল্য কামনা করি


অনুপম রায় এই নামটা বাংলার কাছে, বাঙালীর কাছে প্রথম সারির সুরকার, গীতিকার এবং একজন সুস্বাদু লিরিসিস্ট হিসেবে পরিচিত। যদি আমরা ধরে নিই যে বা যাঁরা গান লেখেন তারা কবি নন সেক্ষেত্রে আমি বলতে পারি অনুপম রায় দক্ষ কবি সেকথা আমরা খুব কম জন জানি। অনুপম রায়ের এবছরের কবিতার বই যা 'দেজ পাবলিশার্স' থেকে পাবলিশ করা হয়েছিল যার নাম "নিজের শব্দে কাজ করো"। এই বইটি পড়লে আমরা খুব সহজেই অনুপম রায়ের কবি স্বত্বার প্রকাশ পাবো।
"নিজের শব্দে কাজ করো" এই বই-এর শুরুতেই এক আহত রাতের কথা বলা আছে, সেই রাতে ছাতিমের সাদা ফুল ফোটে, রাত শজারুর শরীরের মতো রূপক হয়ে কাঁটা দেয় রাতের চাদরে।
যা আমরা একবারও খেয়াল করব না সেইসমস্ত কথায় এখানে যত্নে খেয়াল করে লেখা। যেমন, সেই রাতে অর্থাৎ "আহত রাত"-এ "ট্যাক্সি ঘুরছে" এবং "জিপিএস শোঁকে কুকুর"।
আবার কোনো দিন দ্বিতীয় "আহত রাত"-এর কথা বলতে গিয়ে কবি বললেন রাতের  পোকাগুলোর এক রাতের বেঁচে থাকা থাকার কথা তথা পতঙ্গের লাইফ স্প্যান, প্যাঁচারা রাত্রেবেলা দেখতে পায় তাই হয়তো কবি বলেছেন "প্যাঁচাগুলো মোমবাতি হয়ে গেছে"।
এমন এক "দুঃস্বপ্ন"-এ "পায়ের অজস্র শব্দ তেড়ে আসে হনহন করে" যা দেখে বাড়ি যেতে চাইলেও ফিরে যাওয়া কঠিন কারণ রাত কিছুতেই ফুরোছে না। রাতেরও যে কানির্শ হয় এবং তাতে জমে থাকে আঙুলের আহ্বান,   প্রেমিকাকে ছুঁতে চাওয়া তা বইটি না পড়লে জানা অসম্ভব।




দেহের রঙ বদলে যায় বাতাসের আর্দ্রতার সঙ্গে এমনই বললেন কবি, শুধু তাই নয় তিনি প্রশ্ন করেছেন "আমাকে বাঁধতে পারে এমন কোনো পারফিউম তুমি কেনো মাখোনি"?
তিনি বাস্তব কথা তুলে ধরেছেন গোটা বই জুড়ে তাই বলেছেন "যা কিছু আনন্দের তাই তো নিষিদ্ধ"।
বইটিতে রূপকের ব্যবহার এতোই চমৎকার যা পড়তে গিয়ে  আপনার মনের জানলা ফুটো করে আচমকা অন্ধকার ভেজা কিছু বৃষ্টির পেরেক ঢুকে পড়বে যা আপনাকে আপনার চোখের সামনে বইতে বর্ণিত সমস্ত ঘটনা ছবির মতো ফুটিয়ে তুলবে এবং আপনি স্পষ্ট দেখতে পাবেন "দীর্ঘ বছর রাত জাগলে শরীর, মন আইনসম্মত ভাবে বাড়ে না"।
কবির প্রশ্ন এমনই মাধুর্যময়, তাই তিনি বলেছেন "রাতের রেললাইনে এতো আলো এলো কথা থেকে?"
সব চাকা গোনা যায়, দেখা যায় কেনো?"
সত্যিই'তো রাত মানে আমরা অন্ধকারকে বুঝি তাহলে রাতের রেললাইনে কেনো চাকা গোনা যাবে?
ধীরে ধীরে সব কিছু ফাঁকা হয়ে আসে, একজন ব্যর্থ মানুষ যার সমস্তটাই ফাঁকা, যার "এনার্জি মৃত ভাবনার পাহাড়ে পরিণত হয়" "তার দিনের বেলা বড্ড খিদে পায়" "আবার রাতের কথা কিচ্ছু থাকে না মনে"। এইরকমই এক চরম বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন কবি তাঁর এই বইতে।
তারপর আমরা দেখব "একটা শুকনো টেবিল থেকে রাত গড়িয়ে পড়ছে" আর "সমস্ত লোডশেডিং-এর অস্হির রাজ্যে অলৌকিক আনন্দে ছড়ায় টেনশন" অথচ টের পেলো না "খাকিদেহ পুলিশের মতো যারা বীর, শুধু সাধু ভাষাতেই যারা লড়ি চালকের কানে কানে চলে যায়, " "টের পেলো না সমস্ত বুড়োমানুষের বেডসোর"। বেডসোর-এর টের পাওয়ার কথা আমরা কখনও ভেবেছি? অথচ কবি ভেবেছেন, যা থেকে বোঝায় যায় অনুপম রায় একজন দক্ষ কবিও বটে।
তিনি বলেছেন আয়নায় আমাদের চেহারার যে দৃশ্য হয় তা কামনাহীন এমনকি কামনাহীন চেয়ে থাকাকে আমরা আসল চিত্র ভেবে ভুল করি।
অনুপম রায়ের লেখা মানেই স্বপ্নের মতো আবার বাস্তব।  সেটাকে স্পর্শ করা যাবে আবার বোঝা যাবে না কিন্তু আমরা মনে মনে স্বাদ পেতে থাকব যা তাঁর গানেও ভেসে ওঠে বারবার তাই বইটির লেখার গুলির মধ্যেও এই ব্যাপাটির বিলম্ব হয়নি যেমন, "শীতের রাতে হাওয়া দেয় গির্জা  দোলে"।
প্রশ্ন হলো গীর্জা কি করে দুলবে অথচ আমরা বুঝতে পারছি গীর্জার গায়ে হাওয়া লাগছে এখানে সেই কথাই বলতে চেয়েছেন কবি। ওই যে বললাম অনুপম রায়ের সৃষ্টি মানে সেটাকে স্পর্শ করা যাবে আবার বোঝা যাবে না কিন্তু আমরা মনে মনে স্বাদ পেতে থাকব।
প্রতিটি মানুষের দুঃখ রয়েছে অথচ আমরা সেই খবর নাম রেখেই এটা ভেবে বসে থাকি যে তার কোনো দুঃখ নেই এমনই এক চরম সত্যতার কথা কবি লিখেছেন " আমার কোনো দুঃখ নেই" এই কবিতায়। অনুপম রায় বললেন কবির ভাবনায় কবিতা লেখা হয় না বরং উল্টো হয়, তথা কবিতা কবিকে লেখে।
"নিজের শব্দে কাজ করো" বইতে কবি বলেছেন তিনি নাকি কেতাবের প্রথম পাতা ফাঁকা রাখতে পছন্দ করে না কারণ  এই বই-এর কোনো না কোনো পাতায় লেখা শব্দ গুলো এমনকি ঘটনা গুলোও কারোর সাথে (পাঠকের) মিলে যাবে আর তখন সেই সব মানুষ(পাঠক) তার সাথে মিলে যাওয়া ঘটনার পাতা গুলো ছিঁড়ে নেবে প্রথম পাতাটা না দেখেই। তাই কবি একটা পাতাও ফাঁকা রাখতে চান না।

সবশেষে আমি বলতে পারি "নিজের শব্দে কাজ করো" অনুপম রায়ের লেখা এই বই-এর সমস্ত কথায় সত্য, সাধারণ, সহজ এবং মাধুর্যময় যা একজন সত্যিকারের পাঠককে আনন্দ দেবে এবং স্বপ্ন দেখাবে।



🖋সুদীপ্ত সেন (ডট.পেন)

মেঘলা সিম্ফোনি।
অরূপ ।

হারমোনিয়াম  নিয়ে গান
গিটারের একফালি সুর,
ক্ষতি কী হোক না
এটাই তো দস্তুর

ভিজে যাওয়া ট্রেন লাইন
পায়ে হাঁটা ফুটপাত
শব্দের জানে শুধু
কোন সুর কোন রাগ

হলদে হওয়া বইয়ের পাতা
অতীতের নামে ক্ষয়
সময়ের ফাঁক হলেও
যাওয়া আসা এক নয়

অচেনা জাহাজ আর
গোত্রহীন বন্দর
কখনো কী থেমে যায়
সাইরেনের স্পন্দন?

প্রেম দুর থেকে হাত নাড়ে
প্রেমিকারা প্লেটোনিক
শরীর টা এঁটো হয়
অভিমান আধুনিক

দেখে শুনে ভালোবেসে
কিনে  নিয়ে  সরগম
ভুল  হলে স্বরলিপি
পাশে বসি হরদম।

শুভ জন্মদিন ।

শুক্রবার, ২৭ মার্চ, ২০২০

পাঠ প্রতিক্রিয়া

কাব্যগ্রন্থ  .পরিযায়ী পাখিদের লিরিক্স।
রচনা মাম্পি ঘোষ ।
প্রকাশ কাল বই মেলা 2020
প্রকাশক পূর্ণ প্রতিমা প্রকাশন।

নামের অভিনবত্বে নয় বিষয় ভাবনার মুন্সিয়ানায় কিছু শিল্পকর্ম অনন্য হয়ে  ওঠে আর সেখানেই শিল্পের সার্থকতা । শিল্পীর রুচিবোধ ও সৃজনশীলতাও এর জন্য অনেকখানি দায়ী । ঠিক সেরমই একটি কাব্য গ্রন্থ  "পরিযায়ী পাখি দের লিরিক্স", সাতান্নটি কবিতা নিয়ে নিজের সৃষ্টি শক্তি কে সিঞ্চন করে কবি তৈরী করেছেন এই বই।
     
    জীবন প্রবাহমান ছোটো ছোটো ঘটনাও রেখে যায় ছাপ, ঘটনা জীবনের আশীর্বাদ ও অভিশাপ দুইই ।

কবির কবিতায় স্থান পেয়েছে অস্তিত্ব সংগ্রাম  যেমন " জোনাকি" কবিতাটি ক্ষুদ্র এক পতঙ্গ অস্তিত্বের লড়াইয়ে হার না মানা

সেখান থেকে সরে আসি" মোমবাতির  কথা " কবিতাটিতে  ঠিক যেন পরে থাকে স্বপ্নের অধক্ষেপ

এভাবেই জীবন হয়ে ওঠে পরিযায়ী  ,ঘটনার ঘনঘটায় ।।

গঠন গত দিক দিয়ে যথেষ্ট নমনীয়তার পরিচায়ক ।
সেখানে পাঠক কে বিচারের স্বাধীনতা দিয়েছেন যা

"মাইলের পর মাইল ছড়ানো সম্পর্ক গুলোর" মত
যেখানে প্রচারের কোনো আড়ম্বর নেই আছে শুধু সারল্য ও নিগূঢ় জীবনবোধ

কলমে
অরূপ