বুঝতে পারি নি , সরি
অর্পনের ফ্লাটের দরজায় কলিং বেল টা বাজিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করলো সুদেষ্ণা। কিছুক্ষন বাদে অর্পনের কাজের দিদি মানুদা মাসি দরজা খুলে বললো , "বাবু স্নানে গেছে, তুমি বসো।" সুদেষ্ণা বসার ঘরের সোফায় বসে কিছুক্ষন বাদে অর্পনের ঘরে ঢুকে পড়লো। ঢুকতেই একটা চেনা গন্ধ তাকে আকৃষ্ট করলো যেন।
অর্পনের ফ্ল্যাটের এই ঘরটা সুদেষ্ণার খুব পরিচিত। একই অফিসে চাকরি করতে করতে ওদের বন্ধুত্ব। একটা সময় এমন ছিল যে দুজন একে অপরের সাথে কথা না বলতে পারলে কারুরই মুড ভালো থাকতো না। দিনে অন্তত একবার করে অফিস থেকে ফিরে ফোনে কথা হতোই। সুদেষ্ণার বাড়ি পার্ক সার্কাস। অর্পণ উত্তরবঙ্গ থেকে এসে ফ্ল্যাট নিয়েছিল টেকনোপলিসের কাছেই। তবে রাজারহাটে অফিস শেষ হওয়ার পর দুজনেই করুণাময়ী অবধি মুড়ি খেতে খেতে ইভনিং ওয়াক করতো। তারপর সুদেষ্ণাকে শাটল গাড়িতে তুলে দিয়ে অর্পণ একটা বাসে করে ফ্ল্যাটে ফিরত। সুদেষ্ণা জানতো যে অর্পণ ওকে খুব পছন্দ করে। কিন্তু সে কখনোই অর্পণকে বোঝাতে দ্যায়নি যে সে জানে। অর্পণ কখনো কখনো আকারে ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল। সুদেষ্ণা হাবভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে সে বন্ধুত্বে এই ব্যাপারগুলো পছন্দ করে না। একদিন অর্পণ যখন মেসেজে বলেছিল "তোকে আমার ভালো লাগে", সুদেষ্ণা রিপ্লাই দিয়েছিল যে , "বন্ধুত্ব রাখার হলে এই মেসেজ গুলো মোবাইলে যেন না আসে, নাহলে বাধ্য হবো বন্ধুত্ব নষ্ট করতে।"
তারপর থেকে অর্পনের দিক থেকে ওরকম মেসেজ সত্যিই আসেনি। বন্ধুত্বে ছেদও পড়েনি। শুধু অর্পণ একটু সামান্য শান্ত হয়ে গেছিলো। সুদেষ্ণা পরে ভেবেছিল যে ওরকম ভাবে বলা উচিত হয়নি, কিন্তু সে অবশ্য এসব নিয়ে বেশি ভাবেনি। সে ভেবেছিল ছেলেদের স্বাভাবিক গুন,মেয়ে বন্ধু দেখলেই ভালো লাগা , সেটারই একটা বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এটাকে বেশি পাত্তা দেওয়া উচিত না, আস্তে আস্তে আবেগ কমবে। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যায়। অর্পণ কিছুদিন বাদে অন্য অফিসে চাকরি পেয়ে চলে যায়, ফ্ল্যাট টা রেখেই দেয়, কিন্তু যোগাযোগ কমে। অন্যদিকে সুদেষ্ণা নতুন প্রজেক্টের টিম লিড সৌম্য দা র সাথে কাজ করতে করতে তারই প্রেমে পড়ে ধীরে ধীরে রিলেশনে চলে যায়। সামনের মাসে ওদের বিয়ে। তারই কার্ড দিতে অর্পনের ফ্ল্যাটে আসা।
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হটাৎ সুদেষ্ণার চোখ যায় অর্পনের ড্রয়িং খাতায়। চিত্রশিল্পী হিসাবে অর্পনের নামডাক ভালো ছিল। অর্পনের খাতা ওল্টাতে ওল্টাতে হটাৎ একটা পাতা ও নিচে কয়েকটা লাইন দেখে শিহরিত হয়ে যায় সে, হ্যাঁ এটা তো তারই ছবি, অর্পনের নিজের হাতে আঁকা। নিচে লেখা পেন্সিলের কটা লাইন "যেটা ছিলোনা ছিলোনা, সেটা না পাওয়াই থাক, সব পেলে নষ্ট জীবন। " এটুকু দেখে সুদেষ্ণার সব গুলিয়ে যেতে লাগল। এই ছবি আঁকা, তারপর লাইন গুলো, এগুলোতো শুধু ভালোলাগা না, কখনোই না। তড়িঘড়ি উঠে অর্পনের রোজনামচা লেখার ডাইরি টার গত বছরের সংখ্যাটা সে আলমারির পাশে সেলফ থেকে নিল। 20 মে ছিল সেই দিন যেদিন সে অর্পণ কে তিরস্কার করেছিল। হ্যাঁ, খুলে দেখলো লেখা আছে , "আজ আমি হয়তো তোর মেসেজ পড়ে অল্প কেঁদেছিলাম, কিন্তু বিশ্বাস কর, আমার রাগ হয়নি, আমি তোর যোগ্য না আমি জানি, কিন্তু তুই আমার কাছে সেরাই থাকবি, তোকে পাইনি, কিন্তু একটা এত ভালো বন্ধু পেয়েছি সেটাই আসল, ভালো থাকিস সুদেষ্ণা, আর আমি একাই থাকবো, তোর মতো কাউকে তো পাব না, তাই আমি এমন কারুর সাথে রিলেশনে যেতে পারব না, যেখানে সারাক্ষন তোর কথা, ওই ইভনিং ওয়াক, মুড়ি খাওয়া, তোর আমায় লেগ পুলিং করা মনে পড়বে, তাই একাই থাকি, সব কিছু সবার জন্য না।"
কিছুক্ষন হতভম্ব হয়ে বসে রইলো সুদেষ্ণা, তারপর কার্ড টা টেবিলের উপর রেখে জলদি তাড়াহুড়ো করে প্রায় দৌড়ে বেরিয়ে গেল অর্পনের ফ্ল্যাট থেকে। পিছনে তখন মানুদা মাসি চেঁচাচ্ছে "কি গো, চা টা খেয়ে যাও।" আজ আর অর্পণকে মুখ দেখানোর অবস্থায় নেই সুদেষ্ণা। একটা দমবন্ধ করা পরিবেশ তাকে ঘিরে ধরেছে, এখান থেকে তাকে পালাতে হবে। অর্পণ তাকে সত্যি ভালোবাসতো, এটা ও বোঝেনি। সৌম্য দা সত্যি একজন দায়িত্ববান ও ভালো স্বামী, কিন্তু অর্পনের মতো আগে ভালো বন্ধু ও তাকে সম্পূর্ণ বোঝাটা সেখানে একটু মিসিং, কারণ প্রথমত বয়সের গ্যাপ, দ্বিতীয়ত ওরা বন্ধুত্ব থেকে প্রেম করেনি, প্রেমের ইচ্ছায় প্রেম করেছে, আর অর্পনের মতো সৌম্য দার অতো সময় নেই সারাক্ষন ওর যত্ন নেওয়ার। এক লহমায় অনেক কিছু গোলমাল হয়ে যায় সুদেষ্ণার। ট্যাক্সিতে ওঠার আগে একবার বাড়িটার দিকে তাকিয়ে সে বলে উঠলো, "বুঝতে পারিনি অর্পণ, সরি।"
অর্পনের ফ্লাটের দরজায় কলিং বেল টা বাজিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করলো সুদেষ্ণা। কিছুক্ষন বাদে অর্পনের কাজের দিদি মানুদা মাসি দরজা খুলে বললো , "বাবু স্নানে গেছে, তুমি বসো।" সুদেষ্ণা বসার ঘরের সোফায় বসে কিছুক্ষন বাদে অর্পনের ঘরে ঢুকে পড়লো। ঢুকতেই একটা চেনা গন্ধ তাকে আকৃষ্ট করলো যেন।
অর্পনের ফ্ল্যাটের এই ঘরটা সুদেষ্ণার খুব পরিচিত। একই অফিসে চাকরি করতে করতে ওদের বন্ধুত্ব। একটা সময় এমন ছিল যে দুজন একে অপরের সাথে কথা না বলতে পারলে কারুরই মুড ভালো থাকতো না। দিনে অন্তত একবার করে অফিস থেকে ফিরে ফোনে কথা হতোই। সুদেষ্ণার বাড়ি পার্ক সার্কাস। অর্পণ উত্তরবঙ্গ থেকে এসে ফ্ল্যাট নিয়েছিল টেকনোপলিসের কাছেই। তবে রাজারহাটে অফিস শেষ হওয়ার পর দুজনেই করুণাময়ী অবধি মুড়ি খেতে খেতে ইভনিং ওয়াক করতো। তারপর সুদেষ্ণাকে শাটল গাড়িতে তুলে দিয়ে অর্পণ একটা বাসে করে ফ্ল্যাটে ফিরত। সুদেষ্ণা জানতো যে অর্পণ ওকে খুব পছন্দ করে। কিন্তু সে কখনোই অর্পণকে বোঝাতে দ্যায়নি যে সে জানে। অর্পণ কখনো কখনো আকারে ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল। সুদেষ্ণা হাবভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে সে বন্ধুত্বে এই ব্যাপারগুলো পছন্দ করে না। একদিন অর্পণ যখন মেসেজে বলেছিল "তোকে আমার ভালো লাগে", সুদেষ্ণা রিপ্লাই দিয়েছিল যে , "বন্ধুত্ব রাখার হলে এই মেসেজ গুলো মোবাইলে যেন না আসে, নাহলে বাধ্য হবো বন্ধুত্ব নষ্ট করতে।"
তারপর থেকে অর্পনের দিক থেকে ওরকম মেসেজ সত্যিই আসেনি। বন্ধুত্বে ছেদও পড়েনি। শুধু অর্পণ একটু সামান্য শান্ত হয়ে গেছিলো। সুদেষ্ণা পরে ভেবেছিল যে ওরকম ভাবে বলা উচিত হয়নি, কিন্তু সে অবশ্য এসব নিয়ে বেশি ভাবেনি। সে ভেবেছিল ছেলেদের স্বাভাবিক গুন,মেয়ে বন্ধু দেখলেই ভালো লাগা , সেটারই একটা বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এটাকে বেশি পাত্তা দেওয়া উচিত না, আস্তে আস্তে আবেগ কমবে। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যায়। অর্পণ কিছুদিন বাদে অন্য অফিসে চাকরি পেয়ে চলে যায়, ফ্ল্যাট টা রেখেই দেয়, কিন্তু যোগাযোগ কমে। অন্যদিকে সুদেষ্ণা নতুন প্রজেক্টের টিম লিড সৌম্য দা র সাথে কাজ করতে করতে তারই প্রেমে পড়ে ধীরে ধীরে রিলেশনে চলে যায়। সামনের মাসে ওদের বিয়ে। তারই কার্ড দিতে অর্পনের ফ্ল্যাটে আসা।
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হটাৎ সুদেষ্ণার চোখ যায় অর্পনের ড্রয়িং খাতায়। চিত্রশিল্পী হিসাবে অর্পনের নামডাক ভালো ছিল। অর্পনের খাতা ওল্টাতে ওল্টাতে হটাৎ একটা পাতা ও নিচে কয়েকটা লাইন দেখে শিহরিত হয়ে যায় সে, হ্যাঁ এটা তো তারই ছবি, অর্পনের নিজের হাতে আঁকা। নিচে লেখা পেন্সিলের কটা লাইন "যেটা ছিলোনা ছিলোনা, সেটা না পাওয়াই থাক, সব পেলে নষ্ট জীবন। " এটুকু দেখে সুদেষ্ণার সব গুলিয়ে যেতে লাগল। এই ছবি আঁকা, তারপর লাইন গুলো, এগুলোতো শুধু ভালোলাগা না, কখনোই না। তড়িঘড়ি উঠে অর্পনের রোজনামচা লেখার ডাইরি টার গত বছরের সংখ্যাটা সে আলমারির পাশে সেলফ থেকে নিল। 20 মে ছিল সেই দিন যেদিন সে অর্পণ কে তিরস্কার করেছিল। হ্যাঁ, খুলে দেখলো লেখা আছে , "আজ আমি হয়তো তোর মেসেজ পড়ে অল্প কেঁদেছিলাম, কিন্তু বিশ্বাস কর, আমার রাগ হয়নি, আমি তোর যোগ্য না আমি জানি, কিন্তু তুই আমার কাছে সেরাই থাকবি, তোকে পাইনি, কিন্তু একটা এত ভালো বন্ধু পেয়েছি সেটাই আসল, ভালো থাকিস সুদেষ্ণা, আর আমি একাই থাকবো, তোর মতো কাউকে তো পাব না, তাই আমি এমন কারুর সাথে রিলেশনে যেতে পারব না, যেখানে সারাক্ষন তোর কথা, ওই ইভনিং ওয়াক, মুড়ি খাওয়া, তোর আমায় লেগ পুলিং করা মনে পড়বে, তাই একাই থাকি, সব কিছু সবার জন্য না।"
কিছুক্ষন হতভম্ব হয়ে বসে রইলো সুদেষ্ণা, তারপর কার্ড টা টেবিলের উপর রেখে জলদি তাড়াহুড়ো করে প্রায় দৌড়ে বেরিয়ে গেল অর্পনের ফ্ল্যাট থেকে। পিছনে তখন মানুদা মাসি চেঁচাচ্ছে "কি গো, চা টা খেয়ে যাও।" আজ আর অর্পণকে মুখ দেখানোর অবস্থায় নেই সুদেষ্ণা। একটা দমবন্ধ করা পরিবেশ তাকে ঘিরে ধরেছে, এখান থেকে তাকে পালাতে হবে। অর্পণ তাকে সত্যি ভালোবাসতো, এটা ও বোঝেনি। সৌম্য দা সত্যি একজন দায়িত্ববান ও ভালো স্বামী, কিন্তু অর্পনের মতো আগে ভালো বন্ধু ও তাকে সম্পূর্ণ বোঝাটা সেখানে একটু মিসিং, কারণ প্রথমত বয়সের গ্যাপ, দ্বিতীয়ত ওরা বন্ধুত্ব থেকে প্রেম করেনি, প্রেমের ইচ্ছায় প্রেম করেছে, আর অর্পনের মতো সৌম্য দার অতো সময় নেই সারাক্ষন ওর যত্ন নেওয়ার। এক লহমায় অনেক কিছু গোলমাল হয়ে যায় সুদেষ্ণার। ট্যাক্সিতে ওঠার আগে একবার বাড়িটার দিকে তাকিয়ে সে বলে উঠলো, "বুঝতে পারিনি অর্পণ, সরি।"
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন