Arup Sarkar: আমাকে আমার মত থাকতে দাও আদতে একটি স্বমুখী প্রবনতা। মানুষের মানসিক গঠনে স্বাধীনচিন্তা ও আত্মপরিচয়ের আকাঙ্ক্ষা একটি মৌলিক উপাদান। মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করলে বোঝা যায়, "নিজের মত থাকতে চাওয়া" কেবল একটি সামাজিক প্রবণতা নয়, বরং এটি আত্মপরিচয় গঠনের এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য, আত্মসম্মানবোধ এবং আত্মবিশ্বাস অনেকাংশেই নির্ভর করে তার নিজস্ব মতামত প্রকাশ ও অনুসরণের সুযোগের ওপর।
বিশ্বখ্যাত মনোবিজ্ঞানী এরিক এরিকসন তার "মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ তত্ত্বে" বলেন, আত্মপরিচয়ের সংকট কাটিয়ে উঠেই একজন মানুষ পরিপূর্ণতা অর্জন করে। যদি কেউ তার নিজস্ব মত প্রকাশে বাধাগ্রস্ত হয়, তবে তার মধ্যে আত্মবিশ্বাসহীনতা, হতাশা ও হতদ্যমতা দেখা দিতে পারে। আবার কারও নিজস্ব চিন্তাধারা অবদমিত হলে, তা দীর্ঘমেয়াদে মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও হতাশাজনিত রোগের জন্ম দিতে পারে।
আলবার্ট ব্যান্ডুরা’র "Self-efficacy" তত্ত্ব অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি যখন নিজের সিদ্ধান্তে চলতে পারে, তখন তার মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও দক্ষতার অনুভব জন্ম নেয়। এটি তার জীবনের প্রতি আস্থাকে বাড়ায় এবং মানসিক স্থিতিশীলতা এনে দেয়। অন্যদিকে, বারবার নিজস্ব মত প্রকাশে বাধা পেলে একজন মানুষের মধ্যে 'নির্বিকারতা' (learned helplessness) জন্ম নিতে পারে, যা তাকে নিষ্ক্রিয় করে তোলে।
মনস্তাত্ত্বিক গবেষণায় এটাও দেখা গেছে, শিশুকাল থেকেই মানুষ নিজের পছন্দ ও মতামত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যদি পরিবার ও সমাজ তার মতামতকে মূল্য দেয়, তবে তার ব্যক্তিত্ব দৃঢ় হয়। তাই মানসিক সুস্থতার জন্য নিজের মত প্রকাশের পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি।
মানুষ প্রথমে অস্তিত্ব লাভ করে এবং পরে নিজের সারবস্তু বা স্বরূপ গড়ে তোলে। ঈশ্বরের অস্তিত্ব তিনি অস্বীকার করেন এবং বলেন, যদি ঈশ্বর না থাকেন, তবে নৈতিক ও অস্তিত্বগত দায়দায়িত্ব একান্তভাবে মানুষের। ফলে, প্রতিটি মানুষ নিজেই তার কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী এবং সেই অনুযায়ী তাকে তার জীবন গঠন করতে হয়।
সর্বোপরি নিজের মত থাকা হল নিজের মনন মন্থন নিজেকেই গুছিয়ে নেওয়া It is a journey towards real to sourrieal.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন