ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

শনিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২১

সম্পাদকীয়


সম্পাদকীয় কলম

নমস্কার, 
আমাদের জলফড়িং ওয়েব ম্যাগাজিন সকলের ভালোবাসা ও আশীর্বাদকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলেছে সানন্দে। জলফড়িং ওয়েব ম্যাগাজিনের দ্বিতীয় সংখ্যায় আমরা( জয়ীতা চ্যাটার্জী ও পাখি পাল) একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর লেখাকেই প্রাধান্য দিয়েছি। আমাদের এই ভাবনার উদ্দেশ্য হল, একটি সাধারণ বিষয়কে কেন্দ্র করে পরিবারের সকল সদস্য যাতে নিজ নিজ লেখনী গুণে বিশেষ করে তাকে প্রকাশ করতে পারেন।
     
পরিশেষে বলি,'ঘর' থেকেই যাত্রা শুরু আবার সেই 'ঘর'-এতেই ফেরা। শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাই আমাদের এই পরিবারের সকলকে..🙏🙏

ধন্যবাদান্তে,
জয়ীতা চ্যাটার্জী ও পাখি পাল (যুগ্ম সম্পাদিকা)

ঘর সে'তো স্বপ্ন
কলমেঃ- পাখি পাল

ঘর সে'তো স্বপ্ন,সে'তো আশ্রয়
সে যে ভালোবাসার জন্ম দেয়,
সে যে চার দেওয়ালকে
শক্ত করে ধরে রেখে
মানুষগুলোকে আগলে যায়,
কত ঝড়-ঝাপটা,বৃষ্টি-রোদ
একা দাঁড়িয়ে সামলে যায়,
বছরের পর বছর সবটা সয়ে
কেমন তাকিয়ে থাকে নির্বাক,
দিনে দিনে তারও বয়স হয়
বট অশ্বত্থ জন্ম নেয় গায়ে,
সকলের অলক্ষ্যে মারণ রোগ
যেন বাসা বেঁধে যায় শরীরে,
ধীরে ধীরে বর্ষার জল জমে
পেশি'গুলোতে পচন ধরায়,
এই সুযোগেই বিষাক্ত শিকড়গুলো
শিরা-উপশিরায় ছড়িয়ে দেয়
ভাঙনের পাগল খেলা,
তারপর একদিন অসহ্য যন্ত্রনায় সে'ও বলে ওঠে
অযত্নে সব ভাঙে গো সব ভাঙে।।


শেষ প্রহরের কাছে
কলমেঃ- বিশ্বনাথ দাস 

শরীর ছোঁয়া জীবন-মরণ টান 
বাতাসে দিক্ হারা অদ্ভুত বিস্ময়
টের পায়না  শিকড় কোন দিনও
 সবুজ পাতা কখন হলুদ হয়।

 আলো আকাশ বাতাস মাটি জল 
সময় চেনায় আপন আপন রূপ
বন্দি খাঁচায় বনের পাখি বোঝে
কোনটা প্রেম কোনটা আসলে বিদ্রুপ।

জটিল কথা কুটিল মুখ  ঘুরে
 জিভের ফালে বতর  বুঝে নেয়
 ঘুরিয়ে সময় গরুর গাড়ির লিকে 
পল্লী গাঁয়ের  কপাটে খিল্  দেয়।

 জীবন খোঁজে  হারানো অতীত পথ
 ভরসা রাখে আদিম ধ্রুবতারায়
 বিশ্বাসের শেষ সম্বল বাঁচিয়ে পেঁচা 
রাতের; দেখে এ ভোর শালিকের নয়।

ডিংলা কাঁধে বরজ  ফেরা পা
নিজেই চেনে আলো ছায়ার ফারাক
ভুলকো দেখে ভোরে ওঠার অভ্যেসে
দেশ গাঁয়ের চাষীই বেঁচে-বর্তে থাক।।

এ কেমন ঘর
কলমেঃ- সুরভী চ্যাটার্জী


রঙীন শার্টে সাদা চামড়ার
দুটো হাত, ছলনার এক মুষ্টি সম্পর্ক 
ভিক্ষে দিয়েছিলো রাধাকে।
সুপ্ত চেতনার, আনন্দ ঘূর্ণিতে
ডুবন্ত হৃদয় ষোড়শীর,
তার হৃদয়ের নিস্তরঙ্গ ভাটায়, উপচে পড়া
জোয়ার আসল প্রবল পুরুষের
দুকূল ভাসানো সোহাগের। স্বপ্ন আসলো 
আকাশের নীচে রাত নেমেছিলো
ওরাও বিচরণে ব্যস্ত, শরীরী তটে
পরস্পরের, ভরসার কাঠামোয় প্রত্যয়ের মাটি দিয়ে। হায়! সে মাটি ঝুর ঝুর !
সে রাতের শেষে, দীপ্ত প্রভায় ঘর বাঁধার,
চূড়ান্ত নেশায় উন্মাদিনী রাধা।
আজ আস্তাকুঁড়ের রাধা মা হয়েছে।
আজ রাধার ঘর আছে  প্লাবনের ঘর!
লালসা লিপ্ত, প্রেমিক পুরুষ, কামনার তৃপ্তি সুধা পান করে,  মরণ কামড় দিয়ে ফেরারী,
আকাশ সত্যকে স্বীকার করবে কে? 


       
তোমার আমার ঘর
কলমেঃ- সাত্যকি সর্বাধিকারী

আমার গোপনে লুকিয়ে আছে চিরন্তন একটা ঘর
যেটা তোমার আমার ঘর,
আমার নিবিড় মাঝে অমূল্য এই রক্তিম বিস্তর
এটা তোমার আমার ঘর।

এই ঘরেই রেখেছি তোমায় যত্ন করে
তুমি জানো না, তোমায় আগলে ধরে
রাখবো সাজিয়ে যুগ যুগান্তরে,
কালের বিচারে ক্লান্ত হয়েও শাশ্বত সেই ঘর,
শত ঝঞ্ঝার ধাক্কা সয়েও ভাঙেনি যেই ঘর
এটাই তোমার আমার ঘর।

তোমার তো ভয় ছিল আমার ঘরেই 
তোমার স্বাধীনতা যাবে হারিয়ে,
তাই নিঃস্ব করে বিদায় দিলে স্বাধীন হতে গিয়ে,
তোমার অজানা এই ঘরেই আজ তোমার বসবাস
এই ঘরেই আজ স্বাধীন তুমি ঠিক যেমন আকাশ।

জানিনা আমাদের দেখা হবে কত অসংখ্য শতাব্দী পর
দুই শরীরের মাঝে আছে এক আলোকবর্ষ অন্তর,
তবু আমার নিভৃত ঘরেই তোমার অস্তিত্ব নিরন্তর
আমার বুকের স্পন্দনশীল চারটি কক্ষের মাঝে
এটাই তোমার আমার ঘর।।
বর্ষা
কলমেঃ- আমিমোন ইসলাম

বর্ষায় ছাদ থেকে চুঁয়ে পড়ে
জল আর মনখারাপির সুর।
বেকারত্ব, অভাবের সংসার দেখে
প্রেম পালিয়েছে বহুদূর।

বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় ভাঙে
কাকের ডিম আর কোকিলের বুক।
ছাদ থেকে চুঁয়ে পড়া জলে,
আমরা ধুয়ে ফেলি মুষড়ে পড়া মুখ।

সন্ধ্যে নামে অন্ধকারের সাথে,
ঝড়-বিদ্যুৎ-বজ্রপাতের বেগে।
পায়রার কাছে ঠাঁই খোঁজে কাক,
আমার বাড়ির টিনের চালের ফাঁকে।

ঝড়ের ভয়ে ঘুম ধরে না রাতে,
মাথায় বুঝি পড়লো খসে ছাদ।
ভোর হয়েছে বুঝি পাখিদের চিৎকারে,
ঘর হারিয়ে গুনছে তারা প্রমাদ।

পাকা বাড়িতে বর্ষা প্রিয় ঋতু,
টিনের চাল, মাটির বাড়ির দুঃস্বপ্ন।।
ঘরের ঠিকানা 
 কলমঃ- সুনন্দ মন্ডল

চারটি দেয়াল
দুটি জানালা,
একটি দরজা
আর পর্দা দেওয়া আড়াল থাকলেই ঘর হয় না।

ঘটি, বাটি, বাসনের ভিড়ে
নিজেদের পরিবার বাঁধা থাকলেও, 
ঘর হয় না।

ঘরে যেমন ইঁট সাজানো থাকে প্রতি ধাপে!
বিশ্বাস গাঁথা থাকুক সেভাবে মনের খাঁজে।
তবেই ঘর হবে সংসারে,
পরিপূর্ন মহল।

আসলে মনেরও 
একটা ছোট্ট ঘর আছে।
সেখানে দরজা 
জানালা কিংবা পর্দা
অথবা বাসনপত্রের ঝনঝনানি নেই!
আছে শুধু মানবিক উচাটন
ভালোবাসায়, 
প্রেমে, স্নেহে
আর আন্তরিকতায়।
          

প্রথম পুরস্কার
কলমেঃ- শ্রেয়া রায়


ছোট্ট বিনি রোজ দোতলা- তিনতলা বাড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকত একদৃষ্টে। আর শুয়ে শুয়ে মাকে জিজ্ঞাসা করত,"মা, আমাদের এমন বাড়ি কবে হবে?" মা তার ছোট্ট ৫ বছরের শিশুর প্রশ্নে মৃদু হাসি হেসে বলতেন,"ভগবান যে দিন চাইবেন!" এভাবেই প্রত্যেক দিনই মা তার অবুঝ শিশুকে কথায় ভুলিয়ে রাখতেন। কিন্তু শিশু যতই অবুঝ হোক না কেন, সে তার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখত মায়ের কথায়। এভাবে দিনের পর দিন কেটে গেল, পেরিয়ে গেল বেশ কিছু বছর। বিনির এখন বয়স ৮ বছর। পথে ঘাটে ঘুরে ঘুরে এখন বাস্তবটাকে ধীরে ধীরে চিনতে শিখছে। সারাদিন ঘুরে বেড়ানোর পর দিনের শেষে মায়ের সাথে দুটো রুটি কোনক্রমে ভাগ করে নেয় পথের ধারে। পিতৃ পরিচয়হীন কন্যা সন্তানকে নিয়ে পথের ধারেই ঘর বেঁধেছে মা।

ছোটবেলা থেকেই একটি অঙ্গনওয়াড়ি স্কুলে বিনে পয়সায় পড়াশোনা করতো বিনি। পড়াশোনার প্রতি তার আগাগোড়াই বেশ ঝোঁক ছিল। ফুটপাতে খবরের কাগজের দোকানের কাকুর থেকে রোজ সে খবরের কাগজ নিয়ে পড়তো। একদিন বিদ্যালয়ের তরফ থেকে একটি কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সে। সেই ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় সমস্ত প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে বিনি। প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় নগদ ১০ লক্ষ টাকা। এরপর পূরণ হয় এত দিনের স্বপ্ন। মায়ের সাথে রোজ যে স্বপ্নের ঘর বুনতো একটু একটু করে, বিনির সেই স্বপ্নের ঘর আজ বাস্তবে তৈরি হলো।

 আমার নবীন কুঁড়ে

কলমেঃ- শুভঙ্কর নস্কর




জীবন নদীর পারাবারে আমরা সবাই একা,

দুরন্ত- দুর্নিবার এই সময়কে পাল্লা দিতে দিতে

অবসন্ন শরীরের ঘামও আজ ক্লান্ত,


পথ চলতি মানুষের ভিড়ের মধ্য থেকে

হঠাৎ অস্পষ্ট স্বর- সাথেই থাকব..

পাশে আছি'র  বার্তায় বাড়িয়ে দিলুম হাত।


মুহূর্তে স্বপ্নের ভিড়ে পার করেছি সপ্তসিন্ধু..

শরীরের মলিন পরিধেয়-কে মুহূর্তে করেছি 

রত্ন-খচিত রেশমিকা ভূষণ, রাজশাহী আভিজাত্যে।

এক লহমায় সূর্যের তেজস্বিতা আর 

জ্যোৎস্নালোকিত চন্দ্রের মায়াকে , 

যেন স্ব-অধীনতায় করে ফেলেছি বন্দি।


কিন্তু হায়! স্বপ্নীল মুহূর্তে-

দুরন্ত ঘূর্ণিপাকে স্বপ্নালোকের ছাদ গেলো উড়ে,

কল্পলোকের মায়াজাল বাস্তবের মাটিতে দিশেহারা।

ভালোবাসার নেশায় মাতন লাগানো মৃগনাভিটি আজ

সুবাস বিতরণে বড়ো-বেশি ক্ষয়িষ্ণুপ্রায়,

তবুও অস্ফুট স্বর, দূর থেকে ভেসে আসে যার প্রতিধ্বনি,

 

-আমি মারের সাগর পাড়ি দেবো ফিরবো দেশে দেশে ,

বাঁধবো আমার নবীন কুঁড়ে পথের প্রান্তে শেষে।।