ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

মঙ্গলবার, ২৯ মে, ২০১৮

লক্ষীটি।
অরূপ সরকার ।

যদি জানতাম কাছে থেকেও এত দুরত্ব বাড়বে;
তবে  কাছে আসতাম না, অচেনার মতই রইতাম।
যদি জানতাম  তোমার এতটা বিরক্তির কারণ হব;
তবে না হয় ভালবাসতাম না সবার তো সবটা হয়না
আমার ও যা হয়না তা  হয়না,
জানো প্রতিটি রাতেই তুমি নিয়মিত আসো আমার রাতের দখল নিতে,
দুটি পথ তো কবেই চলে গেছে দুদিকে।
তুমি হয়ত হারিয়ে গেছ ওই ব্যাস্ত শহরে  লোক বাস  ও ট্রামের ভীড়ে,
আমিও হারাবো কোনো এক ঝড়ো দুপুরে ।
তুমি হারিয়ে গিয়েও হারাও না কেন?
আমিও আর তোমার মাঝে নির্লিপ্ত আশ্রয় খুজিনা।
যে পথে একদিন সমান্তরালে হেটেছে আজ তারা অচেনা।

শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১৮



@সমাবর্তনে বিশ্বভারত


   গত এক মাস ধরে যে সমাবর্তন নিয়ে এত উচ্ছ্বাস;সেটি অনুষ্ঠিত হয় আজ(২৫.৫.২০১৮)দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী মোদিজি ও হাসিনার মিলিত আগমনে৷এছাড়াও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাসহ সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরা৷

    বিশ্বভারতীতে সমাবর্তন একটি তাত্পর্যপূর্ণ বিষয়৷স্কুল লেভেল অর্থাৎ পাঠভবন ,শিক্ষাসত্রের সমাবর্তন অনুষ্ঠান প্রতি বছর পৌষ মেলা চলাকালীন সময়ে অনুষ্ঠিত হলেও;উচ্চশিক্ষাস্তরের সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি কিছু বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়৷আজকের অনুষ্ঠানটিও ছাত্রছাত্রীদের বহু আকাঙ্ক্ষিত একটি দিন ৷
যাই হোক অনুষ্ঠানটি মোদি ও শেখ হাসিনার মিলিত আগমনে বেলা ১১টা নাগাদ অনুষ্ঠিত হয় ও দুপুর পর্যন্ত চলে৷অনুষ্ঠানে মোদিজি তার বক্তব্য রাখেন ও রবী ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতীর আচার্য পদপ্রাপ্তির গর্ব অনুভব করেন৷এবং বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য মতো সাদা পাঞ্জাবী , পাজামা ও সাদা শাড়ি পড়া ও সঙ্গে উত্তরীয় থাকা কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে সপ্তপর্ণী পাতায় অভিষিক্ত করা হয় এবং অনুষ্ঠান  এর সমাপ্তি ঘটে৷

     যদিও শেখ হাসিনা ও মোদির অন্য আর একটি উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বভারতীর নবনির্মিত বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন ৷এ ভবনে নির্মিত হয়েছে আধুনিক  থিয়েটার, প্রদর্শনী  কক্ষ ও বিশাল  লাইব্রেরী ৷ লাইব্রেরীতে
 সাহিত্য সংস্কৃতি,ইতিহাস ,বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসসহ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার সম্পর্ক ৷

       এতসব অনুষ্ঠান উত্তরনের পর আজকের দিনটি প্রাক্তনী ও ছাত্রছাত্রীদের কাছে ছিল উপভোগ্য৷প্রাক্তনীদের কাছে আজকের দিনটি ছিল হারিয়ে পাওয়া কোনো এক ক্ষণ৷আমি যেহেতু বিশ্বভারতীর একজন ছাত্রী এবং সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম ,তাই আজকের দিনটি আমার কাছেও একটি উপভোগ্য দিন ছিল৷
           
#অমিয়া গড়াই

শনিবার, ১৯ মে, ২০১৮

জলফড়িং ওয়েব ম্যাগের পক্ষ থেকে উমা'র টিমের প্রতি আমাদের স্যাব গ্রিন রঙের ভালোবাসা।

 

 


       
    ♥উমা♥
  ------------সুদীপ্ত সেন (ডট.পেন)

হাতে সময় কম চলতে থাকা সময়  থেকে
ইচ্ছে অনেক বেশি বাঁচার ইচ্ছে গুলো রেখে
তবু যেতে হবে জানি যেতে হবে ইচ্ছে ফেলে
অনেক দূরে তোমার থেকে বাবার থেকে
পারবে বাবা থাকতে আমায় ছেড়ে?
দু-ফোটা জল চোখের নীচে ঘনায়
ইচ্ছে হবে পূরণ মা যেগুলো আছে তোমার চোখের কোণায়।
ছুটলো শহর সব কিছু কাজ একপাশ করে
মেয়ে দেখতে চায় কলকাতার দূর্গা পূজো
করতে চায় হইছই সবার সাথে বাবার সাথে
ইচ্ছে পূরণ করতে গেল বাবা
আসবে উমা উমার ইচ্ছেতে
শহর যাবে ঝলমলিয়ে আবার
অকাল বোধন তৈরী করা হবে
একদিকে ইচ্ছে অন্যদিক ঘুরে দাঁড়ানোর সংশয়
আনন্দতে মেয়েকে ধরে বলল বাবা,কেমন কি রে?
তুমি চোখ বুজনা আমি আসব আবার ফিরে!

       
রেনবো জেলির প্রতি জলফড়িং ওয়েব ম্যাগের পক্ষ থেকে রেনবো রঙের ভালোবাসা পাঠালাম আগেই,  সবার কাছে পৌঁছে যাক আর সবাই উপভোগ করুক রেনবো জেলির রঙ এই কামনা । সবাই দেখে নিও মুভিটা, একটা সুন্দর ভাবনার আউটস্ট্যান্ডিং মুভি হবে গান দেখলেই বোঝা যায়।

♦♪ভাবো তো rotation না হলে কী হতো♪♦

[ আর স্পেশালি ঘোঁতনের প্রতি আমাদের ভালোবাসা থাকলো এই লেখা দিয়ে, লেখাটি লিখেছে ডট.পেন। ]

 


 | রেনবো জেলি |
   ------------------ডট.পেন
সব রঙ ভেঙে যায় সাদাতে
ভেঙে গিয়ে মিশে যায় ঘোঁতনের দেখাতে,
ওরা ভেঙে গেছে আর মিশে গেছে, মিশে গেছে ঘোঁতনও
ওরা কথা বলে আমরা বলি না, বলে না ঘন্টার টিফিনও,
তবু তারা পেতে চাই আমাদের, পেতে চাই দূর দেশে তারাদের
হ্যাঁ তারাদেরও পেতে চাই, কাছে চাই জননী
ফিরে ফিরে তাকাতেই মিলে গিয়ে ভোর হয়,
পরদিন সূর্যতে উঠে বলে আজও মাকে আনোনি?
যাই হোক কেটে যায় দিন তার, কেটে যায় রাত টাও...
জানলায় দেখা পাই রোজদিন কেটে যায় হাত ধরা মেয়েটাও
ঘুড়ি গুলো ঘোঁতনের বহু দূর উড়ে যায় আকাশে,
তবু  রাত শুধু বিছানায় মা হীন পরে থাকে ফ্যাকাসে
পরে থাকে ইচ্ছেরা আর কিছু চাহিদা, একদিন কী পেলো দেখে যাও...
দেখো দেখো রেনবো হয়ে গেছে ঘোঁতনের কাছে থাকা জেলিটাও!
দামি মেরুনের নীল চোখ
--------------------সুদীপ্ত সেন (ডট.পেন)
আমি ভিজতে দেখেছি রাস্তা আর ভিজতে দেখেছি গাড়ি
আর ভিজতে দেখেছি সময় আর মেরুন রঙের শাড়ি
ওই ব্যালকুনিতে ছিল, গাড়ি থামিয়ে দিয়েছে ড্রাইভার
অনেক জোড় বৃষ্টি, পুরো ভিজে গেল নীল চোখ তার
আমি জানলার কাচে দেখি, ওপারে কাচ আবছা
তবু মেরুন রঙের শাড়িই আর দূরত্ব টা ঝাপসা।
বৃষ্টি থামল হালকা, গাড়ি স্টার্ট নিয়েছে
আমিও দেখছি, নীল চোখও দেখছে...
শুধু দেখাটা আলাদা....
আমি দেখছি শাড়ি আর ও দেখছে রাস্তা,
ওই মেরুণ রঙের শাড়ি মনে হয়না সস্তা!

শুক্রবার, ১৮ মে, ২০১৮

একবার হলেও

একবার হলেও বলবে আমায় চাও,
একবার হলেও চেনা হাতে ছুঁয়ে দাও,

মফস্বলের সন্ধ্যা জুড়ে চায়ে কাপে,
অভিমানের বস্তা বোঝাই,বৃষ্টি আনে,

সব ঝুটঝামেলা পেরিয়ে এসে কবিতা লেখা,
ভাল্লাগে না,প্রেমিক আজকাল তুমি বড্ড ন্যাকা,

উইন্ডস্ক্রিনে জল জমেছে,ঝাপসা কাঁচ,
শহর জুড়ে জ্বলছে দেখো প্রেমের আঁচ,

শহর যখন লাভ জিহাদের আঁচড় কাটে,
কবি তখন কবিতা জুড়ে প্রেমিকা খোঁজে ,

ঠিক সকাল হলেই দাঁড়াই আমি রেলিং ধরে,
রোজ তিনটে শালিক ঝগড়া করে উল্টোডাঙার মোড়ে ।।

                             _________ সুরজিৎ রায় (সুরজিৎ বাগ)

মঙ্গলবার, ১৫ মে, ২০১৮



"জলফড়িং"-এ মে-সংখ্যা

              (কবিতা)
১) অন্ধকার
         শান্তনু পাত্র
অন্ধকার মাপতে গিয়ে
কতবার নিজেকে হারিয়েছি
নিশ্বাসে খুঁজেছি আবারও
কিছুটা ভুল সময়ে
            পোড়া প্রেম
মস্তিষ্কের অপব্যবহারে
আবেগ ভরা কবিতা
               সব বেকার,
                      সব বেকার।
অন্ধকার মাপতে গিয়ে
        তোকেও হারিয়েছি।
            -------------

২) অতএব তোমার সঙ্গে.......
        সন্দীপ ভট্টাচার্য,মুম্বাই
অতএব তোমার সঙ্গে আর এগোনো হলোনা
সেই পাষান যুগ থেকে হেঁটে চলেছি একসাথে
দাবানলে জ্বলেছি, গায়ে এখনো পোড়া দাগ
দগ দগে ঘা হয়ে শুকিয়ে গেছে
গভীর আরও গভীরে এখনো চিনচিনে ব্যাথা
কৈশোর থেকে এত কোটি বছর পরে আর
গোপন থাকেনি  কিছু, দাঁত নখ ঠোঁট যৌনতা
তুহিন তুষার ফ্রেমে যখন উঠেছে সূর্য 
কমলা আলো যখন ছড়িয়েছে মাঠে মাঠে
আমি তোমার হাতেই রেখেছি আমার হাত
তোমার সাথেই চলেছি এক পাকদন্ডী ধরে
পাথর ঠুকে আগুন জ্বেলেছিলামএকসাথে
স্যাতস্যাতে গন্ধ মাখা স্বল্পালোকিত গুহায় 
প্রথম পাওয়া প্রেমজ ঘামের চিরায়ত ঘ্রান
তারপর যতবার খেলেছে বিদ্যুৎ 
খুঁজেছি আশ্রয় তোমার নাভিকুসুমে
এবার আমাকে ক্ষমা করো সুলক্ষনা নারী
আজ সহস্র শতাব্দী প্রাচীন গভীর অরণ্যে
সন্ধ্যার ছায়া নামছে দ্রুততর গতিতে
কুঁচকানো চামড়ার ধ্রুপদী লিপি দিচ্ছে জানান
দিনান্তের চাওয়া টুকু রেখে এবার যেতে হবে
অতএব  
         তোমার  সঙ্গে 
                আর
 এগোনো হলোনা...................

             -----------------
৩) সাধারণ
       শ্যামাপদ মালাকার
-"হ্যাঁ,-যা বলছিলাম,
একি তোমার চোখে জল!
তাহলে কি হতে চাও নিঃসঙ্গ প্রবাসিনী?
আমি অন্ধ, হতেই হবে স্ব-দেশী।
বিংশ বছর পরে আসবে যবে ফিরে,-সেদিন
খুঁজে পাবোনা জানি- বিরাট পৃথিবীতে
বিশ্বে রটিবে নাম
গাইবে পাপিয়া রচিত আরো,-অলিখিত কত গান!।
অনেকের থেকে হবে পৃথক
রবেনা পাশে সাধারণ
তোমার ছবি আঁকবে যারা
তারাই মুছবে দু'নয়ন!
সমাজের জঞ্জাল হতে
শুনবো সেদিন অমৃতময় বাণী!
 দেখতে গিয়ে পাবোনা
মঞ্চটা রবে দূরে
আগের আসন বাবুদের-
 রবে শ্রমিকেরা পিছে।
কিছু গান, কিছু দান-
গাইবে আগামীর বাণী
সে বাণী শোষিবে রাবণের দল
মূল্য পাবেনা শ্রমিক!
নীরব হবে কোলাহল
দীপ নিভে হবে মঞ্চ সমাধীর প্রান্তর
দূর-কাননে গাইবে বিহগ
গভীর রাতের গজল!
ঝিঁ-ঝিঁর ঝংকার প্রকৃতির অলংকার
পরবে রজনী অঙ্গে
শিশিরের কণা তুলবে ফোণা
আমার রুক্ষ্ম কণ্ঠে।
করবে মোরে গ্রাস  পৃথিবীর নিঃশ্বাস
শীতের হিমাঙ্ক দিয়ে
নীরব হয়ে রব কঠিন শিলার মতো
কত স্মৃতির ভিড়ে
দু'চোখ বুজে রবে 'সে' সেদিন
চাইবে না কারু পানে
কখনও ছুটে যাবেনা মঞ্চে পাওয়ার দাবী নিয়ে
চিনতে গিয়ে ব্যর্থ হবে
হিমের চাবুকে রবে প্রসারণ
দু'ফোঁটা অশ্রুর রাখেনা দাবী
কোনো কালে কোনো সাধারণ!"।
              ---------------

৪) লেডি বাটন্
            সৌরভ বর্ধন
আট হাজার স্নায়ু
মুখ থুবড়ে এসে ডানা ঝাঁপটায়
( ১/৪ হিমশৈল = মটরশুঁটি) 
উত্তাল উন্মাদনা আছড়ে পরে
ক্লিটোরিস থেকে ভূমধ্যসাগরে
আমি মঙ্গোলীয় পুরুষ হই
আর তুমি শুক্রীয় নারী
যুদ্ধ নয় আনন্দময় বেদ-বিজ্ঞান
সমস্ত ভাষার বর্ণমালা সম্বলিত জিহ্বা
আস্তে আস্তে গভীর আপন হবার চেষ্টা
                        (অথবা)
শাদা বেড়াল তোমার সঙ্গী কিমবা
                                          কাকাতুয়া
অঙ্গুলিলেহনে বদলে যাওয়া পরিবেশে
তুমি মারিয়া বোনাপার্টা হতে গেলে না
আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রাখলে সমস্ত সুখ
জন্মপথের এক ইঞ্চি দূরে বা কাছে
প্রতিপ্রশ্ন ছুড়ে দিলে - স্বাধীনতা
বয়স মানে না।
            -------------

৫) নতুন বসন্ত
      প্রশান্ত দত্ত
বরফ ঢাকা হ্রদ,তার অনেক নীচে
      আমার পৃথিবী।
তোমায় নিয়ে,অন্য আমি
        নতুন তুমি।
 
ক্ষয়ে যাওয়ার আগে
     মরণকে ঘুম পাড়িয়ে
তোমার অঙ্গ সুবাস গায়ে মাখি।
    শ্বেতচন্দন মুছে দিয়ে
        তোমার মুখই মনে করি।
মোমের শরীর পুড়িয়ে
    আর বরফকুচি সরিয়ে
নগ্ন শৈলচূড়ায় নোঙর ফেলি।
     গোলাপ গন্ধের উন্মোচনে
তোমার হৃদয়রেখা ছুই।
আজ চাঁদ অনেক কাছে,
    প্রাগৈতিহাসিক অপেক্ষা
পাথরের শয্যায়- ধৈর্য অস্তমিত
      এসো মিলিত হই।
বৃষ্টিতে ভিজে এসো আমার কাছে
     নতুন বসন্তের ব্যবস্থা করি।
               -----------

 ৬)      তবু
               অসীম কুমার ঘোষ
           ‎
বিশ্বাসহীনতার আঁধারে
মানুষ আজ হৃদয়হীন-যন্ত্র
তবু শাশ্বত চেতনার আধারে
বিশ্বাসই আজও বীজমন্ত্র।
সুখ আর অসুখেতে জড়িয়ে
নির্মল আশারা বিপন্ন
তবু হৃদয়ের ডালপালা ছড়িয়ে
ভালবাসা এখনও অনন্য।
বিরামহীন অসুস্থ চাহিদায়
স্বার্থেরা আজ সব নগ্ন
তবু জগতের কল্যাণ সাধনায়
বহু প্রাণ সততই মগ্ন।
হৃদয়ে স্বপ্ন কিছু একেঁ রাখা
জীবনে প্রাপ্তি বড় অল্প
তবু সুনিপুন যত্নে বেঁচে থাকা
বেঁচে থাকা চিরদিনই শিল্প।
          -------------

৭) তোর জন্য
     কৃষ্ণেন্দু দাসঠাকুর
রাস্তা বরাবর হাঁটছি।আলপিন সাঁটা পথও এসেছে
তবু ইঞ্চি মেপে ঠেঁস মেরে আগলে রেখেছি
ঠিক কতটা প্রয়োজন তা আমার জানা নেই
বেশ কয়েকবার ঘেঁটে'ঘ করে দিয়েছি।বন্ধ রেখেছি
আবার অপ্রত্যাশিতভাবেই হাত ধরেছি
মাঝে মাঝে রাতের অন্ধকারে---
শব্দগুলো ককিয়ে ওঠে।আমি অসম্ভব যত্নে প্রসব বেদনা উপভোগ করি
ন'মাসের প্রসূতির পেটের উপর হাত রাখি
তিরতির শব্দে স্লেফ ভরে।বাকিটা...
              --------------

৮) কথার ফাঁকে ছুঁয়ে থাকে
          মৌসুমী ভৌমিক
কথার ফাঁকে ছুঁয়ে থাকে 
যতই আমি দূরে রাখি
কথার পিঠে চাবুক সাঁটি
আড়চোখেতে সামলে রাখি-
স্মরণ করাই পরিসীমাটি-
কিই বা তাতে এলো গেল
খাটুনিটাই হলো মাটি। 
তা বলে কিছু মন্দ না, হয়ত ভাল 
কথার বাঁকেই মনকে রাখে
একটুখানি যদিও বা অগোছালো-
যদিও নয় পরিপাটি, তবুও বেশ মিশুকে
মিষ্টিকথা মিশিয়ে রাখে
সর্বদাই হাসিমুখে - মনের মাঝেই মনকে রাখে। 
কথার ফাঁকেই ছুঁয়ে থাকে।
              ----------

৯) চলার ছন্দ
         পাখি পাল
নিত্যদিনের কোলাহলে
জীবন খোঁজে ছন্দ....
চাও যদি মুক্ত হাসি
ভোলো দ্বিধা দ্বন্দ্ব....
মনের মাঝেই সুখের বাস
দেখতে না পায় কেউ....
বাহির পানে বৃথাই খোঁজা
পাড়ে বসে হাতড়ে ঢেউ....
জগতে যা আছে ভালো
তা তো সক্কলে চায়....
বাঁচার মতো বাঁচতে হলে
কৌশলখানি শিখতে হয়....
মন কে বসাও পদ্ম বনে
বৃন্ত থাকবে ভেসে....
মূল যাক গভীর প্রাণে,দেখো
হৃদয়-পুষ্প ফুটবে হেসে....।।
            -------------

১০) ওরা কাজ করে
         রাণা চ্যাটার্জী 
ওই দেখা যায় ফ্ল্যাট বাড়ি ,
     উঠছে শহর গড়ে ,
   পাশেই দেখো নর্দমা ,
   হাজার খানেক কুঁড়ে ।।
কোটিপতির বাংলো বাড়ি ,
     সাজছে  অট্টালিকা,
রাত দিন ঘাম ফেলছে পায়ে,
     শ্রমিক ,মজুর ঠিকা  ।
    প্রতিশ্রুতির বন্যা আছে ,
      নেই গো এদের বাড়ি ,
   ঝুপড়ি ঘরে গুমরে কাঁদে ,
   অস্বাস্থ্যকর বাতাস ভারি।
  তবুও এরা কাজ করে যায় ,
      ঘোরে, উন্নয়নের চাকা ।
   সিন্ডিকেটের ভাঁওতা বাজি ,
   প্রতিশ্রুতিই ফাঁকা ।
   শিক্ষা ,স্বাস্থ্য ,আশ্রয় চাই ,
       বাঁচার একটু আলো ।
   দেশের ,দশের প্রগতি তে 
         মন  কি ভরালো ?
           -------------

১১)  " না বলা সংলাপ "
 ‎         বলাইদাস
একবার ভালোবেসে দ্যাখ্ বুকের ছায়াপথ কেমন বরফ শীতল হয়
সোনালী স্বপ্নগুলো ধীরে ধীরে এভারেস্ট শিখরদেশে স্থান পায়
কি দেখছিস অমন করে মুখের দিকে তাকিয়ে ? কি ভাবছিস মনেমনে, লজ্জা, ঘৃণা, ভয়!
আবছা অন্ধকারে জড়িয়ে ধরে আনকোরা চুমুর উথালপাতাল ঢেউ। দুষ্টুমিষ্টি সবুজ হাসি পঞ্চমীরচাঁদ,  চাঁদের গায়ে লিপস্টিকের
দাগ। জানি কেউ কাউকে ছাড়া বাঁচবোনা, তবু বুকের ভেতরটা
কেন এত কানাগলি। শুভ কামনা তো দুজনেই করি,দিন রাত।
সব কথাতো দু'ঠোঁটের মাঝে সবসময় আসেনা।বুঝে নিতে হয়
চোখের তারায় নাচে প্রেম যমুনার ঢেউ--
শিশিরসিক্ত আলপথ জোনাকির গল্পগাঁথা যতই অন্তরায় হোক
চিনের প্রাচীর তবু চিরসবুজ রেখো মনের রুপালী ইচ্ছা।
চল একটি সাঁকো রচনা করি, পারাপার করুক গ্রহ নক্ষত্র আর
জীবনের না বলা বহুসংলাপ।
কাছে আয়, ছুঁয়ে দ্যাখ্ সব পাপ ধুয়ে যাক্ নদীর জলে.....
                 ----------------

১২) মৌমাছির মৌচাকে
              আমিরুল ইসলাম
           রানী থাকে সুখে,
     পুরুষ মাছি ভোগে থাকে
        শ্রমিক থাকে দুঃখে।
         রানীর ওই মৌচাক
        শ্রমিকের হাতে গড়া,
  ওরা শ্রমিক! ওদের জন্য থাক
           রোদ বৃষ্টি খড়া।
      বাস্তবে তো এটাই হয়,
যেখানে মুনাফা লোভীদের ভয়,
     মুনাফা লাভের আশায়
    শ্রমিকের রক্ত শুষে খায়।।
   তারা তো থাকে উপর তলায়,
   সেখান থেকেই ছড়ি ঘোরায়,
    যেখানে শ্রমিকরা জর্জরিত
  মালিকেরা সেখানে আলোকিত।
       এইভাবে যতো দিন যায়,
      ফুলে ওঠে তারা মুনাফায়,
       শ্রমিকের শ্রমে রক্ত ঝরে
     আর মালিকের লোভ বাড়ে।।
                 ------------

১৩) অসুস্থ কলম |
        সুদীপ্ত সেন(ডট.পেন)
কলমের জ্বর, মেপেছে থার্মোমিটার ১০২
খাতার পাতায় ঔষধ ডাক্তার লিখে গেছে
কিন্তু যাবে কে? পাতাতেও অসুখ করেছে
ঘরে আমি ছাড়া আরও একটা চুরুট
একাকী বাতাস ঘরের ভেতর আমার হাতে
চুল সরে গেলে চশমার কাচে আবছা আবরণ
নিশ্চয় কম দেখে, তার মানে আমিও কাবু,
আর লেখা ওতো আর আসে না
ফিরিয়ে দিয়েছি বলেছি ছুটি যাও।
আমার পত্রিকার কাজ করে অন্য অনেকে
সেই রাস্তায় অনেকদিন যাইনি, ইচ্ছেও করেনা
ঘুমহীন চরুট নিভে গেলো একাকী ধোঁয়া ফেলে
যেমন সন্ন্যাসি নিভে গিয়েছিল সেদিন বিকেলে!
                  ------- ---------

১৪) প্রেয়সী তোমার জন্য
              ---অমিত পাত্র
প্রেয়সী, তোমার স্নিগ্ধ নয়নযুগলে
থমকে আছে আমার দিশা,
লিপস্টিকে মোড়া ওই স্মিতহাস্য অধর
মনের নীল নীলান্তে ঘোষণা করে
সূর্যোদয়ের দাবি ।
তোমার চুলের বিন্যাসে ঝরে পড়া রঞ্জনরশ্মি
মনের গভীর অন্ধকারে বায়ালুমিনিসেন্ট।
আমার হৃদয়ের প্রতিটি রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে
ক্যাথোড রশ্মির ন্যায় ধেয়ে আসা তোমার তুমিত্ব ।
প্রেয়সী তোমার স্বপ্নে এক হয়ে যায়
আমার তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ, আলফা-বিটা-গামা ।
আকাশের বুকে ভেসে আসা নীল সাদা মেঘ
যেন তোমার প্রতিচ্ছবি আঁকে মনের ক্যানভাসে৷
তাই আজ " আমার পরানে যাহা চাই , তুমি তাই, তুমি তাই গো..........."
            ---------------

                  (গল্প)
১) মোনা আভানার বাবা
         সায়ন্তনী বক্সী
'মোনা আভানা' নামটা বিদেশী, কিন্তু বন্ধুরা আজকে যার গল্প তোমাদের শোনাবো সে কিন্তু বিদেশী না। পশ্চিমবঙ্গের একটা ছোট্ট গ্রাম সারেঙ্গা, সেখানে থাকে পাঁচ বছরের সায়নী। জেলার নামটা আর বললাম না, কারণ তাতে হয়তো কারোর অসুবিধা থাকতে পারে। কি অসুবিধা তা গল্পটা শুনলেই বুঝে যাবে আশা করি। এই কথাগুলো শুনতে শুনতে এবার তোমরা নিশ্চয় ভাবছো, মোনা আভানা কোথায় গেলো? এতো সায়নীর গল্প শোনাচ্ছো! আরে বাবা বলছি, এতো তাড়া কিসের? সায়নীর বাবাই সায়নীকে আদর করে মোনা আভানা নামে ডাকেন। ডাক নাম, অথচ একটু খটোমটো তাই না? আমার কিন্তু সায়নীর বাবার মতোই রাশিয়ান নাম বেশ লাগে।যাইহোক, এবার আসল গল্পতে ফেরা যাক; কথায় কথায় সময় তো অনেকটা চলে গেলো। গল্পটা সায়নীর ছোটবেলার, এখন সে যদিও অনেক বড় হয়ে গেছে; তবুও ছোটবেলার স্মৃতি কেইবা ভুলতে পারে। তোমরা কী বলো? সায়নীদের গ্রামটা নদীর ধারে, ওপারে বাটানগর। সেখানে যেতে হলে খেয়া পারাপার করতে হয়।সায়নীর বাবা স্থানীয় পঞ্চায়েত দপ্তরে চাকরী করেন আর মা গৃহবধূ। রোজ সকাল ৯টা নাগাদ দুধের সাথে কমপ্ল্যান খেয়ে কাছের অঙ্গনওয়ারী কেন্দ্রে মায়ের হাত ধরে রওনা দেয়। এ তার রোজকার কাজ। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে হেঁটে মিনিট দশেক সময় লাগে। রোজ সায়নী দেখে তার বয়সী ছেলে-মেয়েরা ব্যাগ পিঠে নিয়ে দল বেঁধে কলরব করতে করতে স্কুলের দিকে চলেছে, তারও ভীষণ যেতে ইচ্ছে করে। তা সত্ত্বেও কৃষ্ণেন্দু বাবু চান না, তাঁর মোনা আভানা ৬ বছরের আগে স্কুলে ভর্তি হোক। কারণ তিনি মনে করেন বাচ্চাদের অন্তত ছয় বছর বয়স পর্যন্ত খেলাধূলা করার সুযোগ দেওয়া উচিত। তবে তিনি নিজে মেয়েকে পড়ান বাড়ীতে।শেখান বাংলা, ইংরাজি দুটোই। মা পারমিতা দেবীও অবসর সময়ে মেয়েকে পড়াতে বসান। তবে সায়নীর মায়ের থেকে বেশী বাবার কাছে পড়তেই ভালো লাগে; কারণ মা বড্ড বেশীই বকাবকি করেন আর রেগে যান তাড়াতাড়ি। তারপর তার দুধ-কমপ্ল্যান একেবারেই নাপছন্দ, তবুও মা জোর করে খাওয়াতে চান। বড়রা যে কবে ছোটদের বুঝতে শিখবেন তা কে জানে? সায়নী যৌথ-একান্নবর্তী পরিবারের মেয়ে হলেও, বাড়ীর প্রত্যেকে নিজেদের মতোই থাকেন। বড়দের মধ্যে বিশেষ বনিবনা না থাকলেও ছোটরা কিন্তু ভাইবোনদের ভালোবাসার কিছু কমতি রাখেনি। সায়নী মারপিট করতে তেমন পটু না, তাই তার মা খুব একটা কারোর সাথে মিশতে দেন না। সে কাঁদতে কাঁদতে বাবার কাছে গিয়ে নালিশ জানায়। "আরে, তুমি ওকে সবার সাথে মিশতে না দিলে ও মেলামেশা করতে শিখবে কী করে?" কৃষ্ণেন্দুবাবু পারমিতাদেবী কে জিজ্ঞেস করলেন। সায়নীর মা অনুযোগের সুরে বললেন, "তুমি তো সারাদিন অফিসে থাকো। মেয়েকে তো আমাকেই সামলাতে হয়। তুমি কী বুঝবে! তুমিই ওই মেয়েকে আশকারা দিয়ে মাথায় তুলেছো!" এই নিয়ে দুজনের খিটিমিটি শুরু হয়ে যায়। খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বেগতিক বুঝে অন্য ঘরে চলে যায় সায়নী। বাবার প্রতি মায়ের যতই অভিযোগ থাক না কেন মোনা আভানা কিন্তু বাবার বাড়ীতে ফেরার অপেক্ষাতেই উন্মুখ হয়ে থাকে। মায়ের চুল আঁচড়ে দেওয়া, টিপ পড়ানো, ফ্রকের ফিতে বেঁধে দেওয়া কোনো কিছুই তার পছন্দমত হয় না। অথচ বাবা ঠিক মনেরমত করে চুল আঁচড়ে, লালচে গোলাপি কুমকুমের তারা টিপ পড়িয়ে আর চমৎকার সুন্দর ফ্রকের ফিতে বেঁধে দেন। মার এমনকি শ্যাম্পু করিয়ে দিলেও তার মাথায় যেন ব্যথা হয়ে যায়। বাবা রোজ ফিরে এসে তাকে কথামালা, বোধদয়, পঞ্চতন্ত্র, হিতোপদেশের গল্প পড়ে শোনান। বড় গল্প হলে একটা, আর ছোট গল্প হলে দুটো। তারপর বলেন মহাকাশের গল্প, তারাদের সৃষ্টিরহস্য-- অবশ্যই তার বোঝবার মতো করে। বাবার গল্প পাঠের জাদুতে হারিয়ে গিয়ে সে পৌঁছায় সেই নাম না জানা দেশে। প্রত্যেক দিন গল্প শেষের পর তার মনে হতে থাকে, গল্প এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় কেন? বাবা কেন সারা সন্ধ্যা, সারা রাত গল্প বলেন না? সত্যিই ভারী অন্যায়! রোজ বিকেল বেলা নদীর ধারে ঘুরতে যেতে খুব ভালো লাগে সায়নীর-- কেমন ঝিরঝির করে বাতাস বয়! তার অন্য বন্ধুরাও সেখানে যায়। তালপাতার ছোটো চাকতি বানিয়ে হাওয়ার দিকে ধরে থাকে আর সেটা বনবন করে ঘুরতে থাকে। সায়নী ওমনটা তৈরি করতে পারে না, তবে তার বাবা তাকে একবার তৈরি করে দিয়েছিলেন-- জিনিসটা দেখতে অনেকটা বায়ুকলের মতো। আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল সেদিন সে। তারপর সেটা একদিন কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। বাবা আবার করে দিলেন তৈরি; এবার কিন্তু সে রেখে দিলো সযত্নে। এই যা! আজ তো চাকতিটা নিয়ে আসতেই ভুলে গেছে সে। এমন ভুলো মন হয়েছে না! যাইহোক, সমবয়সী সাঙ্গপাঙ্গদের জুটিয়ে নদীর ধারে সিমেন্ট বাঁধানো চাতালে ছক কেটে কিতকিত খেলতে লাগলো। এমন সময় জুলি আর তুলি এসে হাজির। এরা দুজনেই সায়নীর থেকে বড়জোর বছর দুয়েকের বড়ো। কিন্তু এনাদের সব কথাই মেনে চলতে হয়, কারণ এনারা দুজন সম্পর্কে তার পিসি হন! সায়নীর কাছে বিষয়টা হাস্যজনক হলেও পিসিত্ত্ব ফলাতে এই দুই মহিলার কেউই কম যান না! তবে আজ ওদের বেশ মনমরা বলে মনে হলো।"জানিস মানু, আজ না মা কু পেটান পেটালো!( সায়নীকে ওরা দুজনেই মানু বলে ডাকে) কুটনো কুটে রাখতে বলেছিল, রাখিনি তাই!" দুঃখী দুঃখী মুখে তার দুঃখের কথা জানায় তুলি। " তোর কি ভাগ্য রে মানু! আমাদের বাড়ীর এমন কোনো ছেলে-মেয়ে নেই যে তার বাপ-মার কাছে পিটুনি কি বকুনি খায় নি; শুধু তুই ছাড়া।" একথাটা সত্যি, কারণ সায়নীর বাবা গায়ে হাত তোলা একেবারেই পছন্দ করেন না। অকারণে বকাবকি করাও পছন্দ করেন না। শুধু খেতে না চাইলে হাতা, খুন্তি যা হাতের কাছে পান তাই দিয়ে ভয় দেখান। তাই সায়নী জানতে চায়-- " কিন্তু তুমি মার খেলে কেন তুলি পিসি?" " আর বলিস কেন? মা আমাকে কুটনো কুটে রাখতে বলেছিলো, আর আমি ভুলে গিয়েছিলাম।" সায়নীর দু চোখে অসীম বিস্ময়--" শুধু এইজন্য মার খেলে!" "হুম" বলে চুপ করে যায় তুলি। সেদিনকার মতো আর কোনো খেলা হয় না। নিজেদের সুখদুঃখের কথা আলোচনা করতে থাকে-- কারণ সেটা শুধু বড়দেরই থাকে না, ছোটদেরও থাকে। ক্রমশ সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে, ঝাঁক বেঁধে পাখীরা ঘরে ফিরে যায় ওদের সামনে দিয়ে নদী পেরিয়ে ওপারে। "রোজ রোজ তোমার খাওয়া নিয়ে যতো বায়নাক্কা না! তুমি কুমড়ো খাবে না, পটল খাবে না, তবে খাবেটা কি শুনি? সারাদিন কি শুধু চকলেট আর আইসক্রিম খাবে?" পারমিতা দেবী রাগের সঙ্গে বলতে থাকেন।"বারে! তুমি খালি একই সব্জী আমায় রোজ খেতে বলো, আমার ভালো লাগে না খেতে"-- নাক মুখ কুঁচকে বলে ওঠে সায়নী। "দাঁড়াও, নতুন বাড়ীতে যাই; তারপর দেখাচ্ছি তোমায় মজা"। "আমার নতুন বাড়ীতে যাচ্ছি বঝি?" "হ্যাঁ যাচ্ছি। শুধু নতুন বাড়ী না, নতুন জায়গাতেও যাচ্ছি। তোমার বাবার চাকরিতে বদলি হয়ে যাচ্ছে তাই।" এরপর সায়নী বদলি কি, কেন হয় ইত্যাদি হাজার রকমের প্রশ্ন করতে থাকে। পারমিতা দেবী যথাসাধ্য উত্তর দিতে থাকেন। দুপুর পেরিয়ে বিকেল হয়। প্রতিদিন বিকেলবেলা সায়নীর কাজ তার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া। বাবা সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু তার। কিন্তু বাবার অনুপস্থিতিতে এই ব্ন্ধুর কাছেই সে মনের সব কথা খুলে বলে। কারণ সে জানে এই বন্ধু আর কাউকে তা বলবে না। বাবা বোঝেন, তাঁর মোনা আভানা অন্তর্মুখী; তাই যতটা পারেন সময় দেন-- চেষ্টা করেন তার মনের কথা বুঝতে। সে জানে না সাঁতার, তাই নদীর কাছাকাছি যেতে পায় ভয়; তাছাড়া মায়েরও নিষেধ আছে। দূর থেকেই চলে কথাবার্তা তার সদ্য পাতানো সইয়ের সাথে। যদিও কথোপকথন অনেকটাই একতরফা, তবুও সে যেন শুনতে পায় তার প্রশ্নের জবাবে নদীর উত্তর। সে উত্তর যেন ভেসে আসে পাখিদের ডাক, গাছের পাতার শব্দের মধ্যে দিয়ে। মনটা উদাস হয়ে যায় সায়নীর বন্ধুকে ছেড়ে চলে যেতে হবে ভেবে। নতুন জায়গায় নদীতো যাবে না সঙ্গে! "মা বলেছিল নতুন বাড়ীতে গিয়ে আমায় বেশ জব্দ করবে, সত্যি কথা বুঝি? বাবাও কি পালটে যাবে?" আপন মনে বলে সে। কী জানি কী হবে বাবার আদরের মোনা আভানার সাথে! আজ বসে কে বলতে পারে কালকের কথা। সে তো ভবিষ্যতই বলবে।
              --------$---------

২) কল্যানী লোকাল
            সৌরদীপ বর্দ্ধন
৯.৪৫। কল্যানী লোকাল।
সত্যচরণবাবু বেরিয়েছিলেন মেয়ের বিয়ের বাকি গয়নাগুলি নিয়ে আসতে।ট্রেনে আসতে আসতেতে ভাবছিলেন তার মেয়ে নন্দিনীর কথা। বিয়ের কিছুদিন বাকি,তারপরই তো চলে যাবে অনেক দূরে। পাত্র ভাল,ব্যাঙগালোরে সাথে নিয়েই যাবে তার প্রাণাধিক প্রিয় মেয়েকে।এই ভাবতে ভাবতে চোখে জল চলে আসছিল বারবার।
মানিকের শিয়ালদায় দোকান।ফিরছে সেও সারাদিন পর।তার ছোট মামনির জন্য নিয়েছে একটা পুতুল,খুব খুশি হবে মেয়েটা।
রুপকথা আর ইন্দ্র ফিরছে কলেজ থেকে।ঠিক কলেজ নয় কলেজ শেষে একটু ঘোরাঘুরি করে আরকি।canteen এ প্রথম দেখা তারপর বন্ধুত্ত আর এখন প্রেম জমজমাট।
বসন্ত বাউল আর তার দল যাচে কল্যানী, program আছে তাদের।বউ মারা গেছে অনেকদিন তাই আপাতত একাকিত্ত কাতায় গান দিয়ে।গুনগুন করে গান করছে সে।
অনি সদ্য চাকরি পেয়ে ফিরছে।ভীষন খুশি সে,মা কে আর কাজ করে সংসার চালাতে হবে না।বাবা মারা যাওয়া পর থেকে অভাবি সংসার মা কে খাটটেই দেখেছে সে।
অন্যদিকে অহনা আর দীপ দরজার দুপাসে দারিয়ে। দীপ আড়চোখে দেখে নেয় অহনার কাজল মাখা চোখ।চোখাচোখি হতেই দুজনেই চোখ সরিয়ে নেয়।
এভাবেই চলছিল ট্রেন টা বিভিন্ন গল্প নিয়ে।
রাত ১১টা।
সত্যচরনবাবুর স্রী ঙগান হারিয়েছেন।মানিকের মেয়ে দোকান থেকে ফিরে এসে দেখে বাড়িতে অনেক লোকজন।রুপকথার বাবা ফোন করেও পাচ্ছেন না।কল্যানী ক্লাব থেকে একি ফোন লাগছে না বসন্তদের। দীপের ফোন রিং করে যাচ্চে।
আর ওদিকে studio তে ব্যস্ততা।ভিড় সাংবাদিক দের।tv তে breaking news বিস্ফােরণে উড়ে গেছে কল্যানী লোকাল এর কিছু।কিধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।live সম্প্রচার চলছে।kolkata police স্পেশাল task force চলে এসেছে পলতায়।
রাত বাড়ছে।গন্ধ বেরচ্ছ, লোকজন কে সরিয়ে দেয়া হয়েছে,ধোয়া চারিদিকে।এগুলি tv তে দেখা যাচ্ছে। কিন্ত যা কেউ দেখতে পাচ্ছে না তা হল অই ধোয়া, আর্তচীৎকারের মাঝে কিছু কিছু পাওয়া,কিছু না পাওয়া, কিছু আশা,ভাললাগা আর কিছু সম্পর্কর গল্প গুলি মরে পড়ে আছে দূরে...আকাশের তারার সাথে আজ জলছে তারাও।
                   ----------------

                 (চিঠি)
_____প্রিয়তমাকে চিঠি
                  সুনন্দ মন্ডল
প্রিয়তমা,
       সৃষ্টি,
          আজ মন বড় ভারাক্রান্ত। তবু চিঠি লিখতে বসলাম। অন্তর্গহ্বরে যতই বেদনা থাকুক, তোমার কথা ভাবলেই কেমন যেন হয়ে যাই আমি। কত অজানা সুখের সান্নিধ্য পাই যেন।
          ‎তুমি কোথায় কেমন আছো? ভালো আছো তো! যেখানেই থাকো আশা করব ভালোই থাকবে। অবশ্য বিশ্বাস করি ভালো থাকবে কারন তুমি ভালো থাকলেই আমার বেঁচে থাকার সার্থকতা খুঁজে পাবো। আমি এখনো তোমাকে খুঁজি স্বপ্নে। বাস্তবের পথ ধরে অমলিন কল্পনার হাতছানিতে তোমাকে পাই। জানি হয়তো কোনোদিনই পাবনা আপন করে। তবু কাছে পাওয়ার, প্রেয়সী বানানোর অদম্য ইচ্ছেটুকু শেষ হয়ে যায়নি।
          ‎তোমাকে ভালোবাসি কথাটা আজও বলতে পারিনি। যতবারই বলব বলে সামনে গেছি তার থেকে বেশিবার পিছনে ফিরেছি দ্বিধায়-সঙ্কটে। তাই এখনো তুমি অধরা। বাস্তবের চিলেকোঠায় তোমার-আমার ঘর নাই-বা বাঁধা হলো! তবু ভাবতে ক্ষতি কোথায়? "তুমি আমার! একান্ত আমারই।"
          ‎তাই স্বপ্ন দেখি তোমার সেই মুখের নির্লিপ্ত হাসি, দেখি গোলাপি ঠোঁটে লেগে থাকা মাখনের স্বাদ। কানের পাশে চুল গুলো পাগল করে আমাকে। কপালের ডানপাশে চেরা সিঁথি! আহাঃ! সিঁদুরে রাঙালে কত সুন্দরই না লাগবে তোমাকে! সামনের দিকে সামান্য কোঁকড়ানো চুল, বিনুনি করা মাথার পিছনের চুল নিতম্ব দেশ ছুঁয়ে যায়। যখন শ্যাম্পু দেওয়ার পর এলচুলে থাকো তখন এক সাগর যৌবনিক রস উথাল-পাথাল করে। মনে হয় ছুটে গিয়ে ঘাড়ের পিছনে চুমু এঁকে দিই। কিন্তু উপায় নেই। সে পথ তো খুলিনি নিজেই। মনের কথাগুলো বলাই হলোনা। তোমার সেই নীল চুড়িদারটার সাথে সাদা লেগিন্স খুব ভালো মানাই। যখন লাল শাড়িতে নিজের রূপ মেলে ধরো তখন আমারও মনের পাখনা ময়ূরের মতো নেচে ওঠে। এইসব ভাবনাগুলোর সমাহার ব্যঞ্জনায় অন্তর্লীন রসের পুলকে ভরাট হয়। উমপার গ্রন্থিতে গেঁথে তোমার সর্বাঙ্গে চোখের জাদু দৃষ্টিতে অলংকারের প্রলেপ দিতে ভালো লাগে। সখি, মন-প্রাণ একাত্ম করে মেপে যাই তোমার পদধ্বনি। প্রতিনিয়ত উপভোগ করি ক্ষীন কটি দুলিয়ে তোমার চলন।
          ‎আজ এটুকুই থাক। বাকি কথা তোলা থাকল আগামীর ছাদে। সময় আর সুযোগ পেলে আবার হয়তো কলম-খাতা নিয়ে লিখতে বসব। অবশ্যই মনটা সায় দিলে উপহার দেব ভালো লেখা। আর কীই-বা পারি, শুধু কল্পনায় ভেবে তোমার সাথে সুখ মন্থন করা ছাড়া!
          ‎যাইহোক, তুমি থাকবে তো আমার লেখা পড়ার জন্য? পারলে আমার নিবেদিত চিঠির উত্তর দিও। অধীর অপেক্ষায় রইলাম।
          ‎                              
                             ‎                             ইতি ‎
                             ‎                     তোমার রূপে মুগ্ধ                                                       
                             ‎                       অব্যক্ত প্রেমিক   
                             ‎                       
   ‎                 _____¢¢¢_____  

                               


সূচিপত্র


        কবিতা                                         কবি

১) অন্ধকার                                   শান্তনু পাত্র

২) অতএব তোমার সঙ্গে                সন্দীপ ভট্টাচার্য

৩) সাধারণ                                 শ্যামাপদ মালাকার

৪) লেডি বাটন                             সৌরভ বর্ধন

৫) নতুন বসন্ত                             প্রশান্ত দত্ত

৬) তবু                                    অসীম কুমার ঘোষ

৭) তোর জন্য                          কৃষ্ণেন্দু দাসঠাকুর

৮) কথার ফাঁকে ছুঁয়ে থাকে      মৌসুমী ভৌমিক

৯) চলার ছন্দ                           পাখি পাল

১০) ওরা কাজ করে                   রাণা চ্যাটার্জী

১১) না বলা সংলাপ                   বলাই দাস

১২) মৌমাছির মৌচাকে           আমিরুল ইসলাম

১৩) অসুস্থ কলম                         সুদীপ্ত সেন

১৪) প্রেয়সী তোমার জন্য             অমিত পাত্র

এছাড়াও

গল্প

১) মোনা আভানার বাবা                 সায়ন্তনী বক্সী

২) কল্যাণী লোকাল  ‎                     সৌরদীপ বর্দ্ধন

                                 ও

প্রিয়তমাকে চিঠি(চিঠির আকারে)       সুনন্দ মন্ডল

             ---------জলফড়িং----------



সূচিপত্র


        কবিতা                                         কবি

১) অন্ধকার                                   শান্তনু পাত্র

২) অতএব তোমার সঙ্গে                সন্দীপ ভট্টাচার্য

৩) সাধারণ                                 শ্যামাপদ মালাকার

৪) লেডি বাটন                             সৌরভ বর্ধন

৫) নতুন বসন্ত                             প্রশান্ত দত্ত

৬) তবু                                    অসীম কুমার ঘোষ

৭) তোর জন্য                          কৃষ্ণেন্দু দাসঠাকুর

৮) কথার ফাঁকে ছুঁয়ে থাকে      মৌসুমী ভৌমিক

৯) চলার ছন্দ                           পাখি পাল

১০) ওরা কাজ করে                   রাণা চ্যাটার্জী

১১) না বলা সংলাপ                   বলাই দাস

১২) মৌমাছির মৌচাকে           আমিরুল ইসলাম

১৩) অসুস্থ কলম                         সুদীপ্ত সেন

এছাড়াও

গল্প

১) মোনা আভানার বাবা                 সায়ন্তনী বক্সী

২) কল্যাণী লোকাল  ‎                     সৌরদীপ বর্দ্ধন

                                 ও

প্রিয়তমাকে চিঠি(চিঠির আকারে)       সুনন্দ মন্ডল

             ---------জলফড়িং----------

শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮

শহুরে জোনাকি

এই শহর রোজ ডাকে আমায় ,
আঁধার রাতে আমি জোৎস্না নিয়ে খেলি,
চাঁদ কে আমি আনি মেঘের এপারে ,
কবিতা গুলি প্রেমিকার নামেই তো লিখি ,
প্রেমিকা প্রেমিক নামের গোলকধাঁধায়,
আজকাল প্রেমিক নামের সত্যি খোঁজে,
প্রেমের নাম টি এখন সস্তা জেনেও
দিনের শেষে আতর মাখাই চিঠির ভাঁজে,
প্রেমে অভিমান তো তোমার স্বভাব,
আমি তো দিই নি জবাব প্রেমিক ভেবে,
তাও তো আমি ,
প্রেমের নামেই শব্দ সাজি,
আজও আমি কবিতার চুম্বনে বেঁচে আছি,
বারান্দায় দাঁড়াই আমি আজও,
আমাকে ছিঁড়ে খেলো আজ যত জোনাকি ।।

              _____________ সুরজিৎ রায় (সুরজিৎ বাগ )
(আসিফার ধর্ষণ বিষয়ক কবিতা)
    "নিষ্ঠুরতার বিষাক্ত ছোবল"
             গগন ভুঁইমালী

আকস্মিক এক অশ্বনি সংকেত
অসহায় এক কপোত শিশুর চারপাশ জুড়ে,
হলুদ জলজলে বিষাক্ত চক্ষু বিশিষ্ট্য
একদল হিংস্র বনবিড়ালের হানা,
ওদের নিকট তুচ্ছ ক্ষুদ্র প্রানের বেদন কান্না।
ধারালো দন্ত নোখর দ্বারা আঘাত হানলো
ওই অসহায় দুর্বল বক্ষে,
পাবে না এ শিশু রক্ষে।
রক্ত মাংসের ক্ষুধার্ত ওরা তাই,
ভক্ষণে আত্মতৃপ্তি চাই।

নূতন রবিদয়ের অভিনব আলোকের পূর্বে
নিশীথ তমসায় ঘটল,
অণাঘ্রাত আত্মার অকাল লীন।
এ বড় মর্মান্তিক,বিষন্ন ভরা
মর্মকম্পিত প্রসঙ্গ।।..................
তোমার জন্য
---------------------
ঋতুপর্ণা ব‍্যানার্জী
২৯/০৪/১৮

তোমাকে পৌঁছে দিতে নীলসূর্য গিয়েছে অস্তাচলে
সন্ধ্যা নামে ধূর্ত চাঁদের আলোয়,লোলুপ শ্বাপদেরা বেপরোয়া হাত বাড়ায় রাতের কলিংবেলে
ব‍্যাভিচারী নগ্ন গাছেরা বেহিসেবী পাতা ঝরায় অবিরত।

তুমি কি দেখেছো
বই এর ভাঁজে থাকা ফিনিক্স প্রেমের গোলাপ ফসিল? দেখেছো কি বেওয়ারিশ বালুচরে আঁকা জ‍্যামিতিক বিবর্ণ দলিল?

কয়েন ছোঁড়া দূরত্বে ছেঁড়া আঁচলের এক যুবতী হৃদয়
আগুনে হরফে তোমারই নাম লেখে...
জরা আগলে বসে থাকে পদ্মকাঁটায়!

তুমি জানো কি?
চুপ স্টেশনের প্ল‍্যাটফর্মে
চুপ কথারাও তোমাকেই খোঁজে...!!

মেঘে ঢাকা তারাদের গান শোনা যায় নিশাচরের রিংটোনে....শুধু তোমারই জন্য; তুমি কি জানো??