নিজের লেখা কবিতা, নিবন্ধ, গল্প পাঠান হোয়াটসঅ্যাপ করে 7384324180 এই নম্বরে

সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫

হা রে আমার স্বাধীনতা - কলমে সোমা নায়ক


আমার অক্ষমতার মুখে এক মুঠো আগুন দিও তুমি 

হয় জ্বলতে জ্বলতে পুড়ে মরবো নয়তো মশাল হয়ে পথ দেখাব

তবু হাল ছাড়বো না কখনো 

যে এমন কথা বলতো হাজারবার

সেই মেয়েটার মুখাগ্নি হয়েছে 

গুণে গুণে আজ থেকে ঠিক ১৩ দিন আগে

কোলের শিশুটা তার কন্যা সন্তান, 

বিবর্ণ মুখে উজ্জ্বল দুই চোখ, 

খিদেয় তেষ্টায় প্রায় সারাদিন সারারাত সে কাঁদে।

এই ছিল তার অপরাধ।


মা এবং মেয়ে দুজনেই সমান অপরাধে অপরাধী।


হসপিটালের বেডে শুয়ে সদ্য মা হওয়া সেই মেয়েটিই একদিন তার স্বামীকে বলেছিল, তুমি বাবা হয়েছো আর আমি, মা। 

আমাদের সন্তান পৃথিবীর আলো দেখলো আজ। তুমি খুশি? তুমি খুশি তো?


বাবা নিরুত্তর। স্ত্রীর হাতটা নিজের হাতে ধরে শুধু বলেছিল, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরো, তোমাকে ছাড়া আমাদের খুব অসুবিধা হচ্ছে।


আমায় ছাড়া সংসার একেবারে অচল, এই ভেবে মেয়েটা সেদিন খুব খুশি হয়েছিল।


তাই, ছয় দিনের মাথায় বাড়ি ফিরে কোলের সন্তানকে বিছানায় রেখে ঢুকতে হয়েছিল রান্নাঘরে।


 কর্তার অফিসের ভাত, ননদের কলেজের নিত্য নতুন টিফিন, শাশুড়ির পুজোর ফুল, বাতের ব্যথায় গরম তেলের মালিশ থেকে শ্বশুরের জীবনে কঠিন নিয়মানুবর্তিতা সবকিছুই ঘড়ির কাঁটা ধরে একদম হিসেব মতো চলতো।


এ কেমন সাজ ধরে থাকো সারাদিন! অফিসের ওই গো গাধা খাটুনির পর দিনের শেষে বাড়ি ফিরে এমন ঝিয়ের মত মুখ দেখলে ঘরে আসার ইচ্ছেটাই যে চলে যায়। একটু আধটু সেজেগুজেও তো থাকতে পারো।


আর তোমার এই মেয়েটাকে একটু শান্তশিষ্ট বানাতে পার না।  সারা দিনরাত খালি কান্না আর কান্না, অসহ্য একেবারে....


 প্রিয় মানুষটার মুখে এমন কথা শুনে মেয়েটা প্রথমে হকচকিয়ে গিয়েছিল তারপর কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে তাকিয়ে ছিল নিজের স্বামীর দিকে।


 আস্তে আস্তে কেটে কেটে শান্ত স্বরে বলেছিল, সময় কোথায় আমার! মেয়েটাকে একটু খাওয়ানোরই সময় তো পাই না! সারাদিন এত কাজ, আমি যে আর পারি না গো...  অন্তত একটা ঠিকে কাজের লোক


ওখানেই থেমে যেতে হয়েছিল। কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই গালে এসে পড়েছিল একটা বিরাশি সিক্কার থাপ্পড়। 


আর কাজের লোকের পয়সা কে দেবে? তোর বাপ? নাকি তুই? হাজারে লাখে কামাচ্ছিস বুঝি আজকাল?


চেনা মানুষটা কেমন নিমেষেই যেন অচেনা হয়ে উঠেছিল সেদিন। 


সেই শুরু। অশ্রাব্য গালিগালাজ এর সাথে অকথ্য শারীরিক অত্যাচার।


কলেজ ক্যাম্পাসে যে মেয়েটা একদিন আগুন ঝরানো বক্তৃতা দিত, যার মুখের কথায় উৎসাহিত হয়ে আশেপাশের মানুষের রক্ত গরম হয়ে উঠতো সমাজ বদলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখতো, সেই মেয়েটি কেমন নীরব হয়ে গেল, বোবা হয়ে যেতে লাগলো। দিনরাত মানুষের অত্যাচার সয়েও সে প্রতিবাদী হতে ভুলে গেল


কিন্তু কেন? কেন এই নীরবতা?


ভালোবাসা!


 এই ভালোবাসাই তাকে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছিল সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন। আবার সব ঠিক হয়ে যাবে নিশ্চিত। কিন্তু হলো কোথায়।


মা শিখিয়েছিল, বোবার কোন শত্রু নেই।

বাবা শিখিয়েছিল, মেয়েদের শ্বশুরবাড়িতে একটু একটু মানিয়ে নিতে হয়। 

ভাই বলেছিল, আমার সংসারই আমি ঠিক মতো সামলে উঠতে পারি না, তোর দায় নেব কিভাবে। যত্তসব উটকো ঝামেলা।


যে মেয়েটা নিজের চেষ্টায়, পরিশ্রমে একদিন কলেজে ভর্তি হয়েছিল শুধু নিজের ইচ্ছে বা স্বপ্নকে প্রাধান্য দিয়ে অথচ আজকাল সে নিজের ইচ্ছেতে দুগাল ভাত পর্যন্ত খেতে পারে না। শরীর খারাপ হলে ডাক্তার দেখাতে পারেনা এমনকি নিজের কোনো সখ আহ্লাদ কোন কালে ছিল বলে আজ আর তার মনেও পড়ে না তবু সে স্বপ্ন দেখে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। 

কিন্তু হলো কোথায়!


মেয়ের ৬ বছরের জন্মদিনে বড্ড শখ করে বানানো একটু পায়েস আর দোকানে অর্ডার দিয়ে বানানো একটা কেকের সাথে মেয়ের জন্য নতুন একটা জামা কিনে আনা ... কয়েকটা লাল নীল গোলাপী বেলুনের সাথে মোমবাতি। রান্না ঘরের ছুরিটা রাখা ছিল পাশে। সমস্ত ব্যবস্থাটা সে কাউকে কিছু না জানিয়ে একা একাই করেছিল, বাড়ির সবাইকে সারপ্রাইজ দেবে বলে।


 এই ছিল তার দোষ। কাউকে কিছু না জানিয়ে কেন এত কিছু করা? আর এত টাকাই বা এলো কোথা থেকে? নিশ্চয়ই স্বামীর পকেট কাটে, নিশ্চয়ই ওর কাছে আরও টাকা আছে। 


কেড়ে নাও সুখ, ছিনিয়ে নাও স্বাধীনতা, মেয়ে মানুষের এত বাড়াবাড়ি কিসের!


সহ্যেরও তো একটা সীমা থাকে। মেয়েটারও হয়তো সেদিন সহ্যের সমস্ত সীমা অতিক্রম করে গেছিল। হয়তো দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছিল তার। 


তাই কেকের উপর রাখা জ্বলন্ত মোমবাতিটা যখন মেয়েটার মুখে ছুঁড়ে দিয়েছিল তার ঠাকুমা, মা হয়ে আর সে চুপ থাকতে পারেনি। ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল তার শাশুড়িকে। 


এ যে অপরাধের সাথে সাথে চরম অপমানও বটে!


তাই মায়ের অপমানের বদলা নিতে মায়ের ছেলে পাশেই পড়ে থাকা ছুরিটা নিয়ে এক লহমায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল ভালবেসে বিয়ে করা বউয়ের পেটে, নিজের সন্তানের মায়ের পেটে, কি নিষ্ঠুর ভাবে।


মেয়েটা আর কাঁদে না, শুধু ফ্যালফ্যালিয়ে তাকায়। দেখে, ঘরভর্তি লোকজনের মাঝখানে, বাবা, দাদু, ঠাম্মা এমনকি পিসি পর্যন্ত কেমন হঠাৎ হঠাৎ কেঁদে উঠছে। 

এই কান্না শুনতে তার একদম ভালো লাগে না। সে পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় ঘরে ‌কোনায় সাজিয়ে রাখা মায়ের ছবিটার কাছে। হাঁটু মুড়ে বসে, একমনে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে আর হাসে। কখনো মুচকি মুচকি আবার কখনো খিলখিলিয়ে। 


সে আর কাঁদে না, এখন সে কেবল হাসে, সারাক্ষণ শুধু হাসে ।

বুধবার, ১ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পাদকীয়- পুজো সংখ্যা জলফড়িং ওয়েব ম্যাগাজিন

 সম্পাদকীয়,

অরূপ সরকার



শারদ উৎসব বাংলা সংস্কৃতির এক অপরিহার্য অংশ। দুর্গাপূজা, কালীপূজা, ও দীপাবলির পাশাপাশি শারদ উৎসব আমাদের জীবনে এক অনন্য সাদৃশ্য এবং উৎসাহের প্রতীক। এই সময়টা শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এই উৎসবের মাধ্যমে বাঙালি সংস্কৃতির নানা রূপ, গান, সাহিত্য, চিত্রকলা এবং চলচ্চিত্রের বিশেষত্বকে আবারও উপস্থাপন করা হয়। জল ফড়িং পত্রিকা এই শারদ সংখ্যা প্রকাশের মাধ্যমে এমন এক সময়ের অনুভূতি এবং সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটাতে চায় যা আমাদের সংস্কৃতির মূর্ত প্রতীক।


শারদ সংখ্যা শুধুমাত্র একটি পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা নয়, বরং এটি বাঙালির মনোজগতের এক ধরনের পুনরুজ্জীবন। এটি একটি সৃজনশীল আঙ্গিকে উৎসবের আনন্দকে তুলে ধরতে সহায়তা করে। আমাদের পত্রিকা এই সংখ্যায় শুধু সাহিত্যিক রচনা, কবিতা বা গল্পের মাধ্যমে নয়, বরং চিত্রকলা, সঙ্গীত, অভিনয় এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মাঝে উৎসবের নান্দনিকতা তুলে ধরার চেষ্টা করছে। আমরা যে সময়টাতে আছি, সেখানে সামাজিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সংকট, এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা মাঝে উৎসবের খুশি এবং শারদীয় ঐতিহ্যকে ধরে রাখাটা এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই সমস্ত প্রতিকূলতার মাঝেও মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে শারদ সংখ্যা আমাদের কাছে এক প্রতিশ্রুতি।


আমাদের শারদ সংখ্যা শুধু একটি সাহিত্যপত্রিকা নয়, এটি একটি সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমও। এবারের সংখ্যায় আমরা শারদ উৎসবের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক রীতি, পুরনো শিল্পকলা, লোকজ সংস্কৃতি, এবং আধুনিক চিন্তার মেলবন্ধন নিয়ে আলোচনা করেছি। এছাড়া, আমরা এমন কিছু বিষয়ে আলোকপাত করেছি যা আজকের দিনে তেমন আলোচিত হয় না, যেমন নারীশক্তির উন্মেষ, সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা, এবং ধর্মীয় সম্প্রতির উদাহরণ। এই সংখ্যার মাধ্যমে আমরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছি সেই সমস্ত মহিলাদের, যারা সামগ্রিকভাবে সমাজে নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছেন, এবং তাদের অগ্রযাত্রা আমাদের পথ প্রদর্শক।


শারদ সংখ্যা একটি মঞ্চ, যেখানে সাহিত্য ও শিল্পের সর্বোত্তম রূপ আমাদের জীবনের মর্মস্পর্শী গল্পগুলিকে তুলে আনে। কিছু লেখা আমাদের হাসায়, কিছু লেখার মধ্যে লুকিয়ে থাকে জীবনের কঠিন বাস্তবতা, আবার কিছু লেখা আশা, প্রেম এবং ঐক্যের বার্তা দেয়। পত্রিকার পাতায় পাতায় বিরাজিত এই মিশ্রণ আমাদের এক প্রকার আবেগী উন্মেষের দিকে নিয়ে যায়, যেখানে আনন্দ এবং বেদনার সুর মিলিয়ে নতুন এক গল্প রচনা হয়।


এই শারদ সংখ্যা শুধু বাঙালি সমাজের এক বিশেষ অনুষ্ঠানকেই সেলিব্রেট করে না, বরং এটি আমাদের জীবনের সমস্ত গ্লানি, হতাশা এবং প্রাত্যহিক সংগ্রামের মাঝে আশার আলো হয়ে উঠতে চায়। আমরা বিশ্বাস করি, এই সংখ্যার মাধ্যমে পাঠকরা শুধু শারদীয় আনন্দ পাবেন না, বরং তারা নিজেরাও নতুন করে জীবনের নানা দিক খুঁজে পাবেন। আশা করি, জল ফড়িং পত্রিকার এই শারদ সংখ্যা সবার মন ছুঁয়ে যাবে, এবং আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং আধুনিকতাকে একত্রিত করে নতুন একটি দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করবে।


সবশেষে, আমাদের এই শারদ সংখ্যা একটি ছোট কিন্তু গভীর প্রতিজ্ঞা – যে প্রতিজ্ঞা হল, “সংস্কৃতি কখনো হারায় না, সারা বছর ধরে তার অস্তিত্ব জিইয়ে থাকে।”


কবিতা: পুজো - অংশুমান কর


 

পুজো

অংশুমান কর 



আকাশে ফুটেছে নীলরঙা আলো ফুল। 

হাঁসের মতন মেঘের দলটি ভাসে–

সাদা মনটিকে লজ্জায় ফেলে ওই 

উঠোনের কোলে সাদা শিউলিরা হাসে। 


মাইকে বাজছে চির পরিচিত গান, 

বউ চলে যায় চেনা পাল্কিতে–

কারা দোলা নেবে তাই নিয়ে রাগারাগি, 

রানি রাসমনি এসেছে কাটতে ফিতে।


বুড়িমার বোমা লুকিয়ে কিনেছে ছেলে, 

স্টেটাসে ক্রাশকে লিখেছে গোপন চিঠি–

সে কি দেখবে না, পড়বে না একবারও? 

লজ্জায় তার আনত হবে না দিঠি?


এসবই দারুণ, আগের মতোই ভালো 

শিশির-স্নিগ্ধ মধুরতা দিয়ে ঘেরা। 

তবে সবচেয়ে মিষ্টি দৃশ্য আজও

প্লেনে-বাসে-ট্রেনে বাঙালির ঘরে ফেরা।

কবিতা: ফেরা - দীপশিখা চক্রবর্তী


 

ফেরা

দীপশিখা চক্রবর্তী 


একলা পথে সন্ধে নামে এই শহরে,

মন ভেঙেছ ইচ্ছেমতো, চাইনি সুযোগ,

শব্দ এখন লিখছি কেমন ব্যর্থ ঘরে!

নাম দিয়েছ ভালোবাসা, মিথ্যে গুজব।


ফেরার তেমন ইচ্ছে তো নেই, ভুলের দায়ে,

আগন্তুকের সাজ সেজেছ, বলতে মানা?

একলা ভাবি, ও চোখে সব মিথ্যে ছিলো?

এতই বোকা, বুঝতে দেরী, ভুল ঠিকানা!


জানতে যদি কথারা সব ফুরিয়ে যাবে,

উল্টোদিকের পথটা ছিলো খুবই চেনা,

একলা তো বেশ ভালোই ছিলাম, রঙমশালে,

ধরলে যে হাত ছাড়তে কেন, সব অজানা।


তোমার জন্য কাব্য লেখা, জমিয়ে রেখো,

কষ্টগুলো জ্বালিয়ে দেবো আগুন খুঁজে,

আর কিছু না, দূরেই ভালো, থমকে যাওয়া,

আবেগগুলো ঝাপসা দেখায় তফাৎ বুঝে।


চাই না এখন তুমিও বোঝো একলা হওয়া,

ঝড়ের পরে হাঁফিয়ে ওঠো আঁধার-দিনে,

চুপ করেছি, হার মেনেছি, আড়াল এত,

ভালোবাসার ভয় এঁকেছি তোমায় চিনে।

কবিতা: জ্বর

 


জ্বর 

মৌমন মিত্র 



জ্বরে পুড়ছে বুঝি গা, ঘুমপাড়ানি নিশীথে 

লাল নোটিফিকেশন, উড়ালপুলে ভিড়, শারদ সংখ্যা

সব মিশে গেল অযত্ন আর নিঝুম ঘুম ঘোরে । 


এই চতুর্থীতেও আমি অসীম দূরত্বে, টের পাও কলমে? 


স্পর্শ কাতর, আকাশ, নদী, জল। যে বিচ্ছেদ —


ও ঠাকুর, কবে ফিরব? ভাবছ, কেন থাকে না ও? 

চিরসময়ের সময়টুকু ! 


এখন ভরাট ঠোঁটে যে প্রত্যাশা, এই দেশ  ভাগ 

তার কি কোনও দাগ হয়? সে তো সোহাগী বিলাসে 

কেবল ছুঁতে চায়, 

তোমার বুকে বোতামফুলের ঢেউগুচ্ছ, শরতের বেহাগ  

কবিতা: বৃষ্টি দিনের মতো


 

বৃষ্টি দিনের মতো

অনুব্রতা গুপ্ত



আজ তেমন কোনো দিন? 

যে-সব কথা বুকের মাঝে 

নিতান্ত চিনচিন।


হঠাৎ দূরে গেলে

যাদের হারিয়ে গ্যালো দুল 

দু-এক কলি শূন্য দিনে

সম্মিলিত ভুল।

আমরা সবাই জানি।


জানতে জানতে, বুঝতে বুঝতে 

সকালবেলা থেকে, নিজের মনে 

দু-আঙ্গুলে জড়িয়ে ধরি যাকে, সে শুকনো পাতা যত।

স্নান সেরে সে জল মুছেছে, বৃষ্টিদিনের মতো। 


মতান্তরে, ঘুমের ঘোরে, হারিয়ে ফেলি তাদের

ছোট্টদিনে, একরত্তি, খেলতে যেতো মাঠে।


বলত এসে, মন ভালো আজ। 

মন ভালো নেই। 

মনের কত কথা ...

আকুল হয়ে শুনত তারা চোখের নীরবতা। 


যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গ্যালো। 

এখন আমার ভুল হয় না। হয় না কক্ষণো। 


আমি এমনি বড়, এমনি সুদূর। 

দূরের থেকেও দূরে।

দুর্বিনীত দু'জন মানুষ, ভেতর ভেতর লড়ে। 



কবিতা: এক যৌগিক উপকরণ

 


এক যৌগিক উপকরণ 

চন্দ্রাবলী বন্দ্যোপাধ্যায়


একটা কোকিল ডাকা বসন্ত বিকেল হারিয়ে গেল তোমার ভাবনায়।

গাঙ্গুরের জলে ক্ষয়ে ক্ষয়ে আসা সূর্যের আলো 

আমার কাছে এগিয়ে আসার প্রতিবন্ধকতা নিয়ে,

দেখে আমার অসহায়ত্ব।

আমিও দেখি তার...

তোমার বুকের গভীরের ভালোবাসার আগুন

ধীরে ধীরে ফিরে যায় ডুবে যাওয়া সূর্যের কাছে।

আমি ফিরি ফেলে আসা দুরাশার কাছে।

মোহ ভঙ্গ হয়

দেখি দাড়িয়ে আছি একা আমি।

তখনও কোকিল একা ডেকে চলেছে

কোথায় ... কোথায় তুমি?



কবিতা: পৌলমী গুহ

 আশ্চর্য কুকুরেরা

পৌলমী গুহ




আশ্চর্য কুকুরেরা ভাবে


তারাই দেশ চালাচ্ছে।


অনাহূত ছুটে যায় শুধু


দৃশ্যমান ও অদৃশ্য শত্রুর দিকে


সামান্য উচ্ছিষ্টভোগী হয়েও


লড়ে চলে ক্ষমতার লড়াই।



আমি আশ্চর্য কুকুরদের দেখি


কেউ কেউ তাদের ঘৃণা করেন,


কেউ ডেকে শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করেন


আবার, কেউ মকশো করেন


চার হাত-পায়ে চলার,


ধীরে ধীরে বুঝি আমার মুখটা


আশ্চর্য কুকুরদের মতো হচ্ছে



আমিও একদিন শিরদাঁড়া ঝুঁকিয়ে


ছুটে যাব অদৃশ্য শত্রুর দিকে।

গুচ্ছ কবিতা- মৃগাঙ্ক মজুমদার

 



হারানো যাওয়া পিনকোড 

মৃগাঙ্ক মজুমদার 


যেসব ভালোবাসার নাম চিঠি

যে সব ছোঁয়া তে শব্দ ঝরে পড়ে 

সেই সমস্ত প্রেম 

সোনালী, গোলাপী খামে,

 জমতে থাকে, 

পোষ্ট করা হয় না কোনদিন ।


বয়েস গড়িয়ে হেমন্তে এলে 

সেই সমস্ত প্রেম 

পুরনো সব পিনকোড খুঁজে বেড়ায়।


হারিয়ে যাওয়া পিনকোডেরা 

প্রতিদিন সেই সব চিঠি 

একটা একটা করে 

খুলে খুলে পড়তে থাকে। 




সরকারী 

মৃগাঙ্ক মজুমদার 


যে কটা লাশ তুমি সরকারী হিসাবে 

জেনেছ,

গুনতিতে যেন, সংখ্যা অনেক বেশি ।!


সংখ্যা আসলে প্রলাপে মদত দেয়,

আর তুমি যদি জনগণের কেউ হও 

তা হলে তুমি প্রকৃত সংখ্যার হিসাব দেবে না ।


প্রকৃত সংখ্যা বললে তুমি সরকারীভাবে 

প্রলাপ পাগল নইলে দেশদ্রোহী তকমা পাবে । 

হাঁটু মুড়ে, মাথা নিচু করে সংখ্যার গরিষ্ঠতা 

স্বীকার কর ।

গণতন্ত্রে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা মানেই 

একনায়কতন্ত্রের একচ্ছত্র অধিকার ।

তুমি ঠিক করে নাও

তুমি শাসনে থাকবে

না শোষণে । 


এক কলামের সংবাদ

মৃগাঙ্ক মজুমদার


  

বিষাদের যেসব বেঞ্চ 
পার্ক জুড়ে একলা বসে থাকে 
সেখানেই মেঘেরা জড়ো হয়। 

ছায়ারা তখন মুখ লুকাতে ব্যস্ত 
চৌখুপী সম্পর্কে একের পর 
দেওয়াল উঠতে থাকে 
যাতে বৃষ্টির ছাঁট এসে 
নরম না করে দিতে প্যাঁরে 
মানবজমিন। 


শরীরের যে সব ভূখন্ডে 
একদিন ভালোবাসার সাম্রাজ্য কায়েম ছিল 
ফলনের প্রত্যাশা ছিল
সেই সব স্বপিল মুগ্ধতা 
দ্রাঘিমারেখায় বিলীন । 

বিষাদের যেসব বেঞ্চ 
আজ থেকে পার্ক জুড়ে একলা 
কাল এক কলামের নিররুদ্দেশ
খবর হতে পারে 
বা আত্মহত্যার।

কবিতা: আমার পুজো, তোমার পুজো

 


আমার পুজো, তোমার পুজো 

পাপিয়া মণ্ডল


শরৎ মানে কাশের দোলা, শিউলি ফোটা ভোর 

শরৎ মানে মেঘের পালক, ভাসে আকাশ ভর। 

শরৎ মানে পদ্ম শালুক, টইটম্বুর জলে 

শরৎ মানে মাঠে মাঠে ফসল থাকে ফলে।


শরৎ যেন ডাকে কাছে, যেখানে যে থাকে, 

মাটির টানে, মনের টানে ফেরায় সবাইকে।

বছর পরে ঘরে ফেরার আনন্দেতে মন

হাজার বাতির রোশনাইতে আলোকিত সারাক্ষণ।  


 শরৎ মানেই উড়ু উড়ু মন, ছুটির দিন গোনা 

পুজোর আগে সবাই মিলে জামাকাপড় কেনা।

চারিদিকে সবাই শুধু অপেক্ষাতে থাকে 

ঢ্যাংকুড়াকুড় বোলের কাঠি পড়বে কবে ঢাকে?


নিমেষ পরেই এসে যায় দিন, মায়ের বোধনের

স্বর্গ যেন নামে ধরায়, সঙ্গে সঙ্গে মায়ের।

চারটে দিন কেমন করে হয়ে যায় যে পার,

খুশির আমেজ বদলে হঠাৎই, মন হয়ে যায় ভার। 


বিদায় লগ্নে সবার মনেই ব্যথা জেগে ওঠে 

'আসছে বছর আবার হবে' সান্ত্বনা দেয় মনকে।

আমার পুজো, তোমার পুজো,অপেক্ষাতে মন

মা যাবে বিসর্জন, আবার আসবে মা কখন?