=========
সম্পাদকীয় ,
=========
বছর পেরিয়ে যায় খবর রাখে না আর, কেউই।সেরম ভাবেই জলফড়িং'র একটা বছর পেরিয়ে গেছে নভেম্বরে, যেন হাওয়ার মতো করে পেরল।
আর এবছরের প্রথম সংখ্যায় আমার,আপনার সকলের প্রিয় তিন মানুষকে স্পর্শ করে শুরুটা করতে চাইল জলফড়িং ওয়েব ম্যাগাজিন।
নতুন লিখতে আসা ছেলেমেয়ে যারা ভালোবেসে কলম ধরল,যারা নতুন প্রেমে পড়েছে কিংবা সেই মানুষটি যে বাটি ভরতি চানাচুর মুড়ি খেতে খেতে তার বহুমূল্যবান
এলইডি টিভি দেখছিল কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ল তার পুরনো সাদাকালো টেলিভিশনের কথা, পাড়ার লোকের কথা,নিজেদের দুঃসময়ের কথা কিংবা ধরুননা যারা তার প্রেমিকাকে ভালোবেসে পাগলী বলে ডাকতো এবং একআকাশ স্বপ্ন দেখেছিল কিন্তু পূর্ণ হয়নি সেইসব স্বপ্ন কিংবা লিখতে চেয়েছিল এক পৃথিবী বা হয়তো সদ্য বিয়ে হওয়া পুরুষটি ডিসেম্বরের শীতে শ্যাম্পু করা ডাইনি আর বিছানা নিয়ে কাটাতে চায় বছরের ১ লা ছুটির দিন। হা'হা এভাবেনা বলা মুশকিল আসলে সাহিত্যের এই তিন মানুষকেই স্পর্শ করার ইচ্ছে সবাই রাখে কমবেশি,কেউ মুখফুটে বলে, কেউ আবার বললে হাসে কিন্তু নিজে বলতে পারেনা।
যাই হোক, যে সমস্ত লেখক/লেখিকারা "তনয়" সংখ্যায় কলম ধরলেন তাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ, ভালোবাসা আর নতুন বছরের একরাশ শুভেচ্ছা।
------------| সূচিপত্র |-------------
•[কবিতা]
| কবিতা | | কবি |
১. ফিরছো যখন :- অনুপ কুমার রায়
২. জেগে ওঠো :- সুহৃদ মন্ডল
৩. মেলায় মুখোমুখি :- অমিত পাটোয়ারী
৪. জীবন :- সুষ্মিতা কর
৫. মুখোশ ধারি বেনিয়া যত:- রফিউল আলম
৬. অচল কবিতা :- হামিম রায়হান
৭. মেয়ে মানুষের সংসার:- বিকাশ দাস
৮. আমি শুধু বলতে এসেছি:- মন্নুজা খাতুন
৯. প্রেমিক হবে:- চঞ্চল ভট্টাচার্য
১০. চিরস্মরনীয়:- নরেশ বৈদ্য
১১. তনয় :- সুনন্দ মন্ডল
১২. শিকার:- তিথি সরকার
১৩. এসো নতুন বছর:- মৌসুমী ভৌমিক
১৪. মরসুমী মন:- অরূপ সরকার
১৫. বিরহ জানলা:- সুদীপ্ত সেন
•[প্রেমিকজনকে চিঠি]
১.)ঐটার খোঁজে :- কবি সুমিত দেবনাথ
২.)প্রিয় রোদ্দুর:- কবি অনুরাধা সরখেল
==============================
---|কবিতা|---
১.)
ফিরছো যখন
----------------অনুপ কুমার রায়
নিজেকে শুইয়ে রেখেছো সুরঞ্জনা, জড়িয়ে শরীরে নীচে স্বচ্চ বরফের স্তর,
সিক্ত বসনা ,যদিও পায়ের কাছে,ক্ষিণতয়া নদী, বালি, পাথর, তারপর।
সময় মেদুর ঘন সবুজ শ্যাওলার মতো, ছোপ, তবে স্মৃতির ফাঁকে ফাঁকে।
নীলচে আশ্বাসে ,শেষ সুরাহা নিয়ে, দূরে কোনো উজানিয়া বাঁশি ডাকে।
তোমাকে বলিনি ,গতবসন্তের সুখ করেছিলাম জমা, সেটুকুও নিলেনাযে,
অনেক দূরের পথ যেতে হবে খালি, খরচের হিসাব ভ্রান্ত জীবনের অকাজে।
মৃত্যুর কারণ খুঁজতে তৎপরি হাত, নিপুনতাহীন পদ্ধতিগত কেটেছে হৃদয়,
ডাক্তারী কাগজ নির্দ্বিধায় বলছে সেচ্ছাচারী, যদিওজানি আসলে তানয়।
কিছুটা সময়ের দাবী ছিলো বাকিটা বাঁচার অংকের নিমিত্ত আয়োজনে,
ক্লান্ত হৃদয়ের অভিশাপে শুকিয়েছে ফুল,নিজেরই পাঁজরের নীষিক্ত প্রাঙ্গনে।
ঊনিশের যৌবনা তেততিরিশে এসে,স্থলিত বসন,হিমায়িত রুদ্ধ দৃষ্টির দ্বারে,
নিরুত্তর প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে যাচ্ছে বাতাসে,ফেরার তাড়া ছিলো তবে কেন এসেছিলে সংসারে।
২.)
জেগে ওঠো
------------------সুহৃদ মণ্ডল
হলুদ শিসে্র দোলা লাগিয়ে, সবুজ ঘাসের পথ মাড়িয়ে,শাল মহুয়ার দেশে, কোকিলের কুহু ডাকে জেগে ওঠো ভোরের রাগিণী সুর;
বীরাঙ্গনার প্রতিরূপে, ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধে, ঘুম ভাঙ্গা সকালে জেগে ওঠো একবার;
মিথ্যে নীতি,অন্ধ সংস্কার দূর করে, চেতনা ফেরাও মনে।
দুর্ভিক্ষের হাহাকারে পিপাসার্ত মানবী ভাবনার শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয়, তোমার চরণে;
হে ধরণী,পরাবো আবার মুকুট, জাগবে নতুন করে।
শুরু হবে উৎসব, নিশান উড়বে বাতাসে;
শ-এ শ-এ আলো জ্বলে উঠবে, বরণ করবে সাদরে।
জেগে ওঠো, সেই সুরে, সেই ডাকে, সেই মনমাতানো জুঁই, শিউলি, টগর ফুলের সুবাসে,
তোমার শয়নে রেখেছি অশান্তি যদিও!
তবুও স্নেহশীলা রূপে,মাতৃত্ববোধে রক্ষা করো মানবের,
জেগে ওঠো প্রার্থনার অনুরোধে নয়, ভারসাম্যের দায়িত্বে;
শেষ অস্তিত্বের আগে চোখ খোলো সতেজ বাতাসে।
৩.)মেলায় মুখোমুখি
-----------------অমিত পাটোয়ারী
জয়বাবু এখনো কি রানাঘাটে ?
তোমার প্রশ্ন আরও এক যুবকের সাথে
এই লিলিপুট সরণীতে যদি আসো
তাহলে একা চেয়ার পেতে বসে থাকি সূর্যাস্তের পর।
অনেক অনেক প্রশ্নের উত্তর আমি জানিনা
আমাকে সঙ্গ দেয় নীল জ্যাকেট, তোলা কলার, সুচিত্রা...
তুমি ঠিক জানো, আজও আমি বেঁচে আছি কিনা!
৪.) জীবন
----------------সুষ্মিতা কর
শূন্যহীন বাতাস বয় ধূলিকণায় ভর দিয়ে
পাটাতনের যন্ত্রনা বৃদ্ধি হয় আমার পায়ের ঘায়ে।
তপ্ত হাতুড়ির আঘাত দেহে জলন্ত চিহ্ন আঁকে
শুষ্ক মাটি চেয়ে থাকে ঢেউয়ের হাসির ফাঁকে।
ওহে রবি! এ কি খেলায় মত্ত ভাই?
মায়ের তৃষ্ণার জল তোমার কাছে ভিক্ষা চাই।
তেজ তোমার সীমাহীন, যুগ হেসে কয়
জ্বলসানো বর্ণহীন পাতা মায়ের পায়ে পড়ে রয়।
প্রসারিত জীবনের হাত দুটি আজ শূন্য
তেজের ছায়ায় চাঁদও আজ বন্য।
জীবন প্রবাহিত সময়ের খেয়া রূপে;
আঁকা-বাঁকা রাস্তা নুড়ি পাথরে মণ্ডিত।
উষ্ণতার ছোঁয়ায় কখনও শীতল কখনও বা তপ্ত
প্রকৃতির ছলনা আজও পারিনি করতে রপ্ত।
নিয়মের বাঁধায় তাই পড়েছি গো ভাই
আজ আছি কাল নেই মৃত্যুপথে এগিয়ে যাই।
৫.) মুখোশধারী বেনিয়া যত
--------------------------মহঃ রাফিউল আলম
তোর বুকের উপত্যকা বেয়ে----
প্রেম খুঁজি নাভিদেশে। মানস মৈথুনে কবি হয়ে উঠি-----
নষ্টা চাঁদের মাথায় সতীত্বের ঘোমটা কিংবা প্রদর্শনী।
সুযোগের অভাবে কিংবা আমি গর্বিত মুখোশধারী সতী।
কাপুরুষের বীর্যে
তুমিই প্রকৃত বীরাঙ্গনা সোনাগাছি-মা।মুখোশহীন----
সতী কে?
টেবিলের নীচে হাত পাতে---
সুট-বুট পড়া ভদ্রলোকের দল!ঘামমাখা মানুষের রক্তে লাঞ্চ করে যারা!যে শাসকের তলপেটে
স্বৈরাচার!রং মাখে যে নেতার দল!কিংবা পরজীবী যত!
যে নারীর উরু রক্তাভ
হায়নার আঁচড়ে----যাদের ডিনারে নারী মাংস----
যখন বিচার পায়না ক্ষমতাহীন অস্তিত্ব।হয় প্রহসন যত---
শাসক---তখন তোমার সতীচ্ছেদ পর্দা নিয়ে সন্দেহ থাকে বৈকি!
৬.) অচল কবিতা
--------------হামীম রায়হান
হেমন্তের বিকালে ধান কাটা মাঠে-
দুষ্ট ছেলেদের আসর বসে,
শীতের বার্তা নিয়ে নামে কুয়াশার দল,
ঘাসের ডগায় জমতে থাকে জল।
অগ্রহায়ণের শেষ দিনগুলো মিশে পৌষে।
আধো আলো, আধো ছায়া অন্ধকার ঘরে-
স্বপ্নরা ডানা ঝাপটায়।
এক সময় ভাঙ্গে ডানা
হঠাৎ লক্ষীপেঁচা দেয় হানা-
সদ্য বানানো চড়ূই পাখির ঘরে।
৭.) মেয়েমানুষের সংসার
------------------বিকাশ দাস
পুরুষের অসুখ
সারিয়ে নিতে আসে মেয়েমানুষের শারীরিক
সন্ধির সুষমায় ।
পুরুষ নিজের জন্য বাঁচে । নিজের সুতানে নিজের সুরায় ।
পুরুষের সুখ মেয়েমানুষের আঢাকা শরীরের চিকণ শিরীষে ।
মেয়েমানুষ নিজের ঘর ছেড়ে ছুড়ে
অন্য বাড়ির উঠোন থেকে ঘর হয়ে উঠতে
এক জীবনও কম পড়ে জানলা দরজা ঠুকরে ।
শব্দহীন শরীর
মেয়েমানুষের রাত সংসারের এঁটো বাসন ধুয়ে
নিজের লাশ বিছিয়ে পুরুষের বাসনার কাঁটায় শুয়ে
পুরুষই পারে জোর করে বাগিয়ে নিতে নিজের ফুর্তি
ছিঁড়ে ছিঁড়ে খুবলে মেয়েমানুষের যুবতী স্তনের মূর্তি
দিগন্ত অবধি
নির্লজ্জ ভাঙচুর শরীরের বিরাগ নিরর্থ নিন্দিত রতিসার
দিনরাত্রির চৌকাঠে তবু মেয়েমানুষের নন্দিত সংসার
ঝাড়পোঁছ সেরে নিকিয়ে ঘর দুয়ার ।
৮.) আমি শুধু বলতে এসেছি
-------------------------মান্নুজা খাতুন
আজকের বর্নালী সন্ধ্যায় আপনাদের ডাকা সভায়
আমি কারো প্রতি অভিযোগ জানাতে আসি নি
আসি নি জীবনানন্দের মতো জন্মভূমিকে ভালোবেসে
দু এক কলি গান কিংবা কবিতা বলতে।
আসি নি দেশত্যাগের আত্মগ্লানিতে দগ্ধ হয়ে মধুর মতো কাব্যপাঠ করতে
আসি নি সুবোধের লেখা সমাজ বাস্তবতার বিরুদ্ধে দু এক চরন পাঠ করতে,
কিংবা ফিরোজার মতো অভিযোগের ঝাঁপি নিয়ে গলা ফাটাতে
আসি নি ধর্মাধর্ম নিয়ে এক প্রস্থ বকে যেতে
আসি নি দেশের উচ্চপদস্থকর্তাদের তীক্ষ্ণতীরের ফলায় বিদ্ধ করতে ।
আসি নি আমার ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করতে
আসি নি কবি নাম ঝুলিতে ভরে দর্প ভরে মঞ্চ থেকেই নেমে যেতে
আমি শুধু এসেছি
আমি শুধু তুলে ধরতে এসেছি
পাশের বাড়ির ছোট বোনটার কথা,
ওপাড়ার সুমিত্রার কথা
উকিল পাড়ার মেধাবী ছাত্রীটির কথা
আমি শুধু জানাতে এসেছি তাদের আজাহারী আর্তনাদের কথা
তাদের প্রতি অমানসিক অত্যাচারের কথা
শুধু বলতে এসেছি এরা কি বিচার পাবে না?
আমাদের সমাজ কি কোনদিনই পাল্টাবে না?
৯.)"প্রেমিক হবে"
-----------------চঞ্চল ভট্টাচার্য
যুদ্ধে যেদিন অস্ত্র দিয়ে রক্ত আঁকা বন্ধ হবে,
সেদিন হবে প্রেমিক সবাই,
গোলাপ দিয়ে যুদ্ধ হবে,
গোলাপ কাঁটাও মগ্ন রবে
প্রেমিক হবে।
তারাও যেদিন পণের যুদ্ধে মাতবে না আর,
পণের জন্য ভালোবাসা হবে সহস্র লাখ,
যুদ্ধ হবে গোলাপ , গোলাপ,
প্রেমিক হবে।
১০.)চিরস্মরণীয়
--------------নরেশ বৈদ্য
একটি ছোট্ট শিশু কাঁদছে পথের ধারে বসে--
হারিয়ে ফেলেছে ও যে নিজের বাবা মাকে।
পথচলতি কত মানুষ ,যাচ্ছে নিজেদেরই কাজে-
তবুও কেউই খোঁজ নিচ্ছে না ,শিশুটির কান্নার আওয়াজের।
এমন সময় হঠাৎ সেখানে আসে এক পাগলিনী,
বক্ষ মাঝে জড়িয়ে ধরে, শিশুটিরে কাছে টানি।
জনমানবের দল চিৎকার করে বলে ওঠে--
মারো ,মারো ঐ ছেলেধরা ডাইনীকে,
শিশুটি তখন ভয়ার্ত কন্ঠে
বার বার বলে ওঠে মেরোনা, মেরোনা ওনাকে।
জনতার ভিড়ে আওয়াজ শুনতে পায়নি ওই মানবিক মুখোশধারী গন
ততক্ষণে ওরা কেড়ে নিয়েছে পাগলিনীর প্রান।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ছোট শিশুটি বলছিল জনতাকে--
পাগলিনী মা ছেলে ধরা ডাইনি নয়কো মোটেও
তোমরা যখন কান্নার আওয়াজ শুনেও শোনোনি
পাগলিনী মা আদর করে নিয়েছিল আমায় কাছে টানি।
চোখ ফেটে এলো জল পাগলিনীর মরদেহ দেখে
নীরব হলো জনতার দল , নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে অবশেষে।
এর পরে পুলিশ বাহিনী আসে জিপগাড়ি করে
নিয়ে চলে গেল মরদেহ ও শিশুটিরে
সেইদিন টাকে আজও ভুলতে পারেনি এ জীবনে
মানবতার প্রথম দেখে শিহরিত হই মনে মনে।
১১.)তনয়
----------সুনন্দ মন্ডল
চালাঘরে আসন পাতা
নৈবেদ্য সাজানো কবিতার রসে
বিল্বপত্রে গড়ে তোলা পুজোর মাস।
শ্রীজাত-জয়-অংশুমান
পুরোহিত সেজে মন্ত্র দিয়েছেন কবিতায়
কাব্যের লালারসে ভিজে গেছে পাঠক হৃদয়।
তিন প্রজন্ম এক সূত্রে
যেন চর্বিত চর্বনে হীরক গাথা
রক্তিম অভিবাদন মূল্যায়নের পিঞ্জরে।
বাংলার গর্ব তোমরাই, প্রকৃত তনয়।
১২.)শিকার
-------------তিথি সরকার
ছোট বেলা থেকে আমার একটা শখ ছিল
শিকারে যাওয়ার,
কখনও সেটা হয়ে ওঠেনি
যখন সময় এল __
খুঁজে পেলাম ভালোবাসাকে
সবাই জানে শিকারের থেকে ভালোবাসা অনেক মধুর,
তবুও আমি ভালোবাসা চাই না,
শিকার করতে চাই।
কারণ আমি ভালোবাসাতে ভয় পাই,
"ভালোবাসা" কে ভয় পাই।
ভালোবাসা আনন্দ দেয়, নতুন প্রাণ দেয় ,
শিকার বেদনা দেয়,প্রাণ নেয়,
তবুও আমি শিকার করতে চাই।
জানি একদিন আসবে, অবশ্যই আসবে
যে দিন সমস্ত নারী জাতি সবাই চাইবে
ভালোবাসাকে দূরে ফেলে পুরুষ শাসিত
সমাজের পশুকে শিকার করতে।
সে দিন হবে দেশের উন্নতি, সমস্ত নারীর উন্নতি।
সেই দিনই আমি "ভালোবাসা "কে ভালোবাসব।
তাই আমি আজও ভালোবাসাকে ভয় পাই__
তাই শিকারে যেতে চাই, শিকার করতে চাই।
১৩.)এসো নতুন বছর
---------------- মৌসুমী ভৌমিক
বাড়িয়ে রেখেছি দুহাত
এসো নতুন বছর
ঝলমল উজ্জ্বল উদ্ভাসে
আলোকিত হোক চরাচর।
দিগন্ত জুড়ে নামুক আলো
সৃষ্টির নতুন আবেশে
নতুন বছর বাঁচুক এবার
বাঁচার প্রবল সাহসে।
বাড়িয়ে রেখেছি দুহাত
এসো ঝলমল দিন
সবুজ অঙ্গীকারে লেখা হোক
এবার কিছু মুহূর্ত অমলিন।
১৪.)মরসুমী মন
---------------অরূপ সরকার।
শীতকালীন রোদে হাসতে শেখায় কে?
ওপারার কোনো প্রেমিক মনের মেয়ে,
এভাবে তোমায় দেব না তো কথা ;
আগে অনুমতি নাও আমার থেকে চেয়ে ।
ওই দেখ হাসছ তুমি প্রেমিকজন সেজে,
তোমার জাতেই শ্রী এর শোভা আছে ,
তাই জানাচ্ছ অনুভূতি নিয়ে খেলে ?
যদি জানতে চাই কী করে করছো এমন ম্যাজিক,
বলবে তুমি বলব সবই তার আগে তো সময় বাঁধো হাতে
১৫.)বিরহ জানলা
---------------------সুদীপ্ত সেন
বাইরে আমার আকাশ ভর্তি তারা
বাইরে আমার পুকুরঘাটের পানা
রাতের আকাশ, মুক্ত জোনাকি পোকা
পাগলা ছিঁড়ছে বরাদ্দ রুটিখানা।
জানলা পেরিয়ে হাওয়াদের যাতায়াত
জানলা পেরল ঘরের হাওয়ার ঝাঁক
এপার থেকে ওপারের সংযোগ
বরং এবার প্রেমহীন হয়ে থাক।
শীতের কুয়াশা নিমন্ত্রণের আগেই
শহর পেরিয়ে আমাদের গ্রামে গ্রামে
নতুন সড়ক হচ্ছিল তোর জানি
আটকে পড়েছে প্রেম, বিরহের খামে।
কথা ভেঙে গেছে চুরমুর ভাবে হঠাৎ
মনখারাপের ঠিকানা জানে না সে তো
বহুদিন ওই বিচ্ছিরি হাসি-খানি
শুনতে পাইনি যেরকম আগে পেতো।
বিরহ কতটা কঠিন, যে কঠিনও সহজ হতে শেখে
বিরহ আমার দেখা হয়ে গেছে প্রিয়, চলে যেতে চাই প্রেম বন্ধক রেখে।
--| প্রেমিকজনকে চিঠি |--
১.)
ঐটার খোঁজ
------------------------------ নিউ ইয়র্ক,
ইউ.এস.এ
প্রিয়,
দ্বীপদা।
২৩ বছর ! ২৩টা বছর চলে গেল... কিভাবে চলে গেল উপলব্ধি করতে পারিনা। এই এতগুলো বছরের মধ্যে একটা বারের জন্যেও আমাদের মধ্যে চোখের দেখাটুকুও হয়নি। কি করে হবে?
আমিই তো মোটে এই তেইশটা দুর্গাপুজার মধ্যে দুটি দুর্গাপুজাই পেয়েছিলাম ভবানীপুরের সেই দাদুদের বাড়িতে আনন্দ উপভোগ করার। যাক গে সেসব কথা।
তুমি কেমন আছ এখন? শুনলাম তোমার নাকি একবার অ্যাটাক হয়েছে!! নিজের শরীরের যত্ন নিও। সারাজীবন তো অপরের সুখ-শান্তির কথা ভেবে ভেবেই জীবন কাটিয়ে দিলে। বাড়ির বড়ো ছেলে হয়েছ বলে কি সব দায়িত্ব তোমাকেই নিতে হবে? এখন তো নিশ্চই রুনু ও টুনুর বিয়ে হয়ে গেছে। অংশুমানের তো শুনেছি পাঁচ বছরের মেয়েও হয়ে গেছে। এখন হয়তো সে মেয়ে ম্যাট্রিক দেবে। সে দশবছর আগের কথা। দুর্গাপুজায় গিয়ে বৌঠানের মুখে শুনেছিলাম।
সেবার বৌঠানকে তোমার কথা জিজ্ঞেস করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। বিয়ের পাঁচবছর পরে যেবার ভবানীপুর গেছিলাম, সেবার শুধু জিঞ্জেস করেছিলাম দাদাকে তুমি বিয়ে করেছ নাকি?
সেই শুনে দাদা আমাকে কি অপমান করেছে তুমি জাননা। জানবে কি করে? তুমি তখন দুর্গাপুরে। সবে ব্যাঙ্কের চাকরিতে যোগ দিয়েছ।
দাদার সেই অপমানের কারণেই আমি বহু বছর আর ওখানে যাইনি।
আচ্ছা, তুমি আর বিয়ে করলেনা কেন? আমাকে না হয় তুমি ভালোবাসতে না!! তারজন্য কি সারাজীবনে আর কোনো ভালোবাসার মানুষ পেলে না? নাকি অন্য কোনো কারণ ছিল?
ভাই-বোন তোমার সবাই তো সুখে সংসার করছে। তাহলে তোমার ...
তুমি সেদিন যে কেন দাদাকে বলেছিলে আমাকে ভালোবাসো না,তা আমি আজও বুঝে উঠতে পারিনা। কিন্তু যে ভালোবাসা তোমার চোখে আমি দেখেছিলাম আমার জন্য তাকেও আমি বারবার অস্বীকার করতে চেয়েও পারিনি অস্বীকার করতে। কুড়ি বছর বয়স থেকে আজ ছেচল্লিশ বছর বয়স হয়ে গেল আমার। শুধু মাত্র তোমার সেই ভালোবাসা নিয়েই বেঁচে আছি।
তুমি আমাকে বিয়ে করবে না বলে যখন দাদাকে ফিরিয়ে দিলে তখন আমার এত কষ্ট হয়েছিল, এত কান্না পাচ্ছিল...
কিন্তু আমি একটুও কাঁদিনি। দাদা তার অফিসের বন্ধুর ভাই-এর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করল। আমার নীরবতাকেই ওরা সম্মতী মনে করে বিয়ে দিল। আমি কি করতাম বলো? একবছর হয়েছিল বাবা মারা যাওয়ার পর আর আমার বোঝা কেউ টানতে চায়নি। তাই আমিও নিরুপায় হয়ে ...
বিয়ের পর অষ্টমঙ্গলায় যখন ভবানীপুরে এসেছিলাম, তখন আশীর্বাদ নিতে তোমাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম।অনেক ভয়ে ও গোপনে তোমার মাকে তোমার কথা জিঞ্জেস করলে তিনি বলেছিলেন তুমি নাকি ব্যারাকপুর গিয়েছ চাকরির ইন্টারভিউ দিতে।আরও বলেছিল যেন তোমাকে ভুলে গিয়ে অক্ষয়কে নিয়ে সুখে থাকি। তাতেই নাকি তোমার আমার সকলের মঙ্গল।
যাই হোক, মঙ্গল চেয়েছিলাম বলেই আজ হয়তো এত সুখেও আমার আর শান্তি এল না। বিয়ের পর পরেই চলে এলাম এখানে। উনিও চাকরি করতেন সংবাদ সংস্থায়। মানুষ কত কর্মব্যস্ত এখানে তা হয়তো তুমি জান। অনুভূতির কোনো জায়গা নেই এখানে। উনি টানা দু-দিন, তিন-দিন হয়ে যেত বাড়ি আসতেন না। টাকা-পয়সার অভাব আমার কোনোদিনও হয়নি, অভাব ছিল শুধু ভালোবাসার।
ছেলটাও ঠিক বাপের মতোই হয়েছে। বাড়ি বলে হয়তো এদের কিছু নেই। আমি এই বিশাল বাড়িতে একা। এই শহরটাই কেমন যেন ভালোবাসাহীন। আকাশ নেই! সূর্য নেই!চাঁদ নেই!
মাঠ নেই! শুধু এই বড়ো বড়ো ইমারত। সুখ-বৈভব! কিন্তু ভালোবাসা নেই।শান্তি নেই।
একা বললে ভুল হবে। আমার এই একাকী জীবনে তোমার ঐ ক্ষুদে ক্ষুদে দুটি চোখে আমার জন্য যে সুবিশাল সমুদ্রের মতো প্রেম দেখেছিলাম তাই আমার সঙ্গী।
ভাবছি এবার পুজোয় ভবানীপুর যাব। তুমি এখন ওখানেই। আর দশ-বারো বছর হয়তো চাকরি আছে তোমার।
আর এইবার তোমার ঐ দুখানা চোখ দেখে উত্তর খুঁজব আমার মনের এতদিনকার প্রশ্নটির।
ভালো থেকো। যত্ন নিও তোমার শরীরের ও "ঐটার"।
ইতি,
তোমার সৃষ
২.)
প্রিয় রোদ্দুর,
এখন প্রিয় শব্দটা লেখার অধিকার আছে কিনা জানি না।আমাদের প্রেমটা সামাজিক স্বীকৃতি যে পাবে না তার আবেশ আমরা অনেক আগেই পেয়েছিলাম।মা ছোটোবেলায় বলতো জানো,কোনো মানুষ এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলে ঈশ্বর তাকে নিজের কাছে সযত্নে রাখে।তুমি কি তবে এখন ভালো আছো?এখন খেতে পাও দুবেলা মাছ,ভাত।ভাতের ওপর দু হাতা ডালের জন্য এপাড়া ওপাড়া কত ঘোড়াঘুড়ি করেছো একসময়।আমরা দুজনেই বাস্তবিক ছিলাম খুব।তোমার আমার জানালার মাঝের যে দুরত্বটা ছিল তা ধর্মের আচড় কেটে ক্ষত বিক্ষত করেছে বহু মানুষ।এখন তো মানুষ অনেক বেশি উন্নত,মোবাইল আর কমপিউটারের যুগ।মানষিকতা কি এক বিন্দুও এগিয়েছে?
তোমায় দেওয়া রোদ্দুর নামটা শুনে তোমার ছোটো খালার সেদিন কি হাসি।বাস্তবিক আমি বোধ করি তোমায় সেদিন পরিবারের কাছে খুব ছোটো করেছিলাম।হিন্দু নাম যে তাদের অপছন্দের।নামেরও যে ধর্ম থাকতে পারে সেদিন প্রথম বুঝেছিলাম।প্রতিটা রাত কাটতো বাবার মায়ের ওপর অকথ্য অত্যাচারের আওয়াজে,আমিও সেই অত্যাচারে মাঝে মাঝেই সামিল হতাম।হাতে গায়ে অজস্র লাঠির,আর চরের দাগ,এখন অবশ্য দাগের সংখ্যা বেড়েছে।রোজ সকালে তুমি মসজিদ যেতে আমার জানালার সামনে দিয়ে আর আমার ঘরটা আলোয় ভরে উঠতো।তোমার এক পলকে মিষ্টি হাশি আমার ব্যথাগুলোয় মলমের মতো কাজ করতো।আলোয় ভরে যেতাম আমি,তাই নাম রেখেছিলাম রোদ্দুর।
আচ্ছা রোদ্দুর জানো,তোমার কবিতার খাতাগুলো ওরা ছেপেছে।যেসব কবিতা তুমি নিয়ে ঘুরেছো কয়েকশো প্রকাশকের কাছে দুটো ভাত জোগাড় করতে।তুমি চলে যাওয়ার পর সেসব লেখার কত নাম।তোমার ভাই সেসব ছেপে বেশ বড়লোক হয়ে গেল।কত অনুষ্ঠান তোমায় নিয়ে।আর আমি সেসব অনুষ্ঠানে যায়,তোমায় খুঁজি শুধু।আমার দেওয়া সোনালি খাতাটাই তুমি লিখেছিলে আমাদের প্রেমের কবিতা।ধর্মবিরোধী দুটো মানুষের মিলনের কবিতা,তা এখন রমরমিয়ে চলছে।কবিতাগুলো পড়ে মানুষের চোখে জল আসছে,কেও আবার তোমার প্রশংসায় পন্চমুখ।তারা জানেনা রোদ্দুরের অন্তিম পর্যায়টা কতটা মর্মান্তিক।তুমি খুব বোকা ছিলে তাই এমন মেয়েকে ভালোবেসেছিলে যে তোমার থেকেও বেশি বোকা।তাই হয়তো এই প্রেমের শেষ লাইনে তুমি নেই,আর আমি আজও রয়ে গেছি।ঠিক হয়েছিল দুজনে একসাথে যাবো।তোমার আধপেটা শরীরে একটা বিষের ওষুধ যথেষ্ট ছিল,আমার তো মার খাওয়া শরীর তাই একটা ওষুধে কাজ হয়নি।তুমি মুক্তি পেলে,আর আমিরোজ দুবেলা তোমায় না পেয়ে মরন খুঁজি।আর বাবার হাতের লাঠিটা এখন জলন্ত কাঠে রুপান্তরিত হয়েছে।রোজ রাতে আমি যখন বিছানায় শুয়েছি,রান্নাঘরে গরম উনুনের জলন্ত কাঠ এনে চেপে ধরে শরীরে।মা ও আর আটকায় না।আসলে ব্রাহ্মন পরিবারের মেয়ে মুসলিম ছেলেকে ভালোবেসেছে তো।গঙ্গা জলে শীব পুজো করা পুরোহিতের সম্মানহানি হয়েছে কিনা,এটুকু তো প্রাপ্য আমার।
তোমার লেখা এটাই আমার শেষ চিঠি।তোমার কবরে আজ রেখে আসবো সঙ্গে তোমার প্রিয় দুটো কাঠি লজেন্স।মনে আছে তোমার নিজেরটা খাওয়ার পর আমারটা নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে।এবার আর একটা ওষুধ খাবো না,দশটা খাবো।রোজ রাত্রে জলন্ত কাঠের ছেঁকার থেকে অনেক ভালো দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা।জানো আমি চেয়েছিলাম বাঁচতে।পুলিশের কাছে গিয়েও বলেছিলাম।বাবা বড়বাবুর বাড়িতে পুজো করে যে,ভগবানের এত সুযোগ্য পুরোহিতের বিরুদ্ধে কোনো আইন খাটলো না।তোমার বাড়িও গেছিলাম,তারা তো আমাকে মারতে বাকি রেখেছিল।তোমার মৃত্যুর জন্য যে আমি দায়ী।আমার যে আর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।জানো খুব ইচ্ছে ছিল আমার কবর টা তোমার পাশে থাকুক।এখানেও ধর্ম আমাদের আলাদা করে দিল।জানিনা মৃত্যুর পর ধর্মের কতগুলো চোখ তোমার আমার মাঝে বাঁধা হয়ে দাড়াবে?তবুও তোমায় দেখতে তো পাবো।আজ আর ভালো থাকো লিখবোনা।আজ বলবো আসছি আমি রোদ্দুর।আমি আসছি।
-------ইতি,
তোমার জান্নাত
শুভেচ্ছা সকলকে
উত্তরমুছুনশুভেচ্ছা সকলকে
উত্তরমুছুন