ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

শনিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮

🎂দৈনিক প্রতিযোগিতা🎂
🎂বিষয়-"বড়দিন"
🎂কবিতা-"বড়দিনে আজ"
🎂কলমে-রনিতা মল্লিক
🎂🎂🎂🎂🎂🎂💒💒💒💒💒💒
ক্রিসমাস বড়দিনে,
 চারিদিক খুশির জোয়ার।
 একে একে বাচ্চারা,
 পায় নানান উপহার।
 গির্জায় গির্জায়,
  শুরু হয় প্রভুর প্রার্থনা।
 প্রবেশ করে মন,
 শান্তির ঠিকানায়।
 সজ্জিত হয়েছে গির্জা,
 সজ্জিত শহর।
কাটছে সকলে কেক,
 আজ নতুন এক প্রহর।
 প্রভুর খ্রীষ্টমাস গাছে,
 স্যান্তা আছে চেপে।
 শিশুরা সব আজ,
 সুসজ্জিত সুন্দর পোশাকে।
আজ সকালে অনেক বাচ্ছা,
 ভিক্ষা করতে যায়।
 আর সেই টাকাতে,
 তারাও কেক কিনে খায়।
 আপনাকে স্মরণ করার হৃদয়,
 ওদের মধ্যে ও রয়।
তারাও আপনাকে স্মরণ করে,
অনেকটা আনন্দ পায়।
 মঙ্গল করুন প্রভু ওদের,
 খুজে দিন সঠিক জীবন।
আপনার আশীর্বাদে ভরিয়ে দিন,
 ওদের ফুলের মত জীবন।
শতকোটি প্রণাম প্রভু,
 এভাবেই থাকুন মোদের মনে।
 আপনার শান্তির বাণী,
 ছড়িয়েছে আজ আমাদের হৃদয়-ও মনে।
বিষয়- বড়দিন

_____কলকাতার যীশু
                সুনন্দ মন্ডল

আজ বড়দিন
সত্যিই এক সান্তাক্লজ এর আগমন মুহূর্ত
আনন্দঘন সাক্ষী চকোলেট কেক ইত্যাদি।
সারা বিশ্বের যীশু
সকল ধার্মিকের প্রাণপুরুষ
তাঁরই জন্মদিন
বড়দিনের স্মারকলিপি!

ঘটা করে প্রদীপ জ্বালানো হয়,
মোমবাতির শিখা আলোর উজ্জ্বলতা মেলে ধরে
টেবিলে টেবিল সাজিয়ে সাহেবি পোশাকে
সীমাহীন খুশি মজা হুল্লোর।

কিন্তু এ বড়দিন অন্য বড়দিন!
এখানে মোমবাতি জ্বালানো হবে
কিন্তু কেক কাটা হবে না!
কিংবা মেরি ক্রিসমাস কেউ বলবে না
শুধু চোখের জল ঝরবে
আর বিদায় জানাবে কলকাতার যীশু'কে।
শোকস্তব্ধ জগৎ
বাঙালি মনন, বাঙালি সত্তা
কারন সে-ই ছিল
সকল কবি সাহিত্যিকদের
শব্দওয়ালা সান্তাক্লজ!
          ----------
কবিতা= "বড়দিন নয় "
 
  জয়দীপ রায়

সিগারেটের ফিল্টারে লাল ঝুটি পেখম
বড় রাস্তার  গিলে খাওয়া সন্ধ্যারা
সবে চুমুক দিচ্ছে
অডিনারি চায়ের ভাড়ে
কি বলিস  বাদ যাক আজ
লেরো বিস্কুটেরা
দেখছিস না গির্জার বাইরে
 দেদার বিলোচ্ছে কেক
হ্যাট ক্যাপ ইনজিরি শব্দে
বলছে ওরা মেরি ক্রিসমাস ডিয়ার
এই লও কেক উপহার
উপহাসের দরজায় দাড়িয়ে
নুন ভাতের জোগারের এক তরুন
আজ  ওর বড়দিন নয়
ফেরি সেরে বেকারত্বের ভিড়ে
  তখন হাত পেতে
অভিনন্দন নয় একটা খিদে
নিচ্ছে সে সমাদরে।

সোমবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

ছায়াপথ

ভিড়ের মাঝে হাতটা ছেড়ে
পারলে একটু একলা হাটতে দিও
অনেকটা দিনই হাঁটলাম
ভেপারের নীচ দিয়ে
একে অপরের ছায়া মাড়িয়ে
চিনি বেশি কড়া লিকারের
এঠো কাপে কম তো চুমুক দিইনি
জানতে তুমি আমি ব্ল্যাক কফি ভালোবাসি
তবুও খেয়েছি আহ্লাদের এঠো ভাড়
তবে আজ থাক!
অন্য দিন নয় বরং
শুরু করি নতুন প্রসঙ্গ
একলা হাটার
জানি বদ অভ্যেস আমার
না দেখে পথ চলার
বারে বারে হোঁচট খাওয়ার
তুমি বকে সামলে নিতে
সামলে দিতে অজস্র বার
অজস্র জেব্রা ক্রসিং
ভিড়ের মাঝে হেঁটে যেতাম
কালো মাথার ঠেলাঠেলি তে
কথা দিলাম এবার হোঁচট ছাড়াই হাঁটবো
মেঘলা আকাশ কালো করে এলে
ভুলবো না ছাতা নিতে
কংক্রিটের কালো গলি ভেঙে
কালো মাথা গুলোর ছায়া মাড়াবো
হাটঁবো! হাটঁবো আরো একলা ছায়াপথ।
             
 জয়দীপ রায়
আমি ট্রেন


দুরন্ত প্লার্টফর্ম

নাম না জানা টানেলে
এগিয়ে যাচ্ছি,
ধরা ছোঁয়া হারিয়ে এনেছি
চরিত্রে মরীচিকা।

ট্রেন আমি।

এক্সপ্রেস ট্রেন

জন সমারোহ আমাকে ঘিরে
স্বার্থের আবেগ,
ভীষণই অহংকার গতি শরীরে
হিমায়িত দৃষ্টি।

চেনা প্লার্টফর্ম।

সুষ্মিতা কর
অপরিহার্য
উজান উপাধ্যায়

এরাত কলকাতার নয়। অন্য শহরে আছি। ভুবনেশ্বর।ওলিয়েন্দ্রা দূরে ঘুমিয়েছে।আমি  
গেস্ট হাউসে।ফোন করে সবুজ কন্ঠস্বরে শুভরাত্রি জানিয়ে বলেছে , বাবা ঘুমিয়ে পড়ো।

ঘুমোতে দিল না ব্যালকনি , নির্জন বারান্দা। শহরে প্রচুর আলো , রাত প্রায়  
অদৃশ্য হয়ে গেছে। খুব জোর করে নিঃসাড় হতে চেয়ে বারবার প্রার্থনা সঙ্গীতের  
নিয়মাবলী ছেড়ে সোজাসাপ্টা পৌঁছে গেছে
নক্ষত্রের কাছে। তাদেরও ঘোর বিপদ। ছুটে আসছে উল্লাসের ব্যাধি , রাত তবুও অচেনা  
হওয়ার ভানে কিছুতেই আটকে থাকছেনা।

শহর বদলে গেছে , নারীর ভ্রুক্ষেপ এমনকি বালিশ চাদর , পুরুষের গাম্ভীর্য -এখানে  
তাৎক্ষণিক সব ওলোটপালট।

শুধুমাত্র জেগে থাকা কবি , ভেঙে ফেলছে একভাবে ঈশ্বরীর গোপন প্রত্যাখ্যান।

যেকোনো শহর এ দৃশ্যে বদল আনার ক্ষমতা রাখেনা।
মেঘের চাদর সরিয়ে দেখো..আগন্তুকের সংযম... ওয়াট্সআপে তে স্ট্যাটাস আজ দিচ্ছে মন পেরেকের ক্ষত... মেঘবালিকা নারাজ মেঘ বালকের খুনসুটিতে...চোখের বালি দাওনা উড়িয়ে এক নিমেষের পলকে... আজ কেমন বিছিয়েচে দেখো নকশী কাথা মাঠে... মেঘনাদ বদ কাব্য  রচনা আজ উন্মাদনায় ছোটে....

—অদিতি চক্রবর্তী (স্বর্ণালি পট)
দৃষ্টিকোণ
চয়নিকা

ভাঙনের থেকে নিরাপদ দূরত্বে
দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ জানে না,
মিনিটে কতটা করে জমি সরলে
কাউকে অসহায় ঘোষণা করা যায়।

যার মাথার উপরে
ত্রিস্তরীয় ছাদের বন্দোবস্ত আছে,
তাকে দুর্যোগের খবর রাখতে
হয়নি কখনো।

যাকে ঘিরে মানুষ জমে,
ভোরের ঘন কুয়াশার মতো,
তার কাছে একা থাকাটা
নিতান্তই বিলাসিতা।
______প্রেমিক
               সুনন্দ মন্ডল

রক্তকরবী গুঁজে দেওয়া তোমার চুল
    হাওয়ায় উড়ে এসে বলে, "শান্তি"!
নাক শুষে নেয় তোমার সুগন্ধী মেশা দেহ।

কাল রতি চক্রে তোমার ঋতুচক্র খেলা
ব্যথায় কুঁকড়ে যাওয়া মন
অবসন্ন প্রকৃতির সাজে সামনে দাঁড়াও
শুকনো ঠোঁটের বিরহ নিয়ে!

আমি তখনও খুঁজি সেই গন্ধ
পুরুষ প্রেমিক তো!
তোমার অবসন্নতাকে মেলাতে চাই আমার প্রশান্তিতে।
               ---------------

কাঠিয়া, মুরারই, বীরভূম
" 'অ ' সচেতন "

চঞ্চল ভট্টাচার্য

বালিরাও বলে যায় কানে কানে ডুব দিলে নদীটার কোনো এক প্রান্তে,

জ্বলন্ত যজ্ঞেতে, তোমার থাকার ঘরে লাগবেই তাকে যে অজান্তে।

শিশুটিও হাত পাতে খাবারের জন্যই,জেনে রেখো নেশা নেই তার কোনো অন্য,

মুখটা না ফিরিয়ে চেয়ে দেখ একটুও সেও তো মানুষ, নয়
 হিংস্র বন্য।
#আসছে_বছর_আমার_হবি
==============সুদীপ্ত সেন

রেলিং-এ দাঁড়িয়ে থাকিস,খাওয়াস ছোলা
সে পাখি আমায় দেখে দিচ্ছে দোলা।

ময়না ভীষণ বকে তোরই মতো
শুধু ওই ঠোঁট ব্যাঁকানো শিখতে হতো।

পাড়াতে তাকিয়ে থাকিস, টিউশনে রোজ
বিকেলে ভাই-র সাথে  ঘুরতে বেরোস।

শব্দ পায়ের পাতার নুপূর বোঝে
তবু হ্যাঁ বলতে নাকচ করেছিল সে।

এবছর একটা লেখারও বিশ্রাম নেই
পেন তো ছুটেই চলে তোর দেখাতেই।

নেই তো ওদের মতো বইপত্তর
নেই তো ঝা-চকচক মোর ঘরদর।

ইদানিং ওই ছেলেটা লম্বা করে
দেখে ও, তুইও দেখিস টাম্পি মেরে।

আচ্ছা দেখেই চালা এ এক বছর
ও বছর বই ছাপাব আমিও নাছোড়।

জানি তোর পছন্দ নয় লেখক, কবি
তবু তুই আসছে বছর আমার হবি!







বৃহস্পতিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৮


আপনাদের একদম প্রিয় তিনজন নিয়েই এ মাসের সংখ্যা "তনয় সংখ্যা"। 

কবিতা পাঠান অনধিক ২০ লাইন সঙ্গে আপনার ছবি পাঠাবেন এবং ২ টি কবিতা পাঠাবেন তার থেকে একটি মনোনীত হবে। 

চিঠি লিখুন প্রেমিক জনকে(সঙ্গে আপনার ছবি)

বুক রিভিউ পাঠিয়ে দিন আপনার কিংবা আপনার লেখকের/লেখিকার।(সঙ্গে দেবেন বই-র প্রচ্ছদের ছবি)

আপনার মননে কবি জয়, শ্রীজাত কিংবা অংশুমানকে আপনার কলমে তুলে ধরুন।
(সঙ্গে আপনার ছবি দেবেন)

লেখা পাঠান ইমেল করে, পিডিএফ করে পাঠাবেন না।
লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ৩০/১২/১৮

আমাদের ইমেল jholfhoring@gmail.com

শ্রী তাপস চট্টোপাধ্যায়ের লেখা "পাটিগণিত"


পাটিগণিত
-------------তাপস চট্টোপাধ্যায়

ভাগ মানে তো অখণ্ডতা বিলোপ
শুধু বিয়োগ বিয়োগ আর বিয়োগ।
দুই দুটো মহাবিয়োগের পরে
ছোট্ট ছোট্ট দুটো যোগ----
যোগেরা বড় হচ্ছে  বড় হচ্ছে
ক্রমশঃ বড় যোগ হয়ে
গুণের সৃষ্টি করছে।
ছোট মাঝারি বড় বন্ধনীর
আস্তিনে লুকনো এক একটা গল্পগাথা
মারী, অস্ত্রের ঝংকার,
কুটিল বুদ্ধিরও।
স্রোতের অনুকূলে ভেসে যাওয়া অপেক্ষা
প্রতিকূলে দাঁড় টেনে
আপন নিজস্বতায় তীরে ওঠা
বড়ই গৌরবের।
খাড়া লাঠি বেয়ে দু'পা ওঠার জন্য
বানর এক পা পিছিয়ে আসে
তবু তো গন্তব্যের হদিশ পায়।
সরলে জটিলে মিশ্র পথচলা
সিঁড়ি ভাঙা শেষে
অপেক্ষমান সমাধানে পৌঁছই।
জীবন তো পাটিগণিতই:
উত্তর কখনো মেলে,
কখনো মেলে না।
        
[রঘুনাথগঞ্জ।০১/১২/২০১৮।]

সোমবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৮

ARTICLE'S CLUSTER-এ কবি ধীরেন্দ্র নাথ বাঙ্গালের লেখা





লেখক ধীরেন্দ্র নাথ বাঙ্গালের জন্ম বাঁকুড়া জেলার আমলা তোড়া গ্রামে এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে 1365 সালের 12ই কার্তিক .এক প্রতিকূল সামাজিক পরিবেশে শুরু হয়েছিল তার বেড়ে উঠা ও শিক্ষাজীবন .ছাত্রাবস্থাতে পড়াশুনার সাথে কৃষিজীবী বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করতে হত .ছয় কিলোমিটার আলপথ পায়ে হেঁটে পড়তে যেতে হাত হাইস্কুলে .তবু বরাবর ক্লাসের প্রথম স্থানাধিকারী ছিলেন .তখনকার দিনে ভালো রেজাল্ট করে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন হায়ারসেকেন্ডারি .ইকনোমিক্সে অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজে .পার্ট ওয়ান পরীক্ষার আগের মুহূর্তে কর্মঠ বাবার অকাল প্রয়াণ ঘটে গেলে জীবনে নেমে আসে গহন আঁধার .বাবা মার্ বড় সন্তান হিসাবে মাথায় তুলে নিতে হয় পাঁচ ভাইবোন ও মায়ের ভরনপোষনের দায়িত্ব .শুরু দারিদ্রের সঙ্গে কঠিন সংগ্রাম .বাধ্য হয়ে অনার্স ছেড়ে দিয়ে পাসকোর্সে স্নাতক ডিগ্রী সম্পূর্ণ করেন .সংসার টি বাঁচিয়ে রাখতে একমাত্র আয়ের উৎস কৃষিকাজে জড়িয়ে পড়তে হয় .ভয়ঙ্কর প্রতিকূলতার মাঝেই সংস্কৃতি ও সাহিত্যকে ধরে থাকেন .বাঁকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকার যাত্রা ক্লাবে সুনামের সঙ্গে অভিনয় ও নির্দেশনায় যুক্ত থাকেন .লিখেন সংবাদ পত্রে  পাঠকের ভাবনা কলমে .স্থানীয় পত্রিকায় ছোটগল্প ও কবিতা .নিয়মিত লেখেন আকাশবাণীর পত্রসাহিত্য বিভাগ প্রাত্যহিকী মহিলামহল মাননীয়েষু বুধসকালে .আকাশবাণী (অল ইন্ডিয়া রেডিও )এর সেরা পত্রকার হিসাবে সংবর্ধিতও হয়েছেন .লিখেছেন দুখানি যাত্রাপালা .বর্তমানে দুই ছেলে বৌমা নাতি নাতনি ও নব্বই ছুঁইছুঁই মাকে নিয়ে এক বড় পরিবার .অভ্যাসমত চাপের মাঝেও চলছে লেখালেখি .সঙ্গে যোগ হয়েছে আড্ডা ও ভ্রমন নেশা .মানুষের ভালবাসা তার পরম কাঙ্খিত ধন
1.)
কবিতা
সে জীবন
বৃথাই বুনো স্বার্থের জাল
হৃদয় স্বপ্ন নীড়ে
মিথ্যা খোঁজা সোনার হরিণ
আশা নিরাশা র . ভিড়ে
পাবে না সুখ .শীতল ছোঁয়া
পুড়বে দুখ দহনে
আলেয়াকে ভাব যদি আলো
ডুববে আঁধার গহনে
যাদের তুমি ভাব আপন
তারা শুধু সুখপাখি
মিলবে না প্রতিদান কনা
অশ্রু তব ভরাবে আঁখি
তবে কেন এত তৃষ্ণা বুকে ?
কেন এত মোহ মায়া ?
এতো শুধু নির্মম বিবর্ণতা
মিথ্যা মরীচিকার কায়া
নাও খুঁজে সেই অন্য জীব
যা চির সুন্দর সত্য
যেথায় নেই হীন দীনতা
সঙ্কীর্ণতার বৃত্ত
চাও কি বরের চরম দান ?
তবে বুঝহ সত্ত্বর
জীবিকার চেয়ে জীবন খোঁজা
অনেক মহত্তর
মুছে ফেল সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব
বাড়াও তোমার হাত
নাও খুঁজে সেই অন্য জীবন
চেনাও মানব জাত
2.)
কবিতা
আহ্বান..
শ্রেষ্ঠজীব মানুষ তুমি ভাই নিজমাঝে নিজেকে খোঁজো
সসীমের মাঝে অসীম তুমি
কেন সার নাহি বোঝো
ধ্বংসের পড় জাগে সৃষ্টি
রাত্রি আসে দিবাশেষে
মৃত্যুতে থাকে নবজীবন
ভয় কেন অমানুষে
পাষান ক্ষয়ে শতধারায়
বরফ গলে রবির তাপে
হৃদয় মাঝে উষ্ণতার পারদ
নিম্নমুখী কার শাপে
লোভ স্বার্থপরতা হিংস্রতায়
বাঁচা আজ খান খান
অমানবিক ঘৃণার স্রোতে
ভেসে যায় তাজা প্রাণ
বিকৃতকামী বর্বর দংশন
দহে ধর্ষিতা তনু
হিংসাঘাতে কাঁদে মানবাত্মা
বিবেক নতজানু
আনাচে কানাচে বঞ্চনা ক্ষোভ
চেতনা দিশাহারা
রক্তপিয়াসী হায়নার দাপটে
ক্ষতবিক্ষত ধরা
জাগো দুরন্ত দামাল তারুণ্য
ফেটে পড় রুদ্ররোষে
জ্বালাও বিদ্রোহ আগুন
মস্তিষ্কের কোষে কোষে
ঝেড়ে ফেল হতাশা বেদনা
জাগাও পৌরুষ
মুছে দাও ধূসর বিবর্ণতা
ফিরুক জৌলুস
3.)কবিতা
আজব লীলা
অনাদিকাল চলছে ভবে
ভাঙা গড়ার খেলা
লীলাবিলাসী বাজিকরের
এ এক আজব লীলা
কেউ বোনে ধংসের বীজ
কেউ করে সৃষ্টি
কেউ তুলে কালবৈশাখী ঝড়
কেউ স্বস্তির বৃষ্টি
কেউ ছড়ায় হিংসার বিষ
বিলায় প্রেম কেহ
কেউ মারে ঘৃনার চাবুক
কেউ বা করে স্নেহ
কেউ সমাজের বিভীষিকা
অমানিশার কালো
কারো মহানুভবতার সূর্য
জগতে দেয় আলো
কারো নিঠুর বর্বরতায়
ঝরে যায় প্রাণ
কারো উদার মানবিকতা
জীবন করে দান
লীলাময়ের করুনা ধারায়
অমঙ্গলই হারে
যুগে যুগে সুন্দরের জয়
দেখেছে সংসারে
4.)কবিতা
প্রতীক্ষার আলো
সেটা ছিল সুস্বপ্নের রাত
সান্ত্বনার ঘুম ভাঙে মোরগের ডাকে
সকাল তখনো বেশ বাকি
শুধু ভোরের আবছা আভা জানালার ফাঁকে
সন্দিগ্দ্ধ মনে তাকাই বাহিরে
ভেসে যায় হালকা সাদা মেঘ নির্মল আকাশে
নেই মাঝ রাতের তারার ভিড়
শুধু দিগন্তে ঢলে পড়া মায়াবী ম্লান চাঁদ ভাসে
চারপাশের নিস্তব্ধতার ঘোর
ফুটন্ত রহস্যময় নৈসর্গিক ছবি ধরণীর বুকে
মন ভালো লাগা স্নিগধতা
টেনে নিই একবুক বিশুদ্ধ বাতাস প্রানভরে সুখে ফিসফাস ভাঙ্গায় আড়ষ্টতা নিঝুম গাছগাছালি
তোলে জাগরণী মৃদু মূর্ছনা যত পাখ পাখালি ফুলবন ভাষায় তার সুগন্ধি নির্যাস
বিলায় মিথি স্বাদ হালকা বাতাস
অপূর্ব মুহূর্ত ফুটে মনের দর্পনে
ডুবি মুগধ আবেশে অতি সন্তর্পনে
জীবন হারায় যত তাপ উত্তাপ
বিশ্বাস বৃন্তে ফোটে প্রত্যাশা গোলাপ
যায় উবে দীনতা বিষাদ যাপন
জাগে হৃদয়ে ভালোর মাতন
কুয়াশার চাদর ঠেলে আসে প্রতীক্ষার আলো
ভাসা মেঘ আর না যেন ঢাকে এটুকু ভালো
5.)কবিতা
দেশমাতা ও তার ডাক
স্বপ্ন মাঝে হলো সে আবির্ভুতা
অবিন্যস্ত এলো কেশ
ক্ষতবিক্ষত রুক্ষ শরীর
জীর্ন মলিন বেশ
আঁধার ফুঁড়ে উঠল ঝরে
আলোক রাশি রাশি
এক চোখেতে ঝরছে বারি
আর এক চোখে হাসি
মমতাময়ী রূপের মাঝে
ঠিকরে পড়া জ্যোতি
ভস্মমাখা কাঞ্চনকনা
সাক্ষাৎ মাতৃমূর্তি
ক্লান্ত মুখের এমন মায়ায়
জাগালে কেমন টান
কোন গায়ের মাইয়া গো বলো
কার বা আম্মাজান
মধুর হাসির ঝর্ণা ঝড়ায়ে
বললে অভিমানী
নির্যাতিতা দেশমাতা গো আমি
সবার অভাগা রানী
দ্বীন মেহনতির সোহাগী মেয়ে আমি
স্বত্তভোগীর মা জান
কেবলি বাপ্ মা করে যত্ন লালন
পোলারা মোর শয়তান
তস্কর লোভীরা খুঁচিয়ে মারে
নীরবে আমি কাঁদি
শ্রমজীবীর লালনে এখনো
আশাতে বুক বাঁধি
স্থলে জলে শূন্যে উড়ে ধ্বজা
শ্রমজীবীর রক্ত ঘামে
লুটেরারা শুধু লুটতে থাকে
আমার সেবক নামে
ভন্ডরআ শোষণ করে ব্যাথা বাড়ায়
সম্ভ্রম কাড়ে রক্ত ঝরায়
অস্থির করে শান্তি সরায়
বারুদের গন্ধে বাতাস ভরায়
পাপীর পাপে পুন্য পালায়
সুখ নাই কারো ওদের জ্বালায়
তাই যাদের জীবনবাজি উপহারে
টিকে আছে মোর প্রাণ
সেই চির উপেক্ষিত দধীচিদের
করি আকুল আহ্বান..
ওগো পালক পিতা শ্রমিক মজুর
তোমরা দাঁড়াও ঘুরে
বজ্রনাডে লও কেড়ে সম্মান
ভন্ডদের হটাও দূরে
6.)কবিতা
তুমি আসবে বলে
তুমি আসবে বলে .যতনি কৌশলে
সাজায়েছি এ কুটির মোর
পথপানে চেয়ে .আগমনী গেয়ে
বিনিদ্র রজনী হলো ভোর
নব স্বপ্ন ঘোরে .পাতার মর্মরে
বারে বারে চাহি চমকি চোখে
আশা পিছে ঘুরি .আঁখি হলো ভারি
তবু কাটি কাল শঙ্কিত বুকে
নভ নীল মেঘ .বাড়ায় উদ্বেগ
বায়ু হলো বিষের আগার
পাতকের তাপে .দীল উঠে কেঁপে
আঁখি পাশে নেমেছে আঁধার
মাতৃ স্নেহ ধারা .হলো মূল্যহারা
কাঁদিছে দুঃখে জনক জননী
আত্মসুখ তরে .ফাঁকি দিয়া হ' রে
হাসিছে পামর সহোদরে হানি
রক্ত মাংস স্বাদে .হিংস্র উন্মাদে
ক্ষতবিক্ষত রমণিরতন
ধ্বংসের ছলে .মারণাস্ত্র বলে
রক্ত পিয়াসীরা কৰিছে যত্যান
বৈরিতায় ভরা .থরথর ধরা
প্রমাদ গণিছে সাধের পৃথিবী
উপেক্ষা বঞ্চনা .বাড়ায় যন্ত্রনা
ছড়াছড়ি ঘৃণ্য অকল্যাণ ছবি
নেই প্রতিবাদ .নেই শঙ্খনাদ
চেতনা বাঁধা স্বার্থের ফাঁদে
হিংসা রাজত্বে .শোষণ কশাঘাতে
জর্জরিত মানবাত্মা কাঁদে
প্রেম প্রীতি মায়া .হারায়েছে কায়া
লোভ লালসার তীক্ষ্ন বাণে
সত্য ন্যায় ধর্মে .ঢেকে মিথ্যা বর্মে
অত্যাচার মুঠি ধরে টানে
বিবেক গর্জন .হয়েছে বর্জন
তৃণসম শক্তিহীন হয়ে
বেদনার্ত মনে .শুধু তোমা পানে
প্রতীক্ষায় কাটে দিন ভয়ে
পাপাচারে হরি লয়ে শান্তি বারি
পুন্ হাসাবে জীবে এ ভূমন্ডলে
আঁধার টুটিবে .আলোক ফুটিবে
মহাকাল তুমি আসবে বলে
ধীরেন্দ্র নাথ বাঙাল
7.)
কবিতা
শিক্ষক
আপনি আদর্শ শিক্ষক এ সমাজের
উজ্জ্বল ভাস্কর
আপনি বরেণ্য নিষ্ঠাবান
সেরা মান্যবর
আপনি জ্ঞানের আলোক বর্তিকা
ব্রতী পন্ডিত প্রবর
যাহার কিরণ ছটায় আলোময়
আঁধার চরাচর
আপনি সংবেদী স্নেহশীল
সোহাগী সুন্দর
নবজীবন রূপকার আপনি
দক্ষ কারিগর
অনাড়ম্বর জীবন কান্ডারি আপনি
নিপুন প্রতিভাধর
দেশ জাতির মেরুদন্ড আপনারই
আদর্শ নির্ভর
সেই সম্মানীয় শিক্ষক আপনি
ভাবুন তৎপর
সমাজের আকাশে কেন উঠেছে
কালবৈশাখী ঝড় ?
আয়নার সামনে দাঁড়ান একটু
নিন নিজেকে দেখে
লোভ লালসার ছাপ কি রয়েছে
সেই নির্মল মুখে ?
শুভ্র সমুজ্জ্বল চরিত্রে কেন পড়ছে
অশ্লীলতার চিন্হ ?
নিরহংকার হৃদ সরোবরে কেন
বিকৃত প্রতিবিম্ব ?
শিক্ষক আপনি তাকান ফিরে
স্মরি নিজ গৌরব
আজকের শপথে হোক উদ্ভাসিত
শ্রদ্ধাঞ্জলি সৌরভ
8.)কবিতা
বিশ্বায়নের সভ্যতা
ছুটছে সভ্যতা বিশ্বায়নের ধ্বজা হাতে
বদলাচ্ছে জীবন নব্য ধারার প্রতি ভাতে
চিমনির ধোঁয়া ঢাকিছে স্বচ্ছ নীলাকাশ
হারাচ্ছে বিশুদ্ধতা জল মাটি বাতাস
হারাচ্ছে সবুজতা গুল্ম গাছ গাছালি
হারাচ্ছে জিন কত পশু পাখ পাখালি
হারায়েছে শান্তিনীড় সুশীতল ছায়া
হারায়েছে এ জীবন প্রেম প্রীতি মায়া
হারায়েছে লোকগাথা রাখালিয়া বাঁশি
হারায়েছে মজলিশ বাঁধভাঙা হাসি
হারায়েছে মাঝিকন্ঠে ভাটিয়ালি সুর
চাঁদের মায়ায় মন হয় না বিভোর
উঠে না চমকি মন জ্যোতিষ্ক ঝলকে
নদীর ছলাতে মন মাতে না পুলকে
হারায়েছে বিবেক বোধ মানবিক মনে
যাচিছে ভালোবাসা অর্থের ওজনে
নকল ভালোবাসায় প্রেমহীন ছাপ
মিথ্যার ভিতে ক্ষীণ অতি আন্তরিক ধাপ
হারায়েছে সভ্যতায় আবেগ অনুভূতি
আছে শুধু হাহাকার অ সুখ অতৃপ্তি
9.)কবিতা
রাখিবন্ধন
রাখি পূর্ণিমার পুন্য লগনে
সাদা মেঘ আকাশে ভাসে
বাঁধবে রাখি প্রেরণা প্রীতি
ভালবাসা ফুল ফোটানো আশে
পরাবে রাখি সুজন ভাইয়ের
বিশ্বস্ত সেই হাতে
যে হাত দেবে সোহাগ আশীষ
রক্ক্ষিবে অপঘাতে
যে হাত অপূর্বের দীপ জ্বেলে মনে
খুলে দেবে রুদ্ধ দ্বার আলোর অঙ্গনে
ভ্রাতৃত্বের স্নেহসুধা ছড়াবে অন্তরে
পুজিবে অনন্তে সাদা পবিত্র মন্দিরে
বজ্র কঠিন হবে কর্তব্যের টানে
বিতাড়িবে দুর্যোধন ও দস্যু দশাননএ
যোগাবে সবল সাহস নারী ও দুর্বলে
হানবে আঘাত হিংসা প্রতিহিংসা মুলে
সরাবে কদর্য জঞ্জাল ঘোচাবে অশ্রুজল
হীনতার পঙ্কে ফোটাবে প্রেম শতদল
মুছে দেবে বিস্বাদ নিরানন্দ প্রাণে
ভরাবে জীবন আনন্দে আলো বরিষণে
যে হস্ত পরশে হবে মানবাত্মা ধন্য
বিচরিবে হৃদ মাঝে বিবেক চৈতন্য
সেই হাত গড়ে উঠুক মানবের অঙ্গে
পুন্য হোক এ বন্ধন সুন্দরের সঙ্গে
১০.)
কবিতা
আমার মা
ঝাঁ চকচকে বাড়িটার পাশে
ছোট্ট টালির ঘরে
শীর্ণকায় ফোকলা বুড়ি
ময়লা কাপড় পরে
মাদুর পাতা ছেঁড়া বিছানায়
বসে সে চিন্ময় মুর্তি
পুটুর পুটুর তাকাই নিজের
সাজানো বাগানের প্রতি
কোন অভিযোগ খাটে না তার সবে আত্মসুখে ভাসে
মাতৃত্ব তার পায় না কদর 
তা জানায় দীর্ঘশ্বাসে
তবু মমতাময়ী রূপটি তার
হয় না মোতে বদল
নাড়িছেঁড়া ধনে নিংড়ে দেয় তার
স্নেহমাখা শেষ সম্বল
রাতবিরেতে যখনই আমি
বাড়িতে রাখি পা
ক্ষীণস্বরে উঠে সে জিজ্ঞাসি
এলিরে তুই খোকা ?
আমার পদশব্দ মুখের ভাষা
সবই যে তার জানা
সেই উপেক্ষিতা অশীতিপর
আমার জন্মদাত্রী মা
কালের স্রোতে দিয়ে পাড়ি মা
পেল বার্ধক্য চড়া
বেদখল হল সাধের সৌধ
স্বপ্ন ফুলে গড়া
হারালো সে চালিকা আসন
পেল কাঙালপনা
ফুটো চাল টালির ঘরে
কাটে দিন আনমনা
পায় কারো একটু খাতির
খায় অবজ্ঞার ভাত
আকাশ পানে তাকায়ে বলে কোথা তুমি নাথ ?
দেখো মোদের সাধের ধন
রেখেছে কেমন সুখে
সইতে আর পারি না ওগো
নাও এবে ডেকে
সকাতরে মা আমায় বলে
দিসনে ব্যথা ওরে
প্রতিটি ভোরের আসে বিকেল
জানাই আমি তোরে
কালের নিয়ম বড়ই নির্মম
শুধরে নে তুই বাছা
ভক্তিভরে বলরে অবুঝ
ক্ষমা করো গো মা

দ্বিতীয় দফা

নমঃস্কার আমি জয়দীপ জলফড়িং-র চার্জিং সম্পাদক আজ আমাদের সাথে আছে তিনজন কবি।

১.)নীল চক্রবর্তী ২.)বিধান সাহা ৩.)বাবলু বাউরি

   
 

        কবি বিধান সাহা

কবি বাবলু বাউরি
------------------------------------------------------
জয়দীপ: শুভ বিজয়া সকল কে।আমি জয়দীপ আপনাদের সাথে বিজয়া আড্ডায়

বিধান সাহাঃ সকলকে শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা ।

জয়দীপ: আপনাদের সামনে কিছু প্রশ্ন নিয়ে এসেছি আজ আর কিছু আড্ডা।

বিধান সাহাঃ খোলা মনে আলোচনা হোক ।

জয়দীপ: রাবেন্দ্রিক ভাবধারার কবিমুখ খোলনলচে বদলে পাড়ি দিয়েছে পোস্ট মর্ডান।  দাড়ি কমা বিন্দু বিস্বর্গ বদলে কবিতা আজ অনেক খোলামেলা।
এটা কতটা যুক্তি যুক্ত আপনাদের কাছে?

বাবলু বাউরি : বিষয়টা ভালো,যুগের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কবিতার ধারা বদল হয়েছে ।

বাবলু বাউরি: তবে সময়ের সাথে সব কিছুর মতই সাহিত্যের বিবর্তন  হয়েছে আর হবে।
নতুনত্বের ছোঁয়া স্থান কাল প্রেক্ষাপটে কবির জীবন দর্শনে কবিতা সৃষ্টির বৈচিত্র দেখা দিয়েছে

বিধান সাহা: একদম ঠিক কথা ।

 জয়দীপ: তৎকালীন যুগ পর্যায় রাবেন্দ্রিক না একালের কাব্যকথা পাঠক হিসাবে আপনারা কোন টাকে বাছবেন,
 কোনটা বেশী পড়তে চাইবেন?

 বিধান সাহা: আমরা তো সময়ের আবহে আবর্তিত ।

বাবলু বাউরি : সেভাবে বাছা যায় বলে সেরকম আমার কাছে কিছু নেই,।কবিতাকে ভালোবাসি,
যে কবিতা ভালো লেগে যায়, তা বার বার পড়তে ইচ্ছে করে,
সাধ হয় যদি এরকম কিছু আমিও লিখতে পারতাম,
শুরু হয় লেখা।

বিধান সাহা: রবীন্দ্রনাথ ও কিন্তু গদ্য ছন্দের কবিতা লিখেছেন ।
সুতরাং বাছাবাছি নিজস্ব ব‍্যাপার ।
বর্তমান কালে কত নতুন নতুন বিষয়ে কবিতা লেখা হচ্ছে ।
 যুগটাকে অস্বীকার করার উপায় নেই ।

নীল চক্রবর্তী : বিষয়ের  এ ভ্যারাইটি  থাকলেও কিন্তু মুল্যবোধের  বিচারে বর্তমানের     কবিতায়  সাহিত্য রসের অভাব অনেক।
কবিতা আত্মকেন্দ্রিক অনেকটাই। ভাবনার ব্যাপ্তী কম এখানে।

 জয়দীপ: আপনাদের কাছে আরেকটা প্রশ্ন যেটা আমাকেও শুনতে হয় অনেক ক্ষেত্রে কিছুটা সম্মুখীন বলতে পারেন।
ফেসবুক কবিতা ব্লগজিনের মাঝে কোথাও কি হারিয়ে যাচ্ছে বা মার খাচ্ছে বা পাব্লিসিটি পাচ্ছে না প্রিন্টেড ম্যাগ গুলো?


 নীল চক্রবর্তী : হ্যা..অনেক ভিড় দেখি তবে তার গুরুত্ব কম।

বাবলু বাউরি: হ্যাঁ,সহমত।
তবে এটাও  সময়ের প্রেক্ষাপট

নীল চক্রবর্তী : বই এরগুরুত্ব  বেশী। বইআকারে বেরোলে হারাবেন না।

বিধান সাহা: লেখার থেকে প্রচার পাওয়ার প্রবণতা অনেককে তাড়িয়ে বেড়ায় ।এটা ঠিক নয় । আগে লেখা ।তারপর প্রচার ।

বাবলু বাউরি : লেখার সাথে সাথে সাহিত্য চর্চাও খুব প্রয়োজন

বিধান সাহা: পড়াশোনা অবশ্যই দরকার ।

জয়দীপ: ফেসবুক কবিতায় কোথায় যেন কমেন্টস আছে লাইক ও আছে তবে সঠিক মুল্যবোধ কোথায়

 নীল চক্রবর্তী : হ্যা এক্ষেত্রে সহমত। ভিড় অনেক।

বিধান সাহা: একদম ঠিক ।
 লাইক দেবার জন্য তৈরী হয়ে আছেন
পাঠক কিন্তু ঠিকই আছে । তারা খুঁজে পেতে পড়েন ।

নীলচক্রবর্তী : ব্যাপারটা তেমন নয়, নিরপেক্ষ পথিক বদ্ধতা কম, সাহিত্য আলোচনা অনুশীলনের অভাব পরিলক্ষিত।

বাবলু বাউরি : পাঠক আছে ভাই।পাঠক আছে।
যদি দুইজন পড়েন, মনে রাখবে সেটাই অনেক।
কিছু কিছু পাঠক পড়েন কিন্তু তা জানাতে দেন
না

 বিধান সাহা: আত্ম অনুশীলন প্রয়োজন ।
 ভালো লেখা লিখতে মন বসানো প্রয়োজন ।

বাবলু  বাউরি : খুব সুন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন

বিধান সাহা: লিখে ফেসবুকে ছাড়া বড় কথা নয়।

 জয়দীপ: কবিতা কি?

বিধান সাহাঃ এটাও একটি বড় প্রশ্ন । উত্তর খোঁজা আরও কঠিন



 জয়দীপ: পোস্টমর্ডান প্রেক্ষাপটে কবিতা কে কিভাবে ব্যাখ্যা করবে?

নীল চক্রবর্তী : নিজেদের  উদ্যোগে  হলেও লাইব্রেরী  বানানোর  চেষ্টা  করা উচিত ...আমাদের

বিধান সাহা: যুগের প্রতিফলন যে লেখার মধ্যে রয়েছে ।

 নীল চক্রবর্তী :কবিতায় গানের মতো তাল রিদম আছে আর ছন্দ ছাড়া কোন কবিতা হতে পারেনা। কবিতার তো নিজস্ব একটা চলন আছে ।তাই তো ছন্দ ।

জয়দীপ: মানে গদ্যছন্দের তাল বা রিদম ঠিক থাকলে সেটাও কবিতা হতে পারে

বিধান সাহা: আজ বিদায় নিচ্ছি । সকলকে ধন্যবাদ ।

Xক্লুসিভ অনিন্দ্য

"জলফড়িং"-র পক্ষ থেকে আপনাকে প্রথমেই জানাই নমস্কার
কবি অনিন্দ্যঃ- নমস্কার আপনাকেও।

১.) প্রথমেই জানতে চাইব কবি অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় কেমন মানুষ আর অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় কেমন মানুষ?

উঃ- হাহাহাহা নিজেকে নিজে নম্বর দিই কী করে বলুন? কেবল রবি ঠাকুরের একটা লাইন খুব পছন্দের আমার, ভালো মানুষ নই রে মোরা ভালো মানুষ নই, আমি তাই ভালো নয়, কালো মানুষ অথবা বলতে পারেন অন্ধকারের রাজা।


২.) ঠিক কত বছর বয়স থেকে লেখার শুরু মনে আছে?

উঃ- বিলক্ষণ মনে আছে। দশ বছর বয়স, ক্লাস ফাইভের একটা ছুটির দুপুরে শুকতারায় একটা কবিতা পড়ে মনে হলো, আরে এমন লিখতে তো আমিও পারি, ব্যাস তক্ষুনি খাতা পেন নিয়ে শুরু করে দেওয়া তবে খানিক পরেই বুঝতে পারি মোটেই সহজ কাজ নয়। তবুও সেদিনও হাল ছাড়িনি আজও নয়।


৩.) প্রথম লেখা কবিতার নাম?

উঃ- আজব দাওয়াই


৪.) যদি একটু ওপেন করা হয় কবিকে তাহলে অনিন্দ্যবাবুর লেখা গুলো কি কিছুটা ব্যক্তিগত দিক থেকে উঠে আসে বলে ধরে নেব নাকি শুধুই কল্পনামাত্র (বেসিক্যালি আপনার যেসমস্ত লেখায় প্রেম থাকে)?

উঃ- দেখুন, এই প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে একটা কথা জানাই, আমি ক্লাস ফাইভ থেকে লিখতে শুরু করি আর প্রথম মৃত্যুর কবিতা লিখি ক্লাস সেভনে। এবং আমার যত মৃত্যুর কবিতা রয়েছে তত প্রেমের কবিতা নেই, তাহলে তো বলতে হয় আমি মরেই গেছি, কারণ প্রেমের কবিতা লিখলেই যদি ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রকাশ হয় তবে বাকিগুলোও তাই হবার কথা।

ব্যাপার কী জানেন প্রেম বা জীবন আমার কাছে বহুমাত্রিক, অর্ধনারীশ্বর যখন লিখেছি সেই মুহূর্তে নিজেকেও ক্লীব ভাবতে হয়েছে, যেকোনো প্রেমের বা অন্যকিছুর কবিতা বা যা কিছুই লেখবার সময় যদি সেই ভাবনায় সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ না করা যায় তাহলে আমার মনে হয় সেই লেখায় প্রাণের সঞ্চার হয়না।



৫.)  আপনার কাছে আপনার লেখা প্রিয় কবিতার নাম?

উঃ- এই রে, সবই আমার সন্তান, কোনো একটা নাম কী করে বলি! তবু যদি বলতেই হয় তবে শহিদবেদির কথাই বলবো। কারণ ওই একটা কবিতা ২০১২ সালে লিখে রেখেছি আমার নিজের জন্য৷ যেদিন এই শহর এই সভ্যতা ছেড়ে চলে যাব সেদিন শববাহী শকটের গায়ে এই কবিতার একটা প্রিন্ট আউট যেন আটকানো থাকে এ আমার বহুদিনের ইচ্ছা, আমার কাছের মানুষেরা সকলেই জানেন, আশাকরি এ আব্দার আমার পূরণ হবে।

______________________
দুলাইন হলেও লিখতে হবে নিজেকে একথা বলা আছে। বেড়াতে গেলেও এর অন্যথা হয়না।
      _______________________


৬.)আপনার পাওয়া প্রথম পুরস্কারের নাম,এবং তার উপলব্ধি কেমন ছিল যদি একটু শেয়ার করেন?

উঃ- প্রথম পুরস্কার! দুটো পেয়েছিলাম, উপহাস এবং উপেক্ষা, পেয়ে দারুণ লেগেছিল।



৭.)আপনি একজন পপুলার ব্যক্তি মানুষের কাছে আপনার লেখার মাধ্যমে, আচ্ছা জনপ্রিয় পত্রিকা "দেশ"-র পাতায় আপনার লেখা এখন অবধি কী ছেপেছে?

উঃ- আমি একটা সময় অবধি "উনিশকুড়ি"তে লিখলেও ব্যক্তিগত কিছু কারণের জন্য প্রায় বছর দশেক কোত্থাও লেখা পাঠাইনি। লিখতাম খাতার পাতায়, কিন্তু কোনো মাধ্যমের সঙ্গেই সেই লেখার আত্মীয়তা গড়ে উঠুক চাইনি।

তারপর বন্ধুদের চাপে টাইমলাইন এবং কবিতার সখ্য গড়ে উঠলো। কিন্তু তখনও টাইমলাইন ছাড়া আর কোথাও কবিতা দেবার কথা ভাবিনি। যখন ভাবলাম বা ভাবতে বাধ্য হলাম ততদিনে ইম্যাগ বা অনলাইন ম্যাগাজিনের পথচলা শুরু হয়েছে। তাই দেশের প্রতি প্রেম থাকলেও দেশের পাতায় লেখা হয়ে ওঠেনি।



৮.) আপনার লেখা বই-র নাম?

উঃ- এ পর্যন্ত মোট তিনটে বই প্রকাশিত হয়েছে। সবকটাই আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় সপ্তর্ষি প্রকাশনের হাত ধরে।
২০১৬ তে "রাজকন্যা সিরিজ"
২০১৭ তে "অগৌরবে চলিতেছে"
২০১৮ তে "হাফ শ' তিন।"


৯.) আমরা কবে কবি অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়ের লেখা  পাঠ্য বই-এ পড়তে পারব?

উঃ- পাঠ্য পুস্তকে কবিতা আসা একটা লম্বা জার্নির ফসল এবং সব লেখকের কাঙ্খিত স্বপ্ন, হ্যাঁ আমি তেইশ বছর লিখছি একথা সত্যি, কিন্তু সেই জার্নিটা এখনো শেষ হয়নি আর স্বপ্ন সবসময় পূরণ হয় তা কিন্তু নয়, হতেও পারে নাও হতে পারে। আর তাছাড়া কোনো লেখক এই কথা ভেবে লিখতে চেষ্টা করেন বলে বিশ্বাস করিনা। লেখাটাই আসল কাজ, সে কাজটুকু ফাঁকি না দিয়ে করে যেতে চাই, বাকি যা কিছু প্রাপ্তি তা পাবার হলে এমনিই পাবো।



১০.) প্রত্যেক দিন পাতার(কাগজ) কাছে যায় অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়?

উঃ- একদম, আমি না লিখে ঘুমাই না। দুলাইন হলেও লিখতে হবে নিজেকে একথা বলা আছে। বেড়াতে গেলেও এর অন্যথা হয়না।

যেকোনো কাজই প্রাক্টিশ ছাড়া হয় বলে মনে করিনা, মনে রাখতে হবে শচীন থেকে লতা মঙ্গেশকর অনুশীলন না করে কেউ পারফর্ম করেননি। অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তা তাই অপরিসীম।



১১.) পাশের বাড়িতে একজন মারা গেলেন সেইদিন রাতে সবটা ভুলে কবি কি একটা প্রেমের কবিতা লিখতে চাইবেন?

উঃ- আমি অনেক বিয়োগের কবিতাও প্রেমের মোড়কে লিখেছি গতবছর দুজন আত্মীয়ের একজন মারা যান আর একজন দূরে চলে যান, এমন অনেক লেখা আছে যেখানে মনে হয়েছে প্রেম হারিয়ে লিখেছি আসলে তা নয়, হারানো হারানোই। আর আমি জানিনা রোজ আমি কী লিখব বা লিখি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাদা পাতার কাছে নতজানু হয়ে বসে থাকি যেমন শব্দ আসে লিখি, কাজেই সেই মুহূর্তে যে শব্দ আসবে তাই লিখবো। এখন থেকে বলতে পারব না।

প্রসঙ্গত রবীন্দ্রনাথ পরাধীন ভারতেই একের পর এক প্রেমের গান লিখেছেন তারমানে তিনি পরাধীনতার পক্ষে ছিলেন তা নয়, সবটাই অনুভূতির প্রকাশ বলে মনে করি।



১২.)আপনার চোখে বাচিক শিল্পী জয়িতা ভট্টাচার্য্য? (যেহেতু আপনার লেখা উনি পাঠ করেছেন বা করছেন বহুবার তাই এমন প্রশ্ন)

উঃ- সৎ, মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রমী।  একটা কবিতা নিঁখুত করতে গেলে যতটা পরিশ্রম এবং সততা দরকার তারচেয়ে বেশীই করেন। আমার কবিতা তৈরীর আগে কতবার যে আমার ভিউটা বোঝার চেষ্টা করেন তা গুনে শেষ করা যাবেনা। এক একটা সময় হাঁফিয়ে যাই, কিন্তু সেটা যে দরকারী তা পরে বুঝতে পারি।

_________________

পকেটে কিছু থাক না থাক সিগারেট আর  আগুন থাকে।
     _________________

১৩.) যদি বলি লেখার জন্য ১০০ তে ১০০ দিতে, তাহলে আপনি কাকে দেবেন জয় গোস্বামী নাকি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়?

উঃ- এইরে আমি এঁদের নম্বর দেবার কে? দু'জনেই নিজের কাজে ভাস্বর হয়ে আছেন।
কিন্তু তবু প্রশ্ন যখন আছে তখন উত্তর না দেওয়াটা অশোভন তাই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কে একশো দিলাম, আর জয় গোস্বামীকে হান্ড্রেড।


১৪.) কবি অনিন্দ্য'র কাছে সুবোধ সরকার?

উঃ- অ্যাকাডেমি পুরস্কার ভারতীয় সাহিত্যে একটা শিখরসম প্রাপ্তি, যিনি তা লাভ করেছেন তাঁর সম্পর্কে আমি কিছু বলার যোগ্যতা রাখিনা।


১৫.)সবাই বলছে নতুন রা বেশি সুযোগ পাচ্ছে এবছর পুরস্কারে  কিংবা কৃত্তিবাসের পাতায়, এটা কতটা সত্যি আপনার কাছে?

উঃ- এইরে এটার উত্তর আমি জানিনা। তবে একটা কথা বিশ্বাস করি আগুন আর প্রতিভা যদি থেকে থাকে তবে তা জানান দেবেই।

আর পত্রিকা বা পুরস্কারের ক্ষেত্রে যদি তরুণেরা বিবেচ্য হয়ে থাকে বা প্রাধান্য পেয়ে থাকে সেটা তো তারুণ্যের জয়।



১৬.) আপনি কাউন্টারে(সিগারেট) থাকেন না বা থাকেননি তাহলে কি অনিন্দ্য বাবু কাউন্টারের মজা থেকে বঞ্চিত থাকলেন এ জীবনে?

উঃ- এটা আমায় বাবা মানা করেছিলেন, যদিও খুব অল্প কয়েকটা কথা শুনি তবুও কয়েকবার কাউন্টার নিয়ে দেখেছি ফিল্টারটা গরম হয়ে যায় বা সিগারেটটা চেপে যায় অনেকক্ষেত্রে, এই দুটোর একটা হলেই আমার আর ওই সিগারেটটা পান করতে ইচ্ছে করেনা, কাজেই নতুন ধরাতে হয়, আমি তাই কেউ চাইলেই নতুন সিগারেটের অফার করি৷ আর এমনিতেও চেয়ে সিগারেট ধরাইনা। পকেটে কিছু থাক না থাক সিগারেট আর আগুন থাকে।


| কবির পছন্দ |

১. প্রিয় রঙঃ- লাল, তবে পরতে ভালবাসি সাদা বা কালো।

২. প্রিয় পোশাকঃ- জিন্স আর কালো টিশার্ট।

৩. প্রিয় শহরঃ- কলকাতা, শান্তিনিকেতন, ঢাকা।

৪. প্রিয় খাবারঃ- ফুডি একেবারেই নই, বরং আদুরে। কাজেই আদর করে যাকিছু দিলেই আমি খাই।

৫. প্রিয় কবিঃ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

৬. প্রিয় বাংলা সিনেমাঃ- গুপীগাইন বাঘাবাইন।

৭. প্রিয় গায়কঃ- প্রিয় গান আছে, প্রিয় গায়ক বললে কোনো এক জনের কথা বলতে হবে, কিন্তু কৃষ্ণচন্দ্র দে থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় হয়ে কবীর সুমন, নচিকেতা, অঞ্জন দত্ত, শিলাজিৎ আবার ব্যান্ডের মধ্যে পরশপাথর, চন্দ্রবিন্দু, ক্যাকটাস হয়ে নগর বাউল বা এল আর বি, ব্রায়ান অ্যাডামস থেকে শুরু করে আমার মায়ের গান সবই সমান প্রিয় আমার কাছে।

৮. আপনার চোখে আপনার বাবাঃ- সিনেমার মতো নামের একটা কবিতা আছে আমার,

আমার বাবা আমার চোখে হিরো,
মা-কেও তাই হিরোয়িন বলে ডাকি,
সুতরাং আমি সেলিব্রিটির ছেলে
তাঁদের সঙ্গে এক বাড়িতে থাকি।

ক্লাস ফাইভের সেই প্রথম কবিতাটা যেটা কবিতা লেখা খুব সহজ ভেবে শুরু করেছিলাম সেটার ছ'লাইন লিখে যখন আটকে গেছি, যাকে সামনে পাচ্ছি দেখাচ্ছি এরপর কী লিখব বুঝতে পারছিনা, সেদিন বাবা-ই শেষ চারলাইন আমায় বলে দিয়েছিলেন। আর নিউটনের প্রথম গতসূত্রের জের টেনে সেই শুরু হয়েছিল বাইরে থেকে প্রযুক্ত বল পেয়ে স্থির বস্তুর সমবেগে সরলরেখায় চলা।

বাবা আমার কাছে সাহস, স্পর্ধা আর অনমনীয়তার সংজ্ঞা।

৯. প্রিয় কবিতাঃ- দুঃসময়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

১০. অনিন্দ্য'র চোখে কবি শ্রীজাত?

উঃ- এক্ষেত্রেও পূর্বসূরীদের যেমন বলেছি তাইই বলবো, যাঁকে যাঁর লেখাকে মানুষ মনে স্থান দিয়েছেন আমি কে তাঁকে নিয়ে কিছু বলবার! সেই স্পর্ধা আমার নেই। অসম্ভব প্রতিভাবান কাউকে নিয়ে এককথায় আসলে বলা সম্ভব বলে আমি মনে করিনা।

১১.) শীতের দুপুর প্রিয় নাকি রাতটা?

উঃ- দুপুরে রোদ মাখতে ভাললাগে আর রাতে লিখতে কাজেই দুটোই প্রিয়।


"জলফড়িং"-কে কেমন লাগলো দাদা, যদি দু'লাইন জলফড়িং-র জন্য বলেন তাহলে ভালো লাগবে।
উঃ- খুব ভালো লাগলো কথা বলে, আরো এগিয়ে চলুক জলফড়িং এই কামনাই রইলো।

বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৮

ARTICLE'S CLUSTER এর কলমে কবি শুভদীপ পাপলু

কবি-পরিচিতি :
--------------------

শুভদীপ পাপলু-র জন্ম ১৮ নভেম্বর ১৯৮২ , হুগলী জেলার চুঁচুড়ায়। বাবা পেশায় ব্যবসায়ী,মা গৃহবধূ।কবিতার আবহেই বড় হয়ে ওঠা।
লেখালেখির সূচনা ছোট থাকতেই। প্রথম যৌথ কাব্যগ্রন্থ 'প্রতীক্ষা' প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে। সে সময় থাকলেও,বর্তমানে পদবীশূন্য।২০১৮ সালে শব্দসাঁকো থেকে যৌথ কবিতাপুস্তিকা 'কড়ি বরগায় প্রশান্ত ঢেউ-সমাপ্তিকা' বের হয় কোলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলায়। বর্তমানে শহর কলকাতা,মফঃস্বল ও গ্রামাঞ্চল থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকা এবং ব্লগজিনে লেখালেখির সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। বিয়ে ২০১৩ সালে,স্ত্রী শিক্ষকতার সহিত যুক্ত।



**************************************
১। বেলা, বোস নয়
     *************

সিঁদুর দান সমাপ্ত;লগ্নভ্রষ্টায়
এবার মালকোষ রাগ ধরো।

জানি,ডুবে যাব জলোচ্ছ্বাসেই।
তবু,যদি পরাগমিলনের নিগূঢ়
ইতিহাসে,হয়ে যায় কণ্যা বিদায়-

বা,বিধবা হয় নারী-সমগোত্রীয়...

তবে তাকে সন্ধিবিচ্ছেদ শিখিও;
যেহেতু,পুষ্পসজ্জিত এই তদ্ভব মূর্তি
হতে ক্ষরিত ' শ্রী শ্রী দুর্গায় নমঃ'।

সমকামে নিশ্চিহ্ন যত ছেদ-যতি,
তার চেয়ে অধিক কামাতুর,ধর্মও।

অনবদ্য তুমি;মূর্ত দৈহিক চলাচলে
যেন,হঠাৎ মৃত্যুর মতো,চোখ খোলা...

এই রূপ অর্জন করেছে বহু সুখ্যাতি।
কখনও জঙ্গলে,কখনও বা দাবানলে,
কারণ পা'দুটো দাঁড়িয়ে গেছে,বেলা!

^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^


২। লোপামুদ্রার মুদ্রাদোষ
     *******************

দুর্গা'কে উপভোগ করেছি,শখে
যুবক বেশে পাথরপ্রতিমা'তে-
মধ্যবয়সে তা ধরা পড়ে গেল।

বয়ঃসন্ধি ভিন্ন সুযোগ ফস্কালেও
সর্বদা থেকেছে আমারই পক্ষে...

শ্বেতবস্ত্রে ঢাকা সন্তান-সন্ততিতে।

পরিচারিকার ঠোঁটে মৃদুমন্দ তিল।

এ পরীক্ষা,প্রস্তাবিত কাঁচা টাকা,
কখনও ছুঁইনি ভগ্নাংশে,বা খরচে।
এখন লাল তারিখও সুবীর্যবান...
লোকগানের ধুন,কক্ষপথে অমিল

নিশ্চিন্তে চাঁদ নামে হাওড়া ব্রিজে
জলের প্রকোষ্ঠে জাগে নীহারিকা।

মনুসংহিতায় পরিযায়ী স্লোগান...

শুস্ক স্তন লোপামুদ্রার;শঙ্খচিল
ডানা ঝাপটায়,প্রযত্নে জনসমীক্ষা।

^^^^^^^^^^^^^^^


৩। সংলাপ
     ******

...অথচ বিপ্র সম্ভাষণে ধর্ম হয়,ধার্মিক বিচ্ছিন্না।
প্রব্রজ্যিকা;সুতরাং নিরুক্ত প্রজ্ঞা-পারমিতা
অক্লেশ বক্ষে নিমজ্জিত,হত শৃঙ্খলমোচন।
লোলুপ হরষে 'শ্রী শ্রী পুরুষোত্তম চন্দ্রিকা'য়
ও,পক্ষান্তরে শরণাপন্ন মন্ত্রে সন্তান জন্মায় শর্বরীর।
দিনান্তে,এই হল সুকর্ম;যে উচ্ছিষ্টে ক্লান্ত,গণদেবতা।
তবুও বর্ণমালা,তীব্র রহস্যময়ী এই শালগ্রাম শিলায়
নীরা'র বিপন্ন প্রত্নতত্ত্ব,কেন করেছো পাঠ্যসূচি?

বছরভর শয্যাসুখ রচিত হয় একাকিত্বে,সন্ন্যাসে।
তোমার বধ্যভূমি হতে উত্থিত আঁচলে,বর্ণমালা-
রামধনু সৃষ্টি হয়,অস্ফুটে।
তীক্ষ্ণ সেই-ই রশ্মিগুচ্ছ-অজুহাতছিন্ন,নবকলেবরের
অমোঘ শর্তাবলী,লিপিবদ্ধ করি,তৃষিত নয়নে।

বর্ণমালা,আমাকে প্রসবযন্ত্রণার উদাহরণে রেখো।

^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^


৪। স্তর
    ****

কবিতা'র দুর্গ উদ্ধার,সংকোচে।
সম্বল অভিনেত্রী,পরমুখাপেক্ষী-
'ব্যোমকেশ গোত্র' সত্য খুঁজছে
রহস্য যেন প্রায় শংঙ্কিত,সাবেকি।

শুক্রাণু খরচ তো নিঃশর্ত খাজনা।
শরীর শুনেছে,প্রভাতী আগমনী-
সহমরণ পুড়ছে,যেন অগ্নির প্ররোচনা
পেয়ে,নারী সেজেছে যুদ্ধের ধমনী।

অপরিচিত আজ সমস্ত শব্দার্থ।
ব্যর্থতা নেই একাদশী সৎকারে।
শুনেছি,পৃথিবী ঘুরে চলেছে অনবরত
অবরুদ্ধ স্নান,মানস সরোবরে...

প্রাচ্য অনেকাংশে গর্ভস্থ,প্রবন্ধে।
স্ত্রী' তো জন্মান্তরেই,দেহাতি ঝর্ণা-
বীতশ্রদ্ধ,বিষাক্ত,যোণিপথের মধ্যে
তুমি আয়ুস্মতী হও,মৃত্যু যন্ত্রণা...

^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^


৫। চলতে চলতে,একলা
     ******************

ভাত বেড়ে এনেছে,বাঙাল ভাষা।

দূর সম্পর্কে ছোট'দ্যাওর,মনোবিদ।

ঘামে,অবিশ্বাসে,কেবল সর্বনাশ-
বিপদসীমা ঘেঁষে বয়ে চলে নেশা।
আর,শবদেহ কাটে,প্রণয়ের সিঁধ।

এসো প্রেম,নব্য স্বৈরাচারী ভূমিকায়,
আত্মহত্যার প্রজন্মে হও স্বয়ংসম্পূর্ণা,
ভ্রম স্বয়ং ব্যর্থ হোক,সংশোধন ছাড়া।

লাখ টাকা উপেক্ষিত,বিচ্ছিন্ন কর্তায়-
যেন ধ্বংসের বিবিধ পিয়ানো শোনা
সরু কর্মফলে ত্রস্ত,ছদ্মবেশী মারিচ!

ঘুম থেকে রাত গড়িয়ে গেলে,ওরা
নাম রাখে প্রথম মেয়ের,'সম্ভাবনা'।

তবু,কবি'র রোদে পড়েছে,দু'টো স্টিচ।

^^^^^^^^^^^^^^^^^^^


৬। মৃগয়া,ও একটি সঞ্চারী রাগ
    *************************

কোষ্ঠী ও আনারকলি'র পৃথক দেহ ছুঁয়ে,অগ্রগামী
বিকৃতি যেদিন গুনেছে জনসংখ্যা,সেদিন অনাদরে
বুঝতে শিখেছি,হত্যার শিরোচ্ছেদ আমার জন্মভূমি
যে,নর-নারী রূপে পালিত হয়,অন্তঃস্বত্ত্বার জঠরে।

মৌলবাদী তাস ধ্বংসতর,পরমানু যুদ্ধ অপেক্ষায়
অথচ,এ দোষ সর্বগ্রাসী,রূপকার্থের দ্রাঘিমাংশে।
প্রণামী দিয়েছি যে মুহূর্তেই,নিচু হইনি ব্যর্থ ভিক্ষায়
শুধু,সঙ্গম সুখের লোভে,স্নান করেছি অগ্নি বেশে।

উদ্ধত মহাপ্রলয়ের তাল,পঞ্চবিংশতি দগ্ধ পরাধীন
এবং যাজ্ঞসেনী বৈদুর্য রহস্যে বস্ত্রহারা;নিয়ম মতো
আতংকিত ডানায় উপবাস;দিবানিশি বরফ কঠিন
হস্তাক্ষরে,নারী অভিশাপ নজরবন্দী,তবু উচ্চারিত।

সে তুমি বন্য গুপ্তচর,ওঁত পেতে জরায়ুর জ্বালামুখে
দুর্ধর্ষ অলস মিলনে রোজ জন্মাচ্ছি,উপন্যাস লিখে।

^^^^^^^^^^^^^^^^^^^


৭। স্বভাবী
     ******

ব্যূহে,যারা-স্বভাবী'র দু'পায়ে
হৃদপিন্ড সঁপেছে,তারা পৌরুষ
পরিত্যাগে,অনাদি দুস্থ বিগ্রহ।

মায়াধীন মোহধীন ভগ্ন সন্দেহে
ওদের সম্বল জরাগ্রস্ত মানুষ...

যেমন ভরসা হারিয়ে,উপকূলে
জন্মায়,জলোচ্ছ্বাসের আগ্রহ-
মৃত্যুর আশ্বাস। তোমার নির্দেশ
ডেকে পাঠায়,ক্ষুধার্ত গুরুগৃহে।

তারা খসে অগ্রভাগে,তারপরে
মিছিলে হয়েছিল গল্প ছাপা।

তাই,এ নাব্যতার অন্দরমহলে
হৃত সংকোচে,লিঙ্গের ত্রিশূল।

তুমি চুরি করে আনো দেবকৃপা...

জনগন দেখুক পলাশি প্রান্তরে
স্বভাবী গুনছে,যুদ্ধের মাশুল।

^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^


৮। শরম্
    *****

...অন্যথায়,ফিরে এসো স্বমহিমায়।

মনে পড়ে তাকে,সেই স্কটিশ মেষপালক!
যার,উদ্বাস্তু সঙ্গীত ছিল ক্রীতদাস,
তাঁর কন্ঠেই নাগরিক সমাজ,হোক
গৃহযুদ্ধের অন্তিম পরিণয়।

বেদুঈন,তুমি পুনরায় নাও কারাবাস।

বাদামী পেন্সিলে আঁকা অনুভূতি,
বিসর্জনের চাঁদে,মাননীয়-
যেহেতু ছন্দ মিলে গেছে,অনেকক্ষণ...

খোলা চুল ধরে,ধেয়ে আসে প্রতিশ্রুতি
কালের শেকলে,বাঁধা নগ্ন ছায়া-ও।

সুদে-আসলে মৃত,আপনজন-
প্রজা উদ্ধার,রাজকোষ সম্পূর্ন পরাস্ত।

তবু অনেকাংশে,এ অর্থ,সমোচ্চারিত...

এসো ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে,এসো নিরীহ
সিংহাসন;এসো শরশয্যা,করো অস্ত্রসংবরণ।

^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^


৯। বর্ণমালা
    ********

ধুলো জমে যাওয়া সেই অসুখ,
পরাধীন জাতীয় পতাকা...

কোন বাস্তুদোষে তাকে নিয়ে ঘর করি?

তবু আজ ধর্মান্তরিত,ফারুক।
বিজ্ঞাপনে একাই সে,মুখ্য ভূমিকা-
সরীসৃপের ন্যায় বোবা মড়কে
সে আসে জন্মান্তরের সংসারে;এখন
তাই,অগ্ন্যুৎপাতের মুখ,বন্য। যার
সমীকরণ ছুঁয়ে দগ্ধ প্রকোষ্ঠে
স্থির,'কুমোর পাড়ার গরু'র গাড়ি'।

তুমি অদ্ভুত শিবরঞ্জিনী সুরে
পুঁতে দাও নিষিক্ত দেবালয়-
যার সমস্ত বাহন,মৃত পাঠকের পাওনা।

প্রতিশব্দের ঠোঁট কেঁপে ওঠে আদরে...

বলো,কোন পুরুষ আমি,বর্ণমালা?
স্পর্শ কি সকল কে করা যায়!

^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^


১০। শোধ
       ****

এ-ভেলায় ভাসে না একটুও
বেহুলা'র অসুস্থ মেয়েবেলা।

ইন্দ্রের সুরা পান শেষ হলে,
ভিনগোত্রের অন্য কোনও
মেয়ে,সাজায় পুজোর থালা।

রোদ ছিল তোমারই করতলে।

বামিয়ান দিয়েছে সন্ত্রাসের দোহাই।
শিখেছি,বিপরীত গন্তব্য-ও
লেখার জন্য উপযুক্ত,কবিমহলে...

মা অভুক্ত মাতৃত্বের কাছেই।

আছে পার্থক্য,প্রশ্বাসে আর প্রবাদে?

ঘূর্ণাবর্তে মেশে ঈশ্বর বিরোধ।
কথা বলে ওঠে,পোড়ো মন্দিরটাও।

যেমন চাঁদ সওদাগরের ক্রোধে,
আগুন লাগায়,মৃত্যুর প্রতিশোধ...

^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^


১১। আশাবরী
        ********

শিয়রে ধূপধুনো জ্বলবে,আহা কেঁদে উঠবে কত শ্রী-
বিনিদ্র অলিগলি দিয়ে কাঁধে কাঁধ,ঠান্ডা হরিদ্বার
একদিন ডানা মেলো মাছরাঙা,নিখুঁত হোয়ো শর্বরী
সব দ্বন্দ্ব মিটে গেছে হত্যা আদায়ে,'উলঙ্গ রাজা'র!

চিতা নেভে না হাল্কা সুখে;উক্তি ধৃত আবৃত মৃতের।
যে চরিত্র উপস্থিত,সে কোন দুর্যোগে রাত কাটাবে?
নিথর সুগন্ধী উপভোগে ছোটাছুটি বুদ্ধিজীবিগণের-
অস্ত্রোদ্ধারের উপায় শিখিও,ইতিহাসখচিত স্বভাবে।

এ দেহ নিয়েছে পরিতাপ,ফলাফলে ভস্ম দো-টানা।
সংহার অনুমোদিত নিম্নচাপে,অথর্ব নিরুদ্দেশ যাত্রা
পরস্পরের অভিমুখ;দহনে এনো বান্ধবীর কুমন্ত্রণা-
আর,সন্তুষ্টি জাগ্রত হলে,সূর্যাস্ত পায় উদ্ধারকর্মীরা।

বিসর্জনের উত্থিত শর্তে হৃত ক্লান্তি,ধর্ষিতা কুমারী-
পাঞ্চজন্যের তর্পণে,সদ্যোজাত দেখেছে,আশাবরী।

^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^

১২। এহ্সান
       *******

স্বপ্নের নেশা অপবিত্র,ভিক্ষায় অর্জিত তহবিল-
লাঞ্ছনাতেই উধাও সংসার,অতিভুজে শঙ্খচিল।
উপলক্ষ্যের ভাঁজে অতিথি এল,গান্ধার নক্সায়।
দুর্বল হেসে কামরাঙা ঠোঁট ফিরে যাক,হতাশায়।

মহামারী'র কোজাগরী ধন,সাতরঙা এহ্সান ...
সলতে জ্বলা বৌঠান!মেরে পাস্ আও,মেহেরবান।
ভাষার কাঁধে,কবিতা'র দেহ চিরাচরিত নির্লীপ্ত-
অবশিষ্ট জ্যামিতি,যেন আপেক্ষিক উপদ্রব বেষ্টিত।

অনেকটা এক্স-রে'র মতো দেখতে নখের সোহাগ,
অকস্মাৎ জাতীয়তাবাদী শব্দ,'ভাগ মিলখা ভাগ',
সম্পাদ্যের মিলনে দো-ফসলি বিন্দুর কাতর আর্জি
শাস্তি পাওয়াই তো একান্ত অধিকার,প্রিয়তম মর্জি।

কামরাঙা ওই ঠোঁট'ই,পড়ন্ত বারবেলা'র ঋণ মকুব।
ওই যৌণতাই তিন তালাক,সংখ্যালঘু'র শেষ ডুব-
পদার্থবিদ্যায়;আদর্শ বিবেক জন্মান্ধ,আংশিক মুক্ত,
শহরতলির অনশনেই চাপা পড়ে যায়,ভগবৎ তত্ত্ব।

^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^


১৩। নিবিড়
       ******

উর্বর ব্যস্ত ভূগোলে যেভাবে বিভিন্ন শরীর ক্ষয়ে যায়
সেভাবে অন্তর্বাস রোদে সাক্ষী রাখি কুমারী মা'কে,
আটচালা মহিলা'র বিপক্ষে নব্য ধর্মগ্রন্থ;জিজ্ঞাসায়
উদভ্রান্ত পরিযায়ী বেশে স্বাভাবিক,ধূর্ত পরলোকে।

এখন আইন-কানুনে অণুকবিতার চতুর সংগ্রহ
হাঁক দিচ্ছে,'অক্ষরের সঙ্গীত বাজাবে বিদ্রোহী,সুর'-
উচ্চারণের নিচে লীনতাপ খসিয়ে,বিদুষী মোহ,
ব্যাকরণে ধ্বংস হচ্ছে;মন তাই অপরিচিত,রোদ্দুর।

তবু জনৈক সুন্দরি কণ্যার তারিখে শিখি,একাগ্রতা।
স্বেচ্ছায় অন্তর্যামী বিচ্ছিন্ন মতান্তর,ব্যূহে আক্রান্ত।
মৃত্যু'র অজানা,দুর্দিনে কোথায় শুয়েছিল পতিব্রতা!
বনেদি ষোড়শী'ও সেদিন শুদ্ধ ছিলো;আজ বিগত।

যতোটুকু বিশল্যকরণী,উদ্ভবে শুধুই বংশের ধারা-
জরায়ু'তে রাত কাটিয়ে সহ্যে পৃথক,পাওনাদার'রা।

^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^


১৪। স্বয়ংবরা
       ********

আজ তোমাকে বলতেই হবে,অন্তঃসলিলা-

বিকলাঙ্গ রাষ্ট্রের মতো এক সন্তানসম্ভবা'কে
কি উদ্দেশ্যে শুনিয়েছো,গীতবিতান?

সৃষ্টিকর্তা'ও স্বেচ্ছাবসরের প্রাক্কালে,ধার্মিক।
জানি নুয়ে পড়বে,জল জমবে;জবাবী বিতর্কে
বীতশ্রদ্ধ,'নিগ্রো ভাই আমার,পল রবসান'।

আজ আমাকে করতেই হবে,রিপুসংযম-
ছেঁড়া নামতার সংখ্যালঘু শূন্যেই।

কিংবা অদৃষ্ট পোষিত অবাধ্য 'সঞ্চয়িতা'য়
পরিকল্পনাপ্রসূত মদনভস্মের ছাড়পত্র'কে
মৃত্যু অবধি বদনাম করে,গ্রহদোষেই
চাঁদ ঝরাব;গোপন কক্ষে দেবো প্রতিমা ভাসান।

নত,তোমার দাবি মতো;শুধু অপচয় বিহীন
দেওয়াললিখনে দাগানো,শিল্পী'র শেষ টান।

^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^


১৫। মহীয়ান
       *******

আজও বিজ্ঞান ভেজে জনশ্রুতিতে
আজও রক্ত মেপে চলেছে দৈর্ঘ্যপ্রস্থ
আজও মা,ভাত বেড়েছে গণসঙ্গীতে
পোড়ো কথায় মিথ্যেরা অনুমোদিত।

ধরা পড়েছিল শ্রেণি সংগ্রামের খুঁত
তোমার দৃষ্টি কাজললতা বিহীন...
অমাবস্যার দেহে বৃষ্টির ছোপ অদ্ভুত
সুপারহিট,মহানায়িকা'ও পরাধীন-

খুন করেও জামিনযোগ্য,এ স্বদেশে।
মরে যেতেও জীবনবীমা দরকার।
ধরা যাক আজ মহাসমুদ্রের অবকাশে
রবীন্দ্রনাথই,শব কবিতা'র সৎকার।

আয়ুরেখা ছেঁড়া,মেজো রাজার প্রস্থানে।
ছন্দ নিহত উৎসব সংখ্যার পদবাচ্যে-
সন্ন্যাস নিয়েছি মাঝবয়স্কার নাচ গানে,
শিল্পীর মতো দেবীর স্তনে,নিঃসংকোচে।

মঙ্গলবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৮

"বান্ধবীসুখ"গানের রিভিউ



অনিকেত দাসের লেখা আর শুভ্রজিৎ পন্ডার গাওয়া "বান্ধবীসুখ" সত্যি করেই একটা অন্যরকম ভালোলাগার গান।
শুধু উঠতি বয়স নয়, যেই দেখবে প্রায় ৯৭% মানুষের কাছে এটা একটা  স্মৃতি মনে পড়ার গল্প হয়ে যাবে।
খুব সুন্দর একটা গান আর গানের সাথে সাথে
খুব ফুটফুটে দুটো ছেলে-মেয়ের অভিনয় যা পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিতে কমতি রাখেনি।

সেই একটা বটগাছ তার গায়েই তাদের গল্প জমে ওঠে রোজ, ছেলেটার তেল চিটচিটে চুলটা একদম বাজে লাগে তার বান্ধবীর। তা অবশ্য লাগারই কথা তাও কেন জানি না সে তার তেল চিটচিটে চুলে হাত দেয়। কিন্তু কিছু করার নেই, ছেলেটা কবিতা লেখে আর কবিতা লেখা ছেলেরা তো এরকমটাই হয়, সে যাগগে, ছেলেটার বান্ধবী তাতে কোনো আপত্তি করেনি খুব একটা  উল্টে তাকে মেনে নিয়েছে হাসিমুখে, ভালোবেসে বলেছে, হ্যাঁ ঠিক আছে, চলবে কোনো ব্যাপার না। বুঝতেই পারছেন যেমনটা হয় সাধারণত। বেশ ভালোভাবেই সব কিছু চলতে থাকে মাঝেমাঝে দু-একটা চুমুও পেয়ে যায় ছেলেটা ফ্রি-তে।

কিন্তু এসব বান্ধবীসুখ বেশিদিন থাকে না সেটা সবাই জানে। তবুও বারে বারে প্রেমে পড়ে বেশ কিছুজন, হয়তো পড়ে না, পড়া হয়ে যায়।
একইভাবে একদিন ফুরিয়ে আসে সব, কিছুকাল পেরিয়েছে মেয়েটার সাথে ছেলেটার আর কোনো যোগাযোগ নেই , মেয়েটির নিশ্চয় মনে আছে ছেলেটা তার কবিতার খাতাটা  তাকে দিয়ে গিয়েছিল।
এখন সেই স্মৃতি নিয়েই সে-ও বেঁচে আছে যেমন করে আরও পাঁচজন বেঁচে থাকে এটা জেনেই যে, কিছু কিছু বান্ধবীদের মনে রাখতে হয় তাই বলে সব বান্ধবীদের মনে রাখতে নেই।


পুরো ব্যাপারটা গান থেকে এডিট থেকে ক্যালিওগ্রাফি পুরোটাই একটা অন্যমাত্রার কাজ হয়েছে, আশা করি সবার এটা ভালো লাগবে।

Lyrics by Aniket Das,

sung by Subhrajit Panda

Tune by : Subhrajit & Aniket

Music : Rishi Panda ; MIC Drop Studio

D.O.P- Gourab Das

EDITOR- Subham Haldar

ACTOR- KANINIKA & ANIKET

Title Calligraphy & Cover Photo :
Krishnendu Mondal

 (কলমে ডট.পেন)

শনিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৮

কবিতা:-হারানো খাতার কবিতারা

ফুলের ভিতর আগুন...সন্ধ্যা নামছে

ঈশ্বরকে রেখে এসেছি কারখানায়-

উঠোনের কাঁচা মাটিতে দিদার আলতার ছাপ

দুর্গা বেঁচে আছে...দুপুরের পর,দুপুর

ফিরে আসে পুনর্জন্ম...জাতিস্মর কথক

আহ্লাদী  বিড়ালটা অলীক জ্যোৎস্না মেখেছে রাতে

চুম্বনের কাছাকাছি গিয়ে দিতে পারিনি-  প্রেম বিসর্জন

রাত্রি হরফ পুরনো বন্ধুর গান তোলে আকাশে

পাখি পালায় কাঁটাতার  টপকে রঙিন জানালায়

তোমার ক্রুশ কাঠি প্রত্যাখানের প্রতিটা আঁচড়...

সবিনয়ে,
সৌরভ দত্ত 


শুক্রবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৮

এই ছিল শেষ কথা


মনে পরে দিনটি ছিল
এক শরতের বিকেল,
তুমি, আমি আর সেই মাঠ
সে দিন তুমি আমায়
প্রথম জিজ্ঞাসা করেছিলে _
অন্নপূর্ণা তুমি আমায়
             ছেড়ে যাবে না তো?
আমি বলেছিলাম __
যাব বলে তো হাত ধরিনি?
হাত ধরেছি থাকব বলে।
তোমার চোখই বলে দিয়েছিল
তুমি আমার কথায় আশ্বস্ত হয়েছিলে।
কিন্তু, বড় হওয়ার সাথে সাথে
বুঝতে শুরু করলাম _
তোমার আর আমার
কল্পনা, অভিরুচি
সবই আলাদা ।
বিশ্বাস কর তবুও চেষ্টা করেছিলাম
তোমার সাথে থাকবো বলে।
কিন্তু, তোমার একটা চাকরি
সব ওলোট পালোট করে দিল।
ওলোট পালোট করে দিল
                গল্পের মোরটি।
বুঝিয়ে দিল _
  প্রয়োজন ও প্রিয়জনের পার্থক্যটি।
আজ বেশ বুঝতে পারি
প্রিয়জন বলে কিছু নেই
          সবই প্রয়োজন।
ভালোবাসার অস্তিত্ব নেই
             অস্তিত্ব
কেবল ভালোলাগার।
তুমি ভালো থেকো, সুখে থেকো,
তোমার নতুন চাকরি, নতুন ঘর
মধুময় হোক।
হয়তো আবার দেখা হবে,
শরতের কোনো এক বিকেলে।
শুধু পাল্টে যাবে
সময়, পরিস্থিতি আর মানুষগুলি।
ভালো থেকো __
অন্নপূর্ণার লেখা তোমাকে শেষ চিঠি।।

বৃহস্পতিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৮

                         "জন্মে জন্ম এক"
           
                        ::::সূচিপত্র::::

(ক)জলফড়িং এ বিখ্যাত/স্মরণীয় কবিরা:-

১) আত্মবিলাপ--         মধুসূদন দত্ত
২) ১৪০০ সাল--          রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৩) অভিযান --           কাজী নজরুল ইসলাম
৪) ১লা মে-র কবিতা--- সুকান্ত ভট্টাচার্য
৫) অঘ্রান--                  জীবনানন্দ দাশ
৬) আসমানী--              জসীমউদ্দীন
৭) মাষ্টারদার হাতঘড়ি-- শামসুর রহমান
৮) উত্তরাধিকার--         সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৯) মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়-- জয় গোস্বামী
১০) মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে-- শঙ্খ ঘোষ
১১) যেতে পারি কিন্তু কেন যাব-- শক্তি চট্টোপাধ্যায়
১২) ফুল ফুটুক না ফুটুক-- সুভাষ মুখোপাধ্যায়

(খ)আমন্ত্রিত লেখক/কবি কলম:-

১) স্বপ্নের রঙ             দেবার্ঘ চ্যাটার্জী(কবিতার ছন্দ)
২) শাখা                    মৌসুমী ভৌমিক(কবিতার ছন্দ)
৩) অপরাজিতা        কৌশিক কোনার(কবিতার ছন্দ)
৪) সময়টা হারিয়ে যায়
       কত সহজে!               রীতা রায়(কবিতার ছন্দ)
৫) চিলে কোঠার আড়ালে   অমল দাস(আলাপি মন)
৬) স্বপ্নের উজানে               রুদ্রপ্রসাদ(আলাপি মন)
৭) আপন খেয়ালে          রীনা চ্যাটার্জী(আলাপি মন)
৮) নতুন বিজ্ঞাপন                     তৈমুর খান
৯) প্রভাতকিরণ    আরিফুল ইসলাম সাহাজি(নোঙর)
১০) তুমিও বোঝ                         নীলমেঘ(সপ্তাশ্ব)
১১) গণতন্ত্রের গ্রিনল্যান্ড             শ্রীনীল(সপ্তাশ্ব)
১২) ধুলোর মানুষ   হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়(কাটুম কুটুম)
১৩) ভাবনা                        বিধান সাহা(সবুজ সাথী)
১৩.) উন্মনা লিটিল ম্যাগ
১৪.) পদক্ষেপ লিটিল ন্যাগ
১৫.) সবুজ সাথি
১৭.) সূর্য্য সেনগুপ্ত
১৮.)ধীরেন্দ্র নাথ বাঙ্গাল

(গ)জলফড়িং এর সদস্য কলম:-

১) জলফড়িংয়ে সূর্যোদয়--- সুনন্দ মন্ডল
২) সঞ্চয়ন---                      জয়দীপ রায়
৩) The subtle thief of
         a happy youth--- উইলিয়াম
৪) জন্মান্তর---                   অরূপ সরকার
৫) বন্ধুর মৃত্যু(গল্প) ----     সুদীপ্ত দেবনাথ
৬) অপেক্ষা----                  অমিয়া গড়াই
৭) বলো?----                     সুদীপ্ত সেন

(ঘ)নির্বাচিত কবিতা/গল্প:-

১) চেনা অচেনার তীরে           তপনকান্তি মুখার্জী
২) বুড়ো আর বুড়ি                রাজশ্রী রাহা চক্রবর্তী
৩) কবি'তার জন্মদিন'                চঞ্চল ভট্টাচার্য
৪) মনি                                       আশীষ হাজরা
৫) বিস্মৃতি                                   সায়ন মোহন্ত
৬) মাকে লেখা অর্গান                বিশ্বজিৎ মন্ডল
৭) ঢের হয়েছে                            সুজান মিঠি
৮) রাতের কোলাজ               কুমারেশ তেওয়ারী
৯) শব্দ জন্ম                            তমঘ্ন নস্কর
১০) হাঁড়িতে চাল বাড়ন্ত            বিশ্বজিৎ মৈত্র
১১)   ভাইফোঁটা                       অভিজিৎ দত্ত
১২) জোড়া শালিক                   সুহৃদ মন্ডল
১৩) প্রয়োজনীয়তা                     প্রীতি মান
১৪) উষ্ণস্পর্শ                         আদিত্য বর্মন
১৫) নারী ও ভালোবাসা              অপর্ণা নাথ
১৬) কবিতার রেখা থেকে           জগদানন্দ বর্মন
১৭) মঙ্গল অভিযান               নারায়ণ প্রসাদ জানা
১৮) প্রতিদান                             সমরেশ পর্বত
১৯) বিমোহন                              কান্তিলাল দাস
২০) আলো হয়ে জ্বলে                     তপময়
২১) আবার আসব ফিরে           অপূর্ব কর্মকার
২২) জন্মদিনের চিঠি                  পিনাকী বোস
২৩) প্রতিশ্রুতি                               লিটন দাস
২৪) বয়ঃসন্ধির দাগ                  কৌশিক চক্রবর্তী
২৫) আমার প্রভু                       রাজেশ প্রামানিক
২৬) জন্মদিন                             অমরেশ বিশ্বাস
২৭) এই ছেলেটা                      বটু কৃষ্ণ হালদার
২৮) তুমি ও আমি                  শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়    
২৯) উমা আর মেনকা               অঞ্জলি দেনন্দী
৩০) সামনের পথ                   পারমিতা চ্যাটার্জী
৩১) অক্ষর চাষি                  আব্দুল লতিফ মন্ডল
৩২) কে বলেছে এটা অনিয়ম         বলাই দাস
৩৩) সিগারেট                              সৌরভ ঘোষ
৩৫) কবিতার দিন                    অমিতাভ দাস
৩৪) কবিতা বৃষ্টি তুমি               বাবলু বাউরি
৩৫) এই মেয়ে তুই কি জানিস    মৌসুমী চ্যাটার্জী

                            অনুকবিতা
                            ‎
৩৬) আরোগ্য                               বিনয় হাজরা
৩৭) মরুদ্যান                              নেহা কুমারী মন্ডল
৩৮) ভালোবাসার বীজ                নেহা কুমারী মন্ডল

                         গল্প/অনুগল্প
৩৯) নিমন্ত্রণ                                     মলয়
৪০) বসন্তের পলাশ                       মৈনাক চক্রবর্তী

               সিনেমা থেকে

৪১)শ্রীহিট নাকি ওশিট!                       চিরঞ্জিত সাহা

এছাড়াও থাকছে.......

পছন্দ হওয়া কলম ফেসবুকের পাতা থেকে
১.সুতৃষ্ণা সামন্ত

রিভিউ কলম
১.লেখক জি.কে নাথের কলমে কবি অংশুমান কর।
২. কবি সুনন্দ মন্ডলের "এবং আমি"- আলোচনায় ডট.পেন(সুদীপ্ত সেন)

এবং

সাক্ষাৎকার
১.) এক্সক্লুসিভ সৌমিত্র
             
         --------------:----------------

"জন্মে জন্ম এক" সংখ্যা






আজ আর সম্পাদকীয় নয় শুভেচ্ছা দিয়ে শুরু
================================

ভালবাসা নিয়ে নিজে তুমি, ভালবাসো সব সৃষ্টিকে
তোমার পাতায় পাতায় কত নবীনের লেখা
ঝরে যাও তুমি সকলের কাছে কাব্য কবিতা বৃষ্টিতে।


আর একদিন পর রাত পোহালেই সেই পত্রিকার প্রথম জন্মদিন। কী করে দেখতে দেখতে এতটা দিন চলে গেল আর জলফড়িং -এর সঙ্গে একটা গভীর সম্পর্ক হয়ে গেল বুঝতেই পারিনি। জলফড়িং এর পথ চলা কী ভাবে শুরু হলো আমার ঠিক জানা নেই, তবে জলফড়িং যে ভাবে উড়ে চলেছে তার কাছে কোনো কাঁটাতার ই কোনো বাধা নয়।
মাস টা সম্ভবত এপ্রিল কিম্বা জুন হবে তার আরো এক-দুমাস আগে লেখিকা মৌসুমী ভৌমিক দির সাথে ফেসবুকে কোনো ভাবে যোগাযোগ আর উনি পরিচয় করান আমাদের প্রিয় প্রধান সম্পাদক সুদীপ্ত ভাইএর সাথে আর ওটাও ছিল ফেসবুক। আর ফেসবুকে
 দু–চার দিন আমাদের hi-hello দিয়েই কেটে যায়, তখনো আমি জানতাম না জলফড়িং--এর সম্পাদক সুদীপ্ত। তারপর যদি আমি খুব ভুল না করি মনে হয় সুদীপ্তর মেসেজ টা ছিল –আর কী কথা এগোবে না ? আমি তখন ট্রেনে বাড়ি থেকে কলকাতা যাচ্ছিলাম , আর তখন পত্রিকা নিয়ে কথা হয় ।
আর তার কিছু দিন পর আমার উপর ব্লগ ডিজাইন এর ভার ছেড়ে দেয় আমি কাজ শুরু করি , করে চলেছি .... আর দেখতে দেখতে  ছয়–সাত মাস চলে গেল অনেক সংখা বেরোলো, অনেক সাক্ষাৎকার হলো , আমরা ব্লগ থেকে .in এ নুতুন ঠিকানা পেলাম। আর এখন আমি আপনি আরো অনেকে জলফড়িং কে ভালোবেসে মোবাইল বা কম্পিউটারের ব্রাউসার এর বুকমার্ক একটা লিংক দখল দিয়েছেন।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে কতটা কী দিতে পরেছি আমার জানা নেই তবে  জলফড়িং-এর লেখক , লেখিকা , ও আমাদের প্রিয় পাঠক বৃন্দর অফুরন্ত ভালবাসায় আমি চির কৃতজ্ঞ থাকব ।
জলফড়িং-এর জন্মদিনে এর প্রধান সম্পাদক সুদীপ্ত ভাই ও জলফড়িং-এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে এবং সকল লেখক ও পাঠক দের অভিনন্দন জানাচ্ছি। কোনো কিছুর সঙ্গে আপস না করে জলফড়িং যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা সত্যিই অতুলনীয় আমার কাছে।

[কলমে মানস খাঁড়া]
১.)  ১৪০০ সাল


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর



আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
    কৌতূহলভরে--
 আজি হতে শতবর্ষ পরে।


আজি নববসন্তের প্রভাতের আনন্দের
    লেশমাত্র ভাগ--
আজিকার কোনো ফুল, বিহঙ্গের কোনো গান,
 আজিকার কোনো রক্তরাগ


অনুরাগে সিক্ত করি পারিব না পাঠাইতে
    তোমাদের করে
 আজি হতে শতবর্ষ পরে।


তবু তুমি একবার খুলিয়া দক্ষিণদ্বার
    বসি বাতায়নে
সুদূর দিগন্তে চাহি কল্পনায় অবগাহি
    ভেবে দেখো মনে--
 একদিন শতবর্ষ আগে


চঞ্চল পুলকরাশি কোন্‌ স্বর্গ হতে ভাসি
 নিখিলের মর্মে আসি লাগে--
নবীন ফাল্গুনদিন সকল বন্ধনহীন
    উন্মত্ত অধীর--


উড়ায়ে চঞ্চল পাখা পুষ্পরেণুগন্ধমাখা
    দক্ষিণসমীর--
সহসা আসিয়া ত্বরা রাঙায়ে দিয়েছে ধরা
    যৌবনের রাগে
 তোমাদের শতবর্ষ আগে।


সেদিন উতলা প্রাণে, হৃদয় মগন গানে,
    কবি এক জাগে--
কত কথা পুষ্পপ্রায় বিকশি তুলিতে চায়
    কত অনুরাগে
 একদিন শতবর্ষ আগে।
 আজি হতে শতবর্ষ পরে


এখন করিছে গান সে কোন্‌ নূতন কবি
    তোমাদের ঘরে?
আজিকার বসন্তের আনন্দ-অভিবাদন
 পাঠায়ে দিলাম তাঁর করে।
আমার বসন্তগান তোমার বসন্তদিনে
 ধ্বনিত হউক ক্ষণতরে


হৃদয়স্পন্দনে তব ভ্রমরগুঞ্জনে নব
    পল্লবমর্মরে
 আজি হতে শতবর্ষ পরে।
            ------------------



২)  অভিযান

কাজী নজরুল ইসলাম



নতুন পথের যাত্রা-পথিক
চালাও অভিযান !
উচ্চ কণ্ঠে উচ্চার আজ -
“মানুষ মহীয়ান !”

চারদিকে আজ ভীরুর মেলা ,
খেলবি কে আর নতুন খেলা ?
জোয়ার জলে ভাসিয়ে ভেলা
বাইবি কি উজান ?
পাতাল ফেড়ে চলবি মাতাল
স্বর্গে দিবি টান্ ।।

সরল সাজের নাইরে সময়
বেরিয়ে তোরা আয় ,
আজ বিপদের পরশ নেব
নাঙ্গা আদুল গায় ।

আসবে রণ-সজ্জা করে ,
সেই আশায়ই রইলি সবে !
রাত পোহাবে প্রভাত হবে
গাইবে পাখি গান ।
আয় বেরিয়, সেই প্রভাতে
ধরবি যারা তান ।।

আঁধার ঘোরে আত্নঘাতী
যাত্র-পথিক সব
এ উহারে হানছে আঘাত
করছে কলরব !
অভিযানে বীর সেনাদল !
জ্বালাও মশাল, চল্ আগে চল্ ।
কুচকাওয়াজের বাজাও মাদল ,
গাও প্রভাতের গান !

ঊষার দ্বারে পৌছে গাবি
‘জয় নব উত্থান !’
              -----------

৩.)  আত্মবিলাপ

মাইকেল মধুসূদন দত্ত



আশার ছলনে ভুলি কী ফল লভিনু,হায়,
তাই ভাবী মনে?

জীবন-প্রবাহ বহি কাল-সিন্ধু পানে যায়,
ফিরাব কেমনে?

দিন দিন আয়ুহীন হীনবল দিন দিন ,--
তবু এ আশার নেশা ছুটিল না? এ কি দায়!

রে প্রমত্ত মন মম! কবে পোহাইবে রাতি?
জাগিবি রে কবে?

জীবন-উদ্যানে তোর যৌবন-কুসুম-ভাতি
কত দিন রবে?

নীর বিন্ধু, দূর্বাদলে,নিত্য কিরে ঝলঝলে?
কে না জানে অম্বুবিম্ব অম্বুমুখে সদ্যঃপাতি?

নিশার স্বপন-সুখে সুখী যে কী সুখ তার?
জাগে সে কাঁদিতে!

ক্ষণপ্রভা প্রভা -দানে বাড়ায় মাত্ত আঁধার
পথিকে ধাঁদিতে!

মরীচিকা মরুদেশে,নাশে প্রাণ তৃষাক্লেশে--
এ তিনের ছল সম ছল রে এ কু-আশার।

প্রেমের নিগড় গড়ি পরিলি চরণে সাদে
কী ফল লভিলি?

জ্বলন্ত-পাবক-শিখা-লোভে তুই কাল ফাঁদে
উড়িয়া পড়িলি

পতঙ্গ যে রঙ্গে ধায়,ধাইলি,অবোধ,হায়
না দেখলি না শুনিলি,এবে রে পরাণ কাঁদে

বাকি কি রাখিলি তুই বৃথা অর্থ-অন্বেষণে,
সে সাধ সাধিতে?

ক্ষত মাত্ত হাত তোর মৃণাল-কণ্টকগণে
কমল তুলিতে

নারিলি হরিতে মণি, দঃশিল কেবল ফণী
এ বিষম বিষজ্বালা ভুলিবি, মন,কেমনে!

যশোলাভ লোভে আয়ু কত যে ব্যয়িলি হায়,
কব তা কাহারে?

সুগন্ধ কুসুম-গন্ধে অন্ধ কীট যথা ধায়,
কাটিতে তাহারে?

মাৎসর্য-বিষদশন, কামড়ে রে অনুক্ষণ!
এই কি লভিলি লাভ,অনাহারে,অনিদ্রায়?

মুকুতা-ফলের লোভে,ডুবে রে অতল জলে
যতনে ধীবর,

শতমুক্তাধিক আয়ু কালসিন্ধু জলতলে
ফেলিস,পামড়!

ফিরি দিবি হারাধন,কে তোরে,অবোধ মন,
হায় রে,ভুলিবি কত আশার কুহক-ছলে!



৪)     ১লা মে-র কবিতা


                        সুকান্ত ভট্টাচার্য



লাল আগুন ছড়িয়ে পড়েছে দিগন্ত থেকে দিগন্তে,
কী হবে আর কুকুরের মতো বেঁচে থাকায়?


কতদিন তুষ্ট থাকবে আর
অপরের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট হাড়ে?


মনের কথা ব্যক্ত করবে
ক্ষীণ অস্পষ্ট কেঁউ-কেঁউ শব্দে?
ক্ষুদিত পেটে ধুঁকে ধুঁকে চলবে কতদিন?


ঝুলে পড়া তোমার জিভ,
শ্বাসে প্রশ্বাসে ক্লান্তি টেনে কাঁপতে থাকবে কত কাল?


মাথায় মৃদু চাপড় আর পিঠে হাতের স্পর্শে
কতক্ষণ ভুলে থাকবে পেটের ক্ষুদা আর গলার শিকলকে?
কতক্ষণ নাড়তে থাকবে লেজ?


তার চেয়ে পোষমানাকে অস্বীকার করো,
অস্বীকার করো বশ্যতাকে।


চলো, শুকনো হাড়ের বদলে
সন্ধান করি তাজা রক্তের,
তৈরী হোক লাল আগুনে ঝল্সানো আমাদের খাদ্য।


শিকলের দাগ ঢেকে দিয়ে গজিয়ে উঠুক
সিংহের কেশর প্রত্যেকের ঘাড়ে।।
                --------------         

৫)   অঘ্রাণ


জীবনানন্দ দাশ

 আমি এই অঘ্রাণেরে ভালোবাসি- বিকেলের এই রঙ- রঙের শূন্যতা
রোদের নরম রোম- ঢালু মাঠ- বিবর্ণ বাদামি পাখি- হলুদ বিচালি
পাতা কুড়াবার দিন ঘাসে-ঘাসে- কুড়ুনির মুখে তাই নাই কোনো কথা,

ধানের সোনার কাজ ফুরায়েছে- জীবনেরে জেনেছে সে- কুয়াশায় খালি
তাই তার ঘুম পায়- খেত ছেড়ে দিয়ে যাবে এখনি সে- খেতের ভিতর
এখনি সে নেই যেন- ঝ'রে পড়ে অঘ্রাণের এই শেষ বিষণ্ণ সোনালি

তুলিটুকু;- মুছে যায়;- কেউ ছবি আঁকিবে না মাঠে-মাঠে যেন তারপর,
আঁকিতে চায় না কেউ,- এখন অঘ্রাণ এসে পৃথিবীর ধরেছে হৃদয়;
একদিন নীল ডিম দেখিনি কি?- দুটো পাখি তাদের নীড়ের মৃদু খড়

সেইখানে চুপে চুপে বিছায়েছে;- তবু নীড়- তবু ডিম,- ভালোবাসা
সাধ শেষ হয়

তারপর কেউ তাহা চায় নাকো- জীবনের অনেক দেয়- তবুও জীবন
আমাদের ছুটি দেয় তারপর- একখানা আধখানা লুকানো বিস্ময়

অথবা বিস্ময় নয়- শুধু শান্তি- শুধু হিম কোথায় যে রয়েছে গোপন
অঘ্রাণ খুলেছে তারে- আমার মনের থেকে কুড়ায়ে করেছে আহরণ।
                      -------------

৬)  আসমানী


জসীমউদ্দীন



আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,
রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।
বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,
একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।

একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,
তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।
পেটটি ভরে পায় না খেতে, বুকের ক-খান হাড়,
সাক্ষী দিছে অনাহারে কদিন গেছে তার।

মিষ্টি তাহার মুখটি হতে হাসির প্রদীপ-রাশি
থাপড়েতে নিবিয়ে দেছে দারুণ অভাব আসি।
পরনে তার শতেক তালির শতেক ছেঁড়া বাস,
সোনালি তার গা বরণের করছে উপহাস।

ভোমর-কালো চোখ দুটিতে নাই কৌতুক-হাসি,
সেখান দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু রাশি রাশি।
বাঁশির মতো সুরটি গলায় ক্ষয় হল তাই কেঁদে,
হয় নি সুযোগ লয় যে সে-সুর গানের সুরে বেঁধে।

আসমানীদের বাড়ির ধারে পদ্ম-পুকুর ভরে
ব্যাঙের ছানা শ্যাওলা-পানা কিল্-বিল্-বিল করে।
ম্যালেরিয়ার মশক সেথা বিষ গুলিছে জলে,
সেই জলেতে রান্না-খাওয়া আসমানীদের চলে।

পেটটি তাহার দুলছে পিলেয়, নিতুই যে জ্বর তার,
বৈদ্য ডেকে ওষুধ করে পয়সা নাহি আর।
               ----------------

৭)  মাস্টারদার হাতঘড়ি

            শামসুর রাহমান

মাস্টারদা, আপনি কি হাতঘড়ি পরতেন কখনো?
এই প্রশ্ন আমাকে ঠোকর মেরেছে
অনেকবার। মাস্টারদা, আপনার বিষয়ে
অনেক কিছুই জানা আছে আমার।
আপনার শরীরের গড়ন, মূল্যবান রত্নের মতো
চোখের দীপ্তি, জীবন-যাপনের
ধরন-এরকম

বহুবিধ খুঁটিনাটির আলো আমি পেয়েছি
গ্রন্থের কালো অক্ষরের মধ্যে ভ্রমণ করতে করতে।
কিন্তু মাস্টারদা, আপনি কখনো
হাতঘড়ি পরতেন কিনা আজ অব্দি আমার জানা হয়নি।
তবে আপনি যে মাঝে-মধ্যে ঘড়ির দিকে
তাকাতেন, তা ধরে নেয়া যেতে পারে।
যিনি নিজে সময়কে শাসন করেন,
সময়ের শাসনও তাকে মেনে নিতে হয়
কখনো সখনো। যখন আপনি পিস্তলের
ট্রিগার টিপেছেন কিংবা মেতেছেন
গোরা সেনাদের অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে
অথবা পায়চারি করেছেন চট্রগ্রাম জেলের
নীরন্ধ্র সেলের ভেতর,
তখন সময়ের ধ্বনির প্রতি আপনি কি
উদাসীন ছিলেন?

মাস্টারদা, সেই যে মাঝে-মাঝে
আপনার কণ্ঠে উচ্চারিত হতো একগুচ্ছ শব্দ,
সেই অনুসারে আপনি নিজে
চোখেও শুনতেন, কানেও দেখতেন।
ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী, বীর আশফাকউল্লাহ্‌ অপরূপ
অগ্নিবলয়ের মতো এক মহামাল্যের মণিরত্ন,-
ওদের ঝলকানিতে গান গেয়ে উঠতো
আপনার চেতনা, যখন আপনি ব’সে থাকতেন
চুপচাপ, নীল নকশা আঁকতেন প্রতিরোধের
কিংবা সহযাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করতেন
সামনে পা চালিয়ে যাওয়ার জন্যে।
মাস্টারদা, যখন আপনার মাথার ওপর
ঝুলছিলো ফাঁসির দড়ি, তখন
আপনার ঋজু মেরুদণ্ড কি শিরশিরিয়ে উঠেছিলো
শীতার্ত ডালের মতো? আপনার হৃৎপিণ্ডের
স্পন্দন কি থেমে গিয়েছিলো
ক্ষণিকের জন্যে? মাস্টারদা, আপনার
ব্যক্তিগত মৃত্যু এক লহমায়
হয়ে উঠেছিলো বিপুল জনগোষ্ঠীর যুগপৎ
মৃত্যু এবং জীবন।

মাস্টারদা, আপনি কখনো
হাতঘড়ি পরতেন কিনা জানি না; জানবার
প্রয়োজনও নেই তেমন। অমরতা
জ্যোতির্বলয়ের মতো রাখী পরিয়ে দিয়েছে
আপনার কব্জিতে।

আপনার হাত সূর্যোদয়ের প্রসন্নতা নিয়ে
প্রসারিত হয়ে আছে সেই বিশাল ভূখণ্ডের দিকে,
ভাবীকাল যার ডাকনাম।

এবং একটি অলৌকিক হাতঘড়ি, যা আপনি
হয়তো পরেননি, অথচ আপনারই নামাঙ্কিত
ক্রমাগত বেজে চলেছে
আমাদের হৃৎপিণ্ডে অনন্তের রৌদ্র-নিঃসীম ঝালরে
                   --------------

৮)  উত্তরাধিকার –

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

নবীন কিশোর, তোমায় দিলাম ভূবনডাঙার মেঘলা আকাশ
তোমাকে দিলাম বোতামবিহীন ছেঁড়া শার্ট আর
ফুসফুস-ভরা হাসি
দুপুর রৌদ্রে পায়ে পায়ে ঘোরা, রাত্রির মাঠে চিৎ হ’য়ে শুয়ে থাকা
এসব এখন তোমারই, তোমার হাত ভ’রে নাও আমার অবেলা
আমার দুঃখবিহীন দুঃখ ক্রোধ শিহরণ
নবীন কিশোর, তোমাকে দিলাম আমার যা-কিছু ছুল আভরণ
জ্বলন্ত বুকে কফির চুমুক, সিগারেট চুরি, জানালার পাশে
বালিকার প্রতি বারবার ভুল
পরুষ বাক্য, কবিতার কাছে হাঁটু মুড়ে বসা, ছুরির ঝলক
অভিমানে মানুষ কিংবা মানুষের মত আর যা-কিছুর
বুক চিরে দেখা
আত্মহনন, শহরের পিঠ তোলপাড় করা অহংকারের দ্রুত পদপাত
একখানা নদী, দু’তিনটে দেশ, কয়েকটি নারী —
এ-সবই আমার পুরোনো পোষাক, বড় প্রিয় ছিল, এখন শরীরে
আঁট হয়ে বসে, মানায় না আর
তোমাকে দিলাম, নবীন কিশোর, ইচ্ছে হয় তো অঙ্গে জড়াও
অথবা ঘৃণায় দূরে ফেলে দাও, যা খুশি তোমার
তোমাকে আমার তোমার বয়সী সব কিছু দিতে বড় সাধ হয়।
                      -------------

৯)  মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয় – জয় গোস্বামী


বেণীমাধব, বেণীমাধব, তোমার বাড়ি যাবো
বেণীমাধব, তুমি কি আর আমার কথা ভাবো?
বেণীমাধব, মোহনবাঁশি তমাল তরুমূলে
বাজিয়েছিলে, আমি তখন মালতী ইস্কুলে
ডেস্কে বসে অঙ্ক করি, ছোট্ট ক্লাসঘর
বাইরে দিদিমণির পাশে দিদিমণির বর
আমি তখন নবম শ্রেণী, আমি তখন শাড়ি
আলাপ হলো, বেণীমাধব, সুলেখাদের বাড়ি

বেণীমাধব, বেণীমাধব, লেখাপড়ায় ভালো
শহর থেকে বেড়াতে এলে, আমার রঙ কালো
তোমায় দেখে এক দৌড়ে পালিয়ে গেছি ঘরে
বেণীমাধব, আমার বাবা দোকানে কাজ করে
কুঞ্জে অলি গুঞ্জে তবু, ফুটেছে মঞ্জরী
সন্ধেবেলা পড়তে বসে অঙ্কে ভুল করি
আমি তখন নবম শ্রেণী, আমি তখন ষোল
ব্রীজের ধারে, বেণীমাধব, লুকিয়ে দেখা হলো

বেণীমাধব, বেণীমাধব, এতদিনের পরে
সত্যি বলো, সে সব কথা এখনো মনে পড়ে?
সে সব কথা বলেছো তুমি তোমার প্রেমিকাকে?
আমি কেবল একটি দিন তোমার পাশে তাকে
দেখেছিলাম আলোর নীচে; অপূর্ব সে আলো!
স্বীকার করি, দুজনকেই মানিয়েছিল ভালো
জুড়িয়ে দিলো চোখ আমার, পুড়িয়ে দিলো চেখ
বাড়িতে এসে বলেছিলাম, ওদের ভালো হোক।

রাতে এখন ঘুমাতে যাই একতলার ঘরে
মেঝের উপর বিছানা পাতা, জ্যো‍‍‌ৎস্না এসে পড়ে
আমার পরে যে বোন ছিলো চোরাপথের বাঁকে
মিলিয়ে গেছে, জানি না আজ কার সঙ্গে থাকে
আজ জুটেছে, কাল কী হবে? – কালের ঘরে শনি
আমি এখন এই পাড়ায় সেলাই দিদিমণি
তবু আগুন, বেণীমাধব, আগুন জ্বলে কই?
কেমন হবে, আমিও যদি নষ্ট মেয়ে হই?
                 --------------

১০)   মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে –


শঙ্খ ঘোষ

একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি
… তোমার জন্যে গলির কোণে
ভাবি আমার মুখ দেখাব
মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে।

একটা দুটো সহজ কথা
….বলব ভাবি চোখের আড়ে
জৌলুশে তা ঝলসে ওঠে
বিজ্ঞাপনে,রংবাহারে।

কে কাকে ঠিক কেমন দেখে
…. বুঝতে পারা শক্ত খুবই
হা রে আমার বাড়িয়ে বলা
হা রে আমার জন্ম ভূমি।

বিকিয়ে গেছে চোখের চাওয়া
…. তোমার সাথে ওতপ্রত
নিয়ন আলোয় পণ্য হলো
যা কিছু আজ ব্যাক্তিগত।

মুখের কথা একলা হয়ে
…. রইলো পড়ে গলির কোণে
ক্লান্ত আমার মুখোশ শুধু
ঝুলতে থাকে বিজ্ঞাপনে।
            -----------

১১)  যেতে পারি, কিন্তু কেন যাব – শক্তি চট্টোপাধ্যায়


ভাবছি, ঘুরে দাঁড়ানোই ভাল
এত কালো মেখেছি দু হাতে
এত কাল ধরে।
কখনো তোমার করে, তোমাকে ভাবিনি।

এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালে
চাঁদ্ ডাকে আয়, আয়, আয়।
এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালে
চিতা কাঠ ডাকে আয়, আয়, আয়।

যেতে পারি,
যেকোনো দিকেই আমি চলে যেতে পারি
কিন্তু, কেন যাবো?

সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাবো
যাবো
কিন্তু, এখনি যাবো না
তোমাদেরও সঙ্গে নিয়ে যাবো
একাকী যাবো না অসময়ে।
             -------------

১২) ফুল ফুটুক না ফুটুক –

সুভাষ মুখোপাধ্যায়

ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।

শান-বাঁধানো ফুটপাথে
পাথরে পা ডুবিয়ে এক কাঠখোট্টা গাছ
কচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়ে
হাসছে।

ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।

আলোর চোখে কালো ঠুলি পরিয়ে
তারপর খুলে –
মৃত্যুর কোলে মানুষকে শুইয়ে দিয়ে
তারপর তুলে –
যে দিনগুলো রাস্তা দিয়ে চলে গেছে
যেন না ফেরে।

গায়ে হলুদ দেওয়া বিকেলে
একটা দুটো পয়সা পেলে
যে হরবোলা ছেলেটা
কোকিল ডাকতে ডাকতে যেত–তাকে ডেকে নিয়ে গেছে দিনগুলো।

লাল কালিতে ছাপা হলদে চিঠির মত আকাশটাকে মাথায় নিয়ে
এ-গলির এক কালোকুচ্ছিত আইবুড়ো মেয়ে
রেলিঙে বুক চেপে ধ’রে
এই সব সাত-পাঁচ ভাবছিল –

ঠিক সেই সময় চোখের
মাথা খেয়ে গায়ে উড়ে এসে বসল;
আ মরণ ! পোড়ারমুখ
লক্ষ্মীছাড়া প্রজাপতি !

তারপর দড়াম করে দরজা বন্ধ হবার শব্দ।
অন্ধকারে মুখ চাপা দিয়ে
দড়িপাকানো সেই গাছ
তখন ও হাসছে।
                -------------