"জলফড়িং"-র পক্ষ থেকে আপনাকে প্রথমেই জানাই নমস্কার
কবি অনিন্দ্যঃ- নমস্কার আপনাকেও।
১.) প্রথমেই জানতে চাইব কবি অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় কেমন মানুষ আর অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় কেমন মানুষ?
উঃ- হাহাহাহা নিজেকে নিজে নম্বর দিই কী করে বলুন? কেবল রবি ঠাকুরের একটা লাইন খুব পছন্দের আমার, ভালো মানুষ নই রে মোরা ভালো মানুষ নই, আমি তাই ভালো নয়, কালো মানুষ অথবা বলতে পারেন অন্ধকারের রাজা।
২.) ঠিক কত বছর বয়স থেকে লেখার শুরু মনে আছে?
উঃ- বিলক্ষণ মনে আছে। দশ বছর বয়স, ক্লাস ফাইভের একটা ছুটির দুপুরে শুকতারায় একটা কবিতা পড়ে মনে হলো, আরে এমন লিখতে তো আমিও পারি, ব্যাস তক্ষুনি খাতা পেন নিয়ে শুরু করে দেওয়া তবে খানিক পরেই বুঝতে পারি মোটেই সহজ কাজ নয়। তবুও সেদিনও হাল ছাড়িনি আজও নয়।
৩.) প্রথম লেখা কবিতার নাম?
উঃ- আজব দাওয়াই
৪.) যদি একটু ওপেন করা হয় কবিকে তাহলে অনিন্দ্যবাবুর লেখা গুলো কি কিছুটা ব্যক্তিগত দিক থেকে উঠে আসে বলে ধরে নেব নাকি শুধুই কল্পনামাত্র (বেসিক্যালি আপনার যেসমস্ত লেখায় প্রেম থাকে)?
উঃ- দেখুন, এই প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে একটা কথা জানাই, আমি ক্লাস ফাইভ থেকে লিখতে শুরু করি আর প্রথম মৃত্যুর কবিতা লিখি ক্লাস সেভনে। এবং আমার যত মৃত্যুর কবিতা রয়েছে তত প্রেমের কবিতা নেই, তাহলে তো বলতে হয় আমি মরেই গেছি, কারণ প্রেমের কবিতা লিখলেই যদি ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রকাশ হয় তবে বাকিগুলোও তাই হবার কথা।
ব্যাপার কী জানেন প্রেম বা জীবন আমার কাছে বহুমাত্রিক, অর্ধনারীশ্বর যখন লিখেছি সেই মুহূর্তে নিজেকেও ক্লীব ভাবতে হয়েছে, যেকোনো প্রেমের বা অন্যকিছুর কবিতা বা যা কিছুই লেখবার সময় যদি সেই ভাবনায় সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ না করা যায় তাহলে আমার মনে হয় সেই লেখায় প্রাণের সঞ্চার হয়না।
৫.) আপনার কাছে আপনার লেখা প্রিয় কবিতার নাম?
উঃ- এই রে, সবই আমার সন্তান, কোনো একটা নাম কী করে বলি! তবু যদি বলতেই হয় তবে শহিদবেদির কথাই বলবো। কারণ ওই একটা কবিতা ২০১২ সালে লিখে রেখেছি আমার নিজের জন্য৷ যেদিন এই শহর এই সভ্যতা ছেড়ে চলে যাব সেদিন শববাহী শকটের গায়ে এই কবিতার একটা প্রিন্ট আউট যেন আটকানো থাকে এ আমার বহুদিনের ইচ্ছা, আমার কাছের মানুষেরা সকলেই জানেন, আশাকরি এ আব্দার আমার পূরণ হবে।
______________________
দুলাইন হলেও লিখতে হবে নিজেকে একথা বলা আছে। বেড়াতে গেলেও এর অন্যথা হয়না।
_______________________
৬.)আপনার পাওয়া প্রথম পুরস্কারের নাম,এবং তার উপলব্ধি কেমন ছিল যদি একটু শেয়ার করেন?
উঃ- প্রথম পুরস্কার! দুটো পেয়েছিলাম, উপহাস এবং উপেক্ষা, পেয়ে দারুণ লেগেছিল।
৭.)আপনি একজন পপুলার ব্যক্তি মানুষের কাছে আপনার লেখার মাধ্যমে, আচ্ছা জনপ্রিয় পত্রিকা "দেশ"-র পাতায় আপনার লেখা এখন অবধি কী ছেপেছে?
উঃ- আমি একটা সময় অবধি "উনিশকুড়ি"তে লিখলেও ব্যক্তিগত কিছু কারণের জন্য প্রায় বছর দশেক কোত্থাও লেখা পাঠাইনি। লিখতাম খাতার পাতায়, কিন্তু কোনো মাধ্যমের সঙ্গেই সেই লেখার আত্মীয়তা গড়ে উঠুক চাইনি।
তারপর বন্ধুদের চাপে টাইমলাইন এবং কবিতার সখ্য গড়ে উঠলো। কিন্তু তখনও টাইমলাইন ছাড়া আর কোথাও কবিতা দেবার কথা ভাবিনি। যখন ভাবলাম বা ভাবতে বাধ্য হলাম ততদিনে ইম্যাগ বা অনলাইন ম্যাগাজিনের পথচলা শুরু হয়েছে। তাই দেশের প্রতি প্রেম থাকলেও দেশের পাতায় লেখা হয়ে ওঠেনি।
৮.) আপনার লেখা বই-র নাম?
উঃ- এ পর্যন্ত মোট তিনটে বই প্রকাশিত হয়েছে। সবকটাই আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় সপ্তর্ষি প্রকাশনের হাত ধরে।
২০১৬ তে "রাজকন্যা সিরিজ"
২০১৭ তে "অগৌরবে চলিতেছে"
২০১৮ তে "হাফ শ' তিন।"
৯.) আমরা কবে কবি অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়ের লেখা পাঠ্য বই-এ পড়তে পারব?
উঃ- পাঠ্য পুস্তকে কবিতা আসা একটা লম্বা জার্নির ফসল এবং সব লেখকের কাঙ্খিত স্বপ্ন, হ্যাঁ আমি তেইশ বছর লিখছি একথা সত্যি, কিন্তু সেই জার্নিটা এখনো শেষ হয়নি আর স্বপ্ন সবসময় পূরণ হয় তা কিন্তু নয়, হতেও পারে নাও হতে পারে। আর তাছাড়া কোনো লেখক এই কথা ভেবে লিখতে চেষ্টা করেন বলে বিশ্বাস করিনা। লেখাটাই আসল কাজ, সে কাজটুকু ফাঁকি না দিয়ে করে যেতে চাই, বাকি যা কিছু প্রাপ্তি তা পাবার হলে এমনিই পাবো।
১০.) প্রত্যেক দিন পাতার(কাগজ) কাছে যায় অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়?
উঃ- একদম, আমি না লিখে ঘুমাই না। দুলাইন হলেও লিখতে হবে নিজেকে একথা বলা আছে। বেড়াতে গেলেও এর অন্যথা হয়না।
যেকোনো কাজই প্রাক্টিশ ছাড়া হয় বলে মনে করিনা, মনে রাখতে হবে শচীন থেকে লতা মঙ্গেশকর অনুশীলন না করে কেউ পারফর্ম করেননি। অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তা তাই অপরিসীম।
১১.) পাশের বাড়িতে একজন মারা গেলেন সেইদিন রাতে সবটা ভুলে কবি কি একটা প্রেমের কবিতা লিখতে চাইবেন?
উঃ- আমি অনেক বিয়োগের কবিতাও প্রেমের মোড়কে লিখেছি গতবছর দুজন আত্মীয়ের একজন মারা যান আর একজন দূরে চলে যান, এমন অনেক লেখা আছে যেখানে মনে হয়েছে প্রেম হারিয়ে লিখেছি আসলে তা নয়, হারানো হারানোই। আর আমি জানিনা রোজ আমি কী লিখব বা লিখি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাদা পাতার কাছে নতজানু হয়ে বসে থাকি যেমন শব্দ আসে লিখি, কাজেই সেই মুহূর্তে যে শব্দ আসবে তাই লিখবো। এখন থেকে বলতে পারব না।
প্রসঙ্গত রবীন্দ্রনাথ পরাধীন ভারতেই একের পর এক প্রেমের গান লিখেছেন তারমানে তিনি পরাধীনতার পক্ষে ছিলেন তা নয়, সবটাই অনুভূতির প্রকাশ বলে মনে করি।
১২.)আপনার চোখে বাচিক শিল্পী জয়িতা ভট্টাচার্য্য? (যেহেতু আপনার লেখা উনি পাঠ করেছেন বা করছেন বহুবার তাই এমন প্রশ্ন)
উঃ- সৎ, মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রমী। একটা কবিতা নিঁখুত করতে গেলে যতটা পরিশ্রম এবং সততা দরকার তারচেয়ে বেশীই করেন। আমার কবিতা তৈরীর আগে কতবার যে আমার ভিউটা বোঝার চেষ্টা করেন তা গুনে শেষ করা যাবেনা। এক একটা সময় হাঁফিয়ে যাই, কিন্তু সেটা যে দরকারী তা পরে বুঝতে পারি।
_________________
পকেটে কিছু থাক না থাক সিগারেট আর আগুন থাকে।
_________________
১৩.) যদি বলি লেখার জন্য ১০০ তে ১০০ দিতে, তাহলে আপনি কাকে দেবেন জয় গোস্বামী নাকি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়?
উঃ- এইরে আমি এঁদের নম্বর দেবার কে? দু'জনেই নিজের কাজে ভাস্বর হয়ে আছেন।
কিন্তু তবু প্রশ্ন যখন আছে তখন উত্তর না দেওয়াটা অশোভন তাই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কে একশো দিলাম, আর জয় গোস্বামীকে হান্ড্রেড।
১৪.) কবি অনিন্দ্য'র কাছে সুবোধ সরকার?
উঃ- অ্যাকাডেমি পুরস্কার ভারতীয় সাহিত্যে একটা শিখরসম প্রাপ্তি, যিনি তা লাভ করেছেন তাঁর সম্পর্কে আমি কিছু বলার যোগ্যতা রাখিনা।
১৫.)সবাই বলছে নতুন রা বেশি সুযোগ পাচ্ছে এবছর পুরস্কারে কিংবা কৃত্তিবাসের পাতায়, এটা কতটা সত্যি আপনার কাছে?
উঃ- এইরে এটার উত্তর আমি জানিনা। তবে একটা কথা বিশ্বাস করি আগুন আর প্রতিভা যদি থেকে থাকে তবে তা জানান দেবেই।
আর পত্রিকা বা পুরস্কারের ক্ষেত্রে যদি তরুণেরা বিবেচ্য হয়ে থাকে বা প্রাধান্য পেয়ে থাকে সেটা তো তারুণ্যের জয়।
১৬.) আপনি কাউন্টারে(সিগারেট) থাকেন না বা থাকেননি তাহলে কি অনিন্দ্য বাবু কাউন্টারের মজা থেকে বঞ্চিত থাকলেন এ জীবনে?
উঃ- এটা আমায় বাবা মানা করেছিলেন, যদিও খুব অল্প কয়েকটা কথা শুনি তবুও কয়েকবার কাউন্টার নিয়ে দেখেছি ফিল্টারটা গরম হয়ে যায় বা সিগারেটটা চেপে যায় অনেকক্ষেত্রে, এই দুটোর একটা হলেই আমার আর ওই সিগারেটটা পান করতে ইচ্ছে করেনা, কাজেই নতুন ধরাতে হয়, আমি তাই কেউ চাইলেই নতুন সিগারেটের অফার করি৷ আর এমনিতেও চেয়ে সিগারেট ধরাইনা। পকেটে কিছু থাক না থাক সিগারেট আর আগুন থাকে।
| কবির পছন্দ |
১. প্রিয় রঙঃ- লাল, তবে পরতে ভালবাসি সাদা বা কালো।
২. প্রিয় পোশাকঃ- জিন্স আর কালো টিশার্ট।
৩. প্রিয় শহরঃ- কলকাতা, শান্তিনিকেতন, ঢাকা।
৪. প্রিয় খাবারঃ- ফুডি একেবারেই নই, বরং আদুরে। কাজেই আদর করে যাকিছু দিলেই আমি খাই।
৫. প্রিয় কবিঃ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
৬. প্রিয় বাংলা সিনেমাঃ- গুপীগাইন বাঘাবাইন।
৭. প্রিয় গায়কঃ- প্রিয় গান আছে, প্রিয় গায়ক বললে কোনো এক জনের কথা বলতে হবে, কিন্তু কৃষ্ণচন্দ্র দে থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় হয়ে কবীর সুমন, নচিকেতা, অঞ্জন দত্ত, শিলাজিৎ আবার ব্যান্ডের মধ্যে পরশপাথর, চন্দ্রবিন্দু, ক্যাকটাস হয়ে নগর বাউল বা এল আর বি, ব্রায়ান অ্যাডামস থেকে শুরু করে আমার মায়ের গান সবই সমান প্রিয় আমার কাছে।
৮. আপনার চোখে আপনার বাবাঃ- সিনেমার মতো নামের একটা কবিতা আছে আমার,
আমার বাবা আমার চোখে হিরো,
মা-কেও তাই হিরোয়িন বলে ডাকি,
সুতরাং আমি সেলিব্রিটির ছেলে
তাঁদের সঙ্গে এক বাড়িতে থাকি।
ক্লাস ফাইভের সেই প্রথম কবিতাটা যেটা কবিতা লেখা খুব সহজ ভেবে শুরু করেছিলাম সেটার ছ'লাইন লিখে যখন আটকে গেছি, যাকে সামনে পাচ্ছি দেখাচ্ছি এরপর কী লিখব বুঝতে পারছিনা, সেদিন বাবা-ই শেষ চারলাইন আমায় বলে দিয়েছিলেন। আর নিউটনের প্রথম গতসূত্রের জের টেনে সেই শুরু হয়েছিল বাইরে থেকে প্রযুক্ত বল পেয়ে স্থির বস্তুর সমবেগে সরলরেখায় চলা।
বাবা আমার কাছে সাহস, স্পর্ধা আর অনমনীয়তার সংজ্ঞা।
৯. প্রিয় কবিতাঃ- দুঃসময়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
১০. অনিন্দ্য'র চোখে কবি শ্রীজাত?
উঃ- এক্ষেত্রেও পূর্বসূরীদের যেমন বলেছি তাইই বলবো, যাঁকে যাঁর লেখাকে মানুষ মনে স্থান দিয়েছেন আমি কে তাঁকে নিয়ে কিছু বলবার! সেই স্পর্ধা আমার নেই। অসম্ভব প্রতিভাবান কাউকে নিয়ে এককথায় আসলে বলা সম্ভব বলে আমি মনে করিনা।
১১.) শীতের দুপুর প্রিয় নাকি রাতটা?
উঃ- দুপুরে রোদ মাখতে ভাললাগে আর রাতে লিখতে কাজেই দুটোই প্রিয়।
"জলফড়িং"-কে কেমন লাগলো দাদা, যদি দু'লাইন জলফড়িং-র জন্য বলেন তাহলে ভালো লাগবে।
উঃ- খুব ভালো লাগলো কথা বলে, আরো এগিয়ে চলুক জলফড়িং এই কামনাই রইলো।
কবি অনিন্দ্যঃ- নমস্কার আপনাকেও।
১.) প্রথমেই জানতে চাইব কবি অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় কেমন মানুষ আর অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় কেমন মানুষ?
উঃ- হাহাহাহা নিজেকে নিজে নম্বর দিই কী করে বলুন? কেবল রবি ঠাকুরের একটা লাইন খুব পছন্দের আমার, ভালো মানুষ নই রে মোরা ভালো মানুষ নই, আমি তাই ভালো নয়, কালো মানুষ অথবা বলতে পারেন অন্ধকারের রাজা।
২.) ঠিক কত বছর বয়স থেকে লেখার শুরু মনে আছে?
উঃ- বিলক্ষণ মনে আছে। দশ বছর বয়স, ক্লাস ফাইভের একটা ছুটির দুপুরে শুকতারায় একটা কবিতা পড়ে মনে হলো, আরে এমন লিখতে তো আমিও পারি, ব্যাস তক্ষুনি খাতা পেন নিয়ে শুরু করে দেওয়া তবে খানিক পরেই বুঝতে পারি মোটেই সহজ কাজ নয়। তবুও সেদিনও হাল ছাড়িনি আজও নয়।
৩.) প্রথম লেখা কবিতার নাম?
উঃ- আজব দাওয়াই
৪.) যদি একটু ওপেন করা হয় কবিকে তাহলে অনিন্দ্যবাবুর লেখা গুলো কি কিছুটা ব্যক্তিগত দিক থেকে উঠে আসে বলে ধরে নেব নাকি শুধুই কল্পনামাত্র (বেসিক্যালি আপনার যেসমস্ত লেখায় প্রেম থাকে)?
উঃ- দেখুন, এই প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে একটা কথা জানাই, আমি ক্লাস ফাইভ থেকে লিখতে শুরু করি আর প্রথম মৃত্যুর কবিতা লিখি ক্লাস সেভনে। এবং আমার যত মৃত্যুর কবিতা রয়েছে তত প্রেমের কবিতা নেই, তাহলে তো বলতে হয় আমি মরেই গেছি, কারণ প্রেমের কবিতা লিখলেই যদি ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রকাশ হয় তবে বাকিগুলোও তাই হবার কথা।
ব্যাপার কী জানেন প্রেম বা জীবন আমার কাছে বহুমাত্রিক, অর্ধনারীশ্বর যখন লিখেছি সেই মুহূর্তে নিজেকেও ক্লীব ভাবতে হয়েছে, যেকোনো প্রেমের বা অন্যকিছুর কবিতা বা যা কিছুই লেখবার সময় যদি সেই ভাবনায় সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ না করা যায় তাহলে আমার মনে হয় সেই লেখায় প্রাণের সঞ্চার হয়না।
৫.) আপনার কাছে আপনার লেখা প্রিয় কবিতার নাম?
উঃ- এই রে, সবই আমার সন্তান, কোনো একটা নাম কী করে বলি! তবু যদি বলতেই হয় তবে শহিদবেদির কথাই বলবো। কারণ ওই একটা কবিতা ২০১২ সালে লিখে রেখেছি আমার নিজের জন্য৷ যেদিন এই শহর এই সভ্যতা ছেড়ে চলে যাব সেদিন শববাহী শকটের গায়ে এই কবিতার একটা প্রিন্ট আউট যেন আটকানো থাকে এ আমার বহুদিনের ইচ্ছা, আমার কাছের মানুষেরা সকলেই জানেন, আশাকরি এ আব্দার আমার পূরণ হবে।
______________________
দুলাইন হলেও লিখতে হবে নিজেকে একথা বলা আছে। বেড়াতে গেলেও এর অন্যথা হয়না।
_______________________
৬.)আপনার পাওয়া প্রথম পুরস্কারের নাম,এবং তার উপলব্ধি কেমন ছিল যদি একটু শেয়ার করেন?
উঃ- প্রথম পুরস্কার! দুটো পেয়েছিলাম, উপহাস এবং উপেক্ষা, পেয়ে দারুণ লেগেছিল।
৭.)আপনি একজন পপুলার ব্যক্তি মানুষের কাছে আপনার লেখার মাধ্যমে, আচ্ছা জনপ্রিয় পত্রিকা "দেশ"-র পাতায় আপনার লেখা এখন অবধি কী ছেপেছে?
উঃ- আমি একটা সময় অবধি "উনিশকুড়ি"তে লিখলেও ব্যক্তিগত কিছু কারণের জন্য প্রায় বছর দশেক কোত্থাও লেখা পাঠাইনি। লিখতাম খাতার পাতায়, কিন্তু কোনো মাধ্যমের সঙ্গেই সেই লেখার আত্মীয়তা গড়ে উঠুক চাইনি।
তারপর বন্ধুদের চাপে টাইমলাইন এবং কবিতার সখ্য গড়ে উঠলো। কিন্তু তখনও টাইমলাইন ছাড়া আর কোথাও কবিতা দেবার কথা ভাবিনি। যখন ভাবলাম বা ভাবতে বাধ্য হলাম ততদিনে ইম্যাগ বা অনলাইন ম্যাগাজিনের পথচলা শুরু হয়েছে। তাই দেশের প্রতি প্রেম থাকলেও দেশের পাতায় লেখা হয়ে ওঠেনি।
৮.) আপনার লেখা বই-র নাম?
উঃ- এ পর্যন্ত মোট তিনটে বই প্রকাশিত হয়েছে। সবকটাই আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় সপ্তর্ষি প্রকাশনের হাত ধরে।
২০১৬ তে "রাজকন্যা সিরিজ"
২০১৭ তে "অগৌরবে চলিতেছে"
২০১৮ তে "হাফ শ' তিন।"
৯.) আমরা কবে কবি অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়ের লেখা পাঠ্য বই-এ পড়তে পারব?
উঃ- পাঠ্য পুস্তকে কবিতা আসা একটা লম্বা জার্নির ফসল এবং সব লেখকের কাঙ্খিত স্বপ্ন, হ্যাঁ আমি তেইশ বছর লিখছি একথা সত্যি, কিন্তু সেই জার্নিটা এখনো শেষ হয়নি আর স্বপ্ন সবসময় পূরণ হয় তা কিন্তু নয়, হতেও পারে নাও হতে পারে। আর তাছাড়া কোনো লেখক এই কথা ভেবে লিখতে চেষ্টা করেন বলে বিশ্বাস করিনা। লেখাটাই আসল কাজ, সে কাজটুকু ফাঁকি না দিয়ে করে যেতে চাই, বাকি যা কিছু প্রাপ্তি তা পাবার হলে এমনিই পাবো।
১০.) প্রত্যেক দিন পাতার(কাগজ) কাছে যায় অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়?
উঃ- একদম, আমি না লিখে ঘুমাই না। দুলাইন হলেও লিখতে হবে নিজেকে একথা বলা আছে। বেড়াতে গেলেও এর অন্যথা হয়না।
যেকোনো কাজই প্রাক্টিশ ছাড়া হয় বলে মনে করিনা, মনে রাখতে হবে শচীন থেকে লতা মঙ্গেশকর অনুশীলন না করে কেউ পারফর্ম করেননি। অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তা তাই অপরিসীম।
১১.) পাশের বাড়িতে একজন মারা গেলেন সেইদিন রাতে সবটা ভুলে কবি কি একটা প্রেমের কবিতা লিখতে চাইবেন?
উঃ- আমি অনেক বিয়োগের কবিতাও প্রেমের মোড়কে লিখেছি গতবছর দুজন আত্মীয়ের একজন মারা যান আর একজন দূরে চলে যান, এমন অনেক লেখা আছে যেখানে মনে হয়েছে প্রেম হারিয়ে লিখেছি আসলে তা নয়, হারানো হারানোই। আর আমি জানিনা রোজ আমি কী লিখব বা লিখি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাদা পাতার কাছে নতজানু হয়ে বসে থাকি যেমন শব্দ আসে লিখি, কাজেই সেই মুহূর্তে যে শব্দ আসবে তাই লিখবো। এখন থেকে বলতে পারব না।
প্রসঙ্গত রবীন্দ্রনাথ পরাধীন ভারতেই একের পর এক প্রেমের গান লিখেছেন তারমানে তিনি পরাধীনতার পক্ষে ছিলেন তা নয়, সবটাই অনুভূতির প্রকাশ বলে মনে করি।
১২.)আপনার চোখে বাচিক শিল্পী জয়িতা ভট্টাচার্য্য? (যেহেতু আপনার লেখা উনি পাঠ করেছেন বা করছেন বহুবার তাই এমন প্রশ্ন)
উঃ- সৎ, মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রমী। একটা কবিতা নিঁখুত করতে গেলে যতটা পরিশ্রম এবং সততা দরকার তারচেয়ে বেশীই করেন। আমার কবিতা তৈরীর আগে কতবার যে আমার ভিউটা বোঝার চেষ্টা করেন তা গুনে শেষ করা যাবেনা। এক একটা সময় হাঁফিয়ে যাই, কিন্তু সেটা যে দরকারী তা পরে বুঝতে পারি।
_________________
পকেটে কিছু থাক না থাক সিগারেট আর আগুন থাকে।
_________________
১৩.) যদি বলি লেখার জন্য ১০০ তে ১০০ দিতে, তাহলে আপনি কাকে দেবেন জয় গোস্বামী নাকি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়?
উঃ- এইরে আমি এঁদের নম্বর দেবার কে? দু'জনেই নিজের কাজে ভাস্বর হয়ে আছেন।
কিন্তু তবু প্রশ্ন যখন আছে তখন উত্তর না দেওয়াটা অশোভন তাই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কে একশো দিলাম, আর জয় গোস্বামীকে হান্ড্রেড।
১৪.) কবি অনিন্দ্য'র কাছে সুবোধ সরকার?
উঃ- অ্যাকাডেমি পুরস্কার ভারতীয় সাহিত্যে একটা শিখরসম প্রাপ্তি, যিনি তা লাভ করেছেন তাঁর সম্পর্কে আমি কিছু বলার যোগ্যতা রাখিনা।
১৫.)সবাই বলছে নতুন রা বেশি সুযোগ পাচ্ছে এবছর পুরস্কারে কিংবা কৃত্তিবাসের পাতায়, এটা কতটা সত্যি আপনার কাছে?
উঃ- এইরে এটার উত্তর আমি জানিনা। তবে একটা কথা বিশ্বাস করি আগুন আর প্রতিভা যদি থেকে থাকে তবে তা জানান দেবেই।
আর পত্রিকা বা পুরস্কারের ক্ষেত্রে যদি তরুণেরা বিবেচ্য হয়ে থাকে বা প্রাধান্য পেয়ে থাকে সেটা তো তারুণ্যের জয়।
১৬.) আপনি কাউন্টারে(সিগারেট) থাকেন না বা থাকেননি তাহলে কি অনিন্দ্য বাবু কাউন্টারের মজা থেকে বঞ্চিত থাকলেন এ জীবনে?
উঃ- এটা আমায় বাবা মানা করেছিলেন, যদিও খুব অল্প কয়েকটা কথা শুনি তবুও কয়েকবার কাউন্টার নিয়ে দেখেছি ফিল্টারটা গরম হয়ে যায় বা সিগারেটটা চেপে যায় অনেকক্ষেত্রে, এই দুটোর একটা হলেই আমার আর ওই সিগারেটটা পান করতে ইচ্ছে করেনা, কাজেই নতুন ধরাতে হয়, আমি তাই কেউ চাইলেই নতুন সিগারেটের অফার করি৷ আর এমনিতেও চেয়ে সিগারেট ধরাইনা। পকেটে কিছু থাক না থাক সিগারেট আর আগুন থাকে।
| কবির পছন্দ |
১. প্রিয় রঙঃ- লাল, তবে পরতে ভালবাসি সাদা বা কালো।
২. প্রিয় পোশাকঃ- জিন্স আর কালো টিশার্ট।
৩. প্রিয় শহরঃ- কলকাতা, শান্তিনিকেতন, ঢাকা।
৪. প্রিয় খাবারঃ- ফুডি একেবারেই নই, বরং আদুরে। কাজেই আদর করে যাকিছু দিলেই আমি খাই।
৫. প্রিয় কবিঃ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
৬. প্রিয় বাংলা সিনেমাঃ- গুপীগাইন বাঘাবাইন।
৭. প্রিয় গায়কঃ- প্রিয় গান আছে, প্রিয় গায়ক বললে কোনো এক জনের কথা বলতে হবে, কিন্তু কৃষ্ণচন্দ্র দে থেকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় হয়ে কবীর সুমন, নচিকেতা, অঞ্জন দত্ত, শিলাজিৎ আবার ব্যান্ডের মধ্যে পরশপাথর, চন্দ্রবিন্দু, ক্যাকটাস হয়ে নগর বাউল বা এল আর বি, ব্রায়ান অ্যাডামস থেকে শুরু করে আমার মায়ের গান সবই সমান প্রিয় আমার কাছে।
৮. আপনার চোখে আপনার বাবাঃ- সিনেমার মতো নামের একটা কবিতা আছে আমার,
আমার বাবা আমার চোখে হিরো,
মা-কেও তাই হিরোয়িন বলে ডাকি,
সুতরাং আমি সেলিব্রিটির ছেলে
তাঁদের সঙ্গে এক বাড়িতে থাকি।
ক্লাস ফাইভের সেই প্রথম কবিতাটা যেটা কবিতা লেখা খুব সহজ ভেবে শুরু করেছিলাম সেটার ছ'লাইন লিখে যখন আটকে গেছি, যাকে সামনে পাচ্ছি দেখাচ্ছি এরপর কী লিখব বুঝতে পারছিনা, সেদিন বাবা-ই শেষ চারলাইন আমায় বলে দিয়েছিলেন। আর নিউটনের প্রথম গতসূত্রের জের টেনে সেই শুরু হয়েছিল বাইরে থেকে প্রযুক্ত বল পেয়ে স্থির বস্তুর সমবেগে সরলরেখায় চলা।
বাবা আমার কাছে সাহস, স্পর্ধা আর অনমনীয়তার সংজ্ঞা।
৯. প্রিয় কবিতাঃ- দুঃসময়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
১০. অনিন্দ্য'র চোখে কবি শ্রীজাত?
উঃ- এক্ষেত্রেও পূর্বসূরীদের যেমন বলেছি তাইই বলবো, যাঁকে যাঁর লেখাকে মানুষ মনে স্থান দিয়েছেন আমি কে তাঁকে নিয়ে কিছু বলবার! সেই স্পর্ধা আমার নেই। অসম্ভব প্রতিভাবান কাউকে নিয়ে এককথায় আসলে বলা সম্ভব বলে আমি মনে করিনা।
১১.) শীতের দুপুর প্রিয় নাকি রাতটা?
উঃ- দুপুরে রোদ মাখতে ভাললাগে আর রাতে লিখতে কাজেই দুটোই প্রিয়।
"জলফড়িং"-কে কেমন লাগলো দাদা, যদি দু'লাইন জলফড়িং-র জন্য বলেন তাহলে ভালো লাগবে।
উঃ- খুব ভালো লাগলো কথা বলে, আরো এগিয়ে চলুক জলফড়িং এই কামনাই রইলো।
কবি অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়ের সমন্ধে অনেক কিছু জানলাম, "একদম, আমি না লিখে ঘুমাই না। দুলাইন হলেও লিখতে হবে নিজেকে একথা বলা আছে।" দারুন কথা বললেন কবি....শুভকামনা...
উত্তরমুছুন