১.)
______জলফড়িংয়ে সূর্যোদয়
সুনন্দ মন্ডল
প্রতিদিনই সূর্য ওঠে.....
প্রতিদিনের ঢঙেই সকাল আসে
আলোকরশ্মির পসরা সাজায়।
পূর্ব থেকে পশ্চিমে ঢলে পড়ে,
ভায়া মাধ্যম মাথার উপর আকাশ!
সূর্য একই আবহে মাতে রোজ
কিন্তু সকালটা সবার এক নয়!
সবার জীবনে আলাদা আলাদা সকাল
আলাদা আলাদা রঙ
কিংবা বেরঙিন জীবন।
জলফড়িং এর জন্মলগ্নে ছিল চোখ আর মুখ
ক্রমশ ডানা ঝাপটানো শুরু দিনে দিনে।
বেড়েছে পরিধি, বেড়েছে পরিচয়
নতুন সকালের মতোই নতুন আপনজন ঘেঁষে।
২.)
সঞ্চয়ন
জয়দীপ রায়
পাথুরে রাস্তায় মেঘের কুন্ঠাবোধ
রেলিঙের দাড় বেয়ে সারিবদ্ধ বৃষ্টিরেখা
আমি সূর্যদয় দেখিনি
বিপ্রতীপ কোনের সঞ্চিত কুহেলিকায়
প্রহর শেষের বিকেল দেখেছিল রুদ্রছায়া
মহাকালের বিস্তীর্ন পটভূমি বুকে জন্মেছিল
একালের ধ্রুবক
স্বপ্নিল মেঘের মাঝে অবলীলায় বলা যায়
আমি মৃত্যুর চেয়েও বড়
ভস্মীভূতের ছাই মেখে নির্দ্ধিধায় বলতে পারি
আমি হোরিখেলা দেখিনি
তবে হে গৃহবাসী আমি খেলতে চাই
সহজিয়া রত রঙে
ঘনীভূত মেঘে এঁকে দেব পুংলিঙ্গ সুর
বিনম্র জ্ঞাপনে।
৩.)
*The subtle thief of a happy youth*
--------------------William Wss
When my day is of sorrow --- a heavy day!
You are steadily idle to leave me.
You sympathize me? You pity me?
Or you chide me or rejoice at my poor day?
What kind are you of --- you impish?
Whatever:
You cannot be noble enough.
For, when my day is of complacency --- light day!
You steal it on your wing and then disappear
You are the subtle thief of a happy youth.
৪.)
জন্মান্তর ।
অরূপ সরকার।
এক চেনার অনেক জন্মে
ঠাই পেয়েছে পান্ডুলিপী
অনামি রা ভিন্ন থাকে কে যেন তাদের একক করে ।
এই তো চেনা সেদিনের
চলছি সমান্তরাল;
কিছু নামি অনামি কিছু রাখিনি তার আড়াল।
ফড়িং পাখায় রঙ ধরেছে ,
উড়ছে কেমন বেশ ।
আজ সকলের সঙ্গে আছে জন্মদিনের রেশ।
ছিলাম সবাই ব্যার্থ শ্রমিক ,
তুমিই দিয়েছ দাম ;
জন্মদিনের প্রথম ক্ষণে ,
সবাই একক হলাম
এই যে দেখো হাত ধরেছি
সন্ধি করেছি মনে ,
তোমায় কেবল শুভেচ্ছা জানাই ,
জন্মদিনের ক্ষণে।
৫.)
"বন্ধুর মৃত্যু''
- সুদীপ্ত দেবনাথ
লালুকে দেখতে অসংখ্য লোকের ভিড় ৷ লালু কোনো সেলিব্রেটি নয় ৷ লালু একটা কুকুর ৷ আজ তার মৃত্যু হয়েছে ৷ তার মৃত্যুতে অসংখ্য মানুষ কানছে ৷ কিন্তু একটা কুকুরের মৃত্যুতে সবাই কানছে কেন ? বিষয়টা বেশ আশ্চর্যের ৷ তাহলে গল্পটা প্রথম থেকে বলি ৷
সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠাটা আমার স্বভাব নয় ৷ কিন্তু আজ ঘুম ভেঙে গিয়েছিল ৷ একটা দুঃস্বপ্ন আমাকে জাগিয়ে তুলেছিল ৷ স্বপ্নটা কী ছিল , তা কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না ৷ জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই কিছু একটা বিপদের আভাস পেয়েছিলাম ৷ আমি ছুটে গিয়েছিলাম একটি স্থানে ৷ যেখানে আমার বন্ধু লালু থাকে ৷ কেন জানি না , আমার মন আর অন্য কোথাও নয় , সেখানেই ছুটে চলল ৷
লালু আমার বন্ধু ৷ মানুষ নয় , কুকুর ৷ লালু একদিন আমার তৈরী মাটির একটি মূর্তি ভেঙে দিয়েছিল ৷ সেই রাগে রোজ আমি লালুকে দেখলেই পাথর ছুড়ে মারতাম ৷ কিছুই করত না সে ৷ শুধু পালিয়ে যেতো ৷ একদিন আমার টিউশন থেকে বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যায় ৷ এমন সময় পথে লালু আমার সঙ্গ নেয় ৷ আমি লালুকে তাড়তে থাকি ৷ তবুও সে আমার পেছন পেছন আসতে থাকে ৷ বিরক্ত হয়ে আমি তাকে পাথর ছুড়ে মারি ৷ লালু আঘাত পেয়ে চলে যায় ৷ আমি বাড়ির দিকে রওনা দি ৷ হঠাৎ আমার সামনে হাজির হয় কিছু লম্বা ও ভয়ঙ্কর চেহাড়ার তিনটে মানুষ ৷ আমি তো তাদের দেখা মাত্রই ভয়ে থমকে গিয়েছিলাম ৷ শিতের রাতে আমার শরীর দিয়ে রীতিমত ঘাম ঝরছিল ৷ বয়সটা কম হলে হইত আমার প্যান্টও ভিজে যেত ৷ কারন টাক মাথা লোকগুলোর হাতে ছিল একটি করে ধারালো অস্ত্র ৷ একটি লোক আমার ঘারে হাত দিয়ে জিজ্ঞাসা করল 'কোথায় ?'
আমি কাঁপো কাঁপো শরীরে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলেও ভয়ে গলা দিয়ে স্বর বেড়োলো না ৷
এমন সময় লালুর আওয়াজ ! পেছনে তাকাতেই দেখতে পেলাম , লালু ছুটতে ছুটতে আসছে ৷ লোকগুলো লালুকে তারানোর চেষ্টা করলেও লালু যে পরিমানে তাদের কামরে ছিল , তা তারা জীবনেও ভুলতে পারবে না ৷ লোকগুলো লালুর ভয়ে অস্ত্র ফেলে দিয়ে প্রাণপনে ছুটে পালিয়ে ছিল ৷
এই ভাবে লালু আমাকে বহু বিপদ থেকে রক্ষা করেছে ৷ তাই লালু আমার খুব কাছের বন্ধু ৷ লালু যেখানে থাকে , জায়গাটা একটা বাগান ৷ আমি সেখানে যেতেই দেখতে পেলাম অনেক লোকজনের ভিড় ৷ ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই আমার হৃদয়ে বজ্রপাত হল ৷ কারন আমার চোখ দর্শন করল লালুর মৃতদেহ ৷ কান্নায় ভেঙে পরলাম আমি ৷ আমার কান্না দেখে সেখানে থাকা সকলেই কানতে শুরু করল ৷ আমি আশ্চর্য হয়ে উঠলাম ৷ আমার নাহয় বন্ধু ছিল , কিন্তু সবাই কানছে কেন একটা কুকুরের মৃত্যুর জন্য ?
আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম ৷
তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ উত্তর দিল ''আমি যখন অ্যাক্সিডেন্ট করছিলাম , তখন লালু আমায় বাঁচিয়ে ছিল৷"
কেউ বলল ''আমার চুরি যাওয়া জিনিস লালু ফিরিয়ে দিয়েছিল , আর চোরকেও ধরে ছিল৷"
কেউ আবার বলল ''আমাকে খুনের হাত থেকে বাঁচিয়েছিল লালু৷"
এই ভাবেই বিভিন্ন লোক সাহায্যের বিভিন্ন বর্ণনা দিতে লাগল ৷ সেখানে মানুষ ছারাও অন্যান্য কুকুর , ছাগল , হাঁস , মুরগি সহ কয়েকটি পশু পাখিও ছিল ৷ তারাও কিছু বলার চেষ্টা করল ৷ কিন্তু তাদের ভাষা আমি বুঝতে পারলাম না ৷ কিন্তু এটুকু বুঝতে পারলাম , তারাও লালুর সাহায্যপার্থি৷
আমি আশ্চর্য হয়ে উঠলাম ৷ কারন আমি ভাবতাম , লালু হইত শুধু আমারই উপকার করত , শুধু আমারই বন্ধু ছিল ৷ কিন্তু লালু তো অসংখ্য মানুষের পাশে থেকেছে , অসংখ্য মানুষকে বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে ৷ যা মানুষরাও করে না ৷ কিন্তু লালু একটা পশু হয়েও সবার সাহায্য করেছে ৷ সেই দিন থেকে আমি স্থির করলাম , যদি কেও আমাকে কুকুর বলে ডাকে ৷ তবে সেটাকে আমি অপমান নয় , প্রশংসা মনে করব ৷
৬.)
অপেক্ষা
-------অমিয়া গড়াই
ক্লান্ত দুপুরের হাতছানি পেরিয়ে দূর পথে শব্দরত
ট্রেন ৷
অবসন্ন মুখে গুটিকয়েক যাত্রী অপেক্ষারত ৷
আমরাও অপেক্ষায় বসে সেই পথে৷
হঠাৎ বিষন্নতা কাটিয়ে এক করূন শিশুকন্ঠ৷
সেও যেন অবসন্ন মুখগুলোর প্রতিরূপ ৷
কন্ঠে তার একটাই সুর "বাবু -সকাল থেকে কিছু খাইনি"
অপেক্ষায় সেও ছিল অপেক্ষায় আমরাও
কিন্তু উদ্দেশ্যের অভিমুখ ভিন্ন৷৷
৭.)
বলো?
---------সুদীপ্ত সেন
যদি অতটা উঁচু হই আকাশ যতটা
যদি ততটা নীচু হই মাটির মতো করে,
তাহলে তোমাকে স্পর্শ করবনা।
স্পর্শ না করে কীভাবে থাকব
আমি তো নিরুপায়, আমি যে ভালোবাসি
তোমার লেখাকে!
তাই এক কাল ঘুমোতে পারিনি,
খুঁজেছি শুধু আমি অনেক তুমি গুলো
যাদের স্পর্শ না করে থাকা যায়?
তাই তো আজ সব জমিয়ে রেখেছি
তোমার সৃষ্টি আর সৃষ্টি শ্রষ্ঠাদের
এবার বলোনা স্পর্শ না করে কীভাবে
থাকা যায়?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন