ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

বুধবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৮


[ কবি সুনন্দ মন্ডলের "এবং আমি"-র রিভিউ ]
--------------কলমে সুদীপ্ত সেন (ডট.পেন)

'উড়ান' প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছিল "এবং আমি" নামে একক কবিতার বই, যার লেখক সুনন্দ মন্ডল।
উড়ানের কাজ আমার বরাবরই ভালো লাগে তার ওপর সৌরভ মিত্রের প্রচ্ছদীয় হাত।
"এবং আমি" এর প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী সৌরভ মিত্র মহাশয়।
"এবং আমি" প্রচ্ছদের গায়েই যে বার্তা দেয় তা ভীষণই দামী।
যেন অন্ধকারের পর থেকেই আলোর সৃষ্টি।
প্রথমেই মন ভরে গেল প্রচ্ছদ খানা দেখেই।
তাই পাতা ওল্টাতে শুরু করেছি......

কবি প্রথমেই তার মনের দোচালার ঘর দেখালেন, কিন্তু ঘরের কপাট বন্ধ, তাতে কী? বারান্দাময় মানসীর নাচ তো দেখা গেছে যা দেখে 'মনের অন্তরালে বাঁধল বাসা অন্ধতামিস্রতায়'।
কবি বুঝে গেছেন বাউল কেন ধরেছে গান, কেন কবির মন আনচান করছে...একই কারণ একই মানে আর পাঁচজনের মতোই। তাইতো কবিও ডেকেছে তাকে, বলেছে 'একটুখানি সুখ মায়ায় আসিস ঘরে'।
প্রেম আছে, আছে ভালোবাসা তবু এতো "অভিসন্ধি" কেন?  কেন কবিকে বলতে হলো 'পৃথিবী ছোটো হোক,পৃথিবী রসাতলে যাক'। তবে কবি কিন্তু আশা ছাড়েননি, তিনি অপেক্ষায় দিন গুনবেন।
যদিও কবির আজও জানা বাকি আছে 'সে কী ছিল প্রেম! নাকি কোনো মোহো'?

মানসীকে যদিও পাননি তিনি তবুও কবি বলেছেন তিনি একা নন। তাই তার তরঙ্গ ফেলে জানিয়ে দিয়েছেন 'অথৈ স্বপ্নে এক বিন্দু জল,আশারা বহুদূর'।
আর মানসীকে ভালোবেসে কবি 'যা হতে চাই' তা বলে গেছেন নির্দ্ধিধায়। যদিও কবিরা দ্বিধাগ্রস্ত হন না, তাই কবি বিবাগীও হতে চান সেকথাও বলেছেন।
'জোয়ারের জলে ফুলে ওঠে সাগর,ঢেউ গুলি চুমু এঁকে দেয় কিনারে'।
আর শতাধিক গুলিবর্ষণের পড়েও 'মুখে উচ্চারিত হলো,সেই ধ্বনি -"জয়হিন্দ" '!

এতো কিছুর পরেও কিন্তু আবার মানুষ ভালোবাসে, নেয় " ছুঁয়ে যাওয়া বিন্দু বিন্দু শপথ"।
কবির কিন্তু চিন্তা অনেক, কারণ 'শহর আজ মৃত্যু মুখে' চিন্তা তো স্বাভাবিক, কবিও তো সাধারণ মানুষ।

কবি প্রথমে গাঙচিল হতে চাইলেন, কিন্তু তারপরে অন্যজন হতে চাইলে অহিংসাপিড়ীত কবি বললেন 'তবে তাই হোক'।
আর ফিরে এসে "অনুকাব্য" লিখলেন কবি, যাতে বলা আছে 'তোমার চুলে দেখেছি ঘনকালো মেঘ'।
'প্রতিযোগিতার দৌড়ে কোটি কোটি শুক্রানুকে পিছনে রেখে, তোমার গর্ভে ঠাঁই করে নিয়েছি মা' এটা বোধহয় কবি সুনন্দ মন্ডলই বলতে পারেন।

"সীমান্ত মুক্তি চায়" তাই কবি নির্বাক অস্ত্রের ঝনঝনানি শব্দে লিখলেন আকাশের ঠিকানায় চিঠি,
"স্বমৃত্যু" গ্রহণ করতে চাইলেন কবি, চাইলেন "মোহনা" আর "তোমার উপস্থিতি" তাই "আবার বৃষ্টি" নামলে কবি বললেন 'আমি তো তা চাইনি'!
এত কিছুর পর জানতে পারলাম কবির এখনও "চুক্ষুতৃষ্ণা" মেটেনা।
তাই তিনি বললেন 'তুমি একটি বার ছুঁয়ে দিলে মন বাষ্পীভূত হয়ে মেঘ কণার সাথে মিশে যাব'।
এরপর  'নীরব নিষ্প্রাণ দেহ', 'তুমি হলে এক  ঋতুচক্র',এসব যেন কোনো টুকরো সত্য কথা যা কেটে বসানো আছে "এবং আমি" তে।
চাঁদের দিকে তাকিয়ে কবি বলেছেন 'এসো চাঁদ, বসো কাছে আমার পাশে' আর চাঁদ দেখতে দেখতে দেখতে রাত ঘনিয়ে গেলে তিনি তাও চাঁদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বলতে থাকলেন 'দু-চোখের ঘুম কেড়ে নেয় এলোমেলো সব ভাবনা' আর আমরা বুঝতে পারি তায় দিয়েই "এবং আমি" তৈরী হয়েছে
সেইরকমই ঘুম কেড়ে রাতজাগা কবিতাদের নিয়ে, যা নির্ভুল সত্য কথাকে বহন করে অর্থাৎ তা শুধু কবির কল্পনা নয়।
          

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন