রবিবার, ১৭ মে, ২০২০
শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০
সম্পাদকীয়
সুধীবৃন্দ,
আজ রবি ঠাকুরের জন্মদিন। অন্যদিকে বর্তমান দুর্বিসহ সময়ে পৃথিবী টালমাটাল। কিন্তু অনিশ্চিত প্রত্যেকটি মুহূর্তের মাঝে আমরা খুঁজে নিয়েছি অক্সিজেন এই সাহিত্যের মাধ্যমে। যাকে সঙ্গে করে আমরা এগিয়ে যাব নতুন এক শুদ্ধ সময়ে
আমাদের এই উদ্যোগে আপনারা যেভাবে সাড়া দিয়েছেন তাতে সত্যিই আপ্লুত আমরা। আশা রাখছি আমাদের সকল কাজেই এভাবেই পাশে থাকবেন আপনা।
অরূপ সরকার
সম্পাদক জলফড়িং ওয়েব ম্যাগাজিন
আমন্ত্রিত লেখকগণ
অন্তরিন :- তুষারকান্তি রায়
চুপচাপের মধ্যে মন। আর, মনের মধ্যে উথাল - পাথাল। বাতাসে হাসনুহানার নীরবতা। অদিতি বলছিলো, এবার বৈশাখে যাদবপুর থেকে কলেজস্ট্রিট হয়ে বাগবাজার ঘাটে যাবে। যাক, সেকথা। অন্ধকারে গলির পাশে পাঁচ - সাতটা কুকুর ডেকে উঠলো। ওরা কি জানে? রাদি পাগলি আর শ্যামবাজারে ফিরবে না ! আর একবার অতনু হালদার পড়লাম। প্রথমবারের মতো টানলো না। এপ্রিলেই তো তিথির জন্মদিন। সেদিন রাহুলেরও বাড়ি ফেরার কথা ছিলো। মহান পাত্র তার প্রেম ও যৌনতা বিষয়ক সংখ্যায় লেখা পাঠানোর কথা বলেছিলেন। লেখা হয়নি বলেই কি মনে পড়লো? মনে পড়লো, পুটু বাঁশিতে শূন্যতা বাজাতে পারতো। আমি নির্জনে তার সুর থেকে একটি একটি করে পাতা ঝরতে দেখেছি। রবিঠাকুরের গান। আহা ! সেও তো অন্তরিন এর আশ্রয়। আমার মন এখন জল থৈ থৈ জল থৈ থৈ অনন্তধারা হয়ে ভাসছে. .
- - - - - - -
অন্তরিন :- তুষারকান্তি রায়
চুপচাপের মধ্যে মন। আর, মনের মধ্যে উথাল - পাথাল। বাতাসে হাসনুহানার নীরবতা। অদিতি বলছিলো, এবার বৈশাখে যাদবপুর থেকে কলেজস্ট্রিট হয়ে বাগবাজার ঘাটে যাবে। যাক, সেকথা। অন্ধকারে গলির পাশে পাঁচ - সাতটা কুকুর ডেকে উঠলো। ওরা কি জানে? রাদি পাগলি আর শ্যামবাজারে ফিরবে না ! আর একবার অতনু হালদার পড়লাম। প্রথমবারের মতো টানলো না। এপ্রিলেই তো তিথির জন্মদিন। সেদিন রাহুলেরও বাড়ি ফেরার কথা ছিলো। মহান পাত্র তার প্রেম ও যৌনতা বিষয়ক সংখ্যায় লেখা পাঠানোর কথা বলেছিলেন। লেখা হয়নি বলেই কি মনে পড়লো? মনে পড়লো, পুটু বাঁশিতে শূন্যতা বাজাতে পারতো। আমি নির্জনে তার সুর থেকে একটি একটি করে পাতা ঝরতে দেখেছি। রবিঠাকুরের গান। আহা ! সেও তো অন্তরিন এর আশ্রয়। আমার মন এখন জল থৈ থৈ জল থৈ থৈ অনন্তধারা হয়ে ভাসছে. .
- - - - - - -
আমন্ত্রিত কলম
মুহূর্ত
লেখিকাঃ- দীপশিখা চক্রবর্তী
মনকেমনের চাঁদ ঝুলছে আকাশে,
চেনা বৃত্তের ঘেরাটোপে অসহায় এক নগ্নতার আলো;
যেন খুচরো করে মুছে ফেলা বিষাদ!
নীল হয়ে ওঠে খামখেয়ালি সময়ের খোঁজ,
তোমাকে ছোঁয়ার জন্য উপেক্ষা করেছি এই আভিজাত্যের শোক,
মাঝে মাঝে চুপ থাকতে শিখেছি!
অনায়াসে ভেঙে ফেলেছি সহজ স্পর্শের সবটুকু আলতো টুকরো,
এখন বুঝি,
সম্পর্কে হয়তো দ্বিধা থাকাটাই ভালো!
অথচ শুধু হাতে হাত রাখলেই লেখা হয়ে যেতো শত শত কবিতা,
প্রশ্নের জটিলতায় যতবার স্তব্ধ হয়েছে সময়,
মুহূর্তেরা বলে ওঠে-
"সবকিছুর উত্তর খুঁজলে হেরে যায় ভালোবাসা"।
আমন্ত্রিত কলম
পঁচিশে বৈশাখে "গানের ওপারে"
লেখিকাঃ- ঈশিতা মন্ডল
" রবীন্দ্রনাথ " শব্দ টার সাথে পরিচিত নেই এমন বাঙালি পাওয়া দুষ্কর। আর কিছু না হোক অন্তত রোদ্দুর রায় এর সুবাদে হলেও রবীন্দ্রনাথের নাম টা বাঙালি জানে।। কিন্তু বিষয়টা হল, আসলে " রবীন্দ্রনাথ " না কোনো ব্যক্তিবিশেষের নাম নয়; রবীন্দ্রনাথ একটা আশ্রয়ের নাম, একটা বিশ্বাসের জায়গা, একটা আসমুদ্র হিমাচল যার মধ্যে আনন্দ, শোক , বিহ্বলতা , প্রেম , ভক্তি , স্নেহ সব ধারণের জায়গা আছে।। রবীন্দ্রনাথ আমাদের প্রাণের আরাম,মনের আনন্দ, আত্মার শান্তি।
এহেন রবীন্দ্রনাথের গান - গল্প - কবিতা - জীবনদর্শন ইত্যাদি নিয়ে বহু বিদগ্ধ মানুষ বহু কিছু লিখেছেন, লিখছেন, এবং ভবিষ্যতেও লিখবেন। তাই এবারের ২৫ শে বৈশাখে আমরা বরং একটু অন্য বিষয়ে কথা বলি।। বিষয়টা কবিগুরু কে নিয়েই , তবে প্রেক্ষাপট টা একটু আলাদা । কথা বলব একটি বাংলা ধারাবাহিক নিয়ে। হ্যাঁ জানি, ধারাবাহিক বললেই জুন আন্টি - শ্রীময়ী - অনিন্দ্য দা র ত্রিকোণ প্রেম আর নাহলে সাধারণ কাঁচি দিয়ে জবা নামক যুবতীর বম্ব ডিফিউস করার ভিডিও আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে।। কিন্তু এসবের মধ্যেও কখনো কখনো উঠে আসে এমন কিছু ধারাবাহিক যা স্বাদে গন্ধে সত্যিই অতুলনীয়।। এরকম ধারাবাহিক গোটা পাঁচ দশ চললে বাংলা ধারাবাহিকের এতটা দুর্নাম বোধহয় হত না। এমনই একটি ধারাবাহিক , "গানের ওপারে" । ঋতুপর্ণ ঘোষের কনসেপ্ট এবং স্ক্রিপ্ট নিয়ে জয়দীপ মুখার্জি র পরিচালনা এবং প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি র প্রযোজনায় তৈরি হয় ধারাবাহিক টি।
" ভাগ্যিস উনি আড়াই হাজার টা গান লিখে ফেলেছিলেন; কোথাও বোধ হয় ওনার মনে হয়েছিল যে যদি কিছু বাঁচিয়ে রাখে , তো ওনার গান ওনাকে বাঁচিয়ে রাখবে।"
প্রথম পর্বে ঝিনুক, যার জবানিতে গল্প শুরু হয়, তার মুখ দিয়ে এই উপরোক্ত ভীষণ সত্যি কথা টা বলিয়ে দিয়েছিলেন নির্মাতা রা। সত্যিই আজ দেখতে গেলে "রামকানাই এর নির্বুদ্ধিতা" , "জীবিত ও মৃত" , " অনধিকার প্রবেশ" , " ছুটি" , " অতিথি" র চেয়ে "আমার পরান যাহা চায়" , " আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী", " ও যে মানে না মানা" অনেক বেশি জনপ্রিয়।। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়শই ভেসে ওঠে এরা, লাইক, শেয়ার, লাভ রিয়্যাক্ট এর বন্যা ছুটে যায়।। তো এভাবেই ধারাবাহিকের গল্পের শুরু হয় , ঝিনুক এর জবানিতে।। পরে আস্তে আস্তে যদিও ঝিনুক ও গল্পের একটি চরিত্র হয়ে ওঠে।। কালচারাল জার্নালিস্ট ঝিনুক নিজের চ্যানেলে রবীন্দ্রনাথের জন্ম সার্ধ শতবর্ষ উদযাপনের জন্য রসদ খুঁজতে পৌঁছে যায় চন্দ্রশেখর বাবু র " সোনার তরী " তে। হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথের একদা ছাত্র ,বর্তমানে রবীন্দ্রানুরাগী হিসেবে বিশেষভাবে খ্যাত চন্দ্রশেখর বাবুর বাড়ির নাম টি হল " সোনার তরী" । শুধু বাড়ির নাম ই নয়, তাঁর বাড়ির সদস্য দের নাম ও রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি থেকে সযত্নে তুলে আনা -- "ঘরে বাইরে"র নিখিলেশ, " গোরা" র সুবিনয় ইত্যাদি। প্রত্যেক সদস্যই কোনো না কোনো ভাবে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির সাথে যুক্ত, তাদের ও আছে নিজস্ব টানাপোড়েন। গল্পের নায়িকা হল পুপে ওরফে সোহিনী, চন্দ্রশেখর বাবু র নাতনি। গানের গলা চমৎকার এবং নিয়মিত ভাবে হারমোনিয়াম, তানপুরা র মূর্ছনায় রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা করেন। আর অন্যদিকে গল্পের নায়ক গোরা, যার জীবনে ও রবীন্দ্রনাথ ভীষণভাবে আছেন, তবে রবীন্দ্রচর্চা টা তার একটু অন্যরকম।। প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে নতুন এক্সপেরিমেন্ট করে সে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে।। অন্যভাবে সুন্দর রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে গানগুলোয়।। আর এখানেই বাধে সংঘাত। সোজাসুজি একদম হারমোনিয়াম - তবলা আর গিটার- ড্রাম এর মধ্যে লেগে যায় নারদ নারদ।। যদিও অবশেষে গোরা - পুপে র প্রেম মিলনে দুই ভিন্ন সত্তা মিশে গিয়ে দুই ভিন্ন মেরুর রবীন্দ্র চর্চা একসাথে সহাবস্থান করে।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে বলতে পারি, রবীন্দ্রনাথ কে মর্মে মর্মে উপলব্ধি না করলে এই ধারাবাহিক বানানো সম্ভব নয়। রীতিমত কবিগুরুর জীবনদর্শন কে অন্তঃকরণে উপলব্ধি করে তবেই এই কাজ সম্ভব। তাই জন্যেই তো হালফিলের রবীন্দ্রনাথ কে নিয়ে হিপোক্রেসি র চূড়ান্ত সমালোচনা করেছেন গল্পকার , ঝিনুকের ঠাকুমা সুচরিতার মাধ্যমে , " আরে বাবা, বাড়ির নাম "সোনার তরী" রাখলেই কি আর রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ হওয়া যায়?!" বারবার এরকম সংলাপের মধ্যে দিয়ে, বিভিন্ন ঘটনা স্রোতের মধ্যে দিয়ে একটাই কথা বারবার উঠে এসেছে, রবীন্দ্রনাথ একটা প্রবহমান দর্শন এর নাম। তাকে কোনো নির্দিষ্ট ধাঁচে ফেলা সম্ভব নয়। ধারাবাহিক টি যে ভাবে তথ্যসম্বলিত তাতে অস্বীকার করার উপায় নেই যে নির্মাতা রা বেশ ভালো রকম হোম ওয়ার্ক করেই মঞ্চে নেমেছিলেন।। ঠাকুরবাড়ির সন্তানদের নামকরণের বিধি থেকে শুরু করে কবিগুরুর কোন ঋতুতে কি ফুল প্রিয় ছিল তার সমস্ত ধারাবিবরণী পাওয়া যায় এই ধারাবাহিকে।। এবার আসি ধারাবাহিকের মূল উপজীব্য বিষয়, যা কিনা এক ই সাথে বিতর্ক সভার বিষয় ও হতে পারে, বিষয় টি হল , রবীন্দ্রসঙ্গীত কে কি ভাঙ্গা গড়া যায়? কেউ এর পক্ষে বলবেন , কেউ বা বিপক্ষে।। ধারাবাহিক টির ভীত মূলত এই বিতর্ক টাকেই কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।। গোরা রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে সেটা পরিবেশন করে এবং তার চরিত্রের মধ্যে দিয়ে কোথাও না কোথাও বারবার এই ভাবনা উঠে এসেছে, যে রবীন্দ্রপ্রেম বা রবীন্দ্রনাথ ও তার জীবনদর্শন এর প্রতি অমোঘ আকর্ষণ শুধুই হারমোনিয়াম, তবলা , তানপুরা, পাট করে পরা শাড়ি , ধোপদুরস্ত পাঞ্জাবি কিংবা বসার ঘরের শো কেস এ সাজানো গীতবিতান , সঞ্চয়িতা দিয়েই বোঝানো যায় না, ওগুলো কেবলমাত্র রবীন্দ্রপ্রেম প্রকাশের অনেকগুলো মাধ্যমের একটা ।। রবীন্দ্রনাথ কে ভালোবাসতে গেলে এসব না থাকলেও চলে, রবীন্দ্র দর্শন কে অন্তরাত্মা দিয়ে উপলব্ধি করতে গেলে শাড়ি- পাঞ্জাবি না পরলেও চলে, গীতবিতান টা বসার ঘরে না রেখে পড়ার টেবিল এ রাখলেও চলে।।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, যখন গান নিয়ে বিভিন্ন কাজ মানুষ গ্রহণ করছে, রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়েও বিভিন্ন নতুন কাজ মানুষ পছন্দ করেছেন, তখন আমাদের কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট এর কথা শুনতে অতটা অস্বাভাবিক হয়ত লাগবে না, কিন্তু ঠিক দশ বছর আগে তখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট এর বিষয় ধারাবাহিকে উপস্থাপন কিন্তু খুব একটা সহজ ছিলনা। কারণ তখনও বাঙালির অন্তরে রবীন্দ্রনাথ "ঠাকুর" , আর রবীন্দ্রসঙ্গীত সেই ঈশ্বরের পুজোর অর্ঘ্য। গিটারের তারে রবীন্দ্রসঙ্গীত খেলানো বা রবীন্দ্রসঙ্গীতের এক্সপেরিমেন্টাল রিমিক্স দেখানো নির্মাতাদের কাছে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল। সামন্তক সিংহ এবং অন্যান্য আরো সংগীতশিল্পী রা মিলে যথেষ্ট দক্ষতার সাথে গানগুলি গেয়েছেন, কখনো গোরার গলায় অপ্রচলিত ধারার গান কখনো বা পুপে র কণ্ঠে ট্র্যাডিশনাল সুরের ছোঁয়া। সবটাই গাওয়া হয়েছে অসম্ভব ভালোবাসা এবং ডেডিকেশন দিয়ে।।
রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শন কে যাঁরা বাস্তবিকই আত্মস্থ করতে পেরেছেন, তাঁরা জানেন, বিশ্বকবি নিজে ভাঙ্গা - গড়া এবং ছক ভেঙে নতুন সৃষ্টি তে কতটা বিশ্বাসী ছিলেন।। সুতরাং, রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে নতুন ধরনের কাজ হলে নীতি পুলিশ হওয়ার কোনো যুক্তি নেই বলেই আমার ব্যক্তিগত মতামত, কবিগুরু নিজেও এ ধরনের কাজ দেখলে খুশি বই দুঃখিত হতেন না ।। তবে হ্যাঁ, ভাঙ্গা চোরা যাই হোক, নতুন সৃষ্টির মধ্যে প্রকৃত দর্শন টা অক্ষুন্ন রাখাটা বাঞ্ছনীয়।।
প্রবন্ধ বিভাগ
একুশ শতকে রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা
*****
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামটির বিশালতা বা ব্যপকতা নিয়ে আমরা সবাই ওয়াকিবহাল। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সন্তান হলেও, তিনি নিজেকে শুধুমাত্র সেখানেই আবদ্ধ করে রাখেননি। সমগ্র ভারতবর্ষ এমনকি সারা পৃথিবী ওনাকে এক ডাকে চেনে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়।
ওনার প্রাসঙ্গিকতা শুধুমাত্র উনিশ, কুড়ি বা একুশ শতকে নয়.... যতদিন পৃথিবীর বুকে বাঙালী থাকবে, রবীন্দ্রনাথ নামের সূর্যও চির আলোকিত হয়ে থাকবে। ওনার লেখার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে, উনি নিজেও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তাই তো লিখেছিলেন----
"আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
কৌতূহল ভরে--"
সত্যিই তাই ওনাকে নিয়ে কৌতূহলের কোনো সীমা নেই আমাদের। ওনাকে জানা, খোঁজার কোনো শেষও নেই। জীবনের এমন কোনো পর্যায় নেই যেখানে উনি নেই। এমন কোনো অনুভূতি নেই যেটা নিয়ে উনি বলেন নি। জনজীবন, সমাজ,শিক্ষা, সংস্কৃতি, দর্শন আরও অনেক বিষয়ে উনি ওনার মহামূল্যবান মতামত প্রকাশ করেছেন, যা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। প্রেম, প্রকৃতি, বাস্তব, আধ্যাত্মিক সব ক্ষেত্রেই ওনার কৃতিত্বের ছাপ সুস্পষ্ট।
সৃজনশীলতা, আচার-বিচার এবং মননে তিনি ছিলেন চিরআধুনিক। ওনার উন্নত চিন্তাধারার যে বীজ শান্তিনিকেতনে বপন করেছিলেন, তা আজও সমুজ্জ্বল। ওনার ভাবধারা, ওনার আদর্শ লক্ষ, কোটি হৃদয়ে আজও প্রজ্জ্বলিত।
যতই দিন যাচ্ছে ততই তাঁর রচনার নান্দনিক, দার্শনিক, কাঠামোগত, আন্তঃসাংস্কৃতিক, পারিবেশিক এবং একবিশ্বকেন্দ্রিক মানবতাবাদী চেতনার উত্তরোত্তর পুনর্বীক্ষণ ও পুনর্মূল্যায়ন হয়ে চলেছে। কেবল তার প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনের গবেষক সম্প্রদায় কিংবা তাঁর স্বপ্নাশ্রিত জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের গবেষক ও সংগীতশিল্পীরাই নয়, সারা বিশ্বের মানব কল্যাণকামী সারস্বত সমাজ তাঁর রচনার পাঠ, পুনর্পাঠ, বিশ্লেষণ, নবায়ন এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাকে নব আঙ্গিকে উপস্থাপনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ফলে বিংশ শতাব্দীর এই নান্দনিক কূটাভাস একবিংশ শতাব্দীর শিল্পস্রষ্টা ও ভোক্তার কাছে এক নবায়িত অবয়ব নিয়ে হাজির হচ্ছে।পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তিনি ক্রমাগত নন্দিত, পঠিত ও বিবেচিত হওয়ার কারণে তাঁর উপস্থিতি সর্বত্রই অনিবার্য হয়ে উঠেছে। দেশে দেশে রবীন্দ্রনাথের এই কালোত্তর উপস্থিতিই একবিংশ শতাব্দীতে তাঁর প্রাসঙ্গিকতার অন্যতম নিয়ন্ত্রক।
স্বীকার্য যে, উত্তরকালে রবীন্দ্র প্রাসঙ্গিকতার ক্ষেত্রে অনিবার্যভাবে একটি কবিতার কথা বিশেষভাবে এসে পড়ে। তিনি তাঁর ‘১৪০০ সাল’ কবিতায় তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের কবিদের জন্য কিছু সহজ সরল অথচ সুষ্পষ্ট বার্তা রেখে গেছেন। এই বার্তাগুলোর একটি হচ্ছে সনাতনকে গ্রহণ বা বর্জন করার ক্ষেত্রে নবীন প্রজন্মের মনোবীক্ষণ। একশত বছর আগের যৌবনের সৃষ্টিশীলতা আর একশত বছর পরের যৌবনের সৃষ্টিশীলতায় প্রাকরণিক প্রভেদ থাকলেও প্রেরণাগত প্রভেদ তেমন ধর্তব্য নয়। সৃষ্টিশীলতার জন্য তিনি চঞ্চলতার কথা বলেছিলেন, পুলকরাশির কথা বলেছিলেন আর তার সৃষ্টিকে নিখিলের মর্মে আঘাত করতে পারার শক্তির কথা বলেছিলেন। শতবর্ষের ব্যবধানে বসন্ত গানে প্রভেদ থাকবেই, আর থাকবে তার নির্মাণ-কুশলতায় দূরত্ব। এটি কালিক অগ্রগমণে সৃষ্টিশীলতার নবায়ন। একুশ শতকের কবির প্রতি রবীন্দ্রনাথের এই বার্তাও সবিশেষ প্রাসঙ্গিক।
ওনার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে , বুদ্ধদেব বসুর স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে, যত দিন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য থাকবে, রবীন্দ্রনাথ পঠিত হবেন তত দিন, তাঁর প্রাসঙ্গিকতাও থাকবে—মাত্রার তারতম্যভেদে৷
এককথায় বলতে গেলে, রবীন্দ্রনাথ আমাদের প্রাণে মিশে গেছেন।উনি আমাদের অনুভূতিতে, আবেগে জড়িয়ে আছেন। উনি স্বমহিমায়, যুগ-যুগান্তর ধরে রয়ে যাবেন আমাদের হৃদ-মাঝারে।
*****
পাপিয়া মণ্ডল
পূর্ণিমার চাঁদ ও একবাটি মধু
লেখকঃ- উদ্ভাস সরকার
থমথমে মুখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল কাঞ্চন। তাকিয়েছিল বাদামি ধূসর পাথরের মূর্তিটির দিকে। আপন মনে দেখছিল রামকিঙ্কর বেইজের অপূর্ব সৃষ্টি গুলির দিকে। মূর্তিগুলোর অপূর্ব সৌন্দর্য তাকে স্নিগ্ধ করছিল ধীরে ধীরে। মনের ভেতরে যে অপরিমেয় উত্তাপ ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল কিছুক্ষণ আগেও, অনেকটাই প্রশমিত হল তার। মাথার উপর একটা নিমগাছ তার। দেখল ঝকঝকে সবুজ পাতা দুলছে একটু একটু করে। মনের ভেতরে এখন অনেকটাই শান্ত কাঞ্চন।
সোনাঝুরির দিকে একটা রিসর্টে উঠেছে তারা। তারা বলতে, কাঞ্চন আর ওর স্ত্রী তপতী। সদ্য বিয়ে হয়েছে ওদের। সম্বন্ধ করে বিয়ে। বিয়ের আগের প্রাথমিক পরিচয়ে যে চমৎকার উৎসাহী আর সমঝদার তপতী কে পেয়েছিল সে, বিয়ের পরে সে মানুষ বদলে গেছে রীতিমতো। এই তপতী একটুতেই ভুল বোঝে, বড় বেশি অভিমানী। বিয়ের পরে প্রথম বাইরে এসে ভালোবাসার রঙে রঙিন হবে বলে এসেছিল কাঞ্চন। কিন্তু না, নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি হচ্ছে না কিছুতেই। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি বাড়ছে ক্রমাগত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাঞ্চন নিজের উপরে সম্পূর্ণ দোষের দায় নিলে পরে, সাময়িক যুদ্ধবিরতি। অথচ শান্তিনিকেতনের দোলের অনুষ্ঠান উপভোগ করতেই তাদের আসা। সামান্য বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি এতটাই চরম আকার ধারণ করে যে এ ক'দিনে ই কাঞ্চন জীবন তৃষ্ণা হারাতে বসেছে।
বৃদ্ধ বাউল কে দেখে বড় মায়া হল কাঞ্চনের। একা গাছের তলায় বসে আপন মনে গাইছিলেন। অচিন পাখির গান গাইছিলেন। মুগ্ধ হয়ে শুনছিল কাঞ্চন। ভিতরে ভিতরে শুদ্ধ হচ্ছিল মন। সত্যিই জীবন বড় বিচিত্র। সব কিছু পেয়েও এক মস্ত শূন্যতা কাঞ্চনের ভেতরে। এদিকে কিছু নেই বৃদ্ধ বাউলের। অথচ মন এক অপূর্ব প্রশান্তিতে ভরপুর। একঘন্টা পরে তার মনে হল, যেন এক পুনর্জন্ম হল তার।
রিসর্টের দিকে ফিরে চলল কাঞ্চন।
লেখকঃ- উদ্ভাস সরকার
থমথমে মুখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল কাঞ্চন। তাকিয়েছিল বাদামি ধূসর পাথরের মূর্তিটির দিকে। আপন মনে দেখছিল রামকিঙ্কর বেইজের অপূর্ব সৃষ্টি গুলির দিকে। মূর্তিগুলোর অপূর্ব সৌন্দর্য তাকে স্নিগ্ধ করছিল ধীরে ধীরে। মনের ভেতরে যে অপরিমেয় উত্তাপ ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছিল কিছুক্ষণ আগেও, অনেকটাই প্রশমিত হল তার। মাথার উপর একটা নিমগাছ তার। দেখল ঝকঝকে সবুজ পাতা দুলছে একটু একটু করে। মনের ভেতরে এখন অনেকটাই শান্ত কাঞ্চন।
সোনাঝুরির দিকে একটা রিসর্টে উঠেছে তারা। তারা বলতে, কাঞ্চন আর ওর স্ত্রী তপতী। সদ্য বিয়ে হয়েছে ওদের। সম্বন্ধ করে বিয়ে। বিয়ের আগের প্রাথমিক পরিচয়ে যে চমৎকার উৎসাহী আর সমঝদার তপতী কে পেয়েছিল সে, বিয়ের পরে সে মানুষ বদলে গেছে রীতিমতো। এই তপতী একটুতেই ভুল বোঝে, বড় বেশি অভিমানী। বিয়ের পরে প্রথম বাইরে এসে ভালোবাসার রঙে রঙিন হবে বলে এসেছিল কাঞ্চন। কিন্তু না, নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি হচ্ছে না কিছুতেই। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি বাড়ছে ক্রমাগত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাঞ্চন নিজের উপরে সম্পূর্ণ দোষের দায় নিলে পরে, সাময়িক যুদ্ধবিরতি। অথচ শান্তিনিকেতনের দোলের অনুষ্ঠান উপভোগ করতেই তাদের আসা। সামান্য বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি এতটাই চরম আকার ধারণ করে যে এ ক'দিনে ই কাঞ্চন জীবন তৃষ্ণা হারাতে বসেছে।
বৃদ্ধ বাউল কে দেখে বড় মায়া হল কাঞ্চনের। একা গাছের তলায় বসে আপন মনে গাইছিলেন। অচিন পাখির গান গাইছিলেন। মুগ্ধ হয়ে শুনছিল কাঞ্চন। ভিতরে ভিতরে শুদ্ধ হচ্ছিল মন। সত্যিই জীবন বড় বিচিত্র। সব কিছু পেয়েও এক মস্ত শূন্যতা কাঞ্চনের ভেতরে। এদিকে কিছু নেই বৃদ্ধ বাউলের। অথচ মন এক অপূর্ব প্রশান্তিতে ভরপুর। একঘন্টা পরে তার মনে হল, যেন এক পুনর্জন্ম হল তার।
রিসর্টের দিকে ফিরে চলল কাঞ্চন।
খুনের দাগ
সায়ন মণ্ডল
আমরা গ্রীষ্মকালের রাতে ছাদে বসে বন্ধুরা মিলে গল্প করছিলাম সময়টা ছিল ২০১৫ সাল রাত্রি প্রায় দশটা নাগাদ । তখনও ইন্দ্রজিৎ দা এসে পৌঁছায়নি । আমরা খুনিদের নিয়ে আলোচনা করছিলাম - কিভাবে বড় বড় খুন হয়েছে ? কি কারণে তারা খুন করেছে ? এইসব ব্যাপারে । কিছুটা গল্প হতে হতেই ইন্দ্রজিৎ দার প্রবেশ , হাতে সিগারেট টানতে টানতে ডুকছে।
ইন্দ্রজিৎ দা বলে উঠলো “কিরে কি গল্প করছিস?”
আমরা বলে উঠলাম “এই খুনিদের নিয়ে আলোচনা করছি কত বড় বড় খুন হচ্ছে" ।
ইন্দ্রজিৎ দা বলে উঠলো “ভালো ভালো হাওয়া খেতে খেতে এইসব বিষয়ে আলোচনা।”
আমাদের অনেকক্ষণ গল্প হবার পর আমরা ইন্দ্রজিৎ দা কে বললাম - “দাদা তোমার লাইফে কোনো খুন দেখনি । যেহেতু তুমি বেসরকারি ডিটেকটিভ ছিলে শুনেছিলাম।”
ইন্দ্রজিৎ দা বলল “হ্যাঁ আমি প্রথমে সঞ্জয় বাবুর কাছে অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলাম তারপর আমি বেসরকারি ডিটেকটিভ হলাম।”
ইন্দ্রজিত দা ঘটনা বলতে শুরু করল তা আমরা মন দিয়ে শুনতে থাকলাম ।
ইন্দ্রজিৎ দা বলছে-
সালটা ১৯৮৯ নাগাদ, সেদিন আমি ঘরে বসে চা সিগারেট খেতে খেতে গল্পের বই পড়ছিলাম। হঠাৎ দরজায় ঠক ঠক। আমি যখনই দরজাটা খুললাম। একটি ছেলে হাঁপাতে হাঁপাতে বলছে , আপনার নাম ইন্দ্রজিৎ মন্ডল?
আমি বলে উঠলাম -“হ্যাঁ আমি ইন্দ্রজিৎ মন্ডল। তা আপনাকে কি একটু জল দেব।"
ছেলেটি বলল হ্যাঁ দিন।
জল পান করার পর ছেলেটি বলে উঠলো “আমার নাম অয়ন মুখার্জি, এখন আমি ব্যবসা করি। আমার খুব বিপদ আমাকে বাঁচান।”
আমি বললাম কি হয়েছে আপনি আমাকে খুলে বলুন।
ছেলেটি বলল দুদিন আগে আমাকে একটি চিঠির মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
আমি বললাম তা আপনি চিঠিটা এনেছেন ।
ছেলেটি চিঠিটা আমায়় দিল। আমি চিঠিটা হাতে নেওয়ার পর পড়লাম , তাতে লেখা আছে - তুমি তার জীবন থেকে সরে যাও, নাহলে তোমার কপালে দুর্গতি আছে... ইতি তোমার দ্বিষৎ ।।
ছেলেটি আবার বলে উঠলো - আপনি আমায় বাঁচাতে পারেন , দয়া করে আমাকে বাঁচান।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলা , আপনি কাকে সন্দেহ করছেন?
সে বলল “আমি বুঝতে পারছি না এটা কার কাজ। কিন্তু একজনের আমার উপর রাগ আছে ।”
আমি বললাম “একটু খুলে সবটা বলুন , যাতে আমি সমস্যার সমাধান করতে পারি।”
সে ঘটনাটা আমায়় খুলে বলতে থাকলো। সে বলল.....
সে বিগত এক বছর ধরে একটা মেয়েকে ভালবাসে । সেই মেয়েটার আগে একটা প্রেমিক ছিল। সেই ছেলেটা আমার বন্ধু। সে জানতো না যে আগে ওদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিল।
আমি একটি ছোট গোল্ড ফ্লেক সিগারেট ধরালাম এবং জিজ্ঞেস করলাম - তা আপনার ওই বন্ধুর নাম কি? আর আপনার প্রেমিকার নাম কি?
সে বলল তার বন্ধুর নাম কৌশিক সরকার, আর তার প্রেমিকার নাম পূজা দাস।
আমি তাকে বললাম, ঠিক আছে আপনার কাছ থেকে আমি শুনলাম। আমার দ্বারা আপনাকে যতটা সাহায্য করা যেতে পারে তা আমি সবটাই করব।
ছেলেটি চলে গেল।
তারপরের দিন আমি কৌশিক সরকার এর ঠিকানা জোগাড় করে তার বাড়ি গেলাম।
কৌশিক সরকার দরজা খুললো । সে জিজ্ঞেস করল আপনি কাকে খুজছেন?
দরজা খোলা মাত্র আমি দেখলাম কৌশিক বাবু গোছা গুুছি করছেন, কোথাও যাবার জন্য। আমি উত্তর দিলাম- নমস্কার আমি ইন্দ্রজিৎ মন্ডল , বেসরকারি ডিটেকটিভ ।
আমাকে ভেতরে ডাকলেন এবং সে বলে উঠলো , তা হঠাৎ আমার বাড়িতে।
আমি বললাম, আমাকে অয়ন মুখার্জি আপনার নাম বললেন ।
ছেলেটি রেগে বলে উঠলো - হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ওকে চিনি ।
আমি বললাম, অয়ন মুখার্জি গতকাল আমার কাছে এসেছিলেন , তা উনার জীবন খুব সংশয়। তাকে চিঠির মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
কৌশিক সরকার বলে উঠলো , “তাতে আমি কি করতে পারি? তাছাড়া আপনি আমাকে এই কথা বলছেন কেন? আমি তো নিশ্চয়ই চিঠি দিয়ে হুুমকি দিইনি।”
আমি বুঝতে পারলাম কৌশিক সরকার, অয়ন মুখার্জির উপর রেগে আছেন। আমি তাকে ঠান্ডা মাথায় বলি, সে আপনাকে দোষ দিচ্ছে না। উনি আমার কাছে সাহায্য চেয়েছেন। উনি বললেন যে পূজা দাস নামক মেয়েটি হলো প্রেমিকা । আর তার আগে পূজা দাস এর সাথে আপনার ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। তা যদি আপনি বিষয়টা খুলে বলেন তাহলে আমার খুব ভালো হয় তাকে সাহায্য করতে সুবিধা হবে।
কৌশিক সরকার মদ নিয়ে এলেন, এবং আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি পান করব কিনা।
আমি বললাম - মাফ করবেন আমি ঐসব খাই না।
কৌশিক বাবু এক চুমুক দেওয়ার পর বলতে শুরু করলেন।
কৌশিক বাবুু তখন কলেজে পড়েন। তখন পূজা দাস নামের একটি মেয়েকে তার খুব ভালো লাগতো। ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক হয়। তাাদের সম্পর্ক দু'বছর ভালোই চলে। বলা যেতে পারে তারা প্রায়ই ঘুরতে যেতো। তারা বেশ মজাতেই দিন কাটাচ্ছিলেন। ২৮শে জানুয়ারী কৌশিক বাবুর জন্মদিন ছিল। সেই দিন তার বাড়িতে তার বন্ধুদের ও তার প্রেমিকাকে নেমন্তন্ন করেছিলেন। যথাযথ সময়মতো সকলেই এসেছিল। কৌশিক বাবু কাছের বন্ধু অয়ন মুখার্জির সাথে তার প্রেমিকার পরিচয় করিয়ে দেয়। কিছুদিন পর থেকে দেখা যায় কৌশিক বাবুর প্রেমিকা আগের মত কৌশিক বাবুকে ঠিকমতো সময় দেয় না। আবার অন্যদিকে কৌশিক বাবুর কাছের বন্ধু তার সাথে ঝামেলা করে কথা বন্ধ করে দেয়। এতে কৌশিক বাবু সন্দেহ হয়। একদিন কৌশিক বাবু চোখে পড়ে যে তার কাছের বন্ধু ও তার প্রেমিকা একসাথে ঘুরতে বেরিয়েছে। তা কৌশিক বাবু যখন পরে তার প্রেমিকা কেই ঘটনাটা বলে তখন তার প্রেমিকা রেগে গিয়ে বলে তার সাথে সে সম্পর্ক রাখতে পারবে না। তারপর থেকে কৌশিক বাবু তাদের প্রতি খুবই রেগে , যে তিনি সুযোগ পেলে অয়ন মুখার্জি কে খুন করতে পারে এবং তারপর থেকে সে প্রতিদিন মদ্যপান করেন। কৌশিক বাবু তারপর থেকে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখে নি। আর সেই সময়ে সে শিক্ষক কাজে যুক্ত হয়েছিলেন তাই ব্যস্ত বলে এর বেশি কিছু জানেন না তাদের অবস্থা।
শেষে আমি ধন্যবাদ জানিয়ে ওখান থেকে উঠে চলে এলাম।
কৌশিক বাবুুর বাড়ি যাবার কিছুদিন পর আমি পূজা দাস এর বাড়ির খোঁজ করলাম এবং তার বাড়ি গিয়ে পৌঁছালাম।
দরজায় গিয়ে নক করলাম। পূজা দাস নিজে দরজা খুললেন। এবং জিজ্ঞেস করলেন আপনি কে?
আমি উত্তর দিলাম - “নমস্কার আমি ইন্দ্রজিৎ মন্ডল , বেসরকারি ডিটেকটিভ।”
“তা কি ব্যাপার আমার কাছে আসা?”-পূজা দাস বললেন।
পূজা দাস কে আমি বললাম যে অয়ন মুখার্জির জীবন এখন খুব বিপদে আমি নিশ্চয়ই জানেন।
পূজা দাস বললেন- “হ্যাঁ ! আমি জানি এটা কৌশিক সরকার এইসব করছেন।” পূজা দাস বললেন- কৌশিক সরকার ও অয়ন মুখার্জি তারা দুজন আগে খুুব ভালো বন্ধু ছিলেন। তাদের মধ্যে কোন গোপন শত্রুতা আছে কিনা তা জানেন না। তাছাড়া এর বেশি আর কিছু তিনি জানেন না বলে পূজা দাস উঠে গেলেন।
তারপর সেখান থেকে আমি বাড়ি ফিরলাম। এবং সেদিন রাতে আমি একটি লোক ঠিক করলাম যে ওই তিনজনকে লক্ষ্য রাখবে।
তিন দিনের মাথায় শনিবার সকালে আমি খবরের কাগজ পড়তে পড়তে দেখলাম ব্যবসাদার অয়ন মুখার্জি গতকাল রাতে মদ্যপান করে ছাদ থেকে পড়়ে মারা গেছেন। এই দেখে আমি তো চমকে উঠলাম। সেইদিন রাতেই যে গুপ্তচর ঠিক করেছিলাম সে এলেন এবং বললেন যে কৌশিক সরকার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন এবং প্রতিদিন রাতে তিনি মদ্যপান করে থাকেন আর অয়ন মুখার্জি তো মারাই গেছেন । আর পূজা দাস আরও একটি নতুন প্রেমিক এর সাথে প্রতিদিন রাতে ঘুরতে যান এবং গতকাল রাতে পূজা দাস অয়ন বাবু বাড়ি গিয়েছিলেন আর সেখানে তাদের ভালোবাসার কথা হচ্ছিল। তিনি আরো বলেন, দুদিন আগে পূজা দাস সেইদিন রাতে অয়ন মুখার্জির বাড়ি গিয়েছিলেন । সেখানে তারা অনেকক্ষণ গল্প করছিলেন। এবং পূজা দাস অয়ন মুখার্জি কে ওই চিঠিতে ভয় পেতে বারণ করেছিলেন।
অয়ন মুখার্জির মৃত্যুর পরের দিন আমি অয়ন মুখার্জির বাড়ি যায়। এবং সেখানে গিয়ে দেখি বাড়ির সকলে খুব কান্নাকাটি করছে তার সাথে তার প্রেমিকা কান্নাকাটি করছে। সেখানে শুধু কৌশিক সরকার আসেনি।
কিছুদিন পর একটা কারণের জন্য আমার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তারপরই আমি পূজা দাস মেয়েটির বাড়ি যায়। সেখানে কৌশিক সরকার ও অয়ন মুখার্জির পরিবারের সদস্যকে পূজা দাস এর বাড়িতে ডাকেন। সময়মতো তারা সকলেই সেইদিন বিকালে জমাটবদ্ধ হন।
আমি যখনই পূজা দাস কে বললাম অয়ন মুখার্জির খুন টা সে করেছে , পূজা দাস কিছুতেই কথাটা স্বীকার করলেন না। বরং পূজা দাস বলেন সে তার প্রেমিককে কেন খুুন করবে? এই কথা শুনে সেখানে থাকা সকলেই চমকে যায় এবং সকলেই কৌশিক সরকার কে দোষারোপ করেন।
কৌশিক সরকার বারবার বলে ওঠেন সে অয়ন মুখার্জি কে খুুন করেনি।
তখন আমি সবাইকার সামনে সমস্যার সমাধান করতে পুরো গল্পটা খুলে বলি।
কৌশিক সরকার ও পূজা দাস দু'বছর ধরে সম্পর্কে ছিলেন। তারপর হঠাৎ অয়ন মুখার্জির সাথে পূজা দাস এর সম্পর্কে সৃষ্টি হয়। কারণটা হলো পূজা দাস আসলে কাউকে ভালবাসেননি। তিনি সকলকে টাকার জন্য ব্যবহার করেছেন। প্রথমে কৌশিক সরকার যখন তাকে আর ঘুরতে নিয়ে যেতেন না ও তার হাত খরচ দিতেন না তখন তিনি অয়ন মুখার্জির সাথে সম্পর্কে জান। এবং অয়ন মুখার্জীর সাথে সম্পর্কে থাকাকালীন পূজা দাস আবার একটি অন্য ছেলের সাথে সম্পর্কে যেতে চান এবং সেটা অয়ন মুখার্জির চোখে পড়ে যায়। পূজা দাস সেই সম্পর্কটা কে অয়ন মুখার্জির কাছে বন্ধু বলে প্রকাশ করেন।
পরে পূজা দেবী বুঝতে পারেন যে অয়ন বাবু যদি বেঁচে থাকেন তাহলে পূজা দেবী তার এই অভ্যাসটা চালিয়ে যেতে পারবেন না তাই পূজা দেবী অয়ন বাবুকে চিঠির মাধ্যমে হুমকি দিয়ে সম্পর্ক থেকে সরে যেতে বলেন। আর তিনি এই কাজটা করেছিলেন যাতে সকল এটাই ভাবে যে এ ঘটনাটা কৌশিক বাবু করছেন। এই সমস্ত ঘটনাটা অয়ন বাবু জানতে পেরে যায়। তাই পূজা দেবী শুক্রবার রাতে তার নতুন প্রেমিকের সাথে ঘুরতে গেছিলেন এবং ফিরে এসেছিলেন অয়ন মুখার্জির বাড়িতে। এবং সেইদিন রাতে অয়ন বাবুকে ভালোবাসার অভিনয় করে জোরজবস্তি মদ্যপান করান এবং ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দেন, যাতে সকলেই মনে করেন , কৌশিক বাবুু অয়ন বাবুকে ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দিয়েছেন অথবা অয়ন বাবু নিজে ছাদ থেকে পড়ে গেছেন। এরফলে পূজা দেবী নিজেকে নিরাপদে রাখতে চেয়ে ছিলেন ।
আমি পূজা দেবীকে জিজ্ঞেস করলাম-“তাইতো পূজা দেবী?”
সবশেষে পূজা দেবী সকলের সামনে নিজের দোষ স্বীকার করলেন। এবং পূজা দেবীকে সকলে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন। এর ফলে পূজা দাস এর জীবনে একটি খুনের দাগ লেগে গেল। যেটা আর কোনদিনও মুছার নয়।
আমরা তখন ইন্দ্রজিৎ দা কে বললাম - “বা বা !তুমি এত বড় সমস্যার সমাধান করেছো । তার জন্য সরকার তোমায় কোন উপহার দেয়নি ।”
ইন্দ্রজিৎ দা বলল - “এটা আমার কাজ সত্যটা সকলের সামনে প্রকাশ করা। কোন পুরস্কারের জন্য আমি এটা করি নি ।”
সবশেষে আমরা নিজেদের বাড়ি ফিরলাম এবং ইন্দ্রজিৎ দা একটি ছোট গোল্ড ফ্লেক্ সিগারেট ধরিয়ে বাড়ি চলে গেলেন।
সায়ন মণ্ডল
আমরা গ্রীষ্মকালের রাতে ছাদে বসে বন্ধুরা মিলে গল্প করছিলাম সময়টা ছিল ২০১৫ সাল রাত্রি প্রায় দশটা নাগাদ । তখনও ইন্দ্রজিৎ দা এসে পৌঁছায়নি । আমরা খুনিদের নিয়ে আলোচনা করছিলাম - কিভাবে বড় বড় খুন হয়েছে ? কি কারণে তারা খুন করেছে ? এইসব ব্যাপারে । কিছুটা গল্প হতে হতেই ইন্দ্রজিৎ দার প্রবেশ , হাতে সিগারেট টানতে টানতে ডুকছে।
ইন্দ্রজিৎ দা বলে উঠলো “কিরে কি গল্প করছিস?”
আমরা বলে উঠলাম “এই খুনিদের নিয়ে আলোচনা করছি কত বড় বড় খুন হচ্ছে" ।
ইন্দ্রজিৎ দা বলে উঠলো “ভালো ভালো হাওয়া খেতে খেতে এইসব বিষয়ে আলোচনা।”
আমাদের অনেকক্ষণ গল্প হবার পর আমরা ইন্দ্রজিৎ দা কে বললাম - “দাদা তোমার লাইফে কোনো খুন দেখনি । যেহেতু তুমি বেসরকারি ডিটেকটিভ ছিলে শুনেছিলাম।”
ইন্দ্রজিৎ দা বলল “হ্যাঁ আমি প্রথমে সঞ্জয় বাবুর কাছে অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলাম তারপর আমি বেসরকারি ডিটেকটিভ হলাম।”
ইন্দ্রজিত দা ঘটনা বলতে শুরু করল তা আমরা মন দিয়ে শুনতে থাকলাম ।
ইন্দ্রজিৎ দা বলছে-
সালটা ১৯৮৯ নাগাদ, সেদিন আমি ঘরে বসে চা সিগারেট খেতে খেতে গল্পের বই পড়ছিলাম। হঠাৎ দরজায় ঠক ঠক। আমি যখনই দরজাটা খুললাম। একটি ছেলে হাঁপাতে হাঁপাতে বলছে , আপনার নাম ইন্দ্রজিৎ মন্ডল?
আমি বলে উঠলাম -“হ্যাঁ আমি ইন্দ্রজিৎ মন্ডল। তা আপনাকে কি একটু জল দেব।"
ছেলেটি বলল হ্যাঁ দিন।
জল পান করার পর ছেলেটি বলে উঠলো “আমার নাম অয়ন মুখার্জি, এখন আমি ব্যবসা করি। আমার খুব বিপদ আমাকে বাঁচান।”
আমি বললাম কি হয়েছে আপনি আমাকে খুলে বলুন।
ছেলেটি বলল দুদিন আগে আমাকে একটি চিঠির মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
আমি বললাম তা আপনি চিঠিটা এনেছেন ।
ছেলেটি চিঠিটা আমায়় দিল। আমি চিঠিটা হাতে নেওয়ার পর পড়লাম , তাতে লেখা আছে - তুমি তার জীবন থেকে সরে যাও, নাহলে তোমার কপালে দুর্গতি আছে... ইতি তোমার দ্বিষৎ ।।
ছেলেটি আবার বলে উঠলো - আপনি আমায় বাঁচাতে পারেন , দয়া করে আমাকে বাঁচান।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলা , আপনি কাকে সন্দেহ করছেন?
সে বলল “আমি বুঝতে পারছি না এটা কার কাজ। কিন্তু একজনের আমার উপর রাগ আছে ।”
আমি বললাম “একটু খুলে সবটা বলুন , যাতে আমি সমস্যার সমাধান করতে পারি।”
সে ঘটনাটা আমায়় খুলে বলতে থাকলো। সে বলল.....
সে বিগত এক বছর ধরে একটা মেয়েকে ভালবাসে । সেই মেয়েটার আগে একটা প্রেমিক ছিল। সেই ছেলেটা আমার বন্ধু। সে জানতো না যে আগে ওদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিল।
আমি একটি ছোট গোল্ড ফ্লেক সিগারেট ধরালাম এবং জিজ্ঞেস করলাম - তা আপনার ওই বন্ধুর নাম কি? আর আপনার প্রেমিকার নাম কি?
সে বলল তার বন্ধুর নাম কৌশিক সরকার, আর তার প্রেমিকার নাম পূজা দাস।
আমি তাকে বললাম, ঠিক আছে আপনার কাছ থেকে আমি শুনলাম। আমার দ্বারা আপনাকে যতটা সাহায্য করা যেতে পারে তা আমি সবটাই করব।
ছেলেটি চলে গেল।
তারপরের দিন আমি কৌশিক সরকার এর ঠিকানা জোগাড় করে তার বাড়ি গেলাম।
কৌশিক সরকার দরজা খুললো । সে জিজ্ঞেস করল আপনি কাকে খুজছেন?
দরজা খোলা মাত্র আমি দেখলাম কৌশিক বাবু গোছা গুুছি করছেন, কোথাও যাবার জন্য। আমি উত্তর দিলাম- নমস্কার আমি ইন্দ্রজিৎ মন্ডল , বেসরকারি ডিটেকটিভ ।
আমাকে ভেতরে ডাকলেন এবং সে বলে উঠলো , তা হঠাৎ আমার বাড়িতে।
আমি বললাম, আমাকে অয়ন মুখার্জি আপনার নাম বললেন ।
ছেলেটি রেগে বলে উঠলো - হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ওকে চিনি ।
আমি বললাম, অয়ন মুখার্জি গতকাল আমার কাছে এসেছিলেন , তা উনার জীবন খুব সংশয়। তাকে চিঠির মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
কৌশিক সরকার বলে উঠলো , “তাতে আমি কি করতে পারি? তাছাড়া আপনি আমাকে এই কথা বলছেন কেন? আমি তো নিশ্চয়ই চিঠি দিয়ে হুুমকি দিইনি।”
আমি বুঝতে পারলাম কৌশিক সরকার, অয়ন মুখার্জির উপর রেগে আছেন। আমি তাকে ঠান্ডা মাথায় বলি, সে আপনাকে দোষ দিচ্ছে না। উনি আমার কাছে সাহায্য চেয়েছেন। উনি বললেন যে পূজা দাস নামক মেয়েটি হলো প্রেমিকা । আর তার আগে পূজা দাস এর সাথে আপনার ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। তা যদি আপনি বিষয়টা খুলে বলেন তাহলে আমার খুব ভালো হয় তাকে সাহায্য করতে সুবিধা হবে।
কৌশিক সরকার মদ নিয়ে এলেন, এবং আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি পান করব কিনা।
আমি বললাম - মাফ করবেন আমি ঐসব খাই না।
কৌশিক বাবু এক চুমুক দেওয়ার পর বলতে শুরু করলেন।
কৌশিক বাবুু তখন কলেজে পড়েন। তখন পূজা দাস নামের একটি মেয়েকে তার খুব ভালো লাগতো। ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক হয়। তাাদের সম্পর্ক দু'বছর ভালোই চলে। বলা যেতে পারে তারা প্রায়ই ঘুরতে যেতো। তারা বেশ মজাতেই দিন কাটাচ্ছিলেন। ২৮শে জানুয়ারী কৌশিক বাবুর জন্মদিন ছিল। সেই দিন তার বাড়িতে তার বন্ধুদের ও তার প্রেমিকাকে নেমন্তন্ন করেছিলেন। যথাযথ সময়মতো সকলেই এসেছিল। কৌশিক বাবু কাছের বন্ধু অয়ন মুখার্জির সাথে তার প্রেমিকার পরিচয় করিয়ে দেয়। কিছুদিন পর থেকে দেখা যায় কৌশিক বাবুর প্রেমিকা আগের মত কৌশিক বাবুকে ঠিকমতো সময় দেয় না। আবার অন্যদিকে কৌশিক বাবুর কাছের বন্ধু তার সাথে ঝামেলা করে কথা বন্ধ করে দেয়। এতে কৌশিক বাবু সন্দেহ হয়। একদিন কৌশিক বাবু চোখে পড়ে যে তার কাছের বন্ধু ও তার প্রেমিকা একসাথে ঘুরতে বেরিয়েছে। তা কৌশিক বাবু যখন পরে তার প্রেমিকা কেই ঘটনাটা বলে তখন তার প্রেমিকা রেগে গিয়ে বলে তার সাথে সে সম্পর্ক রাখতে পারবে না। তারপর থেকে কৌশিক বাবু তাদের প্রতি খুবই রেগে , যে তিনি সুযোগ পেলে অয়ন মুখার্জি কে খুন করতে পারে এবং তারপর থেকে সে প্রতিদিন মদ্যপান করেন। কৌশিক বাবু তারপর থেকে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখে নি। আর সেই সময়ে সে শিক্ষক কাজে যুক্ত হয়েছিলেন তাই ব্যস্ত বলে এর বেশি কিছু জানেন না তাদের অবস্থা।
শেষে আমি ধন্যবাদ জানিয়ে ওখান থেকে উঠে চলে এলাম।
কৌশিক বাবুুর বাড়ি যাবার কিছুদিন পর আমি পূজা দাস এর বাড়ির খোঁজ করলাম এবং তার বাড়ি গিয়ে পৌঁছালাম।
দরজায় গিয়ে নক করলাম। পূজা দাস নিজে দরজা খুললেন। এবং জিজ্ঞেস করলেন আপনি কে?
আমি উত্তর দিলাম - “নমস্কার আমি ইন্দ্রজিৎ মন্ডল , বেসরকারি ডিটেকটিভ।”
“তা কি ব্যাপার আমার কাছে আসা?”-পূজা দাস বললেন।
পূজা দাস কে আমি বললাম যে অয়ন মুখার্জির জীবন এখন খুব বিপদে আমি নিশ্চয়ই জানেন।
পূজা দাস বললেন- “হ্যাঁ ! আমি জানি এটা কৌশিক সরকার এইসব করছেন।” পূজা দাস বললেন- কৌশিক সরকার ও অয়ন মুখার্জি তারা দুজন আগে খুুব ভালো বন্ধু ছিলেন। তাদের মধ্যে কোন গোপন শত্রুতা আছে কিনা তা জানেন না। তাছাড়া এর বেশি আর কিছু তিনি জানেন না বলে পূজা দাস উঠে গেলেন।
তারপর সেখান থেকে আমি বাড়ি ফিরলাম। এবং সেদিন রাতে আমি একটি লোক ঠিক করলাম যে ওই তিনজনকে লক্ষ্য রাখবে।
তিন দিনের মাথায় শনিবার সকালে আমি খবরের কাগজ পড়তে পড়তে দেখলাম ব্যবসাদার অয়ন মুখার্জি গতকাল রাতে মদ্যপান করে ছাদ থেকে পড়়ে মারা গেছেন। এই দেখে আমি তো চমকে উঠলাম। সেইদিন রাতেই যে গুপ্তচর ঠিক করেছিলাম সে এলেন এবং বললেন যে কৌশিক সরকার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন এবং প্রতিদিন রাতে তিনি মদ্যপান করে থাকেন আর অয়ন মুখার্জি তো মারাই গেছেন । আর পূজা দাস আরও একটি নতুন প্রেমিক এর সাথে প্রতিদিন রাতে ঘুরতে যান এবং গতকাল রাতে পূজা দাস অয়ন বাবু বাড়ি গিয়েছিলেন আর সেখানে তাদের ভালোবাসার কথা হচ্ছিল। তিনি আরো বলেন, দুদিন আগে পূজা দাস সেইদিন রাতে অয়ন মুখার্জির বাড়ি গিয়েছিলেন । সেখানে তারা অনেকক্ষণ গল্প করছিলেন। এবং পূজা দাস অয়ন মুখার্জি কে ওই চিঠিতে ভয় পেতে বারণ করেছিলেন।
অয়ন মুখার্জির মৃত্যুর পরের দিন আমি অয়ন মুখার্জির বাড়ি যায়। এবং সেখানে গিয়ে দেখি বাড়ির সকলে খুব কান্নাকাটি করছে তার সাথে তার প্রেমিকা কান্নাকাটি করছে। সেখানে শুধু কৌশিক সরকার আসেনি।
কিছুদিন পর একটা কারণের জন্য আমার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তারপরই আমি পূজা দাস মেয়েটির বাড়ি যায়। সেখানে কৌশিক সরকার ও অয়ন মুখার্জির পরিবারের সদস্যকে পূজা দাস এর বাড়িতে ডাকেন। সময়মতো তারা সকলেই সেইদিন বিকালে জমাটবদ্ধ হন।
আমি যখনই পূজা দাস কে বললাম অয়ন মুখার্জির খুন টা সে করেছে , পূজা দাস কিছুতেই কথাটা স্বীকার করলেন না। বরং পূজা দাস বলেন সে তার প্রেমিককে কেন খুুন করবে? এই কথা শুনে সেখানে থাকা সকলেই চমকে যায় এবং সকলেই কৌশিক সরকার কে দোষারোপ করেন।
কৌশিক সরকার বারবার বলে ওঠেন সে অয়ন মুখার্জি কে খুুন করেনি।
তখন আমি সবাইকার সামনে সমস্যার সমাধান করতে পুরো গল্পটা খুলে বলি।
কৌশিক সরকার ও পূজা দাস দু'বছর ধরে সম্পর্কে ছিলেন। তারপর হঠাৎ অয়ন মুখার্জির সাথে পূজা দাস এর সম্পর্কে সৃষ্টি হয়। কারণটা হলো পূজা দাস আসলে কাউকে ভালবাসেননি। তিনি সকলকে টাকার জন্য ব্যবহার করেছেন। প্রথমে কৌশিক সরকার যখন তাকে আর ঘুরতে নিয়ে যেতেন না ও তার হাত খরচ দিতেন না তখন তিনি অয়ন মুখার্জির সাথে সম্পর্কে জান। এবং অয়ন মুখার্জীর সাথে সম্পর্কে থাকাকালীন পূজা দাস আবার একটি অন্য ছেলের সাথে সম্পর্কে যেতে চান এবং সেটা অয়ন মুখার্জির চোখে পড়ে যায়। পূজা দাস সেই সম্পর্কটা কে অয়ন মুখার্জির কাছে বন্ধু বলে প্রকাশ করেন।
পরে পূজা দেবী বুঝতে পারেন যে অয়ন বাবু যদি বেঁচে থাকেন তাহলে পূজা দেবী তার এই অভ্যাসটা চালিয়ে যেতে পারবেন না তাই পূজা দেবী অয়ন বাবুকে চিঠির মাধ্যমে হুমকি দিয়ে সম্পর্ক থেকে সরে যেতে বলেন। আর তিনি এই কাজটা করেছিলেন যাতে সকল এটাই ভাবে যে এ ঘটনাটা কৌশিক বাবু করছেন। এই সমস্ত ঘটনাটা অয়ন বাবু জানতে পেরে যায়। তাই পূজা দেবী শুক্রবার রাতে তার নতুন প্রেমিকের সাথে ঘুরতে গেছিলেন এবং ফিরে এসেছিলেন অয়ন মুখার্জির বাড়িতে। এবং সেইদিন রাতে অয়ন বাবুকে ভালোবাসার অভিনয় করে জোরজবস্তি মদ্যপান করান এবং ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দেন, যাতে সকলেই মনে করেন , কৌশিক বাবুু অয়ন বাবুকে ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দিয়েছেন অথবা অয়ন বাবু নিজে ছাদ থেকে পড়ে গেছেন। এরফলে পূজা দেবী নিজেকে নিরাপদে রাখতে চেয়ে ছিলেন ।
আমি পূজা দেবীকে জিজ্ঞেস করলাম-“তাইতো পূজা দেবী?”
সবশেষে পূজা দেবী সকলের সামনে নিজের দোষ স্বীকার করলেন। এবং পূজা দেবীকে সকলে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন। এর ফলে পূজা দাস এর জীবনে একটি খুনের দাগ লেগে গেল। যেটা আর কোনদিনও মুছার নয়।
আমরা তখন ইন্দ্রজিৎ দা কে বললাম - “বা বা !তুমি এত বড় সমস্যার সমাধান করেছো । তার জন্য সরকার তোমায় কোন উপহার দেয়নি ।”
ইন্দ্রজিৎ দা বলল - “এটা আমার কাজ সত্যটা সকলের সামনে প্রকাশ করা। কোন পুরস্কারের জন্য আমি এটা করি নি ।”
সবশেষে আমরা নিজেদের বাড়ি ফিরলাম এবং ইন্দ্রজিৎ দা একটি ছোট গোল্ড ফ্লেক্ সিগারেট ধরিয়ে বাড়ি চলে গেলেন।
মরণরে তুঁহু মম শ্যাম সমান :-
বেদশ্রুতি মুখার্জী
ফোন বেজে উঠতেই তীব্র ঝগড়া শুরু হলো দুই বান্ধবীর। শুধুই দুই সখী নয়, তারা কলিগ, হরিহর আত্মাও। স্কুলে পাশাপাশি টিফিন ভাগাভাগি করে খাওয়া, টিচার হয়েও সেই শৈশবের মতোই। চোখের ইশারায় ই পড়া হয়ে যায় একে অপরের মনের চোরাপথ। রিনা আর রাই। রাই মানে রাইকিশোরী বাংলার, রিনা ভূগোলের। এক SSC তেই জয়েনিং, একসাথে সেই প্রথম থেকে স্টাফরুমের হালহকিকৎ, ইনার পলিটিক্স বোঝা থেকে শুরু করে ডিআই অফিস দৌড়োদৌড়ি অ্যাপ্রুভাল- কনফারমেশনের জন্য থেকে শুরু করে কনফারমেশনের পর একসাথে রাইয়ের গাড়ি করে লংড্রাইভে গিয়ে কনফার্ম হবার চকলেট কেক মাখামাখি করে ট্রিট থেকে শুরু করে রিনার ইন্টার রিলিজিওন ম্যারেজে যখন বন্যার জলের মতোই মিডিয়া নিয়ে ডেপুটেশনে আছড়ে পড়ল গ্রামবাসী, কাঁদতে কাঁদতে রিনা ছেড়েই হয়তোবা দিতো চাকরিটাও, সেদিন ব্রাহ্মণ কন্যা রাইই অন্তর্মুখী স্বভাবের বন্ধ দরজার আগল ভেঙে ফেটে পড়েছিল স্টাফরুমে- "শট আপ্, চাকরির শর্ত কোথাও ছিল না বরের জাত, ম্যাডাম কি পরাচ্ছেন দেখার দায়িত্ব আপনাদের, সেখানে ত্রুটি হলে স্বাগত হাজার বার, কিন্তু ব্যক্তিপরিসরে নাক গলাবেন না, মানহানিতে যেতে হতে পারে আপনাদের। আর আমি ব্রাহ্মণ তা বলে কি মুসলিম ছাত্রীদের সমানতালে আদর করে পড়াই না??? তবে এই ম্যাডামের বরের জাত নিয়ে কথা কেন, ভূগোল পড়াবেন উনি, ধর্ম নয়, থামান মধ্যযুগীয় বর্বরতা"... চুপ হয়ে গেছিল জনস্রোত, এভাবে এত লোকের সামনে গলা চড়ায়নি কখনো রাই, কাঁপছিল সে নিজেও তবুও আপ্রাণ সাপোর্ট করে গেছে বান্ধবীকে, আসলে এভাবে আগে কখনো কথা বলেনি সে, বরাবরই মুখচোরা, চেনা স্রোতের বিপরীতে হাঁটা কমপ্লেক্সে ভোগা মেয়ে সে। বাড়িতে কথা বলতে গেলে ব্যক্তিত্বময়ী বিখ্যাত মা থামিয়ে দেয় বরাবরই-" চুপ করো ছোটো ছোটোর মতো থাকো"... এই ছোটো হওয়া থেকে সে আর বড়ো হলোনা কখনোই মননে চিন্তনে। ইউনিভার্সিটি তে বাইরে গিয়েও ছিল মাতৃআজ্ঞা-"প্রেম কোরোনা যেন, কথা দাও"। কথা দিয়েছিল বলেই শিবমন্দিরের প্রেমঘন কদম গাছের তলায় একা একা ঝালমুড়ি খেয়ে গেছে দুটো বছর আর আশেপাশের ছেলেমেয়েদের পরস্পরের কাঁধে মাথা রেখে বসে থাকতে দেখেছে, ভেবেছে ওরা এত কিইবা গল্প করে, কখনো বুড়ো বটগাছ গুলোর আড়ালে আড়চোখে দেখেছে ইমরান হাসমি মার্কা কিসিং স্মুচিংও, চোখ নামিয়েছে দ্রত নইলে অস্বস্তি টা নিজেরই হবে, রাত্তিরে পড়াটরা মাথায় উঠবে। আর তখনই মাথা নামিয়ে ছোলা ছিটিয়ে দিয়েছে খালের মাছগুলোকে। ওরাও ওর মতোই একা। শিবমন্দিরের প্রতিটি গাছ কথা বলে, গল্প বলে নতুন নতুন, প্রতি বছরের নতুন শাড়ির ভাঁজের মতোই নতুন প্রেমের গল্প, অধিকাংশই ইউনিভার্সিটির সাথে সাথেই ইতি টানে, টেন পার্সেন্ট বিয়ে অবধি গড়ায়, তাও বহুবছর পর, চাকরিবাকরি পেলে, আর ওয়ান পার্সেন্ট ওর মত লোনলি আনফরচুনেট সিঙ্গেল। চাইলেই করতে পারত মিনিমাম হাফ ডজন প্রেম, অফার আসত প্রায়শই। দেখতে শুনতে সে খুব একটা মন্দ নয়, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা, হাইট পাঁচ ফুট দুই, ছিপছিপে কার্ভি ফিগার, মায়াভরা ঝকঝকে চশমাঘেরা চোখের চাহনি, পড়াশোনায় সবাই বলে বেশ ভালো, মেধাবী সিনসিয়ার, ক্লাসে রোজ পড়া পারা একবাক্যে নজরকাড়া মেয়ে, টিচারদের সবার ফেভারিট, কিন্তু বাধ সাধলো ঐযে মাকে দেওয়া প্রতিজ্ঞা টা। তাই রানা ডাগ্গুবাটির মতো দেখতে সৈকতও যেদিন অফার দিয়েছিল মিউজিয়ামের মৃত মমির সামনে, তখনো চোখটা নামিয়ে নাইই করে দিয়েছিল সে, রাতে চোখের কোণটা চিকচিক করছিল, রাতের সঙ্গী বলতে ছিল তারার পাল আর শিলিগুড়ি এফ এম এর জনপ্রিয় আরজে আকাশের কণ্ঠ। এভাবেই অপ্রেমে কেটে গেছে এত বসন্ত, আসলে বসন্ত ঠিক নয়, শীতঘুম।
তাই সেই রাই যখন রিনার জন্য এতটা গর্জে উঠলো সবচেয়ে বেশি চমকেছিল সে নিজেই, নিজের স্পর্ধাকে, নিজের কণ্ঠকে নিজের ভেতরেরই কেউ যেন ব্যঙ্গের হাসিতে ভরিয়ে দিচ্ছিল। সেদিন থেকে রিনা ওর বান্ধবী শুধু নয়, ভক্ত হয়ে ওঠে। নিজের ফ্যান পাওয়াটাও একটা আত্মপ্রতিষ্ঠার আত্মপ্রত্যয়ের জায়গা, তাই এনজয় করছিল এতকাল রিনা আর তার বন্ধুত্ব। বাধ সাধলো আজকের ফোন কলটা।
যদিও কিছুদিন থেকেই রিনার অধিকারবোধের দখলদারীটা দ্রব্যমূল্যের মতোই পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল, আসলে ঘটনা আর কিছুই নয় রাই এতদিনে প্রেমে পড়েছে, ছেলেটার সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ, বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব আর অনেক দূরের। তাই রাইয়ের যতই তাকে ভালো লাগছিল, যতই চুম্বকীয় আকর্ষণে নর্থপোল সাউথ পোলের দিকে ছুটছিল, ততই রিনা রাশ টেনে ধরছিল- "এত ভালো হতে পারেনা কেউ, নিশ্চয়ই ডালমে কুছ কালা হ্যায়।" ব্যস তাহলে আর কি, হয়ে যাও রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, খোঁড়ো অতীত ইতিহাস। সবটুকু ই কিন্তু রাইয়ের অগোচরেই, তবে খুঁড়তে খুঁড়তে পাওয়া একটার পর একটা স্কৃনশটের পাথর এনে চাপা দিচ্ছিল রাইয়েরই বুকে। গোটা পৃথিবীটা একদিন বোধহয় স্কৃনশটই হয়ে যাবে, মা শিশুর মুখে স্তন ঠাসার আগেও ছবি তুলে রাখবে আর পাঠাবে সেই সেলফি বা স্কৃনশট অফিসে বসা স্বামীর সেলফোনে, বাবার মৃতদেহ এনে উঠোনে রেখেও ছেলে মাকে ডেথ সার্টিফিকেট স্কৃনশট করে পাঠাবে, সিঁদুর পরাতে গিয়েও হয়তোবা স্কৃনশট লাগবে। এমনকি ফুলশয্যায় হয়তোবা একদিন ফুলের বদলে স্কৃনশটের প্রিন্ট আউট ছড়িয়ে রাখা হবে। রাই বলেছিল কিন্তু রিনাকে-" আমার করুণাময়কে ভীষণ বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি, আর তোর স্কৃনশট স্কৃনশট খেলা বন্ধ কর। আমার ময় আমার জীবন, ওকে ছাড়া বাঁচবোই না"... আর সেদিন ফোনে চিৎকার করে রিনা তাকে তৃতীয় ব্যক্তি বলে, বলে-" হারামজাদি তুই অন্য একটা মেয়ের ঘর ভাঙছিস জানিস, আরে করুণাময়ের আগের গার্লফ্রেন্ড নাকি প্রেগনেন্ট, তিন মাসের, তুই কি শেষে প্রস্টিটিউট হবি আজীবন ভালো থাকার পর।ওকেও যেমন ছেড়েছে তোর সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগার পর, তুই যেমন রিপ্লেস করলি ওকে, তোকেও করবেই কেউ অচিরেই।" নিতে পারেনি রাই এই ফোনকলটা, পা ধরে বলেছিল এসব বন্ধ করতে, কিন্তু তবুও বন্ধ তো হলোইনা, বরংচ এমন জায়গায় চলে গেল ঘটনাটা যেখান থেকে তার মনেও রিনার বলা রোজকার বিষবাষ্প এসে অ্যাসিড বৃষ্টি নামালো, সেও বলে ফেলল তার করুণাময়কে কিছু তীব্র কটুকথা। বাক সংযমী এক আকাশ সমান ভালোবাসার মানুষটি কিন্তু কিচ্ছু উত্তর দিলোনা, এমন কিচ্ছু বললোনা যাতে তার কষ্ট অন্তর্দ্বন্দ্ব আরো বাড়ে, শুধু ডিপিটা সদ্যবিধবার সিঁথির মত সাদা হয়ে গেল। অনন্ত সূর্য হতে পারলোনা করুণাময়, ক্ষমা করতে পারলোনা।
কত কত ভালো মুহুর্ত কাটিয়েছে তারা এই লকডাউনের দুইমাস। যখন গোটা পৃথিবী এক প্রবল ভাইরাসের কবলে বিধ্বস্ত, তার কিছু দিন আগেই পরিচয় তাদের, লকডাউনে কাছাকাছি আসা, দিনরাত কথা বলা ফোনে আর একদিন ভালোবেসে ফেলা। জীবন এই প্রথমবার রাই কাউকে ভালো বেসে ফেলেছিল, আসলে করুণাময়ের পার্সোনালিটি ই এমন, এজন্যই সে সবার হার্টথ্রব, ফর্সা ছ ফুটের দুর্দান্ত হিরোটাইপ চেহারা, ঝকঝকে জ্বলন্ত সূর্যের মত দুইচোখের মালিক, তুখোড় বাগ্মী, নামকরা গায়ক, হাসলে গালের টোলটা দাড়িতে ঢাকা পড়লে মনে হয় যেন মেঘে আকাশ ঢাকা পড়লো। সিগারেট ধরানোর স্টাইলে আজ থাকলে বোধহয় মহানায়কও আড়চোখে দেখতেন। রাতের পর রাত দিনের পর দিন তারা কথা বলে গেছে, স্বপ্নের জাল বুনে গেছে, রাই জানতোই না রিনা ইঁদুরের মত সেই জাল ছিঁড়তে উঠেপড়ে লেগেছে। বলেছিল তবে করুণাময় - "বিশ্বাস করলে এতটাই করো, যেন পৃথিবীতে কেউ তোমার বিশ্বাস ভাঙতে না পারে, আর মেয়েরা অন্যের স্বামীকে এতবড় দেখতে পারেনা, যেখান থেকে নিজের মানুষটাকে ছোট লাগে।" রাই কিন্তু অবিশ্বাস করেনি, প্রবলভাবে ই বিশ্বাস করেছিল তাকে, ভীষণভাবে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিল তার জীবনের শেষ অবলম্বন সেলিব্রেটি করুণাময়কে। নিজের দুঃখবিলাসের পদাবলী পেরিয়ে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল করুণাময়ের অতীতটাকে, কিন্তু এমন খেলা খেলল সময়, পারলোনা। করুণাময়ের অতীতের অন্ধকার তাকে অজগরের মত করে গিলে গিলে খেয়ে ফেললো। একটা ছোট্ট অন্তর্দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছিল মনের অন্তরালেই, আর কোথায় যেন মনে হচ্ছিল সে তাহলে কী হবে সমাজের চোখে, করুণার স্ত্রী না বিকল্প তুলে আনা কোনো নুড়ি পাথর। ঐ মেয়েটির বাচ্চা কাঁটা নিয়ে কীভাবে আজীবন ঘর করবে। তবুও সবকিছু এড়োনোর আপ্রাণ চেষ্টা করছিল, চোখের জল লুকিয়ে প্রাণপণ হেসে হেসে খুশি রাখার চেষ্টা করছিল করুণাময়কে। এই লকডাউনের দুই মাসে কত শত রাত ভোর হয়ে গেছে কখন টেরই পায়নি, করুণাময়ের প্রগাঢ় জ্ঞান, বাকচাতুর্যে এত বছরের অনন্ত রাতগুলো যেন খুব ছোট হয়ে আসছিল হঠাৎই। স্বপ্নের জাল বুনছিল আসন্ন সাদা ধুতি আর লাল রঙা বেনারসি। করুণাময় একদিন বলল-" রাই, তুমি আজীবন আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমোবে, আমি তোমাকে গল্প শোনাবো এভাবেই, এখন যেমনটি ফোনে শোনাই।" রাই দেখতে পাচ্ছিল একটা খোলা বুক, করুণাময়ের অপূর্ব সুন্দর মুখটা, ওর দাড়িটা নিজের গালে অনুভব করছিল আর ততই ওর নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছিল, শুধু মুখে জেদ করতো-" অ্যাই ময়, ঘুম পাড়িয়ে দাও"। করুণাময়ও পরম আদরে আদর্শ হবু স্বামীর সব কর্তব্য ই পালন করছিল ওর এত বিজি শিডিউলের মধ্যেও, রেকর্ডিং স্টুডিও তো এখন বন্ধ, লকডাউন তাই দিনের পর দিন রাতের পর রাত ওর সব কথা সব জেদ অক্ষরে অক্ষরে পালন করছিল, আর ততই রাই ফিরে যাচ্ছিল অতীতে, ঠিক যেভাবে ও ওর মৃতা মার কাছে জেদ করত, সেভাবে ই আদুরে বিড়ালের মতোই করুণাময়ের কাছে জেদ করত, ঘুম পাড়ানোর আব্দার, গল্প শোনার জেদ, সারা রাত কথা বলার জেদ, দুজনেই বিভোর হয়ে যাচ্ছিল দুজনের প্রেমে, ওর রক্তে মিশে যাচ্ছিল করুণাময়, সৌজন্য অবশ্যই লকডাউন এর এই বন্দীসময়, নইলে সেলিব্রেটি করুণাময়ের এত সময় কোথায় আর তারও তো স্কুল থাকে, সারা রাত কথা বললে যেতে পারা যায় নাকি পরদিন স্কুলে। লকডাউনের বাজারে তারা করোনা ভাইরাসকে আখ্যা দিয়েছিল- "কিউট ভাইরাস", যার সৌজন্যেই তাদের কাছাকাছি আসা আর এত এত কথা বলার সুযোগ পাওয়া। বিয়ে করার কথা ছিল লকডাউন মিটলেই, কিন্তু বাধ সাধলো করুণাময়ের অতীত রহস্য খোঁড়ায় তৎপর রিনা। দশচক্রে ভগবানও ভূত হয়, করুণাময়ের একযুগের গার্লফ্রেন্ড যখন রাইয়েরই একটার পর একটা খুঁটিনাটি বলে বলতে লাগলো করুণাময়ের জীবনের বীভৎস অন্ধকার এর ইতিহাস, তখন তলিয়ে যেতে লাগলো রাই, বারবারই মনে হতে লাগলো এ আমার এত কথা জানলো কিভাবে যদি সত্যিই ময় না বলে থাকে, আর তাহলে এই মেয়েটা কি সত্যিই বলছে, ময় কি ওদের দুজনকেই নাচাচ্ছে, দুজনের সঙ্গেই কথা বলছে রোজ আর তাহলে মেয়েটা কি সত্যিই বলছে যে ময় বলেছে সে তাকেও বিয়ে করবে, কারণ এতবছর ভোলা যায় না, দুইবৌ নিয়ে বাস করবে, ময়ের সন্তানের মা হতে চলেছে এটাও কি তবে সত্যিই বলছে মেয়েটা। আর তাতেই চিৎকার করে করুণাময়ের ওপর রাগে ফেটে পড়লো রাই একদিন-
" কি খেলা খেলছ তোমার গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে আমার সাথে, দুটো প্রেম চালাচ্ছ তাইনা, দুই বিয়ে করবা??" ব্যস আর উত্তর টুকুও দিলোনা করুণাময়, চলে গেল চিরতরে ছি ছিক্কার করতে করতে, কানে বাজে আজো সেই কঠোর ঘৃণার স্বর। সে ভেবেছিল করুণাময় অনন্ত শক্তির আধার ঐ সূর্যটার মতোই চিরকালীন, তার মায়ের মতোই চিরপ্রশ্রয় চির আদরের আধার, তার ময় তাকে সেরকম ই বলেছিল, "আমি ই তোমার বাবা, আমিই তোমার মা, আমিই তোমার বর, তোমার সবকিছুই আমি, তোমার আর কাউকে লাগবে না, মরে না গেলে আমি কখনোই তোমাকে ছেড়ে যাবোনা"... আরো বলেছিল, "তোমার মধ্যে আমি অসীম আলো আর অনন্ত শান্তি খুঁজে পাই জানো, যেন ঠিক আমার মাকে দেখতে পাই, তোমার মত এত ভালো মেয়ে আমি কখনো দেখিনি গো"... কিন্তু তবুও সবকিছু ভুলে চলে গেল , সূর্যটা জ্বলার আগেই নিভে গেল, অনন্ত হতে পারলোনা, শুধুই আবিষ্কারক আনন্দের বন্দরের নাবিক প্রেমিক হয়েই থাকলো, সুখদুঃখের চিরসাথী হয়ে একটা ফোন কল ভুলে ক্ষমা করে থাকতে পারলোনা, এত ফোনকলের সুখস্মৃতি তুচ্ছ হয়ে গেল কেবলমাত্র একটা প্রশ্নেই, সকলের সাচঝুটের চক্রান্তে হারিয়ে ফেলল বোকা রাই তার একমাত্র ভালোবাসাটাকে।
নিঃস্ব রাই এখন হসপিটালে, করোনার আবহেও সে গত তিন চারদিন জলস্পর্শ না করায় আজ তাকে অ্যাডমিট করা হয়েছে এখানে, সেলাইন চলছে, ডক্টর দেখে যা তা বলে গেছেন। সত্যিই তো ওনাদের ওপর দিয়ে যা ঝড় চলছে এখন, বাড়িতে যাওয়াও হচ্ছেনা দিনের পর দিন, রাতদিন ডিউটি, চারিদিকে করোনা আতঙ্কে লড়ছেন তারা আপ্রাণ আর তার মধ্যে যদি এসব ইচ্ছাকৃত পেশেন্ট আসে রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এদিকে রাই ভাবছে কখন আবার একটু মাথা তুলতে পেরে বাড়ি যাবে, এইবার হসপিটালে নয়, মর্গে আসার জন্য... দূরে কোনো বাড়ি থেকে যেন গোটা বিশ্বে বিষাদের সুর ছড়িয়ে কেউ গাইছে- "মরণরে তুঁহু মম শ্যাম সমান"...
-----------------------------------------
বেদশ্রুতি মুখার্জী
ফোন বেজে উঠতেই তীব্র ঝগড়া শুরু হলো দুই বান্ধবীর। শুধুই দুই সখী নয়, তারা কলিগ, হরিহর আত্মাও। স্কুলে পাশাপাশি টিফিন ভাগাভাগি করে খাওয়া, টিচার হয়েও সেই শৈশবের মতোই। চোখের ইশারায় ই পড়া হয়ে যায় একে অপরের মনের চোরাপথ। রিনা আর রাই। রাই মানে রাইকিশোরী বাংলার, রিনা ভূগোলের। এক SSC তেই জয়েনিং, একসাথে সেই প্রথম থেকে স্টাফরুমের হালহকিকৎ, ইনার পলিটিক্স বোঝা থেকে শুরু করে ডিআই অফিস দৌড়োদৌড়ি অ্যাপ্রুভাল- কনফারমেশনের জন্য থেকে শুরু করে কনফারমেশনের পর একসাথে রাইয়ের গাড়ি করে লংড্রাইভে গিয়ে কনফার্ম হবার চকলেট কেক মাখামাখি করে ট্রিট থেকে শুরু করে রিনার ইন্টার রিলিজিওন ম্যারেজে যখন বন্যার জলের মতোই মিডিয়া নিয়ে ডেপুটেশনে আছড়ে পড়ল গ্রামবাসী, কাঁদতে কাঁদতে রিনা ছেড়েই হয়তোবা দিতো চাকরিটাও, সেদিন ব্রাহ্মণ কন্যা রাইই অন্তর্মুখী স্বভাবের বন্ধ দরজার আগল ভেঙে ফেটে পড়েছিল স্টাফরুমে- "শট আপ্, চাকরির শর্ত কোথাও ছিল না বরের জাত, ম্যাডাম কি পরাচ্ছেন দেখার দায়িত্ব আপনাদের, সেখানে ত্রুটি হলে স্বাগত হাজার বার, কিন্তু ব্যক্তিপরিসরে নাক গলাবেন না, মানহানিতে যেতে হতে পারে আপনাদের। আর আমি ব্রাহ্মণ তা বলে কি মুসলিম ছাত্রীদের সমানতালে আদর করে পড়াই না??? তবে এই ম্যাডামের বরের জাত নিয়ে কথা কেন, ভূগোল পড়াবেন উনি, ধর্ম নয়, থামান মধ্যযুগীয় বর্বরতা"... চুপ হয়ে গেছিল জনস্রোত, এভাবে এত লোকের সামনে গলা চড়ায়নি কখনো রাই, কাঁপছিল সে নিজেও তবুও আপ্রাণ সাপোর্ট করে গেছে বান্ধবীকে, আসলে এভাবে আগে কখনো কথা বলেনি সে, বরাবরই মুখচোরা, চেনা স্রোতের বিপরীতে হাঁটা কমপ্লেক্সে ভোগা মেয়ে সে। বাড়িতে কথা বলতে গেলে ব্যক্তিত্বময়ী বিখ্যাত মা থামিয়ে দেয় বরাবরই-" চুপ করো ছোটো ছোটোর মতো থাকো"... এই ছোটো হওয়া থেকে সে আর বড়ো হলোনা কখনোই মননে চিন্তনে। ইউনিভার্সিটি তে বাইরে গিয়েও ছিল মাতৃআজ্ঞা-"প্রেম কোরোনা যেন, কথা দাও"। কথা দিয়েছিল বলেই শিবমন্দিরের প্রেমঘন কদম গাছের তলায় একা একা ঝালমুড়ি খেয়ে গেছে দুটো বছর আর আশেপাশের ছেলেমেয়েদের পরস্পরের কাঁধে মাথা রেখে বসে থাকতে দেখেছে, ভেবেছে ওরা এত কিইবা গল্প করে, কখনো বুড়ো বটগাছ গুলোর আড়ালে আড়চোখে দেখেছে ইমরান হাসমি মার্কা কিসিং স্মুচিংও, চোখ নামিয়েছে দ্রত নইলে অস্বস্তি টা নিজেরই হবে, রাত্তিরে পড়াটরা মাথায় উঠবে। আর তখনই মাথা নামিয়ে ছোলা ছিটিয়ে দিয়েছে খালের মাছগুলোকে। ওরাও ওর মতোই একা। শিবমন্দিরের প্রতিটি গাছ কথা বলে, গল্প বলে নতুন নতুন, প্রতি বছরের নতুন শাড়ির ভাঁজের মতোই নতুন প্রেমের গল্প, অধিকাংশই ইউনিভার্সিটির সাথে সাথেই ইতি টানে, টেন পার্সেন্ট বিয়ে অবধি গড়ায়, তাও বহুবছর পর, চাকরিবাকরি পেলে, আর ওয়ান পার্সেন্ট ওর মত লোনলি আনফরচুনেট সিঙ্গেল। চাইলেই করতে পারত মিনিমাম হাফ ডজন প্রেম, অফার আসত প্রায়শই। দেখতে শুনতে সে খুব একটা মন্দ নয়, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা, হাইট পাঁচ ফুট দুই, ছিপছিপে কার্ভি ফিগার, মায়াভরা ঝকঝকে চশমাঘেরা চোখের চাহনি, পড়াশোনায় সবাই বলে বেশ ভালো, মেধাবী সিনসিয়ার, ক্লাসে রোজ পড়া পারা একবাক্যে নজরকাড়া মেয়ে, টিচারদের সবার ফেভারিট, কিন্তু বাধ সাধলো ঐযে মাকে দেওয়া প্রতিজ্ঞা টা। তাই রানা ডাগ্গুবাটির মতো দেখতে সৈকতও যেদিন অফার দিয়েছিল মিউজিয়ামের মৃত মমির সামনে, তখনো চোখটা নামিয়ে নাইই করে দিয়েছিল সে, রাতে চোখের কোণটা চিকচিক করছিল, রাতের সঙ্গী বলতে ছিল তারার পাল আর শিলিগুড়ি এফ এম এর জনপ্রিয় আরজে আকাশের কণ্ঠ। এভাবেই অপ্রেমে কেটে গেছে এত বসন্ত, আসলে বসন্ত ঠিক নয়, শীতঘুম।
তাই সেই রাই যখন রিনার জন্য এতটা গর্জে উঠলো সবচেয়ে বেশি চমকেছিল সে নিজেই, নিজের স্পর্ধাকে, নিজের কণ্ঠকে নিজের ভেতরেরই কেউ যেন ব্যঙ্গের হাসিতে ভরিয়ে দিচ্ছিল। সেদিন থেকে রিনা ওর বান্ধবী শুধু নয়, ভক্ত হয়ে ওঠে। নিজের ফ্যান পাওয়াটাও একটা আত্মপ্রতিষ্ঠার আত্মপ্রত্যয়ের জায়গা, তাই এনজয় করছিল এতকাল রিনা আর তার বন্ধুত্ব। বাধ সাধলো আজকের ফোন কলটা।
যদিও কিছুদিন থেকেই রিনার অধিকারবোধের দখলদারীটা দ্রব্যমূল্যের মতোই পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল, আসলে ঘটনা আর কিছুই নয় রাই এতদিনে প্রেমে পড়েছে, ছেলেটার সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ, বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব আর অনেক দূরের। তাই রাইয়ের যতই তাকে ভালো লাগছিল, যতই চুম্বকীয় আকর্ষণে নর্থপোল সাউথ পোলের দিকে ছুটছিল, ততই রিনা রাশ টেনে ধরছিল- "এত ভালো হতে পারেনা কেউ, নিশ্চয়ই ডালমে কুছ কালা হ্যায়।" ব্যস তাহলে আর কি, হয়ে যাও রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, খোঁড়ো অতীত ইতিহাস। সবটুকু ই কিন্তু রাইয়ের অগোচরেই, তবে খুঁড়তে খুঁড়তে পাওয়া একটার পর একটা স্কৃনশটের পাথর এনে চাপা দিচ্ছিল রাইয়েরই বুকে। গোটা পৃথিবীটা একদিন বোধহয় স্কৃনশটই হয়ে যাবে, মা শিশুর মুখে স্তন ঠাসার আগেও ছবি তুলে রাখবে আর পাঠাবে সেই সেলফি বা স্কৃনশট অফিসে বসা স্বামীর সেলফোনে, বাবার মৃতদেহ এনে উঠোনে রেখেও ছেলে মাকে ডেথ সার্টিফিকেট স্কৃনশট করে পাঠাবে, সিঁদুর পরাতে গিয়েও হয়তোবা স্কৃনশট লাগবে। এমনকি ফুলশয্যায় হয়তোবা একদিন ফুলের বদলে স্কৃনশটের প্রিন্ট আউট ছড়িয়ে রাখা হবে। রাই বলেছিল কিন্তু রিনাকে-" আমার করুণাময়কে ভীষণ বিশ্বাস করি, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি, আর তোর স্কৃনশট স্কৃনশট খেলা বন্ধ কর। আমার ময় আমার জীবন, ওকে ছাড়া বাঁচবোই না"... আর সেদিন ফোনে চিৎকার করে রিনা তাকে তৃতীয় ব্যক্তি বলে, বলে-" হারামজাদি তুই অন্য একটা মেয়ের ঘর ভাঙছিস জানিস, আরে করুণাময়ের আগের গার্লফ্রেন্ড নাকি প্রেগনেন্ট, তিন মাসের, তুই কি শেষে প্রস্টিটিউট হবি আজীবন ভালো থাকার পর।ওকেও যেমন ছেড়েছে তোর সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগার পর, তুই যেমন রিপ্লেস করলি ওকে, তোকেও করবেই কেউ অচিরেই।" নিতে পারেনি রাই এই ফোনকলটা, পা ধরে বলেছিল এসব বন্ধ করতে, কিন্তু তবুও বন্ধ তো হলোইনা, বরংচ এমন জায়গায় চলে গেল ঘটনাটা যেখান থেকে তার মনেও রিনার বলা রোজকার বিষবাষ্প এসে অ্যাসিড বৃষ্টি নামালো, সেও বলে ফেলল তার করুণাময়কে কিছু তীব্র কটুকথা। বাক সংযমী এক আকাশ সমান ভালোবাসার মানুষটি কিন্তু কিচ্ছু উত্তর দিলোনা, এমন কিচ্ছু বললোনা যাতে তার কষ্ট অন্তর্দ্বন্দ্ব আরো বাড়ে, শুধু ডিপিটা সদ্যবিধবার সিঁথির মত সাদা হয়ে গেল। অনন্ত সূর্য হতে পারলোনা করুণাময়, ক্ষমা করতে পারলোনা।
কত কত ভালো মুহুর্ত কাটিয়েছে তারা এই লকডাউনের দুইমাস। যখন গোটা পৃথিবী এক প্রবল ভাইরাসের কবলে বিধ্বস্ত, তার কিছু দিন আগেই পরিচয় তাদের, লকডাউনে কাছাকাছি আসা, দিনরাত কথা বলা ফোনে আর একদিন ভালোবেসে ফেলা। জীবন এই প্রথমবার রাই কাউকে ভালো বেসে ফেলেছিল, আসলে করুণাময়ের পার্সোনালিটি ই এমন, এজন্যই সে সবার হার্টথ্রব, ফর্সা ছ ফুটের দুর্দান্ত হিরোটাইপ চেহারা, ঝকঝকে জ্বলন্ত সূর্যের মত দুইচোখের মালিক, তুখোড় বাগ্মী, নামকরা গায়ক, হাসলে গালের টোলটা দাড়িতে ঢাকা পড়লে মনে হয় যেন মেঘে আকাশ ঢাকা পড়লো। সিগারেট ধরানোর স্টাইলে আজ থাকলে বোধহয় মহানায়কও আড়চোখে দেখতেন। রাতের পর রাত দিনের পর দিন তারা কথা বলে গেছে, স্বপ্নের জাল বুনে গেছে, রাই জানতোই না রিনা ইঁদুরের মত সেই জাল ছিঁড়তে উঠেপড়ে লেগেছে। বলেছিল তবে করুণাময় - "বিশ্বাস করলে এতটাই করো, যেন পৃথিবীতে কেউ তোমার বিশ্বাস ভাঙতে না পারে, আর মেয়েরা অন্যের স্বামীকে এতবড় দেখতে পারেনা, যেখান থেকে নিজের মানুষটাকে ছোট লাগে।" রাই কিন্তু অবিশ্বাস করেনি, প্রবলভাবে ই বিশ্বাস করেছিল তাকে, ভীষণভাবে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিল তার জীবনের শেষ অবলম্বন সেলিব্রেটি করুণাময়কে। নিজের দুঃখবিলাসের পদাবলী পেরিয়ে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল করুণাময়ের অতীতটাকে, কিন্তু এমন খেলা খেলল সময়, পারলোনা। করুণাময়ের অতীতের অন্ধকার তাকে অজগরের মত করে গিলে গিলে খেয়ে ফেললো। একটা ছোট্ট অন্তর্দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছিল মনের অন্তরালেই, আর কোথায় যেন মনে হচ্ছিল সে তাহলে কী হবে সমাজের চোখে, করুণার স্ত্রী না বিকল্প তুলে আনা কোনো নুড়ি পাথর। ঐ মেয়েটির বাচ্চা কাঁটা নিয়ে কীভাবে আজীবন ঘর করবে। তবুও সবকিছু এড়োনোর আপ্রাণ চেষ্টা করছিল, চোখের জল লুকিয়ে প্রাণপণ হেসে হেসে খুশি রাখার চেষ্টা করছিল করুণাময়কে। এই লকডাউনের দুই মাসে কত শত রাত ভোর হয়ে গেছে কখন টেরই পায়নি, করুণাময়ের প্রগাঢ় জ্ঞান, বাকচাতুর্যে এত বছরের অনন্ত রাতগুলো যেন খুব ছোট হয়ে আসছিল হঠাৎই। স্বপ্নের জাল বুনছিল আসন্ন সাদা ধুতি আর লাল রঙা বেনারসি। করুণাময় একদিন বলল-" রাই, তুমি আজীবন আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমোবে, আমি তোমাকে গল্প শোনাবো এভাবেই, এখন যেমনটি ফোনে শোনাই।" রাই দেখতে পাচ্ছিল একটা খোলা বুক, করুণাময়ের অপূর্ব সুন্দর মুখটা, ওর দাড়িটা নিজের গালে অনুভব করছিল আর ততই ওর নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছিল, শুধু মুখে জেদ করতো-" অ্যাই ময়, ঘুম পাড়িয়ে দাও"। করুণাময়ও পরম আদরে আদর্শ হবু স্বামীর সব কর্তব্য ই পালন করছিল ওর এত বিজি শিডিউলের মধ্যেও, রেকর্ডিং স্টুডিও তো এখন বন্ধ, লকডাউন তাই দিনের পর দিন রাতের পর রাত ওর সব কথা সব জেদ অক্ষরে অক্ষরে পালন করছিল, আর ততই রাই ফিরে যাচ্ছিল অতীতে, ঠিক যেভাবে ও ওর মৃতা মার কাছে জেদ করত, সেভাবে ই আদুরে বিড়ালের মতোই করুণাময়ের কাছে জেদ করত, ঘুম পাড়ানোর আব্দার, গল্প শোনার জেদ, সারা রাত কথা বলার জেদ, দুজনেই বিভোর হয়ে যাচ্ছিল দুজনের প্রেমে, ওর রক্তে মিশে যাচ্ছিল করুণাময়, সৌজন্য অবশ্যই লকডাউন এর এই বন্দীসময়, নইলে সেলিব্রেটি করুণাময়ের এত সময় কোথায় আর তারও তো স্কুল থাকে, সারা রাত কথা বললে যেতে পারা যায় নাকি পরদিন স্কুলে। লকডাউনের বাজারে তারা করোনা ভাইরাসকে আখ্যা দিয়েছিল- "কিউট ভাইরাস", যার সৌজন্যেই তাদের কাছাকাছি আসা আর এত এত কথা বলার সুযোগ পাওয়া। বিয়ে করার কথা ছিল লকডাউন মিটলেই, কিন্তু বাধ সাধলো করুণাময়ের অতীত রহস্য খোঁড়ায় তৎপর রিনা। দশচক্রে ভগবানও ভূত হয়, করুণাময়ের একযুগের গার্লফ্রেন্ড যখন রাইয়েরই একটার পর একটা খুঁটিনাটি বলে বলতে লাগলো করুণাময়ের জীবনের বীভৎস অন্ধকার এর ইতিহাস, তখন তলিয়ে যেতে লাগলো রাই, বারবারই মনে হতে লাগলো এ আমার এত কথা জানলো কিভাবে যদি সত্যিই ময় না বলে থাকে, আর তাহলে এই মেয়েটা কি সত্যিই বলছে, ময় কি ওদের দুজনকেই নাচাচ্ছে, দুজনের সঙ্গেই কথা বলছে রোজ আর তাহলে মেয়েটা কি সত্যিই বলছে যে ময় বলেছে সে তাকেও বিয়ে করবে, কারণ এতবছর ভোলা যায় না, দুইবৌ নিয়ে বাস করবে, ময়ের সন্তানের মা হতে চলেছে এটাও কি তবে সত্যিই বলছে মেয়েটা। আর তাতেই চিৎকার করে করুণাময়ের ওপর রাগে ফেটে পড়লো রাই একদিন-
" কি খেলা খেলছ তোমার গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে আমার সাথে, দুটো প্রেম চালাচ্ছ তাইনা, দুই বিয়ে করবা??" ব্যস আর উত্তর টুকুও দিলোনা করুণাময়, চলে গেল চিরতরে ছি ছিক্কার করতে করতে, কানে বাজে আজো সেই কঠোর ঘৃণার স্বর। সে ভেবেছিল করুণাময় অনন্ত শক্তির আধার ঐ সূর্যটার মতোই চিরকালীন, তার মায়ের মতোই চিরপ্রশ্রয় চির আদরের আধার, তার ময় তাকে সেরকম ই বলেছিল, "আমি ই তোমার বাবা, আমিই তোমার মা, আমিই তোমার বর, তোমার সবকিছুই আমি, তোমার আর কাউকে লাগবে না, মরে না গেলে আমি কখনোই তোমাকে ছেড়ে যাবোনা"... আরো বলেছিল, "তোমার মধ্যে আমি অসীম আলো আর অনন্ত শান্তি খুঁজে পাই জানো, যেন ঠিক আমার মাকে দেখতে পাই, তোমার মত এত ভালো মেয়ে আমি কখনো দেখিনি গো"... কিন্তু তবুও সবকিছু ভুলে চলে গেল , সূর্যটা জ্বলার আগেই নিভে গেল, অনন্ত হতে পারলোনা, শুধুই আবিষ্কারক আনন্দের বন্দরের নাবিক প্রেমিক হয়েই থাকলো, সুখদুঃখের চিরসাথী হয়ে একটা ফোন কল ভুলে ক্ষমা করে থাকতে পারলোনা, এত ফোনকলের সুখস্মৃতি তুচ্ছ হয়ে গেল কেবলমাত্র একটা প্রশ্নেই, সকলের সাচঝুটের চক্রান্তে হারিয়ে ফেলল বোকা রাই তার একমাত্র ভালোবাসাটাকে।
নিঃস্ব রাই এখন হসপিটালে, করোনার আবহেও সে গত তিন চারদিন জলস্পর্শ না করায় আজ তাকে অ্যাডমিট করা হয়েছে এখানে, সেলাইন চলছে, ডক্টর দেখে যা তা বলে গেছেন। সত্যিই তো ওনাদের ওপর দিয়ে যা ঝড় চলছে এখন, বাড়িতে যাওয়াও হচ্ছেনা দিনের পর দিন, রাতদিন ডিউটি, চারিদিকে করোনা আতঙ্কে লড়ছেন তারা আপ্রাণ আর তার মধ্যে যদি এসব ইচ্ছাকৃত পেশেন্ট আসে রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এদিকে রাই ভাবছে কখন আবার একটু মাথা তুলতে পেরে বাড়ি যাবে, এইবার হসপিটালে নয়, মর্গে আসার জন্য... দূরে কোনো বাড়ি থেকে যেন গোটা বিশ্বে বিষাদের সুর ছড়িয়ে কেউ গাইছে- "মরণরে তুঁহু মম শ্যাম সমান"...
-----------------------------------------
সেই রাতে( অনুগল্প বিভাগ )
পারমিতা মন্ডল
দুপুরের সব কাজকর্ম সেরে চটপট রেডি হয়ে নেয় রাশি।প্রতীক কে আগেই বলে রেখেছে আজ একটি পত্রিকা প্রকাশিত হবে। সেই অনুষ্ঠানে যাবে সে। প্রতীকের রাশির এই লেখালেখি ব্যাপার টা বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি মনে হয়।ওর কাছে এটা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো ছাড়া আর কিছুই নয়।তাই কোনো সমর্থন এর আশা না করেই শুধুমাত্র কর্তব্য বশত বলা। যাওয়ার সময় রাশি "এলাম" বললেও কোনো উত্তর দেয় না প্রতীক।
ফিরতে একটু দেরিই হলো।রাত আটটা। বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই বিভিন্ন প্রশ্ন বাণে বিদ্ধ হতে থাকে সে। বাথরুমে ঢুকে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে।কলের জল পড়ার আওয়াজ কান্নার শব্দ কে আড়াল করে।আড়াল, হ্যাঁ এতো দিন পড়াশোনা বইপত্র সবার সাথে আড়ালেই থেকেছে রাশি। কিন্তু এই লেখার নেশা ওকে নিয়ে এসেছে সবার সামনে।আড়াল থেকে প্রকাশ্যে আসতে যে কত জ্বলন্ত কয়লার পথ অতিক্রম করতে হয়েছে ,এখনো হচ্ছে,আগামী দিনেও হবে এটা ভালো করে জানে বছর তিরিশের রাশি।
সকালে চা করতে যায় রান্না ঘরে। হঠাৎ পেছন থেকে শ্বাশুড়ি বলে ওঠে,"বৌমা, তোমার এই লেখালেখি করা বন্ধ কর, বাচ্চার দিকে সংসারের দিকে মন দাও। ভুলে যেওনা আমাদের বাড়ির একটা মান সম্মান আছে।" কথাগুলো এমন মনে হলো যেন কেউ জীবন কেড়ে নিতে চাইছে। নিমেষে চোখের জল মুছে শুধু আচ্ছা বলে চুপ করে গেল রাশি।
কিছুদিন পরেই বিবাহ বার্ষিকী।দশ বছর।প্রতিবার ই সোনার জিনিস উপহার দেয় প্রতীক।এবার রাশি একদিন সন্ধ্যায় আবহাওয়া ভালো দেখে প্রতীকের কাছে আবদার করে
- আমাকে একটা আলমারি বানিয়ে দেবে এবার? বইগুলো যত্ন করে রাখবো।
- কি বলছ, হ্যাঁ! আমার অত টাকা নেই যে তোমার বই রাখার জন্য আলমারি করে দেব!বরং বইগুলো বেঁধে পুরনো তাকে তুলে দেব!আর একটা কথা শুনে রাখ।এক পয়সা খরচ করতে পারবোনা তোমার বই কেনার জন্য।
- না, তোমাকে দিতে হবে না। আমার মা বাবা পুজোয় ষষ্ঠীতে পয়লা বৈশাখে শাড়ি কিনতে যে টাকা দেয় তা দিয়ে ই কিনবো।
- না, ভালো কথা বলছি, সংসারে মন দাও।এসব বাদ দাও, তোমার যা হবার হয়ে গেছে।আর এসবের দরকার নেই। মেয়েকে মানুষ কর।
- মেয়েকে কি আমি দেখি না?
- আরো দেখতে হবে।পড়ে দেশ উদ্ধার করবে না তুমি। যত্তসব ফালতু কাজ!লেখা তোমাকে খাওয়াবে?
মেঝের এক কোণে পড়ে থাকা বইগুলোর দিকে এক করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রাশি।ওর যেন অস্তিত্বটাই ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে । একটু চুপ করে থেকে হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে রাশি।
- কি বললে! আমার বই বেঁধে তাকে তুলে দেবে! দেখি কি করতে পারো তুমি। আমি লিখবো,পড়বো । Nobody can stop me.তোমার কথা মতো এটাতে হয়তো টাকা আসে না। কিন্তু এই জগতে ভাসতে ভালো লাগে আমার।আমার মনের খোরাক যোগায় এইসব।তুমি একজন উচ্চ শিক্ষিত হয়ে কিভাবে বল এসব? তোমাদের মতো পুরুষ মানুষের জন্য মেয়েরা পিছিয়ে। উৎসাহ দিতে না পারো এইভাবে অপমান কোরো না।আর একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ আমি বিশ্বাস করি পড়াশোনার কোনো বয়স হয় না।তাই পড়া লেখা থেকে কেউ আলাদা করতে পারবে না আমাকে।এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে গেল রাশি।
রাত বারোটা।সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। এতোক্ষণ চুপচাপ ছিল রাশি। আসতে করে উঠে বইগুলোর কাছে গেল সে।তারপর বইগুলোর গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে বললো তোদের আমার কাছ থেকে কেউ কোনোদিন কেড়ে নিতে পারবে না। আমাদের বন্ধন ও বন্ধুত্ব অটুট।তারপর রাশি ওর প্রাণের বন্ধুদের জড়িয়ে ধরে চুমু খায়। সে যেন এক যুদ্ধে জেতা সৈনিক হয়ে ওঠে।
পারমিতা মন্ডল
দুপুরের সব কাজকর্ম সেরে চটপট রেডি হয়ে নেয় রাশি।প্রতীক কে আগেই বলে রেখেছে আজ একটি পত্রিকা প্রকাশিত হবে। সেই অনুষ্ঠানে যাবে সে। প্রতীকের রাশির এই লেখালেখি ব্যাপার টা বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি মনে হয়।ওর কাছে এটা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো ছাড়া আর কিছুই নয়।তাই কোনো সমর্থন এর আশা না করেই শুধুমাত্র কর্তব্য বশত বলা। যাওয়ার সময় রাশি "এলাম" বললেও কোনো উত্তর দেয় না প্রতীক।
ফিরতে একটু দেরিই হলো।রাত আটটা। বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই বিভিন্ন প্রশ্ন বাণে বিদ্ধ হতে থাকে সে। বাথরুমে ঢুকে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে।কলের জল পড়ার আওয়াজ কান্নার শব্দ কে আড়াল করে।আড়াল, হ্যাঁ এতো দিন পড়াশোনা বইপত্র সবার সাথে আড়ালেই থেকেছে রাশি। কিন্তু এই লেখার নেশা ওকে নিয়ে এসেছে সবার সামনে।আড়াল থেকে প্রকাশ্যে আসতে যে কত জ্বলন্ত কয়লার পথ অতিক্রম করতে হয়েছে ,এখনো হচ্ছে,আগামী দিনেও হবে এটা ভালো করে জানে বছর তিরিশের রাশি।
সকালে চা করতে যায় রান্না ঘরে। হঠাৎ পেছন থেকে শ্বাশুড়ি বলে ওঠে,"বৌমা, তোমার এই লেখালেখি করা বন্ধ কর, বাচ্চার দিকে সংসারের দিকে মন দাও। ভুলে যেওনা আমাদের বাড়ির একটা মান সম্মান আছে।" কথাগুলো এমন মনে হলো যেন কেউ জীবন কেড়ে নিতে চাইছে। নিমেষে চোখের জল মুছে শুধু আচ্ছা বলে চুপ করে গেল রাশি।
কিছুদিন পরেই বিবাহ বার্ষিকী।দশ বছর।প্রতিবার ই সোনার জিনিস উপহার দেয় প্রতীক।এবার রাশি একদিন সন্ধ্যায় আবহাওয়া ভালো দেখে প্রতীকের কাছে আবদার করে
- আমাকে একটা আলমারি বানিয়ে দেবে এবার? বইগুলো যত্ন করে রাখবো।
- কি বলছ, হ্যাঁ! আমার অত টাকা নেই যে তোমার বই রাখার জন্য আলমারি করে দেব!বরং বইগুলো বেঁধে পুরনো তাকে তুলে দেব!আর একটা কথা শুনে রাখ।এক পয়সা খরচ করতে পারবোনা তোমার বই কেনার জন্য।
- না, তোমাকে দিতে হবে না। আমার মা বাবা পুজোয় ষষ্ঠীতে পয়লা বৈশাখে শাড়ি কিনতে যে টাকা দেয় তা দিয়ে ই কিনবো।
- না, ভালো কথা বলছি, সংসারে মন দাও।এসব বাদ দাও, তোমার যা হবার হয়ে গেছে।আর এসবের দরকার নেই। মেয়েকে মানুষ কর।
- মেয়েকে কি আমি দেখি না?
- আরো দেখতে হবে।পড়ে দেশ উদ্ধার করবে না তুমি। যত্তসব ফালতু কাজ!লেখা তোমাকে খাওয়াবে?
মেঝের এক কোণে পড়ে থাকা বইগুলোর দিকে এক করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রাশি।ওর যেন অস্তিত্বটাই ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে । একটু চুপ করে থেকে হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে রাশি।
- কি বললে! আমার বই বেঁধে তাকে তুলে দেবে! দেখি কি করতে পারো তুমি। আমি লিখবো,পড়বো । Nobody can stop me.তোমার কথা মতো এটাতে হয়তো টাকা আসে না। কিন্তু এই জগতে ভাসতে ভালো লাগে আমার।আমার মনের খোরাক যোগায় এইসব।তুমি একজন উচ্চ শিক্ষিত হয়ে কিভাবে বল এসব? তোমাদের মতো পুরুষ মানুষের জন্য মেয়েরা পিছিয়ে। উৎসাহ দিতে না পারো এইভাবে অপমান কোরো না।আর একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ আমি বিশ্বাস করি পড়াশোনার কোনো বয়স হয় না।তাই পড়া লেখা থেকে কেউ আলাদা করতে পারবে না আমাকে।এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে গেল রাশি।
রাত বারোটা।সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। এতোক্ষণ চুপচাপ ছিল রাশি। আসতে করে উঠে বইগুলোর কাছে গেল সে।তারপর বইগুলোর গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে বললো তোদের আমার কাছ থেকে কেউ কোনোদিন কেড়ে নিতে পারবে না। আমাদের বন্ধন ও বন্ধুত্ব অটুট।তারপর রাশি ওর প্রাণের বন্ধুদের জড়িয়ে ধরে চুমু খায়। সে যেন এক যুদ্ধে জেতা সৈনিক হয়ে ওঠে।
আমলকির গন্ধে
সুনন্দ মন্ডল
মাথায় বলাকার গতীয়বাদ
বুকে গাঁথা কথা ও কাহিনী
ডান হাতে গীতাঞ্জলি
বাম হাতে চিত্রা
পায়ের প্রতি চলায় সবুজের অভিযান।
কচি আমলকির গন্ধ
বৃষ্টি ভেজা সোঁদা মাটি
আমজনতা মজে আছে বাঙালিয়ানায়
চোখের পলকে সোনার তরীর স্বপ্ন।
রাতের তারা জ্যোৎস্না ছাড়া মানায় না.....
চাঁদের হাসিতে সব কলঙ্ক মুছে যায়!
রবি আসে রবি যায়, এ রবি সদাহাস্যময়
অন্তর্দ্বন্দে ফুটে ওঠে মানসীর দিনলিপি,
ক্ষনিকা ও লিপিকার সেলাইয়ে।
আমাদের কালের মজ্জায় মজ্জায়
শিরা উপশিরা ধমনীতে নবজাতকের আনন্দ
প্রতি জন্মদিনে গ্রন্থিতে জেগে ওঠে
শিহরন মাখা "ফুলে ফুলে ঢোলে ঢোলে"।
রেডিয়েশন
অভিজিৎ দাসকর্মকার
আমার মন পুরুষত্বের ভগ্নাবশেষে দাঁড়িয়ে এতো কথা বলতে পারে বুঝতে পারার আগেই___
একটা present continuous tence হলুদ রঙের পাতার ঘাম থেকে আলাদা করছে তার ইত্যাকারে ফিরে আসা___
ঠিক সেভাবেই নিজেকে সুন্দরী, বা কথ্যভাষায় স্থানীয় শব্দের রেডিয়েশন ভাবছে__
এখন অভিনন্দিত হচ্ছে মাধ্যাকর্ষণ,
উদ্দাম রাত, হুক খোলা মাঠে, কাগজ বিছিয়ে মেয়েটির ক্লান্ত ভৌগোলিকতাকে ভোরের গভীরতার ভিত্তিতে ফসিল বানাচ্ছে___
ভাবনা আসে
রথীন পার্থ মণ্ডল
আঁধারটাকে সরিয়ে দিয়ে
ঘুম জাগানো ভোর,
বলল ডেকে বাইরে আয়
এই যে আমি তোর।
জানলা খুলে দেখছি চেয়ে
ফুটছে নানা ফুল,
সবুজ ঘাসে বাতাস এসে
দোলে দোদুল দুল।
পাখপাখালি ডাকছে গাছে
মাঠ ভরেছে ধানে,
চাষির মুখে ফুটছে হাসি
ভালোবাসার টানে ।
দেখতে থাকি হাজার খুশি
পাখনা মেলে ওড়ে
ভাবনা আসে নীল আকাশে
সোনালী রোদ্দুরে।
জোছনা রাতের খেলা
সমীরণ সরকার
পূর্ণিমারই মধ্যরাতে
দূর আকাশে -
সন্ধ্যে থেকে ঝরিয়ে আলো
চাঁদ ফ্যাকাশে ।
কোপাই নদীর শীতল জলে
পা ডুবিয়ে ,
বসে আছে একটি ছেলে
একটি মেয়ে ।
ফাগুন মাসের দোল নিশি আজ -
বিকেল থেকে
মুঠো মুঠো রঙিন আবীর
দুহাতে মেখে,
ভাসছে ওরা গল্প কথায় ।
দেখছে ওরা, উঠছে ঢেউ
নদীর জলে,
শিরশিরানি বাতাস মেখে
পলে পলে ।
অপবাদ আর কলঙ্কেরই
জোয়ার জলে,
ভাসবে ওরা ফিরলে বাড়ী
কাল সকালে ।
এখন থেকে মিছিমিছি
ওসব ভেবে,
আজকে রাতের আনন্দটাই
মিথ্যে হবে ।
তাইতে ওরা আঁকছে ছবি
কথায় কথায়,
বুকের পটে যত্ন নিয়ে
পরম মায়ায় ।
বিশ্বভূবন খেলছে যেমন
আজ নিশীথে,
মুঠোয় ভরে জোছনা নিয়ে
নদীর সাথে ।
আসা যাওয়ার মাঝে-
শ্রীজা দত্ত
নিশ্বাসটুকু বেঁচে রয়েছে জানো,
জানলার ধারে রয়েছে রঙিন সুতো!
পথ চলতি ভীড়ের মাঝে-
একবার যদি দেখা হতো।
অলস দুপুর তোমায় খোঁজে,
চার দেওয়ালের ঘরের মাঝে!
তোমায় ভেবেই সদাই হারাই-
তাইতো তোমায় খুব করে চাই।
সন্ধ্যা নামে ওপাড় থেকে,
দোয়েল-সাঁকো পথের বাঁকে!
শালিক, চড়াই একসাথে সব-
ফিরে আসে ঝাঁকে ঝাঁকে।
প্রতিটা দিন ব্যস্ত তুমি,
আসা যাওয়া লেগেই থাকে!
সময় করে খবর নিও-
একলা মন তোমায় ডাকে।
রবির রাশিমালা
প্রীতম রায়
সেদিনের আকাশ টা হঠাৎ করেই মেঘলা করে এলো
নেমে এল অন্ধকার,
চিলেকোঠায় সবে গান ধরেছো তুমি।
গুন গুন সুরে বাজছে শব্দ
শুনতে পেলাম জানলায় কড়া নাড়ছে মেঘ
কি রে যাবি?
যাবি আমাদের সাথে,
দুরে ওই মাদার গাছের পাড়ে।
যাব না রে মেঘ,
তপ্ত দুপুরে বাঁধা আছে ছায়াকাঠি
কয়েক ক্রোশ তোকে ছাড়াই
হাঁটা এখনো বাকি।
ব্রহ্ম জ্ঞান
বিভাসকান্তি মণ্ডল
কর্মের ভার নেই তবুও বড্ড ভার লাগছে
সময়ের কোনো ধারা নেই আমার কাছে
এলোমেলো হতে গেলেও যে শক্তি লাগে
তার হিসেবও আমার পাতায় নেই দেখছি
নিজের সঙ্গে ফালতু বকবক করে যাচ্ছি
পথহীন পথের গতিপথ এরকমই হয়
যতই ভাবি নদীর মতো সে কোখনোই নয়
সময়ের রেখায় কখনো যেমন 'মাড়ান পড়ে'
তেমনই কখনো কখনো সমুহ মুছে যেতে হয়
অকাল অসমকালের নিরুচ্চার রুচির মতন
আমি কেন বলব এসব কথা একালে
কাব্যরেখা মুছে গেছে কংসাবতী জলে
আমার তো আর কোথাও যাওয়ার নেই
যেখানে আছি সেখানেও তো থাকার না
তারপর আর কী থাকে ব্রহ্ম জ্ঞান ছাড়া!!
এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার তালপাতার সেপাই
তালপাতার সেপাই
জলফড়িং এর পক্ষ থেকে তোমাদের প্রথমেই জানাই নমস্কার।
১.) প্রীতম দা তোমার গান বাজনার শুরুটা কি ছোটো থেকেই? আর সুমনদা তোমার ইন্সট্রুমেন্ট প্রথম বাজাতে শেখা কত বছর বয়স থেকে?
প্রীতমঃ- হ্যাঁ ছোটো থেকেই, ওই ক্লাস two হবে বোধহয়।
সুমনঃ- এই ক্লাস নাইন থেকে শিখছি।
২.) ইউটিউবে গান গাইবে আর সেটা এই অভিনব ভাবনার সাথে। ব্যাপারটা কবে এবং কীভাবে মাথায় এলো?
প্রীতমঃ- আসলে আমরা বেশ অনেকদিন ধরে নতুন কিছু করা নিয়ে ভাবছিলাম, সেখান থেকে 'চেয়ে চেয়ে দেখি সারাদিন' গানটার ব্যাপারে একদিন এসে সুমনকে বলি যে উকুলেলে তে একটু অন্যভাবে করলে কেমন হয়, তখন উকুলেলেতে ট্রাই করা হয়, বন্ধুদের সামনে করে শোনাই,ওরাও বলে বেশ সুন্দর,তারপরই অডিও then ভিডিও।
সুমনঃ- actually আমরা গান বাজনার সাথে....ফ্লিম মেকিং,এডিটিং,ভিএফএক্স এই সব বিষয় নিয়ে খুব interested দুজনেই....infact অনেক গুলো stop motion অ্যানিমেশনও করে ফেলি। তারপর ভেবে দেখলাম যদি গানবাজনা আর ফ্লিম মেকিং দুটো একসাথে এনে একটা প্রেসেন্টেশন করা যায়। আমরা discuss করি তারপর আমরা আমাদের প্রথম YouTube videoshoot করে ফেলি। সেই সময় থেকেই শুরু।
৩.) পুরনো গান গুলো নতুন করে গাইছে "তালপাতার সেপাই"। আর পুরো ব্যাপারটা নস্টালজিয়ায় ভরে উঠছে । এই ব্যাপারটা তোমার কেমন লাগে প্রীতম দা?
প্রীতমঃ- ভালোই লাগে, অনেক পুরোনো দিনের গান শুনে বড়ো হয়ে ওঠা, কিছু পছন্দের গান এমন রয়েছে যেটা হয়তো এখন খুব বেশি শোনা যায় না, যেমন "অখিল বন্ধু ঘোষ-ও-দয়াল বিচার করো". এই গানটা এখন আবার আজকের জেনারেশন শুনছেও, আমাদেরটাও এবং অরিজিনাল টাও। সেটাও একটা প্রাপ্তি, পুরোনোকে বাঁচিয়ে না রাখলে তো চলবে না।
৪.) তোমাদের গানের মধ্যে পুরনো দিনের ছাপ রয়েছে, ইভেন নিজেদের গানের মধ্যেও। এটা নিয়ে কি বলতে চাও সুমন দা?
সুমনঃ- পুরনো দিনের গান আমাদের দুজনেরই ভালো লাগে শুনতে তাই সেটা একটা বড়ো কারণ।
৫.) তোমরা যখন নিজেদের গান গাও তার কথা লেখেন কৃতী রায়.তাকে কি সুর আগে থেকে বলে দিতে হয় নাকি আগে গানের কথা আসে আর পরে তুমি সুর করো প্রীতম দা?
প্রীতমঃ-কিছু গান আগে থেকে সুর করি, সিনারিও ভাবি, হয়তো ওকে কল্পনাটা একটু বোঝানোর চেষ্টা করি, কিছু লিরিক্স কৃতী আগে লেখে পরে সুর করা হয়, দুরকম অ্যাপ্রোচেই ট্রাই করা হয় আসলে দুটো process।
৬.) শ্যামল মিত্র, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এঁরা না থাকলে আজ কাদের গান গাইত "তালপাতার সেপাই"?
প্রীতমঃ- তালপাতার সেপাই-এর নিজেদের গান রয়েছে, তারসাথে আরও অনেক ভালো গুনি শিল্পী রয়েছেন, 'গৌতম চট্টোপাধ্যায় '( মহিনের ঘোড়াগুলি), 'অখিল বন্ধু ঘোষ', 'সচিন দেব বর্মন'।
৭.) এখনকার দিনে rock, raaf এই সমস্ত গান হচ্ছে আর তোমরা এসব ছেড়ে পুরনো সুর বাছলে কেনো?
সুমনঃ- কিছু পুরনো গান আছে যেগুলো এখনকার মানুষ প্রায়ই ভুলে গেছে কিন্তু সেই গান গুলো দেখা যায় খুবই সুন্দর। তাই সেই গান গুলো আমাদের জেনারেশনের কাছে আবার করে তুলে ধরার চেষ্টা আর কি।
৮.) প্রথম থেকে আজকের জার্নীর হিসেবটা অনেক বড়ো আমি জানি। সাফল্যটা কিরকম লাগে?
সুমনঃ- আমি মনে করি জার্নী সবে শুরু হলো, তবে হ্যাঁ যতটুকু এগোতে পেরেছি সেটা ভেবে ভবিষ্যতের জন্য আরও ভালো কাজ করার inspiration পাচ্ছি।
প্রীতমঃ-এখনও সফল ঠিক বলব না, তবে হ্যাঁ ভালোর দিকে এগোনোর চেষ্টা করছি,চাইছি সকলের কাছে আমাদের গান পৌঁছাক, মানুষ ভালোবাসুক আমাদের গান, যদি ভালো লাগে তবেই আমাদের সফলতা, আরও অনেক গান রয়েছে সেগুলো রিলিজের কথা ভাবছি, মৌলিক গান বিশেষ করে।
৯.) নতুনদের জন্য কী বলতে চাও প্রীতম দা?
প্রীতমঃ- আমি নিজেও নতুনই হা হা, টুকটাক এটা-ওটা ট্রাই করছি, আমার যেটা মনে হয় বাংলা মিউজিকের আরও ভালো মৌলিক গান তৈরী করা দরকার, নতুন নতুন চিন্তা আনা দরকার, ক্রিয়েটিভ হওয়া দরকার,নিজেদের মতো করে। নিজস্বতা থাকাটা খুব দরকার।
১০.) you tube nextup winner এর আনন্দটা জলফড়িং-এর বন্ধুদের সাথে যদি শেয়ার করো তোমরা ?
প্রীতমঃ- ভীষণ unexpected ছিল, প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না, ভেবেছিলাম হয়তো কম্পিটিশনটাতে সিলেক্ট হয়েছি, কিন্তু পরে জানলাম না আমরা জিতেছি।
সুমনঃ-আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি ব্যাপারটা তারপর যখন জানতে পারলাম যে হ্যাঁ আমরা সত্যি 'NEXTUP' Winner তখন খুব খুশি হয়েছিলাম আর প্রচন্ড এক্সাইটেডও হয়েছিলাম।
১১.) পোস্টার থেকে ভিডিও সবটাই এটাইও ইউনিক। বারবার কী করে এমন করে "তালপাতার সেপাই"।
সুমনঃ- আমার বিশ্বাস মানুষ যখন তার কমপ্লিট ফোকাসটা নিজের ক্রিয়েটিভিটির ওপর দেয় তখন নতুন ইউনিক কিছু একটা সৃষ্টি হয়ই। আমরা যখন কোনো গান অ্যারেঞ্জ করি অথবা প্ল্যানিং , ভিডিওশট এর প্ল্যানিং করি তখন আমাদের ক্রিয়েটিভিটির ওপর ফোকাস করি যেটা আমাদের হেল্প করে নতুন কিছু একটা তৈরী করতে।
প্রীতমঃ-আসলে নতুন কিছু করার ইচ্ছেটা আমার অনেকদিনেরই। নিজের মতো করে সবকিছু ভাবতে চেষ্টা করি, সেখান থেকেই আসে, নতুনত্ব খোঁজার চেষ্টা করি। আর নানা জিনিস থেকে inspired আমি, সেগুলোর একটা ছাপ মিলেমিশে হয়তো নতুন কিছু তৈরী হয়।
★(এবার এই রাউন্ডের নাম শর্টকাট)★
প্রীতম দা সব উত্তর দেবে এগুলোর
১.) অনুপম রায় নাকি শ্রীকান্ত আচার্য?
উত্তরঃ- অনুপম রায়
২.) মিরচি সোমক নাকি প্রীতম দাস?
উত্তরঃ- মিরচি সোমক
৩.) কবির সুমন নাকি শ্যামল মিত্র?
উত্তরঃ- শ্যামল মিত্র
★(এবারের রাউন্ডের নাম
(যেকোনো একটা)★
সব উত্তর সুমন দা দেবে
১.) ukulele নাকি guitar?
উত্তরঃ- Guitar
২.)Sunday suspens নাকি মিরচী মীর একক?
উত্তরঃ-Sunday Suspens
৩.) bong untold নাকি তালপাতার সেপাই?
উত্তরঃ- তালপাতার সেপাই
★এই রাউন্ডটি হলো হাসতে হাসতে জাস্টিফাই★
প্রীতম দা তোমাকে দুটো শব্দ দিলাম
১.) কিপটে ২.) কিউট
এবার একজনের নাম বলব তোমাকে এই দুটি শব্দের মধ্যে একটি শব্দ তার সাথে যুক্ত করতে হবে?
প্রশ্নঃ- সুমন ঘোষ ( তালপাতার সেপাই)। কিউট না কিপটে?
উত্তরঃ- কিপটে
এবার তোমার পালা সুমন দা?
তোমায় শব্দ দিলাম ১.)জটিল, ২.)ঝগড়ুটে
প্রশ্নঃ- kritee Roy (তালপাতার সেপাই)। জটিল না ঝগড়ুটে?
উত্তরঃ- জটিল
| পছন্দ কী ওদের |
১.) প্রিয় রঙ?
প্রীতমঃ-light blue,mustard yellow,olive green
সুমনঃ-red
২.) প্রিয় পোশাক?
প্রীতমঃ-শার্ট, জিন্স
সুমনঃ-টি-শার্ট, জিন্স
৩.) প্রিয় গানঃ-
প্রীতমঃ- অনেক লম্বা লিস্ট , চেঞ্জও হয়ে থাকে, annie's song-john denver
সুমনঃ-every breath you take by police , closer by travis
৪.) আয় থিঙ্ক গান তোমার অবসর নয় প্রীতম দা। তাহলে অবসরে কি করো?
প্রীতমঃ- ফিল্ম, ওয়েব সিরিজ, anime দেখি,টুকটাক পড়ি।
৫.) সুমন দা তোমার রাত প্রিয় নাকি বিকেল ?
সুমনঃ- বিকেল (কারণ ছোটোবেলায় প্রচুর খেলতাম বিকেলে, এখন আর খেলা হয় না তবে বিকেলটা এখনও ভালো লাগে।
সব শেষে জানতে চাইব কেমন লাগলো তোমাদের আজকের এই আড্ডা আর জলফড়িং কে কি বলতে চাও তোমরা?
প্রীতমঃ- ভালোই লাগলো, প্রশ্নগুলো অন্যরকম, উদ্যোগটা ভালো, আশা করি সামনের দিনে আরও অনেকের কাছে পৌঁছে যাবে। অল দ্য বেস্ট।
সুমনঃ- বেশ ভালো লাগলো। বেশ interesting questions ছিলো যেগুলোর উত্তর দিতে বেশ মজাই লাগলো।
তালপাতার সেপাই
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)