ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৯

ভালোবাসা বাকি আছে সংখ্যায় কোর কমিটিবর্গের লেখা





১.)
জ্ঞানচক্ষু
      সুনন্দ মন্ডল

বর্ষার রেশ জীবনে
সোঁদা সোঁদা গন্ধ মাটির শরীরে।
প্রতিমার শরীরে মাটি লেপন
চক্ষুদানে তৎপর কারিগর।

শরতের বাতাস গায়ে ছুঁয়ে যায়
দেবীর জ্ঞানচক্ষুতে ফুটে ওঠে দর্শন।
অপরাধ গ্লানি তিক্ততা অন্যপথে থাকুক
কটা দিন শান্তি আনন্দ হুল্লোর জমে থাক।

শারদা দশ হাতে ধরিত্রীর ভার নিলে
শারদীয়ায় মঙ্গল ঘট পূর্ন হবে!
স্নিগ্ধ স্পর্শে বাঙালি গলা মেলালে
নতুন জাতির উৎপন্নে মানবতা জাগবে।

ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ দূর সমুদ্রের জলে ধুয়ে যাক
পাখির গানে সুন্দরতা আসুক!
ফুলের গন্ধে ভরে যাক মানবতার উঠোন
মহামায়ার মহিমায় জ্ঞানচক্ষু হোক মনুষ্যত্বের।

২.)

চয়নিকার কবিতা

যেদিন বিকালে তোমার চিঠি আসে,
সেদিন সূর্য সহজে ডোবে না,
একটা সোনালী রোদ বহুক্ষণ লেগে থাকে
মাধবীলতার উঁচু ডালটায়।
গর্বে ফুটে থাকা এক থোকা লাল-গোলাপী ফুল থেকে
অপেক্ষা গলে পড়ে।

যেদিন তোমার চিঠি আসে,
সেদিন গোটা ঘর, গোটা পাড়া
কাঁঠালিচাঁপার গন্ধে ভরে যায়।
আমি, কাঁঠালিচাঁপার সাথে
তোমার গন্ধ গুলিয়ে ফেলি।
তুমি ভেবে হাতরাই এদিক সেদিক।

যেদিন তোমার চিঠি আসে,
সেদিন দিন ফুরোতে কিছুটা দেরী হয়ে যায়,
রাতের তারাদের মুখে থাকে টোল পড়া হাসি।
কালপুরুষের কোমর থেকে
খসে যায় বীরত্বের তরবারি,
হয়তো পুষ্প বৃষ্টিও হয় নিভৃতে।

যেদিন তোমার চিঠি আসে,
সেদিন শুধু ভাবনা আসে,
ঘুম আসে না।

৩.)
স্বৈরতন্ত্র
জয়দীপ রায়
         অন্ধকার পথে হারিয়েছে
         অহংকারের চাবিকাঠি
         খোলার জো নেই...
         নেহাত ভাঙতে হল...
         পড়ল শয়েক হাতুড়ি হাপর
         রাজতন্ত্রে পড়ল চাপড়...
         হুড়মুড়িয়ে পড়ল খিলান
         ভাঙল কয়েক লাখো মিলান...
         উঠল স্লোগান স্বৈরাচারী বিদায় হও
         অহঙ্কারের নিপাত যাক;
         মধ্যরাতে হল বিচার...
         সাজা পেল রাজা নয়
         তার স্বৈরাচার...
        ফাঁসি কাঠে সাজা পেল
        রাজার স্বৈরতন্ত্র...
        বিজয় ধ্বনিতে ধ্বনিত হল
        জনগণের তন্ত্র ...।

৪.)
"কাগজ"

চঞ্চল ভট্টাচার্য


রাত্রিরা ঘুমিয়ে পড়ে অন্ধকারে।
আলো নেই, নিস্তব্ধ চারিদিক।
বেহুঁশ হয়েছে রাত্রিরা।
শহরের রাস্তায় কুয়াশার লীলাময় রূপ।
আধপেটা খাওয়া ভিখারিটা ঘুমিয়ে পড়ে শিশিরের শব্দে।

কয়েকটা কুকুর নিষিদ্ধ পল্লিতে চিৎকার করে ভদ্র মুখোশ দেখে।
যারা বাড়ি গিয়ে স্ত্রীর পাশেই ঘুমায়।
ট্রেনের শব্দে পাশ ফিরে মাথা চুলকে আবার ঘুমিয়ে যায় স্টেশনের স্বীকৃত ভিক্ষুকটি।

আলোগুলি অপেক্ষা করে শিশির স্নিগ্ধ ভোরের অপেক্ষায়।
একটি অ্যাম্বুলেন্স পেরিয়ে যায় হঠাৎই।
ভিতরে একটি লাশের মৃত্যু হয়েছে।

একটি ছেলে কোনো এক স্টেশনে কাটা পড়ে ট্রেনে।
পুলিশ তদন্ত চালায় আত্মহত্যা নাকি খুন !
কেউ আবার ধর্ষিতার তকমা পেতে পারে কাল।

এখন মধ্যরাত্রি।
পেপার ম্যান পেপার নিতে আসে স্টেশনে আর একটু পড়েই।
পরের দিনের খবর পায় আবার মানুষ।
এই সব খবরই থাকে।
ধর্ষণ, খুন,রাহাজানি, আধপেটা,নিষিদ্ধ পল্লি।

একটি মর্মান্তিক রাত্রির কথা থাকে।
কয়েকটি জীবন্ত লাশের মৃত্যু থাকে।

আবার অপেক্ষা।
কালকের।
এরকমই খবরের অপেক্ষা।
আজকের খবরের কাগজ পড়ে মনটা বেশ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে।

কালও এরকমই খবর না থাকলে আবার পড়তেও ভালো লাগে না।
খবর কাগজ তো এসব খবরের জন্যই নেওয়া।

৫.)
সুদীপ্ত র জন্য কলম
 অরূপ সরকার

ওয়েটিং  রুমে বসে আছি  শেষ ট্রেনে বসব বলে
বৃষ্টি ভেজা রেলগাড়ি গূলি এক দুই করে পার হয়ে যায় নিজস্ব রুটে।
বৃষ্টি পড়ছে ;একফোঁটা দু ফোঁটা ঠিক যেমন করে কবিতায় শব্দ ঝরে ।
এই করেই ট্রেন এসে যায়,
শীত মেখে উঠে পড়ি শেষ ট্রেনে,
বৃষ্টি ফোঁটা কেমন জানালায় চুমু খেতে খেতে অলস ভাবে গড়িয়ে পড়ে ,
যেন প্রেমিকার পেলব ঠোঁট মত ,
আলতো ছোঁয়ায় ঘুম ভাঙায় ।
স্টেশন এসে পড়ে, এবার নামতে হবে,
যাব সেখানে যেখানে জলফড়িং আছে অনেক অনেক জলফড়িং এভাবেই তো আমায় ডাকে,
জড়িয়ে রাখে অনাবিল আদরে ।
কবিতা কি এভাবেই শেষ হয় ?
শেষে কিন্তু অন্ত্যমিল থাকে।

৫.)
হতে পারতো
----------মানস খাঁড়া

তুমি চাইলেই হতে পারতো না হওয়া অনেক কাজ
তুমি বললে কথা সেদিন সেটা কবিতা হতো আজ।
তাকিয়ে দেখলে সেদিন হয়তো চিনতে পারতে আমায়
থমকে যেতো সবকিছু বাদ যেত না সময় ।
সব রাত গুলোতে সেদিন চাঁদ নাইবা দেখা দিল
রাত -রঙিন করার লগে জোনাকী কত ছিল ।
নাইবা বললে কিছু, কিন্তু রাত আসে ঠিক আগের মতো
ঋতু-রাও ঠিক বদলায় যেমন ছিল ক্রমাগত।
ভুল করে না গাছের যেভাবে ফুটতো ফুলগুলো
হয়তো ভাব তুমি নেইকো ওরা ভালো।

৬.)
পারা-না-পারা
অস্পৃশ্য( অনিমেষ ভট্টাচার্য )

আবার মন হলে কাছে এসো।
আবার কোনোদিন মন হলে জড়িয়ে ধরো।
তুমি এসে বলতেই পারো আজ 7.15 শো।
আবার বলতে পারো আজ নীল শার্ট টা পড়তে পারতে।
আবার আমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদতে পারতে।
তুমি আবার ইরাকি মেরে বলতে পারো ছেড়ে চলে যাবো।
আবার তুমি  থেকে তুই আসতে পারো রাগের জেদে।
বলতেই পারো কাল সকালে ওঠাতে পারবো না
আবার বলতেই পারো অটো না বাস এ যেও।
আবার তুমি তারস্বরে বলতে পারো গোপনে ভালোবাসি
কিন্তু জানো,এগুলো বলার ক্ষমতা তোমার ছিল,
কিন্তু এখন নেই।
কারণ জানো, তুমি সেদিন যদি জেদ করে চলে না যেতে।
যদি তুমি সেদিন আমার দেওয়া রিং টা ফেরত দিতে।
যদি তুমি সেইদিন আমাকে লম্পট চরিত্রহীনের আখ্যা দিতে।
যদি সেইদিন চিৎকার করে একবার বলতে আমি এইসব বিশ্বাস করি না,শুধু তোমায় ভালোবাসি।
সত্যি  বলছি তাহলে তুমি সব করতে পারতে।









কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন