জলফড়িং শারদ সংখ্যা
অনুগল্প
ব্ল্যাকফরেষ্ট
নমিতা পাল
গত আট মাস ধরে অপমানের ঘা টা আজও দগ দগ করছে। পারিবারিক অবস্থা ভালো নয়, তবে একাডেমিক রেজাল্ট বেশ ভালো আর পিউকেও অঙ্কটা ভালোই করায়, সেই সুবাদে এই কলেজে পার্টটাইমার হিসাবে চাকরিটা করে দেওয়া। তারপরও ক্লাসরুম থেকে বেরনোর সময় আচমকা ধাক্কা লাগায় স্টাফরুমে সে দিন কমলিকা যেভাবে অপমান করেছিল যেন তাকে রেপড করা হয়েছে। আজ কলেজে পৌঁছে সি.সি. টিভি সিস্টেমর সমস্যা জানতে পেরেই মাথার মধ্যের শয়তানটা নড়ে ওঠে কেমিস্ট্রির সিনিয়র প্রফেসর সায়ন্তন বসু মল্লিকের। সে দিন বিনা কারণে যে দোষ গায়ে মেখেছিলেন নিঃশব্দে তার প্রতিশোধ নেওয়ার আজকের মত ভালো সুযোগকে হাতছাড়া হতে দেওয়া যাবেনা। ল্যান্ড লাইন থেকে একটা ফোন যায় শুধু। তারপর সোজা ল্যাবে চলে যান। দীর্ঘ অপেক্ষা। ওইতো ল্যাবের দরজা ঢেলে এক নারী ছায়া মূর্তি ভিতরে ঠুকছে। এমন সময় সেলফোনের মেসেজ টোন বেজে ওঠে। তড়িঘড়ি সেলফোনের সুইচটা অফ করেই ক্ষিপ্র বেগে এগিয়ে যান শিকারের দিকে। আলো বন্ধ করে সবকিছু গুছিয়েই রেখেছিলেন, বাগে আনতে কয়েক মিনিট। একটু গোঙানি তারপর নিজের পাশবিক উপস্থাপন, আরও কিছুক্ষণ পর সব স্তব্ধ। প্রাণে মারতে চাননি, কিন্তু শেষ মুহূর্তে আর অন্য উপায় ছিলনা। একটু টেনশন হলেও হাতের গ্লাভস্ খুলে ফাঁকা করিডর ধরে দ্রুত সিঁড়ির দিকে যেতে যেতে এক তৃপ্তির হাসি ছড়িয়ে পড়ে প্রফেসরের শক্ত চোয়ালে। জুনিয়রের অপমানের স্থায়ী আবসান। নিজের সামাজিক আর আর্থিক ক্ষমতার জোরে মার্ডার কেস সামলে নেবেন, বাকি রইলো শুধু মৃতের আত্মার শান্তি কামনায় মোমবাতি মিছিলে হাঁটা।
সোফায় গা এলিয়ে সেল ফোন অন করতেই কমলিকার মেসেজে চোখ আটকে যায়, 'সরি স্যার, কলেজে যাওয়ার সময় স্কুটিতে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। রাস্তাতে পিউকে পেয়ে ওকে দিয়েই বইদুটি পাঠিয়ে দিলাম।' মেয়েলি সুগন্ধি, হাইড্রোজেন সালফাইড, সালফিউরিক অ্যাসিড, মিথেন .... মোমবাতির আবছা আলোয় পুড়ে শুধুমাত্র টাটকা রক্তের আঁশটে গন্ধ ছুটে আসছে সায়ন্তনের দিকে।
রমলার গলা ভেসে আসে - 'ব্ল্যাকফরেষ্টে ক্রিম আর চকোলেটের পরিমাণটা বেশীই দিয়েছেনতো দাদা! মেয়ের আবার চকোলেট খুব পছন্দ। হ্যাঁ দাদা নাম ইংরেজীতেই লিখবেন - পিউ, ১৫ বছর। ওর বাবা সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ যাবেন, কেক যেন রেডি থাকে।'
নমিতা পাল
" তবুও"
মানবেন্দ্র নাথ মাজী।
অনন্ত আকাশে রোদ নিয়ে খেলা করো কত
শব্দের মিছিলেও এসে লাগে তার ছটা,
ভালোবেসে যাও তবু ভালোবাসা নাই বা পেতে পারো
খেদ নিয়ে জটলা-গুলি মারো হা-হুতাশ
ছুঁড়ে ফেলো একই কথার কচলানো বুলি।
আমারি আঙিনা জুড়ে কত রঙেরই মেলা
মাঝে মাঝে চোখ মুখ ঢুকে বেরিয়ে আসে আগুন--
স্মৃতির কষা পাথরের ঘায়;
জনান্তিকে বলো তুমি--ভালোবাসার কারখানায়
রেডিমেড সব মনোহারী দ্রব্য;
বিলীন শূণ্যতায় অসীমের আস্ফালন।
এত যন্ত্রনা তথাপি হৃদয়ের অরণ্যে, তোমায়
বুঝতে দেইনি কখনও।
পুজোর ছুটি
নাজমীন মন্ডল
কাল থেকে কলেজে পুজোর ছুটি পরে যাবে দেবেশের। হঠাৎ করেই ছোটবেলার পুজোর ছুটির দিনগুলো হুড়মুড় করে মনে পড়ে গেলো দেবেশের। মায়ের হাতে লাগানো শিউলিগাছটায় ফুল ফুটতো। সকালবেলা সারা উঠোনে শিউলি ফুল ছড়িয়ে থাকতো। রাস্তার ধারের কাশফুল গুলোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে স্কুল যেতো সে।
এলাকার মধ্যে তাদের গ্রামের দুর্গা পুজো সবথেকে সমারোহে হয়। তার বাবা স্বয়ং সেই দুর্গা প্রতিমা তৈরী করতেন। পুজোর সময় তার বাবার কদর অনেক বেড়ে যেতো। ব্যস্ততার গর্বে তার চোখেমুখে এক অনির্বচনীয় প্রশান্তি ছড়িয়ে থাকতো। পুজো যত কাছে আসতো তার বাবার ব্যস্ততার সঙ্গে সঙ্গে দেবেশের উত্তেজনাও বেড়ে চলতো। অবাক চোখে দেখতো কীভাবে বাবা প্রতিমার চক্ষুদান করছেন, পায়ে আলতা পরাচ্ছেন, গয়না পরাচ্ছেন, হাতে একটার পর একটা অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন। বাবা তার উত্তরসূরিকে একটু একটু করে শেখাতো, নানারকম গল্প শোনাতো। তারপর অপেক্ষা শেষে পুজো চলেই আসতো। গোটা গ্রাম আনন্দের জোৎস্নায় ভেসে যেতো। নিমেষে সেই পুজো শেষও হয়ে যেতো। পুজোর পরের দিনগুলোও কেটে যেতো পুজোর দিনগুলোর গল্পে, স্মৃতিচারণে।
আঠারোটা বসন্ত পুজোর ছুটিগুলো নির্বিঘ্নে কেটেছিলো। জীবনে অভাব ছিলো, দুঃখ ছিলো তবু দুশ্চিন্তা ছিলোনা। হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে বাবা মারা গেলো। এরপর থেকে প্রতিবছর পুজো আসে পুজোর ছুটি আসে কিন্তু আগের মতো আর আসেনা। বাড়িতে শোকস্তব্ধ মা, ছোট বোনের দায়িত্ব তার কাঁধে। এই গ্রামের পুজোর দুর্গা ঠাকুর তার বাবা বানাতেন, উত্তরাধিকার সূত্রে সে সেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলো। তার বাবা একটু একটু করে নিজের হাতে তাকে শিখিয়েছে সবকিছু। বাবার মতোই উত্তরাধিকার সূত্রে সে পেয়েছে প্রতিভা। এতোকিছুর পরেও পড়াশোনাটা ছাড়েনি সে। টিউশন নিতে পারেনি তাই কলেজের ক্লাসগুলোই ভরসা তার। এজন্য অনেক কাজ বাকি থেকে যায়। পুজোর ছুটি পরলে একমুহূর্ত বসার সময় পায়না সে। ষষ্ঠী এলে সব কাজ সারা হয় তখন একটু স্বস্তি পায় সে। লক্ষ্মীপুজোর জন্য বেশ কয়েকটা প্রতিমার অর্ডার থাকে, পুজোর দিনগুলোয় তারই বাকি কাজগুলো সারতে হয়। এভাবেই পুজোর ছুটিগুলো ব্যস্ততাতেই কেটে যায়। পুজো আসে, ছুটি আসেনা। তার বাবাকেও সে দেখেছে এই পুজোর সময়টাতে ভীষণ ব্যস্ত থাকতে। কিন্তু সেই ব্যস্ততার মধ্যে এক অদ্ভুত পরিতৃপ্তি ছিলো। তার মধ্যেও হয়তো আছে সেই পরিতৃপ্তি। তবু বারবার মনে হয় বাবা থাকলে বেশ হতো। তাকে সাহায্য করতে না পারুক শুধু দেখতো তার কাজ। মাঝেমাঝে ভুল ধরতো। সবাই দেবেশের প্রশংসা করে বলে "তোমার কিন্তু হাত আছে, বাবার মতো।" বাবা শুনলে হয়তো তার চোখ চিকচিক করতো, হয়তো বা দু একফোঁটা জল ঝরেও পড়তো। বাবা শুধুমাত্র দর্শক হিসাবে থাকলেও হয়তো কাজ থাকতো, দায়িত্ব থাকতো না। হয়তো পরিশ্রম হতো, ক্লান্তি থাকতো না। পুজোর ছুটিগুলো সেই যে হারিয়ে গেলো আর ফিরে এলো না।
অর্জিত অন্ধকার
বিশ্বজিৎ মণ্ডল
রিখটার স্কেলে ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে,মাত্রা....
তামাম ভূমিপথ ভাঙতে ভাঙতে গড়িয়ে যাচ্ছি___
মেধাবী পৃথিবীর দিকে
কখনও উষ্ণীষ খুলে বলিনি,উর্বী জয়ের গল্প
কেবল দেখেছি,পরিযায়ী পাখিদের মত অসময়ে
তোমার চলে যাওয়া...
শেষ বিকেলে অশুভ নক্ষত্রপাতের আর্তনাদে
তোমার শালীন কন্দরে মুছে যাওয়া...
—————————***————————————
কবিতা:
//'প্রেম' - কবিতা নয় //
”'প্রেম' কে কবিতা ভেবে ভুল করেছিস স্নিগ্ধা।
প্রেম টা একটা আভিজাত্য বিষয়, যেখানে-
প্রয়োজনে মাথা নীচেও রাখা যায়।
আর কবিতা হল মনের ভাবনা।
তুই কতখানি তোর ভাবনার বিস্তার ঘটাবি
সেটা পাঠক দেখবে'"।
একটু জ্ঞানের সুরেই কথাগুলো বলছিল অরিন্দম।
পালানো প্রেমের দৃশ্যে স্নিগ্ধা তখন বিহ্বল।
” স্নিগ্ধা তুই কিন্ত ভুল করছিস।
একটা নিছক প্রেম ষড়রিপুর বাইরে নয়,
নাটকীয়তায় মোড়া প্রেম আসলে বর্ষার দামোদর।
হ্যাঁ, কিছু স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়”।
স্নিগ্ধা অভিধান দেখে 'ষড়রিপুর' জ্ঞান অর্জন,
করে, আর বলে - "পরের টা দেখে নিস,
অরিন্দম, রবীন্দ্রনাথ কে গুলে খেলাম।
তবে কবিতাটা যদি প্রেম
তুহিন চক্রবর্তী
নিঃসঙ্গ শহুরে নাগরিক
রাবাত রেজা নূর
সোডিয়াম বাতির নিচে জমা হয় গান; পিঙ্গলা আকাশের নিচে হেটে চলে এক নিঃসঙ্গ শহুরে নাগরিক। চোখ নীল।
আস্তিনের নিচে রাতের বেলায়ও দিনের আলোর মত বিজলী বাতির গল্প বেশুমার।
নিঃসঙ্গ শহুরে নাগরিক বসে থাকে সদর ঘাটে; অন্ধকারের মুখোমুখি।
হাতে আঁধপোড়া সিগারেট ক্ষয়ে এসে বেমালুম আঙ্গুল পোড়ায়
সম্বিত ফিরে এলে ভাবে ওপারে কেরানীগঞ্জ
জেলখানাটা দেহের ভেতর।
হাওয়া বয় বুড়িগঙ্গায়; টিমটিমে লন্ঠনের বুক থেকে বেরোয় হাহুতাশ।
রমনার বেঞ্চিতে চিৎ হয়ে আকাশ দেখে নিঃসঙ্গ শহুরে নাগরিক।
পকেটের ছেড়া নোট ভিজে যায় পঁচা আঙুলের ঘামে।
নিঃসঙ্গ শহুরে নাগরিক ভাবে যদি রমনায় কেটে দেওয়া যেতো তিনটে দুপুর। সিগারেটের বক্স থেকে বেরোয় শেষ সিগারেট।
ধোয়ার রিং মিশে যায় কৃষ্ণচূড়ার অক্সিজেনের সাথে। গল্পের পকেট তখনও ভরপুর।
নিঃসঙ্গ শহুরে নাগরিক ফিরে আসে জহু হলের পুকুর পাড়ে।
একটা ঘুঘু ভীষণ ডাকে। পুকুরে খেলা করে শহুরে পুঁটির ঝাঁক।
নিঃসঙ্গ শহুরে নাগরিকের গল্প শোনে না কেউ; পুকুরে ঢেউ ওঠে সহজ সরল।
প্রতিদিন এই শহরের অলি গলিতে নিঃসঙ্গ শহুরে নাগরিকের গল্প জমে বিস্তর।
কিন্তু সেই গল্প শোনার মানুষ কই?
রাবাত রেজা নূর
___উমা এলো ঘরে
সুনন্দ মন্ডল
লাল আলোর সংকেত,
ভাঙা চালায় খেজুরে আলাপ
মিষ্টতা কাশ ফুলের নাকছাবিতে...
সুগন্ধ ওই কোণের শ্যাওলা ভেঙে
মহল্লায় সুর বেঁধেছে কানা মুনি
গলির বুকে আল্পনা
মহালয়ার ভোর।
উমা নাকি এলো ঘরে
মাটির প্রদীপে জ্বলবে আলো
নাকি জ্বলবে মাটির বুক!
-------------
।
দুটি কবিতা
রথীন পার্থ মণ্ডল
১. পুজোর খবর
শারদ রানি আসবে জানি
ঢাকের বাদ্যি বাজে,
পেঁজা তুলোর মেঘগুলো সব
চলছে শুভ্র সাজে।
হঠাৎ দেখি ঝর্না ধারায়
বৃষ্টি নেমে এলো,
সারা বছরের আবর্জনা
ধুইয়ে দিয়ে গেল।
সূয্যিমামা রূপোলি জামা
পড়ায় সবার গায়,
কাশ ফুলেরা দিচ্ছে সাড়া
মাঠের ডায়ে বায়।
সকালবেলায় শিউলি ঝরায়
গন্ধে সুবাস যাতে,
শারদ রানির ষষ্ঠী পূজা
শুরু হবে প্রাতে।
২. শারদীয়া
মেঘমুক্ত নীল আকাশে
ঝলমলে এক রবি,
কাশ-শিউলি-পদ্মফুলে
মহালয়ার ছবি।
সবার সাথে খুশিতে মেতে
শারদীয়া সাজে,
শঙ্খ-সানাই-ঢাকের তালে
আগমনী বাজে।
আরো আছে, শিশিরকণা
মিষ্টি হিমেল হাওয়া,
গভীর রাতে ফুল তুলতে
কোথাও হারিয়ে যাওয়া
প্রতিক্ষা
সমরেশ পর্বত
আজ, তুমি আসবে বলে
আজ জমা হয়ে আছে কতো
সারা পৃথিবীর জংজাল ধুলো ময়লা।
তোমার অপেক্ষায় দিন
গুনতে গুনতে...অবশেষে
আজ বড়ো ক্ল্যান্ত সবাই
এ শহর, এ গ্রাম বাংলা।
রস কস হীন আজ
ভরা নদী বাঁকা নদী
যতো শুখনো খাল বিল,
চারিদিকে মাটি ফাটা
বন্ধ ইট ভাঁটা
শুখিয়েছে বড়ো ঝিল।
চাতক আর চায় নাকো
শুধুই ভাষা মেঘ আকাশে,
ডানামেলে উঁড়ে যায়
কয়ে যায় বাতাসে।
বৃষ্টি এখন হচ্ছেনা বন্ধু
মেঘ দিয়েছে পাড়ি,
মেঘের বুকে যাচ্ছে ভেসে
বৃষ্টি শশুড় বাড়ি ।
এই জয়
লক্ষ্মী কান্ত মণ্ডল
গায়ে মাখলাম শিরীষফুল, বাতাসের ঝাপটায়
নিজের বেসুরো যন্ত্রগুলো খুলে দিচ্ছে
জীর্ণ বাড়ির প্রত্যেকটা প্রহর, যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা চলছে-
রাতে তৃষ্ণার আধার ধরতেই মেঘ বলল --
আকাশ তার ঈশ্বর, সে পায়েস রান্না করে
কোন এক গৌতমের জন্য
তখন নয়নতারার টবটা পড়ে গিয়ে ভেঙে যায়
আমি সেই দিকে তাকিয়ে রাতের নিরাময় খুঁজি-
কলসি ভাঙে
মগ্ন রসিদ খান
অন্ধকারের অস্থিগুলো মেঘ স্তর ভাঙতে ভাঙতে
নিজেই চুরমার হয়ে যায়--
কুয়াশাকাল
ল ক্ষ্মী কা ন্ত ম ণ্ড ল
আকাশের রাতের দিকে তাকাই, অন্ধকার
থেকে চুঁইয়ে আসে জল; কনা কনা রক্তের
মুহূর্ত থেকে সুখ দুঃখের অতীত - তারা হয়ে
ফুটছে পলিমাটির মতো, সেই উর্বরতাটুকু
বুঝতেই পুনর্জন্মেরর কাছে হাত পাতি পথে
ধুসর দিগন্তরেখা জুড়ে কালোস্রোত -
আমার পায়েচলা পথে অনাবিল বাতাস
কে নেবে এই প্রাণের নিঃশ্বাস?
কার যেন আঁচল উড়তে উড়তে মিশে যায় শঙ্খচিলে
রাতের কুয়াশা জড়িয়ে আসে বুকে -
শীতবোধের পাতাগুলি জ্যোৎস্না ঝাড়তে থাকে; অবিরত
.
•প্রেমিকা সমাপতন•
হঠাৎ করে কেউ 'মনখারাপি' উপহার দেয় না আজকাল
খরস্রোতা তিস্তা জলপাহাড় পেরিয়ে, এখন রঙ্গিতের সহচরী
সামলে নেওয়ার মতো দীর্ঘশ্বাসে আজ কেবল 'ভালো আছি'-র চিঠি ;
কক্ষচ্যুত গ্রহের মতো কখনও সখনও, আমাকেও মনে করো শুনলাম...
তবে শরীরের রিডে আর মরসুমি প্রেম বাজেনা,
অঝোর বৃষ্টিতে উষ্ণতা খোঁজা দুটো অবয়ব, এখন বিষ কৃষ্ণচূড়া পুঁতেছে।
জামার কলার, ক্যাপুচিনো ঠোঁট - সব কেমন স্মৃতির দোয়াত!
তাই, আবেগ বেচে আমিও বেশ নাম কিনেছি।
তবে, আমাদের ভালোবাসাটা মিথ্যে ছিল না, আর স্পর্শগুলোও নয়...
বিভাজিকা ছুঁয়ে যেদিন বলেছিলে, "তোর হলাম" ;
সেদিন আমার গহ্বর জুড়ে শ্বেত মালতী ফুটেছিল!
তুমি বলেছিলে, একদিন বেগুনি ফুলে সাজিয়ে দেবে আমায়
কিন্তু জীবনানন্দের মতো প্রেমিক আর হলে কই, যে বনলতা হব?
ক্রিসমাসের শেষ ক্যারোল হয়তো গাওয়া হবে না একসাথে,
রডোডেনড্রনের ভিড়ে আরও একটা, প্রেমিকা সমাপতনের গল্প থাকবে কেবল...
তাই, হারিয়ে যাওয়ার ঠিকানায় পাহাড়ই রাখলাম, আর কেয়ার অফে তিস্তা।।
©তিয়াসা দত্ত
দাগ
চিত্তরঞ্জন গিরি
কেন ওরা অকারণে দাগ দিয়ে দেয়
খুব অল্প সময় ওরা নিজের মতো নদ নদী পাহাড় মরুভূমি সাজিয়ে নিজেদের মতো একটা পৃথিবী তৈরি করে
বেতারের তারে - ভিত্তিহীন সংবাদ ভাসিয়ে দেয়
এ ও এক আগুন! মুখরোচক ও রসালো -দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পড়ে।
মাটির কাছাকাছি আর মাটিতে মিশে যাওয়া এক নয়
শাশ্বত সূর্যকে যতই মেঘ ঢেকে রাখুক
তবুও তা তাৎক্ষণিক!
আঁধার ,তোমার স্বেচ্ছাচারিতা তোমারই ব্যর্থ অহংকার !
সূর্যকিরণ -সময়ের স্রোতে দেখায় তার উজ্জ্বল মুখ।
গ্রীষ্মের দাবদাহ সয়ে যাচ্ছি
শুধু অপেক্ষা -কালবেলার উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষমতা অর্জন!
ওরা দেখুক, কোন এক বরষায় সুপ্ত বীজ ,অঙ্কুরোদগম পেয়ে ,দূষণের দাগগুলো ওদেরই পৃথিবীকে করছে একদিন অনবরত বর্জন ।
অণুগল্প ••• দুঃস্বপ্ন
লেখক ••• শংকর ব্রহ্ম
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
" ভালবেসে যদি তুমি কষ্ট নাহি পাও
তবে সেটা ভালবাসা কিনা,
মনে আগে জেনে নাও। "
রাত বারটার পর শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা, নিয়েই ফেলল অধ্যাপক বিনোদ মজুমদার।
না আর নয়। অনেক হয়েছে। অণিমা রায় তার মেয়ের মত | তবু তাকে ছাড়া বাঁচবে না সে |
বিচার বুদ্ধি হারিয়ে, এতটা ভালবেসে ফেলেছে সে তার ছাত্রীকে ।
রাত এখন গভীর। কুকুরগুলো ডাকতে ঝিমিয়ে পড়েছে। হয়তো ঘুমিয়েও পড়ছে। জে নেই কেউ।
ফ্যান থেকে ফাঁসটা ঝুলিয়ে গলায় পরানোই আছে। শুধু টুলটা একটু পা দিয়ে ঠেলে দিলেই হল। এত ভালবেসেছে অণুকে এখন তার মরণ ছাড়া আর কোন গতি নেই।
কৃষ্ণও তো রাধাকে ভালবেসে ছিল।রাধা সম্পর্কে কৃষ্ণের মামী হত। আর বয়সের ব্যবধানও তাদের মধ্যে খুব একটা কম ছিল না। তাদের প্রেম নিয়ে কত অমর কাব্য লেখা হয়েছে যুগে যুগে। তাদেরটা ছিল লীলা। আর আমি মেয়ের বয়সী কারও সাথে প্রেম করলে সেটা
হয়ে যায় বিলা। মনে মনে ভাবল সে। কি বিচার এই পঙ্গু সমাজ ব্যবস্থার।
টুলটা পায়ের ধাক্কায় ঠেলে দেবে এমন সময় আচমকা ঘরে ঢুকল কে যেন। চমকে উঠল সে।
_ কে ?
_ আমি তোমার বিবেক
_ কি চাই তোমার ? কেন এসেছো এখানে?
_ তোমাকে সাহায্য করতে
_ কি ভাবে ?
_ টুলটা আমি সরিয়ে নিচ্ছি, তোমার আর কষ্ট করে টুলটা সরাতে হবে না।
_ না না না
চেচিয়ে উঠল বিনোদ।
অণু আমাকে এবারের মত বাঁচাও |
বাঁচাও প্লীজ •••
_ কেউ তোমাকে বাঁচাতে পারবে না।
অণিমা এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কাল সকালে উঠে খবরটা শুনবে।
কিম্বা খবরের কাগজের হেড লাইনে দেখবে
--একটি আত্মহত্যা আর অনেক জল্পনা--
আঁতকে উঠল সে | হঠাৎ তার ঘুমটা ভেঙে
গেল। গলা শুকিয়ে কাঠ। সারা শরীর ঘামে ভিজে,চপচপ করছে। বিছানা ছেড়ে উঠে এসে,এক বোতল জল ঢকঢক করে খেল সে।
জীবনে বাঁচার যে এত স্বাদ, এত আনন্দ বিনোদ আগে আর কখনো টের পায়নি। সারারাত সে আর ঘুমতে পারল না। আবার যদি দুঃস্বপ্নটা ফিরে এসে,তাকে সত্যি করে তোলে?
অজানা টান
-----------------
শুভায়ন বসু
(৯/১৩,শর্ট রোড,এ জোন,দুর্গাপুর-৭১৩২০৪
মোবাইল-৯৪৩৪৭৯২৫৪৯)
বাপ্পা ছোটবেলা থেকেই খুব দুরন্ত,সবাই ওর দুষ্টুমিতে জেরবার ।স্কুল থেকে হাজার বার কমপ্লেন আসার পর, শেষকালে বাবা-মা পর্যন্ত ওর ব্যাপারে ভয়ঙ্কর বিরক্ত । কড়া শাসনে ওকে বেঁধে রেখেছেন। কিন্তু পড়াশোনায় ও বেশ ভাল, খেলাধুলোতে তো বটেই। এমনকি ওর চেয়ে বড়, বাড়ির অন্য সব দাদা দিদিরাও, ওর সঙ্গে কোন কিছুতেই পেরে ওঠেনা।
সেদিন দুপুরে বাপ্পা স্কুল থেকে ফিরে, খেয়েদেয়ে, মার পাশে বসে একটা টিনটিনের পাতা উল্টাচ্ছিল। তখন চড়া রোদ, বাইরে বেরোনো মানা আছে। বাপ্পাও টিনটিনের কমিক্সেই মশগুল হয়ে গিয়েছিল।হঠাৎ ওর কেমন যেন একটা অস্বস্তি হতে লাগল। কেমন যেন একটা উশখুশ ,চঞ্চল ভাব। ওর বইতে আর মন বসল না ।খাট থেকে চুপিসাড়ে নেমে পড়ল।মার তখন সবে চোখটা লেগেছে,টেরও পেলেন না । বাপ্পার খালি মনে হতে লাগলো ওকে যেন কোথাও যেতে হবে। পায়ে পায়ে দরজাটা খুলে, সিঁড়ি দিয়ে কোন খেয়ালে ও নেমে গেল ।সচরাচর এই সময়টায়, ও যা করে না ,আজ যেন কোন অজানা টানে তাই করতে লাগল।কোলাপসিবল গেটটা আস্তে করে খুলে, বাড়ির বাইরে বেরিয়ে পড়ল ।তারপর, বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেদিকে ও কোনদিনও সেভাবে যায় না ,সেই মন্দিরতলার মাঠের দিকে যেতে লাগল। কেউ যেন ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে দুর্লঙ্ঘ্য আকর্ষণে, না গিয়ে উপায় নেই,ফিরে যাবারও এখন আর কোন পথ নেই ।
ছিমছাম নিস্তব্ধ দুপুর, চারিদিকে কেউ কোথাও নেই । মন্দিরের দরজাও বন্ধ ।মন্দিরের চাতালের যে দিকটায় অশ্বথ গাছটার ছায়া এসে পড়েছে, সেখানেই ও পা ঝুলিয়ে বসে পড়ল। দূরে চৌধুরীদের আমবাগান দেখা যাচ্ছে ,ওপাশে জনাবুড়ির ঝুপড়ি। তারপর পায়ে চলা রাস্তাটার ওপারেই বরুনকাকুদের বাড়ি । হঠাৎ চোখে পড়ল কুয়োতলায়, বরুণকাকুর পাঁচ বছরের ছেলে শুভ্র খেলা করছে । কুয়োর মধ্যে ঝুঁকে পড়ে কি যেন দেখতে গিয়ে, ঠিক তখনই পা পিছলে ঝপ্ করে কুয়োর জলে পড়ে গেল ।দেখেই বাপ্পার সাড় ফিরল, দুর্ঘটনাটা ঘটতে দেখে ওর মাথা কাজ করল, ও বুঝল ভীষণ বিপদ, এখনই সবাইকে ডাকতে হবে ।
বাপ্পার পরিত্রাহি চিৎকারে বরুণকাকিমা, জনাবুড়ি, পাশের বাড়িঘর থেকে আরও অনেকে ছুটে আসতে লাগল। মুহূর্তে ভিড় জমে গেল মন্দিরতলায় , তাড়াতাড়ি কুয়োর মধ্যে লোক নামানো হল। শেষমেষ শুভ্রকে শিগগিরই তোলা হল কুয়ো থেকে। ও বেশি জল খায়নি, একটু পরেই চোখ মেলে তাকাল। বরুণকাকিমা বাপ্পাকে জড়িয়ে ধরে চুমোয় চুমোয় অস্থির করে দিলেন। বারবার বলতে লাগলেন, বাপ্পার জন্যই কোলের ছেলেটাকে ফিরে পেয়েছেন ।পাড়াশুদ্ধু লোক এসে বাপ্পার পিঠ চাপড়ে দিয়ে গেল । সময়মতো ও এসে না পড়লে আর ঘটনাটা দেখে ফেলে সবাইকে না জানালে ,বাচ্চাটা কুয়োতেই পড়ে থাকত, কেউ জানতেও পারত না ,বাঁচানোও যেত না।
বাপ্পার মনটাও খুব খুশি। ও কিন্তু বুঝতে পারছিল না ,ঠিক তখনই, কেন সেই অজানা টানে ও ওখানে এসে হাজির হল , এই অসময়! আর ও আসার ঠিক পরে পরেই ঘটনাটা ঘটল কেন? আরো একটু আগে হলে তো ও জানতেই পারত না ? আরাম করে মার পাশে বসে টিনটিন পড়ছিল । বাপ্পা প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পায় না।
দুর্গা
- সৌমিত্র দেব
আমার অর্বাচীন শহরে দুর্গার নিগৃহ পরিণতি...!
সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ে তার ফুল্লকুসুমিত দ্যুতি।
আমার শহরে দুর্গা ডাস্টবিনে খাবার কুড়োয়,
ভিক্ষার থালা নিয়ে দাঁড়ায় রাজপথে।
ছেঁড়া কাপড় পড়ে, বাড়ি বাড়ি ঝি-এর কাজ করে...
দিন শেষে ক্লান্তি লুকোয় ছেলের কাছে, অজুহাতে।
আমার শহরে দুর্গা শরীর বেচে নিয়ন আলোয়,
পেটের ক্ষুধা মেটায়, যৌনতার বদলে...!
দুর্গা আমার, বৃদ্ধাশ্রম সেবিকা,
কপালের ঘাম মুছে, মায়ের আঁচলে...।
আমার শহরে দুর্গা, আই.পি.এস. অফিসার,
রিভলভারের গুলিতে, ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে।
রাইফেল হাতে বর্ডার পাহারা দেয়...
মিসাইল নিয়ে ঢুকে যায় অতর্কিতে, শত্রুর ঘরে।
আমার শহরে দুর্গা, লেডি ডাক্তার...
প্রতিদিন জীবন নিয়ে খেলা, রক্তমাখা হাতে।
দুর্গা আমার কল্লোলিনী নববধূ,
হালকা শীতের সকালে শিউলি কুড়োয়, শারদ প্রভাতে।
সংসারের বড় মেয়েটাই দুর্গা, আমার শহরে...
যে দুহাতে দশদিক সামলায়, নিভৃতে অশ্রু ঝরায় অকাতরে।
আসলে, প্রতিটা মেয়েই দুর্গা, দুর্গা প্রতিটা ঘরে ঘরে,
আসলে, দুর্গা সেই; যে তোমার দুর্গতি নাশ করে।
দুর্গা আছে গ্রামে গঞ্জে, দুর্গা আছে শহরে,
বুকের ভেতর দুর্গা আছে, দুর্গা আছে অন্তরে...।
ঠিকানাঃ
সৌমিত্র দেব
পিতাঃ শংকর মনি দেব
●ভুলে যেও●
দেবাদৃতা ভট্টাচার্য্য
ভুলে যেও প্রেম,
ভুলে যেও দু'ঠোঁটের সঙ্গমস্থল-
স্মৃতিগুলোকে খামে ভরে হারিয়ে ফেলো;
ভুলে যেও যারা একদিন বৃষ্টিতে ভিজেছিল।
নিঝুম রাতের পর যারা ভেঙে গেছিল,
মনে বলেছিল-"জানোনা এখনও কতটা ভালোবাসি!"
সেই চিঠির খসড়া ছিঁড়ে ভুলে যেও তাদের
ভুলে যেও,ইচ্ছে করে কেন তারা পথ হারিয়েছিল।
আদরের শেষের আদিম ঘুম যেমন ঘুমোয় জ্যোতিষ্ক,
ছায়াপথ বেয়ে নেমে আসে প্রিয় সুগন্ধের বাস-
ঘামে ভেজা চিঠির আর্দ্র কাগজে ধ্যবড়ানো কালির সম্বোধনে
মিলিয়ে যায় প্রথম প্রেমের অনুভুতির পর ধীর পায়ের ছাপ।
তবু তুমি সবটুকু ভুলে যেও প্রেম,
চোখের তারার ঘৃণা একটু করে কষ্টে হারিয়ে যেতে দেখেও,
সবটা তোমায় ভুলতে হবেই,না বলা কথাও-
ভুলে যেও,ঠোঁটের পরশে নেমে আসা চিবুকের তিলকেও........
পুরুলিয়া
___________
ঝালদা-হাঁড়িতে দু'টাকা কিলো চাল ফুটছে
অন্নপূর্ণা মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে
গড় পঞ্চকোটের ভগ্ন স্তম্ভ চোঁয়া লাল জলে
আদিবাসী নৃত্যের তালে তালে
মহুয়া মাতালের পদক্ষেপে
দুর্গা ফলস্ ঝরে পড়ছে অস্ট্রিক শব্দমালায়
গরম পিচচুমায়
বান্দোয়ানের দলছুট হাতির পায়ে ফোস্কা-জ্বালা
রাঁচি-হাতিয়া এক্সপ্রেস থেকে
পিলপিল করে নেমে আসছে
শালপ্রাংশু দেশোয়ালি
অযোধ্যা পাহাড়ের পদচাতালে ঝুঁকে পড়া রোদ
শুষে নিচ্ছে রামের ছৌমুখোশ
সুজিত রেজ
অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর
বিএন
জটিলতা
দীপশিখা চক্রবর্তী
আজকাল ঘুমের মধ্যেও চমকে উঠি বারবার,
খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বোঝার চেষ্টা করি-
নির্জনতম অন্ধকারের সাজানো দুর্বোধ্যতা;
টেনে ছিঁড়ে ফেলতে থাকি কালো পোশাকের সুতোয় নিঁখুতভাবে বুনে চলা নিরেট ছায়ার বিভ্রম,
এগোতে থাকি...
কখন যেন তলিয়ে যাই-
অচেনা অজানা এক না-ফেরার পথে;
স্পষ্ট শুনি-
সিঁড়ি ভেঙে নেমে যাওয়া আলোর দরজায় বারবার ধাক্কা দেওয়ার শব্দ;
যে কোনো সময় ফিরে যেতে পারে বুঝেও চুপ করে থাকি,
ভাবতে থাকি-
এত আলো, কিভাবে সাজিয়ে ফেলতে পারে অসম্ভব এক যন্ত্রণার একলাঘর!
হঠাৎই একটা দীর্ঘ নিস্তব্ধতা;
মাথার মধ্যের অস্থিরতায় তখন জেগে ওঠে সন্ত্রস্ত এক শয্যাদৃশ্য,
নেমে আসে শেষের গল্পে এক সমান্তরাল ঘুমের জটিলতা;
আলো আর অন্ধকারের মাঝে গোলক ধাঁধার বৃত্তে আঁকা শূন্যস্থান বারবার প্রশ্ন করে-
এই সব বোধ কি স্বপ্নে সম্ভব!
হয়তো...
অনুগল্প
ব্ল্যাকফরেষ্ট
নমিতা পাল
গত আট মাস ধরে অপমানের ঘা টা আজও দগ দগ করছে। পারিবারিক অবস্থা ভালো নয়, তবে একাডেমিক রেজাল্ট বেশ ভালো আর পিউকেও অঙ্কটা ভালোই করায়, সেই সুবাদে এই কলেজে পার্টটাইমার হিসাবে চাকরিটা করে দেওয়া। তারপরও ক্লাসরুম থেকে বেরনোর সময় আচমকা ধাক্কা লাগায় স্টাফরুমে সে দিন কমলিকা যেভাবে অপমান করেছিল যেন তাকে রেপড করা হয়েছে। আজ কলেজে পৌঁছে সি.সি. টিভি সিস্টেমর সমস্যা জানতে পেরেই মাথার মধ্যের শয়তানটা নড়ে ওঠে কেমিস্ট্রির সিনিয়র প্রফেসর সায়ন্তন বসু মল্লিকের। সে দিন বিনা কারণে যে দোষ গায়ে মেখেছিলেন নিঃশব্দে তার প্রতিশোধ নেওয়ার আজকের মত ভালো সুযোগকে হাতছাড়া হতে দেওয়া যাবেনা। ল্যান্ড লাইন থেকে একটা ফোন যায় শুধু। তারপর সোজা ল্যাবে চলে যান। দীর্ঘ অপেক্ষা। ওইতো ল্যাবের দরজা ঢেলে এক নারী ছায়া মূর্তি ভিতরে ঠুকছে। এমন সময় সেলফোনের মেসেজ টোন বেজে ওঠে। তড়িঘড়ি সেলফোনের সুইচটা অফ করেই ক্ষিপ্র বেগে এগিয়ে যান শিকারের দিকে। আলো বন্ধ করে সবকিছু গুছিয়েই রেখেছিলেন, বাগে আনতে কয়েক মিনিট। একটু গোঙানি তারপর নিজের পাশবিক উপস্থাপন, আরও কিছুক্ষণ পর সব স্তব্ধ। প্রাণে মারতে চাননি, কিন্তু শেষ মুহূর্তে আর অন্য উপায় ছিলনা। একটু টেনশন হলেও হাতের গ্লাভস্ খুলে ফাঁকা করিডর ধরে দ্রুত সিঁড়ির দিকে যেতে যেতে এক তৃপ্তির হাসি ছড়িয়ে পড়ে প্রফেসরের শক্ত চোয়ালে। জুনিয়রের অপমানের স্থায়ী আবসান। নিজের সামাজিক আর আর্থিক ক্ষমতার জোরে মার্ডার কেস সামলে নেবেন, বাকি রইলো শুধু মৃতের আত্মার শান্তি কামনায় মোমবাতি মিছিলে হাঁটা।
সোফায় গা এলিয়ে সেল ফোন অন করতেই কমলিকার মেসেজে চোখ আটকে যায়, 'সরি স্যার, কলেজে যাওয়ার সময় স্কুটিতে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। রাস্তাতে পিউকে পেয়ে ওকে দিয়েই বইদুটি পাঠিয়ে দিলাম।' মেয়েলি সুগন্ধি, হাইড্রোজেন সালফাইড, সালফিউরিক অ্যাসিড, মিথেন .... মোমবাতির আবছা আলোয় পুড়ে শুধুমাত্র টাটকা রক্তের আঁশটে গন্ধ ছুটে আসছে সায়ন্তনের দিকে।
রমলার গলা ভেসে আসে - 'ব্ল্যাকফরেষ্টে ক্রিম আর চকোলেটের পরিমাণটা বেশীই দিয়েছেনতো দাদা! মেয়ের আবার চকোলেট খুব পছন্দ। হ্যাঁ দাদা নাম ইংরেজীতেই লিখবেন - পিউ, ১৫ বছর। ওর বাবা সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ যাবেন, কেক যেন রেডি থাকে।'
নমিতা পাল
" তবুও"
মানবেন্দ্র নাথ মাজী।
অনন্ত আকাশে রোদ নিয়ে খেলা করো কত
শব্দের মিছিলেও এসে লাগে তার ছটা,
ভালোবেসে যাও তবু ভালোবাসা নাই বা পেতে পারো
খেদ নিয়ে জটলা-গুলি মারো হা-হুতাশ
ছুঁড়ে ফেলো একই কথার কচলানো বুলি।
আমারি আঙিনা জুড়ে কত রঙেরই মেলা
মাঝে মাঝে চোখ মুখ ঢুকে বেরিয়ে আসে আগুন--
স্মৃতির কষা পাথরের ঘায়;
জনান্তিকে বলো তুমি--ভালোবাসার কারখানায়
রেডিমেড সব মনোহারী দ্রব্য;
বিলীন শূণ্যতায় অসীমের আস্ফালন।
এত যন্ত্রনা তথাপি হৃদয়ের অরণ্যে, তোমায়
বুঝতে দেইনি কখনও।
পুজোর ছুটি
নাজমীন মন্ডল
কাল থেকে কলেজে পুজোর ছুটি পরে যাবে দেবেশের। হঠাৎ করেই ছোটবেলার পুজোর ছুটির দিনগুলো হুড়মুড় করে মনে পড়ে গেলো দেবেশের। মায়ের হাতে লাগানো শিউলিগাছটায় ফুল ফুটতো। সকালবেলা সারা উঠোনে শিউলি ফুল ছড়িয়ে থাকতো। রাস্তার ধারের কাশফুল গুলোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে স্কুল যেতো সে।
এলাকার মধ্যে তাদের গ্রামের দুর্গা পুজো সবথেকে সমারোহে হয়। তার বাবা স্বয়ং সেই দুর্গা প্রতিমা তৈরী করতেন। পুজোর সময় তার বাবার কদর অনেক বেড়ে যেতো। ব্যস্ততার গর্বে তার চোখেমুখে এক অনির্বচনীয় প্রশান্তি ছড়িয়ে থাকতো। পুজো যত কাছে আসতো তার বাবার ব্যস্ততার সঙ্গে সঙ্গে দেবেশের উত্তেজনাও বেড়ে চলতো। অবাক চোখে দেখতো কীভাবে বাবা প্রতিমার চক্ষুদান করছেন, পায়ে আলতা পরাচ্ছেন, গয়না পরাচ্ছেন, হাতে একটার পর একটা অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন। বাবা তার উত্তরসূরিকে একটু একটু করে শেখাতো, নানারকম গল্প শোনাতো। তারপর অপেক্ষা শেষে পুজো চলেই আসতো। গোটা গ্রাম আনন্দের জোৎস্নায় ভেসে যেতো। নিমেষে সেই পুজো শেষও হয়ে যেতো। পুজোর পরের দিনগুলোও কেটে যেতো পুজোর দিনগুলোর গল্পে, স্মৃতিচারণে।
আঠারোটা বসন্ত পুজোর ছুটিগুলো নির্বিঘ্নে কেটেছিলো। জীবনে অভাব ছিলো, দুঃখ ছিলো তবু দুশ্চিন্তা ছিলোনা। হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে বাবা মারা গেলো। এরপর থেকে প্রতিবছর পুজো আসে পুজোর ছুটি আসে কিন্তু আগের মতো আর আসেনা। বাড়িতে শোকস্তব্ধ মা, ছোট বোনের দায়িত্ব তার কাঁধে। এই গ্রামের পুজোর দুর্গা ঠাকুর তার বাবা বানাতেন, উত্তরাধিকার সূত্রে সে সেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলো। তার বাবা একটু একটু করে নিজের হাতে তাকে শিখিয়েছে সবকিছু। বাবার মতোই উত্তরাধিকার সূত্রে সে পেয়েছে প্রতিভা। এতোকিছুর পরেও পড়াশোনাটা ছাড়েনি সে। টিউশন নিতে পারেনি তাই কলেজের ক্লাসগুলোই ভরসা তার। এজন্য অনেক কাজ বাকি থেকে যায়। পুজোর ছুটি পরলে একমুহূর্ত বসার সময় পায়না সে। ষষ্ঠী এলে সব কাজ সারা হয় তখন একটু স্বস্তি পায় সে। লক্ষ্মীপুজোর জন্য বেশ কয়েকটা প্রতিমার অর্ডার থাকে, পুজোর দিনগুলোয় তারই বাকি কাজগুলো সারতে হয়। এভাবেই পুজোর ছুটিগুলো ব্যস্ততাতেই কেটে যায়। পুজো আসে, ছুটি আসেনা। তার বাবাকেও সে দেখেছে এই পুজোর সময়টাতে ভীষণ ব্যস্ত থাকতে। কিন্তু সেই ব্যস্ততার মধ্যে এক অদ্ভুত পরিতৃপ্তি ছিলো। তার মধ্যেও হয়তো আছে সেই পরিতৃপ্তি। তবু বারবার মনে হয় বাবা থাকলে বেশ হতো। তাকে সাহায্য করতে না পারুক শুধু দেখতো তার কাজ। মাঝেমাঝে ভুল ধরতো। সবাই দেবেশের প্রশংসা করে বলে "তোমার কিন্তু হাত আছে, বাবার মতো।" বাবা শুনলে হয়তো তার চোখ চিকচিক করতো, হয়তো বা দু একফোঁটা জল ঝরেও পড়তো। বাবা শুধুমাত্র দর্শক হিসাবে থাকলেও হয়তো কাজ থাকতো, দায়িত্ব থাকতো না। হয়তো পরিশ্রম হতো, ক্লান্তি থাকতো না। পুজোর ছুটিগুলো সেই যে হারিয়ে গেলো আর ফিরে এলো না।
অর্জিত অন্ধকার
বিশ্বজিৎ মণ্ডল
রিখটার স্কেলে ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে,মাত্রা....
তামাম ভূমিপথ ভাঙতে ভাঙতে গড়িয়ে যাচ্ছি___
মেধাবী পৃথিবীর দিকে
কখনও উষ্ণীষ খুলে বলিনি,উর্বী জয়ের গল্প
কেবল দেখেছি,পরিযায়ী পাখিদের মত অসময়ে
তোমার চলে যাওয়া...
শেষ বিকেলে অশুভ নক্ষত্রপাতের আর্তনাদে
তোমার শালীন কন্দরে মুছে যাওয়া...
—————————***————————————
কবিতা:
//'প্রেম' - কবিতা নয় //
”'প্রেম' কে কবিতা ভেবে ভুল করেছিস স্নিগ্ধা।
প্রেম টা একটা আভিজাত্য বিষয়, যেখানে-
প্রয়োজনে মাথা নীচেও রাখা যায়।
আর কবিতা হল মনের ভাবনা।
তুই কতখানি তোর ভাবনার বিস্তার ঘটাবি
সেটা পাঠক দেখবে'"।
একটু জ্ঞানের সুরেই কথাগুলো বলছিল অরিন্দম।
পালানো প্রেমের দৃশ্যে স্নিগ্ধা তখন বিহ্বল।
” স্নিগ্ধা তুই কিন্ত ভুল করছিস।
একটা নিছক প্রেম ষড়রিপুর বাইরে নয়,
নাটকীয়তায় মোড়া প্রেম আসলে বর্ষার দামোদর।
হ্যাঁ, কিছু স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়”।
স্নিগ্ধা অভিধান দেখে 'ষড়রিপুর' জ্ঞান অর্জন,
করে, আর বলে - "পরের টা দেখে নিস,
অরিন্দম, রবীন্দ্রনাথ কে গুলে খেলাম।
তবে কবিতাটা যদি প্রেম
তুহিন চক্রবর্তী
নিঃসঙ্গ শহুরে নাগরিক
রাবাত রেজা নূর
সোডিয়াম বাতির নিচে জমা হয় গান; পিঙ্গলা আকাশের নিচে হেটে চলে এক নিঃসঙ্গ শহুরে নাগরিক। চোখ নীল।
আস্তিনের নিচে রাতের বেলায়ও দিনের আলোর মত বিজলী বাতির গল্প বেশুমার।
নিঃসঙ্গ শহুরে নাগরিক বসে থাকে সদর ঘাটে; অন্ধকারের মুখোমুখি।
হাতে আঁধপোড়া সিগারেট ক্ষয়ে এসে বেমালুম আঙ্গুল পোড়ায়
সম্বিত ফিরে এলে ভাবে ওপারে কেরানীগঞ্জ
জেলখানাটা দেহের ভেতর।
হাওয়া বয় বুড়িগঙ্গায়; টিমটিমে লন্ঠনের বুক থেকে বেরোয় হাহুতাশ।
রমনার বেঞ্চিতে চিৎ হয়ে আকাশ দেখে নিঃসঙ্গ শহুরে নাগরিক।
পকেটের ছেড়া নোট ভিজে যায় পঁচা আঙুলের ঘামে।
নিঃসঙ্গ শহুরে নাগরিক ভাবে যদি রমনায় কেটে দেওয়া যেতো তিনটে দুপুর। সিগারেটের বক্স থেকে বেরোয় শেষ সিগারেট।
ধোয়ার রিং মিশে যায় কৃষ্ণচূড়ার অক্সিজেনের সাথে। গল্পের পকেট তখনও ভরপুর।
নিঃসঙ্গ শহুরে নাগরিক ফিরে আসে জহু হলের পুকুর পাড়ে।
একটা ঘুঘু ভীষণ ডাকে। পুকুরে খেলা করে শহুরে পুঁটির ঝাঁক।
নিঃসঙ্গ শহুরে নাগরিকের গল্প শোনে না কেউ; পুকুরে ঢেউ ওঠে সহজ সরল।
প্রতিদিন এই শহরের অলি গলিতে নিঃসঙ্গ শহুরে নাগরিকের গল্প জমে বিস্তর।
কিন্তু সেই গল্প শোনার মানুষ কই?
রাবাত রেজা নূর
___উমা এলো ঘরে
সুনন্দ মন্ডল
লাল আলোর সংকেত,
ভাঙা চালায় খেজুরে আলাপ
মিষ্টতা কাশ ফুলের নাকছাবিতে...
সুগন্ধ ওই কোণের শ্যাওলা ভেঙে
মহল্লায় সুর বেঁধেছে কানা মুনি
গলির বুকে আল্পনা
মহালয়ার ভোর।
উমা নাকি এলো ঘরে
মাটির প্রদীপে জ্বলবে আলো
নাকি জ্বলবে মাটির বুক!
-------------
।
দুটি কবিতা
রথীন পার্থ মণ্ডল
১. পুজোর খবর
শারদ রানি আসবে জানি
ঢাকের বাদ্যি বাজে,
পেঁজা তুলোর মেঘগুলো সব
চলছে শুভ্র সাজে।
হঠাৎ দেখি ঝর্না ধারায়
বৃষ্টি নেমে এলো,
সারা বছরের আবর্জনা
ধুইয়ে দিয়ে গেল।
সূয্যিমামা রূপোলি জামা
পড়ায় সবার গায়,
কাশ ফুলেরা দিচ্ছে সাড়া
মাঠের ডায়ে বায়।
সকালবেলায় শিউলি ঝরায়
গন্ধে সুবাস যাতে,
শারদ রানির ষষ্ঠী পূজা
শুরু হবে প্রাতে।
২. শারদীয়া
মেঘমুক্ত নীল আকাশে
ঝলমলে এক রবি,
কাশ-শিউলি-পদ্মফুলে
মহালয়ার ছবি।
সবার সাথে খুশিতে মেতে
শারদীয়া সাজে,
শঙ্খ-সানাই-ঢাকের তালে
আগমনী বাজে।
আরো আছে, শিশিরকণা
মিষ্টি হিমেল হাওয়া,
গভীর রাতে ফুল তুলতে
কোথাও হারিয়ে যাওয়া
প্রতিক্ষা
সমরেশ পর্বত
আজ, তুমি আসবে বলে
আজ জমা হয়ে আছে কতো
সারা পৃথিবীর জংজাল ধুলো ময়লা।
তোমার অপেক্ষায় দিন
গুনতে গুনতে...অবশেষে
আজ বড়ো ক্ল্যান্ত সবাই
এ শহর, এ গ্রাম বাংলা।
রস কস হীন আজ
ভরা নদী বাঁকা নদী
যতো শুখনো খাল বিল,
চারিদিকে মাটি ফাটা
বন্ধ ইট ভাঁটা
শুখিয়েছে বড়ো ঝিল।
চাতক আর চায় নাকো
শুধুই ভাষা মেঘ আকাশে,
ডানামেলে উঁড়ে যায়
কয়ে যায় বাতাসে।
বৃষ্টি এখন হচ্ছেনা বন্ধু
মেঘ দিয়েছে পাড়ি,
মেঘের বুকে যাচ্ছে ভেসে
বৃষ্টি শশুড় বাড়ি ।
এই জয়
লক্ষ্মী কান্ত মণ্ডল
গায়ে মাখলাম শিরীষফুল, বাতাসের ঝাপটায়
নিজের বেসুরো যন্ত্রগুলো খুলে দিচ্ছে
জীর্ণ বাড়ির প্রত্যেকটা প্রহর, যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা চলছে-
রাতে তৃষ্ণার আধার ধরতেই মেঘ বলল --
আকাশ তার ঈশ্বর, সে পায়েস রান্না করে
কোন এক গৌতমের জন্য
তখন নয়নতারার টবটা পড়ে গিয়ে ভেঙে যায়
আমি সেই দিকে তাকিয়ে রাতের নিরাময় খুঁজি-
কলসি ভাঙে
মগ্ন রসিদ খান
অন্ধকারের অস্থিগুলো মেঘ স্তর ভাঙতে ভাঙতে
নিজেই চুরমার হয়ে যায়--
কুয়াশাকাল
ল ক্ষ্মী কা ন্ত ম ণ্ড ল
আকাশের রাতের দিকে তাকাই, অন্ধকার
থেকে চুঁইয়ে আসে জল; কনা কনা রক্তের
মুহূর্ত থেকে সুখ দুঃখের অতীত - তারা হয়ে
ফুটছে পলিমাটির মতো, সেই উর্বরতাটুকু
বুঝতেই পুনর্জন্মেরর কাছে হাত পাতি পথে
ধুসর দিগন্তরেখা জুড়ে কালোস্রোত -
আমার পায়েচলা পথে অনাবিল বাতাস
কে নেবে এই প্রাণের নিঃশ্বাস?
কার যেন আঁচল উড়তে উড়তে মিশে যায় শঙ্খচিলে
রাতের কুয়াশা জড়িয়ে আসে বুকে -
শীতবোধের পাতাগুলি জ্যোৎস্না ঝাড়তে থাকে; অবিরত
.
•প্রেমিকা সমাপতন•
হঠাৎ করে কেউ 'মনখারাপি' উপহার দেয় না আজকাল
খরস্রোতা তিস্তা জলপাহাড় পেরিয়ে, এখন রঙ্গিতের সহচরী
সামলে নেওয়ার মতো দীর্ঘশ্বাসে আজ কেবল 'ভালো আছি'-র চিঠি ;
কক্ষচ্যুত গ্রহের মতো কখনও সখনও, আমাকেও মনে করো শুনলাম...
তবে শরীরের রিডে আর মরসুমি প্রেম বাজেনা,
অঝোর বৃষ্টিতে উষ্ণতা খোঁজা দুটো অবয়ব, এখন বিষ কৃষ্ণচূড়া পুঁতেছে।
জামার কলার, ক্যাপুচিনো ঠোঁট - সব কেমন স্মৃতির দোয়াত!
তাই, আবেগ বেচে আমিও বেশ নাম কিনেছি।
তবে, আমাদের ভালোবাসাটা মিথ্যে ছিল না, আর স্পর্শগুলোও নয়...
বিভাজিকা ছুঁয়ে যেদিন বলেছিলে, "তোর হলাম" ;
সেদিন আমার গহ্বর জুড়ে শ্বেত মালতী ফুটেছিল!
তুমি বলেছিলে, একদিন বেগুনি ফুলে সাজিয়ে দেবে আমায়
কিন্তু জীবনানন্দের মতো প্রেমিক আর হলে কই, যে বনলতা হব?
ক্রিসমাসের শেষ ক্যারোল হয়তো গাওয়া হবে না একসাথে,
রডোডেনড্রনের ভিড়ে আরও একটা, প্রেমিকা সমাপতনের গল্প থাকবে কেবল...
তাই, হারিয়ে যাওয়ার ঠিকানায় পাহাড়ই রাখলাম, আর কেয়ার অফে তিস্তা।।
©তিয়াসা দত্ত
দাগ
চিত্তরঞ্জন গিরি
কেন ওরা অকারণে দাগ দিয়ে দেয়
খুব অল্প সময় ওরা নিজের মতো নদ নদী পাহাড় মরুভূমি সাজিয়ে নিজেদের মতো একটা পৃথিবী তৈরি করে
বেতারের তারে - ভিত্তিহীন সংবাদ ভাসিয়ে দেয়
এ ও এক আগুন! মুখরোচক ও রসালো -দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পড়ে।
মাটির কাছাকাছি আর মাটিতে মিশে যাওয়া এক নয়
শাশ্বত সূর্যকে যতই মেঘ ঢেকে রাখুক
তবুও তা তাৎক্ষণিক!
আঁধার ,তোমার স্বেচ্ছাচারিতা তোমারই ব্যর্থ অহংকার !
সূর্যকিরণ -সময়ের স্রোতে দেখায় তার উজ্জ্বল মুখ।
গ্রীষ্মের দাবদাহ সয়ে যাচ্ছি
শুধু অপেক্ষা -কালবেলার উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষমতা অর্জন!
ওরা দেখুক, কোন এক বরষায় সুপ্ত বীজ ,অঙ্কুরোদগম পেয়ে ,দূষণের দাগগুলো ওদেরই পৃথিবীকে করছে একদিন অনবরত বর্জন ।
অণুগল্প ••• দুঃস্বপ্ন
লেখক ••• শংকর ব্রহ্ম
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
" ভালবেসে যদি তুমি কষ্ট নাহি পাও
তবে সেটা ভালবাসা কিনা,
মনে আগে জেনে নাও। "
রাত বারটার পর শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা, নিয়েই ফেলল অধ্যাপক বিনোদ মজুমদার।
না আর নয়। অনেক হয়েছে। অণিমা রায় তার মেয়ের মত | তবু তাকে ছাড়া বাঁচবে না সে |
বিচার বুদ্ধি হারিয়ে, এতটা ভালবেসে ফেলেছে সে তার ছাত্রীকে ।
রাত এখন গভীর। কুকুরগুলো ডাকতে ঝিমিয়ে পড়েছে। হয়তো ঘুমিয়েও পড়ছে। জে নেই কেউ।
ফ্যান থেকে ফাঁসটা ঝুলিয়ে গলায় পরানোই আছে। শুধু টুলটা একটু পা দিয়ে ঠেলে দিলেই হল। এত ভালবেসেছে অণুকে এখন তার মরণ ছাড়া আর কোন গতি নেই।
কৃষ্ণও তো রাধাকে ভালবেসে ছিল।রাধা সম্পর্কে কৃষ্ণের মামী হত। আর বয়সের ব্যবধানও তাদের মধ্যে খুব একটা কম ছিল না। তাদের প্রেম নিয়ে কত অমর কাব্য লেখা হয়েছে যুগে যুগে। তাদেরটা ছিল লীলা। আর আমি মেয়ের বয়সী কারও সাথে প্রেম করলে সেটা
হয়ে যায় বিলা। মনে মনে ভাবল সে। কি বিচার এই পঙ্গু সমাজ ব্যবস্থার।
টুলটা পায়ের ধাক্কায় ঠেলে দেবে এমন সময় আচমকা ঘরে ঢুকল কে যেন। চমকে উঠল সে।
_ কে ?
_ আমি তোমার বিবেক
_ কি চাই তোমার ? কেন এসেছো এখানে?
_ তোমাকে সাহায্য করতে
_ কি ভাবে ?
_ টুলটা আমি সরিয়ে নিচ্ছি, তোমার আর কষ্ট করে টুলটা সরাতে হবে না।
_ না না না
চেচিয়ে উঠল বিনোদ।
অণু আমাকে এবারের মত বাঁচাও |
বাঁচাও প্লীজ •••
_ কেউ তোমাকে বাঁচাতে পারবে না।
অণিমা এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কাল সকালে উঠে খবরটা শুনবে।
কিম্বা খবরের কাগজের হেড লাইনে দেখবে
--একটি আত্মহত্যা আর অনেক জল্পনা--
আঁতকে উঠল সে | হঠাৎ তার ঘুমটা ভেঙে
গেল। গলা শুকিয়ে কাঠ। সারা শরীর ঘামে ভিজে,চপচপ করছে। বিছানা ছেড়ে উঠে এসে,এক বোতল জল ঢকঢক করে খেল সে।
জীবনে বাঁচার যে এত স্বাদ, এত আনন্দ বিনোদ আগে আর কখনো টের পায়নি। সারারাত সে আর ঘুমতে পারল না। আবার যদি দুঃস্বপ্নটা ফিরে এসে,তাকে সত্যি করে তোলে?
অজানা টান
-----------------
শুভায়ন বসু
(৯/১৩,শর্ট রোড,এ জোন,দুর্গাপুর-৭১৩২০৪
মোবাইল-৯৪৩৪৭৯২৫৪৯)
বাপ্পা ছোটবেলা থেকেই খুব দুরন্ত,সবাই ওর দুষ্টুমিতে জেরবার ।স্কুল থেকে হাজার বার কমপ্লেন আসার পর, শেষকালে বাবা-মা পর্যন্ত ওর ব্যাপারে ভয়ঙ্কর বিরক্ত । কড়া শাসনে ওকে বেঁধে রেখেছেন। কিন্তু পড়াশোনায় ও বেশ ভাল, খেলাধুলোতে তো বটেই। এমনকি ওর চেয়ে বড়, বাড়ির অন্য সব দাদা দিদিরাও, ওর সঙ্গে কোন কিছুতেই পেরে ওঠেনা।
সেদিন দুপুরে বাপ্পা স্কুল থেকে ফিরে, খেয়েদেয়ে, মার পাশে বসে একটা টিনটিনের পাতা উল্টাচ্ছিল। তখন চড়া রোদ, বাইরে বেরোনো মানা আছে। বাপ্পাও টিনটিনের কমিক্সেই মশগুল হয়ে গিয়েছিল।হঠাৎ ওর কেমন যেন একটা অস্বস্তি হতে লাগল। কেমন যেন একটা উশখুশ ,চঞ্চল ভাব। ওর বইতে আর মন বসল না ।খাট থেকে চুপিসাড়ে নেমে পড়ল।মার তখন সবে চোখটা লেগেছে,টেরও পেলেন না । বাপ্পার খালি মনে হতে লাগলো ওকে যেন কোথাও যেতে হবে। পায়ে পায়ে দরজাটা খুলে, সিঁড়ি দিয়ে কোন খেয়ালে ও নেমে গেল ।সচরাচর এই সময়টায়, ও যা করে না ,আজ যেন কোন অজানা টানে তাই করতে লাগল।কোলাপসিবল গেটটা আস্তে করে খুলে, বাড়ির বাইরে বেরিয়ে পড়ল ।তারপর, বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেদিকে ও কোনদিনও সেভাবে যায় না ,সেই মন্দিরতলার মাঠের দিকে যেতে লাগল। কেউ যেন ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে দুর্লঙ্ঘ্য আকর্ষণে, না গিয়ে উপায় নেই,ফিরে যাবারও এখন আর কোন পথ নেই ।
ছিমছাম নিস্তব্ধ দুপুর, চারিদিকে কেউ কোথাও নেই । মন্দিরের দরজাও বন্ধ ।মন্দিরের চাতালের যে দিকটায় অশ্বথ গাছটার ছায়া এসে পড়েছে, সেখানেই ও পা ঝুলিয়ে বসে পড়ল। দূরে চৌধুরীদের আমবাগান দেখা যাচ্ছে ,ওপাশে জনাবুড়ির ঝুপড়ি। তারপর পায়ে চলা রাস্তাটার ওপারেই বরুনকাকুদের বাড়ি । হঠাৎ চোখে পড়ল কুয়োতলায়, বরুণকাকুর পাঁচ বছরের ছেলে শুভ্র খেলা করছে । কুয়োর মধ্যে ঝুঁকে পড়ে কি যেন দেখতে গিয়ে, ঠিক তখনই পা পিছলে ঝপ্ করে কুয়োর জলে পড়ে গেল ।দেখেই বাপ্পার সাড় ফিরল, দুর্ঘটনাটা ঘটতে দেখে ওর মাথা কাজ করল, ও বুঝল ভীষণ বিপদ, এখনই সবাইকে ডাকতে হবে ।
বাপ্পার পরিত্রাহি চিৎকারে বরুণকাকিমা, জনাবুড়ি, পাশের বাড়িঘর থেকে আরও অনেকে ছুটে আসতে লাগল। মুহূর্তে ভিড় জমে গেল মন্দিরতলায় , তাড়াতাড়ি কুয়োর মধ্যে লোক নামানো হল। শেষমেষ শুভ্রকে শিগগিরই তোলা হল কুয়ো থেকে। ও বেশি জল খায়নি, একটু পরেই চোখ মেলে তাকাল। বরুণকাকিমা বাপ্পাকে জড়িয়ে ধরে চুমোয় চুমোয় অস্থির করে দিলেন। বারবার বলতে লাগলেন, বাপ্পার জন্যই কোলের ছেলেটাকে ফিরে পেয়েছেন ।পাড়াশুদ্ধু লোক এসে বাপ্পার পিঠ চাপড়ে দিয়ে গেল । সময়মতো ও এসে না পড়লে আর ঘটনাটা দেখে ফেলে সবাইকে না জানালে ,বাচ্চাটা কুয়োতেই পড়ে থাকত, কেউ জানতেও পারত না ,বাঁচানোও যেত না।
বাপ্পার মনটাও খুব খুশি। ও কিন্তু বুঝতে পারছিল না ,ঠিক তখনই, কেন সেই অজানা টানে ও ওখানে এসে হাজির হল , এই অসময়! আর ও আসার ঠিক পরে পরেই ঘটনাটা ঘটল কেন? আরো একটু আগে হলে তো ও জানতেই পারত না ? আরাম করে মার পাশে বসে টিনটিন পড়ছিল । বাপ্পা প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পায় না।
দুর্গা
- সৌমিত্র দেব
আমার অর্বাচীন শহরে দুর্গার নিগৃহ পরিণতি...!
সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ে তার ফুল্লকুসুমিত দ্যুতি।
আমার শহরে দুর্গা ডাস্টবিনে খাবার কুড়োয়,
ভিক্ষার থালা নিয়ে দাঁড়ায় রাজপথে।
ছেঁড়া কাপড় পড়ে, বাড়ি বাড়ি ঝি-এর কাজ করে...
দিন শেষে ক্লান্তি লুকোয় ছেলের কাছে, অজুহাতে।
আমার শহরে দুর্গা শরীর বেচে নিয়ন আলোয়,
পেটের ক্ষুধা মেটায়, যৌনতার বদলে...!
দুর্গা আমার, বৃদ্ধাশ্রম সেবিকা,
কপালের ঘাম মুছে, মায়ের আঁচলে...।
আমার শহরে দুর্গা, আই.পি.এস. অফিসার,
রিভলভারের গুলিতে, ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে।
রাইফেল হাতে বর্ডার পাহারা দেয়...
মিসাইল নিয়ে ঢুকে যায় অতর্কিতে, শত্রুর ঘরে।
আমার শহরে দুর্গা, লেডি ডাক্তার...
প্রতিদিন জীবন নিয়ে খেলা, রক্তমাখা হাতে।
দুর্গা আমার কল্লোলিনী নববধূ,
হালকা শীতের সকালে শিউলি কুড়োয়, শারদ প্রভাতে।
সংসারের বড় মেয়েটাই দুর্গা, আমার শহরে...
যে দুহাতে দশদিক সামলায়, নিভৃতে অশ্রু ঝরায় অকাতরে।
আসলে, প্রতিটা মেয়েই দুর্গা, দুর্গা প্রতিটা ঘরে ঘরে,
আসলে, দুর্গা সেই; যে তোমার দুর্গতি নাশ করে।
দুর্গা আছে গ্রামে গঞ্জে, দুর্গা আছে শহরে,
বুকের ভেতর দুর্গা আছে, দুর্গা আছে অন্তরে...।
ঠিকানাঃ
সৌমিত্র দেব
পিতাঃ শংকর মনি দেব
●ভুলে যেও●
দেবাদৃতা ভট্টাচার্য্য
ভুলে যেও প্রেম,
ভুলে যেও দু'ঠোঁটের সঙ্গমস্থল-
স্মৃতিগুলোকে খামে ভরে হারিয়ে ফেলো;
ভুলে যেও যারা একদিন বৃষ্টিতে ভিজেছিল।
নিঝুম রাতের পর যারা ভেঙে গেছিল,
মনে বলেছিল-"জানোনা এখনও কতটা ভালোবাসি!"
সেই চিঠির খসড়া ছিঁড়ে ভুলে যেও তাদের
ভুলে যেও,ইচ্ছে করে কেন তারা পথ হারিয়েছিল।
আদরের শেষের আদিম ঘুম যেমন ঘুমোয় জ্যোতিষ্ক,
ছায়াপথ বেয়ে নেমে আসে প্রিয় সুগন্ধের বাস-
ঘামে ভেজা চিঠির আর্দ্র কাগজে ধ্যবড়ানো কালির সম্বোধনে
মিলিয়ে যায় প্রথম প্রেমের অনুভুতির পর ধীর পায়ের ছাপ।
তবু তুমি সবটুকু ভুলে যেও প্রেম,
চোখের তারার ঘৃণা একটু করে কষ্টে হারিয়ে যেতে দেখেও,
সবটা তোমায় ভুলতে হবেই,না বলা কথাও-
ভুলে যেও,ঠোঁটের পরশে নেমে আসা চিবুকের তিলকেও........
পুরুলিয়া
___________
ঝালদা-হাঁড়িতে দু'টাকা কিলো চাল ফুটছে
অন্নপূর্ণা মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে
গড় পঞ্চকোটের ভগ্ন স্তম্ভ চোঁয়া লাল জলে
আদিবাসী নৃত্যের তালে তালে
মহুয়া মাতালের পদক্ষেপে
দুর্গা ফলস্ ঝরে পড়ছে অস্ট্রিক শব্দমালায়
গরম পিচচুমায়
বান্দোয়ানের দলছুট হাতির পায়ে ফোস্কা-জ্বালা
রাঁচি-হাতিয়া এক্সপ্রেস থেকে
পিলপিল করে নেমে আসছে
শালপ্রাংশু দেশোয়ালি
অযোধ্যা পাহাড়ের পদচাতালে ঝুঁকে পড়া রোদ
শুষে নিচ্ছে রামের ছৌমুখোশ
সুজিত রেজ
অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর
বিএন
জটিলতা
দীপশিখা চক্রবর্তী
আজকাল ঘুমের মধ্যেও চমকে উঠি বারবার,
খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বোঝার চেষ্টা করি-
নির্জনতম অন্ধকারের সাজানো দুর্বোধ্যতা;
টেনে ছিঁড়ে ফেলতে থাকি কালো পোশাকের সুতোয় নিঁখুতভাবে বুনে চলা নিরেট ছায়ার বিভ্রম,
এগোতে থাকি...
কখন যেন তলিয়ে যাই-
অচেনা অজানা এক না-ফেরার পথে;
স্পষ্ট শুনি-
সিঁড়ি ভেঙে নেমে যাওয়া আলোর দরজায় বারবার ধাক্কা দেওয়ার শব্দ;
যে কোনো সময় ফিরে যেতে পারে বুঝেও চুপ করে থাকি,
ভাবতে থাকি-
এত আলো, কিভাবে সাজিয়ে ফেলতে পারে অসম্ভব এক যন্ত্রণার একলাঘর!
হঠাৎই একটা দীর্ঘ নিস্তব্ধতা;
মাথার মধ্যের অস্থিরতায় তখন জেগে ওঠে সন্ত্রস্ত এক শয্যাদৃশ্য,
নেমে আসে শেষের গল্পে এক সমান্তরাল ঘুমের জটিলতা;
আলো আর অন্ধকারের মাঝে গোলক ধাঁধার বৃত্তে আঁকা শূন্যস্থান বারবার প্রশ্ন করে-
এই সব বোধ কি স্বপ্নে সম্ভব!
হয়তো...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন