ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৯

জলফড়িং এর কফিকথায় কবি অর্ঘ্যদীপ




" যারা বলে থেকে যাব, তারাই আসেনা আজ সাথে 
মানুষ একাই ফেরে, ভিড় জমে স্মরণসভাতে  "

এমনি অনেক মনকাড়া কথা যিঁনি লেখেন সেই মানুষটিই আজ জলফড়িং এর কফিকথাতে আমাদের সঙ্গে আছেন।
আর তিনি হলেন কবি অর্ঘ্যদীপ আচার্য্য।

দাদা জলফড়িং এর পক্ষ থেকে তোমাকে প্রথমেই জানাই নমস্কার।

কবিঃ- জলফড়িং এর সদস্যদের আমার পক্ষ থেকে অনেক অভিনন্দন

১.) প্রথমেই শুনতে চাই তোমার লেখালেখির শুরুর গল্প টা।

উঃ- আমার লেখালেখির শুরু ছোটবেলা থেকেই। স্কুল ম্যাগাজিন, পাড়ার পুজোর সুভেনিয়র, লোকাল সংবাদপত্র ইত্যাদি। তখন তো ফেসবুক ছিল না তাই এসব প্রিন্ট মিডিয়াতেই লেখালেখি চলত।

২.) মূলত কবিতা লেখো, কবিতায় যাপন করো।
এই লেখালেখির বাইরে পেশাগতভাবে অর্ঘ্যদীপ?

উঃ- পেশাগত ভাবে আমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।  কলকাতার একটা বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করি শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ে। ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতোকোত্তর। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে।

৩.) তাবেদারি খুব পরিচিত শব্দ, নেতারা করে এখন কবিরাও করছে ( শোনা কথা)। অর্ঘ্যদীপ কি তাবেদারিতে বিশ্বাসী?

উঃ- না। বিশ্বাসী নই অবশ্যই। সেই কারণেই আমার স্তাবক নেই। কোনও বড় নাম আমার পিছনে নেই৷ কোনও বড় কবি আমাকে চেনেন না। আমার এগিয়ে যাওয়া ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের দেওয়া সাহসেই ৷

৪.) তোমার বই ছড়িয়ে গেছে, ফেসবুকের লেখা গুলো মন কেড়ে নিচ্ছে সব্বার। লেখক অর্ঘ্যদীপের এই ব্যাপারটা কেমন লাগে নিজের কাছে?

উঃ-বিশেষ কিছু লাগে না৷ আমি খুব সাধারণ।  খ্যাতি আমাকে ছোঁয় না। আসলে মানুষের মিথ্যের মুখোশ এত দেখেছি, যে কোনও কিছুতে নির্লিপ্ত থাকার অভ্যেস হয়ে গেছে। সবার ভালোবাসাটা আমার প্রাপ্তি। একটা সময় কিছু মানুষের চূড়ান্ত অবহেলা, অসম্মান, মিথ্যাচার লেখার দিকে ঠেলে দিয়েছিল যে মানুষকে, সে আজ এত মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছে, এটাই মাঝে মাঝে অবিশ্বাস্য লাগে।


৫.) সবার মন কেড়ে নেয় তোমার লেখা, এইটা কি কোনো ম্যাজিক?

উঃ- আসলে আমার একাডেমিক শিক্ষা, পেশা থেকেই বুঝতে পারছ, আমি ঠিম সাহিত্য জগতের মানুষ নই। নিজের পেশায় আমি যথেষ্ট ব্যস্ত। তাই লিখে নাম করার বা রোজগার করার কোনও প্রয়োজন নেই আমার৷ সুতরাং, লিখি নিজের ইচ্ছায়। ইচ্ছা হলে লিখি, না হলে লিখি না। এটা ম্যাজিক নয় আসলে। নিজের উপর ঘটে যাওয়া মানুষের মিথ্যাচারগুলোই লিখে রাখছিলাম একটা সময়। কবে যে সেগুলো   সবার হয়ে গেল জানতেও পারি নি।
হঠাৎই হাজার হাজার ভালোবাসার আলো আমাকে ঘিরে ধরল।
এই জীবনে আর কী চাই এর থেকে বেশি!

৬.) অন্ত্যমিল পড়তে গিয়ে দেখতে পাবো যে কোনো প্রতিষ্ঠিত কবি যেভাবে শব্দ মেলায় ঠিক সেইভাবেই অনেকে একই শব্দ দিয়ে মিলিয়ে দিচ্ছে অথচ পাঠক বলছে বাহ্ দারুণ লেখা।
এটা তো একটা কপি করার মতো ব্যাপার তাহলে সে কীভাবে নিজের শব্দ সৃষ্টি করছে উনি তো কপি করছেন৷ এ বিষয়ে তোমার মতামত জানতে চাই।

উঃ-দ্যাখো, অন্ত্যমিল বা ছন্দ কারও একচ্ছত্র সম্পত্তি নয়।  অন্ত্যমিল মিলে যেতেই পারে। লেখার বিষয়বস্তু না  মিলললেই হলো। আমি এটাকে খারাপ বলে মনে করি না,  যতক্ষণ না লেখার বিষয় আর অন্ত্যমিল দুটোই মিলে যায়।

৭.) কবি অর্ঘ্যদীপের লেখা, তোমার কেমন লাগে ( তুমি কবি নও এখন তুমি  তোমার লেখার পাঠক এইভেবে উত্তর দাও)

উঃ-এটা বলা খুব শক্ত। আমি নিজে কী ভাবে বলি! 🙂
তবে নেক্সট লেভেলটা অর্জন করতে হবে। ফেসবুকের থেকে বেরিয়ে আমার লক্ষ্য কবিতাকে দুর্বোধ্যতার থেকে বের করে সাধারণ মানুষকে কবিতা পড়ানো


৮.) কবিতা হিট হবে পিরিয়ড থাকলে, কবিতা হিট হবে হিন্দু-মুসলিম মিশে গেলে এটা কিন্তু প্রায় দেখা যায় ফেসবুকে।
এ বিষয়ে কবি অর্ঘ্যদীপের বক্তব্য।

উঃ- আমি এ বিষয়ে লিখি না। বিতর্ক পছন্দ করি না বলে হিন্দু মুসলিম, রাজনীতি বা সামাজিক বিষয়ে আমি লিখি না, সচেতন ভাবেই লিখি না। তাই আমার কবিতায় এসব থাকে না৷ অথচ মানুষ ভালোবাসেন।






| আমার তো লিখে বিখ্যাত হওয়ার বা রোজগার করার কোনও দায় নেই  |






৯.) "কবিদের নাকি বেশি দিন বাঁচতে নেই "...
এ বিষয়ে কবি অর্ঘ্যদীপের মতামত?

উঃ-একমত। 🙂 বেশি বাঁচলে বেশি লিখতে হবে৷ সম্পৃক্ত হয়ে যেতে হবে।  লেখার মান খারাপ হবে৷ তার থেকে আগেভাগে চলে যাওয়া ভালো। খারাপ লেখার থেকে আমার কাছে মৃত্যু বেশি গ্রহণযোগ্য।

সুদীপ্তঃ-না হোক, বেঁচে থাকুক অর্ঘ্যদীপ

কবিঃ-তোমাদের ভালোবাসা যতদিন থাকবে, থাকব৷ 🙂

১০.) ফেসবুক কবি অর্থাৎ যারা যারা ফেসবুকে লেখেন তাদের একটা একক বই বের করতে হলে তাদের কি কি করতে হবে যাতে করে তার বই ছড়িয়ে যাবে পাঠকের কাছে?

উঃ-ভালো লিখতে হবে। এক এবং অদ্বিতীয় উপায়। ভালো না লিখলে শুধু ভালো চেহারা ও ভালো লোকের সাথে পার্সোনাল যোগাযোগ দিয়ে প্রথম বই বিক্রি হবে। দ্বিতীয় বই বিক্রি হবে৷ তার পরে আর নয়৷ আজকাল জানো তো, সুন্দর চেহারাটাও জনপ্রিয়তার একটা অন্যতম কারণ।
আমাকে কে চিনত! চেহারাও ভিন গ্রহের প্রাণীর মতো। কিন্তু একটুও মার্কেটিং ছাড়াই লোকে নিজের থেকে বই কিনে নিয়ে গেছেন। 🙂


১১.) ফেসবুকে প্রচুর কবি, পাঠক কম। তোমার চোখ বেঁধে দিলাম বললাম একটা চিরকূট তোলো তুমি তুললে ওখানে লেখা আছে 'তুমি একজন পাঠক তুমি আর কবিতা লিখবে না' তুমি খুশি হলে নাকি মনে হচ্ছে অন্যটা (চিরকূট) তুললে ভালো হতো যেখানে লেখা ছিল 'তুমি কবি তুমি পড়তেও পারো এবং লিখতেও পারো'।

উঃ-আমি আগে পাঠক। লিখি কম পড়ি বেশি। পড়তেই চাইব৷ তবে সেটা আজেবাজে লেখা হলে চলবে না৷ অন্ত্যমিল নেই, তাল নেই এমন লেখায় ছেয়ে গেছে। তাই এখন অর্ধেক লেখাই পড়ি না৷ কয়কজন সিলেক্টেড আছেন৷ শুধু তাঁদের লেখাই পড়ি।
আমি পড়তেও পারি লিখতেও পারি (ইচ্ছে হলে) ওটাই সিলেক্ট করব।

সুদীপ্তঃ-☕দাদা চলো এবার একটু চুমুক দেওয়া যাক তারপর আবার আড্ডায় ফিরব

কবিঃ- বেশ বেশ


১২.) ফেসবুকে পপুলার অথচ 'কৃত্তিবাস' বা 'দেশে' বা এখন অবধি কোনো বানিজ্যিক পত্রিকায় লিখতে পারেনি অর্থাৎ তার লেখা মনোনীত হয়নি। তাহলে তাকে কিভাবে বলব তিনি পপুলার,তিনি কি সত্যিই পপুলার?

উঃ- আমার লেখাই কৃত্তিবাসে মনোনীত হয় নি। ওঁরা আসলে অনেএএএএক উঁচু লেভেলের৷ আমাকে কে চেনেন! যে ওঁরা আমার লেখা ছাপবেন? ওঁদের মতো উচ্চ মানে আমি লিখি না অথচ অনেক সাধারণ মানের লেখা দেখেছি ছাপা হয় (আমার মতে সাধারণ৷ ওঁরা নিশ্চিত ভাবে অনেক বোঝেন আমার থেকে বেশি)৷ আসলে না চিনলে বোধ হয় কেউই পাত্তা দেন না। সেটা কৃত্তিবাসই হোক বা দেশই হোক।

সুদীপ্তঃ-তাহলে কি তুমি বলছ চেনার ওপরেই সেখানে লেখা মনোনীত হওয়াটা নির্ভরশীল?

কবিঃ- মন্তব্য করতে চাই না। বড় বড় কবি আছেন। আমি সাধারণ,  ওঁদের বিষয়ে কী বলব!

১৩.) কবিতা বেঁচে থাকে, কবিরা মরে যায়।
ফেসবুকে যারা লিখছেন তাদের ফেসবুকও মরে যেতে পারে কোনোদিন। যদি হয় তখন তারা অর্ঘ্যদীপ কি করবে?

উঃ- কিছুই করব না। মোবাইলে লিখে রাখব। আমার তো লিখে বিখ্যাত হওয়ার বা রোজগার করার কোনও দায় নেই!

১৪.) আগেকার দিনে প্রকাশক আসত লেখকের কাছে, বিনা খরচে বই করতেন,
এখন উল্টো। এই বৈপরীত্যটা কেনো?

উঃ- অসুবিধে কী! টাকা দিয়েই না হয় কবিতা চর্চা হোক! লেখক খরচ দিলে সমস্যা আছে বলে আমার মনে হয় না৷

১৫.) "ফেসবুক কবি" এই শব্দটা তোমার কাছে কষ্টের নাকি ভালো লাগার?

উঃ- আমার কিছুই এসে যায় না৷ একটাও পুশ সেল ছাড়া মানুষ আমার বই কিনে পড়েছেন৷ ফেবু না থাকলে কে চিনত আমাকে! আজ তোমরা সাক্ষাৎকার নিচ্ছ তাও তো ফেবুতেই চিনেছ বলে! 🙂 আমার ভালোই লাগে ফেবু কবি বললে

জলফড়িংঃ- অনেক অনেক ভালোবাসা দাদা আজকের সন্ধেটা আমাদের দেওয়ার জন্যে,
একরাশ ভালোবাসা থাকলো তোমার প্রতি।
তুমি খুব পছন্দের লেখ আমার( personally)।

কবিঃ-অনেক ভালোবাসা নিও। কফি কথার  আরও শ্রীবৃদ্ধি হোক এই কামনা করি।


২টি মন্তব্য:

  1. আপনি মানুষটাই এত্ত ভালো তো আপনার সমস্ত মন্তব‍্যগুলোও স্বভাবতই মন কেড়ে নিল আমার!!😍

    উত্তরমুছুন
  2. সোজা মনের সরল কথা।দাদার কথা গুলো মন ছুঁয়ে গেল।সৌমেন পাল

    উত্তরমুছুন