১.)
তবুও ভালোবাসি
--------পাপিয়া মণ্ডল
যেটা বলো নি, সেটা না বলাই থাক।
শোনার জন্য জোর করবো না একটুও...
কিন্তু, যা তুমি বলছো আগে বহুবার,
সেই কথার অনুরণনে আজও কেঁপে উঠি।
তোমার সেই চাহনি, সেই কথা বলা, সেই অপেক্ষা,
পান থেকে চুন খসলে, সেই যে মুখ ভার,
রাগ চাপতে গিয়ে, আরো বেশি রেগে যাওয়া,
আজও, সব... সবটা মনে পড়ে আমার।
হঠাৎ কেন যে ওলোট-পালোট হলো সব,
কেন যে এভাবে বদলে গেলে,
কেনই বা এতোটা নিরুদ্বেগ, নির্বিকার হলে?
নাহ! সত্যিই আমি ভেবে পাই না..
প্রশ্নও করবো না কোনো তোমায়।
তোমার খুশিমতো তুমি থাকো।
শুধু আমি সেই একই থাকবো আজীবন।
নিঃস্বার্থে ভালোবেসে যাবো, অনন্তকাল।
২.)
কথপোকথন
অনুব্রতা গুপ্ত
-যা কিছু সুন্দর আমার সব শিখতে ইচ্ছে করে।
-আর যা কিছু সুন্দর নয়?
-সেই সবকিছুই তো আমি ধারণ করি।
-এমন ধারণা?
-অসুন্দরকে ধারণ না করলে সুন্দরকে লোভ করা যায় না।
-সুন্দর কী?
-বোধ।
-কেমন বোধ?
-সহজ।
-সুন্দর তো জটিল?
-কেন?
-তবে তো সবাই সুন্দর হতো!
-ভয়ে।
-কিসের?
-ভেঙে যেতে।
-তুমি ও ভয় পাও?
-পাই তো।
-আমাকে?
-হুম।
-কেন?
-আমি তোমাকে চেয়েছি তাই।
-তাতে?
-তাতেই তো!
-বোঝাও!
-তোমার প্রতি আমার যে লোভ,তাই আমার সারল্য।তাই আমার সৌন্দর্য।
-তবে আমি সুন্দর নই কেন?
-তুমি চাওনি তাই।
-কষ্ট পাও?
-না তো।
-তোমাকে চাইতে আমার ভয় হয়।
-চেয়ো না তবে।
-যা কিছু সুন্দর আমায় সব শিখিয়ে দেবে?
-দেবো..
৩.)
ফারহান ও স্বচ্ছতোয়া কথোপকথন
কৃপা বসু
ম্যাডাম অনেকদিন হলো, ভুলেই গেছেন বোধহয়, যা হোক কেমন আছেন! লেখালেখি কেমন চলছে?
----জাস্ট গেট লস্ট, ইউ ব্লাডি ফেক পার্সন, মিথ্যেবাদী, বিশ্বাসঘাতক একটা! আই হেট ইউ...
----বাওয়া!! আস্তে আস্তে, কানে লাগছে বড্ড!! এত কেন চিৎকার করেন যে মৃত্যুর আওয়াজও শুনতে পাইনা ঠিকঠাক, ভালোবাসা তো মৃত্যুর মতোই শান্তি দেয় তাইনা স্বচ্ছতোয়া! আর কি সব খিস্তি টিস্তি দিচ্ছেন! কি করলাম বলুন ম্যাডাম?
----শাট আপ ব্লাডি ইডিয়ট! আমার নাম আপনি উচ্চারণ করবেন না নিজের মুখে, ঘেন্না করছে আপনার উপর। আর কিসের ভালোবাসা! আপনাকে ভালোবাসা যায়? প্রেমিকার সাথে ঘুরছেন, দিব্যি ছবি পোস্ট করছেন,
ইন এ রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিচ্ছেন, গ্রেট গ্রেট!! হাততালিয়া! আপনাদের মতো পুরুষদের জন্যই মানুষ ভালোবাসতে ভয় পায়, কাছে যেতে ভয় পায়!
----তা ঘেন্না টেন্না করা ভালো কাজ! সবথেকে বেশি যাকে ঘেন্না করি, তার প্রোফাইল সারাদিনে একবার না একবার ঠিক চেক করি আপনি জানেন কি সেটা? আর নাম কেন উচ্চারণ করবো না?
লজিক দেখান! যার বুকে এই মুহূর্তে ছুরি চালিয়ে দিতে চাইছেন, তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়বেন বুঝি নাম ধরে ডাকলে? ঠোঁট কেঁপে উঠবে? একশো বার আপনার নাম নেবো, বেশ করবো....
----আপনি এত অসভ্য কেন মিস্টার ফারহান?
----দুনিয়ার সব অসভ্যরাই এক না একসময় মস্ত বড় প্রেমিক হয়ে ওঠে ম্যাডাম। প্রেমিক হতে গেলে যে কোনো শান্ত নদীর বুকে ঘূর্ণিঝড়ের মতো আছড়ে পড়তে জানতে হয় স্বচ্ছতোয়া...
----ওহ প্লিজ!! আমি আর নিতে পারছিনা আপনার মিথ্যে কথা, আপনি এত নিষ্ঠুর কেন ফারহান? আমায় বলেননি কেন আপনি অন্য কারোর সাথে সম্পর্কে আছেন?
----এইতো সম্পর্ক নিয়ে দিনরাত এত জ্ঞান দেন, এটুকুও জানেন না, যে সম্পর্কের নিজস্ব কোনো গন্ধ থাকেনা, যে শরীরের জ্বর হয়না আদতে সেই শরীর ও সম্পর্ক দুটোই মৃত। সেটাকে স্রেফ মানুষ বয়ে বেড়ায় ওই যেমন দুগ্গা ঠাকুর ভাসানের আগে কত মানুষ দেখবেন ফুল, চুল, গয়না, অস্ত্র ছিঁড়ে উপড়ে নিয়ে আসে,
ওর মধ্যে ঈশ্বরের কোনো টুকরো কোনো আলো থাকেনা কিন্তু তবুও...তবুও মানুষ দিনে তিনবার সেগুলো কপালে ঠেকায় আর মনে মনে বলে... "হে ঈশ্বর তুমি সবাইকে দেখো!"
আমিও টেনে নিয়ে বেড়াচ্ছি একটা ভাঙাচোরা সম্পর্ক যেভাবে একটা গোটা শহর যুদ্ধ শেষের পর ছিটানো রক্তের চিহ্ন টেনে নিয়ে বেড়ায়....
----বাহ! আপনি বিশাল কথা বলতে পারেন, আমার কাছে কি চাই মিস্টার ফারহান?
----হাসালেন মাইরি! আপনি আমায় কি দিতে পারবেন? কি চাইবো আপনার কাছে?
----তাহলে ফোন করলেন কেন?
----আচ্ছা বেশ, এখানে খুব খটখটে রোদ উঠেছে, আপনি এক্ষুনি সূর্য নিভিয়ে আঁজলা ভরে বৃষ্টি নিয়ে আসুন, পারবেন? এখানে পিঠ ফেরালেই কেউ কারোর মনের কথা শুনতে পারেনা, আপনি একটা টেলিফোনের ব্যবস্থা করে দিন তো, যাতে মানুষ মানুষের কথা শুনতে পায়, পারবেন?
ছাদে পায়চারি করলে টবে টবে ফুল গাছ দেখিনা কোনও, আরশোলা ঘুরে বেড়ায়, আপনি এসে ফুল ফুটিয়ে যেতে পারবেন? সব মানুষ অন্ধ হয়ে গেছে এখানে, আপনি একটা দামি ক্যামেরা কিনে নিয়ে আসতে পারবেন?
আমি কিছু ছবি তুলে রাখতে চাই, যেমন পাশের বাড়ির মহুয়া দির স্নানের পর ভেজা চুল মুছতে মুছতে শাড়ি মেলার ছবি, ঘন্টি বাজিয়ে তীব্র ঝাঁঝালো সুরে ডাকতে ডাকতে মঙ্গল দার আইসক্রিম বিক্রির ছবি, স্কুল শেষে বাচ্চাদের ভারী ব্যাগ কাঁধে ট্রামলাইন পেরোনোর ছবি,
মরার আগে রাঙা দিদাকে রাঙা দাদুর শেষবার ফুঁ দিয়ে গরম পায়েস খাওয়ানোর ছবি....পারবেন স্বচ্ছতোয়া আনতে, বলুন পারবেন??
----হেঁয়ালি করছেন ফারহান?
----হা হা হা, আপনি আমার হেঁয়ালি করার পাত্রী বুঝি স্বচ্ছতোয়া, যাকগে শুনুন না?
----কী?
----ভালোবাসেন?
----হঠাৎ জিগ্যেস করলেন আজ?
----ভেবেছিলাম অনেকদিন আগেই জিগ্যেস করা হয়ে গেছে, আর আপনি উত্তরটা দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আবার জিগ্যেস করতে হলো, এটা আপনার দুর্ভাগ্য যা হোক বলুন না, ভালোবাসেন?
----না...
----ভালোবাসেন?
----না না না...
----স্বচ্ছতোয়া ভালোবাসেন আপনি?
----.............
----গুনে গুনে ২০সেকেন্ড!
----কি! মানে?
----২০সেকেন্ড আপনি চুপ ছিলেন!
----তো?
----আপনার উত্তরটা পেয়ে গেছি, অনেকদিন কাছে আসেননি, কাছে আসবেন?
----🙂
৪.)
বাস্তবতা
পাখি পাল
ভাষাগুলো আজ
অবিশ্বাসের রাস্তায় ভিড় জমিয়েছে, যত নীরবতা তাই বিশ্বাসে।
সবুজগুলো খুন হচ্ছে প্রতিদিন, বাঁচার লড়াই প্রতিটা নিঃশ্বাসে।।
আবেগগুলো পাহাড়ি রাস্তার খাঁজে রোজই ধাক্কা খায়, গড়িয়ে নীচে নামে।
কষ্টগুলো স্পষ্ট করে বোঝায়
হৃদয় কেনা যায়না কোনো দামে।।
মনকেমনের শব্দগুলো তাই
অনিচ্ছাতেও চোখেই ভেসে ওঠে।
যে কথাগুলো আজও বাকি
সেগুলো আর ফুটবেনা ওই ঠোঁটে।।
পরম প্রাপ্তি, না পাওয়ার ই মাঝে।
জীবন এখন বাস্তবতা বোঝে।।
৫.)
শিক্ষার বড়াই
দিব্যেন্দু হালদার
বুঝলেন মশাই
শিক্ষক শুধু নামেই জাতির,
বিংশ শতকে চলতো ওসব
ক্ষমতা এখন শুধুই পার্টির।
বুঝলেন মশাই
ব্যর্থ যারা ইতিমধ্যেই
দোষ কি শুধু তাদের?
কক্ষনো না, একটু ভাবুন
ছাত্রগুলো কাদের!
ছাত্রছাত্রী সন্তান সম
পিতার মতোই শিক্ষক
শিক্ষিকা সেও মাতৃমম,
জীবন দিয়েই আপনার রক্ষক।
জাতির নাকি প্রশ্ন জাতের
উন্নয়ন সব যাক না চুলোয়
খেলবে জুয়া, টানবে গাঁজা
আর বলবে, ইস্কুলই নয় কাজের।
বলছি শুনুন,
শিক্ষকে ভরসা রাখুন আবার
দেখবেন মেরুদণ্ড হবেই সোজা,
আপনার আমার আর বাকি সবার।
৬.)
রোমন্থন
শম্পা দাশ
ফেলে আসা নির্জন জনপদে
আজো কতো স্মৃতিদের ভিড়...
অচেনা হাজারো গন্ধে তাদের
আঘ্রাণ, আছে তবু অমলিন...
খুঁজতে খুঁজতে নিবিড় অন্বেষনে
দুহাতে মাখি রেত কনা,
সুখের চেয়েও দামি ,
বিরহীর এ দুঃখ মসলিন.....
ফিরে দেখি, হাতছানি
রেশমি দিনলিপি ঝাপসা সময়ের ..
ভাবনার লুকোচুরি , ফুলপাতা
আঁকা হয় নকশার ভিড়ে ..
আনমনা ভালোবাসা ,
বিষন্ন রেশমেরা চুপিসারে বলে...
এ ব্যাথা পরম সুখ
আমার সৃষ্টিছাড়া এ নষ্টনীড়ে l
৭.)
গতরাত্রি
বৈশাখী গোস্বামী
রাতের ভিতর রাত শুয়ে থাকে
ভিতর ভিতর মায়া,
সেসব রাতের কথা বলি তবে...
চুঁইয়ে পড়া মায়া বৃষ্টি থাকে,
শরীর ভিজে যায় ঘামে।
লক্ষণটা ভালো ; জ্বর সেড়ে যায়
তারপর আঁকড়ে ধরার আগেই
দু'চোখে আধফোঁটা ঘুম জোটে,
ভিতর ভিতর ভ্রমণ চলায় ভ্রমর
মাঝে মাঝে কেটে দিয়ে যায়,
রক্তাভ লাল ফুলে ফুলে
একটা আতঙ্কিত সকাল,
সেসব রাতের গল্প শেষ করে,
চিহ্নমাত্র ফেলে যায়...
গতরাত্রি গত হয়েছে!
খুব খুব ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন