ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৯

জলফড়িং এর কফিকথায় রেজমান


"বুক বাজিয়ে ব্যবসাদার বলো বরং"

এই কথা, এই সাহস যার
আজ সেই কবি আমাদের সাথে। প্রথমবার জলফড়িং এর কফিকথাতে কবি রেজমান

 রেজমান দা জলফড়িং এর পক্ষ থেকে তোমাকেই প্রথমেই জানাই নমস্কার এবং শুভ সন্ধ্যা।

রেজমানঃ- ভালোবাসা নিও




| আমার তো মনে হয় সেদিনের রেজমান আর আজকের রেজমান একই আছে, কিচ্ছু বদলায় নি তেমন |



২.) প্রথমে লেখালেখির শুরুটা যদি একটু বলো?

উঃ-স্কুলজীবনের শেষের দিক থেকেই  লিখতাম টুকটাক। কঠিন কঠিন শব্দ দিয়ে পাকামো মেরে ওই একপ্রকার লোক হাসানোর মতোই৷ তার পর দুম করে সবকিছু বন্ধ। কখনও মনেও হয়নি আমার লেখা উচিত বা এবার লেখা যাক। তখন পড়তে খুব ভালোবাসি। ফেসবুকের টাইমলাইন, পিডিএফ, বই, ম্যাগাজিন হাতের কাছে যা পাচ্ছি তাই নিয়ে পড়ছি৷ বেশ মজা লাগতো। কখনও মনে হত, ইস এমন একটা লেখা যদি আমিও লিখতে পারতাম! আফসোস হত। তার বহু পরে হঠাৎ একদিন একটা ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে ইচ্ছে হয়েছিল খুব, ইচ্ছে হয়েছিল দু'লাইন লিখি। সেখান থেকেই হঠাৎ করে সব ওলট-পালট হয়ে গেল। তারপর আর ঘুরে তাকাইনি 😃

৩.) প্রথম ফেসবুকে কবিতা পোস্ট তারপর সেদিনের রেজমান কি বুঝতে পেরেছিল আজকের রেজমানকে?

উঃ-আমার তো মনে হয় সেদিনের রেজমান আর আজকের রেজমান একই আছে, কিচ্ছু বদলায় নি তেমন। বয়স আর অভিজ্ঞতা  বেড়েছে শুধু একটু 😃

৪.) রেজমান সব ধরনের কবিতা লেখে  অন্তঃমিল বা গদ্য কবিতা।
তোমার নিজের সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে কোন ধরনের কবিতা লিখতে।

উঃ-এটা খুব চাপের প্রশ্ন। আসলে কবিতা ব্যাপারটাই আমার ভীষণ প্রিয়৷ স্টাইল বা ফরম্যাট যাই হোক, লিখতে পারলেই ভীষণ ভালো লাগে।

৫.) এখন বেশির ভাগটাই ফেসবুক কেন্দ্রিক তো সেখানে দাঁড়িয়ে কখনও এরকম হয়েছে তোমার সাথে, যে তুমি একধরনের বিষয় নিয়ে লিখতে চাইছ অথচ লিখলে না  তার কারণ হচ্ছে তুমি জানো যে এই বিষয়টা নিয়ে লিখলে পাঠক পড়বে না বা পাঠকের কাছে কঠিন হয়ে যাবে।

উঃ-বিশ্বাস করো পাঠক কী পড়তে চাইছে বা খাচ্ছে এটা জানতে পারলে সত্যিই খুব ভালো হত, তাহলে অন্তত নিজেকে আজ অর্থনৈতিক ভাবে বেকার ভাবতে হত না। পাঠকের মনের মতো করেই সব লিখতাম। ব্যাস, লাইক-শেয়ার-কমেন্ট, বই হিট। টাকার জন্য ভাবতে হত না। 😃

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটা হয়ে ওঠে না।

৬.) কবিতা অনেক বেশি সহজ হয়ে যাচ্ছে মানুষের কাছে, এটা গানের ক্ষেত্রেও হচ্ছে। যে খুব সহজ ভাষায় শুধু ভাষা না সহজ কথায় কবিতা লিখলে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে।
এখন আমার প্রশ্ন তুমি একজন পাঠক, তুমি কি কবিতা সহজ হোক এটা চাইছ?
আর তুমি একজন কবি, তুমি কবিতা সহজ হোক চাইছ? দুই জায়গা থেকেই উত্তর দাও।

উঃ-পাঠক হিসেবে আমি সবসময় চাইবো কবিতা সহজ হোক। কবিতা সবার হোক। কিন্তু লেখক হিসেবে আমার মনে হয় শুধুমাত্র সহজ ভাষা বা সহজ বিষয় হলেই কবিতা সহজ হবে এমনটা নয়। কবিতা তখনই সহজ যখন সেটা পাঠককে ছুঁয়ে যাবে। পাঠক সহজে রিলেট করতে পারবে। কবিতার সহজ-কঠিন নির্ভর করে ওই পাঠকের বোধগম্যের উপরেই। কিন্তু আমার মনে হয় এখনকার বেশিরভাগ পাঠকের বোধ বা দর্শন বা চিন্তা-ভাবনা বড্ড ভাসা ভাসা হয়ে যাচ্ছে৷ এখনকার বেশিরভাগ পাঠক খুব একটা তলিয়ে ভাবে না। এটা খুব ব্যক্তিগত মতামত যদিও।





| এসব টেকনিক্যাল ব্যাপার বড়ো কম বুঝি |






৭.) কবিতা হিট হবে পিরিয়ড থাকলে, কবিতা হিট হবে হিন্দু-মুসলিম মিশে গেলে এটা কিন্তু প্রায় দেখা যায় ফেসবুকে।
এ বিষয়ে কবি রেজমানের বক্তব্য।

উঃ-কবিতা বা যেকোনও শিল্পেরই উচিত সময়ের কথা বলা। এই সময় যদি পিরিয়ড বা হিন্দু-মুসলিম নিয়ে লেখা দাবী করে তাহলে তা নিয়ে অবশ্যই লেখা উচিত। এটা নিয়ে আমরা বলার কেউই নয়।

সুদীপ্তঃ- আচ্ছা বেশ চলো এবার চুমুক দিই কফিতে।

রেজমানঃ- বেশ

সুদীপ্তঃ-চুমুক দিতে দিতেই জেনে নেওয়া যাক তোমার স্কুল জীবন, কলেজ জীবন আর এখন কি করছ।

রেজমানঃ-স্কুলজীবন বলতে আমার পুরোটাই কেটেছে হোস্টেলে৷ তারপর জার্নালিজম & মাস কমিউনিকেশন নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করি৷ পরে ফিল্ম & টেলিভিশন নিয়ে ডিপ্লোমাতে ভর্তি হই। বেশ কয়েকমাস ক্লাসও করেছি। পরে আর কন্টিনিউ করা হয়নি। এখন আপাতত আদ্যপ্রান্ত বেকার 😃

৮.) বইমেলায় রেজমানের বই থাকেই, বিক্রিও হয় চরমে।
এই বিক্রির ব্যাপারটাই প্রকাশকের ভূমিকা কতটা নাকি এমন ব্যাপার যে তুমি যেখানেই বই করবে সেখান থেকে একই রকম পাঠক তোমার বই কিনবে?

উঃ-বই বিক্রির ব্যাপারে কার ভূমিকা থাকে সত্যিই আমার জানা নেই৷ তবে বইয়ের প্রতি প্রকাশকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এবং বইয়ের ছাপা থেকে বাঁধাই হয়ে বইমেলার মাঠ অবধি বুলবুল দা'র(প্রকাশক) ভূমিকা আমি কোনওভাবেই অস্বীকার করতে পারব না। এছাড়াও জয় দা, তৌসিফ দা, চিন্টু দা, সৌমী দি, সায়ন্তী প্রত্যেকের অবদান অনস্বীকার্য।

৯.) ধরো X ফেসবুকে পপুলার কবি, কিভাবে বিচার করছে রেজমান যে এই  X ফেসবুকে পপুলার কবি?

উঃ-জনপ্রিয়তা সবসময় নির্ভর করে তুমি কতটা বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছো তার উপরে। এ তো সহজ হিসেব৷ কিন্তু জনপ্রিয়তার সঙ্গে গুণগত মানের কোনও সম্পর্ক নেই। খুব জনপ্রিয় কবি খুব খারাপ লেখা লেখে এমনটা হতেই পারে। আবার উল্টোটাও হয়। জনপ্রিয়তা নেই অথচ দারুণ লেখে।

১০.) হ্যাঁ তুমি যেটা বললে, এখন অনেক সময় দেখা যায় একজন আরেকজনের চেয়ে ভালো লেখে অথচ সে ঠিকঠাক রিচিং পায় না। এটা কেন হয়?

উঃ- মানুষের কাছে রীচ করার জন্য অনেককিছু মেন্টেন করতে হয়, সেগুলো হয়তো তারা সেভাবে মেন্টেন করে না। এছাড়াও এটা অনেককিছুর উপর ডিপেন্ড করে। এসব টেকনিক্যাল ব্যাপার বড়ো কম বুঝি 😃

সুদীপ্তঃ- এই প্রশ্নে কবি কি কোথাও এড়িয়ে গেল?

রেজমানঃ- এমনিই শত্রু বাড়ছে, আরও বাড়ুক চাই না 😃

১১.) মানুষের হাতে সময় কম তাই ইদানিং দেখছি দুই লাইনের লেখার প্রচলন বেড়েছে তবে তা অন্ত্যমিলের হলেই ভালো হয় এমনটাই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ভালো ভাবে লক্ষ করলে দেখা যাবে কবি রেজমান দুইলাইনের লেখা কম লেখে তাহলে তোমার কি কোথাও মনে হচ্ছে তুমি পিছিয়ে পরছো।

উঃ- আমি দু'লাইন বা কাপ্লেট লিখতে পারি না খুব একটা। অক্ষমতা বলতে পারো। তাই লিখি না তেমন। কিন্তু অদ্ভুতভাবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এই বইমেলায় আমার একটা কাপ্লেটের বই আসছে। আর দ্বিতীয়ত পিছিয়ে পড়ার কোনও গল্পই নেই কারণ আমার কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই কারও সঙ্গে। আমার মনে হয়, শিল্পে প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ব্যাপারটা ঠিক মানায় না।

১২.) তুমি কি বিশ্বাস করো গানের কাছে কবিতা বরাবরই পিছিয়ে?
যদি  বলো  না তাহলে বলো যতজন মানুষ গান শোনে ততজন মানুষ কবিতা শোনে বা পড়ে?

আর যদি বলো হ্যাঁ তাহলে তার কারণটাও তোমাকেই বলতে হবে?

উঃ-গানের পরিসর অনেক বেশি। গানের পেছনে অনেকটা অর্থ লগ্নি করা হয়। টিভি-মিডিয়ার প্রচার থাকে। আলাদা প্রোমোশন থাকে। সেসব দিক থেকে কবিতা সত্যিই বড়ো অসহায়৷

১৩.) এই সময়ে দাঁড়িয়ে কবিতা সস্তা, কেন বলছি, যে লেখক বা লেখিকাটি কবিতা লিখছে ফেসবুকে এবং ভালোই পৌঁছে যাচ্ছে পাঠকের কাছে তার লেখা অথচ তার একটা লেখাও এখন অবধি কোনো নাম করা পত্রিকা যেমন 'দেশ' বা 'কৃত্তিবাসে' নেই।  তাহলে তোমার কি মনে হয় আসলে সেই লেখকটি নিছকই "নামে  চলছে"?

উঃ- কৃত্তিবাস বা দেশ নামকরা প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে কোনও দ্বিমত থাকার কথা নয়। কিন্তু  সাহিত্যের ক্ষেত্রে আল্টিমেটাম বলে তো কিছু হয় না৷ আমি দেশ বা কৃত্তিবাস কোনওটাই খুব একটা পড়ি না। আর সাধারণ পাঠক হিসেবে যেটুকু পড়েছি তা আমাকে হতাশ করেছে বরং৷ এবার কে কোথায় লিখবে বা কার লেখা কোথায় ছাপাবে কেন ছাপাবে না এসব নিয়ে আমি সাধারণ পাঠক হিসেবে কী বা বলি! আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজের খোঁজ নিয়ে লাভ আছে! 😃

১৪.) পাঠকের কাছে কবিতার সাথে সাথে কবিও পছন্দের হয়।
আর কবির কাছে নির্দিষ্টভাবে কোনো পাঠক কি পছন্দের হয়।

উঃ- হ্যাঁ অবশ্যই হয়। আমার ক্ষেত্রেই হয়েছে এরকম। কত পাঠক-পাঠিকা আমার প্রিয় হয়ে উঠেছে এবং তাদের সাথে কবিতার বাইরেও একটা দারুণ সম্পর্ক হয়েছে


১৫.) জলফড়িং এর পাঠককে যদি বলতে
এবছর বইমেলায় তোমার নতুন কোনো বই আসছে কি?

উঃ- এই বইমেলায় খুব সম্ভবত আমার দুটো বই আসছে। একটা কাপলেট আর ক্যালিগ্রাফির। যেটাতে তৌসিফ দা আর আমি যৌথ ভাবে কাজ করছি।
আরেকটা আমার একক বই আসছে। এই ভুল সময়ে দাঁড়িয়ে ঘটে যাওয়া একের পর এক অন্ধকার ঘটনা নিয়ে একটা প্রতিবাদী বই। যা আমার মনে এই সময়ে দাঁড়িয়ে সবচেয়ে বেশি দাবী করে।

জলফড়িংঃ- জলফড়িং এর পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকে তোমার বই এর জন্য থাকলো অনেক অনেক শুভেচ্ছা। তোমার লেখা ছড়িয়ে যাক পাঠকের কাছে শত থেকে শতাধিক হয়ে এই আশা রাখবো
আর আজ একটা সন্ধে জলফড়িং এর সাথে কাটানোর জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং একগুচ্ছ ভালোবাসা নিও দাদা।
সেই সঙ্গে বলো তোমার কেমন লাগলো আজকের এই "কফিকথা"

রেজমানঃ- অসম্ভব ভালো উদ্যোগ। অনেক বেশি সফল হোক।



1 টি মন্তব্য:

  1. প্রত‍্যেকটা জবাব খুব সুন্দর! কিন্তু ৬,৯,১১,১৩ এইসমস্ত প্রশ্ন ও উত্তর খুব মন ছুঁয়ে গেছে!👌

    উত্তরমুছুন