ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৯

ভালোবাসা বাকি আছে সংখ্যায় জলফড়িং পেজের লেখিকাদের লেখা





১.)
মুখোমুখি
স্বাগতা মুখার্জি

তুমি জীবন কথা বলো
আমার মনে স্বপ্ন টলমল,

তুমি চাওনা আগে পিছে
আমি স্বপ্ন দেখি মিছে--

তোমার অবাক করা গান
আমার অসীম অভিমান,

তোমার হুলস্থুল আদর
আমি বিচ্ছেদে বাধাই জ্বর-

তোমার মন ভোলানো হাসি
আমার মান ভাঙানোর কারণ-

তুমি অব‍্যক্ত চাওয়া
আমার একলা ঘরের মায়া,

তোমায় আগলে রাখার ছলে
আমার মনের কথা বলা-

তুমি আমি মিলে
আপন খেয়াল তরী বাওয়া।

২.)
স্বপ্নে বাঁচে মন
সঞ্চারী

আজকাল মনে হয়,
স্বপ্ন দেখাই সার।
স্বপ্ন গুলো সত্যি হয়না আর।
এ মন,
স্বপ্নদের ভিড়ে উড়ে বেড়ায় সারাক্ষণ।
কি করে বোঝাই,একে যে স্বপ্নকে পায় ক'জন!
কত সময় যে কাটায় এ মন,শুধুই স্বপ্ন বুনে,
সে সময়ের হিসাব কে রাখে গুনে গুনে!
বুঝতে চায়না এই দুনিয়া আমার এ স্বপ্নের মানে।
আমার কাছে এর মূল্য কতটা!
সে শুধুই এই মন জানে।

স্বপ্নছাড়া যে প্রাণহীন এ মন,
স্বপ্নভাঙার ভয়ে এ মরতে চায় প্রতিক্ষণ।
যখন বাস্তব ডেকে বলে ইশারায়,
স্বপ্নকে কি অতো সহজে পাওয়া যায়!
মন তখনো হার মানে না,
হেরে যাওয়া কি?যেনো,তাই জানেনা!
নিজের খেয়ালে স্বপ্ন বোনে,
পূরণ হওয়ার পথ গোনে,
বিশ্বাসদের সঙ্গ পেয়ে আজ মন যে অবিচল।
তার-ই সঙ্গে এসে হাজির সম্ভাবনার দল,
অসম্ভবের অস্তিত্ব-ই তারা করছে অস্বীকার।
বাস্তবতার কাছে তারা মানবেনা কোনো হার!
বাস্তব তবু কঠোর বড়ো,তাকে বোঝাই দায়,
তবু মন বলে যে, সময়ের সাথে‌ বাস্তবও বদলায়।

৩.)
নন্দিতার(মিস্টু) কলম

 বন্ধু তোমার কি মনে আছে পুরানো সেই কথা?
 বলেছিলে তুমি, “বন্ধু তুমি ছাড়া এই জীবনটাই বৃথা”
 সেদিনের সেই বিপদের কালে, তুমি এসে ধরেছিলে হাত,
 আজও আমি ভুলতে পারিনি সেই ভয়াল কাল রাত!

 তোমার পানে তাকিয়ে ভুলেছিলাম আমার যত ভয়,
 আমার স্মৃতির কোঠা থেকে এতটুকু হয়নি ক্ষয়!
 জানি না কি অপরাধে তুমি ফিরায়ে নিয়েছো মুখ,
 একবারও কি ভাব্লে না, আমি কতখানি পেলাম দুখ?
 কি করে ভুলে গেলে আমাদের সেই পরিকল্পনা?

 বন্ধু তোমার সাথেই তো এঁকেছিলাম এক স্বপ্নের আল্পনা।
 জানতে কি ইচ্ছে হয় না তোমার, কেমন আছি আমি?
 কখনোও কি ভাবলে না যে বন্ধুত্ব কতখানি দামী?
 আজকে কোথায় তুমি? রয়েছ তুমি দূরে বহুদূর-

 কিভাবে তাহলে বাজিছে আজ, পুরানো সেই সুর?
 বন্ধুত্ব সদা অম্লান থাকে, কখনও কি পুরানো হয়?
 পোষাক পাল্টে কি কখনও মানুষটাও পাল্টে যায়?
 একবার দেখ পিছন ফিরে, এরপর না হয় যেও তুমি,
 আমার মনের কোথায় তোমায় সযতনে রেখেছি আমি!
 তুমি হয়ত মনে করছো আমি করছি যত অভিযোগ,

 নতুন পুরানো সব কথা তুলে করছি যোগ আর বিয়োগ।
 না বন্ধু না! এটা নয় আমার কোন আক্ষেপ অভিমান,
 যদি তুমি চাও তবে আমি দিতে পারি তার প্রমাণ!
 বন্ধুত্বের মধ্যে পাঁচিল তুলে করা যায় না ব্যবধান-
 বন্ধুকে কখনও যায় না ভোলা হোক না তা তিরধান!
 কিছু ভালো লাগা, মন্দ লাগা আর প্রতিজ্ঞা নিয়েই বন্ধুত্ব,
 আত্মত্যাগের মহিমায় প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে তার মহত্ব।

 অনন্তকাল ধরেও যদি আমায় অপেক্ষায় রাখ তুমি,
 এক মুহুর্তের জন্যও তোমায় ভুলতে পারবোনা আমি।
 জীবনের শেষ প্রান্তে গিয়ে যখন থমকে যাবে সময়,
 তখনও ভুলতে পারবোনা আমি বন্ধু শুধু তোমায়!


৪.)
অবুঝ
সৃজিতা ঘোষ
আরে কি হয়েছে তুই এতদিনের বন্ধুত্ব,সব সম্পর্ক ভুলে গেছিস তো!আমি ভুলতে পারি নি।যদি পারতাম তাহলে আমিও তোর মতো অনেক বুঝদার হয়ে যেতাম।তোর মতো অতো সুন্দর করে তোকে কখনও ভালোবাসিনি,বাসলে হয়ত আমিও ছেড়ে চলে যাওয়ার সাহসটা দেখাতে পারতাম ।

অনেক চাওয়া না চাওয়ার মাঝে আজ আমি একা।চোখের জলকে আগুনে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়ায় আমি লিপ্ত।মরূদ্যানে ক্যাকটাস গুলো এভাবেই বাঁচে,এভাবেই থাকে জীবন্ত।আমিও আজকাল বাঁচার স্বপ্ন দেখছি।তুই শিখিয়ে ছিলি এটাই বাস্তব।
   
আমাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য তোর চাকরি না পাওয়ার অজুহাতটার সত্যি কোনো দরকার ছিল না ।বাস্তবের দোহাই দেওয়ারও কোনো প্রয়োজন ছিল না। বাস্তবটা যে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সত্যিই বড়ই কঠিন, সব জেনেই গেছিস।জানি।তবে কখনও তোকে দোষারোপ করব না।ভুলটা আমারই ছিল ।বুঝতে পারি নি ভালোবাসা তো খেলা।অসময়কে আনন্দের আবেগে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার খেলা ।অনেক অনুরোধ করেছিলাম,কিন্তু আজ সব কালবৈশাখীর ঝড়ে ভেসে গেছে উড়ো চিঠির মত।
আজকাল সকালগুলো খুবই ফিকে লাগে।দিন তো নিমেষে কাটে।রাতগুলো তোকে ছুঁতে পায় না বলে একলা লাগে ।এ  কি জানি এভাবে প্রেম হয়,হয়ত এভাবেই আসে বসন্ত।

৫.)
মৌমিতার কলম

জানো আমি না এখনো ঠিক মেনে নিতে পারছিনা যে কাল থেকে আমাদের আর কথা হবেনা, হবেনা দেখা।
আগের মতো আর কেউ সারাদিনের গল্প শুনতে চাইবে না, কেউ আর প্রিয় ডাকনামে ডাকবে না আমায়।
কেউ আর মাঝরাতে ভাঙাবেনা ঘুম, শোনাবেনা কবিতা।
কাল থেকে আমরা থেকে যাব একে অপরের অতীতে আর আমাদের সম্পর্কের  নাম  প্রাক্তন।
রাস্তায় হঠাৎ দেখা হয়ে গেলেও কাল থেকে আমরা অপরিচিত।
সম্পর্কের তকমা থেকে মুক্তি পেয়ে আমরা তখন আলাদা আলাদা ভাবে বেছে নেবো আলাদা আলাদ জগৎ।

৬.)
তানিয়ার কলম

বিগত কয়েক বছরে পাল্টে গেছে অনেক কিছুই।
সেই পুরনো আমি টাকে প্রায় চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি।
সেই পছন্দের গিটার টাও এখন কাছ ছাড়া ৷ গিটারের তার গুলোতে কেমন যেনো মরচে ধরে গেছে ৷
সামনে উচ্চমাধ্যমিক তারপর জয়েন্ট এন্ট্রাস এক্সাম কিনা,তাই বাবা মা এখন গানবাজনা বন্ধ রাখতে বলেছেন ৷

বন্ধুদের সাথে আর তেমনভাবে দেখা সাক্ষাৎ ও হয়ে ওঠেনা ৷
টেস্ট এর রেজাল্ট টা একটু খারাপ হওয়ার পর থেকে বাড়ি থেকে বেড়োনোও প্রায় বন্ধ ৷ প্রয়োজনীয় নোটস গুলো বাবা'ই এনে দেন,স্যারদের কাছে থেকে ৷
কেমন যেন দমবন্ধ লাগছে সবকিছু ৷ বাবা-মা'র চাই 90% মার্কস ৷ আর আমি কি চাই ??সেটা কী একবারও ওনারা জানতে চেয়েছেন ??

নাহ্! কখনোই চাননি জানতে ৷ আমি ও তো চাই গান গাইতে,গান টাকেই কেরিয়ার বানাতে ৷ সেসব কথা শোনার লোক আর কোথায় ?? রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় প্রিয় বন্ধুও মুখ ফিরিয়েছে ৷ ফাইলে থাকা আগেকার রেজাল্ট গুলোও এখন আমাকে দেখে মুখ চেপে চেপে  হাসে ৷ আর ঐ মরচে ধরা গিটার টাও অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ৷

একটা ঘন কালো অন্ধকার আমাকে ক্রমশ গ্রাস করে নিচ্ছে ৷ আর কানে শুধু বাজছে "ওদের 90% চাই","ওদের 90% চাই "৷
এর থেকে যেন মৃত্যু ও অনেক সহজ,অনেক সহজ ৷
আমার একলা ঘরে আমি,ফ্যান,একটা দড়ি ৷
তারপর সবটা শেষ ৷৷
আমি এখন একটা লাশে পরিণত ৷
আমাদের ও কিছু ইচ্ছা থাকে,আমাদের ও কিছু স্বপ্ন থাকে ,
আমাদেরও কিছু কথা বলার থাকে ৷ সেগুলো  শোনার চেষ্টা করুন ৷৷





                   





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন