নমস্কার অনেক ধন্যবাদ জলফড়িং কে সময় দেবার জন্য ।
নমস্কার এবং অনেক ভালবাসা রইল জলফড়িং এর জন্য।
আপনার সাহিত্য জীবনের শুরু সম্পর্কে একটু বলুন?
প্রথাগত ভাবে আমি সাহিত্যের ছাত্রী নই এবং কোনরকম পরিকল্পনা ছাড়াই এই জগতে প্রবেশ। আমি ক্লাস ৬ এ স্কুল এর পত্রিকায় একবার একটি ছড়া লিখেছিলাম। নামটাও মনে আছে 'দুর্গাপূজা', তারপর আর লেখার সাথে সম্পর্ক ছিল না, আবার ২০১৬ সালে হঠাৎ করেই লিখতে শুরু করি, আশ্রম এর পত্রিকায় দেওয়ার জন্য। তারপর ফেসবুকে নিজের মতো করে লিখতাম। এরপর আমি কবি সুজিত মুখার্জির সংস্পর্শে আসি, ওনার অনুপ্রেরণাতেই ওয়েব ম্যাগাজিনে লিখতে শুরু করি। তারপর আমার প্রথম বই প্রকাশ ও ওনার অনুপ্রেরণাতেই। সত্যি বলতে আমি serious ভাবে লিখব এটা ভাবিনি, কিন্তু ধীরে ধীরে বেশ কিছু মানুষের সঙ্গ ও আশ্বাস আমাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। এখনও ওই মনের তাগিদে ভালবেসে সাহিত্য জগতের সাথে একটা সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করছি। কবিতা খুব সুক্ষ জিনিস, মানে সুক্ষ অনুভূতি, ক্রমাগত শিখে ও লিখে যেতে হয়, এখন সেই চেষ্টাই চলছে। আর তোমাদের মতো কিছু মানুষের ভালবাসা সাহস জুগিয়ে চলেছে।
উদ্ভিদ বিজ্ঞান এর ছাত্র তারপর সাহিত্য এই বদল টা কি করে সামলান?
হম আমি Botany'র ছাত্রী। এম এস সি করার সময় ইচ্ছে ছিল Botanical Survey of India তে কাজ করবো, যদিও বাবা তখন চেয়েছিলেন আমি এম বি এ তা করি, বাবার ব্যবসাতে যুক্ত হই। কিন্তু আমি তখন NET দিয়ে লেকচারশিপ কোয়ালিফাই করলাম। কিন্তু এই সময় একটা মজার ব্যপার হল, আমি NET এর রেসাল্ট বেরনোর আগে ছয় মাস বাবার ব্যাবসাতে যুক্ত হয়ে গেলাম সময় কাটাবার জন্য, আর এই সময় ব্যবসার প্রতি একটা আলাদা টান অনুভব করলাম, সেটা হয়তো জেনেটিক কারণ হবে। তাই ব্যবসাকেই পেশা করবো ঠিক করলাম, যদিও লেখার মতো ওটাও এখনও শিখছি। আবার মা এর আপত্তি ছিল, মা চাইতেন আমি প্রফেসার হই, কিন্তু আমি কোনদিনই চাইতাম না। মানে এটাই বলতে চাইছি যে আমার নেচারটা বড় অদ্ভুত আর আমি খুব মুডি, তাই বাবা যখন চাইলেন ব্যাবসা করি, তখন আমি বটানিস্ট হতে চাইলাম আবার যখন সেরম সুযোগ পেলাম তখন আমার মন থেকে একটা সাড়া এল যে আমি Entrepreneur হব। I have lots of different kinds of dreams, তাই লেখাটাও ওভাবে সামলে নিই, mixed types of characters নিয়ে।
বই করবেন এই ভাবনা টা কবে এলো ?
দেখো সব সাধারন মানুষ তো নিজেদের জীবনের ঘটনা গুলকে সাজিয়ে তুলে ধরতে পারে না, অথচ আমি বিশ্বাস করি প্রতিটা মানুষ তার জীবনের হিরো, তাই প্রতিটা মানুষের একটা গল্প থাকে এবং সমাজে ঘটে চলা প্রতিটা ঘটনা একটা নিখাদ সত্যি কাহিনীর জন্ম দেয়, তাই একজন সাহিত্যিক পারেন সাধারনের হয়ে কলম ধরতে। আর আমি চাই যেকোন সৃষ্টি সমাজকে একটা পজিটিভ মেসেজ দেবে। সাহিত্য এক অমূল্য সৃষ্টি, তাই আমার কাছে সাহিত্যের গুরুত্ব হল, সাহিত্য সমাজকে সব সময় একটা নতুন পথ দেখাবে, প্রেরণা দেবে। আর ঋনাত্মক কোন সৃষ্টি আমার কাছে শিল্প নয়।
বর্তমানে বই পড়ার ঝোঁক কমে যাচ্ছে এ নিয়ে আপনার কী মত?
আমার পরিচিত সব বন্ধু বা জুনিয়ররা কিন্তু ভীষণ ভাবে বই প্রেমী, এবং রীতিমত বই পড়ে, তবে হ্যাঁ এখনকার ছোট ছোট বাচ্চারা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এ ব্যস্ত থাকে, বিভিন্ন মোবাইল গেম আরও নানা জিনিস। তবে মা বাবা রা যদি বই পড়ার হেলদি হ্যাবিট তৈরি করতে পারেন তবে তারাও বই ভালবাসতে শিখবে।
বর্তমানে ব্লগে র প্রয়োজনীয়তা কতটা?
এই প্রশ্নটার আমি কতটা সদুত্তর দিতে পারবো জানিনা
, কারণ আমি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে লেখার ব্যাপারে অনেকটাই উদাসীন, ফেসবুকে লেখা দিই তাও খুব কম, কিন্তু আমাদের জেনেরেশনের ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্মে লেখার প্রবণতা অনেক বেশী। সেটার ভালো খারাপ দিকে যাচ্ছি না তবে আমার মনে হয় সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতেই হয় আমাদের, তাই ব্লগ এর মাধ্যমে যদি বেশী সংখ্যক মানুষের মধ্যে সাহিত্য ছড়িয়ে পড়ে তবে ক্ষতি কি! ভালোই তো।
অনেকেই বলেন জনপ্রিয়তা র জন্য Facebook এ লেখা টা জরুরি এই ব্যাপারে আপনার কি মত ?
জনপ্রিয়তা একটা আলাদা পার্ট, সাহিত্য একটা আলাদা ব্যাপার। সাহিত্যিক হতে গেলে প্রথমে লেখার কোয়ালিটির উপর মেন ফোকাস রাখার দরকার, তারপর যদি কেউ ফেসবুককে প্রোমোটিং মিডিয়াম হিসেবে বেছে নেয় সেটা ভালো জিনিস, কারণ সত্যিই সোশ্যাল সাইট এর মাধ্যমে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। কিন্তু যে কোন সৃষ্টির মেন ফোকাস হবে তার কোয়ালিটি তারপর সে যেই প্ল্যাটফর্ম ব্যাবহার করে মানুষের মাঝে পৌঁছাতে চাইবে সেটা তার ব্যাপার।
প্রথম বার ক্যমেরার সামনে কেমন লাগল?
খুবই ভালো লাগল, আমি এমনিতেই মানুষের সঙ্গে খুব সহজে বন্ধুত্ব করতে পারি, তাই প্রথমেই সবার সঙ্গে হাসি খুশী সম্পর্ক হয়ে গেছিলো। ক্যামেরার সামনে তাই unfamiliar বা nervous লাগেনি খুব একটা।
আপনার এটা দ্বিতীয় বই লোকেদের খুব ভালো সাড়া এটা কেমন লাগল?
এটা আমার কাছে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একটা স্টেপ বলতে পারো। আমরা জানি কেউ appreciate করলে আমাদের কিছু করবার ইচ্ছে আরও বেড়ে যায়। এই ব্যাপারটাও সেভাবেই নিচ্ছি। আরও ভালো লেখার জন্য নিজেকে তৈরি করছি।
চারিদিকে এত নেগেটিভ কথাবার্তা কি করে সামলান?
আমি না সত্যি বলতে সব কিছু থেকে একটু দূরে থাকি, আমার তাই বন্ধুই কম। আর শত্রু কেউ আছে নাকি জানি না, আসলে মানুষ কে শত্রু ভাবতেই কেমন লাগে মত কথা শত্রু কনসেপ্টটাই মনে নিয়ে আসি না। নেগেটিভ কিছু আমার ব্যপারে শুনিনি এখনো, যদি কেউ বলেও থাকে কখনও আমি চাইবো সেগুলো যেন না শোনার মতো করে ঝেড়ে ফেলতে পারি। যদি কেউ গঠনমূলক সমালোচনা করে তবে অবশ্যই নেবো, বাকীটুকু নেবো না।
পরিযায়ী পাখি দের লিরিক্স এর ধারনা কোথা থেকে এলো?
আমি দার্শনিক ভাবে চিন্তা করতে ভালবাসি, আর সেখান থেকেই আমার মনে হয় মানুষ আসলে পরিযায়ী পাখিই কারণ, জীবনে নানান কারনে, নানান দিকে আমরা ছুটে বেড়াই আর সব শেষে ফিরতে হয় নিজের কাছে। একটা স্বচ্ছ আয়নার সামনে দাঁড়াতে হয়, সেটা থেকেই এই নাম।
অবসর যাপন কিভাবে?
অবসর বই পড়া, লেখা, তারপর বাড়িতে ৩ তে বোন আছে ওদের সাথে সময় কাটে। আমি একদম family-type এর একজন মানুষ, মানে আমার জীবনের পুরো সময়টাই পরিবারের সাথে কাটে। আর তা ছাড়া আমার আরও কিছু ভালোলাগার দিক আছে, সেইসব নিয়ে থাকি। আমি motivational speaker দের শুনি খুব। ওখানে সময় দিই।
বর্তমানে কার কার লেখা ভালো লাগে ?
আংশুমান করের লেখা আমার খুব ভাল লাগে আর সুজিত সরকারের লেখাও ভাল লাগে। সহজ অথচ গভীর জীবন বোধ।
শেষ প্রশ্ন
আগামী বছর কী বই আসছে আপনার ?
প্রতি বছর বই করবো এমন ইচ্ছে নেই, তবে নিজের কন্টেন্ট দেখে যেদিন মনে হবে আবার বই করা যায় সেদিন আবার করবো। ধন্যবাদ, তোমরাও ভালো থেকো, সাহিত্যে থেকো।
শুভেচ্ছা আপনাকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন