ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯

রিভিউ ।

সিনেমার নাম   শঙ্কর মুদি।
পরিচালক  অনিকেত চ্যাটার্জি ।

চরিত্র  কৌশিক গাঙ্গুলী, কাঞ্চন মল্লিক,অঞ্জন দত্ত,শাশ্বত চ্যাটার্জি ।

প্রথমে হাঁটতে শেখা তারপর দৌড় ও গতির সঙ্গে তাল মেলাতে অক্ষম হওয়া অতঃপর পতন ।
চম্বকে এই হল শঙ্কর মুদির কাহিনী,

বাংলার হয়ত সেই ছবি যা সংঘবদ্ধ জীবন দেখায় ।
সকলেই যেখানে আছে সকলের সাথে।
পাড়ার সাথে পরিবার তন্ত্র মিশে গেছে যেখানে।।

      অভাব যেখানে নিত্যসঙ্গী  সকলেই ভবিষ্যতে র চিন্তায় রাতের ঘুম উড়ে যায়।
তবুও হাসতে জানে ওরা ।

প্রত্যেকটি  চরিত্র ই দৈনন্দিন সমস্যায় জর্জরিত ।
যেমন  মূল্যবৃদ্ধি এবং বিশ্বায়ন দুটোই সমান্তরাল

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি  ক্যাপিটালিজম এর প্রভাব সাংকেতিক।
দেখাযায় সুনিপুণ শ্রেনীর বিন্যাস ।

নারাণ(কাঞ্চন মল্লিক) নাপিত, কালি(শাশ্বত চ্যাটার্জি), অটো চালক,শঙ্কর মুদি(কৌশিক গাঙ্গুলী) যিনি চরিত্রের মধ্যে সমুজ্জ্বল  নিম্নমধ্যবিত্ত দের কলতান একসাথে পেরিয়ে যাবার চেষ্টা ।

শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ধারক হিসেবে আছেন অঞ্জন দত্ত  যিনি স্যার নামে অভিহিত হন।
বাস্তব টা যিনি জানেন দূরদর্শী ।
আছে পারিবারিক জ্বালায় জ্বলা মদ্যপ পুরুষ ।

রাজনৈতিক  পরাকাষ্ঠা ও সাধারণের লড়াই এখানে উপজীব্য ।
             নিয়ম যা কিছু থাকে সাধারণের জন্য ,সমাজের মাথার জন্য কোনো নিয়ম নেই ।তাদের কার্যকলাপ "উন্নয়ন " নামে পরিচিত হয়
সোসালিস্ট ফেডারলিসম এখান  আকাশ কুসুম ।

   অধিকার রক্ষার অসম লড়াই এখানে জারি কিন্তু "অসম লড়াই মানে আত্মহত্যা " যা দেখিয়েছেন সিনেমার প্রোটাগনিস্ট শঙ্কর মুদি।

আমরা ঝা চকচকে জীবন পছন্দ করি,ব্রান্ডেড বিশ্বায়ন  একমাত্র পন্থা ।আর আমরা এগিয়ে চলি এই শঙ্কর মুদি দের বুকে পা দিয়ে ।যেখানে হেরে যায় পরিবার তন্ত্র  হেরে যায় মানুষ ।

কোথায় একটা প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে ডারউইনবাদ।

কলমে অরূপ ।





বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৯

জলফড়িং  নমস্কার 
শুভ বিজয়া

কৃপা শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা।

প্রশ্ন  বলো পূজো কেমন কাটল?

উত্তর এবারের পুজো টা খুবই ভালো কেটেছে, আমি পুজোয় তেমন কোথাও একটা বেরোইনা, কিন্তু এবারে প্রায়
 প্রতিদিন বেরিয়েছি
 প্রচুর আনন্দ করেছি


 প্রশ্ন    পোস্ট   দেখেছিলাম তুমি ষষ্ঠী র দিন কেনা কাটা  করেছ এটা সত্যি?

উত্তর  হ্যাঁ ষষ্ঠীর দিন দুপুরে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে জুতো আর একটা কুর্তি কিনেছি। বাঙালি রা ষষ্ঠীর দিনই কেনাকাটা করে নইলে কিসের বাঙালি

হাসি

প্রশ্ন  পুজোয় যদি কেউ বলত যে আপনাকে দেখে ক্রাশ খেয়েছি তোমার উত্তর কি হবে?

উত্তর  লজ্জা পেতাম। থ্যাংকিউ বলে কেটে পড়তাম🙈 ক্রাশ খাওয়া ভালো তো, ক্রাশ খেলে মন ফ্রেশ থাকে, আর মন ভালো থাকলে শরীর ভালো থাকে

প্রশ্ন  তোমার একটা ছবিতে 10 মিনিটে 500 লাইক এটা উপভোগ করো?

 উত্তর কোনোদিন পড়েনি, বাজে কথা। 300 বা 350 পড়ে। হ্যাঁ খুবই ভালো লাগে, সবাই চায় মানুষের মনে জায়গা পেতে, আমার ছবিতে যাঁরা লাইক করেন তাঁরা আমায় ভালোবাসেন পছন্দ করেন তাইতো লাইক করেন। এটা তো উপভোগ করারই বিষয়

প্রশ্ন   সোশ্যাল মিডিয়াড় অনেক কেই তুমি ব্যক্তিগত ভাবে চেনো তারা বাস্তব জীবনে কতটা আলাদা?

উত্তর  আমরা সবাই ব্যক্তিগত জীবনে আলাদা, আমি নিজেও। ফেসবুক সত্যি সত্যি ফেকবুক, এখানে সবাই প্রিটেন্ড করে, প্রতি মুহূর্তে সবার কাছে ভালো হয়ে থাকার অভিনয়। আর এই অভিনয় টা খারাপ কিছু নয়। আমি বাইরের লোকদের দেখাবোই বা কেন যে আমি আদৌ কেমন! কোনো দরকার নেই তো

প্রশ্ন  তোমার ছোটো বেলার পুজো টা কেমন কেটেছে?

উত্তর   তখন একটা আলাদাই পরিবেশ ছিল, এত ঝুটঝামেলা এত প্রেসার এত বোঝা নিতে হতো না। পুজো বলতে তখন স্কুলের ছুটি বুঝতাম, জমিয়ে খাওয়াদাওয়া বুঝতাম, নতুন জামার গন্ধ, বাবার সাথে। ঘুরতে  যাওয়া, ঠাকুর দেখা, বান্ধবীর বাড়ি সারাদিন কাটানো, গল্প করা বুঝতাম। তখন পুজোর একটা গন্ধ ছিল, বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুজোর গন্ধটা ফিকে হয়ে যাচ্ছে কেমন

প্রশ্ন   তোমার যে এতো জনপ্রিয়তা বাড়ির লোকের অনুভূতি কেমন?

উত্তর  কেউ কিছু জানেনা। তারমানে কোনো জনপ্রিয়তা নেই আদতে। কারণ কেউ নিজে মুখে বলে না সে কতটা জনপ্রিয়। আমার বাড়ির লোক যেদিন টের পাবে যেদিন ফলাও করে খবরের ফ্রন্ট পেজে আমায় নিয়ে খবর ছাপা হবে এবং অবশ্যই তা ভালো, তখন বিশ্বাস করবো যে হ্যাঁ আমি জনপ্রিয়। ফেসবুকে অনেকেই জনপ্রিয়, আর এই জনপ্রিয়তা আজ আছে কাল নেই। তাই ফেসবুকের বাইরে বেরিয়ে আমি কাজ করতে চাই এবং জনপ্রিয় হতে চাই।

প্রশ্ন  বাড়ি থেকে এই চাপ টা আসেনি যে সরকারি চাকরি করতে হবে?

উত্তর  এখন মনে হচ্ছে চাকরি করাটা দরকার, এখন খুঁজছি।

প্রশ্ন 
তোমাকে আমরা বহু ভাবে দেখেছি কিনতু শাড়ি তে দেখিনি তুমি কি শাড়ি পড়তে ভালোবাসনা?

উত্তর  খুব ভালোবাসি, কিন্তু পারিনা পরতে, শাড়ি পরে হাঁটতে পারিনা, আসলে সেভাবে কোনোদিনও চেষ্টাও করিনি, এত তাড়াহুড়ো করে বেরোই সব জায়গায়।  তবে ইচ্ছে আছে , আশা করি খুব তাড়াতাড়ি শাড়ি পরে ছবি দেবো।

প্রশ্ন   লেখিকা কৃপা বসু আর অভিনেত্রী কৃপা বসু কোন টা কে এগিয়ে রাখবে?

উত্তর  লেখিকা অবশ্যই। অভিনেত্রী হতে চাইনা।

প্রশ্ন
তোমার নতুন ছবি one day র    গল্প সম্পর্কে একটু বলো।

উত্তর 
কদিন পরেই রিলিজ করবে, আমি চাই সবাই দেখুক ও  নিরপেক্ষ মতামত দিক। এখন শুধু এটুকু বলতে পারি মিষ্টি প্রেমের গল্প কিন্তু জরাসা হটকে

প্রশ্ন এটা তোমার প্রথম কাজ  নায়িকা হিসেবে কতোটা challenge র ছিল?

উত্তর  না না এর আগেও কাজ করেছি। এখনো পর্যন্ত চ্যালেঞ্জিং রোলের মুখোমুখি হইনি
 আমার কাছে সহজ ছিল

প্রশ্ন
এর আগে side roll ছিল এটা   main দায়িত্ব কি সত্যি বেড়ে যায়?

উত্তর  হ্যাঁ তা বাড়ে। সবাই দেখবে একটা মানুষকে, ভেতর ভেতরে একট ভয় কাজ করে

প্রশ্ন  তোমার  বই কবে বেরচ্ছে?

উত্তর  জানিনা, এখন ইচ্ছে নেই।

প্রশ্ন ফিল্ম টা পুজোর সময় রিলিজ হলে ভাল হতো না?

উত্তর 
না না তখন সবাই পুজো নিয়ে মেতে ছিল। এটাই পারফেক্ট টাইম

প্রশ্ন  এরপর হতে আর কি কি কাজ আছে?

উত্তর   কিছু কাজ আছে, দেখা যাক কবে শুরু হয়

প্রশ্ন   ফিল্ম এ তোমার  character টা র নাম কি?

উত্তর  আদর।

প্রশ্ন  আদরের থেকে কৃপা কতটা আলাদা?

উত্তর   আদর আর কৃপার কিছু কিছু জায়গায় মিল আছে আবার কিছু কিছু জায়গায় অমিল।
 আদর বাড়ির লোকের কাছে হার মেনে তার প্রেমিককে অস্বীকার করে, কৃপা সেটা করতো না। আবার আদর আর কৃপা দুজনেই চটজলদি ডিসিশন নেয় তা সে ঠিক হোক বা ভুল

প্রশ্ন এরপর যদি কোনো ফিল্ম এ র প্রস্তাব আসে করবে?

উত্তর হ্যাঁ ভালো কাজ পেলে গল্প স্ট্রং হতে হবে
 
প্রশ্ন শেষ প্রশ্ন 
দ্রাঘিমা ও প্রত্নবালিকা র কোন কবিতা টি প্রিয়?

উত্তর    নিজের বই তো, সবগুলোই। তবে বেশি ভালো লাগে: বাবা তোমাকে, এবং আমার একটি মেয়ে ছিল

শুভেচ্ছা তোমাকে আর জ্লফরিং কে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ



অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা এই পত্রিকাকে। পত্রিকার বয়স দীর্ঘজীবি হোক

বড়দিনে জলফড়িং

আমার বড়দিন

আমার বড়দিনটা একটু অন্যরকম
পার্কস্ট্রীটের বাহানাটা আজ আর মনে পড়ে না,
মনে পড়ে বাড়ির পাশের স্ট্রীটটার
সন্ধ্যে নেমে আসার পর সোয়েটারহীন ঠান্ডায়
কুকড়ে যাওয়া মুখ গুলো,
আমার বড়দিন ঠিক একটু অন্যরকম
হাফছুটির পর ছুটে আসা স্ট্রীটের ধারে
চলে যাই ছেলেপুলে গুলোর আবদার মেটাতে
মলিন ওই মুখটায় হাসি খুঁজে দিতে।
পার্কস্ট্রীটের বদলে চলে যাই ওদের
লাল সাদা টুপি পরে সান্তা হতে।
                                                 জয়দীপ রায়









বড়দিনে জলফড়িং

বড়দিন / ব্রতীন বসু

আজ বড়দিন
তাই দুপুরে বেড়িয়েছিলাম একটু পার্ক স্ট্রিটের দিকে
অন্যদিন সময় বা ইচ্ছে হয় না হুজুগকে প্রশ্রয় দেবার
ভিড় ঠেলে ভিক্টোরিয়ার কাছে যখন পৌছুতে পারলাম তখন বিকেল শেষ
লাল অন্ধকার আর রকমারি আলোয় যেন রাধাগোবিন্দের গোপন প্রেম
পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা হল
হাসিঠাট্টা ঘোড়ার গাড়ি বেলুনের উড়ুউড়ু ভাব
লাল টুপি পরা অজস্র  সান্তার আনন্দ
যেন খুব আপন কারুর জন্মদিন আজ।
দেখে মনে হতেই পারে উৎসব
কোন ঈশ্বরের সৃষ্টি নয়
কোন জাতির সৃষ্টি নয়
এর কোন সীমা থাকাও উচিৎ নয়
অষ্টমী বা ঈদ কি বড়দিন যাই হোক
আনন্দ মানুষের।
তার মধ্যে
একটা বাচ্ছা ছেলে
ফাঁকায় ফাঁকায় ঘোড়া নিয়ে ঘুরছে
অসুস্থ মত দেখতে একটা ঘোড়া
নাম কি তোর? আজ্ঞে কৃষ্ণ।
আর ঘোড়ার নাম?  রাধা।
চড়াবে বাবুকে? আজ একটাও সওয়ারী পাইনি।
না থাক।যদি ফেলে দেয়।
অসুস্থ মত দেখতে একটা ঘোড়া।
অন্য শক্তপোক্ত ঘোড়াতে চড়ে ছেলে যখন
টগবগ করে মিলিয়ে গেল আনন্দমেলায়
বুঝলাম
উৎসবের সীমাবদ্ধতার একটা কারণ ঈশ্বর হলে
বাকি নিরানব্বইটা আমি নিজেই।



















মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯

সান্তাক্লোজ সেজে আমার বাবা নেমে আসুক এমনটাই ইচ্ছে বড়োদিনের...🖋সুদীপ্ত সেন




বড়োদিনের ইচ্ছে বড়ো

আমাকে সরিয়ে রাখো তোমার ভিড়ের মধ্যে থেকে
শহরের ট্রাম ছুটে যাওয়া শব্দে আমি আমার বাবাকে খুঁজি
নিউমার্কেটের সেই লোকটা যে সার্ফজলের  ফ্যানা উড়িয়ে উপার্জন করে
কিংবা ধর্মতলার ট্রাফিক জ্যামে আমাকে ফেলে রাখো
ফুটপাতে বসে থাকা লোক গুলোর দিকে- তাকিয়ে আমি আমার বাবাকে খুঁজি
ছোট্টো ফুলের মতো মেয়েটা আমাকে ওই ওই বলে সেদিন ভুট্টা খেতে চাইলো
তাকে কিনে খাইয়েছিলাম অথচ টাকা দিই না তাদের
অথচ এ কলকাতা আমার বাবাকে নিয়ে নিলো, হারিয়ে দিলো তার ভিড়ের মধ্যে।
আজও হাতড়ে খুঁজি, কালকেও খুঁজবো....

পার্কস্ট্রীটের আলোকসজ্জা থেকে চার্চের কাছাকাছি কোনো ফুরসত পেলে
সান্তা সেজে আমার বাবা নেমে আসুক।
কিচ্ছু চাই না আমার, শুধু বলে যাক ভালো আছি
বাড়ি ফিরে মা'কে জানাব সেটুকুই।

বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৯

জলফড়িং ফাউইন্ডার সুদীপ্ত সেনের শেষ সম্পাদকীয়


সম্পাদকীয়,

সে সময়টাই রোদ ছিল, একঝাঁক সাহিত্যের ওয়েব ম্যাগাজিন সে সময় রোদ ফেলেছিল আর আমার ইচ্ছে করেছিল সেই রোদে জলফড়িং কে উড়িয়ে দেওয়ার আর সেই কারনেই জলফড়িং এর সৃষ্টি করেছিলাম।
সময়টা ২০১৭ সালের ১৫  নভেম্বর। বিশাল একটা পাথর সরিয়ে রেখে প্রকাশ করেছিলাম জয়দীপ দা এবং সুনন্দ দার সহায়তায় প্রায় ৪৯ জনের লেখা।
সেদিনই বুঝতে পেরেছিলাম কাজটা সহজ নয় কঠিন আর কঠিনকেই আদরের সহিত মেনে নিয়ে এগুতে শুরু করলাম।
পথে যেতে যেতে বহু সংখ্যা করলাম, বহু ইন্টারভিউ, বহু নিত্যনতুন আইডিয়া। এসবকিছুকে ভর করে জলফড়িং পৌঁছে গেছে সবার কাছে।

আজ আমার হাতে সেইরকম সময় নেই ঠিক যতটা সময় দরকার একটা লড়াই এর জন্য তাই শেষ সম্পাদনা করলাম "ভালোবাসা বাকি আছে"।

আপনারা তাহলে ভাববেন সংখ্যা যখন প্রকাশিত তার মানে ভালোবাসা আর বাকি নেই
কিন্তু না এই উত্তর আমার কাছে নেই তাহলে আপনার কাছে কি করে থাকবে কারণ আমার সম্পাদনার শেষতম সংখ্যার নামটাইতো "ভালোবাসা বাকি আছে"।

এককথায় যাঁরা লেখা দিয়েছেন তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
কৃতজ্ঞতা জানাই তাঁদের, যাঁরা এতো ছোটো একটা ওয়েব ম্যাগাজিনকে ইন্টারভিউ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।
ভালোবাসা নিও 'রিয়া' দি। তুমি সেদিন এক কথায় এই প্রচ্ছদ এঁকে দিয়েছিলে, তুমি চাওনি কিছু আর আমিও দেইনি কিছুই। শুধু মনে আছে তোমার আঁকা ছবিগুলো নিয়ে একটা কাজ করেছিলাম খুব তৃপ্তি পেয়েছিলাম সেই কাজটা করে সেটা আজ তোমায় জানালাম আমার শেষ সম্পাদকীয়।

ভালোবাসা বাকি আছে সংখ্যায় পড়ুন জনপ্রিয় কবি অতনু বর্মনের কবিতা আমার পদবী



আমার পদবী
অতনু বর্মন

যে তুমি নির্লিপ্ত আজ দেখেও দেখোনা
বিপন্ন ঘরহারা অবৈধ শিশুর ভেজা চোখ,
রোদমাখা শিশিরকে ন্যাঙটো করো উল্লাসে মেতে
সেই তোর সেই তোর বউ বাচ্চা একবার বেওয়ারিশ হোক।

তারপর বুঝে নিস কতো ধানে কে কে দেয় মই
রাখালের বাঁশিতে যে ধর্মের ষাঁড়কে তাতায়,
কার কার আলপনা কারা কারা মুছে দিলো আজ
সব আমি টুকে রাখছি বিষন্ন মলাট দেওয়া জাবদা খাতায়।

মানুষ নামের জীব বাস করে যে সবুজ গ্রহে
সেখানে যে বাঁদরের পিঠে ভাগে হয় মাতোয়ারা,
আমার পদবী তুমি মনে রেখো শুধু মানবতা
একদিন তাকে তাকে করবোই আমি ভিটেছাড়া।

                                   

ভালোবাসা বাকি আছে সংখ্যায় কবিতা পড়ুন তুষারকান্তি রায়ের জলজ

জলজ
তুষারকান্তি রায়

যদি আমাকে দ্যাখো তুমি উদাসী
ফিরে যেওনা, তুমি
দ্যাখো অপেক্ষার বাইরে কেমন
কৌতুহল থমকে আছে !
সুবর্ণরেখা জুড়ে নুয়ে আছে পাতা
সুদীর্ঘ শ্রাবণের মেঘ বরাবর
শিস বাজিয়ে নেচে বেড়াচ্ছে শব্দচিল
নিরিবিলি কিছু ভেজা ধুলোর
টানটান স্বরলিপি !
আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজে বেড়াচ্ছি কারণ, আর অকারণে
বেরিয়ে আসছি সম্ভাবনার বাইরে !
আমার আষ্টেপৃষ্ঠে এখন মেঘের
উপমাময় সর্বনাম  !
তুমি কী সত্যিই ভুলে গ্যাছো ! না কি
ইচ্ছাকৃত ফেলে গ্যাছো
এইসব শালিখ - বুলবুলি !
মিষ্টি প্রেমিকার মতো জলে
পা ফেলে ফেলে সন্ধ্যার দিকে
এগিয়ে যাওয়া এমন জলজ বিকেল !


ভালোবাসা বাকি আছে সংখ্যায় কবি মৌসুমি ভৌমিকের কবিতা


নদীবাহিকা
মৌসুমী ভৌমিক
****************
এই তো জীবন, মান অভিমান শোক
হাত ধরাধরি করে স্পর্শ করে যায় ।
ভাললাগার রৌদ্রঝিনুকে মন পুড়ে নিয়ে
অধোমুখে দুঃখ লুকোই বিনীত অন্ধকারে।

নরম জলের ঝরনার গান জড়িয়ে
পাহাড়িয়া মেঘ পরিযায়ী হয়,
আকাশে ছোটে ভাসমান সমুদ্দুর।

আমি তাকে স্পর্শ করি
স্পর্শ করি অবিরল মুক্তধারার
সজল অহমিকাকে।

স্বপ্নময় নদীবাহিকায় খুঁজে ফিরি
সবুজ হাওয়া, বিমুগ্ধ আলো....

ভালোবাসি বাকি আছে সংখ্যায় লেখক সুপ্রকাশ অধিকারীর লেখা গল্প কমলাকান্তের ভূত



"কমলাকান্তের ভূত...
অল্প-স্বল্প শারদ বার্তা
(আর)খিটকেলে অদ্ভুত..."

               সুপ্রকাশ অধিকারী

সকাল সকাল কমলাকান্তের সাথে দেখা। ভূমিকা না করেই চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে প্রথাগত ভঙ্গিতেই শুরু করলো- ইংরেজ'রা ব্যবসা করতে এসেছিলো এদেশে...অবশ্য তার বহু আগে থেকেই বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন জাতি ও তাঁদের কৃষ্টির সমন্বয়  এই ভারত আত্মস্থ করেছে কিন্তু বণিকের মানদণ্ড রাজদণ্ড হয়ে উঠলো  ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির কবলে। এক্ষেত্রেও একতা'র অভাব ও মুনফা/পদলোভী দেশদ্রোহি প্রবৃত্তির চক্রান্ত জয়লাভ করেছে।

এখন তো আমার আবার মনে হচ্ছে পরিস্থিতি ও দিকেই মোড় নিচ্ছে। আমরা নতুন মোড়কে পরাধীন হয়ে যাচ্ছি না তো? হয়তো নতুন কোনো ইষ্ট ইন্ডিয়া ওঁত্ পেতে অপেক্ষায় ...
চায়ের কাপটা মাটিতে রেখে পুনরায় কমলাকান্ত জানতে চাইলেন-
আচ্ছা একটা সহজ প্রশ্নের উত্তর দেতো- দ্যাখনা, এই যে গোরু আমাদের মাতা, খুব ভালো কথা। জমজমাট করে আদর্শ গো-সন্তানেরা গো-মাতার পুজো করুক;প্রসন্নের গরুকেও কিছু খাবার-দাবার দিলে মন্দ হয় না...সব ঠিক আছে। কিন্তু ব্যাটা, যে দেশের দ্যাবতা গরু তারই মাংস রপ্তানি করে দেশ আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য লাভ করবে এটি কি প্রকারে সম্ভব কিছুতেই মস্তিষ্কজাত হচ্ছে না।

এমনি আরো কত প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কমলাকান্তের মাথায়! এতবড় মাপের মানুষ দু-টো কথা বলছে, কাজ থাকলেও না শুনে কি উঠতে পারা যায় ? কমলাকান্ত পুনরায়  বলে উঠলো-

নেতাজীর অতৃপ্ত আত্মা ফাইল ঘেঁটে ঘ করেও কিচ্ছুটি পেলো না! রাজীব কুমার পদ্মবনে না কিষাণ বাবুর দেশে খবর নেই! দেশের কালো টাকা আর সুইস ব্যাংকের টাকা মিলিয়ে কিছু পেলে প্রসন্নকে বিদেশ  ঘুরতে নিয়ে যাবো কথা দিয়েছিলাম, এ জন্মে সে সাধ আর মিটলো না! গুজরাটি বেনিয়া'দের সঙ্গে এ রাজ্যের বেনিয়াদের কতটা সদ্ভাব সেটাও টের পাচ্ছি না। পোড়া কপাল! নইলে আঁতাত করে নীরব-বিজয়'দের কাছে ঠাঁই নিয়ে মজ-মস্তি করে শেষ জীবনটা কাটানোর একটা সুযোগও পেতুম? সেগুড়ে বালি,তা আর হলো কই? ছত্রধর আর চিদাম্বরম এর জেলখানার ব্যবস্থার বাস্তব পার্থক্য কি সে খবরটাও কেও দিচ্ছে না...এইসব প্রশ্ন করে কমলাকান্ত সাতসকালেই মাথাটা আমার খারাপ করে দিলো।

আমি বললাম তা সমালোচনা না করে আপনাদের মত ভালো লোকদের তো দেশের কাজে লাগা উচিত্!

ধ্যুৎ শালা বলে, দাঁত খিঁচিয়ে কমলাকান্ত বললো- আমি তো আফিম খোর আমার কথা ছাড়! যদিও আমার ক্ষমতা নাই কিন্তু বঙ্কিম চাটুজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক থাকাতে পুরোনো দু-একজন এখনো এক আধটু  সম্ভ্রম করে; সেদিন মিছিমিছি দুজন ভালো লোককে হুট করে দুটো পদের অফার করলাম। কি বললো জানিস?
টিকিট নেওয়ার জন্য কত লাগছে? কত টাকা ফাঁসাতে হবে? রিটার্ন কি? আর জেতার পর অন্য দলে গেলে কত রেট উঠবে?

আমি জানি ও ভীষণ সৎ ও ভালোমানুষ তাই ভেতরের কষ্ট থেকেই বলছে; আমি ফের বললাম- ওরে ক্ষ্যাপা, ওসব ল্যাফরা নাই একজন সৎ মানুষ কে চাইছি। দু-পা চেপে ধরে বললো আপনার বাড়িতে মাহিন্দারি করবো, দয়া করে আমায় পদ থেকে নিষ্কৃতি দেন।
আছে রে, আছে! এখনো পৃথিবীতে ভালোমানুষই বেশি আছে...

সকাল সকাল মানুষ'টার একটু সেবা করতে পারলে তৃপ্তি পেতাম। কিন্তু,পোস্তর এত দাম এখন, কমলাকান্তের জন্য  আফিম জোটানো আমার সাধ্যের বাইরে। ভগবান আছে!
ভাগ্যিস ঠিক সময়ে প্রসন্ন দুধ'টা নিয়ে এসেছে, আপাতত আফিম থেকে বাঁচা গেল।
প্রায়শই ভাবি, আচ্ছা! প্রসন্ন যদি না থাকতো আর মদের দোকানের মত দুধের দোকানের লাইনে যদি কমলাকান্তের মত মানুষকে জি,এস,টি,-সার্ভিস ট্যাক্স সমেত খাড়া হতে হতো...আহা বেচারা! তবে দুধের অভাবে নির্ঘাত বেঘোরে প্রাণ যেত লোকটার।

ঘঁটি সমেত দুধটা চুঁক চুঁক করে এক নিমেষে শেষ করলো কমলাকান্ত।যাক বাঁচা গেল,আপন খেয়ালে বিড়বিড় করতে করতে নিমেষে হাওয়ার মত কোথায় মিলিয়ে গেল সে।

কিন্তু এ কি হচ্ছে আমার? কমলাকান্ত আজ মাথাটাই ম্যাজিক করে কেমন যেন বিগড়ে দিয়েছে, এ সব কি ভাবছি আমি...

 সত্যিই তো, গুজরাটিরা ভুজিয়া-আচারেও চালিয়ে নেবে... আমার তো শালা পান্তা ভাতে পেঁয়াজ মাস্ট। গতবার ঘরে চাষের মাল ফেলে দিলাম আর এবার কিনতেও চোখে জল ছাড়াতেও চোখে জল। পেঁয়াজ থেকে আপেল সস্তা,কিন্তু কুকুরের পেটে ঘি যদি সহ্য না হয়?তারপর বাংলাতে-হিন্দিতে সব চুল উঠে গেলে বোঝো ঠ্যালা!

একের পর এক কমিশন বসবে,স্যালারি বাড়বে,মানুষের গড় আয় বাড়বে,অথচ নীরবে সমস্ত ভোগ্যপণ্যের দাম তার থেকে অনেক গুণ করে বাড়বে। নিম্নবিত্ত- চাষি আর দিনমজুর' দের যে কি অবস্থা কমলাকান্ত  সেসব হেঁসেলের খবর দিনরাত রাখে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে রাশ না টানলে আয় বৃদ্ধির কি মূল্য ভবা জানে ?

বেনিয়ারা এবার ধীরে ধীরে  ব্যাঙ্ক-রেল-হাসপাতাল সব গ্রাস করবেন। লাভ হলে ওনাদের, লস হলে পাবলিক গেলো ভোগে।
"ঘরে রাখলে জ্বালা
ব্যাঙ্কে রেডি তালা,
সুযোগ পেলে
কামিয়ে নিয়ে
দেশ ছেড়ে পালা।"

ক্ষাপা খাবি কি ঝাঁজেই মরে যাবি!

আপনি কর্পোরেট লোক, কুটুম-গুষ্টিও সব মালে মালামাল। একফোনে কয়েকঘন্টায় আপনার অ্যাকাউন্ট গরম। বড় সাবসিটির ভালো লোন'টা বা বিনিপয়সায় সরকারী জমি'টা বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা  আপনিই পাবেন। অথবা যদি বুদ্ধি বিক্রি করা কলম বা তৈলাক্ত  শিল্প'জীবি হন দু-একটা পুরস্কার বা লটারির ফ্লাট অথবা ভবিষ্যত গোছানোর মত কিছু না কিছু আপনার হকে আছেই। কিন্তু হরেণ কাকার চারকাঠা জমির দলিল এ তিরিশ হাজার পাওয়াটা যে কি ঠ্যালা সে ত্যাল যাকে মারতে হয় সেই জানে!

কে ইলেক্টেড আর কে সিলেক্টড এটা এখন অনেকের হাবভাবেই প্রকাশ পায়। দিদি কে, দাদা কে অনেককে বলার এখন অনেক মাধ্যম; কিন্তু ঘরে বড় ডাকাত আর কেশ খাচ্ছে চোর। এখন সারা দেশ জুড়ে সব সেক্টরে টার্গেট জব। থানা হোক অথবা ব্যাঙ্ক ;এত কেস চাই পুজোর আগে; ওদিকে মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রি করো নয়তো ব্রাঞ্চ উঠে যাবে...ডাকবাবু-ব্রেনবাবু  সমস্তটা এভাবেই সরকারী মোড়কে "কোম্পানি সিস্টেমে"র মধ্যে বেঁধে ফেলছে; গোদা বাংলায় "নব্য ইষ্ট ইন্ডিয়া ক্যাপচারিং।"

 একটি বিষয়ে আলোকপাত না করলে কমলাকান্তের মত মানুষ কে অপমান করা হয়। প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জনপ্রতিনিধি দ্বারা কৃত বৈষম্য ও দলের এবং স্বজনপোষণের এক বিস্তর দলিল চিত্রগুপ্ত ডেইলি লোড করছে...
কোনো ব্যক্তি যখন সেই দলের প্রতীকে লড়াই করে ততক্ষণ সে দলীয় প্রতিনিধি কিন্তু যখন সে জয়লাভ করে তখন তিনি জনপ্রতিনিধি। তখন তিনি দল-মত নির্বিশেষে তাঁর এলাকার সমস্ত মানুষের জনপ্রতিনিধি। আর এটাই তার রাজধর্ম। দলীয় জীবন ও সরকারী প্রতিনিধিত্ব মিশে গেলে ক্ষতিকর। একজন জনপ্রতিনিধি সেই এলাকার লোকাল গড; ঈশ্বরের কাছে কিন্তু প্রভেদ থাকে না।

গোটা দেশজুড়ে বিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিভিন্ন নির্বাচনে না লড়ে অনেকেই জনপ্রতিনিধি আছেন। তাঁদের মূলত তিনটে শ্রেণী।

প্রথম শ্রেণীতে অবশ্যই কিছু চরম ভালো বা চরম খারাপ'রা  থাকেন;যাদের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়াতে সাহস  পায় না। কাউকে শ্রদ্ধায় কাউকে ভয়ে। কিন্তু যদি ভয় মেশানো শ্রদ্ধা থাকে তবে সেটা খুব ভয়ঙ্কর এবং ইমোশনাল টর্চার প্রবণ।

বাম আমলে ছাত্র ইউনিয়নের ভোটেও এরম অনেক রুটিন দেখেছি। বিপরীতে ছাতি ফোলানো অনেকেই বদ্ধ  ইউনিয়ন রুমের নিদারুণ কাউন্সেলিং এ মুখ বুঝে নমিনেশন প্রত্যাহার করেছে ...অনেকটা হাগুর এপিট-ওপিট, শুধু বয়স খসে পড়ছে পাতার মত।

এ রাজ্যে  জমি বিক্রি করে পার্টি করা কমিউনিস্ট'দের বিলুপ্ত করে কামিয়েনিস্ট গজানোর সময় যারা মাছ চুরি করতে শিখে ফেললো তারা কিন্তু পুকুর চুরির টেকনোলজি শিখতে পারেন নি। অবশ্য কেরালা ইংরেজি আর কম্পিউটার শিখবে আর বাংলা বর্গাদার-পাট্টা-খাস-কৃষক আন্দোলন-সাক্ষরতা  ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকবে। কমরেড'দের টেকনিক্যাল হতে সময় লেগে গেল। হয়তো টেকনিক্যাল হতে পারেননি বলেই আজ পর্যন্ত কাউকে  বিভিন্ন দপ্তরের নোটিশে সি,জি,ও কমপ্লেক্স দৌড়াতে হচ্ছে  না।

সাতসকালে কমলাকান্ত কি ম্যাজিক যে করলো, সমস্ত কাজ ছেড়ে-ছুড়ে আকাশ পাতাল এসেই যাচ্ছে মাথার ঘরে।

যাক ছেঁদো কথা ছেড়ে এবার দ্বিতীয় শ্রেণী বলতে যে প্রাণী বোঝায় সেটা বলেই ফেলি। এদের ইয়েস ম্যান বলে, এরা সবেতেই থাকে, প্রয়োজন ফুরোলে নো ম্যানস ল্যান্ডে অপেক্ষা করে তাক বুঝে ঘর বানাবার।

সর্বশেষ  তৃতীয় শ্রেণীতে যারা আছেন; তারা প্রতিপক্ষ থাকলে টিকিটের লাইনে যাবার রিস্ক নিতেন কিনা সন্দেহ আর এরা জানেন... যে কদিন আছি বাবা...গুছিয়ে নে। কমলাকান্ত থাকলে বলতো-মরার পরে শোবার জায়গাটাও তোর থাকবে না।

একটা ছোট্ট ফোঁড়া গ্যাঙরিঙ করে ফেলতে পারে যদি সঠিক সময়ে অপারেশন বা ড্রেসিং না হয়। কি বলতে কি বলছি, আচ্ছা এই কমলাকান্ত'র ভূত যে মাথা থেকে নামতেই চাইছে না।

এখন প্রায় সব পুকুর লিজ, হাইব্রিড মাছ। বাঙালি আজ যা ভাবে কাল তা দুনিয়া ভাবতো; ভেতো বাঙালি ওটস্ খাচ্ছে ওজন কমাতে, শরীরের সাথে মনের মিল না হলে বুদ্ধি ভাড়া তো করাই লাগে। অবশ্য এখানকার মাল অন্যখানে সাপ্লাই করে ডবল কামাচ্ছে না কি ফিডব্যাক কিছু উল্টোপথে এদিকের অ্যাকাউন্টেও ঢুকছে সব গোবিন্দই জানে; ও সরি! ব্রহ্মা জানে...

সবাই সবাই কে দেখছে... কিন্তু নিজেরা নিজেদের সমালোচনা করতে খুব দুর্বল ...ধর্ম এমন একটা স্পর্শকাতর জায়গা যা জীবনের বাঁচা-বাড়াকে পুষ্ট করে কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ও কূট-কৌশল নতুন মহাভারত না রচনা করে? নগর পুড়লে... দেবালয়-মসজিদ কিছুই বাদ যাবে না! যাদের পেছনে পাঁচটা স্টেনগান গার্ড থাকে না সেই বিশাল সংখ্যক মানুষ এক কঠিন সময়ের মধ্যে  অস্তিত্ব আর পিঠ বাঁচাচ্ছে। বিচার করুন...নইলে অকাল বর্ষার মত অকাল পরাধীনতা দেশের মাথায় নটরাজ হয়ে নাচবেন।

ভুলে যাবেন না-
"রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়...
তাঁদের কিন্তু মৃত্যু নাই,
শহীদ সাজবে মোদের ভাই।"

রাজনীতিতে চিরস্থায়ী সত্য বলে কিছু হয় না... 
একবার মন কে প্রশ্ন করে দেখবেন... আগামী দুই যুগ পর নতুন ভোটার না আসা পর্যন্ত আপনি জেতার জন্য নিরাপদ তো?

এতো ধানে ভাঙতে শিবের গীত গায়ছিলাম। যাক বাঁচা গেছে, কমলাকান্তের ভূত মাথা থেকে ঘাড় হয়ে পেট দিয়ে বায়ু হয়ে বেরিয়ে গেছে।

আসল কথাটা তো বলাই হয়নি। এবার বলি- ভাদ্র মাসে কেবু কাকার কাহিনী আজও মিস করি। ছোট্ট বেলার বাচ্চু, কালিফটকা, টু-সাউন্ড,  টিকলি, পিঁয়াজি,রকেট,তুবড়ি চালের ছাউনির নীচে বারান্দার টিনের চালে আশ্বিনের রোদে শুকোতে দেওয়া আজও মিস করি। কটার'দার আলকাপে ছোঁকড়া সাজার গল্প আর ভাসানে শিখিল'দার মায়ের নাচ খুব মিস করি। এত আয়োজন তবু হয়তো শরতের অকাল বর্ষায় কারো দুগ্গা কাঁদছে কারো দুগ্গা হাঁসছে। ...তবু বিজয়ার দিনে রাগ-দুঃখ-অভিমান ভুলে আজও গোটা গ্রাম এক হয়ে যায়। এমনি করেই বেঁচে থাক সুখে থাক আমাদের দুগ্গারা। সবাইকে শারদীয়ার শুভেচ্ছা।
ভালো থাকবেন-ভালো রাখবেন-জয়গুরু।।

ভালোবাসা বাকি আছে সংখ্যায় একটি অসমিয়া কবিতার অনুবাদ পড়ুন বিশিষ্ট অনুবাদক বাসুদেব দাসের




প্রতিটি নারীই এক একটি নদী

শিশুসাহিত্যিক হরপ্রিয়া বারুকিয়াল বরগোহাঞি
এই মূল অসমিয়া কবিতা থেকে বাংলা অনুবাদ বিশিষ্ট অনুবাদক—বাসুদেব দাস
  
   প্রতিটি নারীই এক একটি নদী
  প্রতিটি নদীই এক একটি নারী
নদী এবং নারী একই সুতোয় গাঁথা।

   নদী মানেই নারী নারী মানেই নদী
  নদী নারীর উর্বর গর্ভের মতো
গর্ভে তিলতিল করে অঙ্কুরিত হয় জীবন
   প্রতিটি নারীর বুকে লুকিয়ে থাকে
   নদীর গভীরতায় ভরন্ত প্রেম এবং
  আলোর গান,অনুপম জীবনের গান

   নদী তীরের মাটিতে কথা বললে
গজিয়ে উঠে ভরন্ত আশার সোনালি শস্য
নদী গান গাইলে সবুজ হয়
উপত্যকার বিস্তীর্ণ প্রান্তর
   নদীর একমুখ হাসিতে রঙিণ হয় আকাশ
  ক্রোধে পাগল হয় বাতাস
স্তব্ধ হয় বসন্ত পাখির কূজন,প্রজাপতির নাচ ফুলের লাস্যময় ভঙ্গি আর অরণ্যের গান।
 তাই নদীর সঙ্গে নারীর আজন্ম প্রেম।


   কবি পরিচিতি১৯৫৩ সনে হরপ্রিয়া বারুকিয়াল বরগোহাঞির জন্ম হয়।অসমিয়া ভাষা সাহিত্যের শিক্ষয়িত্রী শ্রীমতী বরগোহাঞি একাধারে কবি,গল্পকার এবং ঔপন্যাসিক। ‘উৎস কেবল মানুষ’কবির কাব্য সংকলন।বিভিন্ন পুরস্কারাদিতে সম্মানিত শ্রীমতী বরগোহাঞি একজন প্রতিষ্ঠিত শিশু সাহিত্যিক। ২০১৬ সনে শিশু সাহিত্যের জন্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।    

ভালোবাসা বাকি আছে সংখ্যায় কোর কমিটিবর্গের লেখা





১.)
জ্ঞানচক্ষু
      সুনন্দ মন্ডল

বর্ষার রেশ জীবনে
সোঁদা সোঁদা গন্ধ মাটির শরীরে।
প্রতিমার শরীরে মাটি লেপন
চক্ষুদানে তৎপর কারিগর।

শরতের বাতাস গায়ে ছুঁয়ে যায়
দেবীর জ্ঞানচক্ষুতে ফুটে ওঠে দর্শন।
অপরাধ গ্লানি তিক্ততা অন্যপথে থাকুক
কটা দিন শান্তি আনন্দ হুল্লোর জমে থাক।

শারদা দশ হাতে ধরিত্রীর ভার নিলে
শারদীয়ায় মঙ্গল ঘট পূর্ন হবে!
স্নিগ্ধ স্পর্শে বাঙালি গলা মেলালে
নতুন জাতির উৎপন্নে মানবতা জাগবে।

ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ দূর সমুদ্রের জলে ধুয়ে যাক
পাখির গানে সুন্দরতা আসুক!
ফুলের গন্ধে ভরে যাক মানবতার উঠোন
মহামায়ার মহিমায় জ্ঞানচক্ষু হোক মনুষ্যত্বের।

২.)

চয়নিকার কবিতা

যেদিন বিকালে তোমার চিঠি আসে,
সেদিন সূর্য সহজে ডোবে না,
একটা সোনালী রোদ বহুক্ষণ লেগে থাকে
মাধবীলতার উঁচু ডালটায়।
গর্বে ফুটে থাকা এক থোকা লাল-গোলাপী ফুল থেকে
অপেক্ষা গলে পড়ে।

যেদিন তোমার চিঠি আসে,
সেদিন গোটা ঘর, গোটা পাড়া
কাঁঠালিচাঁপার গন্ধে ভরে যায়।
আমি, কাঁঠালিচাঁপার সাথে
তোমার গন্ধ গুলিয়ে ফেলি।
তুমি ভেবে হাতরাই এদিক সেদিক।

যেদিন তোমার চিঠি আসে,
সেদিন দিন ফুরোতে কিছুটা দেরী হয়ে যায়,
রাতের তারাদের মুখে থাকে টোল পড়া হাসি।
কালপুরুষের কোমর থেকে
খসে যায় বীরত্বের তরবারি,
হয়তো পুষ্প বৃষ্টিও হয় নিভৃতে।

যেদিন তোমার চিঠি আসে,
সেদিন শুধু ভাবনা আসে,
ঘুম আসে না।

৩.)
স্বৈরতন্ত্র
জয়দীপ রায়
         অন্ধকার পথে হারিয়েছে
         অহংকারের চাবিকাঠি
         খোলার জো নেই...
         নেহাত ভাঙতে হল...
         পড়ল শয়েক হাতুড়ি হাপর
         রাজতন্ত্রে পড়ল চাপড়...
         হুড়মুড়িয়ে পড়ল খিলান
         ভাঙল কয়েক লাখো মিলান...
         উঠল স্লোগান স্বৈরাচারী বিদায় হও
         অহঙ্কারের নিপাত যাক;
         মধ্যরাতে হল বিচার...
         সাজা পেল রাজা নয়
         তার স্বৈরাচার...
        ফাঁসি কাঠে সাজা পেল
        রাজার স্বৈরতন্ত্র...
        বিজয় ধ্বনিতে ধ্বনিত হল
        জনগণের তন্ত্র ...।

৪.)
"কাগজ"

চঞ্চল ভট্টাচার্য


রাত্রিরা ঘুমিয়ে পড়ে অন্ধকারে।
আলো নেই, নিস্তব্ধ চারিদিক।
বেহুঁশ হয়েছে রাত্রিরা।
শহরের রাস্তায় কুয়াশার লীলাময় রূপ।
আধপেটা খাওয়া ভিখারিটা ঘুমিয়ে পড়ে শিশিরের শব্দে।

কয়েকটা কুকুর নিষিদ্ধ পল্লিতে চিৎকার করে ভদ্র মুখোশ দেখে।
যারা বাড়ি গিয়ে স্ত্রীর পাশেই ঘুমায়।
ট্রেনের শব্দে পাশ ফিরে মাথা চুলকে আবার ঘুমিয়ে যায় স্টেশনের স্বীকৃত ভিক্ষুকটি।

আলোগুলি অপেক্ষা করে শিশির স্নিগ্ধ ভোরের অপেক্ষায়।
একটি অ্যাম্বুলেন্স পেরিয়ে যায় হঠাৎই।
ভিতরে একটি লাশের মৃত্যু হয়েছে।

একটি ছেলে কোনো এক স্টেশনে কাটা পড়ে ট্রেনে।
পুলিশ তদন্ত চালায় আত্মহত্যা নাকি খুন !
কেউ আবার ধর্ষিতার তকমা পেতে পারে কাল।

এখন মধ্যরাত্রি।
পেপার ম্যান পেপার নিতে আসে স্টেশনে আর একটু পড়েই।
পরের দিনের খবর পায় আবার মানুষ।
এই সব খবরই থাকে।
ধর্ষণ, খুন,রাহাজানি, আধপেটা,নিষিদ্ধ পল্লি।

একটি মর্মান্তিক রাত্রির কথা থাকে।
কয়েকটি জীবন্ত লাশের মৃত্যু থাকে।

আবার অপেক্ষা।
কালকের।
এরকমই খবরের অপেক্ষা।
আজকের খবরের কাগজ পড়ে মনটা বেশ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে।

কালও এরকমই খবর না থাকলে আবার পড়তেও ভালো লাগে না।
খবর কাগজ তো এসব খবরের জন্যই নেওয়া।

৫.)
সুদীপ্ত র জন্য কলম
 অরূপ সরকার

ওয়েটিং  রুমে বসে আছি  শেষ ট্রেনে বসব বলে
বৃষ্টি ভেজা রেলগাড়ি গূলি এক দুই করে পার হয়ে যায় নিজস্ব রুটে।
বৃষ্টি পড়ছে ;একফোঁটা দু ফোঁটা ঠিক যেমন করে কবিতায় শব্দ ঝরে ।
এই করেই ট্রেন এসে যায়,
শীত মেখে উঠে পড়ি শেষ ট্রেনে,
বৃষ্টি ফোঁটা কেমন জানালায় চুমু খেতে খেতে অলস ভাবে গড়িয়ে পড়ে ,
যেন প্রেমিকার পেলব ঠোঁট মত ,
আলতো ছোঁয়ায় ঘুম ভাঙায় ।
স্টেশন এসে পড়ে, এবার নামতে হবে,
যাব সেখানে যেখানে জলফড়িং আছে অনেক অনেক জলফড়িং এভাবেই তো আমায় ডাকে,
জড়িয়ে রাখে অনাবিল আদরে ।
কবিতা কি এভাবেই শেষ হয় ?
শেষে কিন্তু অন্ত্যমিল থাকে।

৫.)
হতে পারতো
----------মানস খাঁড়া

তুমি চাইলেই হতে পারতো না হওয়া অনেক কাজ
তুমি বললে কথা সেদিন সেটা কবিতা হতো আজ।
তাকিয়ে দেখলে সেদিন হয়তো চিনতে পারতে আমায়
থমকে যেতো সবকিছু বাদ যেত না সময় ।
সব রাত গুলোতে সেদিন চাঁদ নাইবা দেখা দিল
রাত -রঙিন করার লগে জোনাকী কত ছিল ।
নাইবা বললে কিছু, কিন্তু রাত আসে ঠিক আগের মতো
ঋতু-রাও ঠিক বদলায় যেমন ছিল ক্রমাগত।
ভুল করে না গাছের যেভাবে ফুটতো ফুলগুলো
হয়তো ভাব তুমি নেইকো ওরা ভালো।

৬.)
পারা-না-পারা
অস্পৃশ্য( অনিমেষ ভট্টাচার্য )

আবার মন হলে কাছে এসো।
আবার কোনোদিন মন হলে জড়িয়ে ধরো।
তুমি এসে বলতেই পারো আজ 7.15 শো।
আবার বলতে পারো আজ নীল শার্ট টা পড়তে পারতে।
আবার আমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদতে পারতে।
তুমি আবার ইরাকি মেরে বলতে পারো ছেড়ে চলে যাবো।
আবার তুমি  থেকে তুই আসতে পারো রাগের জেদে।
বলতেই পারো কাল সকালে ওঠাতে পারবো না
আবার বলতেই পারো অটো না বাস এ যেও।
আবার তুমি তারস্বরে বলতে পারো গোপনে ভালোবাসি
কিন্তু জানো,এগুলো বলার ক্ষমতা তোমার ছিল,
কিন্তু এখন নেই।
কারণ জানো, তুমি সেদিন যদি জেদ করে চলে না যেতে।
যদি তুমি সেদিন আমার দেওয়া রিং টা ফেরত দিতে।
যদি তুমি সেইদিন আমাকে লম্পট চরিত্রহীনের আখ্যা দিতে।
যদি সেইদিন চিৎকার করে একবার বলতে আমি এইসব বিশ্বাস করি না,শুধু তোমায় ভালোবাসি।
সত্যি  বলছি তাহলে তুমি সব করতে পারতে।









ভালোবাসা বাকি আছে সংখ্যা আমন্ত্রিত কবিদের লেখা



১.)
তবুও ভালোবাসি

--------পাপিয়া মণ্ডল

যেটা বলো নি, সেটা না বলাই থাক।
শোনার জন্য জোর করবো না একটুও...
কিন্তু,  যা তুমি বলছো আগে বহুবার,
সেই কথার অনুরণনে আজও কেঁপে উঠি।


তোমার সেই চাহনি, সেই কথা বলা, সেই অপেক্ষা,
পান থেকে চুন খসলে, সেই যে মুখ ভার,
রাগ চাপতে গিয়ে, আরো বেশি রেগে যাওয়া,
আজও, সব... সবটা মনে পড়ে আমার।


হঠাৎ কেন যে ওলোট-পালোট হলো সব,
কেন যে এভাবে বদলে গেলে,
কেনই বা এতোটা নিরুদ্বেগ, নির্বিকার হলে?
নাহ! সত্যিই আমি ভেবে পাই না..


প্রশ্নও করবো না কোনো তোমায়।
তোমার খুশিমতো তুমি থাকো।
শুধু আমি সেই একই থাকবো আজীবন।
নিঃস্বার্থে ভালোবেসে যাবো, অনন্তকাল।


২.)
কথপোকথন
অনুব্রতা গুপ্ত

-যা কিছু সুন্দর আমার সব শিখতে ইচ্ছে করে।
-আর যা কিছু সুন্দর নয়?
-সেই সবকিছুই তো আমি ধারণ করি।
-এমন ধারণা?
-অসুন্দরকে ধারণ না করলে সুন্দরকে লোভ করা যায় না।
-সুন্দর কী?
-বোধ।
-কেমন বোধ?
-সহজ।
-সুন্দর তো জটিল?
-কেন?
-তবে তো সবাই সুন্দর হতো!
-ভয়ে।
-কিসের?
-ভেঙে যেতে।
-তুমি ও ভয় পাও?
-পাই তো।
-আমাকে?
-হুম।
-কেন?
-আমি তোমাকে চেয়েছি তাই।
-তাতে?
-তাতেই তো!
-বোঝাও!
-তোমার প্রতি আমার যে লোভ,তাই আমার সারল্য।তাই আমার সৌন্দর্য।
-তবে আমি সুন্দর নই কেন?
-তুমি চাওনি তাই।
-কষ্ট পাও?
-না তো।
-তোমাকে চাইতে আমার ভয় হয়।
-চেয়ো না তবে।

 -যা কিছু সুন্দর আমায় সব শিখিয়ে দেবে?

-দেবো..

৩.)
ফারহান ও স্বচ্ছতোয়া কথোপকথন
কৃপা বসু

ম্যাডাম অনেকদিন হলো, ভুলেই গেছেন বোধহয়, যা হোক কেমন আছেন! লেখালেখি কেমন চলছে?

----জাস্ট গেট লস্ট, ইউ ব্লাডি ফেক পার্সন, মিথ্যেবাদী, বিশ্বাসঘাতক একটা! আই হেট ইউ...

----বাওয়া!! আস্তে আস্তে, কানে লাগছে বড্ড!! এত কেন চিৎকার করেন যে মৃত্যুর আওয়াজও শুনতে পাইনা ঠিকঠাক, ভালোবাসা তো মৃত্যুর মতোই শান্তি দেয় তাইনা স্বচ্ছতোয়া! আর কি সব খিস্তি টিস্তি দিচ্ছেন! কি করলাম বলুন ম্যাডাম?

----শাট আপ ব্লাডি ইডিয়ট! আমার নাম আপনি উচ্চারণ করবেন না নিজের মুখে, ঘেন্না করছে আপনার উপর। আর কিসের ভালোবাসা! আপনাকে ভালোবাসা যায়? প্রেমিকার সাথে ঘুরছেন, দিব্যি ছবি পোস্ট করছেন,

 ইন এ রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিচ্ছেন, গ্রেট গ্রেট!! হাততালিয়া! আপনাদের মতো পুরুষদের জন্যই মানুষ ভালোবাসতে ভয় পায়, কাছে যেতে ভয় পায়!

----তা ঘেন্না টেন্না করা ভালো কাজ! সবথেকে বেশি যাকে ঘেন্না করি, তার প্রোফাইল সারাদিনে একবার না একবার ঠিক চেক করি আপনি জানেন কি সেটা? আর নাম কেন উচ্চারণ করবো না?

 লজিক দেখান! যার বুকে এই মুহূর্তে ছুরি চালিয়ে দিতে চাইছেন, তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়বেন বুঝি নাম ধরে ডাকলে? ঠোঁট কেঁপে উঠবে? একশো বার আপনার নাম নেবো, বেশ করবো....

----আপনি এত অসভ্য কেন মিস্টার ফারহান?

----দুনিয়ার সব অসভ্যরাই এক না একসময় মস্ত বড় প্রেমিক হয়ে ওঠে ম্যাডাম। প্রেমিক হতে গেলে যে কোনো শান্ত নদীর বুকে ঘূর্ণিঝড়ের মতো আছড়ে পড়তে জানতে হয় স্বচ্ছতোয়া...

----ওহ প্লিজ!! আমি আর নিতে পারছিনা আপনার মিথ্যে কথা, আপনি এত নিষ্ঠুর কেন ফারহান? আমায় বলেননি কেন আপনি অন্য কারোর সাথে সম্পর্কে আছেন?

----এইতো সম্পর্ক নিয়ে দিনরাত এত জ্ঞান দেন, এটুকুও জানেন না, যে সম্পর্কের নিজস্ব কোনো গন্ধ থাকেনা, যে শরীরের জ্বর হয়না আদতে সেই শরীর ও সম্পর্ক দুটোই মৃত। সেটাকে স্রেফ মানুষ বয়ে বেড়ায় ওই যেমন দুগ্গা ঠাকুর ভাসানের আগে কত মানুষ দেখবেন ফুল, চুল, গয়না, অস্ত্র ছিঁড়ে উপড়ে নিয়ে আসে,

ওর মধ্যে ঈশ্বরের কোনো টুকরো কোনো আলো থাকেনা কিন্তু তবুও...তবুও মানুষ দিনে তিনবার সেগুলো কপালে ঠেকায় আর মনে মনে বলে... "হে ঈশ্বর তুমি সবাইকে দেখো!"

আমিও টেনে নিয়ে বেড়াচ্ছি একটা ভাঙাচোরা সম্পর্ক যেভাবে একটা গোটা শহর যুদ্ধ শেষের পর ছিটানো রক্তের চিহ্ন টেনে নিয়ে বেড়ায়....

----বাহ! আপনি বিশাল কথা বলতে পারেন, আমার কাছে কি চাই মিস্টার ফারহান?

----হাসালেন মাইরি! আপনি আমায় কি দিতে পারবেন? কি চাইবো আপনার কাছে?

----তাহলে ফোন করলেন কেন?

----আচ্ছা বেশ, এখানে খুব খটখটে রোদ উঠেছে, আপনি এক্ষুনি সূর্য নিভিয়ে আঁজলা ভরে বৃষ্টি নিয়ে আসুন, পারবেন? এখানে পিঠ ফেরালেই কেউ কারোর মনের কথা শুনতে পারেনা, আপনি একটা টেলিফোনের ব্যবস্থা করে দিন তো, যাতে মানুষ মানুষের কথা শুনতে পায়, পারবেন?

ছাদে পায়চারি করলে টবে টবে ফুল গাছ দেখিনা কোনও, আরশোলা ঘুরে বেড়ায়, আপনি এসে ফুল ফুটিয়ে যেতে পারবেন? সব মানুষ অন্ধ হয়ে গেছে এখানে, আপনি একটা দামি ক্যামেরা কিনে নিয়ে আসতে পারবেন?

আমি কিছু ছবি তুলে রাখতে চাই, যেমন পাশের বাড়ির মহুয়া দির স্নানের পর ভেজা চুল মুছতে মুছতে শাড়ি মেলার ছবি, ঘন্টি বাজিয়ে তীব্র ঝাঁঝালো সুরে ডাকতে ডাকতে মঙ্গল দার আইসক্রিম বিক্রির ছবি, স্কুল শেষে বাচ্চাদের ভারী ব্যাগ কাঁধে ট্রামলাইন পেরোনোর ছবি,

 মরার আগে রাঙা দিদাকে রাঙা দাদুর শেষবার ফুঁ দিয়ে গরম পায়েস খাওয়ানোর ছবি....পারবেন স্বচ্ছতোয়া আনতে, বলুন পারবেন??

----হেঁয়ালি করছেন ফারহান?

----হা হা হা, আপনি আমার হেঁয়ালি করার পাত্রী বুঝি স্বচ্ছতোয়া, যাকগে শুনুন না?

----কী?

----ভালোবাসেন?

----হঠাৎ জিগ্যেস করলেন আজ?

----ভেবেছিলাম অনেকদিন আগেই জিগ্যেস করা হয়ে গেছে, আর আপনি উত্তরটা দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আবার জিগ্যেস করতে হলো, এটা আপনার দুর্ভাগ্য যা হোক বলুন না, ভালোবাসেন?

----না...

----ভালোবাসেন?

----না না না...

----স্বচ্ছতোয়া ভালোবাসেন আপনি?

----.............

----গুনে গুনে ২০সেকেন্ড!

----কি! মানে?

----২০সেকেন্ড আপনি চুপ ছিলেন!

----তো?

----আপনার উত্তরটা পেয়ে গেছি, অনেকদিন কাছে আসেননি, কাছে আসবেন?

----🙂

৪.)
বাস্তবতা
 পাখি পাল

ভাষাগুলো আজ
অবিশ্বাসের রাস্তায় ভিড় জমিয়েছে, যত নীরবতা তাই বিশ্বাসে।
সবুজগুলো খুন হচ্ছে প্রতিদিন, বাঁচার লড়াই প্রতিটা নিঃশ্বাসে।।
আবেগগুলো পাহাড়ি রাস্তার খাঁজে রোজই ধাক্কা খায়, গড়িয়ে নীচে নামে।
কষ্টগুলো স্পষ্ট করে বোঝায়
হৃদয় কেনা যায়না কোনো দামে।।
মনকেমনের শব্দগুলো তাই
অনিচ্ছাতেও চোখেই ভেসে ওঠে।
যে কথাগুলো আজও বাকি
সেগুলো আর ফুটবেনা ওই ঠোঁটে।।
পরম প্রাপ্তি, না পাওয়ার ই মাঝে।
জীবন এখন বাস্তবতা বোঝে।।
             
৫.)
শিক্ষার বড়াই
দিব্যেন্দু হালদার

বুঝলেন মশাই
শিক্ষক শুধু নামেই জাতির,
বিংশ শতকে চলতো ওসব
ক্ষমতা এখন শুধুই পার্টির।

 বুঝলেন মশাই
ব্যর্থ যারা ইতিমধ্যেই
দোষ কি শুধু তাদের?
কক্ষনো না, একটু ভাবুন
ছাত্রগুলো কাদের!

ছাত্রছাত্রী সন্তান সম
পিতার মতোই শিক্ষক
শিক্ষিকা সেও মাতৃমম,
জীবন দিয়েই আপনার রক্ষক।

জাতির নাকি প্রশ্ন জাতের
উন্নয়ন সব যাক না চুলোয়
খেলবে জুয়া, টানবে গাঁজা
আর বলবে, ইস্কুলই নয় কাজের।

বলছি শুনুন,
শিক্ষকে ভরসা রাখুন আবার
দেখবেন মেরুদণ্ড হবেই সোজা,
আপনার আমার আর বাকি সবার।

৬.)
রোমন্থন
       শম্পা দাশ

ফেলে আসা নির্জন  জনপদে
আজো কতো স্মৃতিদের  ভিড়...
অচেনা হাজারো গন্ধে তাদের
আঘ্রাণ,  আছে  তবু অমলিন...
খুঁজতে খুঁজতে  নিবিড় অন্বেষনে
দুহাতে  মাখি  রেত কনা,
 সুখের চেয়েও দামি ,
বিরহীর এ  দুঃখ মসলিন.....
ফিরে দেখি, হাতছানি
রেশমি দিনলিপি ঝাপসা সময়ের  ..
ভাবনার লুকোচুরি , ফুলপাতা
আঁকা হয়  নকশার ভিড়ে ..
আনমনা ভালোবাসা ,
বিষন্ন রেশমেরা  চুপিসারে বলে...
এ ব্যাথা পরম সুখ
আমার সৃষ্টিছাড়া এ নষ্টনীড়ে l


৭.)
গতরাত্রি
বৈশাখী গোস্বামী

রাতের ভিতর রাত শুয়ে থাকে
ভিতর ভিতর মায়া,
সেসব রাতের কথা বলি তবে...
চুঁইয়ে পড়া মায়া বৃষ্টি থাকে,
শরীর ভিজে যায় ঘামে।
লক্ষণটা ভালো ; জ্বর সেড়ে যায়
তারপর আঁকড়ে ধরার আগেই
দু'চোখে আধফোঁটা ঘুম জোটে,
ভিতর ভিতর ভ্রমণ চলায় ভ্রমর
মাঝে মাঝে কেটে দিয়ে যায়,
রক্তাভ লাল ফুলে ফুলে
একটা আতঙ্কিত সকাল,
সেসব রাতের গল্প শেষ করে,
চিহ্নমাত্র ফেলে যায়...
গতরাত্রি গত হয়েছে!









ভালোবাসা বাকি আছে সংখ্যায় জলফড়িং পেজের লেখিকাদের লেখা





১.)
মুখোমুখি
স্বাগতা মুখার্জি

তুমি জীবন কথা বলো
আমার মনে স্বপ্ন টলমল,

তুমি চাওনা আগে পিছে
আমি স্বপ্ন দেখি মিছে--

তোমার অবাক করা গান
আমার অসীম অভিমান,

তোমার হুলস্থুল আদর
আমি বিচ্ছেদে বাধাই জ্বর-

তোমার মন ভোলানো হাসি
আমার মান ভাঙানোর কারণ-

তুমি অব‍্যক্ত চাওয়া
আমার একলা ঘরের মায়া,

তোমায় আগলে রাখার ছলে
আমার মনের কথা বলা-

তুমি আমি মিলে
আপন খেয়াল তরী বাওয়া।

২.)
স্বপ্নে বাঁচে মন
সঞ্চারী

আজকাল মনে হয়,
স্বপ্ন দেখাই সার।
স্বপ্ন গুলো সত্যি হয়না আর।
এ মন,
স্বপ্নদের ভিড়ে উড়ে বেড়ায় সারাক্ষণ।
কি করে বোঝাই,একে যে স্বপ্নকে পায় ক'জন!
কত সময় যে কাটায় এ মন,শুধুই স্বপ্ন বুনে,
সে সময়ের হিসাব কে রাখে গুনে গুনে!
বুঝতে চায়না এই দুনিয়া আমার এ স্বপ্নের মানে।
আমার কাছে এর মূল্য কতটা!
সে শুধুই এই মন জানে।

স্বপ্নছাড়া যে প্রাণহীন এ মন,
স্বপ্নভাঙার ভয়ে এ মরতে চায় প্রতিক্ষণ।
যখন বাস্তব ডেকে বলে ইশারায়,
স্বপ্নকে কি অতো সহজে পাওয়া যায়!
মন তখনো হার মানে না,
হেরে যাওয়া কি?যেনো,তাই জানেনা!
নিজের খেয়ালে স্বপ্ন বোনে,
পূরণ হওয়ার পথ গোনে,
বিশ্বাসদের সঙ্গ পেয়ে আজ মন যে অবিচল।
তার-ই সঙ্গে এসে হাজির সম্ভাবনার দল,
অসম্ভবের অস্তিত্ব-ই তারা করছে অস্বীকার।
বাস্তবতার কাছে তারা মানবেনা কোনো হার!
বাস্তব তবু কঠোর বড়ো,তাকে বোঝাই দায়,
তবু মন বলে যে, সময়ের সাথে‌ বাস্তবও বদলায়।

৩.)
নন্দিতার(মিস্টু) কলম

 বন্ধু তোমার কি মনে আছে পুরানো সেই কথা?
 বলেছিলে তুমি, “বন্ধু তুমি ছাড়া এই জীবনটাই বৃথা”
 সেদিনের সেই বিপদের কালে, তুমি এসে ধরেছিলে হাত,
 আজও আমি ভুলতে পারিনি সেই ভয়াল কাল রাত!

 তোমার পানে তাকিয়ে ভুলেছিলাম আমার যত ভয়,
 আমার স্মৃতির কোঠা থেকে এতটুকু হয়নি ক্ষয়!
 জানি না কি অপরাধে তুমি ফিরায়ে নিয়েছো মুখ,
 একবারও কি ভাব্লে না, আমি কতখানি পেলাম দুখ?
 কি করে ভুলে গেলে আমাদের সেই পরিকল্পনা?

 বন্ধু তোমার সাথেই তো এঁকেছিলাম এক স্বপ্নের আল্পনা।
 জানতে কি ইচ্ছে হয় না তোমার, কেমন আছি আমি?
 কখনোও কি ভাবলে না যে বন্ধুত্ব কতখানি দামী?
 আজকে কোথায় তুমি? রয়েছ তুমি দূরে বহুদূর-

 কিভাবে তাহলে বাজিছে আজ, পুরানো সেই সুর?
 বন্ধুত্ব সদা অম্লান থাকে, কখনও কি পুরানো হয়?
 পোষাক পাল্টে কি কখনও মানুষটাও পাল্টে যায়?
 একবার দেখ পিছন ফিরে, এরপর না হয় যেও তুমি,
 আমার মনের কোথায় তোমায় সযতনে রেখেছি আমি!
 তুমি হয়ত মনে করছো আমি করছি যত অভিযোগ,

 নতুন পুরানো সব কথা তুলে করছি যোগ আর বিয়োগ।
 না বন্ধু না! এটা নয় আমার কোন আক্ষেপ অভিমান,
 যদি তুমি চাও তবে আমি দিতে পারি তার প্রমাণ!
 বন্ধুত্বের মধ্যে পাঁচিল তুলে করা যায় না ব্যবধান-
 বন্ধুকে কখনও যায় না ভোলা হোক না তা তিরধান!
 কিছু ভালো লাগা, মন্দ লাগা আর প্রতিজ্ঞা নিয়েই বন্ধুত্ব,
 আত্মত্যাগের মহিমায় প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে তার মহত্ব।

 অনন্তকাল ধরেও যদি আমায় অপেক্ষায় রাখ তুমি,
 এক মুহুর্তের জন্যও তোমায় ভুলতে পারবোনা আমি।
 জীবনের শেষ প্রান্তে গিয়ে যখন থমকে যাবে সময়,
 তখনও ভুলতে পারবোনা আমি বন্ধু শুধু তোমায়!


৪.)
অবুঝ
সৃজিতা ঘোষ
আরে কি হয়েছে তুই এতদিনের বন্ধুত্ব,সব সম্পর্ক ভুলে গেছিস তো!আমি ভুলতে পারি নি।যদি পারতাম তাহলে আমিও তোর মতো অনেক বুঝদার হয়ে যেতাম।তোর মতো অতো সুন্দর করে তোকে কখনও ভালোবাসিনি,বাসলে হয়ত আমিও ছেড়ে চলে যাওয়ার সাহসটা দেখাতে পারতাম ।

অনেক চাওয়া না চাওয়ার মাঝে আজ আমি একা।চোখের জলকে আগুনে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়ায় আমি লিপ্ত।মরূদ্যানে ক্যাকটাস গুলো এভাবেই বাঁচে,এভাবেই থাকে জীবন্ত।আমিও আজকাল বাঁচার স্বপ্ন দেখছি।তুই শিখিয়ে ছিলি এটাই বাস্তব।
   
আমাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য তোর চাকরি না পাওয়ার অজুহাতটার সত্যি কোনো দরকার ছিল না ।বাস্তবের দোহাই দেওয়ারও কোনো প্রয়োজন ছিল না। বাস্তবটা যে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সত্যিই বড়ই কঠিন, সব জেনেই গেছিস।জানি।তবে কখনও তোকে দোষারোপ করব না।ভুলটা আমারই ছিল ।বুঝতে পারি নি ভালোবাসা তো খেলা।অসময়কে আনন্দের আবেগে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার খেলা ।অনেক অনুরোধ করেছিলাম,কিন্তু আজ সব কালবৈশাখীর ঝড়ে ভেসে গেছে উড়ো চিঠির মত।
আজকাল সকালগুলো খুবই ফিকে লাগে।দিন তো নিমেষে কাটে।রাতগুলো তোকে ছুঁতে পায় না বলে একলা লাগে ।এ  কি জানি এভাবে প্রেম হয়,হয়ত এভাবেই আসে বসন্ত।

৫.)
মৌমিতার কলম

জানো আমি না এখনো ঠিক মেনে নিতে পারছিনা যে কাল থেকে আমাদের আর কথা হবেনা, হবেনা দেখা।
আগের মতো আর কেউ সারাদিনের গল্প শুনতে চাইবে না, কেউ আর প্রিয় ডাকনামে ডাকবে না আমায়।
কেউ আর মাঝরাতে ভাঙাবেনা ঘুম, শোনাবেনা কবিতা।
কাল থেকে আমরা থেকে যাব একে অপরের অতীতে আর আমাদের সম্পর্কের  নাম  প্রাক্তন।
রাস্তায় হঠাৎ দেখা হয়ে গেলেও কাল থেকে আমরা অপরিচিত।
সম্পর্কের তকমা থেকে মুক্তি পেয়ে আমরা তখন আলাদা আলাদা ভাবে বেছে নেবো আলাদা আলাদ জগৎ।

৬.)
তানিয়ার কলম

বিগত কয়েক বছরে পাল্টে গেছে অনেক কিছুই।
সেই পুরনো আমি টাকে প্রায় চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি।
সেই পছন্দের গিটার টাও এখন কাছ ছাড়া ৷ গিটারের তার গুলোতে কেমন যেনো মরচে ধরে গেছে ৷
সামনে উচ্চমাধ্যমিক তারপর জয়েন্ট এন্ট্রাস এক্সাম কিনা,তাই বাবা মা এখন গানবাজনা বন্ধ রাখতে বলেছেন ৷

বন্ধুদের সাথে আর তেমনভাবে দেখা সাক্ষাৎ ও হয়ে ওঠেনা ৷
টেস্ট এর রেজাল্ট টা একটু খারাপ হওয়ার পর থেকে বাড়ি থেকে বেড়োনোও প্রায় বন্ধ ৷ প্রয়োজনীয় নোটস গুলো বাবা'ই এনে দেন,স্যারদের কাছে থেকে ৷
কেমন যেন দমবন্ধ লাগছে সবকিছু ৷ বাবা-মা'র চাই 90% মার্কস ৷ আর আমি কি চাই ??সেটা কী একবারও ওনারা জানতে চেয়েছেন ??

নাহ্! কখনোই চাননি জানতে ৷ আমি ও তো চাই গান গাইতে,গান টাকেই কেরিয়ার বানাতে ৷ সেসব কথা শোনার লোক আর কোথায় ?? রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় প্রিয় বন্ধুও মুখ ফিরিয়েছে ৷ ফাইলে থাকা আগেকার রেজাল্ট গুলোও এখন আমাকে দেখে মুখ চেপে চেপে  হাসে ৷ আর ঐ মরচে ধরা গিটার টাও অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ৷

একটা ঘন কালো অন্ধকার আমাকে ক্রমশ গ্রাস করে নিচ্ছে ৷ আর কানে শুধু বাজছে "ওদের 90% চাই","ওদের 90% চাই "৷
এর থেকে যেন মৃত্যু ও অনেক সহজ,অনেক সহজ ৷
আমার একলা ঘরে আমি,ফ্যান,একটা দড়ি ৷
তারপর সবটা শেষ ৷৷
আমি এখন একটা লাশে পরিণত ৷
আমাদের ও কিছু ইচ্ছা থাকে,আমাদের ও কিছু স্বপ্ন থাকে ,
আমাদেরও কিছু কথা বলার থাকে ৷ সেগুলো  শোনার চেষ্টা করুন ৷৷





                   





ভালোবাসা বাকি আছে সংখ্যায় জলফড়িং গুগল ইস্যতু যাঁরা লেখেন তাঁদের লেখা





১.)
মনের কথা
মুনমুন মুখার্জ্জী

জীবন যেন একটা ফুটবল মাঠ,
গোলপোষ্ট হল তার মন,
বাইশ তেইশ জন দাপিয়ে বেড়ায়
খেলা চলে যতক্ষণ।
গ্যালারি থেকে কেউ হাততালি দেয়,
কেউ ইট, পাটকেল, গালি--
খেলা শেষে একা মাঠ হাঁপায়
আর গোলপোষ্ট কাঁদে খালি।

মনের কথা কেউ ভাবে না,
শরীরকে টেনে নিয়ে চলে,
উপরে ওঠার নেশায় শরীর
শোনে সবই যে যা বলে।
দেখতে দেখতে সময় চলে যায়,
ফুরিয়ে যায় একদিন দম,
থেঁতলানো মনের হাহুতাশ নিয়ে
শরীর বড় একা তখন।




২.)
জীবন
জয়ীতা চ্যাটার্জী

কবিতা লিখতে লিখতে একদিন রাত থেকে ভোর হবে,

তুমি হয়তো পিছন থেকে ডেকে বলবে এখনও লিখছো?

আমি তাকিয়ে বলবো এই দেখো এতো আমার জন্মভূমি।


কতদিনের হার ভাঙা খাটুনির পর

আনমনে দাঁড়িয়ে থাকে একা,

সব জানি সঠিক ভাবে, দুহাতে আগুনের অঞ্জলি

পুড়ে যাচ্ছে দুটি চোখ, যাচ্ছে না কিছু দেখা।

ঘিরে ফেলে ধীরে ধীরে আগুনের বলয়,

কোথাও আবার একটু একটু করে কাটা পড়ছে হাত,

সঙ্গে নিইনি কাউকে, ডাকিনি কাউকে একবারও

মন যখন পিছিয়ে পড়ে একটু একটু করে,

জীবন তখন  টানতে থাকে কাছে আরও আরও।

৩.)
অভ্যাস
বিকাশ দাস

যে গাছের ফুলে সুবাস নেই

সে গাছ আজ শিকড় সমেত উপড়ে ফেলে দাও।

যে হাওয়ার নিভৃতে ঝড় নেই

সে হাওয়ার মৌসুম গায়ে  না লাগিয়ে চলে যাও।

যে দেখার আঁচে জীবন নেই 

সে দেখার ঘর সংসারে ছাই চাপিয়ে  চলে যাও।

যে পাথরে ঝর্নার ধারা নেই

সে পাথরের গলায় ফাঁস লাগিয়ে দিয়ে চলে যাও।

যে আকাশনীলে স্বপ্ন নেই

সে আকাশ বানের জলে ডুবিয়ে দিয়ে চলে যাও।   

গোপন প্রহরে

উঁচু চৌকাঠ পেরিয়ে

অন্ধকারে চাঁদ বেশি সুন্দর আরও বেশি রমণী

অন্ধকার ছুঁয়ে থাকার তোমার অভ্যাস রেখে যাও ।





ভালোবাসা বাকি আছে সংখ্যায় তাদের লেখা যারা একটা সময় জলফড়িং এর কোর কমিটিতে ছিলেন




১.)
বারমুডা ত্রিভুজ & রহস্যময় চুম্বক
------------------শব্দরূপ : রাহুল গাঙ্গুলী

হিংটিংছট্
জাদুকর তখন রাজার ভূমিকায়
জাদুকাঠিতে শূন্যদ্বীপ এবং রাজপরিষদ
যার ক্রমিকমান যেমন খুশি সাজো

এই যে এমন ১টা নির্বিষকথন
গণতন্ত্রে কিন্তু প্রবল বিষধর
কিন্তু ওই যে জাদু অথবা সাজো যেমন খুশী
প্রজা বলতে ফসলীজমিনের জাদুঘর

তসবির বলছে নক্সাকাটা বরফ
বরফ মানছে ঐশ্বরিক মাটি
মাটির তরফে রাতের জাদুমেঘ
মেঘ খাচ্ছে আকাশপথের ফলক

ঐ যে বলা হোলো হ য ব র ল
ডিঙি নৌকায় সবকিছুই আমার
জাদুর ঠেলায় হাড়হাভাতের দল
দল চালায় বেগুনখুড়োর কল

মিশতে মিশতে খেলা শুরুর খেলা
দূরে।আরো দূর ভেঙে
দূরবীন ও আকাশ গলছে।আমরা নিথর
পালা করে স্বপ্নগুলো ~ খুন ও বিপ্লব

২.)
বাকি থাকে
  অমিয়া গড়াই

আমার ছাদে জ্যোৎস্না এখন
আকাশ জুড়ে মুগ্ধতা
তবুও যেন মন টানে না
শহর জুড়ে বিষন্নতা।

 এখন আমি একলা ভীষণ
ভালোবাসায় বিষম খাই
প্রেমের নেশায় মাতব ভেবে
জীবনটাই হারিয়ে যাই।

 অপেক্ষারা তবুও ভাবে
বদল হবে সময়টার
ভালোবাসা বাকি থাকে
জমানো স্মৃতির পাহাড়টাই।

৩.)
বেরঙিন পাণ্ডুলিপি
অন্তরা চ্যাটার্জী

আমার বুকের মধ্যে অজানা রহস্যের সাইরেন
হাহাকার পুষে রাখছে
মৃত জ্যোৎস্নার চোরাবালি
ভাঙা চাঁদ, কাঁচ ধোয়া ক্ষত,
দুরন্ত এক্সপ্রেসের আদুরে আলাপ।

ক্লান্তির ভিতর উবু হয়ে বসে
বয়স ডোবার গল্প,
মৃত ঘুমের গেলাসে বাদামি স্বপ্নের মদ
আর পায়ের পাতায় হোঁচট নামছে ক্রমাগত।

৪.)
নেই তুই এই শহরে .....
রুনা দত্ত

তুই নেই ,নেই তুই আমার কাছে,এই শহরে
নেই খোলা আকাশ নেই সবুজ বাতাস

নেই মাটির ঘ্রাণ নেই শিকড়ের টান
নেই প্রেম নেই ভালোবাসা ছিন্নমূল এই শহরে ।

আমার শহর এখন বন্দি মুঠোফোনে আর স্কাইপিতে
এই শহর বন্দি এখন ভার্চুয়াল প্রেম আর ওয়েবক্যামে ।

এই শহরে যন্ত্রণা আছে , আছে বিষবাষ্প
আছে লুকোনো পাপ, অনেক লুকোনো অভিশাপ

আছে সারি সারি দশ বাই দশের খুপরিতে
ছোট ছোট জেলবন্দি ধূসর আকাশ ।

আজকাল বরং  মনে হয় এই শহরে
মুখের থেকে বেশী মুখোশের বাস।

.এই শহরের  সবুজে বাসা বেঁধেছে অসুখ
হলুদ বিবর্ণ কোষে শুধুই  মৃত্যুর ছোঁয়াচে স্পর্শ

আর শহরের  পিচ ঢালা রাজপথে শুধু হাহাকার।
শপিং মল , রাতের অন্ধকার, নিষিদ্ধ হাতছানিতে
বাতাসে অবৈধ লেনদেনের গন্ধ ভাসে ......

মিথ্যের ম্যানিকুইনে আটকে থাকে
চলমান মানুষের আকাশচুম্বী লোভ।

সকলেই ছুটছে অলিগলি থেকে রাজপথে
ছুটছে শহর দিন থেকে রাতে, রাত থেকে দিনে
ফেলছে বেহিসেবি পা মিথ্যের অসংখ্য ফাঁদে ।

আটকে আছে আমার শহর আজ
মিথ্যে প্রতিশ্রুতির ঘেরাটোপে

কোথায় থামতে চায় ?কোথায় সীমানা ?
বুমেরাংয়ে লেগে ফিরে যায় মানুষের বাঁচাগুলো।

ক্যালাইডোস্কোপে ক্রমশ সণ্দিগ্ধ আমি
অবিশ্বাসের কাছে বিশ্বাস নতজানু এই শহরে

এই শহরে মানুষ আছে ,আছে মানুষের বোবা কান্না
আছে বিষণ্ণতা , হারানোর ভয় ,লুকোনো চোখ।

কিন্তু আরো আছে , চেনা মুখের আড়ালে অচেনা মুখ
শুধু তুই নেই , নেই তুই আমার কাছে,এই শহরে।












ভালোবাসা বাকি আছে সংখ্যায় মনোনীত কবি বর্গের লেখা




১.)
প্রবজ্যা
সুকুমার কর


যে মেয়েটি রোজ চাঁদের কাছে
রাতকে বাঁধা দিয়ে ভাত জোগাড় করে.
তার শরীর জুড়ে মহুলের নেশা.
তুমি লং ড্রাইভে মাতাল হও.

তার খোলা কেশে
তোমার আঙ্গুল বাঁধে
ভালোবাসর বিনুনী.
তারাদের মেলা বসে.

নকল প্রেমের শামিয়ানায়
তুমি কাব্য চর্চা করো.
সূর্যোদয় হলে তোমার নেশা কাটে.
মেয়েটি ভাতের গন্ধ পায়.


২.)
স্মৃতি অমলিন
  কেয়া রায়

তোমাকে যেদিন প্রশ্নবাণে বিধ্বস্ত করেছিলাম,

"কোনওদিন তোমাকে সত্যিই ভুলে গেলে কি করবে তখন??"

মনে পড়ে, তোমার জবাবটা সেদিন কি ছিল??

বলেছিলে, "ভোলার চেষ্টাও করে দেখো...ছিনিয়ে আনব ঠিক সবকিছু বাজি রেখে।"

আমি জানি তুমি কিছুই ভোলার পাত্রী নও
প্রশ্নটা তখন ঠাট্টা গোছের ছিল ঠিকই,,
কিন্তু কিছু সময় পর তাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলাম নিজে হাতে ;

তিল তিল করে গড়ে তোলা আমাদের স্বপ্নগুলোকে গলা টিপে হত্যা করেছিলাম...

শুধুমাত্র সেদিন মায়ের আদেশ অমান্য করতে পারিনি বলে।।

৩.)
ফিরে এসো স্বপ্নে
রোনক ব্যানার্জী


আবারও ফিরে এসো স্বপ্নে
জলরঙ্গে এঁকে নেবো চিত্রপট
ট্রপোস্ফিয়ারের ঝঞ্ঝা তোমাকে পারবে না ছুঁতে
তোমার আকাশ সজ্জিত হবে সাতরঙ্গে।


দূরপাল্লার ট্রেনে চলে যাবো নিরুদ্দেশ
নিয়নবাতির মিছিলে মিলে যাবো ধীরে
পাহাড়িয়া সবুজে খেলা করবো দুজনে
সমুদ্রসৈকতে খুঁজে নেবো অজস্র ঝিনুক।


লক্ষীপেঁচার ডাক শুনে জ‍্যোৎস্নাটুকু মেখে নেবো
নেপথ্যে বেজে যাবে সুদূরের বংশীধ্বনী
অলির ঘ্রাণ নিয়ে ত্রিতালে মেতে উঠবো দুজনে
প্রণয়ের তরঙ্গে ঘুম ভেঙ্গে যাবে অনুভূতিদের।


নিশির দপ্তর হতে খুঁজে নেবো হৃদয়ের প্রশান্তি
স্মৃতির কোলাজ থেকে মুছে ফেলব মতানৈক্য
অভিসার ও বিশ্বাসের দোহাইয়ে আবারও গড়বো নতুন অধ্যায়
অভিমান ভুলে প্রতিষ্ঠা পাবে তোমার আমার লাল নীল সংসার।

৪.)
মানবিকতা
প্রদীপ কুমার দাস

আপন ট্রাকে দৌড়ে চলছে
সামনে লাল ফিতে,
ছুঁতে হবে,আরও জোরে
দৌড়ে যাচ্ছে মিছে|

পিছে পড়ে রইল কেউ
ফিরে তাকানো মানা,
যে পড়ে পড়ুক ট্রাকে
হাল ছাড়বে না|

রং রুটটাই পয়লা নম্বর
করছে ওভার শেষ,
একে অন্যকে দেখিয়ে বলছে
এই তো আছি বেশ|

পাশের বাড়ি আগুন লাগলে
আগুনে পিঠ সেঁকে,
শুধু একটু আহা সূচক
শব্দ খরচ করে|

মানবিকতা হারিয়ে যাচ্ছে
সারা পৃথিবী জুড়ে,
মানুষ আসলে যন্ত্র হচ্ছে
মানবিকতা তাই দূরে|

৫.)
আত্মরতিপ্রিয়
পঙ্কজ চক্রবর্তী


গায়ক সহজ নয়
গান তবু ব‍্যর্থ এক অভ‍্যাসবশত
দূর থেকে দেখি সুর নেমে আসেনি জীবনে

শব্দ দিয়ে ছুঁয়ে আছি অর্থের বিনিদ্র কেকা

মুগ্ধতার আজীবন অভিশাপে ছুটে গেছি আমি

অসময়ে গেয়ে ওঠো গান--  দরজায় করাঘাত শুধু
শুদ্ধতার ছলনায় সে তবু দূরে সরে গেছে

গায়ক সহজ নয়
মনে মনে গান তার একার প্রসাদ




৬.)
অন্ধপ্রেমিক
রথীকান্ত সামন্ত

শুধু চোখ দুটি নয়, সমস্ত সমস্ত দেহ হোক দৃশ্য গ্রাহক
চোখের মনিতে ডুব, শিরো থাক চেতনা সবল
চিররাত্রির দেশে ধরে ফেলি সাগরের লহর ঠমক
কাটাতে কাটাতে শোক খুঁজে পেয়ে স্পর্শ-উপল
ছোঁয়াই পাগল প্রায় শ্রবণে ধ্বনিত হয় স্বর্ণহুল্লোড়
পথিক দুহাতে কুড়ায় এমনই অরূপ পথে কোন একদিন
আমায় ছুয়েছ তুমি গল্প পার করে দিতে ওই বড়জোর
মাত্র কয়েক পল হলাম পাথরাতীত স্বর্ণে বিলীন।
সেই হাত খুঁজে হই নিজে নিজে কত গল্প পার
অক্ষরেখার পথে হয়তো ফেলেছি ধরে বিপরীত দিক
তবু নিশ্চিন্ত এই পৃথিবীতে ঠিকানার চিরবৃত্তাকার
অবিরল অনুভবে অনিমিখে হেটে যাই অন্ধ প্রেমিক
কল্পনা ভাঙে এই চৌকাঠটিকে  দূর মাইলস্টোন ভ্রমে
মিলন তীর্থপথে আমার থেমে যাওয়াই সবার প্রথমে।


৭.)
একাল সেকালে
  হাফিজুর রহম


পেরিয়ে যাচ্ছে সময়
এগিয়ে যাচ্ছি বার্ধক্যের দিকে

দিনের পর দিন কিসের শুন্যতায়?
শুধু আবেক জড়িয়ে থাকে।

স্মৃতির পরানে প্রতিক্ষণ ক্রন্দন
আবেগ ঝরে পরে বৃষ্টি মতো অশ্রু হয়ে!

একা নই আমি তবু লাগে বড়ো একা মন
জীবনের সেরা কিছু মুহূর্ত নিয়ে যায় প্রাণ বয়ে।

সুখের সরিষা খেতে ভুল সেবাচারী
যা ছিলো হলুদে হলুদ সে কালে

আজ কিসের অভাবে তা ফ্যাকাসে ভারী?
আবেগ আটকে গেছে কোন মায়া জালে?
বোধহয় উচিত হয়নি এত বেশি স্মৃতি গড়িবার!
তাই একাল সেকালে চলে যায় বার বার।।


             
৮.)
আজ পড়বে ইশতেহার 
রাজিত বন্দোপাধ্যায়

ঘুনধরা সমাজ বৃত্তের ছায়ায় 
হঠাৎ আবিষ্কার করা নিজেকে   
বড্ড অচেনা লাগে আজ -- 
শহরের গায়ে আজ পড়বে ইশতেহার 
আগামীর পঙ্গু ভারত , 
চলে ফেরে বিত্তহীন কক্ষপথ ধরে ! 
সেদিন তোমার নামে হে পৃথিবী 
আসবে চিঠি -- 
ক্ষণজন্মা এই সব রাজনীতির তলে 
কেমন আছে ভারতভূমি ? 
শতাব্দীর গর্বের ইতিহাস ভেঙ্গে 
নিঃশ্বাস ফেলবে ধর্মনীতি !! 

৯.)
উপজাতি-ফুল
প্রতিমা রায়বিশ্বাস


যে কথার ভিতর আসা যাওয়া করে কিছু কথা, কিছু গান,  উড়ো কিছু রোদ্দুর,
পিচঢেলে পুড়ে যায় যে কথায় অনার্যমাখা গ্রামীণ ধূলো,

 যে কথায় পুজো পুজো গন্ধ,যে কথা ঠিকানা কারো সদ্য, যে কথা  আঁধারে আঁধারে অবাধ্য।

সে কথার পাশে আমি কথা রাখি না কিছুই।
বৃহন্নলা ফুল তুলি শুধু।


এখনও আলো ঠেলে মহিষাসুরের ঢাল হয়ে আসে আর্য।
আর কিছুটা সময় দাও হে কুরুক্ষেত্র....
শেষ  দ্রাবিড়  কাগজী যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে ওই,
নিঃস্ব ঠিকানা  নিয়ে ওই ওরা পথের উপর উঠে আসছে দেখো।


এদিকে বেদের উপর রোয়া আছে ধানক্ষেত।
ওদিকে আর পিচের তাপে পুড়ে যাচ্ছে দ্রাড়ির ঈশ্বর।



আমার রক্তে যে দেবতার বসবাস তোমরা জানো না ইন্দ্র,
তুমিও জানো না দুর্গা।

ও সূর্যকে আমরা ডাকি উনুন। এ বাতাসকে বলি নিভা।
এ নদী পিপাসা আমার। ও ফাগুন পাহাড় হাড়িয়া।


যে কথার ভিতর সংখ্যালঘু শব্দ কতক আমি 
আমার মায়ের হাতে  বাক্সমনষার ভয়ে

নিশ্চয়ই  কুচকে গেছে সভ্যতার ভ্রু।
সেখানে তোমরা অবহেলা মেখে বল না কিছুই।

বৃহন্নলা  ফুল তোলো শুধু।
এ শরতে উপজাতি-ফুল অক্ষর আকার নিয়ে নিয়ে মহালয়ার মাতৃপক্ষের মন্ত্রপাঠ।
কাশ পাপড়িতে গাছ ভরিয়ে রাখে সমস্ত পাতার উপেক্ষী  সুর।

ক্ষত বুক এত ভালো লাগে  ঊমা?
দ্রাবিড় ফুলের উপর হে আর্যময়  ঈশ্বর ঈশ্বরী
তোমারই  কেবল শুধু  এ অলংকার বোধ !

১০.)
প্রতিবাদী চাঁদ উঠেছে ধর্মতলায়
তুহিন কুমার চন্দ

ভ্রুপল্লবে ডেকেছে মানুষ কত,
তবুও চলেছি একা হেঁটে অবিরত।
সূর্য খেয়েছে সূর্যমুখীর লজ্জা মাখানো রোদ,
চারদিকে শোক বড় যন্ত্রণা সব ঋণ শোধবোধ।


ডেকেছিলে তুমি আউস গন্ধে রোদমাখা সন্ন্যাসী
চাঁদ সদাগর মধুকর নিয়ে চলে গেছে বানভাসি।
ভ্রুপল্লবে ডেকেছে মানুষ কত,

তবুও চলেছি একা হেঁটে অবিরত।
শ্যাওলা জড়ানো পবিত্র ভরা ঘাটে,
মানচিত্রে কত যন্ত্রনা মিথ্যা সময় কাটে।


যুবতীর বুকে সূর্য জেগেছে, ধমনীতে সংগ্রাম,
দুঃশাসন বুকের রক্ত ঝড়াতে প্রতিবাদ অবিরাম।
রক্তেরও রং বদলে দিয়েছে সত্য মিথ্যা বলায়
দূর থেকে দেখি প্রতিবাদী চাঁদ উঠেছে ধর্মতলায়।










১১.)
মুখ
ভগীরথ সর্দার

বাসনার কাছে মায়া বড় হচ্ছে
ভেসে যেতে দেখেছি একটা পাখি
তোমার স্রোতে


ঝুঁকে পড়ে , স্পর্শ করে
দু'খানি এঁকেছি মাত্র ভ্রু
প্রতিটি চোখের কোনে এখনও
অশ্রু আঁকা বাকি।

১২.)
অতীত পড়ে আছে
চৈতালী রায় 

কাটা ঘুড়িতে অতীত পড়ে আছে
আমের পাতায় সিঁদুরের ফোঁটা লাগিয়ে
পূর্ণ ঘট বসানো ছিল সদর দরজায় ।
সন্ধ্যেবেলায় শাঁখ বাজতো নিয়ম করে
তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বলতো ।
ঝোড়ো হাওয়া তখনও ওঠেনি
ব্রহ্ম কমল কিংবা নিশিপদ্ম আঙিনা জুড়ে
পাপড়ি খোলার মজায় মত্ত ছিল -

রাজমহিষী হওয়ার উদগ্র বাসনায়
চোখে বেঁধেছিলাম - গান্ধারীর লাল মখমল বস্ত্র।
সূর্যের রোদে বিষণ্ণতার তাপ বয়ে আসলেও
নিবিড় প্রেমে কখনোই তার জীবন্ত হলো না -

আমি চোখ বেঁধেই রাজমহিষী হওয়ার স্বপ্নে তা দিচ্ছিলাম
তোমার বয়ে চলা হাসি , আনন্দ, উচ্ছ্বাস
এসবই শুঁয়োপোকার মত পাল্টে যাচ্ছিল
রঙিন গোলাপ ফুলের গন্ধেও বাতাস ভারী হয়েছিল ।


আজ যখন সুতোটা হাতড়াচ্ছি
দেখছি - অতীতটা পড়ে আছে ঐ এক কোণে
তুমি চলে গেছো - বেমালুম ভুলের হিসেব মেটাতে ‌

ভুল করে ---

১৩.)
মলাট 
 সুপ্রসন্ন কুণ্ডু

স্মৃতি সুখ ধুলোয় মোড়া

পুরানো বইয়ের পাতা উল্টে খুঁজে পাই
স্নেহ চুম্বন । তোমার পারিবারিক শোক

ধুলো ঝাড়ি,  একে একে সাজাই বাসনা
পিঠোপিঠি দাঁড়িয়ে থাকে রঙ বেরঙের মলাট

প্রকৃতিপাঠের পাশে ইতর ঈশ্বর বসতে চায় না

১৪.)
আলোর শিশু
সজল বন্দ্যোপাধ্যায়


আয়রে তোরা দস্যি দামাল
আমার কাছে আয়
নষ্ট চাঁদের গন্ধ মাখাই
তোদের সারা গা'য় !

চাঁদের আলোও মাখবি সাথে
পুনম জোছন রাতে
না হলে তো থাকবি পড়ে
আধপেটা সেই ভাতে !

আয় না তোদের ভাত বেড়ে দিই
কিংবা চাঁদের রুটি
আজ দিনটা পেট পুরে খা
কর না হুটোপুটি !

কাল থেকে তো আগের জীবন
আগের মতোই খাওয়া
পথ শিশুদের সারা জীবন
এমন করেই পাওয়া !!

১৫.)
স্মৃতি
বিশ্বজিৎ মণ্ডল


সদ্য খোঁড়া কবরের সামনে গিয়ে দাঁড়াই____
এখানেই সতেরোটি বছর ধরে মাটি কুপিয়ে নির্মাণ করেছি অনিবার্য অন্ধকার

প্রিয়তুতো আশয়গুলো তুলে রেখেছি____আমাদের

মধ্য যুগীয় বুক রাকে
আরো একবার ঠিকঠাক দেখে নিই,বিমুখ স্বজনের অবয়ব
অভিমানে ডুবে যাওয়া আমাদের প্রেমের অপরিণত নৌকা,
সোনাঝুরি তলায় ছিঁড়ে ফেলা প্রথম প্রেমপত্র

আজ আর রিবন অন্ধকার নেই....
দশক ফেরত পেঁচার  মগডালের কান্না নেই
কেবল নেশাতুর বিকেল এলেই ইচ্ছে আঁকি
কবরের কফিন ঘুমে।

১৬.)
নিশ্চয়তায় পদচারণ
অভিজিৎ দাশগুপ্ত


শুনেছি, এ জন্মের পাপের শাস্তি এ জন্মেই পেতে হয়, হবে হয়তো....... শুনেছি, এ পৃথিবীতে ভুলের হিসাব এ পৃথিবীকেই দিয়ে যেতে হয়, হবে হয়তো....... শুনেছি, যা কিছু সর্বনাশ তার নাশ একদিন হতেই হয়, হবে হয়তো....... তবে জোর দিয়ে বলার মত কিছু যদি থেকে থাকে, তবে তা হৃদয়ের আঁটোসাঁটো বাঁধন। এ বন্ধনের প্রতিধ্বনিতে ভালোবাসার সুর শোনা যায়, অভিকর্ষজ বলে হৃদয়ের গ্লানি ভোলানো যায়। অনিশ্চয়তা থেকে নিশ্চয়তায় নিশ্চিন্তে পদচারণ করা যায়।।

১৭.)
ধুলো খড়ের পান্ডুলিপি
খুকু ভূঞ্যা



পেঁয়াজ কাটার ছলে কান্না সেরে নিচ্ছে মা,
আমি তখন সজনে গাছের দিকে তাকিয়ে ফুল ফোটা দেখছি,
দেখছি শুঁয়োপোকার জন্ম।

গাঢ় কুয়াশার ভেতর দিয়ে বক উড়ে যাচ্ছে
সরপড়া ডোবায় চোখ মেলছে কলমী,
বেতো দিদা হাঁপানি দাদুর সঙ্গে মেঘ রোদ্দুরের গল্প বলছে
কত ধান হলো,কত পাট,,কত আলু লংকা পটল বেগুন---


দেখলাম চোখ মুছে আধখানা আলু সরিয়ে রাখল মা,
কাঁকর মেশানো চাল পিঁপড়েরও অরুচি
একদানা চিনির খোঁজে হয়রান--
পাতলা চিকনী শাকের ঘন্টে মায়ের সব যন্ত্রনা সেদ্ধ হয়ে যায় একসময়,
যখন গোটা একটা সূর্য সন্তানের ভাতের থালার পাশে
সবাক তাকিয়ে--

১৮.)
বহমান
সুলেখা সরকার

কতটা ভালোবেসে যত্নে রাখো !
অর্জুনের রথে উঠে বসি,
যুদ্ধ রীতি শিখি,
ঈশ্বর হতে হতে মানুষ হয়ে যাও। 

যে দুঃখে কাক উড়ে যায় একা,
সে দুঃখেই ভেসে থাকে ঘর,
দেশ ক্রমশ একা হয়।

এই যে শরীরের সাথে মনের উপবাস,
সময়ের উপবাস,
গতির হাত ধরে নিস্তব্ধতা,
কতটা সভ্যতা এনে দেয় তোমার চোখে,

সন্ত্রাসে কতটা সমাধান ঢেলে দেয়, জানি না।
আকাশে গা এলিয়ে দেয় স্বাধীন পাখি।
আমারও ইচ্ছে করে নীরব হতে।
মৃত শরীর পালটে নিতে।

আর কাটাকুটি নয়,
এবার ঘাসের ওপর বসিয়ে দাও,
অনেকদিন আমার এ-বয়স বহন করেছো।

১৯.)
ফেরা
ঋতশ্রী সামন্ত(মান্না)

যদি পথ আটকে দাঁড়িয়ে বলি,ফেরো।
বলি-যাওয়া হবেনা।কেন বোঝোনা,
কিছু তো দাবি থাকতে পারে বসন্তেরও!
হলোই বা সে নিরুচ্চার,শান্ত,মৃদুভাষ...
তুমি তো ঠিক পেয়েইছিলে,পাওনি
বলো,তার মনের ভেতর অশান্তি আভাস?

-তবে?মন খোয়া যায় বসন্তেরও কবে,
জানতেই তো।আচ্ছা,যায়না ফেরা?...
দরজাটা নয় খুলেই দিলে;কি আর হবে?
যদি ছুঁয়েই ফেলো?ভুলক্রমেও?মনস্তাপ,
নাকি অন্য কিছু হবে?বলো,সত্যি চাওনি
দিতে সবটা ভুলেই মরণ ছুঁয়েই অন্ধঝাঁপ?

এক মৃত্যু ছুঁয়ে দেখতে চেয়ে,আজও বসন্ত
অহর্নিশই মরে।মরণ কেন প্রানবন্ত এত?
জানো?বলো,মৃত্যু কি আর পক্ষপাতী হয়?
যদি বলি-এসো,ছুঁয়ে নাও এই মৃত্যুভয়।
বসন্ত আর একাই কেন আত্মঘাতী হয়?

যদি বলি-ফেরো।আজও বলবে না-ফিরি?
বলবে না কি-যেতেই পারি।কিন্তু,চলে যাওয়া      আর এমন কি দরকারী?"









 






জলফড়িং এর কফিকথায় কবি অর্ঘ্যদীপ




" যারা বলে থেকে যাব, তারাই আসেনা আজ সাথে 
মানুষ একাই ফেরে, ভিড় জমে স্মরণসভাতে  "

এমনি অনেক মনকাড়া কথা যিঁনি লেখেন সেই মানুষটিই আজ জলফড়িং এর কফিকথাতে আমাদের সঙ্গে আছেন।
আর তিনি হলেন কবি অর্ঘ্যদীপ আচার্য্য।

দাদা জলফড়িং এর পক্ষ থেকে তোমাকে প্রথমেই জানাই নমস্কার।

কবিঃ- জলফড়িং এর সদস্যদের আমার পক্ষ থেকে অনেক অভিনন্দন

১.) প্রথমেই শুনতে চাই তোমার লেখালেখির শুরুর গল্প টা।

উঃ- আমার লেখালেখির শুরু ছোটবেলা থেকেই। স্কুল ম্যাগাজিন, পাড়ার পুজোর সুভেনিয়র, লোকাল সংবাদপত্র ইত্যাদি। তখন তো ফেসবুক ছিল না তাই এসব প্রিন্ট মিডিয়াতেই লেখালেখি চলত।

২.) মূলত কবিতা লেখো, কবিতায় যাপন করো।
এই লেখালেখির বাইরে পেশাগতভাবে অর্ঘ্যদীপ?

উঃ- পেশাগত ভাবে আমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।  কলকাতার একটা বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করি শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ে। ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতোকোত্তর। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে।

৩.) তাবেদারি খুব পরিচিত শব্দ, নেতারা করে এখন কবিরাও করছে ( শোনা কথা)। অর্ঘ্যদীপ কি তাবেদারিতে বিশ্বাসী?

উঃ- না। বিশ্বাসী নই অবশ্যই। সেই কারণেই আমার স্তাবক নেই। কোনও বড় নাম আমার পিছনে নেই৷ কোনও বড় কবি আমাকে চেনেন না। আমার এগিয়ে যাওয়া ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের দেওয়া সাহসেই ৷

৪.) তোমার বই ছড়িয়ে গেছে, ফেসবুকের লেখা গুলো মন কেড়ে নিচ্ছে সব্বার। লেখক অর্ঘ্যদীপের এই ব্যাপারটা কেমন লাগে নিজের কাছে?

উঃ-বিশেষ কিছু লাগে না৷ আমি খুব সাধারণ।  খ্যাতি আমাকে ছোঁয় না। আসলে মানুষের মিথ্যের মুখোশ এত দেখেছি, যে কোনও কিছুতে নির্লিপ্ত থাকার অভ্যেস হয়ে গেছে। সবার ভালোবাসাটা আমার প্রাপ্তি। একটা সময় কিছু মানুষের চূড়ান্ত অবহেলা, অসম্মান, মিথ্যাচার লেখার দিকে ঠেলে দিয়েছিল যে মানুষকে, সে আজ এত মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছে, এটাই মাঝে মাঝে অবিশ্বাস্য লাগে।


৫.) সবার মন কেড়ে নেয় তোমার লেখা, এইটা কি কোনো ম্যাজিক?

উঃ- আসলে আমার একাডেমিক শিক্ষা, পেশা থেকেই বুঝতে পারছ, আমি ঠিম সাহিত্য জগতের মানুষ নই। নিজের পেশায় আমি যথেষ্ট ব্যস্ত। তাই লিখে নাম করার বা রোজগার করার কোনও প্রয়োজন নেই আমার৷ সুতরাং, লিখি নিজের ইচ্ছায়। ইচ্ছা হলে লিখি, না হলে লিখি না। এটা ম্যাজিক নয় আসলে। নিজের উপর ঘটে যাওয়া মানুষের মিথ্যাচারগুলোই লিখে রাখছিলাম একটা সময়। কবে যে সেগুলো   সবার হয়ে গেল জানতেও পারি নি।
হঠাৎই হাজার হাজার ভালোবাসার আলো আমাকে ঘিরে ধরল।
এই জীবনে আর কী চাই এর থেকে বেশি!

৬.) অন্ত্যমিল পড়তে গিয়ে দেখতে পাবো যে কোনো প্রতিষ্ঠিত কবি যেভাবে শব্দ মেলায় ঠিক সেইভাবেই অনেকে একই শব্দ দিয়ে মিলিয়ে দিচ্ছে অথচ পাঠক বলছে বাহ্ দারুণ লেখা।
এটা তো একটা কপি করার মতো ব্যাপার তাহলে সে কীভাবে নিজের শব্দ সৃষ্টি করছে উনি তো কপি করছেন৷ এ বিষয়ে তোমার মতামত জানতে চাই।

উঃ-দ্যাখো, অন্ত্যমিল বা ছন্দ কারও একচ্ছত্র সম্পত্তি নয়।  অন্ত্যমিল মিলে যেতেই পারে। লেখার বিষয়বস্তু না  মিলললেই হলো। আমি এটাকে খারাপ বলে মনে করি না,  যতক্ষণ না লেখার বিষয় আর অন্ত্যমিল দুটোই মিলে যায়।

৭.) কবি অর্ঘ্যদীপের লেখা, তোমার কেমন লাগে ( তুমি কবি নও এখন তুমি  তোমার লেখার পাঠক এইভেবে উত্তর দাও)

উঃ-এটা বলা খুব শক্ত। আমি নিজে কী ভাবে বলি! 🙂
তবে নেক্সট লেভেলটা অর্জন করতে হবে। ফেসবুকের থেকে বেরিয়ে আমার লক্ষ্য কবিতাকে দুর্বোধ্যতার থেকে বের করে সাধারণ মানুষকে কবিতা পড়ানো


৮.) কবিতা হিট হবে পিরিয়ড থাকলে, কবিতা হিট হবে হিন্দু-মুসলিম মিশে গেলে এটা কিন্তু প্রায় দেখা যায় ফেসবুকে।
এ বিষয়ে কবি অর্ঘ্যদীপের বক্তব্য।

উঃ- আমি এ বিষয়ে লিখি না। বিতর্ক পছন্দ করি না বলে হিন্দু মুসলিম, রাজনীতি বা সামাজিক বিষয়ে আমি লিখি না, সচেতন ভাবেই লিখি না। তাই আমার কবিতায় এসব থাকে না৷ অথচ মানুষ ভালোবাসেন।






| আমার তো লিখে বিখ্যাত হওয়ার বা রোজগার করার কোনও দায় নেই  |






৯.) "কবিদের নাকি বেশি দিন বাঁচতে নেই "...
এ বিষয়ে কবি অর্ঘ্যদীপের মতামত?

উঃ-একমত। 🙂 বেশি বাঁচলে বেশি লিখতে হবে৷ সম্পৃক্ত হয়ে যেতে হবে।  লেখার মান খারাপ হবে৷ তার থেকে আগেভাগে চলে যাওয়া ভালো। খারাপ লেখার থেকে আমার কাছে মৃত্যু বেশি গ্রহণযোগ্য।

সুদীপ্তঃ-না হোক, বেঁচে থাকুক অর্ঘ্যদীপ

কবিঃ-তোমাদের ভালোবাসা যতদিন থাকবে, থাকব৷ 🙂

১০.) ফেসবুক কবি অর্থাৎ যারা যারা ফেসবুকে লেখেন তাদের একটা একক বই বের করতে হলে তাদের কি কি করতে হবে যাতে করে তার বই ছড়িয়ে যাবে পাঠকের কাছে?

উঃ-ভালো লিখতে হবে। এক এবং অদ্বিতীয় উপায়। ভালো না লিখলে শুধু ভালো চেহারা ও ভালো লোকের সাথে পার্সোনাল যোগাযোগ দিয়ে প্রথম বই বিক্রি হবে। দ্বিতীয় বই বিক্রি হবে৷ তার পরে আর নয়৷ আজকাল জানো তো, সুন্দর চেহারাটাও জনপ্রিয়তার একটা অন্যতম কারণ।
আমাকে কে চিনত! চেহারাও ভিন গ্রহের প্রাণীর মতো। কিন্তু একটুও মার্কেটিং ছাড়াই লোকে নিজের থেকে বই কিনে নিয়ে গেছেন। 🙂


১১.) ফেসবুকে প্রচুর কবি, পাঠক কম। তোমার চোখ বেঁধে দিলাম বললাম একটা চিরকূট তোলো তুমি তুললে ওখানে লেখা আছে 'তুমি একজন পাঠক তুমি আর কবিতা লিখবে না' তুমি খুশি হলে নাকি মনে হচ্ছে অন্যটা (চিরকূট) তুললে ভালো হতো যেখানে লেখা ছিল 'তুমি কবি তুমি পড়তেও পারো এবং লিখতেও পারো'।

উঃ-আমি আগে পাঠক। লিখি কম পড়ি বেশি। পড়তেই চাইব৷ তবে সেটা আজেবাজে লেখা হলে চলবে না৷ অন্ত্যমিল নেই, তাল নেই এমন লেখায় ছেয়ে গেছে। তাই এখন অর্ধেক লেখাই পড়ি না৷ কয়কজন সিলেক্টেড আছেন৷ শুধু তাঁদের লেখাই পড়ি।
আমি পড়তেও পারি লিখতেও পারি (ইচ্ছে হলে) ওটাই সিলেক্ট করব।

সুদীপ্তঃ-☕দাদা চলো এবার একটু চুমুক দেওয়া যাক তারপর আবার আড্ডায় ফিরব

কবিঃ- বেশ বেশ


১২.) ফেসবুকে পপুলার অথচ 'কৃত্তিবাস' বা 'দেশে' বা এখন অবধি কোনো বানিজ্যিক পত্রিকায় লিখতে পারেনি অর্থাৎ তার লেখা মনোনীত হয়নি। তাহলে তাকে কিভাবে বলব তিনি পপুলার,তিনি কি সত্যিই পপুলার?

উঃ- আমার লেখাই কৃত্তিবাসে মনোনীত হয় নি। ওঁরা আসলে অনেএএএএক উঁচু লেভেলের৷ আমাকে কে চেনেন! যে ওঁরা আমার লেখা ছাপবেন? ওঁদের মতো উচ্চ মানে আমি লিখি না অথচ অনেক সাধারণ মানের লেখা দেখেছি ছাপা হয় (আমার মতে সাধারণ৷ ওঁরা নিশ্চিত ভাবে অনেক বোঝেন আমার থেকে বেশি)৷ আসলে না চিনলে বোধ হয় কেউই পাত্তা দেন না। সেটা কৃত্তিবাসই হোক বা দেশই হোক।

সুদীপ্তঃ-তাহলে কি তুমি বলছ চেনার ওপরেই সেখানে লেখা মনোনীত হওয়াটা নির্ভরশীল?

কবিঃ- মন্তব্য করতে চাই না। বড় বড় কবি আছেন। আমি সাধারণ,  ওঁদের বিষয়ে কী বলব!

১৩.) কবিতা বেঁচে থাকে, কবিরা মরে যায়।
ফেসবুকে যারা লিখছেন তাদের ফেসবুকও মরে যেতে পারে কোনোদিন। যদি হয় তখন তারা অর্ঘ্যদীপ কি করবে?

উঃ- কিছুই করব না। মোবাইলে লিখে রাখব। আমার তো লিখে বিখ্যাত হওয়ার বা রোজগার করার কোনও দায় নেই!

১৪.) আগেকার দিনে প্রকাশক আসত লেখকের কাছে, বিনা খরচে বই করতেন,
এখন উল্টো। এই বৈপরীত্যটা কেনো?

উঃ- অসুবিধে কী! টাকা দিয়েই না হয় কবিতা চর্চা হোক! লেখক খরচ দিলে সমস্যা আছে বলে আমার মনে হয় না৷

১৫.) "ফেসবুক কবি" এই শব্দটা তোমার কাছে কষ্টের নাকি ভালো লাগার?

উঃ- আমার কিছুই এসে যায় না৷ একটাও পুশ সেল ছাড়া মানুষ আমার বই কিনে পড়েছেন৷ ফেবু না থাকলে কে চিনত আমাকে! আজ তোমরা সাক্ষাৎকার নিচ্ছ তাও তো ফেবুতেই চিনেছ বলে! 🙂 আমার ভালোই লাগে ফেবু কবি বললে

জলফড়িংঃ- অনেক অনেক ভালোবাসা দাদা আজকের সন্ধেটা আমাদের দেওয়ার জন্যে,
একরাশ ভালোবাসা থাকলো তোমার প্রতি।
তুমি খুব পছন্দের লেখ আমার( personally)।

কবিঃ-অনেক ভালোবাসা নিও। কফি কথার  আরও শ্রীবৃদ্ধি হোক এই কামনা করি।


মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৯

X-ক্লুসিভ চাঁদের মানুষ

জলফড়িং এর পক্ষ থেকে তোমাকে প্রথমেই জানাই নমস্কার।




| আর সব কবিতাকে গান হতে হবে এমন কোন দাবীও কেউ করে না |



১.) কিংশুক চট্টোপাধ্যায় কবি এবং সেই সঙ্গে তিনি গান লেখেন। তবে তিনি নিজেকে কিভাবে পছন্দ করেন  কবি নাকি লিরিসিস্ট?

উঃ- যতটুকু কথা বলি, কবিতায় বলি। এই অনিবার্য ও নিরুপায় কথা বলে চলার যে অবস্থা, এর মধ্যেই কখনও কোন কথার গায়ে ও পায়ে কেউ কেউ গয়না ও নুপুর পড়ায়। তারা গান হয়ে ওঠে। আমি শুধুমাত্র কথাটুকুই বলি অথবা কথারা আমার মধ্যে থেকে বলে ওঠে নিজেরাই নিজেদের। মনে হয় উত্তরটা তোমরা পেয়ে গেছ।


২.) তোমার প্রথম লেখা, কবিতা নাকি গান?

উঃ- দেখ, গান কিভাবে লিখতে হয় আমি এখনো জানি না। আমার প্রথম কবিতার বই শিলাজিৎ দা-কে পড়তে দিয়েছিলাম। দাদা-ই প্রথম আমাকে বলে, “তুই গান লেখ, আমি গাইব”। সেই যে গানের ভুত ঘাড়ে চাপলো এখনো নামে নি। আমার যে কথা বলতে ইচ্ছে হয় সে কথাটুকুই লিখি। সেইসব কথাদের কারো কারো ডাকনাম হয়তোবা গান।


৩.) ছোটোবেলা কাটলো,বড়ো হলে তখনও পরিচিতি হয়নি মানে আজকের পরিচিতি তোমার হয়নি । ঠিক কোন সময়টা থেকে কিংশুক চট্টোপাধ্যায় আজকের 'কিংশুক চট্টোপাধ্যায়' হয়ে উঠলো?

উঃ- হওয়া বলতে কিছুই হয় না। আমরা সকলেই হতে হতে যাই। এটা একটা প্রস্তুতি ও চর্চার চলমান যাপন প্রক্রিয়া। এক নির্জন শূন্যতার এবং নিঃস্বতার চর্চা করে চলা। এই একাত্বতাই, সমর্পণ।



৪.) অনেকে বলেন যে কবিতা আর গান এক নয় তাই গানের জন্য আলাদা ভাবেই লেখাটা নিয়ে ভাবতে হয়। এই বিষয়ে তোমার মতামত জানতে চাই।

উঃ- কবিতা ও গান এই দুইয়ের প্রস্তুতি ও প্রকাশ ভিন্ন হলেও, আসলে তা কথা বলারই ভঙ্গিমা। বলাটাই মূখ্য, কি ভঙ্গিমায় বললাম সেটার থেকেও। বলে ফেলার পর হয়ত কিছু কথা গান হয়ে ওঠে, তবে দুইয়ের মধ্যে কোন বিরোধ তো নেই। আর সব কবিতাকে গান হতে হবে এমন কোন দাবীও কেউ করে না। গান বা কবিতা দুটিই কবি ও গীতিকারের নিজস্ব নির্জনতা ও দর্শনে সুন্দর।



৫.) কলেজের সবচেয়ে প্রিয় ঘটনা?

উঃ- বিশেষ কোন ঘটনা কলেজ জীবনে আমার নেই। সাকুল্যে গোটা কুড়ি দিন কলেজে গিয়েছি। ওই সময় কালটায় আড্ডা, ছবি আঁকা, কবিতা লেখা ও প্রেম করেই কেটেছে। পরবর্তীতে মনে আছে অধ্যক্ষের কাছে মুছলেখা দিয়ে পরীক্ষায় বস্তে হয়েছিল।





| এটুকু বুঝি কথাটুকু লিখতে না পারলে হয়তো মরেই যাব |








৬.) "ও চাঁদ" নাকি "ও বাউল" কাকে বেশি ভালোবাসো?

উঃ- আলাদা করে আমার পক্ষে বলা মুশকিল। তবে জনপ্রিয়তার নিরিখে “ও চাঁদ” গানটি “ও বাউল” গানটির থেকে বেশী গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে আমার মনে হয়। এটুকু বলতে পারি “ও চাঁদ” গানটির যে লিরিকাল ধাঁচা, মানে যে একটা গল্পের মত চলন ওই রকমভাবে কথা বলতে আমার বেশ লাগে।


৭.) তোমার প্রথম লেখা কবিতার বই?

উঃ- “নাম আমার কৃষ্ণচূড়া”- শ্রদ্ধেয় দেবকুমার বসুর “বিশ্ব জ্ঞান প্রকাশনা” থেকে প্রকাশিত। সম্ভবত 2000 সালে  বা তার আগের বছর।


৮.) তোমার লেখা গান গুলোর মধ্যে একটা আলাদা ব্যাপার আছে বিশেষত সুরের ক্ষেত্রে আর তার সাথে এখনকার গানে( বাংলা রক) যেভাবে সুর বাঁধার কাজ চলছে তাতে করে তোমার কি মনে হয় কিংশুক চট্টোপাধ্যায়ের গান এখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে সুরের দিক থেকে পিছিয়ে আছে ?

উঃ- সেটা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। সুরকাররা হয়তোবা বলতে পারবেন। এটুকুই বলতে পারি আমার একটি ভ্রাম্যমান দোকান আছে। “জয়গুরু ভান্ডার”. সেখানে ফোক-রক ঝাল-টক সব-ই পাওয়া যায়। যে যেমন চায়, লাগলে বলে, পেয়ে যায়। এই আর কি!



৯.) গান লেখাটা কঠিন নাকি তার সুর করাটা?

উঃ- যার যেটা কাজ তার কাছে সেটাই সহজ।



১০.) এই রাউন্ডের নাম

[ ইচ্ছে না হলেও উত্তর চাই]

ক.) গান ও কবিতা লেখার মধ্যে একটাকে ছেড়ে দিতে হলে কী ছাড়বে?
উঃ- ধরা বা ছাড়া কোনোটাই আমার হাতে নেই। এটুকু বুঝি কথাটুকু লিখতে না পারলে হয়তো মরেই যাব।


খ.) ট্রাম নাকি ট্রেন কোনটা প্রিয়?
উঃ- মেজাজ মাফিক



গ.) হলুদ ট্যাক্সি প্রিয় নাকি এক কাপ( মাটির ভাঁড়) চা?
উঃ- কোনটাই না




ঘ.) বিষন্ন দুপুরে যে দুপুরে তোমার মন খারাপ অথচ তোমাকে শিলাজিৎ দার গান শুনতে বলা হলো। কোন গানটা শুনবে?
উঃ- ফিসফিস


১১.) এই রাউন্ডের নাম

[ একজনকেই বাছতে হবে নতুবা খেলব না ]

ক.) জয় গোস্বামি নাকি শক্তি চট্টোপাধ্যায়?
উঃ-দু’জনেই প্রিয়, একজনকে বাছা সম্ভব নয়।



খ.) শ্রীকান্ত আচার্য নাকি মনোময় ভট্টাচার্য?
উঃ- এভাবে বলা যায় নাকি?


গ.) শ্রীজাত নাকি অনুপম রায়?
উঃ- দুজনেই প্রিয়



ঘ.) রূপঙ্কর বাগচী নাকি শিলাজিৎ মজুমদার?
উঃ- এতক্ষন যতটুকু কথা-বার্তা বললাম তোমাদের সঙ্গে তার মধ্যেই এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আছে, বুঝে নাও।



১২.) এই রাউন্ডের নাম

[কোনো কথা শুনব না তোমাকে চুরি করতেই হবে বস]

ক.) শিলাজিৎ দার কাছ থেকে কী চুরি করবে?
উঃ- এনার্জি


খ.) দেবদীপ দার থেকে কী চুরি করবে?
উঃ- বিনয়




গ.) নচিকেতা দার কাছ থেকে কি চুরি করবে?
উঃ- মিশি নি, তাই বলতে পারব না।



[পছন্দে কিংশুক]








১.) প্রিয় গান?
উঃ- গান মাত্রই প্রিয়

২.) প্রিয় শহর?
উঃ- আমার শহর

৩.) প্রিয় রঙ?
উঃ- নীল

৪.) প্রিয় মানুষ?
উঃ-মানুষ মাত্রই প্রিয়

৫.) প্রিয় কবি?
উঃ-কবি মাত্রই প্রিয়

৬.) প্রিয় নব অভিনেতা?
উঃ-অনেকের কাজ-ই ভাল লাগে, কোন একজনের নাম বলা সম্ভব নয়।

৭.) ভোতকা নাকি IB?
উঃ-মেজাজ মাফিক

৮.) আপনি কিংশুক চট্টোপাধ্যায়কে চেনেন যিনি গান লেখেন? যদি চেনেন তাহলে বলুন তাঁর লেখা কোন গানটা আপনার প্রিয়। ( তোমাকে একজন পাঠক হিসেবে এই প্রশ্ন করা হলো আর তার উত্তর আমরা শুনতে চাই এখানে তুমি লিরিকিস্ট বা কবি নও, এখানে তুমি শুধু কিংশুক চট্টোপাধ্যায় )

উঃ- না, চিনি না, নামটা কোথাও শুনেছি বলে মনে হচ্ছে। ওনার কোন গান বললে হয়তো বুঝতে পারব।






"কেউ কথা রাখেনি"----শিল্পী কনীনিকা



 সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কেউ কথা রাখেনি

কন্ঠে আমন্ত্রিত  শিল্পী কনীনিকা

জলফড়িং এর কফিকথায় রেজমান


"বুক বাজিয়ে ব্যবসাদার বলো বরং"

এই কথা, এই সাহস যার
আজ সেই কবি আমাদের সাথে। প্রথমবার জলফড়িং এর কফিকথাতে কবি রেজমান

 রেজমান দা জলফড়িং এর পক্ষ থেকে তোমাকেই প্রথমেই জানাই নমস্কার এবং শুভ সন্ধ্যা।

রেজমানঃ- ভালোবাসা নিও




| আমার তো মনে হয় সেদিনের রেজমান আর আজকের রেজমান একই আছে, কিচ্ছু বদলায় নি তেমন |



২.) প্রথমে লেখালেখির শুরুটা যদি একটু বলো?

উঃ-স্কুলজীবনের শেষের দিক থেকেই  লিখতাম টুকটাক। কঠিন কঠিন শব্দ দিয়ে পাকামো মেরে ওই একপ্রকার লোক হাসানোর মতোই৷ তার পর দুম করে সবকিছু বন্ধ। কখনও মনেও হয়নি আমার লেখা উচিত বা এবার লেখা যাক। তখন পড়তে খুব ভালোবাসি। ফেসবুকের টাইমলাইন, পিডিএফ, বই, ম্যাগাজিন হাতের কাছে যা পাচ্ছি তাই নিয়ে পড়ছি৷ বেশ মজা লাগতো। কখনও মনে হত, ইস এমন একটা লেখা যদি আমিও লিখতে পারতাম! আফসোস হত। তার বহু পরে হঠাৎ একদিন একটা ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে ইচ্ছে হয়েছিল খুব, ইচ্ছে হয়েছিল দু'লাইন লিখি। সেখান থেকেই হঠাৎ করে সব ওলট-পালট হয়ে গেল। তারপর আর ঘুরে তাকাইনি 😃

৩.) প্রথম ফেসবুকে কবিতা পোস্ট তারপর সেদিনের রেজমান কি বুঝতে পেরেছিল আজকের রেজমানকে?

উঃ-আমার তো মনে হয় সেদিনের রেজমান আর আজকের রেজমান একই আছে, কিচ্ছু বদলায় নি তেমন। বয়স আর অভিজ্ঞতা  বেড়েছে শুধু একটু 😃

৪.) রেজমান সব ধরনের কবিতা লেখে  অন্তঃমিল বা গদ্য কবিতা।
তোমার নিজের সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে কোন ধরনের কবিতা লিখতে।

উঃ-এটা খুব চাপের প্রশ্ন। আসলে কবিতা ব্যাপারটাই আমার ভীষণ প্রিয়৷ স্টাইল বা ফরম্যাট যাই হোক, লিখতে পারলেই ভীষণ ভালো লাগে।

৫.) এখন বেশির ভাগটাই ফেসবুক কেন্দ্রিক তো সেখানে দাঁড়িয়ে কখনও এরকম হয়েছে তোমার সাথে, যে তুমি একধরনের বিষয় নিয়ে লিখতে চাইছ অথচ লিখলে না  তার কারণ হচ্ছে তুমি জানো যে এই বিষয়টা নিয়ে লিখলে পাঠক পড়বে না বা পাঠকের কাছে কঠিন হয়ে যাবে।

উঃ-বিশ্বাস করো পাঠক কী পড়তে চাইছে বা খাচ্ছে এটা জানতে পারলে সত্যিই খুব ভালো হত, তাহলে অন্তত নিজেকে আজ অর্থনৈতিক ভাবে বেকার ভাবতে হত না। পাঠকের মনের মতো করেই সব লিখতাম। ব্যাস, লাইক-শেয়ার-কমেন্ট, বই হিট। টাকার জন্য ভাবতে হত না। 😃

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটা হয়ে ওঠে না।

৬.) কবিতা অনেক বেশি সহজ হয়ে যাচ্ছে মানুষের কাছে, এটা গানের ক্ষেত্রেও হচ্ছে। যে খুব সহজ ভাষায় শুধু ভাষা না সহজ কথায় কবিতা লিখলে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে।
এখন আমার প্রশ্ন তুমি একজন পাঠক, তুমি কি কবিতা সহজ হোক এটা চাইছ?
আর তুমি একজন কবি, তুমি কবিতা সহজ হোক চাইছ? দুই জায়গা থেকেই উত্তর দাও।

উঃ-পাঠক হিসেবে আমি সবসময় চাইবো কবিতা সহজ হোক। কবিতা সবার হোক। কিন্তু লেখক হিসেবে আমার মনে হয় শুধুমাত্র সহজ ভাষা বা সহজ বিষয় হলেই কবিতা সহজ হবে এমনটা নয়। কবিতা তখনই সহজ যখন সেটা পাঠককে ছুঁয়ে যাবে। পাঠক সহজে রিলেট করতে পারবে। কবিতার সহজ-কঠিন নির্ভর করে ওই পাঠকের বোধগম্যের উপরেই। কিন্তু আমার মনে হয় এখনকার বেশিরভাগ পাঠকের বোধ বা দর্শন বা চিন্তা-ভাবনা বড্ড ভাসা ভাসা হয়ে যাচ্ছে৷ এখনকার বেশিরভাগ পাঠক খুব একটা তলিয়ে ভাবে না। এটা খুব ব্যক্তিগত মতামত যদিও।





| এসব টেকনিক্যাল ব্যাপার বড়ো কম বুঝি |






৭.) কবিতা হিট হবে পিরিয়ড থাকলে, কবিতা হিট হবে হিন্দু-মুসলিম মিশে গেলে এটা কিন্তু প্রায় দেখা যায় ফেসবুকে।
এ বিষয়ে কবি রেজমানের বক্তব্য।

উঃ-কবিতা বা যেকোনও শিল্পেরই উচিত সময়ের কথা বলা। এই সময় যদি পিরিয়ড বা হিন্দু-মুসলিম নিয়ে লেখা দাবী করে তাহলে তা নিয়ে অবশ্যই লেখা উচিত। এটা নিয়ে আমরা বলার কেউই নয়।

সুদীপ্তঃ- আচ্ছা বেশ চলো এবার চুমুক দিই কফিতে।

রেজমানঃ- বেশ

সুদীপ্তঃ-চুমুক দিতে দিতেই জেনে নেওয়া যাক তোমার স্কুল জীবন, কলেজ জীবন আর এখন কি করছ।

রেজমানঃ-স্কুলজীবন বলতে আমার পুরোটাই কেটেছে হোস্টেলে৷ তারপর জার্নালিজম & মাস কমিউনিকেশন নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করি৷ পরে ফিল্ম & টেলিভিশন নিয়ে ডিপ্লোমাতে ভর্তি হই। বেশ কয়েকমাস ক্লাসও করেছি। পরে আর কন্টিনিউ করা হয়নি। এখন আপাতত আদ্যপ্রান্ত বেকার 😃

৮.) বইমেলায় রেজমানের বই থাকেই, বিক্রিও হয় চরমে।
এই বিক্রির ব্যাপারটাই প্রকাশকের ভূমিকা কতটা নাকি এমন ব্যাপার যে তুমি যেখানেই বই করবে সেখান থেকে একই রকম পাঠক তোমার বই কিনবে?

উঃ-বই বিক্রির ব্যাপারে কার ভূমিকা থাকে সত্যিই আমার জানা নেই৷ তবে বইয়ের প্রতি প্রকাশকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এবং বইয়ের ছাপা থেকে বাঁধাই হয়ে বইমেলার মাঠ অবধি বুলবুল দা'র(প্রকাশক) ভূমিকা আমি কোনওভাবেই অস্বীকার করতে পারব না। এছাড়াও জয় দা, তৌসিফ দা, চিন্টু দা, সৌমী দি, সায়ন্তী প্রত্যেকের অবদান অনস্বীকার্য।

৯.) ধরো X ফেসবুকে পপুলার কবি, কিভাবে বিচার করছে রেজমান যে এই  X ফেসবুকে পপুলার কবি?

উঃ-জনপ্রিয়তা সবসময় নির্ভর করে তুমি কতটা বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছো তার উপরে। এ তো সহজ হিসেব৷ কিন্তু জনপ্রিয়তার সঙ্গে গুণগত মানের কোনও সম্পর্ক নেই। খুব জনপ্রিয় কবি খুব খারাপ লেখা লেখে এমনটা হতেই পারে। আবার উল্টোটাও হয়। জনপ্রিয়তা নেই অথচ দারুণ লেখে।

১০.) হ্যাঁ তুমি যেটা বললে, এখন অনেক সময় দেখা যায় একজন আরেকজনের চেয়ে ভালো লেখে অথচ সে ঠিকঠাক রিচিং পায় না। এটা কেন হয়?

উঃ- মানুষের কাছে রীচ করার জন্য অনেককিছু মেন্টেন করতে হয়, সেগুলো হয়তো তারা সেভাবে মেন্টেন করে না। এছাড়াও এটা অনেককিছুর উপর ডিপেন্ড করে। এসব টেকনিক্যাল ব্যাপার বড়ো কম বুঝি 😃

সুদীপ্তঃ- এই প্রশ্নে কবি কি কোথাও এড়িয়ে গেল?

রেজমানঃ- এমনিই শত্রু বাড়ছে, আরও বাড়ুক চাই না 😃

১১.) মানুষের হাতে সময় কম তাই ইদানিং দেখছি দুই লাইনের লেখার প্রচলন বেড়েছে তবে তা অন্ত্যমিলের হলেই ভালো হয় এমনটাই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ভালো ভাবে লক্ষ করলে দেখা যাবে কবি রেজমান দুইলাইনের লেখা কম লেখে তাহলে তোমার কি কোথাও মনে হচ্ছে তুমি পিছিয়ে পরছো।

উঃ- আমি দু'লাইন বা কাপ্লেট লিখতে পারি না খুব একটা। অক্ষমতা বলতে পারো। তাই লিখি না তেমন। কিন্তু অদ্ভুতভাবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এই বইমেলায় আমার একটা কাপ্লেটের বই আসছে। আর দ্বিতীয়ত পিছিয়ে পড়ার কোনও গল্পই নেই কারণ আমার কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই কারও সঙ্গে। আমার মনে হয়, শিল্পে প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ব্যাপারটা ঠিক মানায় না।

১২.) তুমি কি বিশ্বাস করো গানের কাছে কবিতা বরাবরই পিছিয়ে?
যদি  বলো  না তাহলে বলো যতজন মানুষ গান শোনে ততজন মানুষ কবিতা শোনে বা পড়ে?

আর যদি বলো হ্যাঁ তাহলে তার কারণটাও তোমাকেই বলতে হবে?

উঃ-গানের পরিসর অনেক বেশি। গানের পেছনে অনেকটা অর্থ লগ্নি করা হয়। টিভি-মিডিয়ার প্রচার থাকে। আলাদা প্রোমোশন থাকে। সেসব দিক থেকে কবিতা সত্যিই বড়ো অসহায়৷

১৩.) এই সময়ে দাঁড়িয়ে কবিতা সস্তা, কেন বলছি, যে লেখক বা লেখিকাটি কবিতা লিখছে ফেসবুকে এবং ভালোই পৌঁছে যাচ্ছে পাঠকের কাছে তার লেখা অথচ তার একটা লেখাও এখন অবধি কোনো নাম করা পত্রিকা যেমন 'দেশ' বা 'কৃত্তিবাসে' নেই।  তাহলে তোমার কি মনে হয় আসলে সেই লেখকটি নিছকই "নামে  চলছে"?

উঃ- কৃত্তিবাস বা দেশ নামকরা প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে কোনও দ্বিমত থাকার কথা নয়। কিন্তু  সাহিত্যের ক্ষেত্রে আল্টিমেটাম বলে তো কিছু হয় না৷ আমি দেশ বা কৃত্তিবাস কোনওটাই খুব একটা পড়ি না। আর সাধারণ পাঠক হিসেবে যেটুকু পড়েছি তা আমাকে হতাশ করেছে বরং৷ এবার কে কোথায় লিখবে বা কার লেখা কোথায় ছাপাবে কেন ছাপাবে না এসব নিয়ে আমি সাধারণ পাঠক হিসেবে কী বা বলি! আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজের খোঁজ নিয়ে লাভ আছে! 😃

১৪.) পাঠকের কাছে কবিতার সাথে সাথে কবিও পছন্দের হয়।
আর কবির কাছে নির্দিষ্টভাবে কোনো পাঠক কি পছন্দের হয়।

উঃ- হ্যাঁ অবশ্যই হয়। আমার ক্ষেত্রেই হয়েছে এরকম। কত পাঠক-পাঠিকা আমার প্রিয় হয়ে উঠেছে এবং তাদের সাথে কবিতার বাইরেও একটা দারুণ সম্পর্ক হয়েছে


১৫.) জলফড়িং এর পাঠককে যদি বলতে
এবছর বইমেলায় তোমার নতুন কোনো বই আসছে কি?

উঃ- এই বইমেলায় খুব সম্ভবত আমার দুটো বই আসছে। একটা কাপলেট আর ক্যালিগ্রাফির। যেটাতে তৌসিফ দা আর আমি যৌথ ভাবে কাজ করছি।
আরেকটা আমার একক বই আসছে। এই ভুল সময়ে দাঁড়িয়ে ঘটে যাওয়া একের পর এক অন্ধকার ঘটনা নিয়ে একটা প্রতিবাদী বই। যা আমার মনে এই সময়ে দাঁড়িয়ে সবচেয়ে বেশি দাবী করে।

জলফড়িংঃ- জলফড়িং এর পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকে তোমার বই এর জন্য থাকলো অনেক অনেক শুভেচ্ছা। তোমার লেখা ছড়িয়ে যাক পাঠকের কাছে শত থেকে শতাধিক হয়ে এই আশা রাখবো
আর আজ একটা সন্ধে জলফড়িং এর সাথে কাটানোর জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং একগুচ্ছ ভালোবাসা নিও দাদা।
সেই সঙ্গে বলো তোমার কেমন লাগলো আজকের এই "কফিকথা"

রেজমানঃ- অসম্ভব ভালো উদ্যোগ। অনেক বেশি সফল হোক।