অজান্তে
যেদিন আমি প্রথম তাকে দেখি,
শুধিয়েছিলাম, আপনার শ্বশুরবাড়ি কোথায়?
সে জানিয়েছিল, " হয়নি কো সে বাড়ি "।
এমনই ছিলাম আমি;
পাগল- পাগল , গাঁয়ের মাটি মাখা।
আবোল- তাবোল, আলগোছে ভুল বকা।
বয়স টি যে কম ছিল, তা নয়;
এই ধরো, বছর কুড়ি প্রায়,
' সে' ছিল তিরিশ কাছাকাছি।
বলেছিলো, সে বছর সে বাবা হারিয়েছিল নাকি'
এই রকম কত কথার সারি,
আমার সাথেই করেছে আলাপন।
ভেবেছিলাম - এত বেশি বয়স,
এখনও বিয়ে হয়নি কেন?
খেয়ে দেয়ে আর কিছু না,
ওই একখানি ই কাজ যেন।
বলেছিল " রঙের শহর এটা,
রঙিন হোয়ো না তুমি "।
শুনে মন আৎকে ছিল কিছুটা,
তবে ঠিক ভয় পায়নি আমি ।
পাবো কেন বা বলো,
আমি ছিলাম সাদা কালোর প্রেমে ।
চিন্তাই নেই রঙের ফাঁদে পড়ার,
আওড়ে ছিলাম মনে।
হতে পার, ছোটো বড় সাঁকো,
ভাবতাম না, লাগবে কারো হাত।
যবে থেকে হাত বাড়ালো সে,
মনে হতো, পেলাম কারোর সাথ।
চলতে শহর পথে, লাগতো বড় ভয়,
সরাতে আমার চোখের ভীতি,
থাকতো সদাই যেন 'জয়'
ভরসায় পাড়ি দিত এ মন।
কাটাতাম স্টেশন পাড়ায় প্রহর,
গুনতাম শিশির- হাওয়ার তাল,
দেখতাম জন জোয়ারের ঢেউ,
পড়তাম আপন হওয়ার পাঠ।
ভাবতাম, ' সে' যেন এক বিশাল বড় গাছ,
আমি তাতে কিচিরমিচির পাখি।
অবাক চোখ তাকিয়ে থাকতাম আকাশের দিকে,
মন করে উঠতো কখন চেচাঁমেচি।
"আমি কি করি তার জন্য?
শুধু তো শুনতে থাকি কথা,
অকারণ বকিও মাঝে মাঝে,
তাতে কি মলম কিছু লাগে তার কাটা ঘায়ে?
আমি বলতাম, তা ঠিক নয়, তবে?
তবে সে কেন এত সাধে আমায়?
কেন ডাকে এত আপন করে?
কেন বলে, "মরমিয়া , তুমি যেওনা আমায় ছেড়ে"।
কিছু প্রশ্নের উত্তর ছিল অজানা তখন,
অজানাতেই, দিয়েছি অচেনা পথ পাড়ি।
গিয়েছি সাগর জলে ভিজতে সাথে তারই,
হেঁটেছি বৃক্ষলতার গোপন বৃন্দাবন ।
চলতে চলতে হঠাৎ করে একদিন বলল আমায়,
" তুই আমার হলি এবার,
আজ থেকে তুই আমার... "
আজ, এই বছর আটেক পরে ও বলছি,
আমি সত্যিই তোর।
যেদিন তুই হাত দিয়েছিলি, দুই স্তনের মাঝে,
আমিও রেখে দিয়েছিলাম তোর বুকেতে, ' আমাকে'
তাই এদেহে প্রাণ নেই আর।
সে প্রাণ এখন তোতেই থাকে,
আমি ও আর আমার না।
অজান্তে তোর আপন হয়েছিলাম,
জেনেও দিলাম তোকে, "আমার আমি কে" ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন