সেল। সেল। সেল।
লেখিকাঃ-মৌমন মিত্র
অরবিন্দ বাবু স্ত্রী হারা হয়েছেন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। স্ত্রী বেঁচে থাকতে তেমন ভাবে সাংসারিক তিনি কোন কালেই ছিলেন না। দুই কন্যা, জ্যেষ্ঠ কন্যা রুপে গুনে মহীয়সী আর কনিষ্ঠ কন্যার বিদেশে পাকাপাকি বসতী। একাকী জীবন যাপনের জ্বালা অসহনীয় হয়ে উঠলে, তাঁর কন্যারা তাঁকে নিজেদের কাছে ডেকে নেয়। অরবিন্দ বাবুও মানসিক ভাবে হাঁপিয়ে উঠেছেন। ঠিক করলেন পালা করে দুই কন্যার বাড়িতেই থাকবেন। কখনো বা এলোপাথাড়ি এদিক ওদিক চলে যাবেন। বেশ কিছু বছর এভাবে কেটে যায়। ক্রমশ তার হৃদয়ের পরতে জমতে থাকে এক অপরাধবোধ। ইদানীং তিনি, নিজের ইনভেস্টমেন্ট ভাঙ্গিয়ে প্রায়ই কন্যাদের জন্যে চড়া দামের আসবাব, গয়না কেনা শুরু করেন। কনিষ্ঠ কন্যা বিচক্ষণ বুদ্ধি সম্পন্না। কদিনের মধ্যে বাবার জামাই বাড়িতে এই ‘দেনাপাওনা’ র খেলা ঠাহর করতে পারে। চৈত্র সেল? দামি পন্যের বদলে হালকা দাম। সাংসারিক বসতি?
লিনার এক সময় কলেজ ছিল বেথুনে। কলেজ পাড়া থেকে কখনো হাতি বাগান মোড়, কখনো আরও বারতি সময় থাকলে সাউথ এর গড়িয়াহাট। চৈত্র সেল এ কেনা গয়না লিনা সারা বছর আর পরবে কিনা বলা দায়। তবু ওই কটা দিন ভিড় ঠেলে, বুকের সামনে চওড়া ফাইল বর্মের মতো দিয়ে বেমালুম চলত সেল্ এর কেনা কাটা। এখন, লিনা ইংল্যান্ড এর কোন এক পাহাড়ি উপত্যকায়। লিনার দিদি নিয়ম করে ঠিক এই সেল্ এর সময় অসুস্থ হওয়ার ভান করে, বলতে চায় চৈত্র সেল এ কি আর যাব, ‘হাঁটুতে অমন বেদনা যে’!
ঋতু কে আপনাদের মনে আছে? সেই সাংবাদিক? চোখের তলায় ওর এক পোঁচ কালি? আর ওর জীবনের বারো তম প্রেম? প্রায় আধ বছর পর আজ ওর প্রেমিক এসেছে। মনে এক পলি দুঃখ, আর খামখেয়ালিপনা নিয়ে। বেড্ সাইড টেবিলে ঋতু র রাখা বাউল journal এর পাশে নিজের ছাইদানি টা । ওর জন্যে এতটা পথ শুভঙ্কর এসেছে সেটার ই ধন্যবাদন্তে ঋতুর অনেক না বলা কথা। কোন এক ঘন মুহূর্তে শুভঙ্কর নিজের পুরনো প্রেমিকাকে ভাবতে ভাবতে ঋতুকে প্রশ্ন করে ’কখনো হার্ট অ্যাটাকের মতো হয়েছে তোমার? আমার হয়েছিল ওকে দেখে। প্রথমবার! পুরনোর সুতো টেনে এনে কি হবে বল? নতুন পুরনোকে ভুলিয়ে দেয় , managebily’
ঋতুর চোখ ঝাপসা। পাশের আধপোড়া সিগারেট হাতড়ে পাওার চেষ্টা করছে। কোন দামি পন্য নিছকই সময়ের তাগিদে সেল্ চলে। চৈত্র সেল! ঠিক এই সময়। কম দামে বিকিয়ে দেই দোকানদার গুলো। আর আমরা ফুতি করে কিনি। জিতব বলে? কে জেতে? কি জেতে?
জয় বড় বেপরোয়া পুরুষ। বেপরোয়া অফিস, বেপরোয়া জীবন যাপন। এমন এক ব্যক্তির সাথে বিবাহ হয় ডাকসাইটে সুন্দরী ললনা সৃজার। রূপ বাদে সৃজার যা রয়েছে সেটা হল ক্ষুরধার ইন্টেলেক্ট। সে রন্ধন পটীয়সী। আর? আর ছিল তার লেখার হাত। তবে এই ললনা কি আর সংসার যোগ্যা? মানে সংসার করার যোগ্যা? অন্তত ভারতীয় ভাবনায়, না। জয় এমন স্ত্রী কে হারাতে চায় না। দামি সৃজা কে চৈত্র সেল্ এর মতো বেশ সহজ ভাবে বিবাহের মাধ্যমে পেয়েছে সে। রেশন লাইনের মতো প্রেমিকের লাইনেও তাঁকে দাড়াতে হয় নি। সৃজার জীবনে আদর খুব গৌণ হয়ে গিয়েছে বহু কাল। সেল এর মতো পাওয়া সৃজার একটু ‘নিভৃত যতনে’ আদর হলেই কেল্লা ফতে। আর জয় সেটা জানে!
ওষ্ঠ বাড়ির কনিষ্ঠ কন্যা। খুব ছোটবেলা থেকে ওষ্ঠ বুঝেছিল তার দিদির মতো লেখাপড়ায় ফাঁকি দিয়েও বাড়ির আহ্লাদি সে হয়ে উঠতে পারবে না। বাবা,মা, জ্যাঠা, কাকা প্রত্যেকের কাছে এমন হাড়ে পাঁজরে, এমন কি নিজের প্রেমের কাছে তাকে প্রমাণ করতে হয়েছে সে কতটা eligible। আর এমন টা প্রমাণ করতে করতে কখন যেন নিজেকে প্রমাণ করাটাই তার অভ্যেস হয়ে উঠল। এ হেন ওষ্ঠের মাঝ জীবনে এক প্রেমিক আসে। গণিতের প্রফেসর। ওষ্ঠের ত্বক, চুল, নাক কোন কিছু নয় কয়েক লাইন লেখনীতেই এই প্রফেসর তার প্রেম খুঁজে পায়। ওষ্ঠ কে আজীবনের প্রেম ভাবতে চায় এই প্রফেসর। কিন্তু ওষ্ঠ তো ফাঁপরে! কিছুই তো প্রমাণ করে নি সে নিজেকে! তাহলে কিভাবে এই প্রফেসর পড়ে ওর প্রেমে? অনেক দামি ওষ্ঠ সারা জীবনের বেচা কেনায় সেল এর দরে এধার ওধার হল যে! সেই চৈত্র সেল গেল কই! প্রফেসর অবুঝ না তো? ওষ্ঠ ভেবে যায়। সেল সেল সেল কোথায় গেল আমার চৈত্র সেল !
লেখিকাঃ-মৌমন মিত্র
অরবিন্দ বাবু স্ত্রী হারা হয়েছেন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। স্ত্রী বেঁচে থাকতে তেমন ভাবে সাংসারিক তিনি কোন কালেই ছিলেন না। দুই কন্যা, জ্যেষ্ঠ কন্যা রুপে গুনে মহীয়সী আর কনিষ্ঠ কন্যার বিদেশে পাকাপাকি বসতী। একাকী জীবন যাপনের জ্বালা অসহনীয় হয়ে উঠলে, তাঁর কন্যারা তাঁকে নিজেদের কাছে ডেকে নেয়। অরবিন্দ বাবুও মানসিক ভাবে হাঁপিয়ে উঠেছেন। ঠিক করলেন পালা করে দুই কন্যার বাড়িতেই থাকবেন। কখনো বা এলোপাথাড়ি এদিক ওদিক চলে যাবেন। বেশ কিছু বছর এভাবে কেটে যায়। ক্রমশ তার হৃদয়ের পরতে জমতে থাকে এক অপরাধবোধ। ইদানীং তিনি, নিজের ইনভেস্টমেন্ট ভাঙ্গিয়ে প্রায়ই কন্যাদের জন্যে চড়া দামের আসবাব, গয়না কেনা শুরু করেন। কনিষ্ঠ কন্যা বিচক্ষণ বুদ্ধি সম্পন্না। কদিনের মধ্যে বাবার জামাই বাড়িতে এই ‘দেনাপাওনা’ র খেলা ঠাহর করতে পারে। চৈত্র সেল? দামি পন্যের বদলে হালকা দাম। সাংসারিক বসতি?
লিনার এক সময় কলেজ ছিল বেথুনে। কলেজ পাড়া থেকে কখনো হাতি বাগান মোড়, কখনো আরও বারতি সময় থাকলে সাউথ এর গড়িয়াহাট। চৈত্র সেল এ কেনা গয়না লিনা সারা বছর আর পরবে কিনা বলা দায়। তবু ওই কটা দিন ভিড় ঠেলে, বুকের সামনে চওড়া ফাইল বর্মের মতো দিয়ে বেমালুম চলত সেল্ এর কেনা কাটা। এখন, লিনা ইংল্যান্ড এর কোন এক পাহাড়ি উপত্যকায়। লিনার দিদি নিয়ম করে ঠিক এই সেল্ এর সময় অসুস্থ হওয়ার ভান করে, বলতে চায় চৈত্র সেল এ কি আর যাব, ‘হাঁটুতে অমন বেদনা যে’!
ঋতু কে আপনাদের মনে আছে? সেই সাংবাদিক? চোখের তলায় ওর এক পোঁচ কালি? আর ওর জীবনের বারো তম প্রেম? প্রায় আধ বছর পর আজ ওর প্রেমিক এসেছে। মনে এক পলি দুঃখ, আর খামখেয়ালিপনা নিয়ে। বেড্ সাইড টেবিলে ঋতু র রাখা বাউল journal এর পাশে নিজের ছাইদানি টা । ওর জন্যে এতটা পথ শুভঙ্কর এসেছে সেটার ই ধন্যবাদন্তে ঋতুর অনেক না বলা কথা। কোন এক ঘন মুহূর্তে শুভঙ্কর নিজের পুরনো প্রেমিকাকে ভাবতে ভাবতে ঋতুকে প্রশ্ন করে ’কখনো হার্ট অ্যাটাকের মতো হয়েছে তোমার? আমার হয়েছিল ওকে দেখে। প্রথমবার! পুরনোর সুতো টেনে এনে কি হবে বল? নতুন পুরনোকে ভুলিয়ে দেয় , managebily’
ঋতুর চোখ ঝাপসা। পাশের আধপোড়া সিগারেট হাতড়ে পাওার চেষ্টা করছে। কোন দামি পন্য নিছকই সময়ের তাগিদে সেল্ চলে। চৈত্র সেল! ঠিক এই সময়। কম দামে বিকিয়ে দেই দোকানদার গুলো। আর আমরা ফুতি করে কিনি। জিতব বলে? কে জেতে? কি জেতে?
জয় বড় বেপরোয়া পুরুষ। বেপরোয়া অফিস, বেপরোয়া জীবন যাপন। এমন এক ব্যক্তির সাথে বিবাহ হয় ডাকসাইটে সুন্দরী ললনা সৃজার। রূপ বাদে সৃজার যা রয়েছে সেটা হল ক্ষুরধার ইন্টেলেক্ট। সে রন্ধন পটীয়সী। আর? আর ছিল তার লেখার হাত। তবে এই ললনা কি আর সংসার যোগ্যা? মানে সংসার করার যোগ্যা? অন্তত ভারতীয় ভাবনায়, না। জয় এমন স্ত্রী কে হারাতে চায় না। দামি সৃজা কে চৈত্র সেল্ এর মতো বেশ সহজ ভাবে বিবাহের মাধ্যমে পেয়েছে সে। রেশন লাইনের মতো প্রেমিকের লাইনেও তাঁকে দাড়াতে হয় নি। সৃজার জীবনে আদর খুব গৌণ হয়ে গিয়েছে বহু কাল। সেল এর মতো পাওয়া সৃজার একটু ‘নিভৃত যতনে’ আদর হলেই কেল্লা ফতে। আর জয় সেটা জানে!
ওষ্ঠ বাড়ির কনিষ্ঠ কন্যা। খুব ছোটবেলা থেকে ওষ্ঠ বুঝেছিল তার দিদির মতো লেখাপড়ায় ফাঁকি দিয়েও বাড়ির আহ্লাদি সে হয়ে উঠতে পারবে না। বাবা,মা, জ্যাঠা, কাকা প্রত্যেকের কাছে এমন হাড়ে পাঁজরে, এমন কি নিজের প্রেমের কাছে তাকে প্রমাণ করতে হয়েছে সে কতটা eligible। আর এমন টা প্রমাণ করতে করতে কখন যেন নিজেকে প্রমাণ করাটাই তার অভ্যেস হয়ে উঠল। এ হেন ওষ্ঠের মাঝ জীবনে এক প্রেমিক আসে। গণিতের প্রফেসর। ওষ্ঠের ত্বক, চুল, নাক কোন কিছু নয় কয়েক লাইন লেখনীতেই এই প্রফেসর তার প্রেম খুঁজে পায়। ওষ্ঠ কে আজীবনের প্রেম ভাবতে চায় এই প্রফেসর। কিন্তু ওষ্ঠ তো ফাঁপরে! কিছুই তো প্রমাণ করে নি সে নিজেকে! তাহলে কিভাবে এই প্রফেসর পড়ে ওর প্রেমে? অনেক দামি ওষ্ঠ সারা জীবনের বেচা কেনায় সেল এর দরে এধার ওধার হল যে! সেই চৈত্র সেল গেল কই! প্রফেসর অবুঝ না তো? ওষ্ঠ ভেবে যায়। সেল সেল সেল কোথায় গেল আমার চৈত্র সেল !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন