ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০১৯

কফিকথায় কবি অভিষেক কর



অনিমেষ- প্রথমেই জানাই তোমায় জলফড়িংয়ের কফিকথা আড্ডায় স্বাগত এবং তোমার প্রথম সন্তান "ক্লিভেজ ও কাউন্টার" জন্য অসংখ্য ভালোবাসা

অভিষেক কর-Thank you

অনিমেষ-এবার আড্ডায় আসা যাক দাদাই

অভিষেক কর-হ্যা বল

অনিমেষ-আচ্ছা তুমি কি মনে করো ফেসবুক যারা নিয়মিত লেখা বা যাদের ফলোয়ার আছে তারা ভবিষ্যতে কবি?

অভিষেক-দেখ আমার কাছে প্রথমত কবি হওয়া র কোনো নির্দিষ্ট criteria থাকে না, বা কোনো বায়োডেটা লাগে না বা যেকোনো একটা স্পেসিফিক বৈশিষ্ট থাকতেই হবে তেমন ও না।
কবি হওয়াটা অনেকটাই নির্ভর করছে তোমার লেখা কতটা পাঠকের মনে ধরা দিতে পারছে।
হ্যাঁ এবার যদি কেউ জিজ্ঞেস করে যে যেই লেখক বা যিনি লিখছেন তার যদি কোন পাঠক না থাকে তাহলে কি সে কবি নয়? দেখ একটা শিল্প তখনই তা পায় যখন তার একটা কনজিউমার ভ্যালু তৈরি হয়।
তাই আমার কোথাও গিয়ে মনে হয় যে আজকে যদি ফেসবুকে লিখেছে তার কবি না হওয়ার কোন কারন নেই,
তবে যথেষ্ট একটা পোটেনশিয়াল আছে পরবর্তী কালে গিয়ে আরো বড় মাপের পরিচিতি পাওয়ার জন্য।
ফেসবুকে একটা মঞ্চ যেখানেই একটা বৃহত্তর অডিয়েন্স পাওয়া যায়, আমরা আলাদা করে যে রকম একটা কবি সম্মেলনে আয়োজন করি বা কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান আয়োজন করি তেমনি আমার মনে হয় যে প্রত্যেকটা লেখক এখন রোজ বা প্রায় তার কবিতা ফেসবুকের মাধ্যমে উদযাপন করে।

অনিমেষ-তোমার কথা ফেসবুক একটা নতুন মঞ্চ যেখানে নিজেকে মেলে ধরা যায়

অভিষেক-শুধু তাই নয় নিজেকে প্রকাশ করা এবং নিজের প্রকাশ করা অনুভূতি আবেগ কিংবা কাজ নিয়ে অনেক বৃহত্তর মানুষের কাছে অনেক অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায়।

অনিমেষ-প্রসঙ্গত একজন সাধারণ মানুষ যে ফেসবুক সাহিত্যে চর্চা করে সে অংশুমান কর চেনে না কিন্তু অভিষেক কর কে চেনে এই বিষয় কিছু বলবে(প্রসঙ্গত)

অভিষেক- সাধারণ মানুষ আমিও।
ধৃষ্টতা না নিলে সাধারণ মানুষ জয় গোস্বামী ও তার কাছে, যাকে সে চেনে না।
অংশুমান বাবু কে চেনা আর তার পাঠক হওয়ার  মধ্যে বিস্তর পার্থক্য আছে, আমিও হয় তো ওনার সব লেখা পড়িনি। হয় তো কি, আমি নিশ্চিত আমি পড়িনি। তাই আমি ওনাকে তো তেমন চিনি না,
আমার একটা দুটো লেখা খুব বেশি কিছু মানুষ পড়ছে বলেই আমি ভালো লেখক হলাম তাই না। তবে হ্যাঁ আমি একটু বেশি সুযোগ পেয়েছি একটু বেশি অডিয়েন্স এর কাছে পৌঁছে যাওয়ার। এটা আমার ট্যালেন্ট নয়, বলতে পারিস আমি লাকি।



অনিমেষ- দাদায়  একটা কথা, তুমি বললে তুমি সুযোগ পেলে কিন্তু অংশুমান কর  আনন্দপুরস্কার পেয়েছিল আর কৃত্তিবাসের সহসম্পাদক,তাহলে কি শুধু শেয়ারের আর কমেন্টের ভিত্তি করে তুমি বলছো তুমি এগিয়ে।

অভিষেকঃ- আমি একবারও বলিনি কিন্তু এগিয়ে।
ভালো করে পড়ে দেখ।
আমি বলেছি আমি লাকি যদি আমাকে বেশি মানুষ চিনে থাকে ফেসবুক এ।
আর আমার কাছে সাহিত্যের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না তাই এগিয়ে, পিছিয়ে কেউ না।  আমরা সবাই চেষ্টা করি একসাথে লেখার। আর লিখে যাওয়ার। প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা ক্লাস টা ভীষণই আপেক্ষিক।


অনিমেষ-কফি টা ঠান্ডা হয়ে যাবে☕

অভিষেক -আচ্ছা মিষ্টি হাসির সাথে☺


অনিমেষ- আচ্ছা দাদায় এবার  কিছু টা তোমার নিয়ে কথা বলা যাক

অভিষেক- হ্যাঁ বল

অনিমেষ- আচ্ছা দাদাই আমরা সবাই জানি তোমার সমকামিতা নিয়ে লড়াইয়ের কথা

অভিষেক কর- হ্যাঁ

অনিমেষ-তোমার university লড়াই কেমন তা যদি একটু বলো

অভিষেক-দেখ প্রথমের দিকে ইউনিভার্সিটি কে খুব বেশি সহিষ্ণু মনে হয়েছিল।
যদি একটা ছেলে হয়ে  চোখে কাজল পরে, কানের পরা, একটু স্বাভাবিক থেকে বেরিয়ে পোশাক পরা সমকামিতার লক্ষণ হয়, তাহলে আমাকে প্রথমের দিকে এসব নিয়ে কোনো চাপ বা কোনো টিটকারী র সমুক্ষীন হতে হয় নি।
কিন্তু হঠাৎ পুলওয়ামা ঘটনার সময় আমার এক যুদ্ধ বিরোধী পোস্ট নিয়ে নোংরামি হওয়ার পর, আমাকে ইউনিভার্সিটি তে ভীষণ মারধোর করা হলো, তবে মারধোর করার সময় দুষ্কৃতীরা সেই ঘটনা নিয়ে কত কি বলেছে মনে নেই, কিন্তু আমাকে সমকামী হবার জন্যই বেশি আঘাত করে। আমার সেক্সুয়াল প্রেফারেন্স নিয়ে খিস্তি করে, একটি মেয়ে আমার গলায় ফাঁস দিতে যায়।
যখন ইউনিভার্সিটি অথরিটি অবধি কথা গুলো পৌঁছায়, আর আক্রমণকারী দের প্রশ্ন করা হয়, ওরা প্রথমেই বলে,
*আমি সমকামী তাই মেরেছে, আমি প্রকাশ্যে আমার সমকামী হওয়া নিয়ে  কথা বলি তাই মেরেছে। আমি সমকামী এবং আমাকে অনেকে ভালো বাসে আর সম্মান করে, তাই জন্য নাকি অনেকে প্রভাবিত হয়ে সমকামী হতে পারে। ওদের মতে সমকামী হওয়া টা একটা ট্রেন্ড, যেটা উচিত না।
আমার রুস্টিকেশন এর দাবি করা হয়।

অনিমেষ-আচ্ছা দাদায় সমকামী নিয়ে প্রচার করাটাই পছন্দ করতো না

অভিষেক কর-ঘটনা থিতিয়ে যাওয়ার পরেও আমাকে  এই গে, এই ছক্কা বলে ডাকা হতো আর এমনকি মারধোর করার পুনরায় হুমকিও দেওয়া হয়, ভোট এর আগে।
তা ছাড়া আরেকটা বড়ো বিষয় ছিল সমকামী হয় এ এত পরিচিত কেনো?
ওদের মতে সমকামী মানেই স্যান্ডি সাহার মতো খিস্তি খেতে হবে। সমকামী নিয়ে প্রচার আবার হয় নাকি!
যেমন তোরা প্রকাশ্যে একটা মেয়ে কে ভালোবাসা র কথা বলিস, বা ধর ইন্টারেস্ট দেখাস, আমিও বলি আমার একটা ছেলে কে ভালো লাগে । তবে ইউনিভার্সিটি তে আমার ওমন কাউকেই ভালো লাগে নি, বা অমন ভাবে মিশি নি।
সমকামী হলেই যে যেকোনো ছেলের উপর ঝাপিয়ে পড়বো, সেটা না।
আমাদের ও পছন্দ হবার একটা কিছু নির্দিষ্ট criteria থাকে।
আমি সবার ওপর ক্রাশ খাইনা।
আমি খুব কোন ক্রাশ খাই।সবথেকে বড় সমস্যা কি জানিস!
অন্য সাহিত্যিক বা অন্য সবাই কোনো একটা নির্দিষ্ট পরিস্থিতির সাপেক্ষে হেনস্থা হয়, আমি যেকোনো পরিস্থিতি তেই আমার জেন্ডার আইডেন্টিটি নিয়ে হেনস্থার সমুক্ষিন হয়।

অনিমেষ-আমরা আশা রাখি তুমি তোমার লড়াই এ অটুট থাকবে

অভিষেক-এটা আমার লড়াই কি না জানি না, তবে আমি কোনো চাপ এ পড়েই স্ট্রেট হতে পারবো না। ওটা আমার অপারগতা নয়, ওটাই আমার বায়োলজি

অনিমেষ-আচ্ছা দাদায় তুমি এমন 5 জন নবাগত কবির নাম বলো যারা এখন ফেসবুক কাঁপাছে

অভিষেক-Facebook কাপাচ্ছে!
আমি তো ভূমিকম্প ভয় পাই রে।
তবে নিজের পছন্দের কিছু লেখকের নাম বলতে পারি। তিন জন বলতে পারি প্রথমত
১ অভীক রায় আমার কবি প্রেম
২ অরুনাশিস শোম
৩ সুব্রত বারিষওয়ালা
৪ সূর্য সুরেলিয়া
৫ জয় জাহাজী

অনিমেষ-আচ্ছা এমনি অভিষেক কর আর কবি অভিষেক কর এর মধ্যে কে লড়াই বিশ্বাস করে

অভিষেক-আজ আমি কবি ( যদি হই) বলেই তোরা এসেছিস আমার সাথে কথা বলতে, তাই লেখক অভিষেক কর জিতে যায় বারবার,
কিন্তু ব্যক্তি অভিষেক রোজ লড়ছে, আর তারপর হাসছেও।

অনিমেষ-আচ্ছা ব্যাক্তি অভিষেক কর কোনোদিন ভেঙেছে, কেঁদেছে?

অভিষেক-ব্যক্তি অভিষেক কর ছোট থেকেই খুব sensitive,
তবে মান পাইনি সে বা তার আবেগ। কেউ তার মান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করে না সেই ভাবে। পরিচিত অভিষেক যত টাই importance পায়, ব্যক্তি অভিষেক তত বেশি কোণঠাসা হয় আত্মীয়ও বা কাছের লোকের কাছে।
ব্যক্তি আমি টি রোজ ভাঙি, রোজ একটু হলেও কাঁদতে হয়।
আমি নিজেও জানি আজ অনেক কাছের মানুষ আমার কাছে কারণ আমি জনপ্রিয় একটু হলেও।
নাহলে বিশ্বাস কর আমি লিখতে না জানলে, বলতে না জানলে হয় তো শুধুই কিছু টিটকারী বা অবজ্ঞার পাত্রই হতাম

অনিমেষ-আমরা চাইবো তোমার কষ্টের ইতি হোক।
নতুন কোনো বই বেড়াবে এবার তোমার।

অভিষেক-হ্যা আগামী বইমেলায়।।
সেই একই team।
প্রকাশক সৌরভ বিশাই, প্রচ্ছদ শিল্পী শুভেচ্ছা বৈরাগ্য , বার্তা প্রকাশনা,এবং আমি

অনিমেষ- তোমার কফিকথা কেমন লাগলো বলো

অভিষেক-দেখ এমন আড্ডা বা সাক্ষাৎকারের এর আগে বার কয়েকবর সুযোগ হোয়েছে।
তবে হ্যা তোরা ভীষণ আত্মীয়তা নিয়ে কথা বলেছিস, আর আমার এত বকবক সহ্য করার জন্য ধন্যবাদ তোদের।
ভালো থাকিস। এগিয়ে যা অনেক।

অনিমেষ-তুমিও ভালো থেকে দাদায় আমরা তোমার নতুন বইয়ের জন্য অপেক্ষায় রইলাম❤❤❤
ভালো থেকো

অভিষেক কর-আদরে বড়ো হোক সাহিত্য তোদের  লালনে। ভালো থাকিস।

অনিমেষ-ধন্যবাদ



রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৯

কবি রিফাত ফাতিমা তানসির কবিতা পড়ুন


১.)
  প্রতিচ্ছায়া

তোমার আঁখিতে ভেসে বেড়ায় উপচে পড়া এককৌটো জল
তোমার আঁখিতে উড়ে চলে গোধূলী বিকেলের সোনালি রোদ্দুর,,

তোমার হাসিতে উঁকি মারে হিন্দুস্থানী সুর মেঘমল্লার
তোমার হাসিতে বাঁধে বাসা গোফওয়ালা হ্যাটম্যান যাদুকর...

তোমার গ্রীবায় উঠে যায় অশরীরী রূপ রক্তাক্ত মারমুখো তেজওয়ালা শঙ্কু
তোমার গ্রীবায় ভর করে বাজি ধরে নরম তুলতুলে আদুরে লন্ঠন,,

তোমার ললাটে  মসৃন গালিচা অরুণ
তোমার ললাটে ধূসর আবেগী স্মৃতি রোমন্থন...

তোমার চাউনি দূর থেকে ছুড়ে মারা ঝকমকে লিটমাস পেপার
তোমার চাউনি ঘুম পালিয়ে কবিতা পড়া,,

তোমার ঘ্রাণেতে অসহ্য সুন্দর শাদা জাফরান শিউলি
তোমার ঘ্রাণেতে টলমল মাতাল চুরুট মাতোয়ারা...

তোমার আবদারে
মায়াবী মনোহারী আহ্লাদের বৃষ্টিবিলাস:

তোমার আবদারে
স্বপ্নপুরীর
নীলপরীটি আমি,,

তোমার রোমাঞ্চে-

বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের
একটি চাঁদের দেশ;

তোমার আমিতে
খেলা করে ক্ষণতরে
শুধু
আমার তুমি!


   


২.)
আবার একটা মিছিল হই

আমার বড় সাধ জাগে আবার একটা মিছিলে যোগ দেই,
আবার একটা মিছিল হই!
আর সমস্ত অন্যায়ের মস্তিষ্কে আগুনগরম পানি ঢেলে ঢেলে তাকে ভোঁতা থোঁতা বানিয়ে দেই!

আমার বড় সাধ জাগে আবার একটা মিছিলে যোগ দেই,
আবার একটা মিছিল হই!
আর দূর্নীতির হাত পায়ের শিরা-উপশিরাগুলো তার দিয়ে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে শক্ত বেঁধে বস্তায় ঢুকিয়ে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে চৌদ্দশিকের মোটা চালের ভাত খাওয়ায়!

আমার বড় সাধ জাগে আবার একটা মিছিলে যোগ দেই,
আবার একটা মিছিল হই!
আর লোভী লালায়িতদের লকলকে জিভটাতে ১০ নং সুঁই দিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে নির্লোভের এমব্রয়ডারি করে দেই!

আমার বড় সাধ জাগে আবার একটা মিছিলে যোগ দেই,
আবার একটা মিছিল হই!
আর চরিত্রহীনদের ভ্রষ্ট প্রগলভ চোখেতে প্রখর রোদে পোড়া কচকচে বালি ঢুকিয়ে তাকে অনন্ত অন্ধ করে দেই!

আমার বড় সাধ জাগে একটা মিছিলে যোগ দেই,
আবার একটা মিছিল হই!
আর ভন্ডদের ভণ্ডামো ভরা বুকের ওপর দৌঁড়ে উঠে গিয়ে বুটজুতো দিয়ে লাথি মারতে মারতে তার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াটাই বন্ধ করে দেই!

আবার একটা মিছিল হই!




৩.)
সেদিন

প্রথম কবে কোথায় দেখা হয়েছিল মনে করতে পারো?
দাঁড়াও, বলছি আমি..

কোনো এক শীতের আলো ঝলমলে বিকেলে...
মনমাতানো পরিবেশে জানা- অজানা পাখিরাও হঠাৎ তোমায় দেখে ভড়কে গিয়ে পালাতে লাগল আড়ালে..

ফুটন্ত কুঁড়িগুলো চুপসে গেল ফাটা বেলুনের মতো সব
প্রজাপতির দল অস্ফুটস্বরে বিড়বিড় করে আওড়াতে লাগল কল্পনাস্তব...

আর আমার কথা!
কী বলব!
মাথা থেকে পা পর্যন্ত আপাদমস্তক কথা কইছিল যেন তোমার আগমনের উত্তেজনায়..
চোখে চোখ, হাতে হাত, একটু পর তোমার কাঁধে মাথা রেখে অদ্ভুত স্বস্তির নিশ্বাস; পরম ভালোবাসায়...

তোমার সাথে জুড়ে থাকার ইচ্ছে ছিল যে খুব;
যেমনি করে প্রসূন
সাথে পাতা,
তেমনি করে বাঁধতে চাইলুম
রঙিন স্বপ্নগাঁথা...

সেভাবে রেখেছিলুম তো-
যেভাবে বিছিয়ে রাখে মাকড়সা জাল;
কিন্তু তুমি বোধহয় ভালোবাসার মানেটাই ধরতে পারোনি,
পারোনি বুঝতে অতল আমিটিকে..
বিভীষিকার অন্ধকারে তাইতো
পালিয়ে গিয়েছিলে চুপটি করে;
ফিরে দেখনি পেছনটা একটিবারও
কোথাকার হলো কী হাল!


শনিবার, ১৫ জুন, ২০১৯


- : "রা - স্বা " :-
  ~~~~~~~~~


~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বিষয় :- " শিশু শ্রমিক "
বিভাগ :- স্বরচিত কবিতা
তারিখ :-  ১৪ /০৬ /২০১৯
কবিতার শিরোনাম :- " মু সালানপুর কয়লা খাদানের বিদ্যাসাগর বাদ্যকর "
#কলমে :- রাসমণি সাহা দেবনাথ

ক'দিন ইস্কুলটোতে যাইতেটো পারি লাই,
বাপ রে বাপ ! তাই বইল্যে মিসটোর এ্যাত্তো রাগ?
আগুতেই বল্ল্যে আসিস নাই ক্যেনে ?
মু' তখনও দাঁত কেলিয়ে হাসতেটোছি...
সিটো দেখে তো মিসটোর আরও রাগ।
বল্ল্যে হাত পাত! মনে হতিছে দমে মারবেইক।।
হাতটো পিছুতে রেখেটো ছিলুম,
মিসটো জোর করে টেনে টো আনলে...
কড়া পড়া, কালশিটে ফোসকাওয়ালা হাত দু'খ্যান লুকাইববক কুথাকে ?
তা বাদে মিসটোর দু'চোখ জলে ভরে টো গেল।।
শাস্তি টো দিলে না, শুধু বল্ল্যে.. 'মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখ,
তোকে আদায় করে নিতে হবে সামাজিক সমাদর।'
বাপ বড় সাধ করে নাম দিয়েছিল বিদ্যাসাগর।।
না - না ই সি বিদ্দ্যের জাহাজ টো লই...
মু' সালানপুর কয়লা খাদানের বিদ্যাসাগর বাদ্যকর।।

বাপ টো রোজের মতো খাদানের নিচে কাজে গেল...
তিন দিন পর লাশ হয়ে উপরটোতে এল।
পুতুলের মতো ছোট্ট বুনু আর মাটো কে লিয়ে ,
সেই থিইক্যে মামার ঘরকে আছি পরাধীন টো হয়ে।
সক্কাল বেলাতে গোডাউনে পেল্লাই মাল লোডিংটো করি,
বিকেলে চায়ের দুকানে কামটো করি।
রেতের বেলায় মন দিয়ে পড়া লিখাটাও করি।।
কেলাস এ্যইটো তে পড়ি, পরীক্ষাতে ভালো পাশটো দি।।
মু একজন শিশু শ্রমিক, গায়ে গতরে খাটি।
আজ নাকি শ্রম দিবস, তাই মালিক দিলে ছুটি।।
ঘটা করে একদিন শ্রম দিবস পরব মানাইবার কি আছে বটে ?
মু'দের জগতটোতে নাই কো আলো, নাই কো আদর....
মু সালানপুর কয়লা খাদানের বিদ্যাসাগর বাদ্যকর।।

আইন তো ঠুঁটো জগন্নাথ আর কানা,
শত শত শিশুর শৈশব টো চুরি হতিছে, দেখতে টো পায় না।
কেউ বাঁধে বিড়ি, কারুর ঠিকানা কাঁচ কারখানা...
কেউ ইঁট ভাটায়, কেউ খাদানে, কেউ বা হয় কুলি।
সমাজের বুদ্ধিজীবীরা চোখে পড়ে আছে ঠুলি।।
সামাজিক শোষণের যাঁতাকলকে জানাই ধিক ধিক ধিক  !
গরব করে বলব মু একজন শিশু শ্রমিক।।
হি মু'রা গায়ে গতরে খাটি,
মু'দের ইজ্জত লিয়ে মু'রা বাঁচি।
মু'দের জগতটোতে নাই কুনো সমাদর।
মু' সালানপুর কয়লা খাদানের বিদ্যাসাগর বাদ্যকর।।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

                     

অজ্ঞাত
দালান জাহান

অজ্ঞাত সেই নারী
যাকে প্রথম দেখেছিলাম
একটি রক্তবর্ণ আপেলের উপর
জ্বলন্ত মোমের ফোঁটায় গলে গলে পড়ছে।
যে পালিয়ে এসেছিল
এক বর্ণিল শহরের সমস্ত সুন্দর জ্বালিয়ে
যার স্তনের বোঁটায় লেপ্টে ছিল
উত্তপ্ত সব বুলেটের খোসা।

শুধু মাত্র মানুষের ক্রন্দনে
প্রতিটি সিঁড়ির পাশে যে বসিয়েছিল
সশস্ত্র সৈনিকের কার্তুজ মাথা
ট্যাঙ্ক লরি পিস্টনের শব্দে
কেঁপে উঠেছিল যার হৃদপিণ্ড বুট।

অজ্ঞাত সেই নারী
যাকে দ্বিতীয় বার দেখেছিলাম
রক্তে-মোড়ানো কফিনের পাশে
আগুন-অন্ধকারে কেঁদে ছিলাম
আকাশে মুখ তোলে।

দালান জাহান
29/4/19

বুধবার, ১২ জুন, ২০১৯

Written by Kasturi das


The Coffin

That squeaky stinking old coffin,
That has long been kept aside
For the day of Valentine!
That coffin-
Which has been there amidst all the hatred
And arguments
For love to be crammed into it-
For there's still plenty of love left!

The green & gray death
Colours
That coffin anew
For mesmerizing procession...
But the coffin
Still squeaks and stinks!
The coffin is painted scarlet & saffron,
With the lice of life & civilization inside,
With a waving flag
Fixed with the peg on a corner,
It was the very last peg
Hammered by the old man of love...

The old man
Will be carrying the coffin
Across the world...
To show —
Love & infections co-exist inside...


The coffin is the way
We live,
The way we bear our life
For our life is the same old stuff
Bleeding, stinking, groping for love to cram
Into itself-
The coffin is the way of life!

সন্দীপের কলম পড়ুন


১.)
অভ্যাস

ধুলোমাখা স্মৃতিগুলো যখনি ফিরে পাই
দলা পাকিয়ে রাত নেমে আসে নিঝুম উপত্যকায়
ঘরে জ্বলতে থাকা রাতবাতি থেকে
আদুরে বেহাগ ঝরে পড়ে নরম ঘুমে
টুপ করে ঝিনুকটি ডুব দিলো
 নীলপরীর ডানায় ।

কিন্তু সকাল হলে আর এই স্বপ্নের কথা মনে থাকে না ।

২.)
জোনাকির গান 

তুমি ধানসিঁড়ির ঘাটে কাপড় শুকোবে বলেছিলে না ।

নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে সূর্যের ঢেউ
কেউ জানবে না অথচ তুমি আর
রাস্তার কুকুরগুলো অচেতন হয়ে ঘুমোবে এক বিছানায়।

বলোনা “ শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা ” ?

আমি কৌটো ভরে বিস্কুট এনে রাখবো ।।


৩.)
শেষ বেলায়

আসবে বলেছিলে তাই আমি ঘর গুছিয়ে রেখেছি
বইয়ের তাকে পরিপাটি সজ্জা  ।

তোমার পছন্দের রুম ফ্রেশনারের গন্ধে
দেওয়ালের গায়ে যেন ফুল ফুটেছে ।

মন দিয়ে জল দিচ্ছিলাম টবের চারাগাছে
বা সেকেন্ড গুনছিলাম এক এক করে  ।

শুধু বারান্দার আলো জ্বালাতে ভুলে গেছি বলেই
তুমি রাস্তা বদলে ফেলেছো  ।।


৪.)
এই বড়ো ক্লান্তির দিন 

এই ব্রহ্মাণ্ডের আমি কিছুটা জানি

যেমন – গরম চায়ে ফুঁ দিয়ে চুমুক দিতে হয়
প্রেমিকার মুখের উপর চুল উড়ে এলে
তাকে কানের পাশে সরিয়ে দিলেই হলো

খুসখুসে কাশিতে আদা তুলসীপাতা উপকারী
স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য আট ঘণ্টা ঘুমাতে হয়।

আর লেখা ফুরোনোর আগেই একদিন মরে যেতে হয়

এটুকই  ।



লেখিকা রাসমণি সাহা দেবনাথের কবিতা পড়ুন


১.)
সাম্যের জয় গান

সাম্যের বাণী উৎসারিত যুগ-যুগান্ত ধরে।

সাম্যরব হয়েছে প্রতিধ্বনিত বিশ্বের দরবারে।।


নবী হজরত প্রেমের বাণী বিলোলেন অকাতরে....

খোদার দুনিয়ায় সবাই সমান, ভিন্ন কেহ তো নহে?

জেরুজালেমের কুমারী মা মেরির ছোট্ট শিশু,

'ক্ষমা'-ই পরম ধর্ম শোনালেন ক্রুশবিদ্ধ যীশু!

মানবতার পূজারী তথাগত বুদ্ধ গাইলেন সাম্যের গান।

সন্ন্যাসী নিমাই উদার কণ্ঠে করলেন মানুষের জয়গান।।

রামকৃষ্ণ পরম হংসদেব দেখিয়েছেন ' জীব জ্ঞানে শিব সেবা '- র পথ।

স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগোতে বলিষ্ঠ কণ্ঠে বিশ্ববাসীকে দিলেন সাম্যের শপথ।।


কবি চণ্ডীদাস গেয়েছেন তাই...

' সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপর নাই '।

বিদ্রোহী কবি নজরুল তাঁর কলমে দিয়েছেন শান।

' গাহি সাম্যের গান,

যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধান '।।


তাহলে আজ কেন এত ছড়ানো হিংসার বীজ? কেন এত রক্তক্ষয় !

সুন্দর পৃথিবীর বুকে ক্রমশ বাড়ছে মূল্যবোধের অবক্ষয়।।

অবশেষে এটাই কি ছিল কাম্য ?

হায় রে মনুষ্য জাতি !! এরই নাম 'সাম্য' ?

অনেক পুণ্যের ফলে লাভ করেছি এ'মানব জনম।

এই নাকি আমরা বুদ্ধিমান জীব ? নেই কোন অনুতাপ, শরম !

ধর্মের নামে কেন হানাহানি, কেন এত বিদ্বেষ ?

জীবন একটাই, এসো হাতে হাত ধরে ভুলি সকল ক্লেশ।


সাম্য মানে,

মানুষে মানুষে সকল প্রকার বৈষম্যের অবসান।

সাম্য মানে,

মানুষের মধ্যে পারস্পরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, সমান সমান।।

সাম্য মানে তো তুল্যতা, সাম্য মানে সমতা।

সাম্য মানে দৃঢ় মানব বন্ধন, সাম্য হল একতা।।


২.)


মান বনাম হুঁশ 

প্রতিটা সংবাদ পত্রে এখন একটাই শিরোনাম।

বাদ যাইনি এফ এম রেডিও, টেলিভিশন।।

কম্পিটিশানের চক্র বূহ্যে

প্রথম স্থান দখলের যেন অ-ঘোষিত লড়াই!

ইঁদুর দৌড়ে অভ্যস্ত যান্ত্রিক নরকঙ্কাল গুলোকে টেনে

দল ভারী করতে রয়েছে

অভিনব কায়দায় এস. এম. এস - এর বড়াই।।


আশ্চর্য ! যারা জানতো না, তারাও

জেনে গেল, বলা ভালো

আলোড়ন জাগিয়ে দিল মিডিয়ার ফলাও।।

কিন্তু কী এমন ঘটল?

যার ফলে বিরাট একটা ঝড় বয়ে গেল !!


আজকের যান্ত্রিক সমাজে কেউ পাইলট, কেউ বা আইনজ্ঞ,

আবার কেউ ডাক্তার কিম্বা ইঞ্জিনিয়ার.....

সংকীর্ণ জীবনের দোলায় চড়ে,

অধিকাংশই যে মানবিকতায় একেবারেই অনভিজ্ঞ।।

তাই তো বুদ্ধিজীবীরা করলেন অর্থের বিনিময়ে স্থাপন,

আদর্শ মনুষ্যত্ব শিক্ষা - নিকেতন।

পঠিত হবে মানবিক গুণাবলী।।


ইতিমধ্যেই ব্যস্ত অভিভাবকগণ,

সন্তানদের জন্য ঢেলেছেন বিপুল ডোনেশন।।

ইন্টারনেটে করেছেন অগ্রিম বুকিং..

এ যেন বৈদিক যুগের উপনিষদের রি-মেকিং !!






৩.)
 মানবতার পূজারী 

হিমালয়ের পাদদেশে কপিলাবস্তু নগরে,

খ্রীঃ পূঃ ৫৬৭ অব্দে জন্ম নিলেন সিদ্ধার্থ, রাজা শুদ্ধোদনের ঘরে।

বিমাতা গৌতমীর স্নেহের পরশে...

বড় হলেন সিদ্ধার্থ প্রাচুর্যে, ঐশ্বর্যে।

মানব জীবনের দুঃখে যুবক সিদ্ধার্থ হলেন কাতর...

দুঃখময় জীবন রহস্য উন্মোচনে অগ্রগামী হলেন অতঃপর।


" বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি "...

নিরঞ্জনা নদীর সন্নিকটে প্রদ্যোষ কালে,

পরিব্রাজক সিদ্ধার্থ উপবিষ্ট হলেন অশথ্থ বৃক্ষ তলে।

ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও সর্বজনবিদিত  'বোধি বৃক্ষ ' নামে।।

একাগ্র চিন্তায় তিনি হলেন নিমগ্ন, হারালেন বাহ্য জ্ঞান...!!

ঘটল তাঁর সত্যোপলব্ধি, পেলেন জগৎ ও জীবন রহস্যের সমাধান।।


" বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি "....

" ধর্মং শরণং গচ্ছামি "....

মনস্থির করলেন, আত্মোপলব্ধির করবেন প্রচার।

তপুসা ও ভল্লুক বণিক দ্বয় প্রথম গৃহী শিষ্য তাঁর।।

সারনাথ নামক স্থানে বৌদ্ধ মতে পঞ্চ সন্ন্যাসী হলেন দীক্ষিত।

বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসে যা 'ধর্ম চক্র প্রবর্ত্তন ' নামে খ্যাত।।

গভীর তপস্যার দ্বারা লব্ধ জ্ঞানই হল ' চত্বারি আর্য সত্য'।

বৌদ্ধ ধর্মে ' নির্বাণ ' লাভই মানব জীবনের চরম লক্ষ্য।।

রোগ, শোক, ব্যধি, জরা থেকে পরিত্রাণের পথ ' অষ্টাঙ্গিক মার্গ '।

পঞ্চ শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা বৌদ্ধ ধর্মের তিনটি অঙ্গ।।


" বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি ".....

" ধর্মং শরণং গচ্ছামি "......

" সঙঘং শরণং গচ্ছামি "....

ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অত্যাচারে সাধারণ মানুষের প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত....!!

পরিত্রাতা রূপে আবির্ভূত হলেন তথাগত।

দিকে দিকে ছড়িয়ে দিলেন  'শান্তির ললিত বাণী'.....

উদার জাতিভেদহীন বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হলেন বিদ্বান, দরিদ্র, ধনী।।

তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন শ্রাবস্তীর মহাশ্রেষ্ঠী অনাথ পিণ্ডিক,,

ধনী বিশাখা, গণিকা আম্রপালী, চিকিৎসক জীবক, রাজা প্রসেনজিৎ।।


" বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি ".....

একবিংশ শতাব্দীতে আজও সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক ভগবান বুদ্ধ।

মানবতাবাদের মাধ্যমে বন্ধ হোক হানাহানি, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ।।

সমগ্র বিশ্বে ধ্বনিত হোক উদার বাণী...

" বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি "....।।





সোমবার, ১০ জুন, ২০১৯

সাক্ষাৎকার এক্সক্লুসিভ কন্ঠের রাজা






দাদা, জলফড়িং-এর পক্ষ থেকে তোমাকে প্রথমেই জানাই নমস্কার এবং ভালোবাসা।

শিল্পী রাজা দাসঃ- নমস্কার

১.) শুধু রাজা দাস থেকে শিল্পী রাজা দাস এই যে একটা শব্দ 'শিল্পী' বসল নামের আগে, তোমার কাছে এই ব্যাপারটার উপলব্ধি কেমন?


উঃ- এই তো প্রথম উপলব্ধি হল! আমি তো জানতামই না যে আমি শিল্পী। ধন্যবাদ তোমাদের!




২.)  আবৃত্তি কি ছোটো থেকেই করতে নাকি শুরুটা অন্যরকম ছিল?


উঃ- ফার্স্ট্ ইয়ার পড়ার সময় নাটকের প্রয়োজনে আমায় আবৃত্তি শেখানো হয়েছিল। কবিতার
   নাম “ছাড়পত্র”। তার আগে পাঠ্যপুস্তক ছাড়া কবিতা বলিনি কখনও।




৩.) আবৃত্তি কি শেখা যায়? তোমার মতামত জানতে চাই।


উঃ- না, তবে টেকনিক শেখা যায়। তারপর নিজের বোধ আর অভিজ্ঞতা মিশিয়ে মাইক্রোফোনটাকে চিনে অনুশীলন করতে হয়৷




৪.) প্রফেশনালি আবৃত্তি শিল্পী হবে এরকমটা কি আগে থেকেই ভেবেছিলে নাকি এই যাত্রার পিছনে কোনো গল্প আছে, সেটা যদি একটু বলো।


উঃ- না, ভাবিনি আগে। যখন অনেকেই প্রফেশনালি আমাকে যোগাযোগ করে কাজের জন্য, তখন
   ভাবতে শুরু করি যে আমার কাজ অনেকের ভালো লাগে



৫.) শিল্পী রাজা দাস কি মনে করেন, যে সব কবিতা আবৃত্তি হয় না?


উঃ- তার চেয়েও বড়ো কথা, সব কবিতা সবার আবৃত্তি করা উচিত নয় –এমনকি আমারও।






আমার প্রিয় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। তাঁর লেখা বলতে না পারলে কষ্ট তো হতই!

            





৬.) চোখ বেঁধে দেওয়া হলো তোমার,বলা হলো টেবিল থেকে  দুটো চিরকূটের মধ্যে একটা তুলে নিতে। তুমি তুললে একটা, যেখানে  লেখা আছে "শ্রীজাত"র কবিতা আবৃত্তি করো, পাশেই দেখলে পরের চিরকূটে লেখা ছিল "জয় গোস্বামী"র কবিতা আবৃত্তি করো, এখন তুমি কিন্তু সেটা তুলতে পারো নি। এবার বলো কোথাও কি তোমার মনে হচ্ছে ইস্ ওই চিরকূট টা যদি উঠত?


উঃ- এ তো প্রেমিকা বাছাই পর্বের মত হয়ে গেল৷ বাছাই পর্ব শেষ হলে মনে হবে আরে ওই
   মেয়েটিই বোধহয় বেশি ভালো ছিল, হা হা!


   প্রশ্নের উত্তরে বলি দুজনের কবিতাই খুব ভালো লাগে বলতে৷ আক্ষেপ থাকবে কেন? আমি
   জীবনে আক্ষেপ খুব কম করি৷


★ এবার তোমাকে এক কথায় উত্তর দিতে হবে।


প্রশ্নের নামঃ- [" তোমার ছোটোবেলা এবেলায় ভেবে দেখ ফের একবার কোনটা চাইতে "]

ক.) যখন তুমি ছোট্ট "রাজা" কোনটা চাইছ
সুকুমার রায়ে'র "ভয় পেওনা" নাকি "সৎপাত্র"


উঃ- ছোটোবেলায় কবিতা বলতাম না।




খ.) একটু বড়ো হলে 'রবিঠাকুরের' "প্রশ্ন" নাকি  "দুই বিঘা জমি"?


উঃ- একটু বড়ো মানে কতো! এইসব কবিতা শুধু পাঠ্য পুস্তকে পড়েছি৷




গ.) এবার বেশ বড়ো তখন 'সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের' "জিড়ো আওয়ার" নাকি "কেউ কথা রাখেনি"?


উঃ- ফার্স্ট্ ইয়ারের পরে প্রথম কবিতা যেটা বলতাম, সেটা “কেউ কথা রাখেনি”।




৭.) আবৃত্তি করতে  আবহসংগীতের প্রয়োজন কতখানি?


উঃ- আমি পছন্দ করি আবহ কবিতায় –এমনকি যখন একা থাকি কিংবা কোনো সুন্দর আড্ডায়,
আবহ আমার সর্বসময়ের সঙ্গী –ইনস্ট্রুমেন্টাল মিউজিক। তেমনি কবিতা বলার সময় আবহ
   থাকলে বলতে ভালো লাগে।




৮.) একটা লেখা আবৃত্তি করার পূর্বে তুমি সেটাকে আপন করে নাও এটা আমরা জানি। তারপর তোমার আর কতখানি প্রিপারেশনের প্রয়োজন হয় সেটাকে মঞ্চস্থ করার জন্য?


উঃ- আপনমনে আনন্দে রান্না করে খেয়ে নিলাম আর বন্ধু এল, তাকে সুন্দর করে সাজিয়ে পরিবেশন করলাম –ওটুকুই করি কবিতার বেলায়।



৯.) অনেকেরই লেখায় তো আবৃত্তি করো তুমি, তবে তার মধ্যে এমন একজন প্রিয় লেখক কি আছে তোমার মনে, যার লেখা না আবৃত্তি করতে পারলে তোমার কষ্ট হতো?


উঃ- আমার প্রিয় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। তাঁর লেখা বলতে না পারলে কষ্ট তো হতই!




১০.) এফ.এমের কাজ ঠিক কোন সময়টা থেকে শুরু করেছিলে এবং সেই সুযোগ কিভাবে পেয়েছিলে?


উঃ- ২০০৭-এ শুরু। একটি বিজ্ঞাপন বেরিয়েছিল, অ্যাপ্লাই করেছিলাম। ঘটনাচক্রে একজন ছেলেকেই নেওয়া হয়েছিল, সেটা আমি।





১২.) বেশ কিছুদিন তোমাকে আটকে রাখলাম, তোমাকে আবৃত্তি করতে দেওয়া হবে না।
সেই সমস্ত দিন তুমি কিভাবে কাটাবে?


উঃ- বাহ্! সেইদিনটা কবে থেকে শুরু হবে? ততদিন নাহয় আমি স্পনসর খুঁজি।





১৩.) অনেকে বলে গলায় সুর না থাকলে গান হবে না, আবৃত্তির জন্যও কি এরকম কোনো ব্যাপার আছে?


উঃ- আমার মনে হয়, গান হোক বা কবিতা, বোধ না থাকলে কোনোটাই হবে না।




১৪.) অনামী কোনো কবির আবৃত্তি করেছ, ধরো সেই কবি কোনো পুরস্কার পাননি বা স্বীকৃতি পাননি তাও তুমি তাঁর কবিতা আবৃত্তি করলে। নাম বলতে পারবে?


উঃ- বিশিষ্ট কবিরাও ঠিক কী কী পুরস্কার পেয়েছেন আমার জানা নেই। একটু জানিও। আমি শুধু এটুকু জানি এখনও অবধি আমি হাজার তিনেক নতুন কবির কবিতা আবৃত্তি করেছি।




১৫.) এই শিল্পী জীবনটা বেছে নিতে তোমার কোনো প্রতিকূলতা এসেছে বাড়ি থেকে?


উঃ- শিল্পী জীবন এখনও ঠিক তৈরী হয়নি, যেদিন হবে, আমি বলতে পারবো৷




১৬.) এখন অনেক শিল্পী আবৃত্তি করেন আবার তুমি অনেকের প্রিয় শিল্পী। তোমাকে যদি বলা হয় এতো শিল্পীর মাঝে কেন তুমি প্রিয়। তুমি কি উত্তর দেবে?


উঃ- মনে হয়, যেহেতু আমি বিশেষ কিছু জানি না, তবু আমি প্রিয় অনেকের কাছে –এই ব্যাপারটাই বোধহয় আমাকে প্রিয় করে তুলেছে অনেকের কাছে। আবার একই জিনিস অপ্রিয়ও করে৷ শুনছি অনেক -ও আর কি বা জানে!



১৭.) তোমার আবৃত্তি জীবনের সেরা কোনো স্মৃতি যা তুমি আজীবন মনে রাখতে চাও।


উঃ- রবীন্দ্র সদনে প্রথম একক -৪ঠা আগস্ট্, ২০০৯।





★[পছন্দ তোমার]★



১.) প্রিয় রঙঃ- কালো

২.) প্রিয় ঋতুঃ- শীত

৩.) প্রিয় আবৃত্তি শিল্পীঃ- একজন নয়, অনেকেই।

৪.) শিল্পী রাজা দাস যে রাজার কবিতা স্টুডিওর প্রধান । তোমার চোখে সে কিরকম ?


উঃ- প্রধান হিসেবে যার এখনও অনেক কিছু শেখা বাকী।


৫.) আবৃত্তি জীবনে তোমার কোনো আক্ষেপ?

উঃ- এখনও আমি যা চাই, সেইরকমভাবে প্রকাশ করতে পারিনি কবিতাকে।


৬.) এমন কোনো ইচ্ছে যেটার জন্য তুমি অপেক্ষা করছ?


উঃ- হ্যাঁ, কিছু ডাক পেতে তো ভালোই লাগবে৷

৭.) তোমার চোখে তোমার মা?

উঃ- আমার জেদ আর শক্তির উৎস৷

৮.) এখন এই বয়সে একটা সন্ধ্যে তারার নীচে গ্রীষ্মের ছাদে বসে আছো। তোমার "রবিঠাকুরের" আবৃত্তি মনে পরছে বারবার মনে পরছে,তুমি যেন শুনতে পাচ্ছো "হারিয়ে গেছি আমি" নাকি মনে পরছে "জয় গোস্বামীর" লেখা "হৃদী ভেসে গেল অলকানন্দা জলে"!

উঃ- সত্যি বলবো? আমি আমার কোনো অবসরেই কবিতার সঙ্গে কাটাই না, ওকে আমি দূরেই রাখি৷

৯.) তোমার চোখে উর্মিমালা বসু?


উঃ- চিরকালীন “বিভা”৷


১০.) এই পৃথিবীটাকে কীরকম দেখতে চাও?


উঃ- “চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির”৷



    ------------ধন্যবাদ-------------

★সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জলফড়িং ওয়েব ম্যাগাজিনের ইন্টারভিউ সেকশন এডিটর সুদীপ্ত সেন(ডট.পেন)।

** তুমি জানোনা **

বিষাদের কাছে নির্জন হতে বসেছিলাম
সে ভালোবেসে জাপটে ধরে বুকে
তারপর বিষবৃক্ষের অরন্যে
আমি ঠিকানাহীন টিকিট ।

দেখোনি কোনোদিন নিঃশব্দের মুখ
আত্ম-বৃত্ত গুলির পরিবর্তন সম্ভব কোনোদিন ?
তাহলে কিভাবে ভেবেনিলে তুমি নুড়ি কুড়োবে
বিষাদ কে অতিথি ভেবেছিলাম ।

সে আজ সহচরী
তুমি জানোনা ।
                                  

বুধবার, ৫ জুন, ২০১৯



তোকে ছাড়া

সায়ন দাস
ইতিহাস ও বাংলার ছাত্র

এখন মনে পড়ছে সেই তোর হাসি মাখা মিষ্টি মুখ
 অপেক্ষায় আছি তোর উদ্যম মুখে সেই মন মাতানো সুখ।
এখন মনে পড়ছে তোর সেই তোর হাসি মুখ
নীল জামার ছবিটায়, 
এখন খুঁজছি তোর অবচেতন মনের সেই বার্তা-
এখন ভাবছি তোর সেই বার্তার মধ্যে কথা।
তোর চুপ থাকায়, স্মৃতিগুলো পাগল করে দেয়।
এখন দেখছি ফুলে ফুলে প্রজাপ্রতির মত দেখি তোর চলাফেরা,
ভ্রমর হয়ে মন তোর খুঁজছি দিশেহারা।
এখন ভাবছি তোর ফিরি কালো কেশির মিষ্টি চোখের ভাষা।
এখন স্বপ্নে আমার ঘরে তোর যাওয়া আসা।
তোর হাসি মুখ আমায় বোঝায় না, নিশ্চুপ থাকা-
বোঝাতে চাইছি মনকে, তবু মন বুঝছে না, তোর নিশ্চুপ থাকা।
তাই নীরবে ঝরে অশ্রু মানে না কোন বাঁধা।
এখন হন্য  হয়ে বসে আছি তোর বার্তার অপেক্ষায়।
হয়তো। হঠাৎ নিভে যাবে, হঠাৎ জ্বলে উঠা প্রেমের রঙ্গিন বাতি।
হবেই বা না কেন, আমি আজও বলতে পারিনি যে- 
আমি শুধু তোকে ই ভালবাসি।
কি করি ভালবাসি বললে, যদি না থাক, সেও বলতে পারছি না যে... 
এখন উল্টিয়ে দেখছি ক্ষুদ্র জীবনের সব গুলোপাতা স্মৃতি, হয়তো সারাজীবন না বলা স্মৃতিই ভেবে যেতে হবে।
তোকে নিয়ে লেখা হয়ে গেল শত কবিতা।
এখনও তোকে নিয়ে লিখছি যত 
আধো মরা তোকে ছাড়া খুঁজে বেড়ায় প্রাণ।
দেখি কতদিন ভেবে যেতে পারি, এখন ভাবছি কবিতা নয়, এবার থেকে লিখব আরো রো গান।।

বিষয়--বৈপ্লবিক দামামা**
এ কোন স্বরাজ****
মোনালিসা নায়েক***
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য উদযাপন করলেই কি
তাঁদের উদ্দেশ্য স্বার্থক হবে? 
ঐতিহাসিকের পাতায় শুধু বেঁচে আছে রক্তবিন্দুর প্রতিদান,

জীবনবোধের আলো তো এখন ও অন্ধকারে,
বিবাদের আবাদে দেশ মেতেছে সন্ত্রাসে!
আত্মমগ্ন ভোগবিলাসী সমাজে অরাজকতার ঢেউ,
মেধাবী কৌশলে সভ্যতায় নগ্নতার প্রকাশ;
এসব দেখে অবাক লাগে
নিছক -ই ঘটা উদযাপনের,
তাঁদের স্বপ্নে দেশবাসীর মিথ্যে পণ,
দীপ্ত প্রদীপ শিখা লালসার আগুনের আঁচ-
মহত্ব হারিয়ে টিকে আছে খান্ডবদহন,
সর্বহারা মানুষের স্বাধীনতা বৈষম্যের পাতায়!
সমাজ কি দিতে পেরেছে ভালোথাকার অধিকার?
এইভাবে কি শ্রেষ্ঠ জাতির শিরোপা রক্ষা হয়?
মোনালিসা নায়েক।
আরামবাগ।
হুগলী।
পশ্চিমবাংলা।
ফোন-৯৬৪৭৫৫৭৪০৯।
 অনুগল্প:বেলা-অবেলার গল্প
**************************
কলমে : তন্মনা চ্যাটার্জী

তিথি আজ "অধ্যায় পুরান" পড়তে গিয়ে কেমন যেন নিজের জীবনকে মিলিয়ে নিচ্ছিলো প্রতিক্ষণে।।গল্পের চরিত্রগুলো ভীষণ চেনা।ভীষণ কাছের।। পড়তে পড়তে তিথি যেন কখন পেরিয়ে যাচ্ছিল পুরোনো সময়।।গল্পের অধ্যায়ের ছত্রে যে অনুরণন তাতো ভীষণ চেনা।।শুধু শেষটা অন্য হতে চেয়ে একটা এক অদ্ভুত ভাবনায় ভাবিত করে তিথির কল্পনার জগৎকে।।শেষ করে গল্পের সবটুকু অধ্যায়।।এদিকে কখন ঘড়ির কাঁটা বিকেল ছুঁয়েছে বুঝতেই পারেনি সে।। অনেক প্রশ্ন রেখে গেলো গল্পের শেষটা আর প্রধান দুই চরিত্র !! তিথির মন অচেনা অথচ ভীষণ জানা আরেক গল্পকারকে চিঠি লিখতে বসে ।। আজ শুধু তার মনে বহুপ্রশ্নের ঝড় ,তবু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন তার প্রিয় গল্পকার কি এভাবেই আত্মপ্রকাশের একটা সময় খুঁজছে !!নাকি চিরতরে আত্মগোপনেই কাটাবে তার নিরলস শব্দচর্চা!!
চিঠিটা পাঠানো হয়না আজও।।তিথি তো ঠিকানাটাই খুঁজছে পুরোনো ডাকবাক্সের বন্ধ ঘরে!!হঠাৎ কোনো দমকা হাওয়ার অপেক্ষায় তিথি তাকায় জানলার বাইরে।। বাইরে তখন সন্ধ্যা নামছে।।দূর থেকে ভেসে আসে শঙ্খধ্বনি।। ইচ্ছেশক্তিকে সঙ্গী করে একবার চোখটা বোজে তিথি।।অভ্যাস অথবা প্রবল বিশ্বাসে।।




: অবগাহন
**********
কলম:তন্মনা চ্যাটার্জী

   প্রথম দেখা হওয়ার স্মৃতিরা ওদের দুজনের মধ্যে আজও অম্লান।। ওরা তমসা ও দীপায়ন।।  একটা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথম আলাপ, তারপর বন্ধুত্ব।। ওরা দুজনেই ছবি আঁকতে আর লিখতে ভালোবাসে।। তমসা ছবি আঁকলে দীপায়ন মিলিয়ে লিখে দিত কবিতা ।।খুনসুটি আর সখ্যতায় কেটে যাচ্ছিল বেশ।।দুজনে মিলে ঠিক করছিল একটা ছবি-কথার প্রদর্শনীর আয়োজন করবে, আর এভাবেই একে অপরের সাথে কাটাতে কাটাতে ওরা জড়িয়ে পড়েছিলো কোনো এক নাম না জানা সম্পর্কের বন্ধনে।।
   কিন্তু কিছুদিন যাবৎ তমসা লক্ষ্য করে দীপায়ন বেশ কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখছে।। কথাই বলে না।।অনেক জিজ্ঞেস করেও কোনো উত্তর পায় না তমসা।।বুঝতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।।

    তারপর হঠাৎ একদিন দীপায়ন একটি ঝড় জলের রাতে তমসাকে ম্যাসেজে জানায় "যোগাযোগ করিস না আর আমার সাথে।।দেখা করাও সম্ভব নয়।।ভালো থাকিস।।"  তমসার চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসে।।বহুবার ম্যাসেজ করেও উত্তর পায় না সে।। কি করবে বুঝে উঠতে পারে না।। সকাল হতেই বেরিয়ে পড়ে।।দীপায়নের বাড়ী পৌঁছে দেখে সেখানেও তালা লাগানো।।উদ্ভ্রান্তের মত রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ছে।। একবার সবটুকু সমস্যা আলোচনা করা যেত না ? দুজনে মিলে মোকাবিলা করার একটা চেষ্টা কি করা যেত না? এসব ভাবতে ভাবতেই সন্ধে নামে।। বাড়ি ফেরে তমসা।। সবটুকু ভালো থাকা যেন এক নিমেষে হারিয়ে গেছে ঠিক দিপায়নের মতই।।

   এতগুলো বছর পর মুখোমুখি বসে সবটা যেনো আরও একবার নতুন করে মনে পড়ছিলো দুজনেরই।।নিঃশব্দে আরও কাছাকাছি এসে বসে দুজন কাছের মানুষ।। ওষ্ঠ ছুঁয়ে যায় অধর।।তিন বছর পর প্রথম চুম্বন করেছিল দীপায়ন আর তমসা,অতর্কিতে।। অপাপবিদ্ধ আলিঙ্গনে জড়িয়ে ঠোঁটের ভেতর ঠোঁট গুঁজে চোখ বুজে অনুভব করেছিল দুজনকে।। পুরোনো অভিমানগুলো দূরেই থাক -এটাই বলছিল দুটো মন।। কারণ, কখনও বলা হয়নি কতটা ভালোবাসে ওরা দুজন দুজনকে ।। ভালোবাসা কি ওভাবে মাপা যায় না কথায় ব্যক্ত করা যায়।।আর কখনও ওরা তো মুখ ফুটে বলতেও পারবেনা সবটা অনুভবের কথা ;আর কোনোদিনও...... কারণ ওরা দুজনই মুক ও বধির।।

***************************************************
: বিকেল গুলো আর আসে না 
---------------------------------------
কলমে # সোনালী নাগ
-----------------------------------------
অনেক গুলো স্কুল ফেরত সূর্যডোবা বিকেল তোমার কাছে বাঁধা। 
খুব সিরিয়াস মেয়েটাও সে বসন্তে "রাধা"।
অনেক গুলো পড়ার শেষে খালি রাস্তার খোঁজে - 
একটু ছোঁয়ায় শিহরণ হঠাৎ আঙুলের ভাঁজে! 
অনেক গুলো নিয়ম ভেঙে শাসন রীতিমতো 
ঝগড়া গুলো অকারণে যখন তখন আসতো অবিরত। 
অনেক গুলো সন্ধ্যা এলো খুব ভয়ানক একা 
বুকের মাঝে নরম আদর, আহ্লাদী সুর - - 
'ভীতু মেয়ে, তুই একটা বোকা' 
অনেক গুলো জেগে থাকা রাত, চাঁদের অহংকার 
তোমার অট্টালিকা মজা করে, আমার তখন কুঁড়েঘর! 
স্কুলের শেষে হাত ছেড়ে যায়, এবারেও" নরেশ সেন" 
শরৎবাবু ও নেই এখন, মালতি তাই একাই লড়ে, সাথী কে আর হবেন? 
অনেক গুলো রূপকথা শেষে এবার আষাঢ় এলো 
বিয়ের টোপর জোড়ে দেখি মানিয়েছে বেশ ভালো। 
তোমার ডাইরি লেখা, চিরকুট প্রেম আর খুচরো যতো আবেগ, 
বলেছ নতুন মানুষটাকে? 
যে তোমাকে বুকের মাঝে এখন আগলে রাখে। 
চিঠিতে এবার পাঠিয়ে দেবো ঠিক করা সেই নাম - 
ছেলে হলে প্লাবন দিও, মেয়ে হলে বন্যা, 
কি গো এই টুকু তো দিতেই পারো ভালোবাসার দাম। 
তোমার না হয় সত্যি হলো স্বপ্ন দেখা ভোর, 
আমারটা থাক দিবাস্বপ্ন, আর থাকুক আবেগ নামের একটা মারণরোগ, 
স্কুল ফেরত বিকেল গুলো এখন উধাও শহরে, 
ট্রামের সারি আর আসে না আঁচল উড়িয়ে। 
অনেক গুলো স্বপ্ন ভেঙে এবার একলা হওয়ার পালা, 
তোমার জন্যে সোহাগ রেখে, আমি নিলাম অবহেলা।
 






সংসার সুখের হয় --------------
--------------------------------------
কলমে # সোনালী নাগ 
-----------------------------------------

বাইরে শুধু লড়াই সে নয়, 
সেতো অন্দরে তেও আছে, 
দাপুটে মেয়েও  নিজের ঘরে ভয় তাড়িয়ে বাঁচে, 
চরিত্র নিয়ে টানাটানি হয়তো খুবই সোজা, 
মেয়ে মানেই টানা পোড়েন, 
মেয়ে মানেই বুঝি বোঝা, 
মুখোশ গুলো খুব আপনার, 
হয়তো প্রিয়জন 
বিশ্বাসে যে  বিষ ঢালা আছে, 
তা বোঝে কি মন? 
শাড়ির আঁচল আর 
পোশাকে মেয়ের নাকি মরণ, 
বলো তবে দুধের শিশুর রক্তযোনি,
কি তার কারণ? 
ইচ্ছে ক'রে গুঁড়িয়ে ফেলি দাঁতের গোড়া যত, 
ইচ্ছে করে মুখোশ টেনে হিঁচড়ে আনি  
দিনের আলোয় ইচ্ছেমত, 
অষ্টমীর মা যখন জাগছে মনে মনে, 
কানের কাছে কে বলে যায় -----
"সংসার সুখের হয় রমণীর গুনে "
আর তারপর, 
তারপর তো সবই জানা, 
মেনে নেওয়া মানিয়ে নেওয়া বেদ বাক্য যত, 
নিজেকে বুঝিয়ে চলা দিনে রাতে রীতিমতো, 
দূর্গা কে তাই বছর ভর আসনে তুলে রাখা 
স্বর্গ থেকে নেমে আসা,  
চমৎকারের আশায় বেঁচে থাকা !!!
বস্তা পঁচা এঁদো কথার জাল বুনে যাওয়া মনে 
বদলে নিয়ে লেখো দেখি ----
সংসার সুখের হয় রমনীর খুনে !!!!





রাজকন্যের গপ্পো 
==============
সোনালী নাগ 
--------------------------

কথার টানে কথার পাহাড়, 
কাছে কিংবা দূর, 
রূপকথাতে ছুঁয়ে দেখা নদী সমুদ্দুর !!
রাজকন্যা দৈত্য দানব পক্ষীরাজের দেশে
রাজারকুমার দাঁড়ায় এসে  অন্ধকারের শেষে !!
দুয়ো রানীর দুঃখ থাকুক, সুয়ো রানীর সাধ, 
মন্ত্রী কোটাল হাতিশালের গল্প থাকুক অবাধ !
নটে গাছটা বাঁচুক আরো, বাঁচুক ছেলেবেলা, 
তবু সত্যি ছিলো সে আজগুবি গল্প গুলোর মালা 
মায়ের আঁচল হারিয়ে দেখি, হায় -জীবন নাট্যশালা !!
বড় হবার তাগিদ তাতে মনটা ছোটো হয়, 
অশুভ সব শক্তি গুলো জাঁকিয়ে বসে
 আর  জীবন বয়ে যায়, 
কোন পুকুরে ডুব দেবো? কোন গুহাতে তাকে পাবো? 
মাকড়সার জালে বন্দি, গুমরে মরি তায়, 
দৈতটার প্রাণভোমরা খুঁজে পাওয়া দায় !!
আকাশ কালো সূর্য উধাও এক গ্রহণের ফাঁদে, 
একটু আলোর খোঁজে তাই সকাল সন্ধ্যে এখন জানো,  রাজকন্যা কাঁদে !!!
হঠাৎ সেদিন
সৌমেন দাস

যেদিন তোর কবোষ্ণ বুকে
রেখেছিলাম প্রথম হাত,

বুঝেছিলাম
ঘনিয়ে এসেছে রাত,

বাড়ি ফিরতে হয়েছিল হঠাৎ ...!




 অন্য মোহনা
সৌমেন দাস

একবার ফিরে আয়
দেখবি বারান্দা জুড়ে সেই চেনা গন্ধ
বাগানে এখনও পিউলিরা হাসে
এখনও ছাদের ওই কোণটাতে ঠিকরে পড়ে বিকেল রোদ্দুর
আর ওই বেহায়াটা সকাল-সন্ধে ডাক দিয়ে যায়
পিউ কাঁহা পিউ কাঁহা পিউ কাঁহা পিউ ...

একবার ফিরে আয়
শুধু একবারটি
দেখে যা-না কতই সুখে আছি
ভরা সংসার, টবের মানিপ্লান্ট
আর ওই বেহায়াটাকে নিয়ে ...

তবু
শুধু একবার ফিরে আয়
আমার সঙ্গে এক অন্য মোহনায় ...
 এক বুক আকাশ
 ~~দ্বৈপায়ন চ্যাটার্জী

জানালার ধারে বসে বৃষ্টির কথা ভাবছি,
সে আসবে বলেছিল,এখনো তো এলোনা!
আমি একমনে ভেবে চলেছি ,
হঠাৎ তুমি আসলে,
বৃষ্টির আসার কথা ছিলো,
তুমি এলে,
দেখো আমার চোখে বৃষ্টি নেমে এলো ,
অপ্রত্যাশিত মূল্যবান জিনিস হঠাৎ পেয়ে গেলে বুঝি এভাবেই বৃষ্টি নেমে আসে চোখে!
আমি আকাশের বৃষ্টির অপেক্ষায় সারা সন্ধ্যে কাটিয়ে দিলাম,
বৃষ্টি এলোনা,
তুমি এলে,দেখো বৃষ্টি নেমে এলো।
আমার কাছে এসে আমার চোখ মুছলে,
তোমার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন,
তুমি অদ্ভুত সুন্দর,
তোমার ওই আঁখিপটে সত্যি ই কি আমারই নাম লেখা আছে,
নাকি অজস্র সৌন্দর্য্যের মাঝে আমি বিলীন!
দুজনে এসে বসলাম পাশাপাশি,
হঠাৎ করে তোমাকে পেয়ে ভুলে গেছি আকাশের কথা,
ভুলে গেছি বৃষ্টির কথা,
ভুলে গেছি মেঘেদের কথা!
তুমি এত সুন্দর,
আদর চাইনা আজ,
সে তো অনেক দামি,
শুধু তাকিয়ে থাকতে দাও,
যেমন করে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম বৃষ্টির আশায়!
তুমিতো আমার আকাশ,
এক বুক আকাশ!





সে বসন্ত আজও আসেনি
     দ্বৈপায়ন চ্যাটার্জী

সে বসন্ত আজও আসেনি
যে বসন্ত আমার ঘুম ঘুম চোখে চুমু এঁকে দিত,
সে বসন্ত আজও আসেনি।
যে বসন্ত আমার ঠোঁটে আঙ্গুল ছুঁয়ে নিষিদ্ধালাপে বাঁধ সাধতো,
সে বসন্ত আজও আসেনি।
যে বসন্তের রোদের চাদর বিছিয়ে দুজন বসতাম সংগোপনে,
সে বসন্ত আজও আসেনি।
কতো বসন্ত এলো গেলো,
সে বসন্ত আজও এলোনা।
সোনা ছুঁয়ে দিলে ফুল হয়ে যায়,
এমন বসন্তেরা আজও এলোনা।
তারা কি আসতে চায়না!
নাকি তাদের আসতে দেয় না ,
নাকি মাতাল করে রাখে কোনো একান্ততায়!
যাতে পোড়া গন্ধের সাথে মিশে নিজেকে গন্ধহীন না করতে পারে!





নয়ন মেলে
দ্বৈপায়ন চ্যাটার্জী

নয়ন মেলে চেয়ে যে দেখি,নেইগো তুমি হেথা,
পাগল পারা মন যে আমার বৃথাই খোঁজে সেথা,

আকাশ কুসুম ভাবি আমি, অপার যে তার ক্ষেত্র,
সর্বনাশা খিদে আমার ,নয় গো  অল্পমাত্র।

আসবে তুমি হঠাৎ করে এমন মন্ত্রবলে,
সাত টা সাগর পার করবে,সে এক ছলে বলে।

দেখব তোমায় তৃপ্তি করে দু চোখ ভরে ওগো,
একটু না হয় তোমার প্রতি ক্রুদ্ধ আমি হবো।

বলবো তোমায়,ছিলাম আমি মন খারাপের দেশে,
আসতে দেরি করলে কেনো, আমায় ভালোবেসে।

কপাল ছুঁয়ে ঠোঁট দুখানি বলবে তুমি ওগো,
"রইব পাশে এবার থেকে,এবার হাসো, হ্যাঁ গো?"

ঠোঁট ফুলিয়ে মিথ্যে করে, করবো কাঁদার ভান,
আদর করে গান শোনালেই ভাঙবে অভিমান।

আদর টুকুর স্পর্শ পেলেই, তখন  আমি স্বাধীন,
বান ভাসাবো অঙ্গে তোমার,রাত হোক বা দিন!
 #খুব_খুশি
#মুনমুন_মুখার্জ্জী

মালা পড়াশুনা জানে না, লোকের ঘরে বাসন মেজে, রান্না করে কিছু রোজগার করে। খুব ছোটতে মা মারা যাওয়ায় বাবা আর স্কুলে যেতে দেয় নি। তারা যে বাউরী। তাদের পড়তে নেই, দিদির কাছে কোনো মতে সাক্ষর করতে শিখেছিল। প্রেম করে বিয়ে করে তখন খুব বেশি হলে ১৫ বছর বয়স। ছোট থেকেই বাংলোতে কাজ করত। বিয়ের পর বর কাজ ছেড়ে দিতে বললেও ছাড়ে নি ও। ও জানে মেয়েদের হাতে নিজস্ব টাকা থাকা খুব দরকার। একটা ফুটফুটে মেয়ে হয় মালার।মালা তাকে অনেক বড় করার স্বপ্ন দেখে। মেয়ের ইস্কুলে বোর্ডে কি লেখা থাকে বুঝতে পারে না যখন মালার খুব লজ্জা লাগে। মেয়েকে যেন সে রকম লজ্জা পেতে না হয় তাই ওকে প্রায় বোঝায়। কিন্তু মেয়ের বাবা চায় না মেয়ে শিক্ষিত হোক। সে মনে করে মেয়েরা শিক্ষিত হলেই বাজে হয়ে যায়। তাই মেয়ে যখন পড়তে বসে সে মোবাইলে জোরে গান চালিয়ে দেয়। বেশ কয়েকবার বারণ করেও যখন কোনো ফল হয় নি, মালা মেয়েকে শেখায় বাবা যত জোরে গান চালাবে তার চেয়েও জোরে তুই পড়বি। এই  ওষুধ কাজ হয়। এখন মেয়ে পড়তে বসলেই তার বাবা রাগে গজগজ করতে করতে বাইরে চলে যায়। আজ মালা খুব খুশি, মেয়ে স্কুল থেকে মায়ের জন্য একটা সুন্দর গান শিখে এসেছে, ও বার বার মেয়েকে গাইতে বলছে... "মধুর আমার মায়ের হাসি"...





#সম্পর্ক
#মুনমুন_মুখার্জ্জী

কেউ সম্পর্ক রাখে সবার সামনে বুক ফুলিয়ে,
কেউ বা চোরের মত লুকিয়ে লুকিয়ে--

কেউ অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করে ওঠে,
কেউ ভালো সাজতে স্রোতের পানে ছোটে।

কেউ সামনে বলে "তুমি অতুলনীয়, পরম প্রিয়",
সেই পিছনে বলে "ও ভীষণ মিথ্যুক, নাটকীয়"।

সুযোগ সন্ধানেই ঘুরছে তারা, হতে পারে আত্মীয়,
মুখোশ এঁটে মারবে কোপ, যা কিনা অভাবনীয়।

মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে মারতে পারে ছোবল,
অন্ধ বিশ্বাসের শাস্তি জোর আঘাত হয় কেবল।




 #কবি_প্রণাম
#মুনমুন_মুখার্জ্জী

তুমি যে আমার প্রাণের ঠাকুর,
আমি যে তোমার চিরপ্রেমিকা,
ছোট থেকে মন করেছি নিবেদন,
তোমা ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না।

রাস্তা হারালে অভয় দিয়েছ,
হাত ধরে তুমি পথ দেখিয়েছ,
আকুল হয়ে কাছে যে টেনেছ,
এগিয়ে যাওয়ার সাহস দিয়েছ।

দুঃখ কষ্টে বল দাও তুমি,
জীবন নদীর তরীখানি তুমি
মন জুড়ে শুধু আছো যে তুমি
তোমাকেই তাই দিন রাত নমি।
//আমি এখনও সেই অভিমানী//

আমাদের সম্পর্কটা ছিল এক্কেবারে আলাদা,
হয়তো বা অনেকের মতই কিন্তু আমার চোখে একেবারেই আলাদা।
যাকে এককথায় বলতাম, না দেখেও এতোটা ভালোবাসা যায়!
কেউ কিভাবে পারে এত ভালোবাসতে!
পড়ন্ত এক বিকেল বেলায় সেই যেদিন হাতে হাত রেখে বলেছিলে,
"ভালোবাসো"
আমি একটু যেন অবাকই হয়েছিলাম,
তারপর সেই খোলা হাওয়ায়,একলা প্রান্তরে
অবনমিত মুখেই বলে উঠেছিলাম, "আমিও"
তারপর কত দিনের অপেক্ষা...
আমাদের সম্পর্কটা ছিল এক অপেক্ষার সম্পর্ক,
আসবে আসবে করেও অনেকটা দিন পেরিয়ে যেত,
দীর্ঘ বিকেলগুলো আর কাটতেই চাইতো না,
তবুও দূর থেকেই অনুভব করতাম তোমায়,
একসাথে কাটানো সময়গুলোকে বার বার মনে করতাম,
আর এভাবেই আমার মধ্যে বেঁচে থাকতে
তুমি, তোমার ভালোবাসা,আমাদের ভালোবাসা।
রোজ রোজ নতুন করে প্রেমে পড়তাম,
নতুন এক তুমিকে খুঁজে পেতাম,
তবে অভিমানও হতো খুব,
কিন্তু অভিমানগুলো কত্ত সহজে তোমার গলার স্বরে গলে যেত, আমি বুঝতেই পারতাম না।
ভেবেছিলাম দীর্ঘ এই অপেক্ষার অবসান ঘটবে কোনও একদিন,
আর ঘটেও ছিল শীঘ্রই।
তবে, এই দীর্ঘ অপেক্ষার বিকেলগুলোর মতো
ফিকে হয়েছিল সেই পুরনো প্রেম,
সেই পুরনো তুমি!
প্রথমে ভ্রম বলেই মনে হয়েছিল,
কিন্তু পরে মনে হলো না সবটাই সত্যি।
পরিমাণ বাড়ল সবকিছুর,দেখা করার,কথা বলার
আর কড়াপাকের ঝগড়ার..
অভিমানগুলোও কেমন যেন জেদী হয়ে গেল,
তোমার গলার স্বরে কিছুতেই ভুলতে চায়লো না আর,
নতুন করে চিনতে শেখালো তোমায়।
তবুও নিজেকে বোঝাতাম, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে,
সময়কেও দিয়ে ছিলাম অনেকটা সময়,
কিন্তু তারাও কেমন যেন অচেনা অতিথির মত ধরা দিল না,
দিনের সাথে যত ঠিক ছিল সব ভুল হতে লাগল,
চেনা মানুষকে খুঁজে পেলাম অচেনার গাম্ভীর্যে।
যে তুমিটা ভীষণভাবে আপন ছিলে,
যে তুমিটা প্রত্যেকবার দূর থেকেই এই হাতে হাত রেখেছিলে,
যে তুমিটা মান ভাঙাতে গলার স্বরে আদর করে,
যে তুমিটা বেধে ছিলে পাশে থাকার অঙ্গীকারে,
সেই তুমি অচেনা হয়ে গেলে, কেমন করে যেন বদলে গেলে,
দূর থেকেই যাকে বুঝতাম, বুঝিনা আজ তার কাছে এলে।
তারপর একদিন শেষ সিদ্ধান্তটা নিয়েই নিয়েছিলে,
একবার জানতেও চায়লে না আমি কি চাই?
আর মনের মধ্যে চরম অভিমান পুষে,
আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে
অনেক দূরে চলে গেলে,
যেখান থেকে চায়লেও আর ফেরা যায় না কোনোদিন,
যদিও তুমি চাইবে না জানি,
তোমার সুখ আজ মধ্যগগনে,
আমি এখনও সেই অভিমানী...

                                  শিল্পা মণ্ডল





//মুক্তি//

ভালোবেসে শিকল দেবে না বলেছিলে,
শুধু আলগা সুতোয় বেঁধে রাখবে,
আমি যখন গোটা আকাশ ঘুরে এসে ক্লান্ত হব, শ্রান্ত হব,
আদর দিয়ে সব ক্লান্তি মুছে দেবে।
আর যদি না ফিরে আসি সে প্রশ্নও রেখেছিলাম,
বলেছিলে_
আলগা বাঁধন খুলে স্বাধীনতা দেবে,
দূর থেকেই ভালোবাসবে,
বড়ো প্রেম শুধু কাছে টানে না, দূরেও করে!!
আচ্ছা,
তবে এই যাওয়ার কালে কেন এত পিছু ডাকো?
পুরনো সেই ডাকনামে কেন শুধু বেঁধে রাখো?
আজকে কেন আপন স্বার্থে পাল্টে গেছে ভালোবাসা?
এসব বুঝি কথার কথা, বাহানা মনের কাছে আসার?
     
                                                __শিল্পা মন্ডল





কেউ কোনোদিন আমারে তো কথা দিল না..//

কোনো লেকের ধার কিংবা সেই যে ভিক্টোরিয়ার প্রাঙ্গন
বা ধরো পড়ন্ত বিকেল বেলায় নির্জন কোনো রাস্তা,
না, আমাদের দেখা হওয়ার সাক্ষী হবে না আর এরা।
আসলে ওগুলো সব কল্পনার জগৎ, আমি বাঁচি বাস্তবে।
ঘেমো জামা, রুক্ষ চুল, শুকনো মুখ, আর অফিস ফিরতি সেই তুমি,
ওয়াচের কাঁটায় ট্রেন ধরার তাড়া লেগে,
হঠাৎ চোখ পড়ল,
এনামেল করা কালো দুটি চোখের ওপর,

মাঝে আটটা বছরের খরা,

গঙ্গা, যমুনা কিংবা ভাগীরথী কিছুই চোখে বয়ে যাবে না,
না, বুকের ভিতরটাও হঠাৎ করে প্লাবিত হবে না,
শুধু ওষ্ঠে ফুটবে জুঁই, চাঁপা কিংবা সূর্যমুখী,
তুমি মুখ ফিরিয়ে চলে যেতে চাইলেও
আমি লজ্জার ভূষণ ত্যাগ করে তোমার কাছে এগিয়ে যাব,
যে সহজে কুমারীত্বের ভূষণ ছাড়তে পারে
তার কাছে এটা নেহাত কিছু নয়,
"কেমন আছো? কি করো এখন? বিয়ে করলে কবে?"
__এসব প্রশ্ন করে বিব্রত করব না,
শুধু বলবো, "আমি ভালো আছি, খুব ভালো। জানো,
তোমার দেখা সেই অযোগ্য মেয়েটার কাঁধে আজ একটা গোটা বাড়ির দায়িত্ব,
তিন ভাই থাকা সত্ত্বেও বাবা-মা তার কাছেই থাকে,
শুধু বাড়ি না সমাজেও সে একজন প্রতিষ্ঠিত নারী।"
তুমি কিছুই জানতে চাওনি হয়তো,
তবুও আমি জোর করেই জানাবো,
কারণ, সবার সব প্রাপ্তির পিছনে অনেকেরই ভূমিকা থাকে,
আর আমার জীবনে সেই ভূমিকা একমাত্র তোমার,
সেদিন যদি অযোগ্য বলে আমাকে ফিরিয়ে না দিতে জানতেই পারতাম না আমিও আমি হতে পারি।
উত্তরের অপেক্ষা না করেই ফিরে যাব বিপরীতে স্রোতে,
লোকাল ট্রেনের কু-ঝিক-ঝিক শব্দে হারিয়ে যাবে সেই দেখা হওয়ার গল্প,
দূর থেকে ভেসে আসবে পুরনো গানের কলি-
"কেউ কোনদিন আমারে তো কথা দিল না,
বিনিসুতার মালাখানি গাঁথা হইলো না..."
     
                                         _শিল্পা মন্ডল




ভালোবাসা কি এতটাই সুন্দর হয়?//

দু চোখের পাতায় ঘুম নামেনি তার,
জেগে কাটিয়েছে সে সারারাত,
এতদিন যার ছবি কল্পনায় এঁকেছে,
তাকে নিজের হাতে স্পর্শ করবে,
অতল স্পর্শে  ভিজিয়ে দেবে তার শরীর-মন,
ছিটিয়ে দেবে গভীর ভালোবাসার আতর।
ভেবে কেমন মনটা ফুরফুরিয়ে উঠল,
হয়তো ভালোবাসার অনুভূতি এমনটাই হয়।
চাঁদটাকে আজ আশ্চর্য সুন্দর লাগছে,
এমনভাবে তো কোনোদিন তার আলো গায়ে এসে পড়েনি।
রাত্রির অন্ধকারে একটা গন্ধ  ছড়িয়ে আছে,
ভাবতে ভাবতেই ঘড়িতে কাটল রাত,
এইতো বেশ কয়েকবার পাখিদের শব্দ শোনা গেল,
তাহলে নিশ্চয় ভোরের আলো ফুটেছে বাইরে,
কোনদিন সে ভোর দেখেনি।
ভোরের বাতাস কেমন হয় তার অপরিচিত,
গল্পে বহুবার পড়েছে তবে অনুভব করেনি কোনদিন।
এ যেন এক আশ্চর্য অনুভুতি!
নিজের অপছন্দসই কাজগুলো কেমন সুন্দর হয়ে যাচ্ছে।

ওই দূরের আকাশ তার চিরপরিচিত,
কিন্তু এমন গাঢ়তা এমন গভীরতা সে কোনদিনও খুঁজে পায়নি,
এই আলো তার ভালোবাসার মতই স্নিগ্ধ, কিন্তু কই আগে তো চোখ পড়েনি ঐদিকে,
তবে আজকে কেন গোটা পৃথিবীটা হঠাৎ করে এত সুন্দর হয়ে গেল!
সবকিছুতে কেমন একটা মাদকতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,
মনটাকে বসন্তের রঙের মতই যেন ছড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে,
তবে কি ভালোবাসা এতটাই সুন্দর হয়?
প্রেমের পৃথিবী এমনই মুগ্ধ হয়?

                                               ___শিল্পা মন্ডল
 #পথ_দেখাও
#মুনমুন_মুখার্জ্জী

ভোর বেলায় শিশুর আজ ঘুম ভাঙ্গে না,
শোনা তো আর হয় না ঘুম জাগানিয়া,
রাত জাগা মা বাবা ভোর বেলা ঘুমায়,
সকালে উঠে সবাই স্কুলেতে দৌড়ায়।

পেয়ারা, লিচু গাছ চেনার অবকাশ নেই,
কাঠবিড়ালী প্রজাপতির সাথে ভাব নেই।
পারুল দিদি, চম্পা দাদার সাথে হল আড়ি,
স্বপ্নেও আসে না তারা খোকা খুকুর বাড়ি।

সারাদিন পড়া পড়া ভালো যে লাগে না,
গল্প ছড়ার বই কেউ পড়তে দেয় না।
শেখে যদি কবিতা কিম্বা হয়তো গান
জিততেই হব তবে, এসব নয়তো ফান।

শিশুরাই খারাপ আছে তা তো কবি না,
গরীবের বুকেও আছে নানান যন্ত্রণা।
জাতের নামে বজ্জাতি আজও যে চলছে,
ভোটের কেনা বেচায় তারাই যে জ্বলছে।

নারীরা জাগে নি এখনো হলেও শিক্ষিত,
কেউ কেউ স্নেহ মায়ায় হয়ে গেছে হত।
কেউ দিয়েছে চরম মূল্য অধিকার চেয়ে,
কেউ বা নিঃসঙ্গ হল সবকিছুই পেয়ে।

কুসংস্কারের ঘেরাটোপে ব্যস্ত জীবন,
ধর্ম, জাত পাতে দিন দিন বাড়ছে মরণ।
সঠিক পথ দেখানোর মানুষ তো নাই,
কবি তোমার রচনায় যেন পথ খুঁজে পাই।






 পথ_দেখাও_নজরুল
#মুনমুন_মুখার্জ্জী

ভোর বেলায় শিশুর আজ ঘুম ভাঙ্গে না,
শোনা তো আর হয় না ঘুম জাগানিয়া,
রাত জাগা মা বাবা ভোর বেলা ঘুমায়,
সকালে উঠে সবাই স্কুলেতে দৌড়ায়।

পেয়ারা, লিচু গাছ চেনার অবকাশ নেই,
কাঠবিড়ালী প্রজাপতির সাথে ভাব নেই।
পারুল দিদি, চম্পা দাদার সাথে হল আড়ি,
স্বপ্নেও আসে না তারা খোকা খুকুর বাড়ি।

সারাদিন পড়া পড়া ভালো যে লাগে না,
গল্প ছড়ার বই কেউ পড়তে দেয় না।
শেখে যদি কবিতা কিম্বা হয়তো গান
জিততেই হব তবে, এসব নয়তো ফান।

শিশুরাই খারাপ আছে তা তো কবি না,
গরীবের বুকেও আছে নানান যন্ত্রণা।
জাতের নামে বজ্জাতি আজও যে চলছে,
ভোটের কেনা বেচায় তারাই যে জ্বলছে।

নারীরা জাগে নি এখনো হলেও শিক্ষিত,
কেউ কেউ স্নেহ মায়ায় হয়ে গেছে হত।
কেউ দিয়েছে চরম মূল্য অধিকার চেয়ে,
কেউ বা নিঃসঙ্গ হল সবকিছুই পেয়ে।

কুসংস্কারের ঘেরাটোপে ব্যস্ত জীবন,
ধর্ম, জাত পাতে দিন দিন বাড়ছে মরণ।
সঠিক পথ দেখানোর মানুষ তো নাই,
কবি তোমার রচনায় যেন পথ খুঁজে পাই।


#আমার_হৃদয়
#মুনমুন_মুখার্জ্জী

হৃদয় দিয়ে হৃদয়কে সাজিয়ে
হৃদয় করেছি তোমাকে দান,
হৃদয় দিয়েই তোমার কোরো
যদি কখনো করি অভিমান।

ভুল ভেবে ভুলে যেও না
ভুল করে একা কোরো না,
ভুলটা আমিও করতে পারি
ভেঙে দিতে যেন ভুলো না।

তোমাকে ছাড়া জীবন বৃথা
তোমাতেই আমার মনটা গাঁথা,
তুমি ছাড়া এ জগৎ আঁধার
তুমি মুখ ফেরালে পাব ব্যথা।

হৃদয়ে আমার এমনি থেকো
ভুলের দরজা বন্ধ রেখো,
তোমার সাথেই আমার সুখ
হৃদয়ে তোমার আমায় রেখো।





 #মেঘবালিকা
#মুনমুন_মুখার্জ্জী

সুনীল আকাশে মেঘের ভেলা
মেঘবালিকা করছে খেলা,
আকাশগঙ্গা পাড়ি দেবে সে
জলনুপুর পায়ে রুনুঝুনু বাজে।

বাতাসের সাথে হাত মিলিয়ে
বৃষ্টি হয়ে ঠিক আসবে ধেয়ে।
ধুয়ে দেবে ধরার যত কালিমা
প্রতিষ্ঠা হবে এবার তার মহিমা।

ফুলে ফলে ধরা সাজবে নতুন
মেঘবালিকার স্বপ্ন হবে পূরণ।
সবাইকে আনন্দ দিয়ে শেষে
সমুদ্রের সাথে সে মিলবে হেসে।



জন্মস্থান
বিদিশা নাথ
অতঃপর একটি মধ্যবিত্ত পরিবার জন্ম নিল অবশেষে,
আঠেরোর আগে  সিঁদুরের ছাপ বড্ড কড়া, বড্ড নিষেধ,
পঁচিশেতে পা সেই নিষেধ-ই কুড়িতে বুড়ি নির্বিশেষে।
দেওয়ালের গায়ে সিঁদুরের ছাপ;ড্রেসিং টেবিল আঠালো টিপে ঢাকা,
বাবা ফেরে রাত দশটায় ঠিক,
তাস-আড্ডায় সন্ধে গুলো ঢাকা।
বিচ্ছিরি খুব,বিচ্ছিরি বোস-গিন্নির মেয়ের মুখে ধোঁয়া,
ছেলে আমার সোনার আংটি,
বউ-এর গয়না যতই যাকনা খোয়া।
সুগার, প্রেশার,কোলেস্টরল এ জর্জরিত দেওয়াল তাক।
মিত্রবাবুর নতুন ফ্রিজের EMI হিসেব জানতে হবে;
তাই বাড়িতে চুনলেপ্টা তোলাই থাক।
মধ্যবিত্তের বড়ই জ্বালা:
নিয়ম নিকেশ মেনে চলতে হয়,
মধ্যবিত্তের বড়ই যাতন; প্রতিবেশীর মান রাখতে হয়।
না-এর বাধা পেরিয়ে এসে ,
যুগের নতুন জোয়ারে ভেসে চলতে- সে তো পারবে না,
মধ্যবিত্তে পড়লে শেষে,সমাজ গলা ধরবে ঠেসে,
চোখ রাঙানি এড়িয়ে চলা (ওদের ভাষায়) "ধর্মে নাকি সইবে না"।

...................

 নারীত্ব
~বিদিশা নাথ
সে বড় নারীপ্রিয় নাকি নারীত্ব-প্রিয়?
এই হিসেব এর বেড়াজাল জড়াচ্ছে তাকে বছর পনেরো হতেই,
গোঁফের রেখা ওঠার আগে তাকে মনে রাখতে হয় স্বপ্নদোষের সংখ্যা।
"বীনা দি কি সুন্দর টিপ পড়ে আর কাজল আঁকে চোখে"।
এ কথা বলাটাও পাপ।
"আমার ভালো লাগে না মাঠে জড়া জড়ি ,
আমার ভালো লাগেনা কাদা"।
বলিস না ,বলিস না যে তোর ভালো লাগে গলা সাধা।
"আমি অন্যরকম আমি বুকের ভিতর নরম পালক স্তন খুঁজে ফিরি"।
"আমি লজ্জা পাই নগ্ন দেহে পুকুরে ঝাঁপ"।
ওরা কি তাই কঠোর হাসিতে ছুঁড়ে দেয় পুরুষত্বের বীর্য?
ওরা কোনঠাসা করে আমায় যন্ত্রনায়?
আমি নারী না নারীত্ব প্ৰিয় সব গুলিয়ে যায়।
"তোর রোম ছিঁড়ে তোকে পুরুষ বানাব আজ"।বলে হুঙ্কার দেয় লিঙ্গের ধ্বজাধারী,
বাবা মা দূর দূর করে ভূত ছাড়ায়।
হয়ত এসব সবই জন্মহিসেবের ভুল-এর অনুতাপ।
মৃত্যু আসুক  এক ঢোক তরল হয়ে ,
না পাওয়া নারীত্বের মাতৃ দুগ্ধ হয়ে,
মৃত্যু এসে বুঝিয়ে দিক আমি নারী না বাঁচতে চাওয়া মানুষ দেহের এক শব?






" রোগ "
~বিদিশা নাথ
রোগ বাড়তে বাড়তে ত্বকের উপর স্তর ছেড়ে,
ঢুকে গেছে অলিন্দ ছাড়িয়ে অনেক অভ্যন্তরে।
যে লোক দেয়নি দেখা বছরভর; যে ভীষণরকম কুঁড়ে,
সুখের চাবি হাতে পেতেই  ভিড় জমাল পুরানো চাবির জোরে।
কাটাছেঁড়া শেষ হল না,পুরানো হল না আলাপ সঙ্গোপন,
তবু সে মুখ ফিরাল হঠাৎ ,চেনাপথ হল ব্রাত্যজন।
লালচে শিরা,ফুলে ওঠা চিবুক কালশিটে হল হাত,
'ভালোবাসি তবু' ঠোঁটে ফুটল না আর,
হল সেদিন-ই এই রোগের সাথে মোলাকাত।
আমি আজকাল আসা যাওয়া গুনি,
নামতা গাই,অঙ্ক কষি,কাটানো সময়ের ধারাপাত।
নামহীন বিড়বিড়, একলা দুপুরে দিন ঢোকে না আর ;শুধুই মধ্যরাত।
আমায় রোগ প্রেসক্রিপশনের অক্ষর-ধাঁধা খুঁজে মরে,
'তবু ভালোবাসি' বলে হৃদয় জেগে উঠল না আর,
কর্কট ক্ষত ছড়িয়ে গেছে অনেক ভিতরে।
চোখের কোণের আঁচিল তোমায় খুঁজেছে,
বয়সের শীর্নতাও চেয়েছে তোমায়।
যাবার আগের শেষবার টুকু বলে দাও,
এই রোগ সারাবার অন্তিম উপায়।





" গাছ "
~বিদিশা নাথ
আমরা একে অপরকে একটা গাছ ভাবি,
মাটিতে নিজেকে ছড়িয়ে দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁচে থাকা একটি গাছ।
তুমি কান্ড ডালপালা হলে আমি হই শিকড়,
তুমি মাটি থেকে শুষে নাও বেঁচে থাকার সুখ,
আমি তোমার ঝরে পরা ডাল-পাতা আহরণ করে,
বুনে চলি প্রকৃতিতে বেঁচে থাকার সালতামামি।
আমি লতা হয়ে তোমায় কক্ষনও জড়াই না,
তুমিও মুক্ত আকাশে মেলে দাও তোমার পরিধি।
বাতাস চুপ করে শোনে তোমার পাতার সরাসরানি,
পাখিরা বাসা খোঁজে তোমার শান্ত দেহে।
আমি তখন নিঃশব্দে তোমায় ধরে রাখি,
তোমায় বেঁধে রাখি।
আমি বিবর্ন হতে হতেও
অপেক্ষা করি তোমার।
কবে সোনালী উজ্জ্বলতার মোহ পেরিয়ে,কালো  মেঘের নেশা পেরিয়ে,
তুমি সেই মাটিতে এসে মিশবে।
আমরা একসাথে নতুন করে গাছ হবো আবার।


...............................

মঙ্গলবার, ৪ জুন, ২০১৯

লেখিকা চয়নিকা যশের কবিতা


১.)
তোমায় দেখবো বলে

প্রতি রাতে আমি
তোমার ঘুমিয়ে যাওয়া অব্দি
অপেক্ষা করি।
ঘুমন্ত মুখটা অন্ধকারে স্বচ্ছতোয়া নদীর মতো টলটল করে,
আমি স্পষ্ট দেখতে পাই।
একটা নিষ্পাপ, ভাঁজহীন মুখ।

জেগে থাকলে মানুষ বড় নিজের কথা ভাবে,
বড্ড স্বার্থপর হয়ে যায়।
আমি তাই ঘুমন্ত তুমিকে রাত জেগে
স্বার্থপরের মতো একা একা দেখি।
তুমি তখন আকাশ হয়ে যাও,
আর আমি সামান্য চাতক।

২.)
সময় পেরোলে

একটা সময়ের পরে
রাগ অভিমান এগুলো ফুরিয়ে আসে।
যেমন এক নাগাড়ে জ্বলতে থাকা
প্রদীপ কিংবা বাতি,
শেষ হওয়ার আগে দাউদাউ আগুন হয়ে,
একটা সময় হঠাৎই ঝুপ করে নিভে যায়।
আসলে যে অনুভূতি যত প্রবল,
যত দুর্নিবার,
যার তীব্রতা যত বেশি,
সে হয়তো ততই ক্ষণস্থায়ী।
তাই একটা সময় পরে
সব নিভে যায়,
প্রদীপ, ঘৃণা অথবা ভালোবাসা।

৩.)
ভালোবাসার দিব্যি

আমি তোমায় মিথ্যে বলেছি।
সেই শুরু থেকে মিথ্যে বলে গেছি।

এই যে বারবার বলেছি,
তুমি যেতে চাইলে চলে যেও,
আটকাবো না কখনো,
এ যে কি সাংঘাতিক মিথ্যে জানো!
প্রতিটা মুহূর্তে আমি ভেবেছি,
তোমায় কী করে আটকে রাখা যায়,
বেঁধে রাখা যায়।

কতবার বলেছি, অন্য কাউকে ভালোবাসলে আমায় বলো।
মনে মনে আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছি
গোটা পৃথিবীর থেকে তোমায় লুকিয়ে রাখার।

বারবার বলেছি তুমি দূরে গেলে
আমি দূর থেকেই ভালোবেসে যাবো।
কিন্তু আকুল হয়ে কাছে থাকার
প্রতিটা সম্ভাবনাকে হাতড়ে গেছি নিঃশব্দে।

আরও কত টুকরো টুকরো মিথ্যে দিয়ে
ভালোবাসার তাসের ঘরটা বানিয়েছি।
যেখানে ভালোবাসা বাদে
বাকি সবটা মিথ্যে, প্রবল মিথ্যে।



লেখিকা সুস্মিতা সিং এর কবিতা পড়ুন


১.)
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা

ও স্বপ্নের ফেরিওয়ালা একরাতে আসবি স্বপ্ন বেঁচতে?
কিনে নেব আমি স্বপ্ন ঝুড়ি ভরা,

ও স্বপ্নের ফেরিওয়ালা লুকায়ে আসিস তবে
নজর যেন না দিতে পারে কেউ আমার স্বপ্নের ঘরে,

ও ফেরিওয়ালা ওই যে অন্ধকার গলি সেখানে আমার বাসা,
স্ট্রিট লাইট জ্বলেনা ওধারে,তুই আসবি তো স্বপ্নের বেলুন নিয়ে?

ভর্তি থাকবে স্বপ্ন,খুশি, যত ফিরে আসবে আমার কাছে ততই,

আসিস তবে একরাতে স্বপ্নের বেলুনখানা কয়েক গুচ্ছ নিয়ে ছড়িয়ে দেব গোটা শহর জুড়ে 

হাসবে,খেলবে,আনন্দে মাতবে সকলে,স্বপ্ন দেখা শুরু হবে আবার নুতন করে।

ও ফেরিওয়ালা আসিস তবে কোন এক নিরিবিলি রাতে।


২.)
পথের শেষ

পথ চলা শেষ হয়না আর
আশে পাশে চেয়ে দেখি হাজারো জনে চলছে ডানা মেলে,
কোথাও ট্রাফিক জ্যাম, কোথাও বা মানুষের কোলাহল
আমার অপেক্ষা হয়না শেষ তবু, ফিরে যায় মায়ায়,
যত দেখি ততই শিখি,তবু মন চায় আরও,
ভাগ্যের উপর ভরসা করে বসবি কত আরও
চল যায় এগিয়ে কোথাও, যেথায় নেই হিংসে, হানাহানি,
সেই স্নিগ্ধ শীতলা মাটির তলায় নিদ্রাসঙ্গীত গেয়ে যায়
দেহ আত্মা এক হয়ে যেথায় পড়ে রবে শুধুই নিথর শরীর।

৩.)
পর্বত শিখা

শোনো মেয়ে,
তুমি মনে রেখো
যখন ঘরের চৌকাঠ পেরোবে
লোকে তোমায় আড়চোখে দেখবে,
তুমি গলি ধরে হাঁটতে থাকবে
লোকে তোমার পিছু নেবে, শিস দেবে।
তুমি গলি পেরিয়ে বড় রাস্তায় উঠবে
লোকে তোমাকে চরিত্রহীন বলবে
দোকান হাটে দূর থেকে দেখে তোমার  যোনির মাপ নেবে হীনবীর্যের দল,
তুমি পিছু ফিরবে না মেয়ে
যাচ্ছ যেভাবে মাইল পার করবে
পথ ছাড়িয়ে যখন পৌছবে পর্বতের শিখরে
জ্বলবে তারা শিখার আগুনে,
তুমি হাসবে অট্টহাসি তাদের ছাই দেখেই।






লেখিকা মৌসুমী ভৌমিকের কবিতা


কবিতা ও কল্পনা
 
কবিতা কী কল্পনা ? যদিও জানি গল্প না
ভাবের ঘরে ঘুরে আসা, বেশি না হলেও অল্প না।
মনের মাঝে আনন্দ খেলা, পাগল বললেও পরোয়া নেই
শব্দ নিয়ে মেতে থাকাতে খুশির প্রলেপ অল্পতেই।

কবির ঘরে রাজার বাহার নাইবা থাকুক ক্ষতি নেই
মনের রাজা সেজেই থাকে সকাল বিকাল সন্ধ্যেতেই।
কবির মনে বিশাল আকাশ, ডানায় চড়ে বেড়ায় ঘুরে
কল্পনাতে স্বর্গ দেখে, বসবাস তার নিশ্চিন্তিপুরে।

মিথ্যে তোরা বাঁধিস বাঁধন, কবি যে সেই আত্মভোলা
হাজার রকম নালিশ শেষে, মনেতে তো নেইকো দোলা।
কবিতা সেই সুখেই হাসে, নয়ত মিছে কল্পনা
ভাবনাগুলোও উড়তে জানে, সেও কিছু মন্দ না।

প্রতিফলনের EXPECTATIONS




"প্রতিফলন" ছবির পরিচালক অর্পণ বসাক, তিনি স্বয়ং চিত্রনাট্য বানিয়েছেন,সুপ্রতিম সাহা প্রযোজিত ও মুখ্য ভূমিকায় অভিনীত এই ছবি খুব শীঘ্রই  প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে। তবে পরিচালক ও প্রযোজকের ইচ্ছে প্রথম ভাগে কিছু ফিল্ম ফেস্টিভালে "প্রতিফলন" কে পাঠাবে তারপর বাণিজ্যিকভাবে রিলিজ।

 পরিচালক অর্পণ বসাক পরিচালিত এই ছবির  গল্পটি মূলত একটি ১৮ বছরের ছেলে আর্য (সুপ্রতিম সাহা) কে ঘিরে, গল্পের প্রেক্ষাপট গ্রামকেন্দ্রিক। আর্য ছোট থেকেই তার মাকে দেখেছে গ্রামের মেয়েদের বিয়ের সাজ সাজাতে, সেই থেকেই আর্য স্বপ্ন দেখে তার মায়ের মত হওয়ার। আর্যর স্বপ্নের কথা তার বাবা জানতেই শুরু হয় এক কঠিন সংগ্রাম, সেই কঠিন সংগ্রামের সময় আর্যর পথ চলার সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায় আর্যর পাশের গ্রামের তারই সমবয়সী চুরি বিক্রেতার মেয়ে রিমি (সায়ন্তনী দেব)। শেষ পর্যন্ত আর্যর জীবনে কি পরিণতি আসে সেটা জানার জন্য অবশ্যই সবাইকে প্রতিফলন ছবিটা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখতে হবে।

তাহলে চলুন শুনে নিই যারা তাদের পরিশ্রম দিয়ে তৈরী করল "প্রতিফলন" তাদের বক্তব্য।



°জলফড়িংঃ- এই ছবির মূল বিষয় ভাবনা কি?


●পরিচালক অর্পণ বসাকের অভিমত- "প্রতিফলন ছবির মূল বিষয় ভাবনা হচ্ছে প্রফেশনের কোন জেন্ডার হয় না"



°জলফড়িংঃ- সুপ্রতিম সাহা এই ছবির নায়ক এবং প্রযোজক, তোমার অভিমতটা যদি বলো।

●প্রযোজক ও অভিনেতা সুপ্রতিম সাহার অভিমত- " আর্য চরিত্রটা আলাদা করে কোনো গল্পের চরিত্র নয়, আর্য আমরা সবাই"



°জলফড়িংঃ- রিমিকে নিয়ে যদি কিছু বলো দর্শকদের।


●অভিনেত্রী সায়ন্তনী দেবের অভিমত- " গল্পে আমি রিমি চরিত্রে অভিনয় করেছি এবং রিমি আর্যর কাছে অক্সিজেন এর মত"



°জলফড়িংঃ- বিপাশা তোমার চরিত্রটা ছবিতে কীভাবে ফুটে উঠবে?


●অভিনেত্রী বিপাশার অভিমত- " আমার চরিত্র সম্পর্কে বেশি কিছু বলা বারণ, খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্র, আমার একটাই অনুরোধ তোমরা সকলে ছবিটা দেখো"।




°জলফড়িংঃ- তুমি ছবির আর্যের মা, তোমার কাছে এই চরিত্রটা কতখানি দায়বদ্ধতা এনে দেয়?


●অভিনেত্রী সপ্না দেবের অভিমত- " পর্দায় আমি আর্যর মা, শুটিংয়ের প্রথম দিকটায় একটু নার্ভাস ছিলাম তবে আস্তে আস্তে কনফিডেন্স পেয়েছে অভিনয়টা করার"



°জলফড়িংঃ- আপনি তো ছবি আর্যের বাবা। আপনার অভিমত যদি জানতে পারতাম।



•অভিনেতা এমদাদুল হকের অভিমত:-   আমি প্রতিফলনে আর্য চরিত্রের বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেছি, কাজ করে ভালো লেগেছে অর্পণের সঙ্গে।





°জলফড়িংঃ- তোমার গান, তোমার সুর, তোমার কথা কিরকম লাগছে?


●সঙ্গীত পরিচালক পীযূষ দাসের অভিমত- " আমার লেখা শব্দ সুর ও কন্ঠ দিয়ে চেষ্টা করেছে প্রতিফলন কে আরও সমৃদ্ধ করতে কেমন লাগলো জানার অপেক্ষায় রইলাম"



°জলফড়িংঃ- একজন এডিটর কাজ বেশ কঠিন একটা ছবির জন্য। তোমার কাছে প্রতিফলন?


●এডিটর সায়ন্তন নাগের অভিমত- " ছবিটার প্রতিটা "Frame" এর প্রেমে পড়েছি, অর্পণ ও সিনেমাটোগ্রাফার ভাবনাকে কুর্নিশ জানাই"




°জলফড়িংঃ- কিরকম লাগছে কাজ করে?


● অভিনেত্রী অভ্যর্থনা দাসের অভিমত- " অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে সকলে, দর্শকের কাছে অনুরোধ বাংলা ছবির পাশে থাকুন"



°জলফড়িংঃ- তোমার কাছে প্রতিফলন?


●সিনেমাটোগ্রাফার রাহুল মন্ডলের অভিমত- " প্রতিফলন ছবিটা আর বাকি ৫টা ছবির থেকে একদমই আলাদা, দর্শকের মতামতের অপেক্ষায় রয়েছি"


°জলফড়িংঃ- প্রতিফলন তোমার কাছে কেমন?

●সিনেমাটোগ্রাফার সঞ্জীব মন্ডলের অভিমত- " অনেকটা খাটনি করে ছবিটা বানিয়েছি আমরা সকলে, রিলিজের পরে বিচার দর্শকের হাতে"



°জলফড়িংঃ- কাজটা করে কেমন লেগেছে?


●মেকআপ আর্টিস্ট অর্ণব দাসের অভিমত- " আমার কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আর্যর মেকআপ টা, কতটা সফল হয়েছি সেটা জানার অপেক্ষায় রয়েছি"



°জলফড়িংঃ- প্রতিফলন নিয়ে কি বলবে?



•মেকআপ আর্টিস্ট প্রলয় কর্মকারের অভিমত- " খুব মিস করছি মুর্শিদাবাদের শুটিংয়ের সময় টা,প্রতিফলন সবার হলে এসে দেখা চাই"



°জলফড়িংঃ- কাজটা করে কেমন লেগেছে?


●স্টিল ফটোগ্রাফার শুভাশিস সাহার অভিমত- " অসংখ্য ধন্যবাদ অর্পণ ও সুপ্রতিম কে আমাকে এই সুযোগটা দেওয়ার জন্য"



°জলফড়িংঃ- তোমার কাছে তোমার ডিরেক্টর কেমন?


●অ্যাসিস্ট্যান্ট দিরেক্টর মেঘনা দের অভিমত- " কাজ করতে করতে অর্পণ এর সাথে অনেক কিছু শিখছি,আমার অনুরোধ তোমরা সকলে প্রতিফলন দেখো"



°জলফড়িংঃ- আপনি তো প্রোডাকশন ম্যানেজার,  "প্রতিফলন" নিয়ে আপনার মনে কি চলছে?


●প্রোডাকশন ম্যানেজার সৌমিক ঘোষের অভিমত- " রোদে গরমে খাটনিটা কিছুই মনে হবে না, যখন দর্শকের করতালিতে ভরে উঠবে প্রেক্ষাগৃহের মধ্যে"


°জলফড়িংঃ- কিরকম expectations রয়েছি?


●আর্ট দিরেক্টর জাগৃতি সিনহার অভিমত- " কাজটা মন প্রাণ দিয়ে করেছে, দর্শকের থেকে অনেকটা আশায় আছি"



°জলফড়িংঃ- তুমি বাঙালি নও তাও একটা বাংলা ছবির কাজ, কি মনে হয়েছে কাজটা কতখানি সার্থক হবে?


●ড্রেস ডিজাইনার স্বস্তিক আগরওয়ালের অভিমত- " বাঙালি না হওয়া সত্ত্বেও গল্পটি বুঝতে আমার এক মুহূর্ত সময় লাগেনি, এটাতেই প্রমাণ হয় ছবি স্বয়ং একটা মাধ্যম মানুষের কাছে পৌঁছানোর"



আমরা শুনলাম "প্রতিফলন" নিয়ে সবাই কিরকম excited, এখন দেখার "প্রতিফলন" কতখানি নিজেকে প্রতিফলিত করতে পারে দর্শকের মনে।

রবিবার, ২ জুন, ২০১৯

  1. ফোমো
                           মৌমন মিত্র  ( ৩০-৫-১৯)

বই পড়ব, সিনেমা দেখবো, শপিং করব ,কিংবা গল্প করব- চিচিংফাঁকের মতো হাজির আমাদের হাতের মুঠোয় নেট্‌ দুনিয়া। সত্যি, মাঝে মধ্যে কতো সহজ মনে হয় পৃথিবীটা এই মুঠোফোনের হাত ধরে। ভার্চুয়াল আড্ডা ,রাতারাতি বন্ধুত্ব, রাতারাতি সম্পর্ক- সব যেন হাতের মুঠোয় ।ভাবতেই হয় না! আর এই পথ চলতে চলতে আমরা কখন যেন ঢুকে পড়ি এই ইন্টারনেট জগতের নিজস্ব ফাঁদে।২০১৩ সালে ইংলিশ ডিকশনারীতে  একটি  শব্দ যোগ হয় যার নাম ‘ফোমো’। ভাবছেন, বাবা ! এতকাল হয়ে গেল শব্দটাই জানি না? আর ভাবুন, না জেনেই কিভাবে দিনের পর দিন বছরের পর বছর আমরা এই শব্দের প্রকোপে। 



ফোমো- অর্থাৎ কিনা ফিয়ার অফ মিসিং আউট । মানে ধরুন কোন সামাজিক অনুষ্ঠান,পার্টি,পিক্‌নিক্‌ কিংবা সম্পর্ক উদযাপনে আপনি যেতে পারলেন না। কিন্তু সোশাল মিডিয়ায় দেখলেন আপনার বন্ধুরা সেখানে গিয়েছে, এর গা ঘেসে  অথবা ওর গা ঘেসে ছবি তুলেছে,ছবি পোস্ট করেছে।  আপনি দু চারটে লাইক, লাভ চিহ্ন ও জুড়ে দিলেন ( ঐ সোনার কেল্লার  রিগার্ড জুড়ে দেওয়ার মতো) ।কিন্তু ফোন রেখেই আপনার মনে শুরু হল,কি যেন হারিয়ে ফেলার একটা অনুভুতি।একটা ভয়। একেই বলে  ফোমো। এমন কি আপনার লাইক অথবা লাভ চিহ্ন টি ও  এই ফোমোরই একটা অংশ।

ফোমো  আসে অসুখী মন থেকে। একটা প্রতিযোগিতা মুলুক ভাবনা থেকে। আপনার মনের ভিতর সকলের অজান্তে চলতে থাকে এই ঝড়। এই বুঝি হারিয়ে ফেললাম। এই বুঝি ঐ বন্ধু একটু বেশি পেয়ে গেল। এই বুঝি ও আরেকটু বেশি সুখি হয়ে পড়লো। ইস্‌ গেলাম না কেন! এমন হাজার হাজার অসুখী ভাবনা বিস্তার হতে থাকে আপনার মনে দৈনন্দিন। এমনকি এইসব ভাবনা থেকে মানুষ বেশি বেশি করে সোশাল মিডিয়ায় নিজেকে খুঁজতে চেক্‌ করেন।ঘুম থেকে উঠেই, রাতে শুতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত। তার মানে,সোশাল মিডিয়া ফোমোকে আরও ভয়ানক রূপ দেয়।

সমাধান- আপনি নিজে। কিভাবে ? নিজেদের মধ্যে gratitude অর্থাৎ   কৃতজ্ঞতা আনুন। রিসার্চ বলছে রোজ একটা মানসিক ব্যায়াম করুন। সকালে উঠে ফেসবুক নয় নিজের জীবন থেকে আপনার যা যা আছে বিয়গ করুন,মনে মনে।ভেবে দেখুন এইসব কিছু বাদে আপনার জীবনে কি পড়ে আছে? কেমন হবে এগুলো বাদে আপনার জীবন। দেখবেন নিজেকে অনেক সুখী মনে হচ্ছে বাকিদের তুলনায়। 

Flickr এর co-founder Caterin বলেছেন : 'social software is both the creator and the cure of FOMO’
সোশাল সফটওয়্যার আপনার জীবন দর্শনকে  উজ্জীবিত করেছে, আপনাকে একবার সিংহাসনে চড়ায় আবার একবার সেই সিংহাসন থেকেই টেনে নামিয়েও দেয়।

আপনি, আপনার গৃহের রোল মডেল । বর্তমানে এর সমাধান বের করা বেশ কষ্টকর জানি ।কিন্তু রাশ আপনাকেই টানতে হবে। কোন থিওরি নেই।  আপনার ফোমো যেন ওদের এফেক্ট না করে। ‘ওদের’ কচি হাত গ্যাজেট থেকে পুরোপুরি  দূরে রাখা সম্ভব নয়। একটু বড় হতে শুরু করলে বাচ্চাদের ইন্টারনেট এর ক্ষতিকারক দিক গুলো স্পষ্ট করুন। বাচ্চাদের হাতে ফোন দিলে কিডস মোড অন করে দিন। দিনের কোন একটা সময় বাচ্চার সাথে সুন্দর ভাবে সময় কাটান। তাদের, কাছে টেনে নিয়ে এক সঙ্গে গল্প করুন,দিনের শেষে একটু পিলো  ফাইট  করুন।গল্পের বই পড়া ,গান চালিয়ে একটু নাচ করা।অপসন্‌ অনেক রয়েছে। এই সময় গুলোতে নিজেদের ফোন থেকে নিজেদের দুরে সরিয়ে রাখুন। 



ওদের বুঝিয়ে দিন এই ভার্চুয়াল দুনিয়ার হাজার সংখ্যা বন্ধু জীবনের বন্ধু নয়। ওটা ফিকশন্‌। গোছানো গল্পের মতো। পরম বন্ধুদের , কোন্‌ হোটেলে আপনি চেক ইন করলেন বা কোন সিনেমা অন করে দেখছেন তা জাহির করার প্রয়োজন নেই।বাচ্চার,বড়োদের শরীর মন ভালো থাকবে আপনজনের সাথে,আপনজনের স্পর্শে । যার কোলে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুম আসে ,তার পাশে গা ঘেসে ছবি তুলে দুনিয়া কে নিজের সুখ, তৃপ্তির নমুনা ফলাতে হয় না কোন মাধ্যমের মাধ্যমে। আর জীবন অতিবাহিত করতে এই আপনজনরাই আমাদের সকলের পরম পাথেয় হোক।