দাদা, জলফড়িং-এর পক্ষ থেকে তোমাকে প্রথমেই জানাই নমস্কার এবং ভালোবাসা।
শিল্পী রাজা দাসঃ- নমস্কার
১.) শুধু রাজা দাস থেকে শিল্পী রাজা দাস এই যে একটা শব্দ 'শিল্পী' বসল নামের আগে, তোমার কাছে এই ব্যাপারটার উপলব্ধি কেমন?
উঃ- এই তো প্রথম উপলব্ধি হল! আমি তো জানতামই না যে আমি শিল্পী। ধন্যবাদ তোমাদের!
২.) আবৃত্তি কি ছোটো থেকেই করতে নাকি শুরুটা অন্যরকম ছিল?
উঃ- ফার্স্ট্ ইয়ার পড়ার সময় নাটকের প্রয়োজনে আমায় আবৃত্তি শেখানো হয়েছিল। কবিতার
নাম “ছাড়পত্র”। তার আগে পাঠ্যপুস্তক ছাড়া কবিতা বলিনি কখনও।
৩.) আবৃত্তি কি শেখা যায়? তোমার মতামত জানতে চাই।
উঃ- না, তবে টেকনিক শেখা যায়। তারপর নিজের বোধ আর অভিজ্ঞতা মিশিয়ে মাইক্রোফোনটাকে চিনে অনুশীলন করতে হয়৷
৪.) প্রফেশনালি আবৃত্তি শিল্পী হবে এরকমটা কি আগে থেকেই ভেবেছিলে নাকি এই যাত্রার পিছনে কোনো গল্প আছে, সেটা যদি একটু বলো।
উঃ- না, ভাবিনি আগে। যখন অনেকেই প্রফেশনালি আমাকে যোগাযোগ করে কাজের জন্য, তখন
ভাবতে শুরু করি যে আমার কাজ অনেকের ভালো লাগে
৫.) শিল্পী রাজা দাস কি মনে করেন, যে সব কবিতা আবৃত্তি হয় না?
উঃ- তার চেয়েও বড়ো কথা, সব কবিতা সবার আবৃত্তি করা উচিত নয় –এমনকি আমারও।
আমার প্রিয় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। তাঁর লেখা বলতে না পারলে কষ্ট তো হতই!
৬.) চোখ বেঁধে দেওয়া হলো তোমার,বলা হলো টেবিল থেকে দুটো চিরকূটের মধ্যে একটা তুলে নিতে। তুমি তুললে একটা, যেখানে লেখা আছে "শ্রীজাত"র কবিতা আবৃত্তি করো, পাশেই দেখলে পরের চিরকূটে লেখা ছিল "জয় গোস্বামী"র কবিতা আবৃত্তি করো, এখন তুমি কিন্তু সেটা তুলতে পারো নি। এবার বলো কোথাও কি তোমার মনে হচ্ছে ইস্ ওই চিরকূট টা যদি উঠত?
উঃ- এ তো প্রেমিকা বাছাই পর্বের মত হয়ে গেল৷ বাছাই পর্ব শেষ হলে মনে হবে আরে ওই
মেয়েটিই বোধহয় বেশি ভালো ছিল, হা হা!
প্রশ্নের উত্তরে বলি দুজনের কবিতাই খুব ভালো লাগে বলতে৷ আক্ষেপ থাকবে কেন? আমি
জীবনে আক্ষেপ খুব কম করি৷
★ এবার তোমাকে এক কথায় উত্তর দিতে হবে।
প্রশ্নের নামঃ- [" তোমার ছোটোবেলা এবেলায় ভেবে দেখ ফের একবার কোনটা চাইতে "]
ক.) যখন তুমি ছোট্ট "রাজা" কোনটা চাইছ
সুকুমার রায়ে'র "ভয় পেওনা" নাকি "সৎপাত্র"
উঃ- ছোটোবেলায় কবিতা বলতাম না।
খ.) একটু বড়ো হলে 'রবিঠাকুরের' "প্রশ্ন" নাকি "দুই বিঘা জমি"?
উঃ- একটু বড়ো মানে কতো! এইসব কবিতা শুধু পাঠ্য পুস্তকে পড়েছি৷
গ.) এবার বেশ বড়ো তখন 'সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের' "জিড়ো আওয়ার" নাকি "কেউ কথা রাখেনি"?
উঃ- ফার্স্ট্ ইয়ারের পরে প্রথম কবিতা যেটা বলতাম, সেটা “কেউ কথা রাখেনি”।
৭.) আবৃত্তি করতে আবহসংগীতের প্রয়োজন কতখানি?
উঃ- আমি পছন্দ করি আবহ কবিতায় –এমনকি যখন একা থাকি কিংবা কোনো সুন্দর আড্ডায়,
আবহ আমার সর্বসময়ের সঙ্গী –ইনস্ট্রুমেন্টাল মিউজিক। তেমনি কবিতা বলার সময় আবহ
থাকলে বলতে ভালো লাগে।
৮.) একটা লেখা আবৃত্তি করার পূর্বে তুমি সেটাকে আপন করে নাও এটা আমরা জানি। তারপর তোমার আর কতখানি প্রিপারেশনের প্রয়োজন হয় সেটাকে মঞ্চস্থ করার জন্য?
উঃ- আপনমনে আনন্দে রান্না করে খেয়ে নিলাম আর বন্ধু এল, তাকে সুন্দর করে সাজিয়ে পরিবেশন করলাম –ওটুকুই করি কবিতার বেলায়।
৯.) অনেকেরই লেখায় তো আবৃত্তি করো তুমি, তবে তার মধ্যে এমন একজন প্রিয় লেখক কি আছে তোমার মনে, যার লেখা না আবৃত্তি করতে পারলে তোমার কষ্ট হতো?
উঃ- আমার প্রিয় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। তাঁর লেখা বলতে না পারলে কষ্ট তো হতই!
১০.) এফ.এমের কাজ ঠিক কোন সময়টা থেকে শুরু করেছিলে এবং সেই সুযোগ কিভাবে পেয়েছিলে?
উঃ- ২০০৭-এ শুরু। একটি বিজ্ঞাপন বেরিয়েছিল, অ্যাপ্লাই করেছিলাম। ঘটনাচক্রে একজন ছেলেকেই নেওয়া হয়েছিল, সেটা আমি।
১২.) বেশ কিছুদিন তোমাকে আটকে রাখলাম, তোমাকে আবৃত্তি করতে দেওয়া হবে না।
সেই সমস্ত দিন তুমি কিভাবে কাটাবে?
উঃ- বাহ্! সেইদিনটা কবে থেকে শুরু হবে? ততদিন নাহয় আমি স্পনসর খুঁজি।
১৩.) অনেকে বলে গলায় সুর না থাকলে গান হবে না, আবৃত্তির জন্যও কি এরকম কোনো ব্যাপার আছে?
উঃ- আমার মনে হয়, গান হোক বা কবিতা, বোধ না থাকলে কোনোটাই হবে না।
১৪.) অনামী কোনো কবির আবৃত্তি করেছ, ধরো সেই কবি কোনো পুরস্কার পাননি বা স্বীকৃতি পাননি তাও তুমি তাঁর কবিতা আবৃত্তি করলে। নাম বলতে পারবে?
উঃ- বিশিষ্ট কবিরাও ঠিক কী কী পুরস্কার পেয়েছেন আমার জানা নেই। একটু জানিও। আমি শুধু এটুকু জানি এখনও অবধি আমি হাজার তিনেক নতুন কবির কবিতা আবৃত্তি করেছি।
১৫.) এই শিল্পী জীবনটা বেছে নিতে তোমার কোনো প্রতিকূলতা এসেছে বাড়ি থেকে?
উঃ- শিল্পী জীবন এখনও ঠিক তৈরী হয়নি, যেদিন হবে, আমি বলতে পারবো৷
১৬.) এখন অনেক শিল্পী আবৃত্তি করেন আবার তুমি অনেকের প্রিয় শিল্পী। তোমাকে যদি বলা হয় এতো শিল্পীর মাঝে কেন তুমি প্রিয়। তুমি কি উত্তর দেবে?
উঃ- মনে হয়, যেহেতু আমি বিশেষ কিছু জানি না, তবু আমি প্রিয় অনেকের কাছে –এই ব্যাপারটাই বোধহয় আমাকে প্রিয় করে তুলেছে অনেকের কাছে। আবার একই জিনিস অপ্রিয়ও করে৷ শুনছি অনেক -ও আর কি বা জানে!
১৭.) তোমার আবৃত্তি জীবনের সেরা কোনো স্মৃতি যা তুমি আজীবন মনে রাখতে চাও।
উঃ- রবীন্দ্র সদনে প্রথম একক -৪ঠা আগস্ট্, ২০০৯।
★[পছন্দ তোমার]★
১.) প্রিয় রঙঃ- কালো
২.) প্রিয় ঋতুঃ- শীত
৩.) প্রিয় আবৃত্তি শিল্পীঃ- একজন নয়, অনেকেই।
৪.) শিল্পী রাজা দাস যে রাজার কবিতা স্টুডিওর প্রধান । তোমার চোখে সে কিরকম ?
উঃ- প্রধান হিসেবে যার এখনও অনেক কিছু শেখা বাকী।
৫.) আবৃত্তি জীবনে তোমার কোনো আক্ষেপ?
উঃ- এখনও আমি যা চাই, সেইরকমভাবে প্রকাশ করতে পারিনি কবিতাকে।
৬.) এমন কোনো ইচ্ছে যেটার জন্য তুমি অপেক্ষা করছ?
উঃ- হ্যাঁ, কিছু ডাক পেতে তো ভালোই লাগবে৷
৭.) তোমার চোখে তোমার মা?
উঃ- আমার জেদ আর শক্তির উৎস৷
৮.) এখন এই বয়সে একটা সন্ধ্যে তারার নীচে গ্রীষ্মের ছাদে বসে আছো। তোমার "রবিঠাকুরের" আবৃত্তি মনে পরছে বারবার মনে পরছে,তুমি যেন শুনতে পাচ্ছো "হারিয়ে গেছি আমি" নাকি মনে পরছে "জয় গোস্বামীর" লেখা "হৃদী ভেসে গেল অলকানন্দা জলে"!
উঃ- সত্যি বলবো? আমি আমার কোনো অবসরেই কবিতার সঙ্গে কাটাই না, ওকে আমি দূরেই রাখি৷
৯.) তোমার চোখে উর্মিমালা বসু?
উঃ- চিরকালীন “বিভা”৷
১০.) এই পৃথিবীটাকে কীরকম দেখতে চাও?
উঃ- “চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির”৷
------------ধন্যবাদ-------------
★সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জলফড়িং ওয়েব ম্যাগাজিনের ইন্টারভিউ সেকশন এডিটর সুদীপ্ত সেন(ডট.পেন)।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন