ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

বুধবার, ৫ জুন, ২০১৯




জন্মস্থান
বিদিশা নাথ
অতঃপর একটি মধ্যবিত্ত পরিবার জন্ম নিল অবশেষে,
আঠেরোর আগে  সিঁদুরের ছাপ বড্ড কড়া, বড্ড নিষেধ,
পঁচিশেতে পা সেই নিষেধ-ই কুড়িতে বুড়ি নির্বিশেষে।
দেওয়ালের গায়ে সিঁদুরের ছাপ;ড্রেসিং টেবিল আঠালো টিপে ঢাকা,
বাবা ফেরে রাত দশটায় ঠিক,
তাস-আড্ডায় সন্ধে গুলো ঢাকা।
বিচ্ছিরি খুব,বিচ্ছিরি বোস-গিন্নির মেয়ের মুখে ধোঁয়া,
ছেলে আমার সোনার আংটি,
বউ-এর গয়না যতই যাকনা খোয়া।
সুগার, প্রেশার,কোলেস্টরল এ জর্জরিত দেওয়াল তাক।
মিত্রবাবুর নতুন ফ্রিজের EMI হিসেব জানতে হবে;
তাই বাড়িতে চুনলেপ্টা তোলাই থাক।
মধ্যবিত্তের বড়ই জ্বালা:
নিয়ম নিকেশ মেনে চলতে হয়,
মধ্যবিত্তের বড়ই যাতন; প্রতিবেশীর মান রাখতে হয়।
না-এর বাধা পেরিয়ে এসে ,
যুগের নতুন জোয়ারে ভেসে চলতে- সে তো পারবে না,
মধ্যবিত্তে পড়লে শেষে,সমাজ গলা ধরবে ঠেসে,
চোখ রাঙানি এড়িয়ে চলা (ওদের ভাষায়) "ধর্মে নাকি সইবে না"।

...................

 নারীত্ব
~বিদিশা নাথ
সে বড় নারীপ্রিয় নাকি নারীত্ব-প্রিয়?
এই হিসেব এর বেড়াজাল জড়াচ্ছে তাকে বছর পনেরো হতেই,
গোঁফের রেখা ওঠার আগে তাকে মনে রাখতে হয় স্বপ্নদোষের সংখ্যা।
"বীনা দি কি সুন্দর টিপ পড়ে আর কাজল আঁকে চোখে"।
এ কথা বলাটাও পাপ।
"আমার ভালো লাগে না মাঠে জড়া জড়ি ,
আমার ভালো লাগেনা কাদা"।
বলিস না ,বলিস না যে তোর ভালো লাগে গলা সাধা।
"আমি অন্যরকম আমি বুকের ভিতর নরম পালক স্তন খুঁজে ফিরি"।
"আমি লজ্জা পাই নগ্ন দেহে পুকুরে ঝাঁপ"।
ওরা কি তাই কঠোর হাসিতে ছুঁড়ে দেয় পুরুষত্বের বীর্য?
ওরা কোনঠাসা করে আমায় যন্ত্রনায়?
আমি নারী না নারীত্ব প্ৰিয় সব গুলিয়ে যায়।
"তোর রোম ছিঁড়ে তোকে পুরুষ বানাব আজ"।বলে হুঙ্কার দেয় লিঙ্গের ধ্বজাধারী,
বাবা মা দূর দূর করে ভূত ছাড়ায়।
হয়ত এসব সবই জন্মহিসেবের ভুল-এর অনুতাপ।
মৃত্যু আসুক  এক ঢোক তরল হয়ে ,
না পাওয়া নারীত্বের মাতৃ দুগ্ধ হয়ে,
মৃত্যু এসে বুঝিয়ে দিক আমি নারী না বাঁচতে চাওয়া মানুষ দেহের এক শব?






" রোগ "
~বিদিশা নাথ
রোগ বাড়তে বাড়তে ত্বকের উপর স্তর ছেড়ে,
ঢুকে গেছে অলিন্দ ছাড়িয়ে অনেক অভ্যন্তরে।
যে লোক দেয়নি দেখা বছরভর; যে ভীষণরকম কুঁড়ে,
সুখের চাবি হাতে পেতেই  ভিড় জমাল পুরানো চাবির জোরে।
কাটাছেঁড়া শেষ হল না,পুরানো হল না আলাপ সঙ্গোপন,
তবু সে মুখ ফিরাল হঠাৎ ,চেনাপথ হল ব্রাত্যজন।
লালচে শিরা,ফুলে ওঠা চিবুক কালশিটে হল হাত,
'ভালোবাসি তবু' ঠোঁটে ফুটল না আর,
হল সেদিন-ই এই রোগের সাথে মোলাকাত।
আমি আজকাল আসা যাওয়া গুনি,
নামতা গাই,অঙ্ক কষি,কাটানো সময়ের ধারাপাত।
নামহীন বিড়বিড়, একলা দুপুরে দিন ঢোকে না আর ;শুধুই মধ্যরাত।
আমায় রোগ প্রেসক্রিপশনের অক্ষর-ধাঁধা খুঁজে মরে,
'তবু ভালোবাসি' বলে হৃদয় জেগে উঠল না আর,
কর্কট ক্ষত ছড়িয়ে গেছে অনেক ভিতরে।
চোখের কোণের আঁচিল তোমায় খুঁজেছে,
বয়সের শীর্নতাও চেয়েছে তোমায়।
যাবার আগের শেষবার টুকু বলে দাও,
এই রোগ সারাবার অন্তিম উপায়।





" গাছ "
~বিদিশা নাথ
আমরা একে অপরকে একটা গাছ ভাবি,
মাটিতে নিজেকে ছড়িয়ে দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁচে থাকা একটি গাছ।
তুমি কান্ড ডালপালা হলে আমি হই শিকড়,
তুমি মাটি থেকে শুষে নাও বেঁচে থাকার সুখ,
আমি তোমার ঝরে পরা ডাল-পাতা আহরণ করে,
বুনে চলি প্রকৃতিতে বেঁচে থাকার সালতামামি।
আমি লতা হয়ে তোমায় কক্ষনও জড়াই না,
তুমিও মুক্ত আকাশে মেলে দাও তোমার পরিধি।
বাতাস চুপ করে শোনে তোমার পাতার সরাসরানি,
পাখিরা বাসা খোঁজে তোমার শান্ত দেহে।
আমি তখন নিঃশব্দে তোমায় ধরে রাখি,
তোমায় বেঁধে রাখি।
আমি বিবর্ন হতে হতেও
অপেক্ষা করি তোমার।
কবে সোনালী উজ্জ্বলতার মোহ পেরিয়ে,কালো  মেঘের নেশা পেরিয়ে,
তুমি সেই মাটিতে এসে মিশবে।
আমরা একসাথে নতুন করে গাছ হবো আবার।


...............................

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন