ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

বুধবার, ১২ জুন, ২০১৯

লেখিকা রাসমণি সাহা দেবনাথের কবিতা পড়ুন


১.)
সাম্যের জয় গান

সাম্যের বাণী উৎসারিত যুগ-যুগান্ত ধরে।

সাম্যরব হয়েছে প্রতিধ্বনিত বিশ্বের দরবারে।।


নবী হজরত প্রেমের বাণী বিলোলেন অকাতরে....

খোদার দুনিয়ায় সবাই সমান, ভিন্ন কেহ তো নহে?

জেরুজালেমের কুমারী মা মেরির ছোট্ট শিশু,

'ক্ষমা'-ই পরম ধর্ম শোনালেন ক্রুশবিদ্ধ যীশু!

মানবতার পূজারী তথাগত বুদ্ধ গাইলেন সাম্যের গান।

সন্ন্যাসী নিমাই উদার কণ্ঠে করলেন মানুষের জয়গান।।

রামকৃষ্ণ পরম হংসদেব দেখিয়েছেন ' জীব জ্ঞানে শিব সেবা '- র পথ।

স্বামী বিবেকানন্দ শিকাগোতে বলিষ্ঠ কণ্ঠে বিশ্ববাসীকে দিলেন সাম্যের শপথ।।


কবি চণ্ডীদাস গেয়েছেন তাই...

' সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপর নাই '।

বিদ্রোহী কবি নজরুল তাঁর কলমে দিয়েছেন শান।

' গাহি সাম্যের গান,

যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধান '।।


তাহলে আজ কেন এত ছড়ানো হিংসার বীজ? কেন এত রক্তক্ষয় !

সুন্দর পৃথিবীর বুকে ক্রমশ বাড়ছে মূল্যবোধের অবক্ষয়।।

অবশেষে এটাই কি ছিল কাম্য ?

হায় রে মনুষ্য জাতি !! এরই নাম 'সাম্য' ?

অনেক পুণ্যের ফলে লাভ করেছি এ'মানব জনম।

এই নাকি আমরা বুদ্ধিমান জীব ? নেই কোন অনুতাপ, শরম !

ধর্মের নামে কেন হানাহানি, কেন এত বিদ্বেষ ?

জীবন একটাই, এসো হাতে হাত ধরে ভুলি সকল ক্লেশ।


সাম্য মানে,

মানুষে মানুষে সকল প্রকার বৈষম্যের অবসান।

সাম্য মানে,

মানুষের মধ্যে পারস্পরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, সমান সমান।।

সাম্য মানে তো তুল্যতা, সাম্য মানে সমতা।

সাম্য মানে দৃঢ় মানব বন্ধন, সাম্য হল একতা।।


২.)


মান বনাম হুঁশ 

প্রতিটা সংবাদ পত্রে এখন একটাই শিরোনাম।

বাদ যাইনি এফ এম রেডিও, টেলিভিশন।।

কম্পিটিশানের চক্র বূহ্যে

প্রথম স্থান দখলের যেন অ-ঘোষিত লড়াই!

ইঁদুর দৌড়ে অভ্যস্ত যান্ত্রিক নরকঙ্কাল গুলোকে টেনে

দল ভারী করতে রয়েছে

অভিনব কায়দায় এস. এম. এস - এর বড়াই।।


আশ্চর্য ! যারা জানতো না, তারাও

জেনে গেল, বলা ভালো

আলোড়ন জাগিয়ে দিল মিডিয়ার ফলাও।।

কিন্তু কী এমন ঘটল?

যার ফলে বিরাট একটা ঝড় বয়ে গেল !!


আজকের যান্ত্রিক সমাজে কেউ পাইলট, কেউ বা আইনজ্ঞ,

আবার কেউ ডাক্তার কিম্বা ইঞ্জিনিয়ার.....

সংকীর্ণ জীবনের দোলায় চড়ে,

অধিকাংশই যে মানবিকতায় একেবারেই অনভিজ্ঞ।।

তাই তো বুদ্ধিজীবীরা করলেন অর্থের বিনিময়ে স্থাপন,

আদর্শ মনুষ্যত্ব শিক্ষা - নিকেতন।

পঠিত হবে মানবিক গুণাবলী।।


ইতিমধ্যেই ব্যস্ত অভিভাবকগণ,

সন্তানদের জন্য ঢেলেছেন বিপুল ডোনেশন।।

ইন্টারনেটে করেছেন অগ্রিম বুকিং..

এ যেন বৈদিক যুগের উপনিষদের রি-মেকিং !!






৩.)
 মানবতার পূজারী 

হিমালয়ের পাদদেশে কপিলাবস্তু নগরে,

খ্রীঃ পূঃ ৫৬৭ অব্দে জন্ম নিলেন সিদ্ধার্থ, রাজা শুদ্ধোদনের ঘরে।

বিমাতা গৌতমীর স্নেহের পরশে...

বড় হলেন সিদ্ধার্থ প্রাচুর্যে, ঐশ্বর্যে।

মানব জীবনের দুঃখে যুবক সিদ্ধার্থ হলেন কাতর...

দুঃখময় জীবন রহস্য উন্মোচনে অগ্রগামী হলেন অতঃপর।


" বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি "...

নিরঞ্জনা নদীর সন্নিকটে প্রদ্যোষ কালে,

পরিব্রাজক সিদ্ধার্থ উপবিষ্ট হলেন অশথ্থ বৃক্ষ তলে।

ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও সর্বজনবিদিত  'বোধি বৃক্ষ ' নামে।।

একাগ্র চিন্তায় তিনি হলেন নিমগ্ন, হারালেন বাহ্য জ্ঞান...!!

ঘটল তাঁর সত্যোপলব্ধি, পেলেন জগৎ ও জীবন রহস্যের সমাধান।।


" বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি "....

" ধর্মং শরণং গচ্ছামি "....

মনস্থির করলেন, আত্মোপলব্ধির করবেন প্রচার।

তপুসা ও ভল্লুক বণিক দ্বয় প্রথম গৃহী শিষ্য তাঁর।।

সারনাথ নামক স্থানে বৌদ্ধ মতে পঞ্চ সন্ন্যাসী হলেন দীক্ষিত।

বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসে যা 'ধর্ম চক্র প্রবর্ত্তন ' নামে খ্যাত।।

গভীর তপস্যার দ্বারা লব্ধ জ্ঞানই হল ' চত্বারি আর্য সত্য'।

বৌদ্ধ ধর্মে ' নির্বাণ ' লাভই মানব জীবনের চরম লক্ষ্য।।

রোগ, শোক, ব্যধি, জরা থেকে পরিত্রাণের পথ ' অষ্টাঙ্গিক মার্গ '।

পঞ্চ শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা বৌদ্ধ ধর্মের তিনটি অঙ্গ।।


" বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি ".....

" ধর্মং শরণং গচ্ছামি "......

" সঙঘং শরণং গচ্ছামি "....

ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অত্যাচারে সাধারণ মানুষের প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত....!!

পরিত্রাতা রূপে আবির্ভূত হলেন তথাগত।

দিকে দিকে ছড়িয়ে দিলেন  'শান্তির ললিত বাণী'.....

উদার জাতিভেদহীন বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হলেন বিদ্বান, দরিদ্র, ধনী।।

তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন শ্রাবস্তীর মহাশ্রেষ্ঠী অনাথ পিণ্ডিক,,

ধনী বিশাখা, গণিকা আম্রপালী, চিকিৎসক জীবক, রাজা প্রসেনজিৎ।।


" বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি ".....

একবিংশ শতাব্দীতে আজও সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক ভগবান বুদ্ধ।

মানবতাবাদের মাধ্যমে বন্ধ হোক হানাহানি, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ।।

সমগ্র বিশ্বে ধ্বনিত হোক উদার বাণী...

" বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি "....।।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন