মৌমন মিত্র ( ৩০-৫-১৯)
বই পড়ব, সিনেমা দেখবো, শপিং করব ,কিংবা গল্প করব- চিচিংফাঁকের মতো হাজির আমাদের হাতের মুঠোয় নেট্ দুনিয়া। সত্যি, মাঝে মধ্যে কতো সহজ মনে হয় পৃথিবীটা এই মুঠোফোনের হাত ধরে। ভার্চুয়াল আড্ডা ,রাতারাতি বন্ধুত্ব, রাতারাতি সম্পর্ক- সব যেন হাতের মুঠোয় ।ভাবতেই হয় না! আর এই পথ চলতে চলতে আমরা কখন যেন ঢুকে পড়ি এই ইন্টারনেট জগতের নিজস্ব ফাঁদে।২০১৩ সালে ইংলিশ ডিকশনারীতে একটি শব্দ যোগ হয় যার নাম ‘ফোমো’। ভাবছেন, বাবা ! এতকাল হয়ে গেল শব্দটাই জানি না? আর ভাবুন, না জেনেই কিভাবে দিনের পর দিন বছরের পর বছর আমরা এই শব্দের প্রকোপে।
ফোমো- অর্থাৎ কিনা ফিয়ার অফ মিসিং আউট । মানে ধরুন কোন সামাজিক অনুষ্ঠান,পার্টি,পিক্নিক্ কিংবা সম্পর্ক উদযাপনে আপনি যেতে পারলেন না। কিন্তু সোশাল মিডিয়ায় দেখলেন আপনার বন্ধুরা সেখানে গিয়েছে, এর গা ঘেসে অথবা ওর গা ঘেসে ছবি তুলেছে,ছবি পোস্ট করেছে। আপনি দু চারটে লাইক, লাভ চিহ্ন ও জুড়ে দিলেন ( ঐ সোনার কেল্লার রিগার্ড জুড়ে দেওয়ার মতো) ।কিন্তু ফোন রেখেই আপনার মনে শুরু হল,কি যেন হারিয়ে ফেলার একটা অনুভুতি।একটা ভয়। একেই বলে ফোমো। এমন কি আপনার লাইক অথবা লাভ চিহ্ন টি ও এই ফোমোরই একটা অংশ।
ফোমো আসে অসুখী মন থেকে। একটা প্রতিযোগিতা মুলুক ভাবনা থেকে। আপনার মনের ভিতর সকলের অজান্তে চলতে থাকে এই ঝড়। এই বুঝি হারিয়ে ফেললাম। এই বুঝি ঐ বন্ধু একটু বেশি পেয়ে গেল। এই বুঝি ও আরেকটু বেশি সুখি হয়ে পড়লো। ইস্ গেলাম না কেন! এমন হাজার হাজার অসুখী ভাবনা বিস্তার হতে থাকে আপনার মনে দৈনন্দিন। এমনকি এইসব ভাবনা থেকে মানুষ বেশি বেশি করে সোশাল মিডিয়ায় নিজেকে খুঁজতে চেক্ করেন।ঘুম থেকে উঠেই, রাতে শুতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত। তার মানে,সোশাল মিডিয়া ফোমোকে আরও ভয়ানক রূপ দেয়।
সমাধান- আপনি নিজে। কিভাবে ? নিজেদের মধ্যে gratitude অর্থাৎ কৃতজ্ঞতা আনুন। রিসার্চ বলছে রোজ একটা মানসিক ব্যায়াম করুন। সকালে উঠে ফেসবুক নয় নিজের জীবন থেকে আপনার যা যা আছে বিয়গ করুন,মনে মনে।ভেবে দেখুন এইসব কিছু বাদে আপনার জীবনে কি পড়ে আছে? কেমন হবে এগুলো বাদে আপনার জীবন। দেখবেন নিজেকে অনেক সুখী মনে হচ্ছে বাকিদের তুলনায়।
সোশাল সফটওয়্যার আপনার জীবন দর্শনকে উজ্জীবিত করেছে, আপনাকে একবার সিংহাসনে চড়ায় আবার একবার সেই সিংহাসন থেকেই টেনে নামিয়েও দেয়।
আপনি, আপনার গৃহের রোল মডেল । বর্তমানে এর সমাধান বের করা বেশ কষ্টকর জানি ।কিন্তু রাশ আপনাকেই টানতে হবে। কোন থিওরি নেই। আপনার ফোমো যেন ওদের এফেক্ট না করে। ‘ওদের’ কচি হাত গ্যাজেট থেকে পুরোপুরি দূরে রাখা সম্ভব নয়। একটু বড় হতে শুরু করলে বাচ্চাদের ইন্টারনেট এর ক্ষতিকারক দিক গুলো স্পষ্ট করুন। বাচ্চাদের হাতে ফোন দিলে কিডস মোড অন করে দিন। দিনের কোন একটা সময় বাচ্চার সাথে সুন্দর ভাবে সময় কাটান। তাদের, কাছে টেনে নিয়ে এক সঙ্গে গল্প করুন,দিনের শেষে একটু পিলো ফাইট করুন।গল্পের বই পড়া ,গান চালিয়ে একটু নাচ করা।অপসন্ অনেক রয়েছে। এই সময় গুলোতে নিজেদের ফোন থেকে নিজেদের দুরে সরিয়ে রাখুন।
ওদের বুঝিয়ে দিন এই ভার্চুয়াল দুনিয়ার হাজার সংখ্যা বন্ধু জীবনের বন্ধু নয়। ওটা ফিকশন্। গোছানো গল্পের মতো। পরম বন্ধুদের , কোন্ হোটেলে আপনি চেক ইন করলেন বা কোন সিনেমা অন করে দেখছেন তা জাহির করার প্রয়োজন নেই।বাচ্চার,বড়োদের শরীর মন ভালো থাকবে আপনজনের সাথে,আপনজনের স্পর্শে । যার কোলে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুম আসে ,তার পাশে গা ঘেসে ছবি তুলে দুনিয়া কে নিজের সুখ, তৃপ্তির নমুনা ফলাতে হয় না কোন মাধ্যমের মাধ্যমে। আর জীবন অতিবাহিত করতে এই আপনজনরাই আমাদের সকলের পরম পাথেয় হোক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন