ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

বুধবার, ৫ জুন, ২০১৯

//আমি এখনও সেই অভিমানী//

আমাদের সম্পর্কটা ছিল এক্কেবারে আলাদা,
হয়তো বা অনেকের মতই কিন্তু আমার চোখে একেবারেই আলাদা।
যাকে এককথায় বলতাম, না দেখেও এতোটা ভালোবাসা যায়!
কেউ কিভাবে পারে এত ভালোবাসতে!
পড়ন্ত এক বিকেল বেলায় সেই যেদিন হাতে হাত রেখে বলেছিলে,
"ভালোবাসো"
আমি একটু যেন অবাকই হয়েছিলাম,
তারপর সেই খোলা হাওয়ায়,একলা প্রান্তরে
অবনমিত মুখেই বলে উঠেছিলাম, "আমিও"
তারপর কত দিনের অপেক্ষা...
আমাদের সম্পর্কটা ছিল এক অপেক্ষার সম্পর্ক,
আসবে আসবে করেও অনেকটা দিন পেরিয়ে যেত,
দীর্ঘ বিকেলগুলো আর কাটতেই চাইতো না,
তবুও দূর থেকেই অনুভব করতাম তোমায়,
একসাথে কাটানো সময়গুলোকে বার বার মনে করতাম,
আর এভাবেই আমার মধ্যে বেঁচে থাকতে
তুমি, তোমার ভালোবাসা,আমাদের ভালোবাসা।
রোজ রোজ নতুন করে প্রেমে পড়তাম,
নতুন এক তুমিকে খুঁজে পেতাম,
তবে অভিমানও হতো খুব,
কিন্তু অভিমানগুলো কত্ত সহজে তোমার গলার স্বরে গলে যেত, আমি বুঝতেই পারতাম না।
ভেবেছিলাম দীর্ঘ এই অপেক্ষার অবসান ঘটবে কোনও একদিন,
আর ঘটেও ছিল শীঘ্রই।
তবে, এই দীর্ঘ অপেক্ষার বিকেলগুলোর মতো
ফিকে হয়েছিল সেই পুরনো প্রেম,
সেই পুরনো তুমি!
প্রথমে ভ্রম বলেই মনে হয়েছিল,
কিন্তু পরে মনে হলো না সবটাই সত্যি।
পরিমাণ বাড়ল সবকিছুর,দেখা করার,কথা বলার
আর কড়াপাকের ঝগড়ার..
অভিমানগুলোও কেমন যেন জেদী হয়ে গেল,
তোমার গলার স্বরে কিছুতেই ভুলতে চায়লো না আর,
নতুন করে চিনতে শেখালো তোমায়।
তবুও নিজেকে বোঝাতাম, একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে,
সময়কেও দিয়ে ছিলাম অনেকটা সময়,
কিন্তু তারাও কেমন যেন অচেনা অতিথির মত ধরা দিল না,
দিনের সাথে যত ঠিক ছিল সব ভুল হতে লাগল,
চেনা মানুষকে খুঁজে পেলাম অচেনার গাম্ভীর্যে।
যে তুমিটা ভীষণভাবে আপন ছিলে,
যে তুমিটা প্রত্যেকবার দূর থেকেই এই হাতে হাত রেখেছিলে,
যে তুমিটা মান ভাঙাতে গলার স্বরে আদর করে,
যে তুমিটা বেধে ছিলে পাশে থাকার অঙ্গীকারে,
সেই তুমি অচেনা হয়ে গেলে, কেমন করে যেন বদলে গেলে,
দূর থেকেই যাকে বুঝতাম, বুঝিনা আজ তার কাছে এলে।
তারপর একদিন শেষ সিদ্ধান্তটা নিয়েই নিয়েছিলে,
একবার জানতেও চায়লে না আমি কি চাই?
আর মনের মধ্যে চরম অভিমান পুষে,
আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে
অনেক দূরে চলে গেলে,
যেখান থেকে চায়লেও আর ফেরা যায় না কোনোদিন,
যদিও তুমি চাইবে না জানি,
তোমার সুখ আজ মধ্যগগনে,
আমি এখনও সেই অভিমানী...

                                  শিল্পা মণ্ডল





//মুক্তি//

ভালোবেসে শিকল দেবে না বলেছিলে,
শুধু আলগা সুতোয় বেঁধে রাখবে,
আমি যখন গোটা আকাশ ঘুরে এসে ক্লান্ত হব, শ্রান্ত হব,
আদর দিয়ে সব ক্লান্তি মুছে দেবে।
আর যদি না ফিরে আসি সে প্রশ্নও রেখেছিলাম,
বলেছিলে_
আলগা বাঁধন খুলে স্বাধীনতা দেবে,
দূর থেকেই ভালোবাসবে,
বড়ো প্রেম শুধু কাছে টানে না, দূরেও করে!!
আচ্ছা,
তবে এই যাওয়ার কালে কেন এত পিছু ডাকো?
পুরনো সেই ডাকনামে কেন শুধু বেঁধে রাখো?
আজকে কেন আপন স্বার্থে পাল্টে গেছে ভালোবাসা?
এসব বুঝি কথার কথা, বাহানা মনের কাছে আসার?
     
                                                __শিল্পা মন্ডল





কেউ কোনোদিন আমারে তো কথা দিল না..//

কোনো লেকের ধার কিংবা সেই যে ভিক্টোরিয়ার প্রাঙ্গন
বা ধরো পড়ন্ত বিকেল বেলায় নির্জন কোনো রাস্তা,
না, আমাদের দেখা হওয়ার সাক্ষী হবে না আর এরা।
আসলে ওগুলো সব কল্পনার জগৎ, আমি বাঁচি বাস্তবে।
ঘেমো জামা, রুক্ষ চুল, শুকনো মুখ, আর অফিস ফিরতি সেই তুমি,
ওয়াচের কাঁটায় ট্রেন ধরার তাড়া লেগে,
হঠাৎ চোখ পড়ল,
এনামেল করা কালো দুটি চোখের ওপর,

মাঝে আটটা বছরের খরা,

গঙ্গা, যমুনা কিংবা ভাগীরথী কিছুই চোখে বয়ে যাবে না,
না, বুকের ভিতরটাও হঠাৎ করে প্লাবিত হবে না,
শুধু ওষ্ঠে ফুটবে জুঁই, চাঁপা কিংবা সূর্যমুখী,
তুমি মুখ ফিরিয়ে চলে যেতে চাইলেও
আমি লজ্জার ভূষণ ত্যাগ করে তোমার কাছে এগিয়ে যাব,
যে সহজে কুমারীত্বের ভূষণ ছাড়তে পারে
তার কাছে এটা নেহাত কিছু নয়,
"কেমন আছো? কি করো এখন? বিয়ে করলে কবে?"
__এসব প্রশ্ন করে বিব্রত করব না,
শুধু বলবো, "আমি ভালো আছি, খুব ভালো। জানো,
তোমার দেখা সেই অযোগ্য মেয়েটার কাঁধে আজ একটা গোটা বাড়ির দায়িত্ব,
তিন ভাই থাকা সত্ত্বেও বাবা-মা তার কাছেই থাকে,
শুধু বাড়ি না সমাজেও সে একজন প্রতিষ্ঠিত নারী।"
তুমি কিছুই জানতে চাওনি হয়তো,
তবুও আমি জোর করেই জানাবো,
কারণ, সবার সব প্রাপ্তির পিছনে অনেকেরই ভূমিকা থাকে,
আর আমার জীবনে সেই ভূমিকা একমাত্র তোমার,
সেদিন যদি অযোগ্য বলে আমাকে ফিরিয়ে না দিতে জানতেই পারতাম না আমিও আমি হতে পারি।
উত্তরের অপেক্ষা না করেই ফিরে যাব বিপরীতে স্রোতে,
লোকাল ট্রেনের কু-ঝিক-ঝিক শব্দে হারিয়ে যাবে সেই দেখা হওয়ার গল্প,
দূর থেকে ভেসে আসবে পুরনো গানের কলি-
"কেউ কোনদিন আমারে তো কথা দিল না,
বিনিসুতার মালাখানি গাঁথা হইলো না..."
     
                                         _শিল্পা মন্ডল




ভালোবাসা কি এতটাই সুন্দর হয়?//

দু চোখের পাতায় ঘুম নামেনি তার,
জেগে কাটিয়েছে সে সারারাত,
এতদিন যার ছবি কল্পনায় এঁকেছে,
তাকে নিজের হাতে স্পর্শ করবে,
অতল স্পর্শে  ভিজিয়ে দেবে তার শরীর-মন,
ছিটিয়ে দেবে গভীর ভালোবাসার আতর।
ভেবে কেমন মনটা ফুরফুরিয়ে উঠল,
হয়তো ভালোবাসার অনুভূতি এমনটাই হয়।
চাঁদটাকে আজ আশ্চর্য সুন্দর লাগছে,
এমনভাবে তো কোনোদিন তার আলো গায়ে এসে পড়েনি।
রাত্রির অন্ধকারে একটা গন্ধ  ছড়িয়ে আছে,
ভাবতে ভাবতেই ঘড়িতে কাটল রাত,
এইতো বেশ কয়েকবার পাখিদের শব্দ শোনা গেল,
তাহলে নিশ্চয় ভোরের আলো ফুটেছে বাইরে,
কোনদিন সে ভোর দেখেনি।
ভোরের বাতাস কেমন হয় তার অপরিচিত,
গল্পে বহুবার পড়েছে তবে অনুভব করেনি কোনদিন।
এ যেন এক আশ্চর্য অনুভুতি!
নিজের অপছন্দসই কাজগুলো কেমন সুন্দর হয়ে যাচ্ছে।

ওই দূরের আকাশ তার চিরপরিচিত,
কিন্তু এমন গাঢ়তা এমন গভীরতা সে কোনদিনও খুঁজে পায়নি,
এই আলো তার ভালোবাসার মতই স্নিগ্ধ, কিন্তু কই আগে তো চোখ পড়েনি ঐদিকে,
তবে আজকে কেন গোটা পৃথিবীটা হঠাৎ করে এত সুন্দর হয়ে গেল!
সবকিছুতে কেমন একটা মাদকতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,
মনটাকে বসন্তের রঙের মতই যেন ছড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে,
তবে কি ভালোবাসা এতটাই সুন্দর হয়?
প্রেমের পৃথিবী এমনই মুগ্ধ হয়?

                                               ___শিল্পা মন্ডল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন