নিজের লেখা কবিতা, নিবন্ধ, গল্প পাঠান হোয়াটসঅ্যাপ করে 7384324180 এই নম্বরে

বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

Sudipta Sen: বৃষ্টির কী মায়া নেই, নাকি সে ইচ্ছেমাফিক ইস্তেহার?


 

স্কুল, প্লিস বৃষ্টি থামিস না

সকাল থেকেই আজ বৃষ্টি শুরু হয়েছে অঝোরে,  বড়ঘরের খাটে বসে সে  ছেলেটা তখন পড়ছে পলাশীর যুদ্ধ। আজ স্কুলে পড়া ধরবেন স্যার। শুভব্রত সরকার, ইতিহাস পড়াতেন আমাদের।  উনি বেঞ্চের প্রথম থেকে শেষ অবধি রো ধরে ধরে ছেলেদের রিডিং পড়াতেন। কারণ হিসেবে আমার দুটো কথা মনে হত, ১.) নিজেকে রিডিং পড়তে হত না, কাজ কমছে স্যারের ২.) প্রথম বেঞ্চ থেকে লাস্ট বেঞ্চ তাঁর কাছে সমান চোখের মাপকাঠি পেত। দাঁড়ান টুইস্ট আছে তা হল, উনি রিডিং পড়ান, শেষ হলে এবার আগের দিনের পড়ানো থেকে প্রশ্ন করতেন, কার ঘাড়ে পড়বে কোপ কেউ জানে না, তখন উনি লাস্ট বেঞ্চ,মিডিল বেঞ্চ,প্রথম বেঞ্চের থেকে ছেলেদের ওঠাতেন। না পারলে হাত পাতিয়ে সপাট করে দিতেন বেতের ঘা। ছেলেটা পড়তে পড়তে ভাবছে বৃষ্টি আজ থামিস না প্লিস। তার কারণ সে পড়া করেনি, আজ স্কুলে গেলে তার কপালে দু:খ আছে। বৃষ্টি সেদিন শুনেছিল সে কথা। তবে মাঝে মাঝে সকাল থেকে শুরু হলেও থেমে যেত ঠিক ৯:৩০ দিকে। কাজেই স্কুল না যাওয়ার বাহানা থেকে বৃষ্টির নাম বাদ পড়ত। আসলে বৃষ্টি বুঝতে পারত না বোধহয় তার কী করা উচিত। বাচ্চার আবদার রাখা উচিত নাকি উচিত না? নাকি বৃষ্টি শাসন করবে বলেই সকাল ৭ টায় শুরু হয়ে আবার ৯:৩০ টায় থেমে ঠিক ১২ টাতে ঝেঁপে আসত কে জানে!


বৃষ্টি এবং রাস্তা ডুব

সারা রাত বৃষ্টি হয়েছে শহরে, জোয়ারের ফলে লক গেট বন্ধ থেকেছে সারা রাত। পরের দিন সকালে বৃষ্টি থামেনি। শহর ডুবেনি, রাস্তা ডুবেছে। সেই জল পেরিয়ে যান চলাচল। বিরোধীরা পুরসভাকে দুষছে।

রিপোর্টার নেমেছে হাঁটু অবধি জলে, দর্শক করছে ইয়ার্কি। ট্রাফিক পাচ্ছে বেগ। জলে ভাসছে আবর্জনা, জলে ভাসছে ফুটপাতিয়া ছোটদের নৌকো, রাস্তার দোকানগুলো হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে কলেজ স্ট্রিটে দোকান খুলেছে।  বৃষ্টি কিছু বোঝেনি নাকি পুরসভাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ছে? এমন সময় রাস্তারা কী চাইছে চল কে কতটা ডুবতে পারি দেখি বলে নিজেদের মধ্যে চ্যালেঞ্জ নিতে। আমি ভাবছি, বুঝতে পারছি না!


বৃষ্টি তুই স্মৃতির নাম

তারা প্রথম ভিজল ময়দানে দাঁড়িয়ে, তারা আবার ভিজল বাগবাজারের ঘাটে, তারা ভিজেছিল অফিস ফিরতে গিয়েও। চপ মুড়ি মেখে দুধ চা সঙ্গে করে তারা বৃষ্টি দেখেছিল ব্যালকনিতে। বাইরের বৃষ্টি হাওয়া মেখে ছিটেফোঁটা পড়ছে তাদের গায়ে। মনে পড়ছে সে সব কথা বৃষ্টি দেখে। দুজনের কথা হয় না অনেকদিন। - ওকে ব্লক করেছে সহজে। বৃষ্টি কী কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে এলো ?


বৃষ্টি তুই থাম না প্লিস

আজ অফিস যেতে হবে টাইমে। কাল দেরি হয়েছে গুচ্ছের। বৃষ্টি থামার নাম নেই। তুই একটু থাম না প্লিস, ভিজে ভিজে যেতে হলে আজ নির্ঘাত জ্বর হবে। ভাবছেন কর্পোরেটের বান্দাগুলো।

যিনি ছাতা মাথায়, সাদা পোশাকে ট্রাফিক কন্ট্রোল করছেন, অঝোরে বৃষ্টিতে ভিজে নেয়ে একসা হয়েছেন তিনিও ভাবছেন বৃষ্টি প্লিস থাম। আমি গাড়িতে যেতে যেতে সেই ট্রাফিকের দিকে তাকিয়ে দেখেছি তার কাঁধে দায়িত্ব, ইউনিফর্মে বৃষ্টিধারা। বৃষ্টি কী বুঝেও না বোঝার ভান করে?


বৃষ্টি, মিছিল, কাজল চোখ

নানান ইস্যু, প্ল্যাকার্ড ঢুয়ে গেল বৃষ্টি জলে, নেতারা ভিজছে, সমর্থকেরা ভিজছে। ভিজছে পুলিশ মিছিলের আগে আগে৷ বৃষ্টির মায়া নেই,  ওমন সময় একখানা মেয়ে তারও চোখ ভিজে গিয়েছে,  কাজল ঢুয়ে যাচ্ছে, স্লোগান থামছে না। বৃষ্টি কী ইচ্ছে করে করছে নাকি সবই সহ্যক্ষমতা দেখার জন্য? মিছিল থামেনি, বৃষ্টিও থামেনি, কাজল ধুয়ে গেছে, আলুথালু হয়ে গেছে চোখ। ভিজে গেছে ওর হালকা পিচ রঙেন কুর্তিটা। বৃষ্টি তোমার মায়া হয়নি?


বৃষ্টির হয়েছে জ্বলা। ও কী করবে? ছোটদের মন রেখে ঝরবেই,  চাকুরিজীবীদের জন্য থেমে যাবে,  পুরনো প্রেমের ঘায়ে স্মৃতি উস্কে যাবে বলে চিরকাল আসবে না বৃষ্টি? বৃষ্টি যে কী করবে? আমি জানি না, শুধু জানি চোখ ধুয়ে গেলে বৃষ্টি কাজল পরে নিক!

সম্পাদকীয় অরূপ সরকার - আমরা চেষ্টা করেছি পাঠকের অনুভূতির সঙ্গে মিশে যেতে

 জলফড়িং-এর জুলাইয়ে বর্ষা সংখ্যা – ২০২৫



প্রিয় পাঠক,


বর্ষার রিমঝিম শব্দে, মাটির সোঁদা গন্ধে, আর সবুজের অফুরন্ত আবরণে আবার হাজির হল আমাদের প্রিয় বর্ষা সংখ্যা। প্রকৃতি যেন নতুন প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছে, আবার জেগে উঠেছে জীবনের গোপন সুর। এই ভেজা দিনে হৃদয় নরম হয়, অনুভব হয় এক অদ্ভুত টান, যা শুধু সাহিত্য, সঙ্গীত আর স্মৃতির মধ্যেই ধরা পড়ে।


বর্ষা বাংলা সাহিত্যে চিরকালই এক গভীর অনুপ্রেরণার উৎস। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটায় মিশে থাকে ভালোবাসা, বিষাদ, প্রত্যাশা আর বিরহের কাহিনি। তাই আমাদের এবারের সংখ্যা সাজানো হয়েছে সেই বর্ষারই রং ও রসে। রয়েছে কবিতা  গুচ্ছ কবিতায় —যেখানে বর্ষা নিজেই হয়ে উঠেছে নায়ক।


এই সংখ্যায় অংশ নিয়েছেন নতুন ও অভিজ্ঞ লেখকেরা। তাঁদের কলমে বর্ষা কখনো গ্রাম বাংলার ধানক্ষেতে দাঁড়িয়ে, কখনো শহরের জানালার কাঁচে জমে থাকা ফোঁটায় ধরা দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি পাঠকের অনুভূতির সঙ্গে মিশে যেতে, মনের কোণে জমে থাকা স্মৃতিকে ছুঁয়ে দিতে।


বিশ্বাস করি, আমাদের এই প্রয়াস আপনাদের মনে একটুখানি ভেজা রঙ ছড়িয়ে দিতে পারবে। আপনাদের পাঠ, মতামত ও ভালোবাসাই আমাদের পথ চলার প্রেরণা। ভালো থাকুন, বৃষ্টির মত মুগ্ধতায় ভেসে থাকুন।


শুভেচ্ছান্তে,

সম্পাদক

বর্ষা সংখ্যা – জল ফড়িং

দর্পন- বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়

 



দর্পন

বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় 


কিছুই চুরি করেনি সে

কুড়িয়েছিল পথের থেকে

জীবন শুরু হয়েছে যার

গাঁথল তাকেই শেষ পেরেকে


এমনভাবে ঘিরল যেন 

দুনিয়া এক চক্রব্যূহ 

কোথায় ছায়া কুড়িয়ে পাবে

জঙ্গলেও তো বুনো শুয়োর...


ক্লাস সেভেনের অপাপবিদ্ধ

মন্দ-ভালোর মিশেল যুবক 

বিচার মানেই নির্বিচারে

মেরে ফেলার আর একটা ছক?


সুপারফাস্টে আসছে মৃত্যু

কে খায় ঠেলা? কে দেয় ঠেলে?

লাইনে পড়ে মরতে হবে,

একটু জীবন কুড়িয়ে পেলে?

মেঘবিম্ব - দীপশিখা চক্রবর্তী


 

মেঘবিম্ব

দীপশিখা চক্রবর্তী 


মেঘজল গায়ে জেগে থাকে স্বর,

পাখিদের ডানায় আলোর নরম শ্বাস,

বহুতল বাড়ি নিঃস্বারে থাকে একা,

আকাশ বুকে এখন শ্রাবণ মাস।


আসুক তবে স্থির হয়ে থাকা বরষা,

সীমান্তজুড়ে ডানা ঝাপটানো শব্দ,

ভাঙলে বাঁধ মুছে যায় যদি বিম্ব,

পরতে পরতে বিলাপী সময় জব্দ।


ধূসর কালো ছবিতে তোমার দু'চোখ,

মেঘেদের সারি উড়ে চলে বহুদূরে, 

অগোচরে আজ বেড়ে ওঠে কেন ঋণ?

শূন্য বুকেও ধারাজল নামে ঘুরে।


কখনো দেখেছ ভাঙা পাঁজরের মুক্তি?

পুড়ে যায় সব, অবুঝ কঠিন ঝড়ে,

এতসব কথা তোমায় লিখি যখন,

মেঘের গরজ সাজছে তোমার ঘরে।


আকাশ কখনো দায় নেয় না পথের,

শাসন হাওয়ায় কাশের শহর কাঁপে,

সব ছাপিয়ে বৃষ্টি মিছিল গভীর,

মৌন থেকেও আগলে রাখা মাপে।

বৃষ্টিজলে ধোয়া - অনুব্রতা গুপ্ত

 


বৃষ্টিজলে ধোয়া 
অনুব্রতা গুপ্ত

কী কথা বলেছি তাকে, কী কথা হারাই 
শব্দের চৌকাঠে শব্দ তারাই 

মেঘেরই তো তর্জমা বৃষ্টি নিধনে
জল বলে ডাকো যাকে, শরীরে র মানে

শিলালিপি ভেসে গ্যাছে, বহুদিন হলো
এখনও ঘুমের ঘোরে একা কথা বলো? 

জানলায় মেপে রাখি সব যাওয়া-আসা 
যেটুকু সরল নয় তার কাছে আসা।

সে-সব পুরনো নদী, মেলে রাখা ছাতা
বৃষ্টি আসবে বলে, মলাটের খাতা

এখনও কবিতা লেখো? অংকের দিনে? 
বোঝোনি কখনও তুমি, গান শিখে ছিলে! 

নদী তার শুয়ে থাকে, কবেবার জলে 
আসলে শব্দ বলে, না বলার ছলে 

দৃশ্য পাল্টে রোজ স্নানাহার করি
বাঁচতে বাঁচতে রোজ, মাঝেমাঝে মরি

হারানো লোকের থাকে একা সম্মান 
যে চুলোয় আমি যাই, তোমারই তো দান

দুঃখ আসলে এক জামা পরা মেয়ে
চেয়েছে আলোর বাঁশি, আলো'কে না চেয়ে

একে একে নিভে আসে, কমে আসে রাতি
স্মৃতির সৌধ মানে যুদ্ধ - বিরতি... 


পাপ পুণ্য - মৌমন মিত্র


 

পাপ পুণ্য 

মৌমন মিত্র 


তখনও মেঘ ভেসে যায় দূরে! 

ঘন অরণ্যের ভিতর খুঁজেছি নুড়ি পাথর 

এঁকেছি একাকীত্ব, কাম, স্থির নিশি যাপন 

সাহসী, দুর্লভ সম্পর্কও দ্বন্দ্বে ভুল হয়।

বৃষ্টি ফোঁটা নীরব করতলে। এও  সত্য মুহূর্ত! 


পাপ পুণ্য নিমগ্ন বুকে মনে থাকে না। 

তাই আত্ম খনন যদি দৃশ্য হয়, পলকে সে দৃশ্য 

কলঙ্কিত, নিষ্ঠুর। তুমি মেঘকে বোলো,

এ সব কথার দৃষ্টি, ভঙ্গি হয়ে কাল যেন ঝরে পড়ে ও 

ঝমঝম যেন নখের বিষাদ ধুয়ে, চিত্রময় 

তোমার জিভে আগুন জ্বলে ওঠে! এভাবেই একদিন 

আমার ভাঁজে তোমার যুদ্ধক্লান্ত, বুভুক্ষু শরীরের আশ্রয়—

জলজ অন্তরাল - চন্দ্রাবলী বন্দ্যোপাধ্যায়


 জলজ অন্তরাল

চন্দ্রাবলী বন্দ্যোপাধ্যায় 


বৃষ্টি ছিল না, তবু জানালায় জল

শব্দ পড়ে যায় ছায়ার গায়ে।

ফোঁটা নামে না, ডুবে যায় শিরায় শিরায়—

মাটি চুপ করে ছিল, শুধু হাওয়া

গড়িয়েছিল পাঁজরের ফাঁক দিয়ে।

আমি শুধু বৃষ্টি দেখছিলাম।


ছাদ একা বসে থাকে আমার নাম ধরে

তুমি ফেরো না, তবু তোমার ভেজা গন্ধ

থাকে বাতাসে ঘুম কাঁপে—

কারো স্পর্শে নয়, নিঃশব্দ পতনে।

একদিন তুমি হেঁটে গিয়েছিলে বলে

মেঘ মনে কপাট শূন্যতার ভার 

হাওয়ার ফিসফিসানি—

বৃষ্টির মুখ ছিল না, তবু চোখ জানত, 

এটাই তোমার রেখে অনিচ্ছুক বাঘবন্দি খেলা

একটা বিদায়—

খাতাকলিপত্রিকা - তুষারকান্তি রায়

 


খাতাকলিপত্রিকা 

  তুষারকান্তি রায় 


দেখেছো ব্রজবাসী !  দূরভাষে 

কেমন ভেসে আসছে কৃষ্ণকলি বাঁশি 

জোড়াপুকুরের জলে কেমন 

আকাশের ছায়া পড়ে আছে  ?

নিধুবনে রঙের সপ্তক ?

এবার ছুটিতে তোমার দেশে যাবো রাধারানি । তুমি শঙ্খ বাজিয়ে 

নাম না জানা গাছের নীচে 

লাল - নীল ফাল্গুন সাজিয়ে দিও ।

প্রকৃত ফুল না ছায়া! 

সেকথা ভেবো না । দ‍্যাখো উদাসী 

হাওয়ায় কেমন বয়ে যাচ্ছে 

মেঘের  এক্কাগাড়ি ,

চমকিত লিপিমালা আর 

কাঞ্চনের দিন ! 

আমি খাতাকলিপত্রিকা থেকে বেরিয়ে আসা শ্রীধারা , আট প্রহরের  কথা আর এগারোটি কবিতার মালা নিয়ে আসছি 

কখন দরজা খুলবে তুমি ?  

তোমার ভোরের !

বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫

অসময়ের ট্রাম - জয়াশিস ঘোষ

 



অসময়ের ট্রাম
জয়াশিস ঘোষ

এই ধরো, তুমি মেঘ ভালোবাসো
আমি ভালোবাসি জংলা পাহাড়
অল্প অল্প আমি ভিজে আছি
অল্প অল্প তুমিও আবার –

তুমি আর ক’বে এত চেনা হলে?
আমি সুতো ছেড়ে দিয়েছি ক’বেই 
ভালো-টালো সব গল্পেই বাসে
তবু মেঘ হলে তুমি আসবেই 

আসবেই তুমি –ভুল ঝরে যাবে
গোপনীয় জলে ভেসে যাবে পাড়া…

অন্য পাড়ার মেয়ে- রাখিবা খাতুন




অন্য পাড়ার মেয়ে

রাখিবা খাতুন 


সম্পর্কের বাঁধন আলগা হয়েছে,

কানের দুল, কপালের টিপ মনমরা খুব,

জন্মদিনগুলো সারপ্রাইজ ভুলে যেতে বসেছে,

হাসি, তাই বুঝি অন্য পাড়ায় বেমালুম ঘুমের অসুখ।


স্নান, খাওয়া ভুলে আস্কারার খোঁজ চোখের ডার্ক সার্কেলে,

শরীরে জৌলুশ নেই আর চাকচিক্যের বন্দরে,

আশেপাশের প্রতিবেশীরা বাহ্যিক ছায়ায় খুব সুখী,

গোপনে তারা পুড়ছে ঠিকই একচ্ছত্র অধিপতি।


পাইকারির ভিড়ে দোস্তানা আজকাল সস্তার,

এ হাড়, মাংস খুবলে খেলেও মানুষগুলো সপ্তার,

সব যেন মজার, নিছক আড্ডা মারতে মিথ্যে শোরগোল,

নষ্ট মেয়ের লাশ এখন ঠিকানা ফুটপাতের, খদ্দের জুটছে না তাও!


কবিরা বেহায়া মৃত্যু নিয়ে লিখছে, সংবাদ বিক্রি হচ্ছে হুবহু,

কলমের কালির শুভেচ্ছায় নবান্নের দেশ এখন,

আসন্ন উৎসবে মাতামাতি, সুলোভন সাজসজ্জা,

চেতনায় সরস্বতীর চরণকাল, স্বপ্নে যদি না হয় দেখা!


শতধিক ধিক্কার।

বৃষ্টি যাপন- জয়দীপ রায়

 


বৃষ্টি যাপন

জয়দীপ রায়


আমি বরাবরই একটু ভিজতে ভালোবাসি

বৃষ্টি দেখলে নিজেকে সামলানো ভার

মনের ভিতর জমতে থাকা ছটফটানি টা

বেরিয়ে আসে আলাদিনের দৈতের মতো,

মনে হয় এ যেন প্রথমবার বৃষ্টিতে ভিজছি।

বৃষ্টি আমার কাছে প্রেমিকার মতো

বৃষ্টি মানেই ছন্নছাড়া, খেয়ালখুশি ভাবনা।

বৃষ্টি মানেই গোসাঘর ছেড়ে 

হাতটা ধরে বেরিয়ে পড়া।

বৃষ্টি মানেই রাগ অভিমানের যোগ বিয়োগ ভুলে,

জাপটে জড়িয়ে ধরা।

বৃষ্টি মানেই অভিমানের স্তর ভেঙে

অজস্র কান্নার স্রোত, 

আজ ভিজুক শহর

ভিজবো আমি

ভিজবে তুমি,

ভিজবে ডাকবাক্সে পড়ে থাকা 

মেঘপিওনের চিঠি।

ইতি, ভালো থেকো বৃষ্টি।

                       

জল রঙ - মলয় পাল

 



জল রঙ

মলয় পাল


ধরো আজ বর্ষার শনিবারের বিকেল

ট্রামের শেষ সিটে জানলার পাশে বসেথাকা

ছেলেটা আমি। 

তুমি উঠলে হঠাৎ, বসলে পাশে।

আর তখনই ট্রামের হলুদ নিয়ন ল্যাম্পের আধো অন্ধকারে সন্ধ্যা নেমে এলো শহরে।

বৃষ্টির ছাট ঝাপড়ে পড়ছে মুখে

 একটিও কথা হলোনা আমাদের

ঘন্টা বেজে উঠলো টুং টুং টুং... 

নেমে গেলে


ফেলে আসা মন-কেমন হিন্দি গানের মতো

বাজতে থাকলে তুমি!

মেঘবালিকা - বিদ্যুৎ মিশ্র




মেঘবালিকা 

বিদ্যুৎ মিশ্র 


মেঘ বালিকা আজকে হঠাৎ উদাস কেন 

বৃষ্টি ঝরে তোর যে চোখে শ্রাবণ যেন।


কী হয়েছে বলনা আমায় দুষ্টু মেয়ে

আগের মতই মিষ্টি সুরে ওঠ না গেয়ে।


দূর আকাশে ওই চেয়ে দেখ মেঘলা ভারি 

উদাসী মুখ তোর কী আর দেখতে পারি ?


মেঘ বালিকা আয় না কাছে লক্ষ্মী মেয়ে 

ভীষণ খুশি আজকে তোকে কাছে পেয়ে।


চলবি যখন ঝম ঝমা ঝম বাজবে নুপুর 

খিল খিলিয়ে হাসবি তখন সারা দুপুর।


তোর হাসি মুখ দেখতে পেলেই লাগে ভালো 

ভাঙ্গা ঘরে আমার তখন জোছনা আলো।




সফেদ কবুতর - নব কুমার দে

 


সফেদ কবুতর 

নব কুমার দে 


ওরা বিশ্বাস করতো

আকাশের অনেক উঁচুতে সাদা কবুতর উড়ে বেড়ায়


নদীর দুপারে পাত পেড়ে বসতো ওরা

ওদের জন্য ভাত ভরা থালা ভেসে আসতো


একদিন নদীর জল লাল হয়ে উঠলো

ভাতের থালাও এলোনা


জিজ্ঞেস করলাম তোমরা জানো কেন এমন হলো

সমস্বরে জবাব দিল , সাদা কবুতর খুন হয়েছে

আমাদের বিশ্বাসের রক্তে নদীর জল লাল


বললাম আমি জানি কে খুন করেছে

তোমরা কি তাকে শাস্তি দেবে


ওরা সবাই মাথা নিচু করে চলে গেল

ঠিক তখনই একটা দাঁড়কাক ডানা ঝাপটালো

আড়াল থেকে।

সাওয়ান আয়া হ্যায়… সৌভাগ্যর কবিতা পড়ুন




 সাওয়ান আয়া হ্যায়…

সৌভাগ্য


তুমি ফুলের মাঝে আলো

তুমি মায়ের মতো ভালো


আমি ফিরিয়ে দিতে রাজি চাঁদও 

তোমায় চেয়েছি বলে…


তোমার এলোমেলো ওই চুলে

রাখছি নিজের জীবনখানি তুলে


খরাপ্রবণ এ মনে আজ, প্রিয়—

তুমি বর্ষা হয়ে এলে!

মা- কে দেখে শেখা ‐ দিশানী

 


মা- কে দেখে শেখা 


‐ দিশানী


ভালোবাসায়,

                    অবহেলা জিতল যেই বার 

                     নিঃশব্দে শেষ বিকেলে 

                     ছাড়লাম সেই ঘর।


আসলে, 

             মা-কে দেখেই শেখা 

             নিজের ভাগ বিলিয়ে দিয়েও 

             ঠোঁটে হাসির রেখা!

চলন্তিকা ও ভাঙা শব্দার্থ - দেশিক হাজরা


 

চলন্তিকা ও ভাঙা শব্দার্থ

দেশিক হাজরা 


সবে হিম হয়ে যাচ্ছে কিছুক্ষণ তোমার কথা ভাবলেই

গায়ে আঁচর কেটে যায় সাঁতসাতে ঠান্ডা বাতাস

মেকি নৈতিক সন্ধ্যা ড্যাব ড্যাব করে দেখে

ঘরের প্রদীপ পুড়ে যাবার গন্ধ আসে নাকে

চেয়ার ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করে না।

কয়েকটা লেখা শেষ না করতেই বিকেল গড়িয়েছে।

সারা দুপুর ধরে আমি শুধু তোমাকে ভেবেছি

বেশিরভাগই নষ্ট করেছি বাংলা কবিতার ভবিষ্যৎ।

তোমাকে নষ্ট বলে দেবো সমস্ত অক্ষরে !

বলে হয়তো কিছুটা মনে মনে গরম উত্তেজনা গড়ে উঠে,

না— আত্মবোধ সহমত দেয়নি

ঠাকুর ঘর থেকে অনবরত ভেসে আসছে ঈশ্বরীয়

সংলগ্ন ধ্বনি, সেই ধ্বনি আমার নষ্ট মানসিকতার

শুদ্ধিকরণ করে দিবে হয়তো। দোষ দিই না দ্রষ্টব্যে

এমনকি তোমাকেও না। কেনই বা দিতে যাবো

যে যার জায়গায় সব ঠিক।

একটি ধারা আরেকটি ধারাকে সোজাসুজি

ভাবে পরশো করছে না,

আলুলায়িত ভাবে বৃষ্টি পড়ছে বাইরে।

মাটির সোঁদা গন্ধের নেশায় আমি আমার সমস্ত

কবিতার ব্যাকারণ মিলিয়ে নিচ্ছি।

চারিদিকটা একটা ঘন ঠান্ডা নিস্তব্ধতায় ঘিরে ধরছে

অনাব্যাকারণীয় কবিতা একটি একটি করে

ছিঁরে পুড়িয়ে দিচ্ছি আর আগুনের নাড়ি ধরে

শব্দের চিৎকার ভেসে যাচ্ছে ওই বৃষ্টির মধ্যে। 

এখন আমি এমনই একা এবং একাধিক 

উদাহরণস্বর: চলন্তিকা ও ভাঙা শব্দার্থ।

এসো হে বর্ষা - কমলাকান্ত সাহা

 




এসো হে বর্ষা 

কমলাকান্ত সাহা


ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি, সুন্দরী বর্ষা

    এসো না একটু জোরে,

 তোমার জন্য কত প্রতীক্ষা

      সারাটি বছর ধরে |

  তোমার বিহনে তপ্ত দুপুর

      ক্লান্ত পথিক বর,

   চাতকের দিকে চাহি প্রার্থনা

       একটুকু ঝরঝর !

আষাঢ় এসেছে তুমিও এসো-

      স্বাগত জানাই তাই,

শ্রাবণের মেঘে সুন্দরী রূপ

      তোমার দেখতে চাই |

তোমার দানে প্রকৃতি সবুজ

    সুজলা-সুফলা মাঠ--

ধরার বুকে তোমার আগমনে

    বসুক চাঁদের হাট |

বৃষ্টি এলে- সায়ন দাস

 


বৃষ্টি এলে 


সায়ন দাস


বৃষ্টি এলে ভীড়ের মাঝে অন্যরকম মনে

বৃষ্টি নামুক তোমার চোখে ভীষণ সঙ্গোপনে।

হারিয়ে ফেলার একটু আগে যেসব হাতছানি,

খুব গুছিয়ে বললে তাকে বিচ্ছেদ বলে জানি। 


গাছের পাতায় কিংবা আকাশ বিষন্নতার তীরে

সমস্তটাই নির্বান্ধব তোমার কাছে ফিরে—

জমাট বাঁধে অশ্রু হয়ে কত চোখের সারি

বৃষ্টি নামে তোমার চোখে আকাশ ভীষণ ভারী।


চোখের জলের উৎস হয়ে কেউ বা গেছে রয়ে,

তাকে এবার মুক্ত করো বৃষ্টিজলে ধুয়ে।

আকাশ-মাটির সমান্তরাল বৃষ্টি নামে যত

সারিয়ে তুলুক মেঘের কাছে তোমার রাখা ক্ষত।

কবি অরিত্র দ্বিবেদীর গুচ্ছ কবিতা পড়ুন

 কবি অরিত্র দ্বিবেদীর গুচ্ছ কবিতা 



দৃষ্টিকটু



সে, সরু হয়ে শুয়ে আছে নদীটির পায়ে 

নদীটি দীঘল, কালো, ছত্রাক শরীর 

কবে যেন আকাশেরও নিচে ঘটে গেছে  

অনিন্দ্য বাসনা তার, নামসহ রয়েছে

শুকিয়ে। প্রাচীন নদী, অষ্টপ্রহর জলে

বয়ে যায় কবেকার কথা, প্রেম ভালোবাসা আর

তুঙ্গ শতদলখানি, দেখেছি তাকিয়ে।


তবুও, সে শুয়ে আছে নদীটির পায়ে

নড়েও না কখনও, ওভাবে পড়ে থাকে

অক্টোবরের কুয়াশার মতন, নিকষ, নিস্পৃহ 

অথচ নিন্দিত নয় জানি, কথাখানি তার

গাঁদার মালার ভেতর যেন খাঁচার পাখি একটি


আমি শুধু দেখি, চিরটিকাল ঝণী হয়ে

দেখাটি অভিশাপদুষ্ট, লেখাটিও তাই 

ফিরে ফিরে আসে, অবাক প্রহরে অবসন্নপ্রায়। 



মনীষা

(উৎসর্গ: Dr. Faustus)

অরিত্র দ্বিবেদী


হাত পেতেছি বজ্র নেবো

মুণ্ডমালা খই উড়িয়ে

হাত পাতছি বজ্র নেবো


--- জ্ঞানশীর্ষ, বল্কলে পা

বান ডেকেছে, আঁচিয়ে নেবো

সূর্যপোড়া, চন্দ্রপোড়া ---

অসাবধানী গরাদগুলো 


দে ঠুঁকে দে, ছিন্নমাথা

হাড় জিরোনো কাঙাল দেহ

জ্বলছে যেন কাঠকয়লা!


ভুল ধরে দে, বুদ্ধ কবি

চক্ষু চোখে শেতল দেবো


জল ঠিকরে, রক্তচুষে 

অন্নকারা ছাই ছড়িয়ে

হাত পেতেছি, বজ্র নেবো। 



মৃগাঙ্ক মজুমদারের গুচ্ছ কবিতা

 

কবি: মৃগাঙ্ক মজুমদার




বর্ষা এলে-১ 


যে সব জলে জং ধরে না 

সেই সব জলকণা জুড়ে 

লোভ বেঁচে থাকে । 


মেঘ করার পরে 

আষাঢ়, শ্রাবণ গুনতে থাকে যখন মন, 

তখন শহর আর গ্রাম জুড়ে 

চাতকের প্রেম ভিজতে থাকে ।


বর্ষা এলে, 

একমনে পাপ ধুতে থাকে

ধুতে থাকে সব যৌন গন্ধ, 

বৃষ্টিস্নাত মলেস্টেশন,

আর স্তাবকতা,

বৃষ্টির মতন 

ঝরতে থাকে। 





বর্ষা এলে -২ 


জলরঙে আঁকা 

বা পেনসিল 

সব জলফড়িং ই 

বিষাদ জলে 

একবার না একবার 

ডুবেই যায় ।


বর্ষা এলে, টাপুরটুপুর 

শব্দ জড়িয়ে যারা হাত ধরে 

হেমন্তে নীরব থাকে 

আর 

শীতে হিমঘরে কাঁটা ছেঁড়া হয় । 



বর্ষা  এলে -৩ 


জল বেয়ে যে সমস্ত 

উমনো, ঝুমনো 

অগোছালো ভালোবাসার 

আঁকড়ে ধরে,

বৃষ্টি জুড়ে তারাই 

বেপরোয়া হয়ে আচমকা 

ঠোঁটের উপর আছড়ে পড়ে ।

তার পরে একটাই ছাতা,

জলে ভিজে ভাঁড়ে চা 

আর দুটো বর্ষা এভাবে পেরোনোর পরে 

প্রবাসে খবর  পাই 

তোমার বাড়ির লোকেরা 


জল সইতে গিয়েছে ।

আজকাল বর্ষা এলে 

মেঘ, জল, বৃষ্টির ফোঁটা 

সব কিছুর জানলার শার্সির 

ওপরেই আটকে রাখি। 



মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫

SUDIPTA SEN: কোথায় গিয়ে মনে হল, ধর্ষণের বিচারের চেয়েও কলেজ নির্বাচন বড়!


 মানুষ সোচ্চার প্রাণী এই কথাটা ভুল কিন্তু কিছু মানুষ সোচ্চার প্রাণী এই কথাটাও আংশিক ঠিক নয় আবার ঠিকও৷ আংশিক ঠিক নয় কারণ কিছু মানুষ একাধিক বিষয়ে সোচ্চার প্রাণী।  কেন এমন বলছি? কারণ সমাজে ঘটে যাওয়া একটি কালো দিকের বিচার চেয়ে কেউ সোচ্চার হলে পাশাপাশি আরও বহু সোচ্চার মানুষ আসে, তারা তাদের আরও নানান বিষয় সেখানে তুলে ধরার চেষ্টা করে।

অর্থাৎ তখন একটি বিষয়ে সোচ্চার হওয়া হারিয়ে যায় আরও নানান সোচ্চারতার প্রলেপে৷ ঠিক যেভবে হারিয়ে গিয়েছে অভয়া কান্ডের আন্দোলন ও তার বিচার।

গত বছর ১০ আগস্ট থেকে আর জি করের জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন শুরু হল অভয়া কান্ডের বিচার চেয়ে। জ্বলল মোমবাতি, উঠল স্লোগান, মিডিয়া কভার জোরদার৷ তবে ওই বিচারের সাথে যুক্ত হল আরও নানান দিক। হাসপাতালে অরাজকতা, দীর্ঘদিব থমকে থাকা কলেজের নির্বাচনের মতো বিষয়গুলো কোথায় গিয়ে যেন আরও প্রবল হয়ে ওঠল। আন্দোলন একটা হলেও আন্দোলনের বিষয় হল প্রলেপের পর প্রলেপ দিয়ে সাজান।

রাজনৈতিক বিরোধী দল নামল, তারা ধর্ষণের বিচারের সাথে শাসক দলের বিরোধীতা চাইতে করল নানান ক্ষেত্রে।

নাগরিক সমাজ নামল সঙ্গে করে নামল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা, তারা আবার আলাদা আরও নানান বিষশ তুলে ধরছে। কেউ লিঙ্কদিনেরLINKEDIN)  প্রোফাইলের রাত দখলের অবদান লিখে রাখছে ৷ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, তিনি বলছেন আদতে যুক্তি দিচ্ছেন, আমি যদি রাত দখলের মূল কান্ডারি হিসেবে নিজেকে লিখে রাখি তাহলে তো অসুবিধের কিছু নেই কারণ যারা আমাকে চাকরি দেবে তারা তো ভাববে আমি প্রতিবাদী। তখন আমাকে তো তারা ভয় পাবেন যদি আমি পরবর্তীতে নিজের অফিসের কেনও কালো দিক নিয়ে প্রতিবাদ করি! জানি না কিসের যুক্তি সাজালেন, যদি তাই হয় তাহলে সেই সোশাল সাইটে তিনি নিজের চাকরি না পাওয়ার কারণ বা তাকে চাকরিতে নেবে না এমন কারণ লিখে রাখবেন কেন? আসলে হিরো হতে কে না চাই? সে যাক্গে এটা বিষয় নয়। বিষয় সোচ্চার হওয়া।

সোচ্চার হতে গেলে সাহস লাগে, লাগে পারিবারিক সার্পোটও। কিন্তু সোচ্চার হতে গেলে নিজের প্রায়োরিটি চেয়েও কোন বিষয়ে সোচ্চার হওয়া দরকার তাকেই মূল করে এগিয়ে আসা উচিত। নয়তো একাধিক সোচ্চারে হারিয়ে যায় মূল কারণ৷ আন্দলোন হারিয়ে যায় নানাবিধ উদ্দেশ্যে। যেটা হারিয়ে গেল আর জি করের অভয়ার ধর্ষণের ক্ষেত্রে। কোথায় গিয়ে মনে হল, ধর্ষণের বিচারের চেয়েও কলেজ নির্বাচন বড়, একাধিক ক্ষেত্রে শাসকের গাফিলতি বড়। সঞ্জয় রায়ের সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি আরও নানান ভাবে বিচার চলছে। জানি না কী হবে? তবে আমার মনে হয় সোচ্চার হওয়াতে দোষের ছিল না, দোষ ছিল সোচ্চারের প্রলেপে। 

সম্পাদকীয় কলম JOYDIP ROY: সোচ্চার সহিষ্ণুতার বেড়াজাল ভেঙে হাঁটতে জানে মোমবাতির মিছিলে

সম্পাদকীয়- জয়দীপ রায় 
 

সাদা কাগজের উপর বাঁহাতি কলমটা  ছুঁয়ে যখন ভাবছিলাম সোচ্চারের সম্পাদকীয় বিশ্লেষণ ঠিক কিভাবে করা উচিত আমার। আচ্ছা সোচ্চারের সংজ্ঞাটা কি শুধুই নারীকেন্দ্রিক না পুরুষ কেন্দ্রিক?  ঠিক কোনদিকে হেলে তার পেন্ডুলাম। জানতে ডুব দিতে হলো আলাদিনের হাতে জ্বলে ওঠা আশ্চর্য প্রদীপের ঠিক নীচের অন্ধকারের গহ্বরে।গহ্বরের প্রতিধ্বনি আমায় উত্তর দিল সোচ্চারের ভেদাভেদ হয় না। সোচ্চার প্রতিবাদ জানে, আঙুল উঁচিয়ে বলতে জানে উলঙ্গ রাজাকে 'রাজা তোর কাপড় কই'? সোচ্চার সহিষ্ণুতার বেড়াজাল ভেঙে হাঁটতে জানে মোমবাতির মিছিলে।সোচ্চার মানে পরিবর্তন, সোচ্চার মানে বিবর্তন, সোচ্চার মানে একটা জেনারেশনের শেষ আরেকটা জেনারেশনের শুরু।

ARUP SARKAR : যেখানে অন্যায় সেখানেই প্রতিবাদ করতে হবে


 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘নৈবেদ্য’ কাব্যগ্রন্থের ‘ন্যায়দণ্ড’ কবিতায় বলেছিলেন, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে / তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।’ অন্যায়কারী ও অন্যায় সহ্যকারী দুজনেই সমান অপরাধী, যদি প্রতিবাদ না করে! যুগের পরিবর্তন ঘটেছে কিন্তু নারীর জীবন আজও রয়ে গেছে নিকষ অন্ধকারে! অনেক নারী আজও মুখ বুজে নীরবে সবকিছু হজম করে। শত অন্যায় শোষণের কোনও প্রতিবাদ করে না। বরং চুপ থেকে কষ্ট পায়। যা নারীর জন্য আরও সমস্যা সৃষ্টি করে পরবর্তীকালে।

পরিবার থেকে শুরু হয় নারীর প্রতি অবিচার। অধিকার বলে নারীর ওপর একের পর এক অন্যায় আবদারও চাপিয়ে দেওয়া হয়। তখন নারীকে চুপ করে সহ্য করে নিতে হয়। কারণ তারা রক্তের সম্পর্কে সম্পর্কিত! পড়াশোনা, চলাফেরা, প্রেম, দাম্পত্য কোথাও নারীর নিজস্ব মতকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না! কেউ কেউ যদি বা দেতে চেষ্টা করেন সেখানেও সমাজের তীর্যক মন্তব্য এসে ঘিরে ধরে তাকে। তাই নারীর এমন সমস্যায় নারীকে একলা চলার নীতিতে বিশ্বাসী হতে হবে। এবং শুধু তাই নয়, নারীকে নিজের ভালো-মন্দ বুঝে নিতে জানতে হবে। অন্যায়কে-অন্যায় হিসেবে বলার-দেখার ও প্রতিবাদ করার মতো সাহস গড়ে তুলতে হবে।

বাবা-মা বা পরিবারের কর্তাদের কথা অনুযায়ী একজন নারীকে তার ভবিষ্যৎ জীবনে এগোতে হয়। নারী এর প্রতিবাদে অক্ষম কারণ তারা পরমাত্মীয়। বাবা-মায়ের গণ্ডি পেরিয়ে যখন একজন নারী স্বামীর ঘরে যায়, তখন শুরু হয় আরেক শোষণ! শ্বশুর-শাশুড়ি-স্বামী সবার মতো অনুযায়ী নারীকে তার জীবনের পথে চলতে হয়। পরিবারের শৃঙ্খলা বজায়ে মত নেওয়া দোষের কিছু না কিন্তু মতটা যদি জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়, তখন তা অবশ্যই দোষের! কারণ প্রত্যেক মানুষ স্বাধীন। আর স্বাধীন মানুষের চলার পথ রুদ্ধ করা অন্যায়। তিনি যে সম্পর্কেই আবদ্ধ হোন না কেন। পরিবারের সম্মান, মর্যাদা, ঐতিহ্য রক্ষার্থে অধিকাংশ নারী আজও পারিবারিক নিপীড়ন সয়ে যায়। কিন্তু নীরবে সয়ে যাওয়া মানে মেরুদণ্ডহীনতার পরিচয় দেওয়া। সেইসঙ্গে অন্যায়কারীকে আরও অন্যায় করতে প্রশ্রয় দেওয়া। তাই পরিবার থেকে যদি নারীর প্রতি কোনো রকম সহিংস আচরণ করা হয়, তবে নিজের আত্মরক্ষার স্বার্থেই প্রতিবাদই হতে পারে নারীর একমাত্র হাতিয়ার।

বর্তমানে পারিবারিক সহিংসতার পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু নারীদের নীরব ভূমিকা তাদের ওপর দমন-পীড়ন চালাতে আরও উদ্যোগী করছে পুরুষতন্ত্রকে। নারীরা যদি অত্যাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী না হন, তবে নারীদের এই ভয়াবহতার হাত থেকে রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব। তাই যেখানে অন্যায় সেখানেই প্রতিবাদ করতে হবে।

বাল্য বিয়ে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ কিন্তু কিছু পরিবার নিজেদের অজ্ঞানতা এবং অক্ষমতা বশত কন্যা সন্তানের অপরিণত বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়। সেক্ষেত্রে নারীরা যদি নিজেরা প্রতিবাদ না করে তবে সরকারের একার পক্ষে শতভাগ বাল্যবিয়ে রুখে দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই নারীর প্রতি অন্যায় হলে আগে নিজেকেই আওয়াজ তুলতে হবে। বর্তমানে প্রশাসন তৎপর। তাই নারীর প্রতিবাদে যদি অপরাধীরা দমে না যায়, তবে আইনি সহায়তা নিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি পদক্ষেপ অনুযায়ী ৯৯৯-এ সব ধরনের সেবা পাওয়া যায়। সব নারীকে প্রতিবাদের এ ভাষা রপ্ত করতে হবে নতুবা নিপীড়নকারীদের দমানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।

দায়িত্ববান নাগরিক হতে হলে নৈতিকতা এবং সততাই হতে হবে প্রথম ও প্রধান গুণ। দেশপ্রেমিক নাগরিক হওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি প্রয়োজন, তা হলো নৈতিক মূল্যবোধের উপর অটল থাকা। ভোটের মাধ্যমে আমরা দেশের নেতৃত্ব নির্বাচন করি, যা দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। সামান্য অর্থের বিনিময়ে ভোট বিক্রি করে দেয়া মানে নিজের এবং দেশের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়া। দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত দায়িত্ব নিয়ে সঠিক মানুষকে ভোট দেয়া। অনেকেই সুবিধা পাওয়ার জন্য ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের ‘তেল’ মারেন, যা সমাজের ন্যায়ের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করে। সঠিক দায়িত্ববোধসম্পন্ন নাগরিক কখনো তোষামোদ করে কারও আশীর্বাদ পেতে চায় না; বরং সে সত্য ও সঠিক পথে থাকতে আগ্রহী।


POEM: উই ওয়ান্ট জাস্টিস- কলমে রবীন বসু

 


উই ওয়ান্ট জাস্টিস!


রবীন বসু 



এখানে বিচার চাই —


এখানে মধ্যরাত রাস্তা দখল করে তোমার বন্ধুরা 


কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ জ্বলে ওঠে আলো


তোমার লাঞ্ছনা-ক্ষত, তোমার মৃত্যুর ক্ষতস্থান


প্রতিবাদ দাঁড়িয়ে গেছে; ওখানে হাজার হাজার


মেয়েদের মুখ প্রদীপ্ত ভাস্বর! উই ওয়ান্ট জস্টিস!


তুমি তো শীতল ঘুমে, স্বপ্ন মরে গেছে আগে


রক্তমাখা মুখে নীল চাদরে ঢাকা পড়ে আছো!


কায়েমী দলতন্ত্র আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিলে  


আঘাত সেখান থেকেই! ওরা প্রাণহীন করে দিল।


তবু তুমি বেঁচে আছো মধ্যরাতের পথে—


বেঁচে আছো লক্ষ মেয়ের প্রতিবাদের ধ্বনিতে!


আমজনতার প্রতিবাদী মিছিল —তোমার মৃত্যু


ঘুণধরা মেরুদণ্ডে সজোরে আঘাত হেনেছে! 


সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আবার আওয়াজ তুলব—


উই ওয়ান্ট জাস্টিস!

POEM: মিছিল থেকে বিচার- লিখেছেন সুনন্দ মন্ডল

 


         মিছিল থেকে বিচার

              সুনন্দ মন্ডল


এখন সময় ও অসময়ে অনেক ফারাক

তুমি তারই মাঝে নিশানা।

সঠিক বৃত্তে আবর্তন কিংবা ঘূর্ণন,

চক্রের দিকনির্দেশে দোটানা।


মিছিল পা মেলায়, সামিল করে নানা অভিযোগ

শুধু থেকে যায় ক্ষত ভরাট।

সোচ্চার প্রতিবাদ গর্জে ওঠে তোমার কথায় 

নতুন নতুন গল্প বাঁধে জমাট।


বিদ্বেষে বিদ্বেষে ভরে আছে মন, প্রতিহিংসা

বিচার ওঠে কাঠগড়ায়, কাঁদে বিচার

সমাজের কোণায় কোণায় রিরংসা অথবা বিচ্ছেদ

তুমি কেবলই চাও দূর হোক অনাচার।

POEM: আমার এদেশে- কলমে জয়িতা চট্টোপাধ্যায়


 আমার এদেশে

জয়িতা চট্টোপাধ্যায় 




এদেশে স্বাধীনতা মানে 


একটা দেশ হারিয়ে আরেকটা দেশ পাওয়া,

বাপ ঠাকুরদার বুকের মাঝে ছটফট করা রক্তনদীর স্রোত,

র‍্যাডক্লিফ সাহেবের কাটাকুটি খেলার ফল,

মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়া কিছু মানুষের জন্মস্থান, 


যারা বসে থাকে নীরবতা ও নিঝুম ছুঁয়ে,


মানুষের মতন দেখায় ওদের 

নাম:হিন্দু ও মুসলমান।


তবুও সারাটা দেশ জুড়ে উল্লাস, 

বিরাম বিহীন এক আগুন

দাউ দাউ করে জ্বলে যাওয়া দুভাগ হওয়া নদী


জলরঙা আকাশে ভেসে যায় রক্তপলাশ 

স্বাধীনতার মূল্য দিতে গিয়ে তছনছ হয়ে যায় কিছু জীবন 


নির্জন দুপুরে জল ছুঁয়ে উড়ে যায় স্বাধীনতা নামের বিকলাঙ্গ শিশুটি


এই সবকথা ফুরিয়ে যাওয়ার পরও গোধূলির ময়লা আলোতে লিখি স্বপ্নের স্বাধীনতার কথা,লিখি গনতন্ত্রের আলখাল্লা পড়া আমার দেশটার কথা


যেখানে বেশ কর্পূর হয়ে উড়ে যাবে ধর্মগুলো,

আর বেড়িয়ে আসবে প্রকাশ্য  রাস্তায় মানুষ, কেবল মানুষ হয়েই...

POEM: বিচারের কাঠগড়া লিখছেন কবি অশোকা

 



বিচারের কাঠগড়া

অশোকা 


লড়াই নাকি চলছে নিরন্তর,

বুকের ভিতর দুই দলে ভাগ

সেনা, ন্যায়ের বিচার কোথায়

হচ্ছে আর, সত্য-মিথ্যার চলছে বেচা-কেনা, বিচার পাবে ? এ প্রশ্ন

যখন নিজেই সন্ধিহান... বিবেক তখন নিলামে ব্যস্ত উঠতে, 

মানুষের কী আজ সত্যি 

আছে মান হুঁশ , কেবল ফানুসগুলোই পারে 

বুকে আগুন নিয়ে উড়তে...।