নিজের লেখা কবিতা, নিবন্ধ, গল্প পাঠান হোয়াটসঅ্যাপ করে 7384324180 এই নম্বরে

বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

Sudipta Sen: বৃষ্টির কী মায়া নেই, নাকি সে ইচ্ছেমাফিক ইস্তেহার?


 

স্কুল, প্লিস বৃষ্টি থামিস না

সকাল থেকেই আজ বৃষ্টি শুরু হয়েছে অঝোরে,  বড়ঘরের খাটে বসে সে  ছেলেটা তখন পড়ছে পলাশীর যুদ্ধ। আজ স্কুলে পড়া ধরবেন স্যার। শুভব্রত সরকার, ইতিহাস পড়াতেন আমাদের।  উনি বেঞ্চের প্রথম থেকে শেষ অবধি রো ধরে ধরে ছেলেদের রিডিং পড়াতেন। কারণ হিসেবে আমার দুটো কথা মনে হত, ১.) নিজেকে রিডিং পড়তে হত না, কাজ কমছে স্যারের ২.) প্রথম বেঞ্চ থেকে লাস্ট বেঞ্চ তাঁর কাছে সমান চোখের মাপকাঠি পেত। দাঁড়ান টুইস্ট আছে তা হল, উনি রিডিং পড়ান, শেষ হলে এবার আগের দিনের পড়ানো থেকে প্রশ্ন করতেন, কার ঘাড়ে পড়বে কোপ কেউ জানে না, তখন উনি লাস্ট বেঞ্চ,মিডিল বেঞ্চ,প্রথম বেঞ্চের থেকে ছেলেদের ওঠাতেন। না পারলে হাত পাতিয়ে সপাট করে দিতেন বেতের ঘা। ছেলেটা পড়তে পড়তে ভাবছে বৃষ্টি আজ থামিস না প্লিস। তার কারণ সে পড়া করেনি, আজ স্কুলে গেলে তার কপালে দু:খ আছে। বৃষ্টি সেদিন শুনেছিল সে কথা। তবে মাঝে মাঝে সকাল থেকে শুরু হলেও থেমে যেত ঠিক ৯:৩০ দিকে। কাজেই স্কুল না যাওয়ার বাহানা থেকে বৃষ্টির নাম বাদ পড়ত। আসলে বৃষ্টি বুঝতে পারত না বোধহয় তার কী করা উচিত। বাচ্চার আবদার রাখা উচিত নাকি উচিত না? নাকি বৃষ্টি শাসন করবে বলেই সকাল ৭ টায় শুরু হয়ে আবার ৯:৩০ টায় থেমে ঠিক ১২ টাতে ঝেঁপে আসত কে জানে!


বৃষ্টি এবং রাস্তা ডুব

সারা রাত বৃষ্টি হয়েছে শহরে, জোয়ারের ফলে লক গেট বন্ধ থেকেছে সারা রাত। পরের দিন সকালে বৃষ্টি থামেনি। শহর ডুবেনি, রাস্তা ডুবেছে। সেই জল পেরিয়ে যান চলাচল। বিরোধীরা পুরসভাকে দুষছে।

রিপোর্টার নেমেছে হাঁটু অবধি জলে, দর্শক করছে ইয়ার্কি। ট্রাফিক পাচ্ছে বেগ। জলে ভাসছে আবর্জনা, জলে ভাসছে ফুটপাতিয়া ছোটদের নৌকো, রাস্তার দোকানগুলো হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে কলেজ স্ট্রিটে দোকান খুলেছে।  বৃষ্টি কিছু বোঝেনি নাকি পুরসভাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ছে? এমন সময় রাস্তারা কী চাইছে চল কে কতটা ডুবতে পারি দেখি বলে নিজেদের মধ্যে চ্যালেঞ্জ নিতে। আমি ভাবছি, বুঝতে পারছি না!


বৃষ্টি তুই স্মৃতির নাম

তারা প্রথম ভিজল ময়দানে দাঁড়িয়ে, তারা আবার ভিজল বাগবাজারের ঘাটে, তারা ভিজেছিল অফিস ফিরতে গিয়েও। চপ মুড়ি মেখে দুধ চা সঙ্গে করে তারা বৃষ্টি দেখেছিল ব্যালকনিতে। বাইরের বৃষ্টি হাওয়া মেখে ছিটেফোঁটা পড়ছে তাদের গায়ে। মনে পড়ছে সে সব কথা বৃষ্টি দেখে। দুজনের কথা হয় না অনেকদিন। - ওকে ব্লক করেছে সহজে। বৃষ্টি কী কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে এলো ?


বৃষ্টি তুই থাম না প্লিস

আজ অফিস যেতে হবে টাইমে। কাল দেরি হয়েছে গুচ্ছের। বৃষ্টি থামার নাম নেই। তুই একটু থাম না প্লিস, ভিজে ভিজে যেতে হলে আজ নির্ঘাত জ্বর হবে। ভাবছেন কর্পোরেটের বান্দাগুলো।

যিনি ছাতা মাথায়, সাদা পোশাকে ট্রাফিক কন্ট্রোল করছেন, অঝোরে বৃষ্টিতে ভিজে নেয়ে একসা হয়েছেন তিনিও ভাবছেন বৃষ্টি প্লিস থাম। আমি গাড়িতে যেতে যেতে সেই ট্রাফিকের দিকে তাকিয়ে দেখেছি তার কাঁধে দায়িত্ব, ইউনিফর্মে বৃষ্টিধারা। বৃষ্টি কী বুঝেও না বোঝার ভান করে?


বৃষ্টি, মিছিল, কাজল চোখ

নানান ইস্যু, প্ল্যাকার্ড ঢুয়ে গেল বৃষ্টি জলে, নেতারা ভিজছে, সমর্থকেরা ভিজছে। ভিজছে পুলিশ মিছিলের আগে আগে৷ বৃষ্টির মায়া নেই,  ওমন সময় একখানা মেয়ে তারও চোখ ভিজে গিয়েছে,  কাজল ঢুয়ে যাচ্ছে, স্লোগান থামছে না। বৃষ্টি কী ইচ্ছে করে করছে নাকি সবই সহ্যক্ষমতা দেখার জন্য? মিছিল থামেনি, বৃষ্টিও থামেনি, কাজল ধুয়ে গেছে, আলুথালু হয়ে গেছে চোখ। ভিজে গেছে ওর হালকা পিচ রঙেন কুর্তিটা। বৃষ্টি তোমার মায়া হয়নি?


বৃষ্টির হয়েছে জ্বলা। ও কী করবে? ছোটদের মন রেখে ঝরবেই,  চাকুরিজীবীদের জন্য থেমে যাবে,  পুরনো প্রেমের ঘায়ে স্মৃতি উস্কে যাবে বলে চিরকাল আসবে না বৃষ্টি? বৃষ্টি যে কী করবে? আমি জানি না, শুধু জানি চোখ ধুয়ে গেলে বৃষ্টি কাজল পরে নিক!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন