ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০২৫

Anupam Roy: আর ঠিক তখন কী বলেছিলেন বাবা-মা ?

 


ছেলে অনুপম রায় বলেছিলেন 'আমাকে আমর মতো থাকতে দাও'। 

আর ঠিক তখন... 

বাবা হিসেবে সেই মুহূর্তে কী ভেবেছিলেন কিশোর রায়? (ভিডিওটি দেখতে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন)


https://www.facebook.com/share/v/128zMbbgkBv/?mibextid=oFDknk


মা হিসেবে হিসেবে সেই মুহূর্তে কী ভেবেছিলেন মধুরিতা রায়? (ভিডিওটি দেখতে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করুন)

https://www.facebook.com/share/v/1AQC62fuPK/?mibextid=oFDknk

Sudipta Sen: 'তুমি কী হতে চাও'? এই বোকা প্রশ্নের শিকার হয়েছে সব ছোটবেলা

 

Sudipta Sen: পথ সোজা হয় না কখনও। আঁকাবাঁকা পথ থেকে আরও পথ বেঁকে যেতে যেতে কোথায় গিয়ে যে কে থামবে? এটা যে ঠিক করেন লোকশ্রুতিতে তিনি ভগবান নতুবা নসিব।

'তুমি কী হতে চাও'? এই বোকা প্রশ্নের শিকার হয়েছে সব ছোটবেলা। 'এখানে আকাশ নীল' নামের বাংলা সিরিয়ালে উজান চ্যাটার্জীকে দেখে কখনও ডাক্তার হতে ইচ্ছে করেছে, পাড়ার কোনও দাদাকে একটি সরকারি উচ্চপদস্থ  পদে চাকরি  করতে দেখে আমারও মনে হয়েছে সেটাই হব, ইসরোর কথা জেনে মনে হয়েছে বিজ্ঞানী হব, নিরাপত্তা বলয়, দেশ ভ্রমণ, পাওয়ার দেখে প্রধানমন্ত্রী হতে ইচ্ছে করেছে। নচিকেতার মতো ভবঘুরে হতে ইচ্ছে করেনি ভাগ্যিস নইলে সহজ হবে ভেবে ওটাই হতাম নির্ঘাত।

উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ইঞ্জিনিয়ার হয়েছিলাম। সেটাও করোনাকালে ভেঙে গেল। ভুলে গেলাম জেনারেটর, ট্রান্সফরমার, ওহম'স সব কিছুই। পরবর্তীতে হঠাৎ করে দেখলাম স্টেজে আবৃত্তি, নাটক কাজে লাগল। হয়ে গেলাম সাংবাদিক। এটাও আবার এতো জটিল আগে জানলে মন দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংটাই করতাম।

মনের আর কী দোষ? মন যে কী হতে চায় সেও তো নিজেই জানে না। অযথা লম্ফঝম্প করে, পানকৌড়ির ডুব দেখে, মেসির ভক্ত হয়, সচিন খেলা ছেড়ে দিলে কাঁদে, প্রেমিকার পা ভাঙলে মন খারাপ করে, বিরহে কবিতা লেখে, আনন্দে তরমুজ খায়, রেলিং বেয়ে আসা বৃষ্টিফোটা জিভ দিয়ে চেটে নামিয়ে নেয় আর পরে গা ঘিনঘিন করে মরে।

বিষয়টা এটা নয়, আসল বিষয় হল আমরা যারা ভেবেছি 'আমাকে আমার মতো থাকতে দাও' তারা আসলে স্বধীন হতে চেয়েছি। তাতে কিছু ক্ষতিও হয়েছে আবার লাভও হয়েছে। আর স্বাধীন হতে গিয়ে যখন বুঝেছি সবকিছু একটি নিয়মে বাঁধা তার বাইরে তুমি যেতে পারবে না তখন আবার এটা-ওটা পেতে চেয়েছি।

জীবনে সফল হওয়া আর সফল জীবন হওয়া দুটো এক জিনিস নয় তাই তো এতো আয়োজন, এতো আক্ষেপ, এতো হতে চাওয়া। আসলে ছোটোবেলা  থেকেই অনেক কিছুই হয়েছি। বড়বেলাতে এসে বুঝলাম আদতে কিছুই হওয়া হল না। তবু ওই যে সহজ বেছে নেওয়া 'আমাকে আমার মতো থাকতে দাও'। 

Arup Sarkar: শিশুকাল থেকেই মানুষ নিজের পছন্দ ও মতামত প্রতিষ্ঠা করতে চায়

 

Arup Sarkar:  আমাকে আমার মত থাকতে দাও আদতে একটি স্বমুখী প্রবনতা। মানুষের মানসিক গঠনে স্বাধীনচিন্তা ও আত্মপরিচয়ের আকাঙ্ক্ষা একটি মৌলিক উপাদান। মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করলে বোঝা যায়, "নিজের মত থাকতে চাওয়া" কেবল একটি সামাজিক প্রবণতা নয়, বরং এটি আত্মপরিচয় গঠনের এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য, আত্মসম্মানবোধ এবং আত্মবিশ্বাস অনেকাংশেই নির্ভর করে তার নিজস্ব মতামত প্রকাশ ও অনুসরণের সুযোগের ওপর।

বিশ্বখ্যাত মনোবিজ্ঞানী এরিক এরিকসন তার "মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ তত্ত্বে" বলেন, আত্মপরিচয়ের সংকট কাটিয়ে উঠেই একজন মানুষ পরিপূর্ণতা অর্জন করে। যদি কেউ তার নিজস্ব মত প্রকাশে বাধাগ্রস্ত হয়, তবে তার মধ্যে আত্মবিশ্বাসহীনতা, হতাশা ও হতদ্যমতা দেখা দিতে পারে। আবার কারও নিজস্ব চিন্তাধারা অবদমিত হলে, তা দীর্ঘমেয়াদে মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও হতাশাজনিত রোগের জন্ম দিতে পারে।

আলবার্ট ব্যান্ডুরা’র "Self-efficacy" তত্ত্ব অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি যখন নিজের সিদ্ধান্তে চলতে পারে, তখন তার মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও দক্ষতার অনুভব জন্ম নেয়। এটি তার জীবনের প্রতি আস্থাকে বাড়ায় এবং মানসিক স্থিতিশীলতা এনে দেয়। অন্যদিকে, বারবার নিজস্ব মত প্রকাশে বাধা পেলে একজন মানুষের মধ্যে 'নির্বিকারতা' (learned helplessness) জন্ম নিতে পারে, যা তাকে নিষ্ক্রিয় করে তোলে।

মনস্তাত্ত্বিক গবেষণায় এটাও দেখা গেছে, শিশুকাল থেকেই মানুষ নিজের পছন্দ ও মতামত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যদি পরিবার ও সমাজ তার মতামতকে মূল্য দেয়, তবে তার ব্যক্তিত্ব দৃঢ় হয়। তাই মানসিক সুস্থতার জন্য নিজের মত প্রকাশের পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি।

মানুষ প্রথমে অস্তিত্ব লাভ করে এবং পরে নিজের সারবস্তু বা স্বরূপ গড়ে তোলে। ঈশ্বরের অস্তিত্ব তিনি অস্বীকার করেন এবং বলেন, যদি ঈশ্বর না থাকেন, তবে নৈতিক ও অস্তিত্বগত দায়দায়িত্ব একান্তভাবে মানুষের। ফলে, প্রতিটি মানুষ নিজেই তার কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী এবং সেই অনুযায়ী তাকে তার জীবন গঠন করতে হয়।

সর্বোপরি নিজের মত থাকা হল নিজের মনন মন্থন নিজেকেই গুছিয়ে নেওয়া It is a journey towards real to sourrieal.

Ashoka Kodali: এর উত্তর জানতে জানতে তুমি চিনবে, বুঝবে, মুখ কী, মুখোশ কী?

 


Ashoka Kodali: ছোটোবেলাটা সবার একরকম হয় না। তবে বেশিরভাগ জনের শুরুটা হয়তো স্বাভাবিকই হয়। যেমন, একটা বাড়ি থাকে, বাবা-মা থাকেন বা একটা পরিবার থাকে, যার মধ্যে বাচ্চাটা ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে।

পরিবারের শিক্ষা ,পরিবেশ, পরিস্থিতি সবই তার চরিত্রটাকে একটু একটু করে তৈরি করতে সাহায্য করে। তারপর আস্তে আস্তে সে বড় হয়ে ওঠে শরীরে,মননে। পরিবার, স্কুল, কলেজ.. এসবকিছু থেকে সে জানতে শেখে, বুঝতে শেখে যেকোনও বিষয়কে।

এতদসত্ত্বেও কিছু জন শেখে নিজের মতো করে নিজের জীবন থেকে নানা খুঁটিনাটি বিষয়। সবাই যখন বলতে থাকে তুই বড় হয়ে গেছিস এগুলো মানায় না, ওগুলো মানায় না। তখন বড় হয়ে যাওয়া মানেটা ঠিক কী? তা ভাবা সে অভ্যাস করে। গড়ে ওঠে একটু একটু করে নিজের জীবন দর্শন। মনে হয় এত দিন থেকে যা কিছু তোমরা শেখালে সেগুলোই তো করছি তবে ভুলটা ঠিক কোথায়?

এর উত্তর জানতে জানতে তুমি চিনবে, বুঝবে, মুখ কী...মুখোশ কী? আর ঠিক তখনই কত শত চরিত্র রাতারাতি বদলে যাবে তোমার মানস পটে। সবটা থেকে তখনও তুমি শুধু শিখবে। ভাববে এতদিন যাকিছু শিখলাম, যাকিছু দেখলাম তা আসলে সত্যি না। এবার তুমি কলাকুশলীদের সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে পারবে। এসবই হবে ধীর প্রক্রিয়ায়।

একটা সময় এসে চারপাশের মানুষের মুখোশ গুলো যখন তুমি চিনে নিতে পারবে, তখন দেখবে নিজের বলে কেউ কথাও নেই,সবটাই প্রয়োজনে প্রিয়জন। তবু কাওকে বিচার করতে তুমি পারবে না। কাউকে দোষ দিতে তুমি পারবে না। এক নির্মম পৃথিবীর সম্মুখীন হবে তুমি।যার রূপ রুক্ষ,শুষ্ক। এরপরেও তোমাকে বাঁচার পথ খুঁজতে হবে, নতুন করে শিখে নিতে হবে নিজেকে সজীব রাখার পাঠ।

যেদিন তুমি পড়ে ফেলতে পারবে সকল চোখের ভাষা, পড়ে ফেলতে পারবে আপনজনের স্বার্থ,লোক দেখানো মানবিকতা, চরিত্রের মধ্যে লুকিয়ে থাকা দুশ্চরিত্র, ব্যবহারের প্রকৃত উদ্দেশ্য, অবহেলার মানে। আর ঠিক তখনই তুমি তোমাকে আবিষ্কার করবে নতুন করে। নির্দ্বিধায় বলে ফেলতে পারবে আমার ভাঙা আমিটাকে নিয়ে "আমাকে আমার মতো থাকতে দাও"। 

Munmun Mukherjee: আসলে সে ভালোবাসার কাঙাল

 


Munmun Mukherjee: "আমাকে আমার মতো থাকতে দাও" -- এই গানটি কবি তথা গায়ক অনুপম রায়ের বিখ্যাত পরিবেশন। লাইনটিকে শুধু মন্তব্য ভাবলে আপাতভাবে মনে হয় বক্তা কারোর কোনো পরোয়া না করে নিজের ইচ্ছা মতো যাবতীয় কাজকর্ম করে থাকেন অর্থাৎ শুধুমাত্র এই কয়েকটি শব্দ যেন একটা স্বার্থপর চরিত্রকে প্রকাশ করছে।

কিন্তু গভীর ভাবে ভাবলে আমরা বুঝতে পারি এই লাইনের মধ্যে একটা অদ্ভুত বেদনা ফুটে উঠেছে। একটা মানুষ তখনই নিজের মতো একেবারে একা নিঃসঙ্গ থাকতে চায় যখন সে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে বারবার আঘাত পায়। বারবার আঘাত পেতে পেতে তার মন পাথর হয়ে যায়। সে ভালবাসতে ভুলে যায়, নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। তখন সে  তার বৃত্তটাকে ছোট করতে করতে নিজেকে একেবারে গুটিয়ে ফেলে। নিজের চারপাশে তৈরি করে একটা অদৃশ্য পাহাড়সম প্রাচীর। তখন তার চারপাশে হাজার একটা ঘটনা ঘটে গেলেও তার মনে কোন দাগ কাটে না। সে যেন ভাবলেশহীন একটা মানুষ। তার যেন কিছুতেই কিছু যায় আসে না।

 আসলে সে ভালোবাসার কাঙাল। বাইরে থেকে তাকে দেখে যা মনে হয় সে যেন একটা দুর্ভেদ্য দূর্গ তৈরি করে রেখেছে তার চারপাশে। যেন জীবনে যত কষ্ট পাওয়ার পাওয়া হয়ে গেছে, আর কোনো দুঃখ যাতে তার মনকে ছিন্নভিন্ন করতে না পারে সেটা তারই প্রয়াস। নতুন করে ভালোবেসেও আবার ঠকে যাওয়ার ভয়ে ভীত সে। তাই মনের ঘরের সব দরজা জানালা সে বন্ধ করে রেখে দিয়েছে। যেন সে কোনো এক কারাগারে বন্দী।

আসলে সে জানেই না একটা কালবৈশাখী ঝড়ের অপেক্ষায় বসে আছে তার ভবিষ্যৎ। তার সমস্ত দ্বিধাদ্বন্দ্ব, মান অভিমান ভেঙে দিয়ে কেউ যদি তাকে ওই পাহাড় সমান অদৃশ্য কয়েদখানা থেকে বের করে নিয়ে আসতে পারে তবে তার মতো ভালোবাসতে আর কেউ পারবে না।

Sayan Das: একাকীত্বকে অপেক্ষা করতেও বলতে পারিনি

 


Sayan Das: সময় থেকে কিছুটা এগিয়ে নির্জনতা খুঁজে গেছি আমি বারংবার। বইয়ের পাতার আড়ালে আড়ালে কিংবা সবুজের সমারোহে থাকা সেই আমিটাই আমাকে অনেকাংশে একলা করে দেয়। এই যে নির্জনতা, কার থেকে? অবশ্যই নিজের থেকে। নিজের চিন্তা-ভাবনা, গতানুগতিক জীবন প্রবাহ এবং সর্বোপরি নিজের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার বিপ্রতীপে থাকা এই নির্জনতা আমার কাছে খুব দামী।

 কোনো এক সকালে ঘুম থেকে উঠে বাগানে থাকা কাঠগোলাপ এর কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা হয়নি, কেন সে আমার জন্য অপেক্ষা করে, জমিয়ে রাখা স্মৃতিকে মুক্ত করা হয়নি কতকাল। শুধু জলের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই সে দুহাত দিয়ে বারবার আমাকে আমন্ত্রণ করেছে তার কথা শোনার জন্য। আমিও কিছুক্ষণ থেকেই আবার চলে এসেছি নিজের এসব দুর্বলতার কাছে।

এবার কিন্তু আমার একা থাকার সময় সবাইকে বলে এসেছি যাতে তারা এসে ভিড় না করে। নিজের মতো করে যাবতীয় নির্জনতার সাক্ষ্য বহন করা এবং এই যাপনটাকে উপভোগ করার মধ্যেও আপাতভাবে একটা অলীক তত্ত্ব আছে মনে হলেও বাস্তবে যেন নিজের প্রতি এ এক গভীর পর্যবেক্ষণ। কতকাল একা থাকা হয়নি। যে নির্জনতা খুঁজে চলেছি সবার মধ্যে, তাকে কখনও নিজের কাছে পরিচয় করানো হয়নি।

আমার কান্না, আমার ব্যর্থতা যতটা আমাকে চিনেছে, ততটা চেনেনি নির্জনতা। তাকে বারবার গুলিয়ে ফেলেছি, একাকীত্বের সঙ্গে। তাই সে অতিথি হয়ে সময়ে সময়ে পর্যবেক্ষকের ভূমিকা পালন করেছে মাত্র। আমার এই নিজের যাপন আমার জন্যই আটকে ছিল এতদিন।

দাবি জানাবো কার কাছে? এতক্ষণের যা অভিযোগ অভিমান সবই তো নিজের প্রতি। আমার সত্তার একটা অংশের প্রতি। যে অংশ প্রতিনিয়ত সমাজ, পরিবার, রাজনীতি, এবং অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে বারবার। ভালো থাকার বদলে সঙ্গী করেছে যান্ত্রিক দায়বদ্ধতাকে।

এবার এসবের থেকে অব্যাহতি চাই। অব্যাহতি চাই সবকিছুর উত্তর দেওয়া থেকে। ভেঙে যাওয়া তারার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সেসব মুহূর্ত যা আত্মপ্রকাশ করতে গিয়েও করতে পারেনি, এবার তাকে ধরে রাখার পালা।

আমার নির্জনতা, আমার নিজের মতো থাকতে চাওয়া আসলে কি বাইরের কাছে নাকি নিজের কাছে? আমি নিজের থেকে দূরে সরে গেছি? কতবার, কত মুহূর্তে, তার হিসাব নেই।

 আমি সবার মাঝে থেকেও একা একথা বলতে পারিনি কাউকে। আবার নির্জনতার খোঁজ করতে গিয়ে একাকীত্বকে অপেক্ষা করতেও বলতে পারিনি। এবার হয়তো কোথাও গিয়ে নিজের মতো করে থাকা হয়ে উঠবে নিজের কাছে। সমস্ত দুশ্চিন্তা, পরিকল্পনা একদিকে রেখে, এবারের আমার মতো করে থাকা হোক খানিকটা কবিতার মতো। মৌলিক অথচ সঙ্গত!

সমুদ্রের যতগুলো ঢেউ, ততবার আমি বেঁচে উঠবো আবার, এভাবেই, নিজের মতো করে থাকতে গিয়ে...নিজের কাছে।

Srija Das: এখন আর আগের মতো কষ্ট হয় না


 Srija Das: তুমি কী চাও বলো, ভালোবাসা কমিয়ে অবহেলা করবে ?..করো। মুখ ফিরিয়ে নেবে, কথা বলবে না ? বোলো না..। আ'ঘাত  দেবে ? ছেড়ে যাবে? যাও..।

বিশ্বাস করো..এখন আর আগের মতো কষ্ট হয় না...। বলতে পারো গায়ে মাখি না..।

সত্যি বলতে..এখন আর তেমন ইচ্ছেও করে না এটা ভাবতে যে, কেন কেউ আমায় ভালোবেসে মায়া দেখিয়ে ছেড়ে চলে গেল....? কেন কেউ আগের মতো করে সময় দেয় না? কেন এত অবহেলা করে..?

এগুলোর সঠিক ব্যাখ্যার খোঁজ এখন আর মন নিতে চায় না। আসলে আমি চাই না কেউ আমায় দয়া করে ভালোবাসুক, কিংবা উপর-উপর মিথ্যা ভালোবাসা দেখিয়ে অপছন্দের তালিকায় প্রথম স্থানে আমায় রাখুক ।

প্রচন্ডভাবে ভেঙেচুরে দিয়ে চলে যাওয়ার পর যেভাবে নিজেকে একটু একটু করে গুছিয়ে নিয়েছি আমার আমিটাকে, তাকে যে আর সহজে ভাঙা যাবে না..।

আজ মনের অন্দরমহলটা তোমার দেওয়া সমস্ত  অবহেলা, আঘাত, দুর্ব্যবহার, দুঃখ, কষ্টগুলো দিয়ে কংক্রিটের মতো মজবুত হয়ে গেছে। তাই আজ হাসি মুখে বলতে শিখে গেছি যে, আমি পারবো একা থাকতে ।

এবার...আমি বাঁচতে চাই, বাঁচতে চাই নিজের জন্য, নিজের মতো করে.....বলতে চাই,"আমাকে আমার মতো থাকতে দাও "।।

               

Papiya Mondal: অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো 'অলক্ষ্মী'রা বেড়ে উঠুক



Papiya Mondal: আমি অনেক লক্ষ্মী মেয়েকে  দেখেছি, সবাই কেমন লক্ষ্মী মেয়ের তকমা লাগিয়ে তাদের মনের মতো কাজ করিয়েছে। তাদের ইচ্ছে চাপিয়ে দিয়েছে তার উপর। নিজের ইচ্ছে, মতামত কখনো কখনো জানাতে গিয়েও কুণ্ঠিত হয়েছে, পাছে লক্ষ্মী মেয়ে হিসেবে যে সুনাম আছে সেটা নষ্ট হয়ে যায়!

জ্ঞান হওয়া ইস্তক শেখানো হয়েছে বড়রা যা বলে সেটা অকাট্য। তাই তাদের মুখে মুখে তর্ক করতে নেই। এতে নাকি লক্ষ্মী মেয়ে হওয়া যায় না। বিয়ে হয়ে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে সেখানে সবাইকে খুশি করতে হবে এটাই জীবনের সারমর্ম হিসেবে গেঁথে দেওয়া হয় মনে। শত অন্যায়, অত্যাচার, কটু কথার উত্তর দিলেই কিন্তু লক্ষ্মী হওয়া যায় না।

তাই মুখ বুজে মেনে নিতে শেখানো হয়েছে।

কিন্তু , দুঃখ, কষ্ট বুকে নিয়ে ঘরের কোণে নিজেকে বন্দী করলেও, তারা আরও বেশি করে ডালপালা বিস্তৃত করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। সমস্যায় দুশ্চিন্তা করতে করতে অতল গভীরে তলিয়ে গেলেও, কূলকিনারা মেলে কদাচিৎ। কত অবলা প্রাণ অকালে ঝরে যায়! অবজ্ঞা, অবহেলা, অপমান সহ্য করতে করতে একদিন অপারগ হয়ে মুখ খুলতে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে বাধ্য হয় কেউ কেউ।

আসলে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ মরিয়া হয়ে ওঠে। আর তখনই গায়ে এসে লাগে 'অলক্ষ্মী'র তকমা। তথাকথিত লক্ষ্মী মেয়ে হওয়ার চেয়ে শত গুণে ভালো এমন 'অলক্ষ্মী' হওয়া।

যেখানে নিজের হাতিয়ার নিজেকেই হতে হয়। কারোর সাহস না হোক কারণে -অকারণে হেনস্তা করার। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শিখতে হয়। শিখতে হয় মাথা উঁচু করে, আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে। নিজেকে স্বাবলম্বী, স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে হয়।

প্রতিটি বাবা-মা'র উচিত তথাকথিত লক্ষ্মী মেয়ে হিসেবে নিজের কন্যাসন্তানকে তৈরি না করে, তাকে স্বাবলম্বী, স্বনির্ভরতার পাঠ দেওয়া। তাকে সবসময়ই এটা মনে করানো উচিত সে কারোর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। কারোর কাছে অকারণে মাথা নোওয়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই।

পৃথিবীতে সব  মানুষের অধিকার সমান। এখানে কোনো স্ত্রী, পুরুষ বিভেদ সৃষ্টির দরকার নেই। লক্ষ্মী মা দেবী হিসেবে যেমন পূজিত হন, তেমনই চলুক। তাতে কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু কন্যাসন্তাকে বা নারীজাতিকে 'লক্ষ্মী'র প্রতিমূর্তি হতে হবে এমন নিদান বন্ধ হোক।

আমাদের ঘরে ঘরে শিক্ষিতা, স্মার্ট, রুচিশীলা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো 'অলক্ষ্মী'রা বেড়ে উঠুক। এতে সমাজের মঙ্গল, জাতির মঙ্গল, দেশের মঙ্গল সর্বোপরি সারা পৃথিবীর মঙ্গল।

Dibyendu Haldar: আমার সিদ্ধান্তর চেয়েও মুখ্য হয়ে উঠেছিল আর্থিক অনটন


Dibyendu Haldar: ‘আমারও তো মন ভাঙে, চোখে জল আসে আর অভিমান আমারও তো হয়।’

অনুপম রায়ের গানের এই সত্যিকথাগুলো যে শুধুমাত্র ‘আমার জন্যই’ প্রযোজ্য, একথা বলা ভুল হবে। বরং বলা যায় ‘আমার জন্যও’ প্রযোজ্য।

কেন? সেকথার উত্তরে আরেকটা গানের লাইন উঠে আসুক―'আমাকে আমার মতো থাকতে দাও'।

এখানে যদিও আমি অনুপম রায় নয়, আমারই আমার মতো থাকার কথা বলব। তালের রসের মতো গেঁজিয়ে বলব না। আমার কল্পনায়, অনুভূতিতে মিশে থাকা সত্যি কথা বলব। আসলে কি সত্যি বলে সত্যিই কিছু নেই?

অনেককাল আগের কথা। বাড়ি লাগোয়া আমের বাগান ছিল আমাদের। আরও বেশ কিছু গাছ ছিল। ঝড় বৃষ্টিতে যৌথ পরিবারের সকলে হইহই করে আম কুড়াতাম। বেশিরভাগ ব্যাপারটা ঘটত সন্ধেতে। তখন মা, জেঠিরা ছোটকরে হলেও ঘোমটা টানতে ভুলে যেত জেঠুদের সামনে। সে এক অদ্ভুত স্বাধীনতা ছিল, যা কাউকে কখনও চেয়ে নিতে হয়নি। আবার কেউ বাধাও দিত না। কেউ বলত না, আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।

শুনেছি জেঠুর মেয়ের কোল থেকে নাকি একবার গরম উনুনে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলাম! খুব ছোট ছিলাম কিনা। দেড় কিলোর কম। বড়মামা ভয় করত, এ ছেলে টিকবে কিনা!

অন্নপ্রাশনের দিন আকাশ কালো করে মেঘ উঠেছিল। বাড়িভর্তি লোকজন, এত আয়োজন সব পণ্ড হবে! বড়পিসি কী একটা মানত করেছিল। মেঘ কেটে গেছিল। মেঘ বাবাজীবনেরও তার মতো করে থাকার সাধ্য ছিল কই? পরে অবশ্য শোধ তুলে নিয়েছিল। বড়পিসিকে বুদ্ধি পরে আর দেখিনি।

আমার হামাগুড়ি দেবার বয়স পেরিয়ে যখন সামান্য এদিক ওদিক যেতাম, কেউ বাধা দেয়নি। মনে আছে, মাটি খেতাম, বকুনি খেতাম। ভাত তরকারি যে খাইনি তেমন নয়, তবুও শরীরটা মাটিতে মিশে যাবার মতো করেই বেড়ে উঠতে লাগল। আমি আমার মতো করে থাকার আগেই ভাই এল। ভাই বা বোন আসবে একথা শুনেই আমি ভাই চাইতাম। মেলা থেকে দুটো ভাইয়ের ছবি পোস্টার কিনে এনেছিলাম। একটা দরজায়, একটা দেওয়ালে। ভাইয়ের বয়স এখন প্রায় তেইশ। আমাদের মাটির দেওয়ালে ওই ছবি এখনও সাঁটা আছে।

ক্লাস ফোরে যখন বন্ধু পাপাই মানির সঙ্গে মিলে একটা ছড়া লিখলাম, সেদিনও টুটুল স্যার ফিসফিসিয়ে কথা বলার দরুন নিলডাউন করিয়ে দিয়েছিল। আমার মতো করে লেখা শুরু করার সেই প্রথম শাস্তি। তারপর থেকে মেয়াদ বেড়েই চলেছে।

ক্লাস ফাইভে উঠে ফুলপ্যান্টে হাইস্কুলে যেতাম। হাইটে অনেকের চেয়ে ছোট, সামনের দিকে বসতাম। সে কী ভীষণ চেহারার সব বন্ধু আমার! হলঘরে মঞ্চের নীচে ঢুকবার জায়গা ছিল। একটা ছেলে আমাকে ওর মধ্যে জোর করে অনেকক্ষণ ঢুকিয়ে রেখেছিল। আমি আমার মতো ছিলাম? বাবার সাইকেলে চেপে কল্যাণ স্যারের কাছে পড়তে যেতাম। কল্যাণ স্যার আমার রামকৃষ্ণ সারদা বিদ্যামন্দিরের স্যার ছিল। কিন্তু হাইস্কুলে উঠেও তার কাছেই পড়তে যেতে হতো। যদিও বাড়িতে আলাদাভাবে আমি দাদা দিদিরা পড়তাম রামকৃষ্ণ স্যারের কাছে।

যাইহোক, কল্যাণ স্যারের কাছে সিনিয়র জুনিয়র মিলিয়ে পড়া। বড়রা আমায় বেশ রাগাত। পড়তে যেতে চাইতাম না। বাবা এক টাকা করে দিত সাইকেল থেকে নামিয়ে দিয়ে। তবুও ওখানে পড়া ছেড়ে দিলাম। সেবছর বাবাও চলে গেল। আর আমাদের যৌথ পরিবারের ভাঙনও ওই শুরু হল। আমাকে বলা হল রাস্তার ছেলে।

রাস্তার নাকি ঘরের নাকি আমি শুধুই আমার তার জবাব দেবার বয়স তখন ছিল না। গায়ে জ্বর ছিল বলে বাবার মুখাগ্নি করতে দেওয়া হল না। ছোটমামা একটা আপেল কিনে দিয়েছিল। খেয়েছিলাম অনিচ্ছা সত্ত্বেও।

আমি ডানপিটে ছিলাম। মারপিট, গালিগালাজ এগুলোর মাঝে বেড়ে উঠছিলাম। কিন্তু ঘুরিয়ে কেউ মারার বদলে বলত, ওকে মারিস না, ওর বাবা নেই। আমাকে আমার মতো থাকতে দেবে বলে বন্ধুরা প্রায় সকলেই করুণা করত।

তারপর থেকে দীর্ঘ সময় আমি আমার মতো করেই থেকেছি।

টিউশনি পড়তে গিয়ে একই ঘটনা ঘটছে হায়ার সেকেন্ডারিতেও। পড়াশোনা আমি ছাড়িনি। কিন্তু একপেশে অঘোষিত র‍্যাগিংয়ের শিকার হয়েছি একথা বলতেই হবে। প্রভাব পড়েছে রেজাল্টেও। আমার পারিপার্শ্বিক জগৎ, আমার কবিতা চেতনা সমস্ত কিছুর ওপর। আমার নিজের মতো করে থাকার মানেগুলোও এর সাথে সাথে পাল্টে চলেছে।

কলেজে অনার্স পড়ব নাকি জেনারেল পড়ব সে নিয়ে আমার সিদ্ধান্তর চেয়েও মুখ্য হয়ে উঠেছিল আর্থিক অনটন। যাতে খরচ কম, তাই নিয়ে পড়া ভালো এবং জীবনের ভুলভাল রাস্তা বাতলে দেওয়ার লোকজন জুটতে থাকল আমার আর মায়ের আশেপাশে। আমি আর মা কেউই আজীবন আমাদের মতো করে থাকতে পারলাম না।

আমি গিয়ে উঠলাম মাসির বাড়ি। একবছর না গড়াতেই টিউশন ফি বাকি পড়ে গেল। আমার মতো করে রোজগারের সেই শুরু। ফিরলাম বাড়িতে। নিজে পড়াই, তাই দিয়ে পড়ি। চোখে জল আসে, অভিমান হয় বড়দের উপর। আমাকে আমার মতো পড়তে দাও―বলতে পারিনি আজও।

কর্মজীবনে কী করব তাও ঠিক করে দিতে লাগল কাছের মানুষেরা। সরকারি বিস্তর পরীক্ষা দিই, কয়েকটা পাশও করি। কিন্তু হয় না। এইবার কিন্তু কারোর কথা শুনলাম না। যেটুকু লেখালেখি, সম্পাদনার পুঁজি ছিল তাই নিয়ে ইন্টারভিউ দিলাম পত্রভারতীতে। হয়েও গেল চাকরিটা। আমি আমার মতো থাকব বলে চলে এলাম কলকাতা।

এইবার লড়াই শুরু অন্যরকম। মেসবাড়ি। বিছানায় আমি আর পাশবালিশ। একজন আরেকজনের পিঠে না উঠলে ধরে না। এখানেও তালাবন্ধ রইলাম রুমমেটের কৃপায়। মেসমালিকের এক্সট্রা চাবি বাঁচিয়ে দিল। কিন্তু আমি তারমধ্যেও থাকতে পারলাম কই! এত মানুষের সঙ্গে লড়াই করলাম। হারিয়ে দিল ছারপোকার গুপ্তদল। সে গল্প অন্যসময় হবে।

চলে এলাম অফিসলাগোয়া একটা ঘরে। এখন অফিসই বাড়ি, বাড়িই অফিস। আর রাতদিন আমাকে আমার মতো পড়তে দাও। আমাকে আমার মতো কাটতে দাও―গল্প, উপন্যাস এ বি সি...এম এন ও। কিন্তু আমি আমার মতো থাকতে পারলাম কি? এই প্রশ্ন এখনও মনে জাগে।

Mousumi Bhowmick: কি হতে চেয়েছিলো সে ভেবে বসে থাকলে চলবে না

 


Mousumi Bhowmick: ছেলেমেয়েরা যখন পড়াশোনা করে তখন বাবামায়েদের মূলত লক্ষ্য থাকে একাডেমিক রেজাল্ট অর্থাৎ পরীক্ষার ফল যেন ভালো হয়।  মাধ্যমিক পাস করার পর যদি ছেলেটি অথবা মেয়েটি অংক কিংবা বিজ্ঞানে ভালো হয় তাহলে উচ্চমাধ্যমিকে তাকে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি করা হয় নচেৎ আর্টস শাখায় ।

এই স্কুল  জীবনে কোন একটি সাবজেক্ট কোন একটি ছাত্র-ছাত্রীর ভালোলাগা কিংবা খারাপ লাগার পেছনে অনেক সময় কোনও কোনও শিক্ষকের অবদান থাকে । হয়তো কোন শিক্ষকের শেখানোর পদ্ধতির জন্য যে কোন একটি সাবজেক্ট না ভালোলাগা সত্ত্বেও হয়তো প্রিয় হয়ে উঠল। তারপরে হয়তো সেই সাবজেক্টটি নিয়েই সে ভবিষ্যতে পড়বে ঠিক করল। আবার কখনও হয়তো এমন ভীতি তৈরি হলো সে আর সেই সাবজেক্টটিকে পড়তেই চাইল না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছেলেটি কিংবা মেয়েটি সেটা নিয়েই এগোতে চায় যা তার ভালো লাগে। ভবিষ্যতের সুদূর প্রসারী ফল সম্পর্কে তার ঝুঁকি কিংবা ফল কোনোটাই  সে তখন ভাবে না অথবা জানার সুযোগও থাকে না।

মা-বাবারা সবসময় চায় তার ছেলেটি কিংবা মেয়েটি, যা নিয়েই পড়ুক সেটা নিয়ে জীবনে যেন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে অর্থাৎ একটি ভালো পেশা গ্রহণ করতে পারে।  এবার এখানে অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। প্রথমতঃ,  হয়তো একজন  ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে একটি প্রাইভেট জবে ঢুকলো কিন্তু  চাকরিক্ষেত্রে হয়তো তাকে অনেক ছোটাছুটি করতে হলো কিংবা নাইট শিফটে কাজ করতে হলো কিংবা যেকোনো সময়ে তাকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হল । তখন হয়তো ছেলেটির সামনে হঠাৎ একটা সুযোগ এসে গেল তার আরেক ভাললাগা একটা শিক্ষকতা কিংবা সাংবাদিকতা করার সুযোগ। কিছুদিনের জন্য সে সেটাই করতে শুরু করে, ক্রমে হয়তো সেটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিল।  এ ক্ষেত্রে তো বাবা-মাকে দোষ দেওয়া যায় না।

আবার কখনো কখনো এমনও ঘটে যে ছেলেটি কিংবা মেয়েটি উচ্চ মাধ্যমিকের পর যা পড়তে রাজি নয় হয়তো বাবা-মার জোর জবরদস্তিতে সে তাই নিয়ে ভর্তি হল তারপর ভালো ফল করলো না,  হয়তো তারপরে এসে স্ট্রিম চেঞ্জ করলো আবার এরকমও ঘটেছে ভালো ফল করেও পরবর্তীতে সে আবার অন্য প্রফেশনে চলে গেল। এক্ষেত্রে হয়তো বাবা-মায়ের কিছুটা দোষও রয়েছে।  হয়তো পারিপার্শ্বিক চাপ, অথবা নিজেদের অপূর্ণ সাধ মেটাবার কিছুটা চেষ্টা।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার পরিস্থিতির জন্য।  যেমন কেউ হয়তো টাইপরাইটারে টাইপিং শিখেছিল। তারপরে কম্পিউটার এসে যাওয়ায় সে ক্ষেত্রে তাকে অন্য কোন কিছু করার চেষ্টা করতে হয় অর্থাৎ পরিস্থিতির সাথে চলতে শিখতে গিয়ে মানুষের পেশাও অনেক সময় পরিবর্তন করতে হয় ।

আবার কখনও কেউ শিক্ষক হতে চায়, কিন্তু পরিস্থিতি (যেমন পশ্চিমবঙ্গে) তাকে অন্য পেশাতে যেতে বাধ্য করে। রাজনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, পরিস্থিতি ও সময়ের সাথে সাথে মানুষের পেশার পরিবর্তন ঘটে । এটা অনস্বীকার্য যে সফল হতে হলে মানুষকে এই পরিবর্তন গ্রহণ করেই এগোতে হবে। কি হতে চেয়েছিলো সে ভেবে বসে থাকলে চলবে না।

Aneesh Sarkar IPS: শুধু পাকিস্তান নয় গোটা বিশ্বকেই দেখিয়ে দিল আমার দেশ

 

Aneesh Sarkar IPS: ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও-এর হামলা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। ধর্মের দাগ খুঁজে শান্ত মাথায় যে নৃশংস হত্যা জঙ্গীরা চালিয়েছে তা নিয়ে আমি সত্যিই খুব চিন্তিত ছিলাম। সেদিনের পর থেকেই শুধু ভেবেছি প্রতিশোধটা কবে দেখব? ঠিক যেভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার দরকার ছিল ঠিক সেভাবেই প্রতিশোধ নিয়েছে আমার দেশ 'ভারতবর্ষ'। এই উচিত প্রতিশোধ নিয়ে ভারত শুধু পাকিস্তানকে নয় গোটা বিশ্বকেই দেখিয়ে দিয়েছে বলেই আমি মনে করি।

যে কাপুরুষেরা ধর্ম বেছে হত্যা করে আমার মা-বোনেদের সিঁদুর মুছে দিয়েছিল তারই যথোপযুক্ত জবাব দিয়েছে ভারত। এমনকি ৭ মে মক ড্রিলের দামামা বাজিয়ে গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে ৬ মের মধ্যরাতে পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীর সহ পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে ৯ টি জঙ্গী ঘাঁটি উড়িয়ে দেওয়া

আমার কাছে গর্বের। ইতিহাসের পাতায় সেই সিঁদুরের লালেই লেখা থাকবে ৬ মের দিনটা 'অপরাশেন সিঁদুর'।

অন্যদিকে, নারীরা যে কখনই দুর্বল নয়।  সে কথায় ভারত সরকার আরও একবার তুলে ধরল বিশ্বের দরবারে। যখন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে 'অপারেশন সিঁদুর'-এর বিবৃতি দিতে এলেন দুই অফিসার কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং উইং কম্যান্ডার ব্যোমিকা সিং। এঁরা দুজনেই নারী। আমার মনে হয়েছে এঁদের দুজনকে এগিয়ে দিয়ে আমাদের দেশের নারীশক্তিকে গোটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরে উপযুক্ত বার্তা দিল ভারত সরকার। একজন ভারতবাসী ও ভারতীয় অফিসার হিসেবে ভারতীয় সেনাদের আমার স্যালুট।  

রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫

জলফড়িং ফিরেছে, লেখা পাঠান


 ২০১৭ সাল থেকে পথ চলা শুরু হয়েছিল। দীর্ঘ পথ হেঁটেছি। পাশে থেকেছে অনেকেই তাঁদের প্রতি আমরা ঋণ স্বীকার করছি। অনেকেই একসাথে পথ চলতে গিয়ে ছেড়ে দিয়েছে হাত তাঁদেরকেও কৃতজ্ঞতা জানাই৷

লড়াই, একনিষ্ঠতা আর ভালোবাসা মিলে শুরু হওয়া একটা ওয়েব ম্যাগাজিন একদিন ১ থেকে ৮০ হাজার মানুষের কাছে পৌঁছেছিল। পাঠকেরা ভালোবেসে তাঁদের লেখা পাঠিয়ে আমাদের সঙ্গে থেকেছিলেন। আমরা তাঁদের প্রতিও কৃতজ্ঞ।

আমরা বিশ্বাস করি কোনও কিছু যার সঙ্গে সময় জড়িত থাকে তা ভুখা পেটে হয় না। তাই আমরা যারা জলফড়িং চালাতাম একদিন কাজের সন্ধানে আমরা বেরিয়ে পরেছিলাম। বিরতি নিয়েছিলাম প্রাণের ওয়েব ম্যাগাজিন জলফড়িং থেকে। কিন্তু মনে মনে বলেছিলাম 'আবার ফিরব'।

অরূপ সরকার ও জয়দীপ রায় এই দুজন মিলে জলফড়িং সামলাবেন নতুন করে সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে। আমিও চেষ্টা করব কমবেশি কাজ (আনঅফিসিয়ালি) করার।

আপাতত এই মে মাসেই আসছে জলফড়িং-এর ফিরে আসার সংখ্যা 'আমাকে আমার মতো থাকতে দাও'।

লেখা পাঠাতে হবে শুধু এই বিষয়েই। নিবন্ধ আর প্রবন্ধ নেওয়া হচ্ছে। লেখা পাঠানোর জন্য হোয়াটসঅ্যাপ করুন ৭৩৮৪৩২৪১৮০ নম্বরে। লেখা পাঠানোর শেষ দিন ২৬ মে, ২০২৫।

লেখা গৃহীত হলে তবেই প্রকাশিত হবে। কিছু বিশেষ কলম আছে উনারা আমন্ত্রিত। চমকও আছে। সূচীপত্র প্রকাশের দিন জানানো হবে।

ইতি,

সুদীপ্ত সেন, জয়দীপ রায়, অরূপ সরকার

শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১

এবারের কবিতার বিষয় ছিলো ভালোবাসা



সম্পাদকীয় কলম

নমস্কার,

            প্রথমেই সকলকে জানাই ভালোবাসা ভরা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমাদের সকলের আদরের 'জলফড়িং' ওয়েব ম্যাগাজিনের এবার চতুর্থ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে নির্বাচিত বিষয় ছিল-"ভালোবাসা"। হ্যাঁ এই মন্দবাসার দেশে যেটার ভীষণ অভাব। তবু ভালোবাসা পেতে কে না ভালোবাসি। এই ভালোবাসা নিয়ে বিভিন্নজনের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এবারের সংখ্যায় আমাদের 'জলফড়িং', পরিবারের ভিন্ন ভিন্ন সদস্যের নিজ নিজ অনুভূতি মিশ্রিত লেখনী সম্ভারে সজ্জিত হয়ে ভালোবাসার রঙে নিজেকে রাঙিয়ে মেলে দিয়েছে তার ডানা আরও আরও ভালোবাসা পাওয়ার আশায়।।



ধন্যবাদান্তে,

জয়ীতা চ্যাটার্জী ও পাখি পাল(যুগ্ম সম্পাদিকা)



১.)

ভালোবাসা

কলমেঃ- সুরভী চ্যাটার্জী


ও চোখের গহীন সাগরে 

প্রেম ঢেলেছিলাম ।

এই হৃদয়ের মরুতে

জাগিয়ে দিলে বাসনার নির্লজ্জতা..

তোমার কূলপ্লাবিনী শব্দোচ্ছ্বাসে

উতল এ মন বোধে নির্বোধে হলো স্বপনচারিনী

মন থেকে মনান্তরে  বাঁধল গিঁট

ভালোবাসা...


 ২.)

সেই প্রথম দিনটা

কলমেঃ- সাত্যকি সর্বাধিকারী


তোর সদ্য দেখা হাসি,

গভীর চোখের ওপর ঘন চুলের রাশি,

হাতের ওপর নরম হাতের ছোঁয়া,

কখনও বা হাতের ওপর এলিয়ে দেওয়া মাথা;

অনেক কথা বলার পরেও

না বলতে পারা অনেক কথা।


বসন্তের ওই উষ্ণ বিকেলে

কফি হাউসের ওই একটা টেবিলে,

একে অপরের দিকে চেয়ে বসে থাকা

যেন জলছবি।


হাতের ওপর ঠোঁটের নরম স্পর্শ,

ডুবিয়েছে অনুভূতির ঘোরে;

হাত ধরে এতটা রাস্তা হাঁটা,

আর গল্প-হাসি-ঠাট্টা,

এইরকমই থাকিস আর

আজীবন এইভাবেই ধরে রাখিস হাতটা।।



৩.) 

চাইলেই পারবো না..

কলমেঃ- জয়দীপ রায়


আনমনা হয়ে ইনবক্সের ম্যাসেজগুলো চেক করছিলাম,

হঠাৎ ঈশান কোণ বেয়ে একটা ঢেউ খেলানো রোদ

এসে পড়লো গালে,

অনুভূতি'টা চেনা খুব পুরোনো ছন্দের মতো,

আগে হলে চটপট লিখে রাখতাম ভালোবেসে।

এখন আর ইচ্ছেগুলো জাগে না ,

ঘুমিয়ে আছে বেশ জিয়ন কাঠির ছোঁয়ায়,

ইচ্ছে করে না প্রিয় ফাউন্টেন পেন'টা 

দোয়াতে চোবাতে।

মনের বিপরীত কোণ'টা প্রশ্ন করলো.. 

তাহলে একে ফেলে দিস না কেন ?

গলা খাঁকিয়ে বললাম,

উপহার'টা যে শুধু উপহার নয়

প্রিয় অনুভূতিও বটে।

চাইলেও পারবো না..

অজানা অধিকার আঁকড়ে আছে,

আজও পেন্সিল বাক্স'টা জুড়ে..।।


৪.)

এবং ভালোবাসা

কলমেঃ- শুভঙ্কর নস্কর




যখন তুমি পঞ্চভূতের কায়ায়

আঁতুর ঘরে জন্ম নিয়ে এলে,

মিষ্টি মুখের মিষ্টি হাসি দিয়ে

জগৎটাকে ভরিয়ে তুমি দিলে।


বাল্যকালের ওই যে মিষ্টি প্রেমে,

আদর শুধু আদর মাখা গালে

ভালোবাসা মুঠোয় ভরে তুমি

কুড়িয়ে গেলে অজান্তে-অক্লেশে।


যখন তোমার কৈশোরেতে প্রবেশ,

হাজার খুশির ভাবনা অশেষ,

বন্ধু-প্রীতির মাঝে তোমার

প্রেম হয়ে যায় ইতি। 


যৌবনেতে যখন ভাসলো ভেলা,

হাল ধরে বায় মন-মাঝি আজ

পাড়ের পানে তরীর খেলা 

নিত্যকে দেয় নাড়া।


শেষ বেলাতে ভালোবাসা

করুণ আঁখি মুদে,

মৃত্যুকে পান করার আশায়

ভালোবেসে ডাকে।

বেলাশেষের আলগা মুষ্টি

উদার কেবল উদার

দু-হাত ভরে, আশীর্বাদে

ভরিয়ে যে দেয় দেদার ।


৫.)

 ভালোবাসা

কলমেঃ- বিশ্বনাথ দাস


 সৎ জীবন বড্ড ভয় জন্ম দেয় আজকাল,

আগে এমনটা ছিল না..  ছায়া ঢাকা মুখ, বোকার তকমা, মন্থর চলন, না বোঝা চাউনি -এসব শুনে শুনে খাঁচার পাখির মতন ডানা ঝাপটায় মন ,

অথচ গাছ ,রাস্তার কুকুর  অদূরে মগডালে বসা লম্বা লেজওলা পাখিটা দেখে..তুমি  কুয়াশায় ঝাপসা হয়ে

যাও দিনের আলোতে---

 অবাক হই তোমার দিনরাত দেখে,

ছলে আর কৌশলে ভালোবাসা তোমার অবিশ্বাসের অন্ধকার 

ঘোষণা করেছো মৃত।

 ঐ দেখো মানুষটাকে---

মনে পড়ে কেমন দুলকি চাল নিয়ে বাড়ি ফিরতো..

আগুন নির্জন দুপুরে ভেজা শরীরে

তারপর--


বাতাস একটা ভুল প্রেমের কবিতা শুনিয়ে উধাও ,

তবু আজও 

তোমার গন্ধ বাতাসে অনুসরণ করে নিজের মধ্যে নিশ্চুপ থেকে সর্বনাশের মাঝখানে দাঁড়িয়ে একা একা ভাবি

মরিনি আমি,আমার অস্তিত্ব মরেনি!

 তবু কেন জীবনটাকে অমনোনীত কবিতা বলে মনে হয় আজকাল, 

মনে হয় যদি গাইতে পারতাম ছুটন্ত ট্রেনের গান পারতাম হতে ভুতুম ভগবান---



৬.) 

ভালোবাসা

কলমেঃ- গোবিন্দ নস্কর


 একদিন সন্ধ্যায়

     কোকিল এসে

    বললো কানে কানে

জানো তো ভাই তোমার উনি

    ব‍্যস্ত থাকেন ফোনে।


সত্যি বলছি রাগ করিনি

   কেন জানো তুমি?

কারণ আমার বিশ্বাস ছিল

ব‍্যর্থ হবে না প্রেম জানি।।


অনুভূতি'গুলো বলা হলো না

   ভাষা হারিয়েছি আমি

দুঃখে-কষ্টে ভরিয়ে দিলে

সাজানো বাগান তুমি।।


ভাবনা ছিল একদিন

     নিরালায় বসে

বলবো মনের কথা

ঝুলির ভিতর লুকানো আমার

    প্রেমের গোপন খাতা।


হলো না আর কিছুই

নিজের দেখা স্বপ্নগুলো

আবছা হলো সবই।


ভেবেছিলাম ওর অতীত ভুলিয়ে

       বর্তমানে বাঁচবো

কল্পনাতে থেকেই গেল

অন্ধকারে খুঁজবো।


অপেক্ষা করবো তোমার জন্য

  যদি আসো কখনো ফিরে

সেদিনও তুমি থাকবে আমার

      মনের হৃদয় জুড়ে।


আজ পড়েছো যার প্রেমে

কাল সে'তো যাবে ভুলে

আমার কথা মিলিয়ে নিও

কয়েকটা দিন গেলে।।


রাখবো আমি হাত বাড়িয়ে

       ধরতে যদি চাও,

মনে মনে আমিও ভাবি

   আমায় তুমি পাও।


ভালোবাসার সিংহাসনে

বসিয়ে তোমায় রাখবো

তোমার ছবি মনে নিয়ে

যতদিন আমি বাঁচবো।


সুখে থেকো তার প্রেমে

      জড়িয়ে ওর বুক

আমি না হয় তোমার থেকে

     সরিয়ে নেবো মুখ।।


৭.) 

সংগ্রামী চেতনায় প্রেমজ পরিচ্ছেদ 

কলমেঃ- সুনন্দ মন্ডল 


সংসারের চৌহদ্দি থেকে বেরিয়ে এসো,

কিছু ভুল আর ঠিকের সংগ্রাম 

আর বিষন্ন বিকেলের দরজা ছাড়িয়ে

দাঁড়িয়ে আছে রাত। 


উত্তীর্ণ বিছানায় একটুকরো প্রেম, 

আর আঁশটে গন্ধের ছাড়পত্রহীন কাঁথায়

গায়ে গায়ে লেপ্টে থাকে যৌবনিক বৃত্ত। 

মৌখিক আলাপের বেসুরো কাহিনিতে গাঁথা ভালবাসা। 


সংসারের চৌহদ্দি থেকে বেরিয়ে এসো,

চোখ মেলে দাও চোখে।

খুঁজে পাবে সারাদিনের ক্লান্তি আর হতাশার

জৈবনিক চরিতাবলী। 


সকালের ঠিকানায় মেলে দাও জোনাকি

পাখি হয়ে উড়ে যাক জীবন

সংগ্রামী চেতনার ভিড়ে একটুকরো বিনিময়ে  

বেঁচে থাকুক স্বামী-স্ত্রীর প্রেমজ পরিচ্ছেদ।


৮.)

ভালোবাসার রকমফের

কলমেঃ- পাখি পাল


চাকার তলায় পিষছে জীবন

তবু সিগন্যাল দেখে রাস্তা পার,

বাসা এখন হচ্ছে বদল

ভালো থাকাটা নাকি অঙ্গীকার।


সবুজ ঘাসে অশ্রু শিশির

সুস্থ থাকার অভাববোধ,

রাতের ক্ষত স্পষ্ট করে

ভোরের গায়ে নতুন রোদ।


বসন্তগুলো আগের মতোই

শিমুল, পলাশ ফোটায় ডালে,

শুধু চরিত্ররা পালটে যায়

ভালোবাসার মেঘের কোলে।।

     


রবিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২১

 

শক্তি রূপেন সংস্থিতা..
শুভঙ্কর নস্কর




ভোর তখন ৪টে, মন্ডল বাড়ির রেডিওতে ভৈরবী রাগের সুর ভেসে আসছে।শুক্লা বাগদি বিছানার পাশে থাকা কেরোসিন লম্ফ'টাকে জ্বালিয়ে ঘুম জড়ানো চোখে উঠে পড়ে।উঠানের এক কোণে রয়েছে মাটির বেশ বড়ো পাত্র, সেখানে জাগানো রয়েছে বেশ কিছু লোনা প্রজাতির মাছ - বোরো, চোখ ডেমরা, গুলে, কেরালে, সোনা বোগো, সোনাবেলে প্রভৃতি।

শহুরে বাবুরা এগুলো দিয়ে তাদের অ্যাকোরিয়ামের শোভা বর্ধন করেন এবং খাদ্য গুনে সমৃদ্ধ হওয়ায় তাদের রসনা তৃপ্তিও করে থাকে। চার সন্তানের  এই ভরা সংসারে শুক্লার মৎস‍্য বিকিকিনিতে দু-পয়সা হাতে আসে।  সংসার ঘানির এই সুকঠিন ভারটা সে নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছে।

ক্যানিং থেকে ট্রেন ছাড়বে ভোর ৫ টায় তাই শুক্লার তাড়াও বেশ,কারণ সঠিক সময়ে শহরে এ মাছ পৌঁছে দিলে তবেই না সঠিক দাম পাবে।
বিরামহীন পথের সন্ধানী শুক্লা পথ চলতে থাকে ... গ্রামের পথ শেষে শুরু হয়েছে নদীর সরু পাড় , বেলে মাটির মধ্যে  তিরের ফলার মতো লুকিয়ে থাকা ঝিনুকও (জোমরা, কস্তুরো) পায়ের তলার কোমলতায় বারংবার আঘাত হেনে চলেছে কিন্তু শুক্লার গতি তাতে শ্লথ হওয়ার নয় ...।

পূব আকাশে নির্মল রক্তিম সূর্য-রশ্মির ছটায়  তন্দ্রালু পৃথিবী জেগে উঠছে ।এতোক্ষণে শুক্লা ও তার সাথী জেলেরা পৌঁছয় মৌখলির ঘাটে।এখান থেকে নৌকো ছেড়ে চালকড়ের কুল বেয়ে  মাতলা নদীর বুক চিরে  পৌঁছে যায় লর্ড ক্যানিং-এর পুরাতন নৌকা-ঘাটে। রোজ সাধন মাঝি নৌকা ছেড়েই দু-কলি ভাটিয়ালি গান ধরে..

"নাও ছাড়িয়া দে ,পাল উড়াইয়া দে / ছলছলিয়া চলুক রে নাও মাছ দরিয়া দিয়া, চলুক মাঝ দরিয়া দিয়া"

কিন্তু আজ যে  বিধি বাম।কারণ সাধন খুড়োর দেখা কই।মাথায় মাছের হাঁড়ির ভার  মুহূর্তে যেন বেড়ে যায় শুক্লার।অবস্থার গত্যন্তর বুঝে তার সঙ্গিনীরা ঘরের উদ্দেশ্য-এ রওনা দেওয়া শুরু করে কিন্তু শুক্লার মনে চলতে থাকে অন্য খেলা।মনস্থির করে ফেলে আজ সে মাতলার মাতাল জলরাশি সাঁতরে পার করে ওই কূলে পৌঁছবে।তার সঙ্গী মেনকা বাগদী ফিরে চলার অনুরোধ উপেক্ষা করে শুক্লা বলে- 'তুই ঘরে যা ম‍্যানকা, আমারে যে আজ  যেতিই হবে ওপারে'।


সাথে সাথেই পরনের আটপৌরে কোমর পিঠের কাপড়কে সে খাটো করে  জড়িয়ে নেয় কোমরে , মনের মধ্যে যেন যুদ্ধ জয় করার দৃঢ়তা অনুভব করে ।মাছের হাঁড়ি'কে সে ভাসিয়ে দেয় গঙ্গার বুকে ,সাথে নিজেও ঝাঁপিয়ে পড়ে মাতাল জলরাশির উপর। পাড়ের উপর থেকে মেনকা হাঁক পাড়ে - 'শুক্লা... তুই যাসনে ...ফিরে আয়...শুক্লা।'
কিন্তু শুক্লা আজ যেন 'মনসা মঙ্গল'-এর বেহুলা,  যে মা-গঙ্গার বুকে ভেলা ভাসিয়েছে,তার তিলে তিলে গড়ে তোলা সংসার-কে  বাঁচানোর জন্য। দেবী শক্তির প্রতিভূ হয়ে সে মাতলার দুরন্ত অগণিত ঢেউকে দু'পায়ে ঝাপটে পরাহত করে এগিয়ে চলে...।

 সম্পাদকীয় কলম




নমস্কার,

প্রথমেই সকলকে জানাই উৎসবের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। জলফড়িং ওয়েব ম্যাগাজিন-এর এবার তৃতীয় সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে নির্বাচিত বিষয় ছিল-"দেবী শক্তি"। আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গার একটি রূপ। শাক্তমতে তিনি বিশ্বব্রম্ভান্ড সৃষ্টির আদি কারণ। দেশবাসী যখন দেবী শক্তির আরাধনায় ব্রতী, তখন আমাদের জলফড়িং-ও লেখনী-পুষ্পে তার সাজি ভরিয়ে মাতৃ-চরণে নিবেদন করেছে তার ভক্তি ভরা প্রণাম আর জানিয়েছে আগামী দিনে সকলের সাথে এগিয়ে চলার প্রার্থনা।।


ধন্যবাদান্তে,

জয়ীতা চ্যাটার্জী ও পাখি পাল (যুগ্ম সম্পাদিকা)

 তুমি মা, তুমি শক্তি

পাখি পাল





তুমি মুক্তি, তুমি শক্তি

তুমি জাগ্রত ঈশ্বর,

তুমিই সকল যুক্তি দিয়ে

নিজেকে করেছো নশ্বর,

তুমি লক্ষ্মী, তুমি গঙ্গা

তুমিই পরম পবিত্র,

অসহ্য যন্ত্রনা সয়েও

টিকে আছো যত্রতত্র,

তুমি আলো, তুমি ভালো

তুমি যে সুমধুর ভাষিনি

তুমি মা , তুমি দেবী

তুমিই অশুভ বিনাশিনী।।


   

 

কালী বলে ডাকে
জয়দীপ রায়



এ কেমন মেয়ে
যে রাঁধতে জানে না
চুল বাঁধতে জানে না।
এলোমেলো মেলোড্রামায়
ভাসতে জানে,
নেশায় উন্মত্ত উন্মুক্ত
পঞ্চভূত ডুবে থাকে অন্ধকারে।
এ কেমন মেয়ে!
ভালোবাসতে জানে না
বাসা খোঁজে খড়কুটোয়
এদের কেউ কাছে টানেনা,
কাছে ডাকেনা..
এড়িয়ে চলে ছায়া মাড়ায় না
তবে এরা অবলা নয়
চুপ থাকেনা,
আশ্রয় হীন! তবে পরশ্রীকাতর নয়
আপোস মানে না
লুটিয়ে পড়েনা।
এরা অন্য এরা বন্য
দাপিয়ে বেড়ায়।
দাবিয়ে রাখতে জানে
এরা চণ্ডাল রূপ ধরে
এদের গর্জনে কেঁপে  ওঠে রূহু
শুনেছি এদের নাকি
লোকে কালী বলে ডাকে।

কবিতাঃ- জোনাকি

 বিশ্বনাথ দাস 




সৌন্দর্য খুঁজতে খুঁজতে জীবন ফেলে 

পালানোর কৃতিত্ব নেই কোনো

দাঁত বসিয়ে বিশ্বাস ভেঙেছো সামান্য নির্ভরতায় 

অস্তিত্বের বিষন্নতা নিয়ে নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দেখো চেনা মানুষ কেমন অচেনা অচেনা--- 

এক এক করে হারিয়ে যায় অনেক কিছু 

তবুও জীবন জীবন খোঁজে 

গানে গানে ভোরের পাখি শিস দেয় দিন আনে 

তোমার বিকলাঙ্গ মন না বুঝে ঘর পাল্টায় 

আমি শেষবারের মতো মিলিয়ে নিতে নিতে দেখি আমার বিশ্বাস মাটিতে মিশে যায় কথায় কথায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্লাস 

জলদার  চায়ের দোকান 

জুরোনো চায়ে চুমুক 

পা তুলে বেঞ্চে বসা 

সবই অতীত সেসব দিন 

দুজনেই দেখেছি দুজনার চোখের জল 

দেখেছি বাংলার মা সকল 

শুরু দুহাত দশ  কোরে  দেবীপক্ষ 

আমাদের উমাতে

পাখির প্রভাতে 

এইটুকু শুধু জেনে রাখো

 আরক্ত সন্ধ্যায় 

তুমি আজ পরাভূত---

শনিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২১

সম্পাদকীয়


সম্পাদকীয় কলম

নমস্কার, 
আমাদের জলফড়িং ওয়েব ম্যাগাজিন সকলের ভালোবাসা ও আশীর্বাদকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলেছে সানন্দে। জলফড়িং ওয়েব ম্যাগাজিনের দ্বিতীয় সংখ্যায় আমরা( জয়ীতা চ্যাটার্জী ও পাখি পাল) একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর লেখাকেই প্রাধান্য দিয়েছি। আমাদের এই ভাবনার উদ্দেশ্য হল, একটি সাধারণ বিষয়কে কেন্দ্র করে পরিবারের সকল সদস্য যাতে নিজ নিজ লেখনী গুণে বিশেষ করে তাকে প্রকাশ করতে পারেন।
     
পরিশেষে বলি,'ঘর' থেকেই যাত্রা শুরু আবার সেই 'ঘর'-এতেই ফেরা। শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাই আমাদের এই পরিবারের সকলকে..🙏🙏

ধন্যবাদান্তে,
জয়ীতা চ্যাটার্জী ও পাখি পাল (যুগ্ম সম্পাদিকা)

ঘর সে'তো স্বপ্ন
কলমেঃ- পাখি পাল

ঘর সে'তো স্বপ্ন,সে'তো আশ্রয়
সে যে ভালোবাসার জন্ম দেয়,
সে যে চার দেওয়ালকে
শক্ত করে ধরে রেখে
মানুষগুলোকে আগলে যায়,
কত ঝড়-ঝাপটা,বৃষ্টি-রোদ
একা দাঁড়িয়ে সামলে যায়,
বছরের পর বছর সবটা সয়ে
কেমন তাকিয়ে থাকে নির্বাক,
দিনে দিনে তারও বয়স হয়
বট অশ্বত্থ জন্ম নেয় গায়ে,
সকলের অলক্ষ্যে মারণ রোগ
যেন বাসা বেঁধে যায় শরীরে,
ধীরে ধীরে বর্ষার জল জমে
পেশি'গুলোতে পচন ধরায়,
এই সুযোগেই বিষাক্ত শিকড়গুলো
শিরা-উপশিরায় ছড়িয়ে দেয়
ভাঙনের পাগল খেলা,
তারপর একদিন অসহ্য যন্ত্রনায় সে'ও বলে ওঠে
অযত্নে সব ভাঙে গো সব ভাঙে।।


শেষ প্রহরের কাছে
কলমেঃ- বিশ্বনাথ দাস 

শরীর ছোঁয়া জীবন-মরণ টান 
বাতাসে দিক্ হারা অদ্ভুত বিস্ময়
টের পায়না  শিকড় কোন দিনও
 সবুজ পাতা কখন হলুদ হয়।

 আলো আকাশ বাতাস মাটি জল 
সময় চেনায় আপন আপন রূপ
বন্দি খাঁচায় বনের পাখি বোঝে
কোনটা প্রেম কোনটা আসলে বিদ্রুপ।

জটিল কথা কুটিল মুখ  ঘুরে
 জিভের ফালে বতর  বুঝে নেয়
 ঘুরিয়ে সময় গরুর গাড়ির লিকে 
পল্লী গাঁয়ের  কপাটে খিল্  দেয়।

 জীবন খোঁজে  হারানো অতীত পথ
 ভরসা রাখে আদিম ধ্রুবতারায়
 বিশ্বাসের শেষ সম্বল বাঁচিয়ে পেঁচা 
রাতের; দেখে এ ভোর শালিকের নয়।

ডিংলা কাঁধে বরজ  ফেরা পা
নিজেই চেনে আলো ছায়ার ফারাক
ভুলকো দেখে ভোরে ওঠার অভ্যেসে
দেশ গাঁয়ের চাষীই বেঁচে-বর্তে থাক।।

এ কেমন ঘর
কলমেঃ- সুরভী চ্যাটার্জী


রঙীন শার্টে সাদা চামড়ার
দুটো হাত, ছলনার এক মুষ্টি সম্পর্ক 
ভিক্ষে দিয়েছিলো রাধাকে।
সুপ্ত চেতনার, আনন্দ ঘূর্ণিতে
ডুবন্ত হৃদয় ষোড়শীর,
তার হৃদয়ের নিস্তরঙ্গ ভাটায়, উপচে পড়া
জোয়ার আসল প্রবল পুরুষের
দুকূল ভাসানো সোহাগের। স্বপ্ন আসলো 
আকাশের নীচে রাত নেমেছিলো
ওরাও বিচরণে ব্যস্ত, শরীরী তটে
পরস্পরের, ভরসার কাঠামোয় প্রত্যয়ের মাটি দিয়ে। হায়! সে মাটি ঝুর ঝুর !
সে রাতের শেষে, দীপ্ত প্রভায় ঘর বাঁধার,
চূড়ান্ত নেশায় উন্মাদিনী রাধা।
আজ আস্তাকুঁড়ের রাধা মা হয়েছে।
আজ রাধার ঘর আছে  প্লাবনের ঘর!
লালসা লিপ্ত, প্রেমিক পুরুষ, কামনার তৃপ্তি সুধা পান করে,  মরণ কামড় দিয়ে ফেরারী,
আকাশ সত্যকে স্বীকার করবে কে? 


       
তোমার আমার ঘর
কলমেঃ- সাত্যকি সর্বাধিকারী

আমার গোপনে লুকিয়ে আছে চিরন্তন একটা ঘর
যেটা তোমার আমার ঘর,
আমার নিবিড় মাঝে অমূল্য এই রক্তিম বিস্তর
এটা তোমার আমার ঘর।

এই ঘরেই রেখেছি তোমায় যত্ন করে
তুমি জানো না, তোমায় আগলে ধরে
রাখবো সাজিয়ে যুগ যুগান্তরে,
কালের বিচারে ক্লান্ত হয়েও শাশ্বত সেই ঘর,
শত ঝঞ্ঝার ধাক্কা সয়েও ভাঙেনি যেই ঘর
এটাই তোমার আমার ঘর।

তোমার তো ভয় ছিল আমার ঘরেই 
তোমার স্বাধীনতা যাবে হারিয়ে,
তাই নিঃস্ব করে বিদায় দিলে স্বাধীন হতে গিয়ে,
তোমার অজানা এই ঘরেই আজ তোমার বসবাস
এই ঘরেই আজ স্বাধীন তুমি ঠিক যেমন আকাশ।

জানিনা আমাদের দেখা হবে কত অসংখ্য শতাব্দী পর
দুই শরীরের মাঝে আছে এক আলোকবর্ষ অন্তর,
তবু আমার নিভৃত ঘরেই তোমার অস্তিত্ব নিরন্তর
আমার বুকের স্পন্দনশীল চারটি কক্ষের মাঝে
এটাই তোমার আমার ঘর।।
বর্ষা
কলমেঃ- আমিমোন ইসলাম

বর্ষায় ছাদ থেকে চুঁয়ে পড়ে
জল আর মনখারাপির সুর।
বেকারত্ব, অভাবের সংসার দেখে
প্রেম পালিয়েছে বহুদূর।

বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ায় ভাঙে
কাকের ডিম আর কোকিলের বুক।
ছাদ থেকে চুঁয়ে পড়া জলে,
আমরা ধুয়ে ফেলি মুষড়ে পড়া মুখ।

সন্ধ্যে নামে অন্ধকারের সাথে,
ঝড়-বিদ্যুৎ-বজ্রপাতের বেগে।
পায়রার কাছে ঠাঁই খোঁজে কাক,
আমার বাড়ির টিনের চালের ফাঁকে।

ঝড়ের ভয়ে ঘুম ধরে না রাতে,
মাথায় বুঝি পড়লো খসে ছাদ।
ভোর হয়েছে বুঝি পাখিদের চিৎকারে,
ঘর হারিয়ে গুনছে তারা প্রমাদ।

পাকা বাড়িতে বর্ষা প্রিয় ঋতু,
টিনের চাল, মাটির বাড়ির দুঃস্বপ্ন।।
ঘরের ঠিকানা 
 কলমঃ- সুনন্দ মন্ডল

চারটি দেয়াল
দুটি জানালা,
একটি দরজা
আর পর্দা দেওয়া আড়াল থাকলেই ঘর হয় না।

ঘটি, বাটি, বাসনের ভিড়ে
নিজেদের পরিবার বাঁধা থাকলেও, 
ঘর হয় না।

ঘরে যেমন ইঁট সাজানো থাকে প্রতি ধাপে!
বিশ্বাস গাঁথা থাকুক সেভাবে মনের খাঁজে।
তবেই ঘর হবে সংসারে,
পরিপূর্ন মহল।

আসলে মনেরও 
একটা ছোট্ট ঘর আছে।
সেখানে দরজা 
জানালা কিংবা পর্দা
অথবা বাসনপত্রের ঝনঝনানি নেই!
আছে শুধু মানবিক উচাটন
ভালোবাসায়, 
প্রেমে, স্নেহে
আর আন্তরিকতায়।
          

প্রথম পুরস্কার
কলমেঃ- শ্রেয়া রায়


ছোট্ট বিনি রোজ দোতলা- তিনতলা বাড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকত একদৃষ্টে। আর শুয়ে শুয়ে মাকে জিজ্ঞাসা করত,"মা, আমাদের এমন বাড়ি কবে হবে?" মা তার ছোট্ট ৫ বছরের শিশুর প্রশ্নে মৃদু হাসি হেসে বলতেন,"ভগবান যে দিন চাইবেন!" এভাবেই প্রত্যেক দিনই মা তার অবুঝ শিশুকে কথায় ভুলিয়ে রাখতেন। কিন্তু শিশু যতই অবুঝ হোক না কেন, সে তার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখত মায়ের কথায়। এভাবে দিনের পর দিন কেটে গেল, পেরিয়ে গেল বেশ কিছু বছর। বিনির এখন বয়স ৮ বছর। পথে ঘাটে ঘুরে ঘুরে এখন বাস্তবটাকে ধীরে ধীরে চিনতে শিখছে। সারাদিন ঘুরে বেড়ানোর পর দিনের শেষে মায়ের সাথে দুটো রুটি কোনক্রমে ভাগ করে নেয় পথের ধারে। পিতৃ পরিচয়হীন কন্যা সন্তানকে নিয়ে পথের ধারেই ঘর বেঁধেছে মা।

ছোটবেলা থেকেই একটি অঙ্গনওয়াড়ি স্কুলে বিনে পয়সায় পড়াশোনা করতো বিনি। পড়াশোনার প্রতি তার আগাগোড়াই বেশ ঝোঁক ছিল। ফুটপাতে খবরের কাগজের দোকানের কাকুর থেকে রোজ সে খবরের কাগজ নিয়ে পড়তো। একদিন বিদ্যালয়ের তরফ থেকে একটি কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সে। সেই ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় সমস্ত প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে বিনি। প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় নগদ ১০ লক্ষ টাকা। এরপর পূরণ হয় এত দিনের স্বপ্ন। মায়ের সাথে রোজ যে স্বপ্নের ঘর বুনতো একটু একটু করে, বিনির সেই স্বপ্নের ঘর আজ বাস্তবে তৈরি হলো।

 আমার নবীন কুঁড়ে

কলমেঃ- শুভঙ্কর নস্কর




জীবন নদীর পারাবারে আমরা সবাই একা,

দুরন্ত- দুর্নিবার এই সময়কে পাল্লা দিতে দিতে

অবসন্ন শরীরের ঘামও আজ ক্লান্ত,


পথ চলতি মানুষের ভিড়ের মধ্য থেকে

হঠাৎ অস্পষ্ট স্বর- সাথেই থাকব..

পাশে আছি'র  বার্তায় বাড়িয়ে দিলুম হাত।


মুহূর্তে স্বপ্নের ভিড়ে পার করেছি সপ্তসিন্ধু..

শরীরের মলিন পরিধেয়-কে মুহূর্তে করেছি 

রত্ন-খচিত রেশমিকা ভূষণ, রাজশাহী আভিজাত্যে।

এক লহমায় সূর্যের তেজস্বিতা আর 

জ্যোৎস্নালোকিত চন্দ্রের মায়াকে , 

যেন স্ব-অধীনতায় করে ফেলেছি বন্দি।


কিন্তু হায়! স্বপ্নীল মুহূর্তে-

দুরন্ত ঘূর্ণিপাকে স্বপ্নালোকের ছাদ গেলো উড়ে,

কল্পলোকের মায়াজাল বাস্তবের মাটিতে দিশেহারা।

ভালোবাসার নেশায় মাতন লাগানো মৃগনাভিটি আজ

সুবাস বিতরণে বড়ো-বেশি ক্ষয়িষ্ণুপ্রায়,

তবুও অস্ফুট স্বর, দূর থেকে ভেসে আসে যার প্রতিধ্বনি,

 

-আমি মারের সাগর পাড়ি দেবো ফিরবো দেশে দেশে ,

বাঁধবো আমার নবীন কুঁড়ে পথের প্রান্তে শেষে।।


                      

শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

সম্পাদকীয় কলম


সম্পাদকীয় কলম 

নমস্কার, জলফড়িং ওয়েব ম্যাগাজিনের নতুন করে পথ চলার সঙ্গী হতে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দে অভিভূত ও কৃতজ্ঞ। সকলের ভালোবাসা ও আশীর্বাদকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের এই ম্যাগাজিন এগিয়ে চলুক অনেক দূর..।

এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যার সম্পাদনায় আমরা (জয়ীতা চ্যাটার্জী, পাখি পাল) নির্দিষ্ট কোন বিষয় না দিয়ে নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী বিষয়ের উপর লেখাকেই প্রাধান্য দিয়েছি। আমাদের এই ভাবনার উদ্দেশ্য হল এই পরিবারের প্রত্যেক সদস্য যাতে নিজ নিজ ভাবনার বিকাশের মধ্যদিয়ে তাদের লেখনীকে স্বাচ্ছন্দে প্রকাশ করতে পারে এবং আমাদের সকলের প্রিয় জলফড়িং পত্রিকা তাদের লেখনীকে নিয়ে উড়ে যেতে পারে অসংখ্য মানুষের কাছে।।

 ধন্যবাদান্তে,
জয়ীতা চ্যাটার্জী ও পাখি পাল
          (যুগ্ম সম্পাদিকা)

কবিতা


অভিলাষ 
কলমেঃ- শর্বরী চ্যাটার্জী

ভালো লাগে যখন আয়নায় ঠোঁটের ওপর নিজের প্রিয় তিলটা দেখি
ভালো লাগে একলা ছাদে দুষ্টু হাওয়ায় এলো খোঁপার ভেঙে পড়া 
ভালো লাগে একলা কফির কাপ,
দখিনের জানলায় কানে হেডফোনে তোর গাওয়া গান
ভালো লাগে জীবনের বহমানতা

তবু কখনও বড় অভিমান জমে বুকে
কই, তোর চোখ তো আজও ছুঁলো না আমার ঠোঁটের তিল !

সেই প্রত্যেকবার আমি তুলনা টানতে বসি পুরুষ আর প্রেমিকের 
সেই প্রত্যেকবার এক ঘোর লাগা ভালবাসায় দুধ বেসন ঘষি মুখে

ত্বকটা আরও একটু বেশী পরিষ্কার হলে যদি তুই দেখতে পাস আমার ঠোঁটের তিল !

ছোটো গল্প

স্নেহের স্পর্শ
কলমেঃ- অনন্যা কোটাল


অনেক দিন পর বৃষ্টিতে ভিজলো দীপ্তি। দীপ্তির বয়স এখন ১৮ বছর, কলেজ হোস্টেলে থাকে তার রুমমেটের সাথে । রুমমেটের সাথে প্রথম দিকে খুব একটা ভাব জমেনি তার, কিন্তু কিছু দিন পর সে উপলব্ধি করে তার রুমমেট তাকে একটু শাসন করে ঠিকই, কিন্তু আগলে আগলে রাখে....।

       একদিন সন্ধ্যা বেলায় বৃষ্টি হচ্ছিল, এক কাপ কফি নিয়ে দীপ্তি বারান্দায় এসে দাঁড়ালো, পুরানো অনেক কথা মনে পড়ছিল তার, তার সাথে মনে পড়ছিল মায়ের শাসন। এই রকম বৃষ্টিতে যখন ভিজতো সে তখন তার মা তাকে টেনে নিয়ে এসে গা মুছিয়ে দিত, অনেক দিন ভেজেনি সে, মাকে হারানোর পর প্রায় ৮ বছর ভেজেনি সে। আজ খুব ইচ্ছে করছে তার ভিজতে, কেন সে জানে না.....

           তাই সে নেমে পড়লো বৃষ্টিতে ভিজতে, বৃষ্টিতে মেতে উঠতে......কিন্তু তার সেই ভেজা দেখতে পেলো তার রুমমেট অনুরাধা, দৌড়ে গিয়ে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো। তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছিয়ে দিল, আর বিভিন্ন ভাবে বকাবকি শুরু করলো.....দীপ্তি নীরব ছিল, শুধু তাকিয়েছিল অনুরাধার দিকে.......।।

কবিতা


বর্ষারাত
কলমেঃ- জয়িতা চট্টোপাধ্যায়

বর্ষার বাদল মেঘের মতো তুমি
আমি বৃষ্টিতে ভিজে একশা
আড়চোখে ওরা পেরিয়ে যায় আমায়
পেরিয়ে যাচ্ছে শ্রাবণ মাসের শেষটা
রিমঝিম হয়ে ঝরে পড়ে সারা দুপুর
বা কখনো ঝমঝম করে গভীর রাত
ঝড় আসে ভীষণ আশঙ্কায়
কাঁপতে থাকে আমার বুকের ছাদ
বিষাদ কালো মেঘ আর গভীর অন্ধকার
আমার পাশে তুমি আর একটা বর্ষা রাত।।

কবিতা


চারাগাছ
কলমেঃ-গোবিন্দ নস্কর

আমার মা বটবৃক্ষ
আমি বৃক্ষের চারা
মায়ের ছায়া মাথার উপর
আঁচল দিয়ে ঘেরা,
রৌদ্র হলে মা যে আমার
জড়িয়ে ধরে বুকে
মায়ের মনের শীতল ছায়ায়
আছি ভীষণ সুখে।

আমার মা রবিঠাকুরের
প্রাচীন যে ওই বট
বিমল করের জননী মা আমার
চিত্তশালির মঠ।

আজ আমি যা পেয়েছি
সে তো মায়ের দেওয়া সব'ই
আমার জীবনে সঞ্চয়িতা তুমি
রবিঠাকুরের মত কবি।
রক্তকরবীর নন্দিনী তুমি
শেষের কবিতার লাবণ্য
আমার জীবনে তোমার ছোঁয়া
মেঘমল্লারের প্রদ‍্যুম্ন।

পচনশীল এই সমাজের মাঝে
তুমিই আমার ভ‍্যাকসিন
সাতজন্ম নিলেও মাগো
শোধ হবে না তোমার ঋণ।
যে চারাগাছ আজ জন্ম নিল
এই পৃথিবীর বুকে
মৃত্তিকা'তো তুমিই মাগো
সবুজ পৃথিবীর মাঝে,
সৃষ্টির সেই আদিম যুগে
যেখানে ছিলে তুমি
তোমার আদরে রঙিন হয়েছে
আমার মাতৃভূমি।।

জ্ঞান হওয়ার পরেই দেখেছি
তোমার যত ব‍্যথা
বুকের মাঝে লুকিয়ে রেখে
ধরেছো স্নেহের ছাতা।
কষ্টকে তুমি হারিয়েছো মাগো
তোমার মনের জোরে
অমরত্ব তুমি দাও ভগবান
সকল মাতৃজন্ম করে
তাহলে পৃথিবী হবে চিরসুন্দর
থাকবে না কোনো ব‍্যাধি
ওগো ভগবান এই প্রার্থনাটুকু
তোমার তরে সাধি।

চারাগাছের বৃক্ষ যদি 
আজ বটবৃক্ষ হয়
তাহলে সবি মায়ের দেওয়া
গোবিন্দ নস্করে  কয়।।

কবিতা

প্রতিবিম্বের আঁচড়
কলমেঃ- সুনন্দ মন্ডল


ওপারে ঢেউ উঠলে
এপারেও আঁচড় লাগে!
শরীরে তীক্ষ্ণ দাঁত বসানোর মতো,
ফুটে বেরোয় রক্ত।

ওপারে রক্তের খেলা!
এপারে সমর্থক ও অসমর্থকের
মন কষাকষি শিহরন,
চাবুকের মতো লাগে।

নতুন জগৎ কে না চায়?
তুমি, 
আমি
প্রেম অথবা যুদ্ধে।

জীবন টিকিয়ে রাখতে অমানবিকতা
কতখানি সহ্য করা যায়?
অমানুষিক আচরণের প্রতিবিম্ব ফুটে ওঠে এপারে,
যখন ওপারে ওঠে চিলচিৎকার, দুর্দম আওয়াজ।
          

কবিতা


মুশকিল আসান
কলমেঃ- বিশ্বনাথ দাস

ঐ দ্যাখো মা কাঠবিড়ালি 
লুকোচ্ছে কী ঘাসে 
এদিক ওদিক চায় আর 
আপন মনে হাসে

বন্ধু সাথে  খেলছিল কাল
লুকোচুরি খেলা 
ডালে ডালে পাতায় পাতায় 
কাটিয়ে  সারা বেলা 

আজও তেমন হাসিখুশি 
তাল সুপুরি গাছে 
এডাল থেকে ওডালে দ্যাখে 
খাবার কোথায় আছে 

দাদার ক'জন  পাড়ার বন্ধু  
ঢিল মারতে গেলে 
দু হাত তুলে প্রনাম করে 
অবাক হই সক্কলে 

সেই দেখে মা একটা দিনও
মারেনা কেউ ঢিল
বাগান ভর্তি কাঠবিড়ালির
আসান হয়েছে মুশকিল।


কবিতা


পাগলীর মন
কলমেঃ- মহাদেব নস্কর

চোখ মেলে চেয়ে দেখি
সবুজে ঘেরা সবুজ অরণ্য,
প্রাণ চায় শুধু তোমাকেই
পাগলী তুমি যে অনন্য।

মনের মন্দির মাঝে
তুমিই বিরাজমান,
আছো সাঁঝের আলো হয়ে
শুধুই দেখছো অভিমান !

সবুজ মনে ভালোবাসার
অপেক্ষায় এই সবুজ মন,
যদি না চাও দিবো কেমনে
পাগলী আমি যে তোমারই অনুরণন।

সবুজ দিগন্ত আমাকে ডাকে
সবুজে ঘিরেছে মন,
পাগলী চেয়ে দেখো আমাকে,
তোমার চোখে নিজেকেই যে পাই সর্বক্ষন ।।

             

গল্প


অনুরাগী
কলমেঃ- অরিত্র কাঞ্জিলাল 

কাকতালীয় বা co-incidence মানে, এমন কোন ঘটনা যা আকস্মিক ও সমসাময়িক, এবং তার সাথে অন্য কোনো ঘটনার আশ্চর্য সাদৃশ্য। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে, এরম অনেক ঘটনা ঘটে যার ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে নাজেহাল হতে হয়, এবং হাল ছেড়ে দেওয়ার আগে, সেই ঘটনাকে কাকতালীয় বলে অভিহিত করতে ভুলি না আমরা। তাই যখন প্রণব বাবু সকালে বাজার করে ফেরার পথে, পঞ্চার চায়ের দোকানের সামনে লোকটাকে দেখে ফেললেন রেললাইনের দিকে তাকিয়ে সিগারেট টানতে, একটু ছেলেমানুষী উত্তেজনা অনুভব করলেও, নেহাত ই চোখের ভুল ভেবে পা চালিয়ে বেরিয়ে গেলেন। 
চায়ের দোকান থেকে প্রণব বাবুর বাড়ি প্রায় ৭ মিনিট হাঁটাপথ। রিক্সা নেওয়ার অভ্যাস নেই, এই ৬৪ বছর বয়সেও দিব্যি হেঁটে বাজার করেন, দিনে দুবার করে সিঁড়ি ভেঙে ছাদে গিয়ে টবে লাগানো গাছের পরিচর্যা করেন, এমন কি রোজ বিকেলে, দক্ষিণের রাস্তার ওপারে যে মজে যাওয়া পুকুর টা আছে, তার পাশ দিয়ে প্রায় চল্লিশ মিনিট ইভিনিং ওয়াক, প্রণব বাবুর বার্ধক্য কে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে দেয়নি। স্ত্রী গত হয়েছেন বছর চারেক আগে, ছেলে পরিবার সমেত কর্মসূত্রে বেঙ্গালুরুতে থাকে। বছরে নিয়ম করে দুবার বাড়ি আসেন, দায়িত্ববান ছেলে। বাবার জন্য একজন সবসময়ের চাকর রেখেছেন গত বছর থেকে, সে ই রান্নাবান্না করে।
বাড়ি ঢুকে, বাজারের থলি টা রান্নাঘরের দরজার সামনে নামিয়ে দিয়ে হাঁক পারলেন প্রণব বাবু, " রাখাল, এক কাপ চা দে তো। আর আজকে চিংড়ি এনেছি, দুপুরে এঁচোর চিংড়ি করবি।" এই বলে, ড্রয়িং রুমে ঢুকে, সোফাতে গা এলিয়ে দিলেন। সকালের আনন্দবাজার টা টেবিলের ওপর রাখা। হাতে তুলে নিয়ে, পাতা উল্টাতে গিয়ে, ৪ নম্বর পাতার বা দিকে নিচের দিকে একটা ছোট্ট হেডলাইন চোখে পড়ল, " কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে চাঁদের হাট, আজই যোগ দিলেন বলিউডের প্রবীণ শিল্পীরা"। খবরটা আরো পড়লেন প্রণব বাবু, "আজই কর্তৃপক্ষের নিমন্ত্রণে, কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে মুম্বই থেকে এলেন মিস মালা, অনুপম শাহ, রমেশ খান্না সহ আরও অনেক বর্ষীয়ান অভিনেতা ও অভিনেত্রী।" চোখটা বিস্ময়ে কপালে উঠল। পঞ্চার চায়ের দোকানের সামনে দেখলেন তো আসার সময়, সেই মাথা ভরা চুল, সেই সোনালী ফ্রেমের চশমা, সেই কোমরে হাত রেখে চিরসবুজ দাঁড়ানোর ভঙ্গি। রমেশ খান্না কলকাতায় এসেছেন আজকে, আর আজকেই তিনি দেখছেন ওনাকে, পঞ্চার চায়ের দোকানের সামনে, রেল লাইন দেখতে দেখতে সিগারেট খেতে! এ যে কাকতালীয় ব্যাপার! 
রমেশ খান্নার চলচ্চিত্র "চাঁদ মেরা দিল" দেখতে একসময় কলেজ  কেটে পাঁচিল টপকেছেন প্রণব বাবু। প্রথম দৃশ্যেই অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন, শেষ সিনে যখন ভিলেন কে পিটিয়ে পাটকেল করে দিচ্ছেন রমেশ খান্না, তখন থেকেই ফ্যান। তারপর থেকে, জামার রং, প্যান্টের সেলাই, জুতোর পালিশ, লম্বা চুলের টেরি, সব কিছুতেই অনুপ্রেরিত হয়েছেন প্রণব বাবু। পেপার কাটিং, পোস্টার জোগাড় থেকে শুরু করে গানের কথা, এমনকি ফিল্ম ম্যাগাজিন ঘেঁটে রমেশ খান্নার নাড়ি নক্ষত্র অবধি মুখস্ত করে ফেলেছেন তিনি। যৌবন কাল অবধি নিজেকে একদম টানটান রেখেছিলেন, শুধু রমেশ খান্নার মত স্বাস্থ্য ও ফ্যাশন করবেন বলে। কিন্তু, বিধি বাম, প্রণব বাবুর ঘাড় অবধি লম্বা চুল, চল্লিশ পেরোনোর আগেই পালিশ করা মার্বেলের মত চকচকে হয়ে গেল। যারা, প্রণব বাবুর এই অনুপ্রেরনার ব্যাপারে জানতেন, তারা সামনে চুক চুক করে সমবেদনা জানালেও, আড়ালে মুখ টিপে হাসতে শুরু করল। প্রণব বাবুর প্রতি সহানভূতিশীল হয়েই বোধ হয় ভগবান, রমেশ খান্নার পর পর ১১ খানা ছবি ফ্লপ করে দিলেন, এবং চলচ্চিত্র জগৎ ও বেশি দেরি না করে নায়কের আসন থেকে তাকে নামিয়েও দিল। প্রণব বাবুও সিনেমা দেখা এক প্রকার ছেড়েই দিয়েছেন তারপর।
সেই রমেশ খান্না! তাও কিনা পাতিপুকুর স্টেশনের ধারে সিগারেট টানছেন, অথচ কেউ তাকে চিনছে না! কেউ সেলফি বা নিদেনপক্ষে অটোগ্রাফের জন্য ঝুলোঝুলি করছে না। এটা কি তবে প্রণব বাবুর মনের ভুল? নাকি, রমেশ খান্না কে আজকাল আর কেউ চেনেই না? মনে মনে হিসেব করলেন প্রণব বাবু, তার নিজের বয়স ৬৪ মানে, রমেশ খান্না ৭০, তার নিজের থেকে ৬ বছর বড়। ভদ্রলোকের শেষ হিট সিনেমা বেরিয়েছিল ১৯৯২ তে, আর তার চার বছরের মধ্যেই ১৯৯৬ সালে পাততাড়ি গুটিয়েছেন শেষবারের মত। তাও ২৪ বছর হল। এই ২৪ বছরে,  খবরের কাগজ বা মিডিয়া উন্নতি করলেও, রমেশ খান্না থেকে গেছেন অন্তরালে। তাই আজকে খবরের কাগজে ওরম ছোট একটা সংবাদ নিছক আকস্মিক ই, এবং চোখে না পড়ার মতই। আর যদিও বা চোখে পড়ে, সেটাকে উপেক্ষা করবে শতকরা নব্বই ভাগ বাঙালি। 
মনস্থির করে ফেললেন প্রণব বাবু, ব্যাপারটা দেখতে হচ্ছে। আর কেউ চিনুক বা না চিনুক, তিনি যে একসময় রমেশ খান্নার একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন, এবং মনে প্রাণে চেয়েছেন কাকতালীয় ভাবেই একবার যদি দেখা হয়ে যায়, আজ সেই পুরনো ছেলেমানুষী ইচ্ছাপূরণ করার একটা সুযোগ এসেছে। পঞ্চার চায়ের দোকানের সামনের লোকটা হয়তো রমেশ খান্না নন, তা বলে খোঁজ নিতে দোষ কি? আর ভাগ্যক্রমে যদি তিনিই হন প্রণব বাবুর সেই পুরনো অনুপ্রেরণা, তাহলে অবশ্যই কোনভাবে ঠিকানা জোগাড় করে একটা সেলফি তুলবেন তিনি। যে গুটিকয়েক বন্ধু বান্ধব আছেন, তাদের দেখাবেন। 
বিকেলের দিকে বেরিয়ে পঞ্চার দোকানে গিয়ে বসলেন প্রণব বাবু, এমনিতে তিনি রাস্তাঘাটে চা বিশেষ খান না, তবুও দুধ চিনি ছাড়া লিকার আর একটা খাস্তা বিস্কুট বললেন। গরম চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, "হ্যাঁরে পঞ্চা, আজকে সকালে এক বয়স্ক ভদ্রলোককে দেখলাম এখানে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতে, চিনিস লোকটাকে?" পঞ্চা ঘাড় তুলে একবার প্রণব বাবুকে দেখে হেসে বলল, " সারাদিন কত লোক আসে কাকু, অত কি মনে থাকে?" দমে না গিয়ে প্রণব বাবু আবার প্রশ্ন করলেন, "সিগারেট খাচ্ছিল লোকটা, এই আমার মতই লম্বা, মাথা ভর্তি চুল, পায়জামা পাঞ্জাবি পড়া ছিল, মনে করতে পারছিস?" পঞ্চা মাথা চুলকে টুলকে মনে করার চেষ্টা করতে করতে বলল, "কিছু হয়েছে নাকি কাকু? লোকটা কে? চোর টোর নাকি?" প্রণব বাবু হো হো করে হেসে উঠলেন, কি যে বলে ছোকরা! তারপর ভাবলেন, পঞ্চা সেদিনের বাচ্চা ছেলে, ও আর কি করে চিনবে রমেশ খান্না কে। এসব ভাবার  মধ্যেই, হঠাৎ মনে পড়ে গেল কথাটা প্রণব বাবুর, কোন এক পুরনো ফিল্ম ম্যাগাজিনে এক ইন্টারভিউ গোছের লেখাতে পড়েছিলেন। পঞ্চা কে ডেকে বললেন, "মনে কর তো, আজকে সকালে কোন ভদ্রলোক এসে বেনসন হেজেস এর সিগারেট চেয়েছিল কি না?" এবারে চোখ মুখে একটা হাসি খেলে গেল পঞ্চার, বলল, "হ্যাঁ, চাইল তো। আমার দোকানে রাখি না বলাতে, কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক দেখে, পাঁচ মিনিট পর এসে একটা চারমিনার ধরিয়ে নিল।" প্রণব বাবুর উৎসাহ বেড়ে গেল, তিনি যে ঠিকই দেখেছেন, এই বিশ্বাস টা বদ্ধমূল হতে শুরু করল। সঙ্গে আপসোস ও হতে লাগল, যে সকাল বেলাই সাত পাঁচ না ভেবে আলাপ করে নেওয়া উচিত ছিল। 
-"ভদ্রলোক কোনদিকে গেলেন দেখেছিলি?" 
পঞ্চা এবারে একটু অবাক হয়ে বলল, "হ্যাঁ, ওই তো সিগারেট টা খেলেন, টাকা দিয়ে একটা ট্যাক্সি ধরে চলে গেলেন বেলগাছিয়ার দিকে। কি হয়েছে কাকু? কে লোকটা?"
উঠে পড়লেন প্রণব বাবু, চা বিস্কুটের দাম মিটিয়ে, বাড়ির দিকে হাঁটতে হাঁটতে ছেলে কে একটা ফোন করেন।
-"হ্যালো বাবান, শোন না, তোর এক বন্ধু আছে না, টালিগঞ্জ পাড়ায়?"
-"হ্যাঁ, কৌশিক আছে, প্রোডাকশন দেখে। তোমার হঠাৎ টালিগঞ্জ পাড়ার বন্ধুর দরকার কেন?"
-"আরে, আমাদের সময়ের এক হিরো, রমেশ খান্না, তিনি এবারে এসেছেন ফিল্ম ফেস্টভ্যালে। একটু দেখ না, যদি কোন পাস টাস থাকে।"
-"ও! দাঁড়াও, ফোন করে দেখি, পাস জোগাড় হয়ে যাবে, তোমার ফোন নম্বর টা ওকে দিয়ে দিচ্ছি, তোমায় ফোন করে নেবে।"
মনে মনে বেশ একটা উত্তেজনা অনুভব করছেন। বাবানের বন্ধু কৌশিক ফোন করলে একটু যেন তেন প্রকারে খোঁজ নিতে হবে যে বর্ষীয়ান অভিনেতারা কোথায় উঠেছেন। এই পাতিপুকুরে এসে যখন সিগারেট খেয়ে গেছেন, তখন নিশ্চই কাছাকাছি কোথাও ই আছেন। দেখা হলে কিভাবে হাত মেলাবেন, কিভাবে সেলফি তুলবেন ভাবতে ভাবতে বাড়ি পৌঁছলেন প্রণব বাবু। 
কৌশিকের ফোন এল রাত ৯:৩০ টা নাগাদ। প্রণব বাবু, তখন রাখালের হাতে বানানো তার প্রিয় এঁচোর চিংরি স্যোৎসাহে খাচ্ছেন। ফোনটা আসতে দেখে ধড়মড় করে উঠে ধরলেন। উল্টোদিকে গলা শোনা গেল, "হ্যালো, মেসোমশাই। কৌশিক বলছি, আপনার জন্য পাসের ব্যাবস্থা হয়ে যাবে। আপনি কি কাল একবার সল্টলেক সেক্টর ওয়ানে, রূপসী বাংলা হোটেলে আসতে পারবেন? আসলে, আমিই আসতাম আপনার বাড়িতে, কিন্তু এই ডামাডোলে...। " প্রণব বাবু তাকে আশ্বস্ত করে বললেন, "আরে হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি চলে আসব, তুমি বাবা ওখানেই থাকবে তো?"
-"হ্যাঁ কাকু, আসলে অনেক প্রবীণ অভিনেতা অভিনেত্রী এসেছেন এবার, তাদের নিয়েই একটা ইন্টারভিউ হবে, সেটা কালকেই আছে। চলে আসুন, রমেশ খান্নার ফ্যান তো আপনি, বাবান বলেছে আমায়। দেখা করিয়ে দেব।"
ফোন টা কেটে, বেডরুমে গিয়ে বসলেন প্রণব বাবু। একটা যৌবনের উত্তেজনা অনুভব করছেন। মনে হচ্ছে, এক ধাক্কায় বয়স টা চলে গেছে ৩০ বছর আগে। পুরনো আলমারি টা খুলে, ওপরের তাক থেকে একটা ছোট ব্রিফকেস বার করলেন। ব্রিফকেস খুলে বের করে আনলেন, বেশ কিছু পেপার কাটিং। সমুদ্রতটে রমেশ খান্না, চোখে সানগ্লাস, বেল বটম প্যান্ট আর রঙচঙে শার্ট। মাথা ভরে আছে ঢেউ খেলানো চুলে। নিজের পুরনো কিছু ছবিও দেখলেন। মনে মনেই হাসলেন। চল্লিশের আগে অবধি, প্রণব বাবু যাকে বলে খটখটে জোয়ান, তারপরই...। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, নিজের চকচকে মাথায় হাত বোলালেন তিনি। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখলেন কিছুক্ষন। মাথায় একরাশ ঢেউ খেলানো চুল কল্পনা করার চেষ্টা করলেন, পারলেন না। আসলে বিগত ২৪ বছর ধরে নিজেকে এরকম ই দেখতে দেখতে, সেই জোয়ান বয়সের প্রণব সামন্ত কে একপ্রকার ভুলেই গেছেন।
পরের দিন, কৌশিক ঠিক যেই সময়ে বলেছিল, ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে বেরিয়ে পারলেন প্রণব বাবু। আজ তিনি পড়েছেন একটি সুন্দর বাটিকের পাঞ্জাবী ও পায়জামা। বেরোনোর মুখে ঘড়ি, মোবাইল, ওয়ালেট সব দেখে নিলেন একবার। আজকে তিনি প্রথমবার নিজের সেই কলেজ জীবনের আইডলের সাথে দেখা করার সুযোগ পাবেন। ট্যাক্সি ধরে চলে গেলেন সল্টলেক সেক্টর ওয়ান, রূপসী বাংলা হোটেল। গাড়ি থেকে নেমে, ভাড়াটা মিটিয়ে কৌশিক কে ফোন করলেন প্রণব বাবু, "হ্যালো কৌশিক, আমি এসে গিয়েছি বাবা। রিসেপশন এর সামনে বসে আছি।" কৌশিক জানাল সে ১০ মিনিটের মধ্যে আসছে। প্রণব বাবু শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রিসেপশনে, একটা সোফাতে বসে চারিদিক দেখতে লাগলেন। আর ব্যাপারটা চোখে পড়তেই, শরীরে একটা উত্তেজনা ছড়িয়ে গেল।
রিসেপশনের দরজা দিয়ে হোটেলে ঢুকছেন, আর কেউ নই, স্বয়ং রমেশ খান্না! সেই সুস্বাস্থ্য, সেই সোনালী ফ্রেমের চশমা, সেই ঢেউ খেলানো কাঁচাপাকা চুল, একাত্তর বছর বয়সেও কি ব্যক্তিত্ব! কালকে এনাকেই তো দেখেছেন পঞ্চার চায়ের দোকানের সামনে! "কেন যে সিনেমা করা ছেড়ে দিলেন তিনি?" মনে মনে আপসোস করলেন প্রণব বাবু। কিন্তু, এখন আর আগের বারের মত সুযোগ ছাড়বেন না ঠিক করেই সোফা থেকে উঠে রমেশ খান্নার দিকে এগিয়ে গেলেন প্রণব বাবু। রমেশ খান্না কিছু বোঝার আগেই, আবেগের বশে, ধাই করে একটা প্রণাম ঠুকে বসলেন। রমেশ খান্না, কিছু বুঝে ওঠার আগেই, গড়গড় করে ভাঙা হিন্দি ও বাংলা মিশিয়ে বলতে শুরু করলেন যে প্রণব বাবু কত বড় ফ্যান, বারদুয়েক তো হাতটা করমর্দনের ভঙ্গিতে ধরে ঝাঁকিয়ে ও দিলেন। রমেশ খান্না, অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেও, নিজেকে সামলে নিলেন, এবং কোন কথা না বলে প্রণব বাবুর কথা শুনে যেতে লাগলেন ও মুচকি মুচকি হাসতে লাগলেন।
হঠাৎ, পেছন থেকে কাঁধে টোকা পড়ল। ঘুরে দেখেন কৌশিক।
-"কাকু, এই নিন আপনার ছেলেবেলার অনুপ্রেরণা, রমেশ খান্না।" বলে কৌশিক নিজের পাশে দাঁড়ানো এক ভদ্রলোকের দিকে ইঙ্গিত করলেন। এই প্রবীণ ভদ্রলোক, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ঠিকই, চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমা ও আছে, চামড়া সামান্য ঝুলে গেলেও, এখনও সুপুরুষ। কিন্তু, এ কি! ভদ্রলোকের তো মাথায় চকচক করছে তারই মত একটি টাক! ভিরমি খেলেন প্রণব বাবু, তাহলে এতক্ষন কার সাথে কথা বলছিলেন! চমক ভাঙার আগেই, প্রণব বাবুর পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা সেই সুপুরুষ, মাথা ভরা লম্বা চুল ওয়ালা ভদ্রলোক, এগিয়ে এসে কৌশিকের পাশে দাঁড়ানো প্রবীণ কে, গদগদ হয়ে প্রণাম করে ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে বললেন, "অধমের নাম কানাইলাল সাঁপুই, স্টেজে যাত্রা করতাম। পুরুলিয়া, আসানসোল এসব জায়গায় একসময় আপনার সঙ্গে মুখ ও চেহারার সাদৃশ্য আছে বলে, আপনার নকল করে অভিনয় করে নাম করেছিলাম বেশ। আপনি আপনার গুরু তুল্য।"
প্রণব বাবুর হাঁ হয়ে যাওয়া মুখ টা বন্ধ হতে বেশ কিছুক্ষন সময় লেগেছিল। দেখা সাক্ষাতের পর্বে অপ্রস্তুত হওয়ার পরেও, রমেশ খান্না তার সাথে সেলফি তুলতে কোনরকম আপত্তি করেন নি, এমনকি গোটা চারেক কথাও বলেছেন। বাড়ি ফিরতে ফিরতে ট্যাক্সিতে বসে মনে মনে হাসলেন প্রণব বাবু। এত কাকতালীয় ঘটনা ঘটে গেল আজকে, কিন্তু অনুপ্রেরণা আর অনুপ্রেরিত র এই যোগাযোগ বোধহয় কোন সমীকরনের মধ্যে আসে না। তার কানে তখনও বাজছে তার করা প্রশ্নে রমেশ খান্নার কৌতুক মেশানো উত্তর, " আসলে ১৯৯৬ থেকেই আমার চুল পড়ে টাক হয়ে গেল বুঝলেন, তাই আর রুপোলি পর্দায় আসতে ইচ্ছে হল না। অবসরই নিয়ে নিলাম।"

কবিতা


নয়'টার ঘন্টা

কলমে - বিশ্বজিৎ মহলদার 

রাত নয়টা......
গাঢ় অন্ধকার
কোথাও বিজলী নেই।
স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি মৃত্যুর  দূত এগিয়ে আসছে,
চারিপাশ শুধু ক্ষীন প্রদীপের  আলোয় আলোকিত ,
সচরাচর মানুষের কন্ঠে উলুধ্বনি,শঙ্খের ধ্বনির উৎকন্ঠা আওয়াজ। 
বোমা - বাজির কোলাকুলি..
যন্ত্রের মত প্রেতরা চোখের সামনে খেলা করছে।
এ কি..! 
আজ এত ভয়াবহতা কেন?
চেনা মুখ অচেনা অন্ধে ঢাকা।
সত্যিই কি কল্পনা
এক মৃতদেহের কঙ্কাল !
তবে আমি নই তো....!!
 
সকালের সূর্য এখনও ওঠে 
পাখিরা সাঁঝে এখনও  নীড়ে ফেরে,
জ্যোৎস্নার রাত এখনও নেভেনি,
এখনও রাজা-প্রজা  ঘুমে বিভোর,
শেষে আমাদের ভুলে....... 
পৃথিবীটা সমস্ত উলটে যাবে !
বাতাসের সাথে বিষ বাষ্পে 
দম ব্ন্ধ হয়ে আসছে,
সব মুহুর্ত শেষ.....
ভাইরাস--ভাইরাস.. 
তবে কী সব শ্মশানে পরিনত হবে..!!

কবিতা


পরাজিত
কলমেঃ- শুভঙ্কর নস্কর

তোমার প্রেমের গল্পটা আজ শুনবো,
আমার প্রেম নবীন ইতিহাস,
তোমার নামের ব্যাখ্যাটা কী বলবে?
আমার'টা তো এমনিই পরিহাস !

তোমার গল্প মানেই সে তো রঙিন,
হাজার রকম রং বাহারি কথা,
আমার গল্প শুনলে তুমি বলবে
বড্ড ক্লিশে, থাক ওসব যা-তা।

তোমার শৈশব যত্ন আদর মাখা,
আমার সে তো এমনি পথের ধুলায়..
কেটেছে দিন, রাত যাপনের মাঝে,
মস্ত কিছু আজগুবি কল্পনায়।

তোমার মাপের বন্ধু পাওয়া মানে..
আমার মনের মস্ত পৃথিবী,
পাহাড় চূড়ো ছুঁতে পাওয়ার আশায়
হারানো পথে দিশা দেখানো রবি।

তোমার জীবন দুরন্ত-দুর্বারে
ছুটছে দেখো স্বপ্নের'ই হাত ধরে,
আমার জীবন রাহু-কেতুর মাঝে,
গিলছে শুধু চক্রব‍্যূহান্তরে ।

তোমার প্রেমের বিজয় কেতন উড়ুক,
আমার সে তো এমনিই পরাহত,
পিটুইটারি'র এই যে মস্ত খেলায়..
বিজিত কেউ, কেউবা পরাজিত ।।

       

কবিতা


এসো  গাছ   লাগাই
কলমে :  নার্গিস   পারভীন


যে  গাছেতে  ফুল  ধরেছে, ফল  ধরেছে  মেলা, 
সেই গাছকে আমরা করি কেন অবহেলা ? 
হোক না ছোটো গুল্মলতা, কিম্বা বনস্পতি 
ওরা ছাড়া হবেই বন্ধু এই পৃথিবীর ক্ষতি।
বুক ভরে নিই শ্বাস-প্রশ্বাস, প্রাণ ভরে নিই বায়ু
বৃক্ষ ছাড়া কিছুই হবে, বাড়বে কি পরমায়ু? 
যে মাটিতে দাপিয়ে বেড়াই, পেট ভরি যে অন্নে
পারি না কি সদয় হতে সেই গাছেদের জন্যে ? 
গাছ ছাড়া পাখিরা যে গাইবে না আর গান,
শান্তির সবুজ ছায়ায় বসে জুড়াবে না প্রাণ;
তাই বন্ধু, এসো গাছ লাগাই আর বাড়িয়ে চলি বন,
গাছ'ই হবে বন্ধু আর গাছ'ই পরিজন। 
কাটবো না গাছ শপথ করি সবুজ করি দেশ,
আমরা বাঁচি, ওরাও বাঁচুক, বেঁচে উঠুক পরিবেশ।।

কবিতা


আমার সবে শুরু..
কলমেঃ- পাখি পাল

ভীষণ তেজে জ্বলতে জ্বলতে
কখন যেন পুড়ে ছাই হয়ে গেছি,
আজ বেলা শেষে সে আগুন নিভে গেছে,
তবু কিছুটা ধোঁয়া পাক খেয়ে খেয়ে উপরে উঠছে,
সেটুকু ধোঁয়াতেই বুঝি কাঙালির স্বর্গ স্বপ্ন,
কিছু পরে বাতাস সে ছাই উড়িয়ে নিয়ে যাবে,
লেশমাত্র আগুনের ছোঁয়া থাকবে না তাতে,
প্রতিটা কণা মিশে যাবে পঞ্চভূতে,
আমাকে তুমি শেষ করতে চেয়েছিলে না..!
অথচ দেখো আমার সবে শুরু..।।


কবিতা


বহুদূরে
কলমেঃ- আমিমোন ইসলাম

যখন শিমুল পলাশ পড়বে ঝরে
তোমার অভিমানের সুরে।
মায়ার খাঁচায় থাকব আমি,
মায়ের কাছে বহুদূরে।

যখন শিউলিরা সব থাকবে পড়ে,
গভীর রাতে গোপন ঝড়ে।
ডাকবে 'কুহু' কোকিলেরা
থাকব আমি বহুদূরে।

যখন জোনাকিরা পড়বে শুয়ে
মৃদু আলোতে মাতিয়ে।
তোমার মুখের আবছা ছবি
আঁকবো বসে বহুদূরে।।

কবিতা

ব্যস্ত একদিন
কলমেঃ- গৌরব চক্রবর্তী 
নিঃস্বার্থ প্রেমের খোঁজ নেয় ব্যস্ত ট্রাম, 
জীবনের মূল্য বুঝতে দরদামে আদর্শ কেনে মহিলা,
কালো ‘ফিঙে’ তার অভিমান জমা রাখে সূর্যাস্তে, 
বেদনার আগুন স্ফুরিত হয় নিলুদার সস্তার ‘বিড়িতে’।
সদ্য পুড়ে যাওয়া অবয়ব, ফিরে আসার দাবি রাখে গঙ্গায়,
অবশেষে ল্যাম্পপোস্টে রাত্রি নামে এক নতুন ভোরের আশায়..।।