নিজের লেখা কবিতা, নিবন্ধ, গল্প পাঠান হোয়াটসঅ্যাপ করে 7384324180 এই নম্বরে

সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫

হা রে আমার স্বাধীনতা - কলমে সোমা নায়ক


আমার অক্ষমতার মুখে এক মুঠো আগুন দিও তুমি 

হয় জ্বলতে জ্বলতে পুড়ে মরবো নয়তো মশাল হয়ে পথ দেখাব

তবু হাল ছাড়বো না কখনো 

যে এমন কথা বলতো হাজারবার

সেই মেয়েটার মুখাগ্নি হয়েছে 

গুণে গুণে আজ থেকে ঠিক ১৩ দিন আগে

কোলের শিশুটা তার কন্যা সন্তান, 

বিবর্ণ মুখে উজ্জ্বল দুই চোখ, 

খিদেয় তেষ্টায় প্রায় সারাদিন সারারাত সে কাঁদে।

এই ছিল তার অপরাধ।


মা এবং মেয়ে দুজনেই সমান অপরাধে অপরাধী।


হসপিটালের বেডে শুয়ে সদ্য মা হওয়া সেই মেয়েটিই একদিন তার স্বামীকে বলেছিল, তুমি বাবা হয়েছো আর আমি, মা। 

আমাদের সন্তান পৃথিবীর আলো দেখলো আজ। তুমি খুশি? তুমি খুশি তো?


বাবা নিরুত্তর। স্ত্রীর হাতটা নিজের হাতে ধরে শুধু বলেছিল, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরো, তোমাকে ছাড়া আমাদের খুব অসুবিধা হচ্ছে।


আমায় ছাড়া সংসার একেবারে অচল, এই ভেবে মেয়েটা সেদিন খুব খুশি হয়েছিল।


তাই, ছয় দিনের মাথায় বাড়ি ফিরে কোলের সন্তানকে বিছানায় রেখে ঢুকতে হয়েছিল রান্নাঘরে।


 কর্তার অফিসের ভাত, ননদের কলেজের নিত্য নতুন টিফিন, শাশুড়ির পুজোর ফুল, বাতের ব্যথায় গরম তেলের মালিশ থেকে শ্বশুরের জীবনে কঠিন নিয়মানুবর্তিতা সবকিছুই ঘড়ির কাঁটা ধরে একদম হিসেব মতো চলতো।


এ কেমন সাজ ধরে থাকো সারাদিন! অফিসের ওই গো গাধা খাটুনির পর দিনের শেষে বাড়ি ফিরে এমন ঝিয়ের মত মুখ দেখলে ঘরে আসার ইচ্ছেটাই যে চলে যায়। একটু আধটু সেজেগুজেও তো থাকতে পারো।


আর তোমার এই মেয়েটাকে একটু শান্তশিষ্ট বানাতে পার না।  সারা দিনরাত খালি কান্না আর কান্না, অসহ্য একেবারে....


 প্রিয় মানুষটার মুখে এমন কথা শুনে মেয়েটা প্রথমে হকচকিয়ে গিয়েছিল তারপর কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে তাকিয়ে ছিল নিজের স্বামীর দিকে।


 আস্তে আস্তে কেটে কেটে শান্ত স্বরে বলেছিল, সময় কোথায় আমার! মেয়েটাকে একটু খাওয়ানোরই সময় তো পাই না! সারাদিন এত কাজ, আমি যে আর পারি না গো...  অন্তত একটা ঠিকে কাজের লোক


ওখানেই থেমে যেতে হয়েছিল। কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই গালে এসে পড়েছিল একটা বিরাশি সিক্কার থাপ্পড়। 


আর কাজের লোকের পয়সা কে দেবে? তোর বাপ? নাকি তুই? হাজারে লাখে কামাচ্ছিস বুঝি আজকাল?


চেনা মানুষটা কেমন নিমেষেই যেন অচেনা হয়ে উঠেছিল সেদিন। 


সেই শুরু। অশ্রাব্য গালিগালাজ এর সাথে অকথ্য শারীরিক অত্যাচার।


কলেজ ক্যাম্পাসে যে মেয়েটা একদিন আগুন ঝরানো বক্তৃতা দিত, যার মুখের কথায় উৎসাহিত হয়ে আশেপাশের মানুষের রক্ত গরম হয়ে উঠতো সমাজ বদলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখতো, সেই মেয়েটি কেমন নীরব হয়ে গেল, বোবা হয়ে যেতে লাগলো। দিনরাত মানুষের অত্যাচার সয়েও সে প্রতিবাদী হতে ভুলে গেল


কিন্তু কেন? কেন এই নীরবতা?


ভালোবাসা!


 এই ভালোবাসাই তাকে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছিল সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন। আবার সব ঠিক হয়ে যাবে নিশ্চিত। কিন্তু হলো কোথায়।


মা শিখিয়েছিল, বোবার কোন শত্রু নেই।

বাবা শিখিয়েছিল, মেয়েদের শ্বশুরবাড়িতে একটু একটু মানিয়ে নিতে হয়। 

ভাই বলেছিল, আমার সংসারই আমি ঠিক মতো সামলে উঠতে পারি না, তোর দায় নেব কিভাবে। যত্তসব উটকো ঝামেলা।


যে মেয়েটা নিজের চেষ্টায়, পরিশ্রমে একদিন কলেজে ভর্তি হয়েছিল শুধু নিজের ইচ্ছে বা স্বপ্নকে প্রাধান্য দিয়ে অথচ আজকাল সে নিজের ইচ্ছেতে দুগাল ভাত পর্যন্ত খেতে পারে না। শরীর খারাপ হলে ডাক্তার দেখাতে পারেনা এমনকি নিজের কোনো সখ আহ্লাদ কোন কালে ছিল বলে আজ আর তার মনেও পড়ে না তবু সে স্বপ্ন দেখে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। 

কিন্তু হলো কোথায়!


মেয়ের ৬ বছরের জন্মদিনে বড্ড শখ করে বানানো একটু পায়েস আর দোকানে অর্ডার দিয়ে বানানো একটা কেকের সাথে মেয়ের জন্য নতুন একটা জামা কিনে আনা ... কয়েকটা লাল নীল গোলাপী বেলুনের সাথে মোমবাতি। রান্না ঘরের ছুরিটা রাখা ছিল পাশে। সমস্ত ব্যবস্থাটা সে কাউকে কিছু না জানিয়ে একা একাই করেছিল, বাড়ির সবাইকে সারপ্রাইজ দেবে বলে।


 এই ছিল তার দোষ। কাউকে কিছু না জানিয়ে কেন এত কিছু করা? আর এত টাকাই বা এলো কোথা থেকে? নিশ্চয়ই স্বামীর পকেট কাটে, নিশ্চয়ই ওর কাছে আরও টাকা আছে। 


কেড়ে নাও সুখ, ছিনিয়ে নাও স্বাধীনতা, মেয়ে মানুষের এত বাড়াবাড়ি কিসের!


সহ্যেরও তো একটা সীমা থাকে। মেয়েটারও হয়তো সেদিন সহ্যের সমস্ত সীমা অতিক্রম করে গেছিল। হয়তো দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছিল তার। 


তাই কেকের উপর রাখা জ্বলন্ত মোমবাতিটা যখন মেয়েটার মুখে ছুঁড়ে দিয়েছিল তার ঠাকুমা, মা হয়ে আর সে চুপ থাকতে পারেনি। ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল তার শাশুড়িকে। 


এ যে অপরাধের সাথে সাথে চরম অপমানও বটে!


তাই মায়ের অপমানের বদলা নিতে মায়ের ছেলে পাশেই পড়ে থাকা ছুরিটা নিয়ে এক লহমায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল ভালবেসে বিয়ে করা বউয়ের পেটে, নিজের সন্তানের মায়ের পেটে, কি নিষ্ঠুর ভাবে।


মেয়েটা আর কাঁদে না, শুধু ফ্যালফ্যালিয়ে তাকায়। দেখে, ঘরভর্তি লোকজনের মাঝখানে, বাবা, দাদু, ঠাম্মা এমনকি পিসি পর্যন্ত কেমন হঠাৎ হঠাৎ কেঁদে উঠছে। 

এই কান্না শুনতে তার একদম ভালো লাগে না। সে পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় ঘরে ‌কোনায় সাজিয়ে রাখা মায়ের ছবিটার কাছে। হাঁটু মুড়ে বসে, একমনে মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে আর হাসে। কখনো মুচকি মুচকি আবার কখনো খিলখিলিয়ে। 


সে আর কাঁদে না, এখন সে কেবল হাসে, সারাক্ষণ শুধু হাসে ।

বুধবার, ১ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পাদকীয়- পুজো সংখ্যা জলফড়িং ওয়েব ম্যাগাজিন

 সম্পাদকীয়,

অরূপ সরকার



শারদ উৎসব বাংলা সংস্কৃতির এক অপরিহার্য অংশ। দুর্গাপূজা, কালীপূজা, ও দীপাবলির পাশাপাশি শারদ উৎসব আমাদের জীবনে এক অনন্য সাদৃশ্য এবং উৎসাহের প্রতীক। এই সময়টা শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এই উৎসবের মাধ্যমে বাঙালি সংস্কৃতির নানা রূপ, গান, সাহিত্য, চিত্রকলা এবং চলচ্চিত্রের বিশেষত্বকে আবারও উপস্থাপন করা হয়। জল ফড়িং পত্রিকা এই শারদ সংখ্যা প্রকাশের মাধ্যমে এমন এক সময়ের অনুভূতি এবং সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটাতে চায় যা আমাদের সংস্কৃতির মূর্ত প্রতীক।


শারদ সংখ্যা শুধুমাত্র একটি পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা নয়, বরং এটি বাঙালির মনোজগতের এক ধরনের পুনরুজ্জীবন। এটি একটি সৃজনশীল আঙ্গিকে উৎসবের আনন্দকে তুলে ধরতে সহায়তা করে। আমাদের পত্রিকা এই সংখ্যায় শুধু সাহিত্যিক রচনা, কবিতা বা গল্পের মাধ্যমে নয়, বরং চিত্রকলা, সঙ্গীত, অভিনয় এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মাঝে উৎসবের নান্দনিকতা তুলে ধরার চেষ্টা করছে। আমরা যে সময়টাতে আছি, সেখানে সামাজিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সংকট, এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা মাঝে উৎসবের খুশি এবং শারদীয় ঐতিহ্যকে ধরে রাখাটা এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই সমস্ত প্রতিকূলতার মাঝেও মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে শারদ সংখ্যা আমাদের কাছে এক প্রতিশ্রুতি।


আমাদের শারদ সংখ্যা শুধু একটি সাহিত্যপত্রিকা নয়, এটি একটি সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমও। এবারের সংখ্যায় আমরা শারদ উৎসবের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক রীতি, পুরনো শিল্পকলা, লোকজ সংস্কৃতি, এবং আধুনিক চিন্তার মেলবন্ধন নিয়ে আলোচনা করেছি। এছাড়া, আমরা এমন কিছু বিষয়ে আলোকপাত করেছি যা আজকের দিনে তেমন আলোচিত হয় না, যেমন নারীশক্তির উন্মেষ, সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা, এবং ধর্মীয় সম্প্রতির উদাহরণ। এই সংখ্যার মাধ্যমে আমরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছি সেই সমস্ত মহিলাদের, যারা সামগ্রিকভাবে সমাজে নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছেন, এবং তাদের অগ্রযাত্রা আমাদের পথ প্রদর্শক।


শারদ সংখ্যা একটি মঞ্চ, যেখানে সাহিত্য ও শিল্পের সর্বোত্তম রূপ আমাদের জীবনের মর্মস্পর্শী গল্পগুলিকে তুলে আনে। কিছু লেখা আমাদের হাসায়, কিছু লেখার মধ্যে লুকিয়ে থাকে জীবনের কঠিন বাস্তবতা, আবার কিছু লেখা আশা, প্রেম এবং ঐক্যের বার্তা দেয়। পত্রিকার পাতায় পাতায় বিরাজিত এই মিশ্রণ আমাদের এক প্রকার আবেগী উন্মেষের দিকে নিয়ে যায়, যেখানে আনন্দ এবং বেদনার সুর মিলিয়ে নতুন এক গল্প রচনা হয়।


এই শারদ সংখ্যা শুধু বাঙালি সমাজের এক বিশেষ অনুষ্ঠানকেই সেলিব্রেট করে না, বরং এটি আমাদের জীবনের সমস্ত গ্লানি, হতাশা এবং প্রাত্যহিক সংগ্রামের মাঝে আশার আলো হয়ে উঠতে চায়। আমরা বিশ্বাস করি, এই সংখ্যার মাধ্যমে পাঠকরা শুধু শারদীয় আনন্দ পাবেন না, বরং তারা নিজেরাও নতুন করে জীবনের নানা দিক খুঁজে পাবেন। আশা করি, জল ফড়িং পত্রিকার এই শারদ সংখ্যা সবার মন ছুঁয়ে যাবে, এবং আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং আধুনিকতাকে একত্রিত করে নতুন একটি দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করবে।


সবশেষে, আমাদের এই শারদ সংখ্যা একটি ছোট কিন্তু গভীর প্রতিজ্ঞা – যে প্রতিজ্ঞা হল, “সংস্কৃতি কখনো হারায় না, সারা বছর ধরে তার অস্তিত্ব জিইয়ে থাকে।”


কবিতা: পুজো - অংশুমান কর


 

পুজো

অংশুমান কর 



আকাশে ফুটেছে নীলরঙা আলো ফুল। 

হাঁসের মতন মেঘের দলটি ভাসে–

সাদা মনটিকে লজ্জায় ফেলে ওই 

উঠোনের কোলে সাদা শিউলিরা হাসে। 


মাইকে বাজছে চির পরিচিত গান, 

বউ চলে যায় চেনা পাল্কিতে–

কারা দোলা নেবে তাই নিয়ে রাগারাগি, 

রানি রাসমনি এসেছে কাটতে ফিতে।


বুড়িমার বোমা লুকিয়ে কিনেছে ছেলে, 

স্টেটাসে ক্রাশকে লিখেছে গোপন চিঠি–

সে কি দেখবে না, পড়বে না একবারও? 

লজ্জায় তার আনত হবে না দিঠি?


এসবই দারুণ, আগের মতোই ভালো 

শিশির-স্নিগ্ধ মধুরতা দিয়ে ঘেরা। 

তবে সবচেয়ে মিষ্টি দৃশ্য আজও

প্লেনে-বাসে-ট্রেনে বাঙালির ঘরে ফেরা।

কবিতা: ফেরা - দীপশিখা চক্রবর্তী


 

ফেরা

দীপশিখা চক্রবর্তী 


একলা পথে সন্ধে নামে এই শহরে,

মন ভেঙেছ ইচ্ছেমতো, চাইনি সুযোগ,

শব্দ এখন লিখছি কেমন ব্যর্থ ঘরে!

নাম দিয়েছ ভালোবাসা, মিথ্যে গুজব।


ফেরার তেমন ইচ্ছে তো নেই, ভুলের দায়ে,

আগন্তুকের সাজ সেজেছ, বলতে মানা?

একলা ভাবি, ও চোখে সব মিথ্যে ছিলো?

এতই বোকা, বুঝতে দেরী, ভুল ঠিকানা!


জানতে যদি কথারা সব ফুরিয়ে যাবে,

উল্টোদিকের পথটা ছিলো খুবই চেনা,

একলা তো বেশ ভালোই ছিলাম, রঙমশালে,

ধরলে যে হাত ছাড়তে কেন, সব অজানা।


তোমার জন্য কাব্য লেখা, জমিয়ে রেখো,

কষ্টগুলো জ্বালিয়ে দেবো আগুন খুঁজে,

আর কিছু না, দূরেই ভালো, থমকে যাওয়া,

আবেগগুলো ঝাপসা দেখায় তফাৎ বুঝে।


চাই না এখন তুমিও বোঝো একলা হওয়া,

ঝড়ের পরে হাঁফিয়ে ওঠো আঁধার-দিনে,

চুপ করেছি, হার মেনেছি, আড়াল এত,

ভালোবাসার ভয় এঁকেছি তোমায় চিনে।

কবিতা: জ্বর

 


জ্বর 

মৌমন মিত্র 



জ্বরে পুড়ছে বুঝি গা, ঘুমপাড়ানি নিশীথে 

লাল নোটিফিকেশন, উড়ালপুলে ভিড়, শারদ সংখ্যা

সব মিশে গেল অযত্ন আর নিঝুম ঘুম ঘোরে । 


এই চতুর্থীতেও আমি অসীম দূরত্বে, টের পাও কলমে? 


স্পর্শ কাতর, আকাশ, নদী, জল। যে বিচ্ছেদ —


ও ঠাকুর, কবে ফিরব? ভাবছ, কেন থাকে না ও? 

চিরসময়ের সময়টুকু ! 


এখন ভরাট ঠোঁটে যে প্রত্যাশা, এই দেশ  ভাগ 

তার কি কোনও দাগ হয়? সে তো সোহাগী বিলাসে 

কেবল ছুঁতে চায়, 

তোমার বুকে বোতামফুলের ঢেউগুচ্ছ, শরতের বেহাগ  

কবিতা: বৃষ্টি দিনের মতো


 

বৃষ্টি দিনের মতো

অনুব্রতা গুপ্ত



আজ তেমন কোনো দিন? 

যে-সব কথা বুকের মাঝে 

নিতান্ত চিনচিন।


হঠাৎ দূরে গেলে

যাদের হারিয়ে গ্যালো দুল 

দু-এক কলি শূন্য দিনে

সম্মিলিত ভুল।

আমরা সবাই জানি।


জানতে জানতে, বুঝতে বুঝতে 

সকালবেলা থেকে, নিজের মনে 

দু-আঙ্গুলে জড়িয়ে ধরি যাকে, সে শুকনো পাতা যত।

স্নান সেরে সে জল মুছেছে, বৃষ্টিদিনের মতো। 


মতান্তরে, ঘুমের ঘোরে, হারিয়ে ফেলি তাদের

ছোট্টদিনে, একরত্তি, খেলতে যেতো মাঠে।


বলত এসে, মন ভালো আজ। 

মন ভালো নেই। 

মনের কত কথা ...

আকুল হয়ে শুনত তারা চোখের নীরবতা। 


যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গ্যালো। 

এখন আমার ভুল হয় না। হয় না কক্ষণো। 


আমি এমনি বড়, এমনি সুদূর। 

দূরের থেকেও দূরে।

দুর্বিনীত দু'জন মানুষ, ভেতর ভেতর লড়ে। 



কবিতা: এক যৌগিক উপকরণ

 


এক যৌগিক উপকরণ 

চন্দ্রাবলী বন্দ্যোপাধ্যায়


একটা কোকিল ডাকা বসন্ত বিকেল হারিয়ে গেল তোমার ভাবনায়।

গাঙ্গুরের জলে ক্ষয়ে ক্ষয়ে আসা সূর্যের আলো 

আমার কাছে এগিয়ে আসার প্রতিবন্ধকতা নিয়ে,

দেখে আমার অসহায়ত্ব।

আমিও দেখি তার...

তোমার বুকের গভীরের ভালোবাসার আগুন

ধীরে ধীরে ফিরে যায় ডুবে যাওয়া সূর্যের কাছে।

আমি ফিরি ফেলে আসা দুরাশার কাছে।

মোহ ভঙ্গ হয়

দেখি দাড়িয়ে আছি একা আমি।

তখনও কোকিল একা ডেকে চলেছে

কোথায় ... কোথায় তুমি?



কবিতা: পৌলমী গুহ

 আশ্চর্য কুকুরেরা

পৌলমী গুহ




আশ্চর্য কুকুরেরা ভাবে


তারাই দেশ চালাচ্ছে।


অনাহূত ছুটে যায় শুধু


দৃশ্যমান ও অদৃশ্য শত্রুর দিকে


সামান্য উচ্ছিষ্টভোগী হয়েও


লড়ে চলে ক্ষমতার লড়াই।



আমি আশ্চর্য কুকুরদের দেখি


কেউ কেউ তাদের ঘৃণা করেন,


কেউ ডেকে শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করেন


আবার, কেউ মকশো করেন


চার হাত-পায়ে চলার,


ধীরে ধীরে বুঝি আমার মুখটা


আশ্চর্য কুকুরদের মতো হচ্ছে



আমিও একদিন শিরদাঁড়া ঝুঁকিয়ে


ছুটে যাব অদৃশ্য শত্রুর দিকে।

গুচ্ছ কবিতা- মৃগাঙ্ক মজুমদার

 



হারানো যাওয়া পিনকোড 

মৃগাঙ্ক মজুমদার 


যেসব ভালোবাসার নাম চিঠি

যে সব ছোঁয়া তে শব্দ ঝরে পড়ে 

সেই সমস্ত প্রেম 

সোনালী, গোলাপী খামে,

 জমতে থাকে, 

পোষ্ট করা হয় না কোনদিন ।


বয়েস গড়িয়ে হেমন্তে এলে 

সেই সমস্ত প্রেম 

পুরনো সব পিনকোড খুঁজে বেড়ায়।


হারিয়ে যাওয়া পিনকোডেরা 

প্রতিদিন সেই সব চিঠি 

একটা একটা করে 

খুলে খুলে পড়তে থাকে। 




সরকারী 

মৃগাঙ্ক মজুমদার 


যে কটা লাশ তুমি সরকারী হিসাবে 

জেনেছ,

গুনতিতে যেন, সংখ্যা অনেক বেশি ।!


সংখ্যা আসলে প্রলাপে মদত দেয়,

আর তুমি যদি জনগণের কেউ হও 

তা হলে তুমি প্রকৃত সংখ্যার হিসাব দেবে না ।


প্রকৃত সংখ্যা বললে তুমি সরকারীভাবে 

প্রলাপ পাগল নইলে দেশদ্রোহী তকমা পাবে । 

হাঁটু মুড়ে, মাথা নিচু করে সংখ্যার গরিষ্ঠতা 

স্বীকার কর ।

গণতন্ত্রে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা মানেই 

একনায়কতন্ত্রের একচ্ছত্র অধিকার ।

তুমি ঠিক করে নাও

তুমি শাসনে থাকবে

না শোষণে । 


এক কলামের সংবাদ

মৃগাঙ্ক মজুমদার


  

বিষাদের যেসব বেঞ্চ 
পার্ক জুড়ে একলা বসে থাকে 
সেখানেই মেঘেরা জড়ো হয়। 

ছায়ারা তখন মুখ লুকাতে ব্যস্ত 
চৌখুপী সম্পর্কে একের পর 
দেওয়াল উঠতে থাকে 
যাতে বৃষ্টির ছাঁট এসে 
নরম না করে দিতে প্যাঁরে 
মানবজমিন। 


শরীরের যে সব ভূখন্ডে 
একদিন ভালোবাসার সাম্রাজ্য কায়েম ছিল 
ফলনের প্রত্যাশা ছিল
সেই সব স্বপিল মুগ্ধতা 
দ্রাঘিমারেখায় বিলীন । 

বিষাদের যেসব বেঞ্চ 
আজ থেকে পার্ক জুড়ে একলা 
কাল এক কলামের নিররুদ্দেশ
খবর হতে পারে 
বা আত্মহত্যার।

কবিতা: আমার পুজো, তোমার পুজো

 


আমার পুজো, তোমার পুজো 

পাপিয়া মণ্ডল


শরৎ মানে কাশের দোলা, শিউলি ফোটা ভোর 

শরৎ মানে মেঘের পালক, ভাসে আকাশ ভর। 

শরৎ মানে পদ্ম শালুক, টইটম্বুর জলে 

শরৎ মানে মাঠে মাঠে ফসল থাকে ফলে।


শরৎ যেন ডাকে কাছে, যেখানে যে থাকে, 

মাটির টানে, মনের টানে ফেরায় সবাইকে।

বছর পরে ঘরে ফেরার আনন্দেতে মন

হাজার বাতির রোশনাইতে আলোকিত সারাক্ষণ।  


 শরৎ মানেই উড়ু উড়ু মন, ছুটির দিন গোনা 

পুজোর আগে সবাই মিলে জামাকাপড় কেনা।

চারিদিকে সবাই শুধু অপেক্ষাতে থাকে 

ঢ্যাংকুড়াকুড় বোলের কাঠি পড়বে কবে ঢাকে?


নিমেষ পরেই এসে যায় দিন, মায়ের বোধনের

স্বর্গ যেন নামে ধরায়, সঙ্গে সঙ্গে মায়ের।

চারটে দিন কেমন করে হয়ে যায় যে পার,

খুশির আমেজ বদলে হঠাৎই, মন হয়ে যায় ভার। 


বিদায় লগ্নে সবার মনেই ব্যথা জেগে ওঠে 

'আসছে বছর আবার হবে' সান্ত্বনা দেয় মনকে।

আমার পুজো, তোমার পুজো,অপেক্ষাতে মন

মা যাবে বিসর্জন, আবার আসবে মা কখন?



বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

Sudipta Sen: বৃষ্টির কী মায়া নেই, নাকি সে ইচ্ছেমাফিক ইস্তেহার?


 

স্কুল, প্লিস বৃষ্টি থামিস না

সকাল থেকেই আজ বৃষ্টি শুরু হয়েছে অঝোরে,  বড়ঘরের খাটে বসে সে  ছেলেটা তখন পড়ছে পলাশীর যুদ্ধ। আজ স্কুলে পড়া ধরবেন স্যার। শুভব্রত সরকার, ইতিহাস পড়াতেন আমাদের।  উনি বেঞ্চের প্রথম থেকে শেষ অবধি রো ধরে ধরে ছেলেদের রিডিং পড়াতেন। কারণ হিসেবে আমার দুটো কথা মনে হত, ১.) নিজেকে রিডিং পড়তে হত না, কাজ কমছে স্যারের ২.) প্রথম বেঞ্চ থেকে লাস্ট বেঞ্চ তাঁর কাছে সমান চোখের মাপকাঠি পেত। দাঁড়ান টুইস্ট আছে তা হল, উনি রিডিং পড়ান, শেষ হলে এবার আগের দিনের পড়ানো থেকে প্রশ্ন করতেন, কার ঘাড়ে পড়বে কোপ কেউ জানে না, তখন উনি লাস্ট বেঞ্চ,মিডিল বেঞ্চ,প্রথম বেঞ্চের থেকে ছেলেদের ওঠাতেন। না পারলে হাত পাতিয়ে সপাট করে দিতেন বেতের ঘা। ছেলেটা পড়তে পড়তে ভাবছে বৃষ্টি আজ থামিস না প্লিস। তার কারণ সে পড়া করেনি, আজ স্কুলে গেলে তার কপালে দু:খ আছে। বৃষ্টি সেদিন শুনেছিল সে কথা। তবে মাঝে মাঝে সকাল থেকে শুরু হলেও থেমে যেত ঠিক ৯:৩০ দিকে। কাজেই স্কুল না যাওয়ার বাহানা থেকে বৃষ্টির নাম বাদ পড়ত। আসলে বৃষ্টি বুঝতে পারত না বোধহয় তার কী করা উচিত। বাচ্চার আবদার রাখা উচিত নাকি উচিত না? নাকি বৃষ্টি শাসন করবে বলেই সকাল ৭ টায় শুরু হয়ে আবার ৯:৩০ টায় থেমে ঠিক ১২ টাতে ঝেঁপে আসত কে জানে!


বৃষ্টি এবং রাস্তা ডুব

সারা রাত বৃষ্টি হয়েছে শহরে, জোয়ারের ফলে লক গেট বন্ধ থেকেছে সারা রাত। পরের দিন সকালে বৃষ্টি থামেনি। শহর ডুবেনি, রাস্তা ডুবেছে। সেই জল পেরিয়ে যান চলাচল। বিরোধীরা পুরসভাকে দুষছে।

রিপোর্টার নেমেছে হাঁটু অবধি জলে, দর্শক করছে ইয়ার্কি। ট্রাফিক পাচ্ছে বেগ। জলে ভাসছে আবর্জনা, জলে ভাসছে ফুটপাতিয়া ছোটদের নৌকো, রাস্তার দোকানগুলো হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে কলেজ স্ট্রিটে দোকান খুলেছে।  বৃষ্টি কিছু বোঝেনি নাকি পুরসভাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ছে? এমন সময় রাস্তারা কী চাইছে চল কে কতটা ডুবতে পারি দেখি বলে নিজেদের মধ্যে চ্যালেঞ্জ নিতে। আমি ভাবছি, বুঝতে পারছি না!


বৃষ্টি তুই স্মৃতির নাম

তারা প্রথম ভিজল ময়দানে দাঁড়িয়ে, তারা আবার ভিজল বাগবাজারের ঘাটে, তারা ভিজেছিল অফিস ফিরতে গিয়েও। চপ মুড়ি মেখে দুধ চা সঙ্গে করে তারা বৃষ্টি দেখেছিল ব্যালকনিতে। বাইরের বৃষ্টি হাওয়া মেখে ছিটেফোঁটা পড়ছে তাদের গায়ে। মনে পড়ছে সে সব কথা বৃষ্টি দেখে। দুজনের কথা হয় না অনেকদিন। - ওকে ব্লক করেছে সহজে। বৃষ্টি কী কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে এলো ?


বৃষ্টি তুই থাম না প্লিস

আজ অফিস যেতে হবে টাইমে। কাল দেরি হয়েছে গুচ্ছের। বৃষ্টি থামার নাম নেই। তুই একটু থাম না প্লিস, ভিজে ভিজে যেতে হলে আজ নির্ঘাত জ্বর হবে। ভাবছেন কর্পোরেটের বান্দাগুলো।

যিনি ছাতা মাথায়, সাদা পোশাকে ট্রাফিক কন্ট্রোল করছেন, অঝোরে বৃষ্টিতে ভিজে নেয়ে একসা হয়েছেন তিনিও ভাবছেন বৃষ্টি প্লিস থাম। আমি গাড়িতে যেতে যেতে সেই ট্রাফিকের দিকে তাকিয়ে দেখেছি তার কাঁধে দায়িত্ব, ইউনিফর্মে বৃষ্টিধারা। বৃষ্টি কী বুঝেও না বোঝার ভান করে?


বৃষ্টি, মিছিল, কাজল চোখ

নানান ইস্যু, প্ল্যাকার্ড ঢুয়ে গেল বৃষ্টি জলে, নেতারা ভিজছে, সমর্থকেরা ভিজছে। ভিজছে পুলিশ মিছিলের আগে আগে৷ বৃষ্টির মায়া নেই,  ওমন সময় একখানা মেয়ে তারও চোখ ভিজে গিয়েছে,  কাজল ঢুয়ে যাচ্ছে, স্লোগান থামছে না। বৃষ্টি কী ইচ্ছে করে করছে নাকি সবই সহ্যক্ষমতা দেখার জন্য? মিছিল থামেনি, বৃষ্টিও থামেনি, কাজল ধুয়ে গেছে, আলুথালু হয়ে গেছে চোখ। ভিজে গেছে ওর হালকা পিচ রঙেন কুর্তিটা। বৃষ্টি তোমার মায়া হয়নি?


বৃষ্টির হয়েছে জ্বলা। ও কী করবে? ছোটদের মন রেখে ঝরবেই,  চাকুরিজীবীদের জন্য থেমে যাবে,  পুরনো প্রেমের ঘায়ে স্মৃতি উস্কে যাবে বলে চিরকাল আসবে না বৃষ্টি? বৃষ্টি যে কী করবে? আমি জানি না, শুধু জানি চোখ ধুয়ে গেলে বৃষ্টি কাজল পরে নিক!

সম্পাদকীয় অরূপ সরকার - আমরা চেষ্টা করেছি পাঠকের অনুভূতির সঙ্গে মিশে যেতে

 জলফড়িং-এর জুলাইয়ে বর্ষা সংখ্যা – ২০২৫



প্রিয় পাঠক,


বর্ষার রিমঝিম শব্দে, মাটির সোঁদা গন্ধে, আর সবুজের অফুরন্ত আবরণে আবার হাজির হল আমাদের প্রিয় বর্ষা সংখ্যা। প্রকৃতি যেন নতুন প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছে, আবার জেগে উঠেছে জীবনের গোপন সুর। এই ভেজা দিনে হৃদয় নরম হয়, অনুভব হয় এক অদ্ভুত টান, যা শুধু সাহিত্য, সঙ্গীত আর স্মৃতির মধ্যেই ধরা পড়ে।


বর্ষা বাংলা সাহিত্যে চিরকালই এক গভীর অনুপ্রেরণার উৎস। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটায় মিশে থাকে ভালোবাসা, বিষাদ, প্রত্যাশা আর বিরহের কাহিনি। তাই আমাদের এবারের সংখ্যা সাজানো হয়েছে সেই বর্ষারই রং ও রসে। রয়েছে কবিতা  গুচ্ছ কবিতায় —যেখানে বর্ষা নিজেই হয়ে উঠেছে নায়ক।


এই সংখ্যায় অংশ নিয়েছেন নতুন ও অভিজ্ঞ লেখকেরা। তাঁদের কলমে বর্ষা কখনো গ্রাম বাংলার ধানক্ষেতে দাঁড়িয়ে, কখনো শহরের জানালার কাঁচে জমে থাকা ফোঁটায় ধরা দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি পাঠকের অনুভূতির সঙ্গে মিশে যেতে, মনের কোণে জমে থাকা স্মৃতিকে ছুঁয়ে দিতে।


বিশ্বাস করি, আমাদের এই প্রয়াস আপনাদের মনে একটুখানি ভেজা রঙ ছড়িয়ে দিতে পারবে। আপনাদের পাঠ, মতামত ও ভালোবাসাই আমাদের পথ চলার প্রেরণা। ভালো থাকুন, বৃষ্টির মত মুগ্ধতায় ভেসে থাকুন।


শুভেচ্ছান্তে,

সম্পাদক

বর্ষা সংখ্যা – জল ফড়িং

দর্পন- বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়

 



দর্পন

বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় 


কিছুই চুরি করেনি সে

কুড়িয়েছিল পথের থেকে

জীবন শুরু হয়েছে যার

গাঁথল তাকেই শেষ পেরেকে


এমনভাবে ঘিরল যেন 

দুনিয়া এক চক্রব্যূহ 

কোথায় ছায়া কুড়িয়ে পাবে

জঙ্গলেও তো বুনো শুয়োর...


ক্লাস সেভেনের অপাপবিদ্ধ

মন্দ-ভালোর মিশেল যুবক 

বিচার মানেই নির্বিচারে

মেরে ফেলার আর একটা ছক?


সুপারফাস্টে আসছে মৃত্যু

কে খায় ঠেলা? কে দেয় ঠেলে?

লাইনে পড়ে মরতে হবে,

একটু জীবন কুড়িয়ে পেলে?

মেঘবিম্ব - দীপশিখা চক্রবর্তী


 

মেঘবিম্ব

দীপশিখা চক্রবর্তী 


মেঘজল গায়ে জেগে থাকে স্বর,

পাখিদের ডানায় আলোর নরম শ্বাস,

বহুতল বাড়ি নিঃস্বারে থাকে একা,

আকাশ বুকে এখন শ্রাবণ মাস।


আসুক তবে স্থির হয়ে থাকা বরষা,

সীমান্তজুড়ে ডানা ঝাপটানো শব্দ,

ভাঙলে বাঁধ মুছে যায় যদি বিম্ব,

পরতে পরতে বিলাপী সময় জব্দ।


ধূসর কালো ছবিতে তোমার দু'চোখ,

মেঘেদের সারি উড়ে চলে বহুদূরে, 

অগোচরে আজ বেড়ে ওঠে কেন ঋণ?

শূন্য বুকেও ধারাজল নামে ঘুরে।


কখনো দেখেছ ভাঙা পাঁজরের মুক্তি?

পুড়ে যায় সব, অবুঝ কঠিন ঝড়ে,

এতসব কথা তোমায় লিখি যখন,

মেঘের গরজ সাজছে তোমার ঘরে।


আকাশ কখনো দায় নেয় না পথের,

শাসন হাওয়ায় কাশের শহর কাঁপে,

সব ছাপিয়ে বৃষ্টি মিছিল গভীর,

মৌন থেকেও আগলে রাখা মাপে।

বৃষ্টিজলে ধোয়া - অনুব্রতা গুপ্ত

 


বৃষ্টিজলে ধোয়া 
অনুব্রতা গুপ্ত

কী কথা বলেছি তাকে, কী কথা হারাই 
শব্দের চৌকাঠে শব্দ তারাই 

মেঘেরই তো তর্জমা বৃষ্টি নিধনে
জল বলে ডাকো যাকে, শরীরে র মানে

শিলালিপি ভেসে গ্যাছে, বহুদিন হলো
এখনও ঘুমের ঘোরে একা কথা বলো? 

জানলায় মেপে রাখি সব যাওয়া-আসা 
যেটুকু সরল নয় তার কাছে আসা।

সে-সব পুরনো নদী, মেলে রাখা ছাতা
বৃষ্টি আসবে বলে, মলাটের খাতা

এখনও কবিতা লেখো? অংকের দিনে? 
বোঝোনি কখনও তুমি, গান শিখে ছিলে! 

নদী তার শুয়ে থাকে, কবেবার জলে 
আসলে শব্দ বলে, না বলার ছলে 

দৃশ্য পাল্টে রোজ স্নানাহার করি
বাঁচতে বাঁচতে রোজ, মাঝেমাঝে মরি

হারানো লোকের থাকে একা সম্মান 
যে চুলোয় আমি যাই, তোমারই তো দান

দুঃখ আসলে এক জামা পরা মেয়ে
চেয়েছে আলোর বাঁশি, আলো'কে না চেয়ে

একে একে নিভে আসে, কমে আসে রাতি
স্মৃতির সৌধ মানে যুদ্ধ - বিরতি... 


পাপ পুণ্য - মৌমন মিত্র


 

পাপ পুণ্য 

মৌমন মিত্র 


তখনও মেঘ ভেসে যায় দূরে! 

ঘন অরণ্যের ভিতর খুঁজেছি নুড়ি পাথর 

এঁকেছি একাকীত্ব, কাম, স্থির নিশি যাপন 

সাহসী, দুর্লভ সম্পর্কও দ্বন্দ্বে ভুল হয়।

বৃষ্টি ফোঁটা নীরব করতলে। এও  সত্য মুহূর্ত! 


পাপ পুণ্য নিমগ্ন বুকে মনে থাকে না। 

তাই আত্ম খনন যদি দৃশ্য হয়, পলকে সে দৃশ্য 

কলঙ্কিত, নিষ্ঠুর। তুমি মেঘকে বোলো,

এ সব কথার দৃষ্টি, ভঙ্গি হয়ে কাল যেন ঝরে পড়ে ও 

ঝমঝম যেন নখের বিষাদ ধুয়ে, চিত্রময় 

তোমার জিভে আগুন জ্বলে ওঠে! এভাবেই একদিন 

আমার ভাঁজে তোমার যুদ্ধক্লান্ত, বুভুক্ষু শরীরের আশ্রয়—

জলজ অন্তরাল - চন্দ্রাবলী বন্দ্যোপাধ্যায়


 জলজ অন্তরাল

চন্দ্রাবলী বন্দ্যোপাধ্যায় 


বৃষ্টি ছিল না, তবু জানালায় জল

শব্দ পড়ে যায় ছায়ার গায়ে।

ফোঁটা নামে না, ডুবে যায় শিরায় শিরায়—

মাটি চুপ করে ছিল, শুধু হাওয়া

গড়িয়েছিল পাঁজরের ফাঁক দিয়ে।

আমি শুধু বৃষ্টি দেখছিলাম।


ছাদ একা বসে থাকে আমার নাম ধরে

তুমি ফেরো না, তবু তোমার ভেজা গন্ধ

থাকে বাতাসে ঘুম কাঁপে—

কারো স্পর্শে নয়, নিঃশব্দ পতনে।

একদিন তুমি হেঁটে গিয়েছিলে বলে

মেঘ মনে কপাট শূন্যতার ভার 

হাওয়ার ফিসফিসানি—

বৃষ্টির মুখ ছিল না, তবু চোখ জানত, 

এটাই তোমার রেখে অনিচ্ছুক বাঘবন্দি খেলা

একটা বিদায়—

খাতাকলিপত্রিকা - তুষারকান্তি রায়

 


খাতাকলিপত্রিকা 

  তুষারকান্তি রায় 


দেখেছো ব্রজবাসী !  দূরভাষে 

কেমন ভেসে আসছে কৃষ্ণকলি বাঁশি 

জোড়াপুকুরের জলে কেমন 

আকাশের ছায়া পড়ে আছে  ?

নিধুবনে রঙের সপ্তক ?

এবার ছুটিতে তোমার দেশে যাবো রাধারানি । তুমি শঙ্খ বাজিয়ে 

নাম না জানা গাছের নীচে 

লাল - নীল ফাল্গুন সাজিয়ে দিও ।

প্রকৃত ফুল না ছায়া! 

সেকথা ভেবো না । দ‍্যাখো উদাসী 

হাওয়ায় কেমন বয়ে যাচ্ছে 

মেঘের  এক্কাগাড়ি ,

চমকিত লিপিমালা আর 

কাঞ্চনের দিন ! 

আমি খাতাকলিপত্রিকা থেকে বেরিয়ে আসা শ্রীধারা , আট প্রহরের  কথা আর এগারোটি কবিতার মালা নিয়ে আসছি 

কখন দরজা খুলবে তুমি ?  

তোমার ভোরের !

বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫

অসময়ের ট্রাম - জয়াশিস ঘোষ

 



অসময়ের ট্রাম
জয়াশিস ঘোষ

এই ধরো, তুমি মেঘ ভালোবাসো
আমি ভালোবাসি জংলা পাহাড়
অল্প অল্প আমি ভিজে আছি
অল্প অল্প তুমিও আবার –

তুমি আর ক’বে এত চেনা হলে?
আমি সুতো ছেড়ে দিয়েছি ক’বেই 
ভালো-টালো সব গল্পেই বাসে
তবু মেঘ হলে তুমি আসবেই 

আসবেই তুমি –ভুল ঝরে যাবে
গোপনীয় জলে ভেসে যাবে পাড়া…

অন্য পাড়ার মেয়ে- রাখিবা খাতুন




অন্য পাড়ার মেয়ে

রাখিবা খাতুন 


সম্পর্কের বাঁধন আলগা হয়েছে,

কানের দুল, কপালের টিপ মনমরা খুব,

জন্মদিনগুলো সারপ্রাইজ ভুলে যেতে বসেছে,

হাসি, তাই বুঝি অন্য পাড়ায় বেমালুম ঘুমের অসুখ।


স্নান, খাওয়া ভুলে আস্কারার খোঁজ চোখের ডার্ক সার্কেলে,

শরীরে জৌলুশ নেই আর চাকচিক্যের বন্দরে,

আশেপাশের প্রতিবেশীরা বাহ্যিক ছায়ায় খুব সুখী,

গোপনে তারা পুড়ছে ঠিকই একচ্ছত্র অধিপতি।


পাইকারির ভিড়ে দোস্তানা আজকাল সস্তার,

এ হাড়, মাংস খুবলে খেলেও মানুষগুলো সপ্তার,

সব যেন মজার, নিছক আড্ডা মারতে মিথ্যে শোরগোল,

নষ্ট মেয়ের লাশ এখন ঠিকানা ফুটপাতের, খদ্দের জুটছে না তাও!


কবিরা বেহায়া মৃত্যু নিয়ে লিখছে, সংবাদ বিক্রি হচ্ছে হুবহু,

কলমের কালির শুভেচ্ছায় নবান্নের দেশ এখন,

আসন্ন উৎসবে মাতামাতি, সুলোভন সাজসজ্জা,

চেতনায় সরস্বতীর চরণকাল, স্বপ্নে যদি না হয় দেখা!


শতধিক ধিক্কার।

বৃষ্টি যাপন- জয়দীপ রায়

 


বৃষ্টি যাপন

জয়দীপ রায়


আমি বরাবরই একটু ভিজতে ভালোবাসি

বৃষ্টি দেখলে নিজেকে সামলানো ভার

মনের ভিতর জমতে থাকা ছটফটানি টা

বেরিয়ে আসে আলাদিনের দৈতের মতো,

মনে হয় এ যেন প্রথমবার বৃষ্টিতে ভিজছি।

বৃষ্টি আমার কাছে প্রেমিকার মতো

বৃষ্টি মানেই ছন্নছাড়া, খেয়ালখুশি ভাবনা।

বৃষ্টি মানেই গোসাঘর ছেড়ে 

হাতটা ধরে বেরিয়ে পড়া।

বৃষ্টি মানেই রাগ অভিমানের যোগ বিয়োগ ভুলে,

জাপটে জড়িয়ে ধরা।

বৃষ্টি মানেই অভিমানের স্তর ভেঙে

অজস্র কান্নার স্রোত, 

আজ ভিজুক শহর

ভিজবো আমি

ভিজবে তুমি,

ভিজবে ডাকবাক্সে পড়ে থাকা 

মেঘপিওনের চিঠি।

ইতি, ভালো থেকো বৃষ্টি।

                       

জল রঙ - মলয় পাল

 



জল রঙ

মলয় পাল


ধরো আজ বর্ষার শনিবারের বিকেল

ট্রামের শেষ সিটে জানলার পাশে বসেথাকা

ছেলেটা আমি। 

তুমি উঠলে হঠাৎ, বসলে পাশে।

আর তখনই ট্রামের হলুদ নিয়ন ল্যাম্পের আধো অন্ধকারে সন্ধ্যা নেমে এলো শহরে।

বৃষ্টির ছাট ঝাপড়ে পড়ছে মুখে

 একটিও কথা হলোনা আমাদের

ঘন্টা বেজে উঠলো টুং টুং টুং... 

নেমে গেলে


ফেলে আসা মন-কেমন হিন্দি গানের মতো

বাজতে থাকলে তুমি!

মেঘবালিকা - বিদ্যুৎ মিশ্র




মেঘবালিকা 

বিদ্যুৎ মিশ্র 


মেঘ বালিকা আজকে হঠাৎ উদাস কেন 

বৃষ্টি ঝরে তোর যে চোখে শ্রাবণ যেন।


কী হয়েছে বলনা আমায় দুষ্টু মেয়ে

আগের মতই মিষ্টি সুরে ওঠ না গেয়ে।


দূর আকাশে ওই চেয়ে দেখ মেঘলা ভারি 

উদাসী মুখ তোর কী আর দেখতে পারি ?


মেঘ বালিকা আয় না কাছে লক্ষ্মী মেয়ে 

ভীষণ খুশি আজকে তোকে কাছে পেয়ে।


চলবি যখন ঝম ঝমা ঝম বাজবে নুপুর 

খিল খিলিয়ে হাসবি তখন সারা দুপুর।


তোর হাসি মুখ দেখতে পেলেই লাগে ভালো 

ভাঙ্গা ঘরে আমার তখন জোছনা আলো।




সফেদ কবুতর - নব কুমার দে

 


সফেদ কবুতর 

নব কুমার দে 


ওরা বিশ্বাস করতো

আকাশের অনেক উঁচুতে সাদা কবুতর উড়ে বেড়ায়


নদীর দুপারে পাত পেড়ে বসতো ওরা

ওদের জন্য ভাত ভরা থালা ভেসে আসতো


একদিন নদীর জল লাল হয়ে উঠলো

ভাতের থালাও এলোনা


জিজ্ঞেস করলাম তোমরা জানো কেন এমন হলো

সমস্বরে জবাব দিল , সাদা কবুতর খুন হয়েছে

আমাদের বিশ্বাসের রক্তে নদীর জল লাল


বললাম আমি জানি কে খুন করেছে

তোমরা কি তাকে শাস্তি দেবে


ওরা সবাই মাথা নিচু করে চলে গেল

ঠিক তখনই একটা দাঁড়কাক ডানা ঝাপটালো

আড়াল থেকে।

সাওয়ান আয়া হ্যায়… সৌভাগ্যর কবিতা পড়ুন




 সাওয়ান আয়া হ্যায়…

সৌভাগ্য


তুমি ফুলের মাঝে আলো

তুমি মায়ের মতো ভালো


আমি ফিরিয়ে দিতে রাজি চাঁদও 

তোমায় চেয়েছি বলে…


তোমার এলোমেলো ওই চুলে

রাখছি নিজের জীবনখানি তুলে


খরাপ্রবণ এ মনে আজ, প্রিয়—

তুমি বর্ষা হয়ে এলে!

মা- কে দেখে শেখা ‐ দিশানী

 


মা- কে দেখে শেখা 


‐ দিশানী


ভালোবাসায়,

                    অবহেলা জিতল যেই বার 

                     নিঃশব্দে শেষ বিকেলে 

                     ছাড়লাম সেই ঘর।


আসলে, 

             মা-কে দেখেই শেখা 

             নিজের ভাগ বিলিয়ে দিয়েও 

             ঠোঁটে হাসির রেখা!

চলন্তিকা ও ভাঙা শব্দার্থ - দেশিক হাজরা


 

চলন্তিকা ও ভাঙা শব্দার্থ

দেশিক হাজরা 


সবে হিম হয়ে যাচ্ছে কিছুক্ষণ তোমার কথা ভাবলেই

গায়ে আঁচর কেটে যায় সাঁতসাতে ঠান্ডা বাতাস

মেকি নৈতিক সন্ধ্যা ড্যাব ড্যাব করে দেখে

ঘরের প্রদীপ পুড়ে যাবার গন্ধ আসে নাকে

চেয়ার ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করে না।

কয়েকটা লেখা শেষ না করতেই বিকেল গড়িয়েছে।

সারা দুপুর ধরে আমি শুধু তোমাকে ভেবেছি

বেশিরভাগই নষ্ট করেছি বাংলা কবিতার ভবিষ্যৎ।

তোমাকে নষ্ট বলে দেবো সমস্ত অক্ষরে !

বলে হয়তো কিছুটা মনে মনে গরম উত্তেজনা গড়ে উঠে,

না— আত্মবোধ সহমত দেয়নি

ঠাকুর ঘর থেকে অনবরত ভেসে আসছে ঈশ্বরীয়

সংলগ্ন ধ্বনি, সেই ধ্বনি আমার নষ্ট মানসিকতার

শুদ্ধিকরণ করে দিবে হয়তো। দোষ দিই না দ্রষ্টব্যে

এমনকি তোমাকেও না। কেনই বা দিতে যাবো

যে যার জায়গায় সব ঠিক।

একটি ধারা আরেকটি ধারাকে সোজাসুজি

ভাবে পরশো করছে না,

আলুলায়িত ভাবে বৃষ্টি পড়ছে বাইরে।

মাটির সোঁদা গন্ধের নেশায় আমি আমার সমস্ত

কবিতার ব্যাকারণ মিলিয়ে নিচ্ছি।

চারিদিকটা একটা ঘন ঠান্ডা নিস্তব্ধতায় ঘিরে ধরছে

অনাব্যাকারণীয় কবিতা একটি একটি করে

ছিঁরে পুড়িয়ে দিচ্ছি আর আগুনের নাড়ি ধরে

শব্দের চিৎকার ভেসে যাচ্ছে ওই বৃষ্টির মধ্যে। 

এখন আমি এমনই একা এবং একাধিক 

উদাহরণস্বর: চলন্তিকা ও ভাঙা শব্দার্থ।

এসো হে বর্ষা - কমলাকান্ত সাহা

 




এসো হে বর্ষা 

কমলাকান্ত সাহা


ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি, সুন্দরী বর্ষা

    এসো না একটু জোরে,

 তোমার জন্য কত প্রতীক্ষা

      সারাটি বছর ধরে |

  তোমার বিহনে তপ্ত দুপুর

      ক্লান্ত পথিক বর,

   চাতকের দিকে চাহি প্রার্থনা

       একটুকু ঝরঝর !

আষাঢ় এসেছে তুমিও এসো-

      স্বাগত জানাই তাই,

শ্রাবণের মেঘে সুন্দরী রূপ

      তোমার দেখতে চাই |

তোমার দানে প্রকৃতি সবুজ

    সুজলা-সুফলা মাঠ--

ধরার বুকে তোমার আগমনে

    বসুক চাঁদের হাট |

বৃষ্টি এলে- সায়ন দাস

 


বৃষ্টি এলে 


সায়ন দাস


বৃষ্টি এলে ভীড়ের মাঝে অন্যরকম মনে

বৃষ্টি নামুক তোমার চোখে ভীষণ সঙ্গোপনে।

হারিয়ে ফেলার একটু আগে যেসব হাতছানি,

খুব গুছিয়ে বললে তাকে বিচ্ছেদ বলে জানি। 


গাছের পাতায় কিংবা আকাশ বিষন্নতার তীরে

সমস্তটাই নির্বান্ধব তোমার কাছে ফিরে—

জমাট বাঁধে অশ্রু হয়ে কত চোখের সারি

বৃষ্টি নামে তোমার চোখে আকাশ ভীষণ ভারী।


চোখের জলের উৎস হয়ে কেউ বা গেছে রয়ে,

তাকে এবার মুক্ত করো বৃষ্টিজলে ধুয়ে।

আকাশ-মাটির সমান্তরাল বৃষ্টি নামে যত

সারিয়ে তুলুক মেঘের কাছে তোমার রাখা ক্ষত।

কবি অরিত্র দ্বিবেদীর গুচ্ছ কবিতা পড়ুন

 কবি অরিত্র দ্বিবেদীর গুচ্ছ কবিতা 



দৃষ্টিকটু



সে, সরু হয়ে শুয়ে আছে নদীটির পায়ে 

নদীটি দীঘল, কালো, ছত্রাক শরীর 

কবে যেন আকাশেরও নিচে ঘটে গেছে  

অনিন্দ্য বাসনা তার, নামসহ রয়েছে

শুকিয়ে। প্রাচীন নদী, অষ্টপ্রহর জলে

বয়ে যায় কবেকার কথা, প্রেম ভালোবাসা আর

তুঙ্গ শতদলখানি, দেখেছি তাকিয়ে।


তবুও, সে শুয়ে আছে নদীটির পায়ে

নড়েও না কখনও, ওভাবে পড়ে থাকে

অক্টোবরের কুয়াশার মতন, নিকষ, নিস্পৃহ 

অথচ নিন্দিত নয় জানি, কথাখানি তার

গাঁদার মালার ভেতর যেন খাঁচার পাখি একটি


আমি শুধু দেখি, চিরটিকাল ঝণী হয়ে

দেখাটি অভিশাপদুষ্ট, লেখাটিও তাই 

ফিরে ফিরে আসে, অবাক প্রহরে অবসন্নপ্রায়। 



মনীষা

(উৎসর্গ: Dr. Faustus)

অরিত্র দ্বিবেদী


হাত পেতেছি বজ্র নেবো

মুণ্ডমালা খই উড়িয়ে

হাত পাতছি বজ্র নেবো


--- জ্ঞানশীর্ষ, বল্কলে পা

বান ডেকেছে, আঁচিয়ে নেবো

সূর্যপোড়া, চন্দ্রপোড়া ---

অসাবধানী গরাদগুলো 


দে ঠুঁকে দে, ছিন্নমাথা

হাড় জিরোনো কাঙাল দেহ

জ্বলছে যেন কাঠকয়লা!


ভুল ধরে দে, বুদ্ধ কবি

চক্ষু চোখে শেতল দেবো


জল ঠিকরে, রক্তচুষে 

অন্নকারা ছাই ছড়িয়ে

হাত পেতেছি, বজ্র নেবো। 



মৃগাঙ্ক মজুমদারের গুচ্ছ কবিতা

 

কবি: মৃগাঙ্ক মজুমদার




বর্ষা এলে-১ 


যে সব জলে জং ধরে না 

সেই সব জলকণা জুড়ে 

লোভ বেঁচে থাকে । 


মেঘ করার পরে 

আষাঢ়, শ্রাবণ গুনতে থাকে যখন মন, 

তখন শহর আর গ্রাম জুড়ে 

চাতকের প্রেম ভিজতে থাকে ।


বর্ষা এলে, 

একমনে পাপ ধুতে থাকে

ধুতে থাকে সব যৌন গন্ধ, 

বৃষ্টিস্নাত মলেস্টেশন,

আর স্তাবকতা,

বৃষ্টির মতন 

ঝরতে থাকে। 





বর্ষা এলে -২ 


জলরঙে আঁকা 

বা পেনসিল 

সব জলফড়িং ই 

বিষাদ জলে 

একবার না একবার 

ডুবেই যায় ।


বর্ষা এলে, টাপুরটুপুর 

শব্দ জড়িয়ে যারা হাত ধরে 

হেমন্তে নীরব থাকে 

আর 

শীতে হিমঘরে কাঁটা ছেঁড়া হয় । 



বর্ষা  এলে -৩ 


জল বেয়ে যে সমস্ত 

উমনো, ঝুমনো 

অগোছালো ভালোবাসার 

আঁকড়ে ধরে,

বৃষ্টি জুড়ে তারাই 

বেপরোয়া হয়ে আচমকা 

ঠোঁটের উপর আছড়ে পড়ে ।

তার পরে একটাই ছাতা,

জলে ভিজে ভাঁড়ে চা 

আর দুটো বর্ষা এভাবে পেরোনোর পরে 

প্রবাসে খবর  পাই 

তোমার বাড়ির লোকেরা 


জল সইতে গিয়েছে ।

আজকাল বর্ষা এলে 

মেঘ, জল, বৃষ্টির ফোঁটা 

সব কিছুর জানলার শার্সির 

ওপরেই আটকে রাখি। 



মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫

SUDIPTA SEN: কোথায় গিয়ে মনে হল, ধর্ষণের বিচারের চেয়েও কলেজ নির্বাচন বড়!


 মানুষ সোচ্চার প্রাণী এই কথাটা ভুল কিন্তু কিছু মানুষ সোচ্চার প্রাণী এই কথাটাও আংশিক ঠিক নয় আবার ঠিকও৷ আংশিক ঠিক নয় কারণ কিছু মানুষ একাধিক বিষয়ে সোচ্চার প্রাণী।  কেন এমন বলছি? কারণ সমাজে ঘটে যাওয়া একটি কালো দিকের বিচার চেয়ে কেউ সোচ্চার হলে পাশাপাশি আরও বহু সোচ্চার মানুষ আসে, তারা তাদের আরও নানান বিষয় সেখানে তুলে ধরার চেষ্টা করে।

অর্থাৎ তখন একটি বিষয়ে সোচ্চার হওয়া হারিয়ে যায় আরও নানান সোচ্চারতার প্রলেপে৷ ঠিক যেভবে হারিয়ে গিয়েছে অভয়া কান্ডের আন্দোলন ও তার বিচার।

গত বছর ১০ আগস্ট থেকে আর জি করের জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন শুরু হল অভয়া কান্ডের বিচার চেয়ে। জ্বলল মোমবাতি, উঠল স্লোগান, মিডিয়া কভার জোরদার৷ তবে ওই বিচারের সাথে যুক্ত হল আরও নানান দিক। হাসপাতালে অরাজকতা, দীর্ঘদিব থমকে থাকা কলেজের নির্বাচনের মতো বিষয়গুলো কোথায় গিয়ে যেন আরও প্রবল হয়ে ওঠল। আন্দোলন একটা হলেও আন্দোলনের বিষয় হল প্রলেপের পর প্রলেপ দিয়ে সাজান।

রাজনৈতিক বিরোধী দল নামল, তারা ধর্ষণের বিচারের সাথে শাসক দলের বিরোধীতা চাইতে করল নানান ক্ষেত্রে।

নাগরিক সমাজ নামল সঙ্গে করে নামল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা, তারা আবার আলাদা আরও নানান বিষশ তুলে ধরছে। কেউ লিঙ্কদিনেরLINKEDIN)  প্রোফাইলের রাত দখলের অবদান লিখে রাখছে ৷ তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, তিনি বলছেন আদতে যুক্তি দিচ্ছেন, আমি যদি রাত দখলের মূল কান্ডারি হিসেবে নিজেকে লিখে রাখি তাহলে তো অসুবিধের কিছু নেই কারণ যারা আমাকে চাকরি দেবে তারা তো ভাববে আমি প্রতিবাদী। তখন আমাকে তো তারা ভয় পাবেন যদি আমি পরবর্তীতে নিজের অফিসের কেনও কালো দিক নিয়ে প্রতিবাদ করি! জানি না কিসের যুক্তি সাজালেন, যদি তাই হয় তাহলে সেই সোশাল সাইটে তিনি নিজের চাকরি না পাওয়ার কারণ বা তাকে চাকরিতে নেবে না এমন কারণ লিখে রাখবেন কেন? আসলে হিরো হতে কে না চাই? সে যাক্গে এটা বিষয় নয়। বিষয় সোচ্চার হওয়া।

সোচ্চার হতে গেলে সাহস লাগে, লাগে পারিবারিক সার্পোটও। কিন্তু সোচ্চার হতে গেলে নিজের প্রায়োরিটি চেয়েও কোন বিষয়ে সোচ্চার হওয়া দরকার তাকেই মূল করে এগিয়ে আসা উচিত। নয়তো একাধিক সোচ্চারে হারিয়ে যায় মূল কারণ৷ আন্দলোন হারিয়ে যায় নানাবিধ উদ্দেশ্যে। যেটা হারিয়ে গেল আর জি করের অভয়ার ধর্ষণের ক্ষেত্রে। কোথায় গিয়ে মনে হল, ধর্ষণের বিচারের চেয়েও কলেজ নির্বাচন বড়, একাধিক ক্ষেত্রে শাসকের গাফিলতি বড়। সঞ্জয় রায়ের সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি আরও নানান ভাবে বিচার চলছে। জানি না কী হবে? তবে আমার মনে হয় সোচ্চার হওয়াতে দোষের ছিল না, দোষ ছিল সোচ্চারের প্রলেপে। 

সম্পাদকীয় কলম JOYDIP ROY: সোচ্চার সহিষ্ণুতার বেড়াজাল ভেঙে হাঁটতে জানে মোমবাতির মিছিলে

সম্পাদকীয়- জয়দীপ রায় 
 

সাদা কাগজের উপর বাঁহাতি কলমটা  ছুঁয়ে যখন ভাবছিলাম সোচ্চারের সম্পাদকীয় বিশ্লেষণ ঠিক কিভাবে করা উচিত আমার। আচ্ছা সোচ্চারের সংজ্ঞাটা কি শুধুই নারীকেন্দ্রিক না পুরুষ কেন্দ্রিক?  ঠিক কোনদিকে হেলে তার পেন্ডুলাম। জানতে ডুব দিতে হলো আলাদিনের হাতে জ্বলে ওঠা আশ্চর্য প্রদীপের ঠিক নীচের অন্ধকারের গহ্বরে।গহ্বরের প্রতিধ্বনি আমায় উত্তর দিল সোচ্চারের ভেদাভেদ হয় না। সোচ্চার প্রতিবাদ জানে, আঙুল উঁচিয়ে বলতে জানে উলঙ্গ রাজাকে 'রাজা তোর কাপড় কই'? সোচ্চার সহিষ্ণুতার বেড়াজাল ভেঙে হাঁটতে জানে মোমবাতির মিছিলে।সোচ্চার মানে পরিবর্তন, সোচ্চার মানে বিবর্তন, সোচ্চার মানে একটা জেনারেশনের শেষ আরেকটা জেনারেশনের শুরু।

ARUP SARKAR : যেখানে অন্যায় সেখানেই প্রতিবাদ করতে হবে


 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘নৈবেদ্য’ কাব্যগ্রন্থের ‘ন্যায়দণ্ড’ কবিতায় বলেছিলেন, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে / তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।’ অন্যায়কারী ও অন্যায় সহ্যকারী দুজনেই সমান অপরাধী, যদি প্রতিবাদ না করে! যুগের পরিবর্তন ঘটেছে কিন্তু নারীর জীবন আজও রয়ে গেছে নিকষ অন্ধকারে! অনেক নারী আজও মুখ বুজে নীরবে সবকিছু হজম করে। শত অন্যায় শোষণের কোনও প্রতিবাদ করে না। বরং চুপ থেকে কষ্ট পায়। যা নারীর জন্য আরও সমস্যা সৃষ্টি করে পরবর্তীকালে।

পরিবার থেকে শুরু হয় নারীর প্রতি অবিচার। অধিকার বলে নারীর ওপর একের পর এক অন্যায় আবদারও চাপিয়ে দেওয়া হয়। তখন নারীকে চুপ করে সহ্য করে নিতে হয়। কারণ তারা রক্তের সম্পর্কে সম্পর্কিত! পড়াশোনা, চলাফেরা, প্রেম, দাম্পত্য কোথাও নারীর নিজস্ব মতকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না! কেউ কেউ যদি বা দেতে চেষ্টা করেন সেখানেও সমাজের তীর্যক মন্তব্য এসে ঘিরে ধরে তাকে। তাই নারীর এমন সমস্যায় নারীকে একলা চলার নীতিতে বিশ্বাসী হতে হবে। এবং শুধু তাই নয়, নারীকে নিজের ভালো-মন্দ বুঝে নিতে জানতে হবে। অন্যায়কে-অন্যায় হিসেবে বলার-দেখার ও প্রতিবাদ করার মতো সাহস গড়ে তুলতে হবে।

বাবা-মা বা পরিবারের কর্তাদের কথা অনুযায়ী একজন নারীকে তার ভবিষ্যৎ জীবনে এগোতে হয়। নারী এর প্রতিবাদে অক্ষম কারণ তারা পরমাত্মীয়। বাবা-মায়ের গণ্ডি পেরিয়ে যখন একজন নারী স্বামীর ঘরে যায়, তখন শুরু হয় আরেক শোষণ! শ্বশুর-শাশুড়ি-স্বামী সবার মতো অনুযায়ী নারীকে তার জীবনের পথে চলতে হয়। পরিবারের শৃঙ্খলা বজায়ে মত নেওয়া দোষের কিছু না কিন্তু মতটা যদি জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়, তখন তা অবশ্যই দোষের! কারণ প্রত্যেক মানুষ স্বাধীন। আর স্বাধীন মানুষের চলার পথ রুদ্ধ করা অন্যায়। তিনি যে সম্পর্কেই আবদ্ধ হোন না কেন। পরিবারের সম্মান, মর্যাদা, ঐতিহ্য রক্ষার্থে অধিকাংশ নারী আজও পারিবারিক নিপীড়ন সয়ে যায়। কিন্তু নীরবে সয়ে যাওয়া মানে মেরুদণ্ডহীনতার পরিচয় দেওয়া। সেইসঙ্গে অন্যায়কারীকে আরও অন্যায় করতে প্রশ্রয় দেওয়া। তাই পরিবার থেকে যদি নারীর প্রতি কোনো রকম সহিংস আচরণ করা হয়, তবে নিজের আত্মরক্ষার স্বার্থেই প্রতিবাদই হতে পারে নারীর একমাত্র হাতিয়ার।

বর্তমানে পারিবারিক সহিংসতার পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু নারীদের নীরব ভূমিকা তাদের ওপর দমন-পীড়ন চালাতে আরও উদ্যোগী করছে পুরুষতন্ত্রকে। নারীরা যদি অত্যাচার-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী না হন, তবে নারীদের এই ভয়াবহতার হাত থেকে রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব। তাই যেখানে অন্যায় সেখানেই প্রতিবাদ করতে হবে।

বাল্য বিয়ে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ কিন্তু কিছু পরিবার নিজেদের অজ্ঞানতা এবং অক্ষমতা বশত কন্যা সন্তানের অপরিণত বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়। সেক্ষেত্রে নারীরা যদি নিজেরা প্রতিবাদ না করে তবে সরকারের একার পক্ষে শতভাগ বাল্যবিয়ে রুখে দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই নারীর প্রতি অন্যায় হলে আগে নিজেকেই আওয়াজ তুলতে হবে। বর্তমানে প্রশাসন তৎপর। তাই নারীর প্রতিবাদে যদি অপরাধীরা দমে না যায়, তবে আইনি সহায়তা নিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি পদক্ষেপ অনুযায়ী ৯৯৯-এ সব ধরনের সেবা পাওয়া যায়। সব নারীকে প্রতিবাদের এ ভাষা রপ্ত করতে হবে নতুবা নিপীড়নকারীদের দমানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।

দায়িত্ববান নাগরিক হতে হলে নৈতিকতা এবং সততাই হতে হবে প্রথম ও প্রধান গুণ। দেশপ্রেমিক নাগরিক হওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি প্রয়োজন, তা হলো নৈতিক মূল্যবোধের উপর অটল থাকা। ভোটের মাধ্যমে আমরা দেশের নেতৃত্ব নির্বাচন করি, যা দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। সামান্য অর্থের বিনিময়ে ভোট বিক্রি করে দেয়া মানে নিজের এবং দেশের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়া। দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত দায়িত্ব নিয়ে সঠিক মানুষকে ভোট দেয়া। অনেকেই সুবিধা পাওয়ার জন্য ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের ‘তেল’ মারেন, যা সমাজের ন্যায়ের পথে বড় বাধা সৃষ্টি করে। সঠিক দায়িত্ববোধসম্পন্ন নাগরিক কখনো তোষামোদ করে কারও আশীর্বাদ পেতে চায় না; বরং সে সত্য ও সঠিক পথে থাকতে আগ্রহী।