** আজকের দিনে ওয়েব ম্যাগাজিন /ব্লগজিন কতখানি প্রাসঙ্গিক? ওয়েব ম্যাগাজিনে লেখায় লাভ বা ক্ষতি কোনটা বেশি?
নাসির ওয়াদেন
১ম অংশ
অন্তর্জাল সাহিত্য প্রসঙ্গে বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, আজকাল হু হু করে এর বিস্তার ঘটছে । এর ভালমন্দ আলোচনা করার আগে আমাদের সাহিত্য প্রকাশের মাধ্যমগুলো জানতে হবে । ম্যাগাজিন সাহিত্য সৃষ্টির অন্যতম হাতিয়ার এবং নিজের সাহিত্য সৃষ্টিকে অপরের কাছে পৌঁছানোর এক মাধ্যম । আমরা দেখেছি যে, প্রযুক্তিকরণ হওয়ার আগে মানুষ তাঁর সৃষ্টির কথা বহুমানুষের কাছে তুলে ধরতে বিভিন্ন ম্যাগাজিনের ব্যবহার করতো। তার মধ্যদিয়ে সাধারণ থেকে বুদ্ধিজীবীগণ সেই ব্যক্তির সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে অবহিত হতেন ।বর্তমান সময়ে চাহিদার সাথে সাথে প্রযুক্তিকরণের ফলে বিভিন্ন ধরনের প্রকাশ ক্ষেত্রেও সৃষ্টি হয়েছে, মানুষ সেই মাধ্যমকে ব্যবহার করে অল্প খরচে, স্বল্পশ্রমে, মূল্যবান সময় বাঁচিয়ে সহজে সম্পাদনা করে সাহিত্যকর্মকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে পারছে । ফলে বলতে দ্বিধা নেই যে, কেউ কেউ এই মাধ্যমে সাহিত্যিক হওয়ার চেষ্টা করছেন ।এই মাধ্যমকে বর্তমানে একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাবে না ।
আমরা সাহিত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে লিটল ম্যাগাজিন ও বিগ ম্যাগাজিন বলতে অনেক কিছু বুঝি। সুবিমল মিশ্র তাঁর " উল্টো দূরবীন " পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, 'লিটল ম্যাগাজিন ঘাঁটতে ঘাঁটতে এমন লেখা হঠাৎ হঠাৎ পেয়ে যাই বইকি চমকে ওঠার মতো, মূলত তরুণদের ।,,যা কিছু পেয়েছি চমকে দেবার মতো লিটল ম্যাগাজিনেই।বিগ ম্যাগে তথাকথিত সাহিত্য -সংস্কৃতির মাতব্বর পাক্ষিক কাগজে তো,,,"
আমার মনে হচ্ছে যে, বিগ ও লিটল ম্যাগাজিনে স্থানসংকুলনের ক্ষেত্রে এক মস্ত বড়ো বাধা । ফলে অগণিত তরুণ লেখকদের লেখার ক্ষেত্রভূমি এই অন্তর্জাল সাহিত্য হতে পারে ।তবে, " অন্তর্জালের ঝঞ্ঝাটে না গিয়ে কাগজে কলমে পত্রিকা করার একটা ভালো দিক হল দিনে ক'খানা লেখার কটা ' হিট' হল তা চেক করার কোন দায় থাকে না ।একবার হাত চালান হয়ে গেলেই হল। ক'জন পাঠক কোন লেখাটা কতবার পড়েছেন সেসব খুঁটিয়ে জানার দায়িত্ববোধ বা স্পৃহা সম্পাদকের থাকুক ছাই না থাকুক উপায় থাকে না ।" এ প্রসঙ্গে লিটল ম্যাগাজিন নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক, কারণ লিটল ম্যাগাজিন আঙ্গিকে ছোট হলেও এর অন্তর্নিহিত রূপ বা দর্শন সুতীব্র গভীরে প্রোত্থিত। বাঙালি কবি সাহিত্যিক বা প্রাবন্ধিকদের আঁতুরঘর। বিশ্ব সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রতিথযশা সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিকদের এই আঁতুর ঘরেই জন্ম। অবশ্য একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, লিটল ম্যাগাজিন সাহিত্যের মূল্যায়নে অস্পৃশ্য- মূল্যহীন প্রয়াস । তথাপি একথা জোর দিয়ে বলতে পারি যে, লিটল ম্যাগাজিনগুলোই প্রকৃত কবিদের উন্মোচনের একমাত্র ক্ষেত্রভূমি ,যেখানে ভাব ও ভাবনার সংমিশ্রণে ব্যঞ্জিত শব্দের মাধ্যমে বিকীর্ণ পথে অসংখ্য নবীন লেখক হাতকে মসৃণ ও কারুশীল করে তোলে । বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় যে সকল কবিলেখকের লেখনী, মেধাশক্তির স্ফূরণ ঘটেছে, তা এরই হাত ধরে ।অনেকে আবার এইভাবে মতামত প্রকাশ করে থাকে যে, লিটল ম্যাগাজিনের মূল্য বলতে শূন্য -- কেবলমাত্র প্রলাপ কথন,পাগলামি ব্যতীত আর কিছুই না ।কতকগুলি পাগল একসঙ্গে উপবিষ্ট হয়ে মতামত সরলীকরণের মধ্যদিয়ে একটা ছায়া রূপের সৃজনে সংঘবদ্ধ হয়ে সেই বৃক্ষের ডালে নকল পুষ্প গেঁথে তাকে সৌন্দর্যায়ন করার প্রচেষ্টা করে ।
যাক, এ নিয়ে নানাধরণের মতামত শোনা যায়, ফলে তাদের প্রত্যেকের মতের পক্ষে বিপক্ষে নানা যুক্তি তর্ক থাকতে পারে । আমার মূল বক্তব্য ছিল, ওয়েব ম্যাগাজিন বা ব্লগজিন আজকের দিনে কতখানি প্রাসঙ্গিক । এ বিষয়ে আলোচনা করার আগে ওয়েব ম্যাগাজিন নিয়ে কিছু বলা যাক । ছয়ের দশকের সময় থেকেই আমেরিকার নানা শহর থেকে ছাপা পত্রিকা বের হতো ।সংখ্যায় কম হলেও এখনো বেরোয় কিছু ।তবে এই সব সাময়িক ছাপা পত্রিকার চেয়ে মার্কিনমুলুকেও বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চার প্রসার এবং প্রচারে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে 'ওয়েবজিন ও ওয়েব ভিত্তিক প্রকাশনা ।সবচেয়ে পুরোনো ওয়েবজিন 'পরবাস'। কুড়ি বছর অতিক্রম করেছে।
২০০০ সালে আর এক ওয়েবজিনের প্রকাশ 'অবসর ' ,এতে মাসে দুবার মননশীল প্রবন্ধ, রম্যরচনা ইত্যাদি প্রকাশ করে থাকে ।২০০৪ সালে মার্কিন দেশে "গুরুচাণ্ডাঌ" ওয়েবজিনের প্রকাশ ।সাম্প্রতিক নানা নিয়ে সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলম উল্লেখযোগ্য । নয়ের দশকের শেষেরদিকে আমেরিকা থেকে আর্যনীল মুখোপাধ্যায় প্রকাশ করেন " কৌরব" অনলাইন পত্রিকা ।বাংলাদেশ থেকে ওয়েবজিন " গল্পপাঠ " প্রকাশ করেন কুলদা রায়।সুমিত রায় " গীতবিতান " সাইট তৈরি করেন রবীন্দ্রানুরাগীদের জন্য ।
যেহেতু প্রাত্যহিক জীবনে হাজারো কাজের সঙ্গে প্রযুক্তি যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। কেনাবেচা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের নানাকাজ অনলাইনে হচ্ছে ।ফলে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিও এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে ।খরচের তুলনা করলে লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করা ব্যয় সাপেক্ষ,কাগজ, কভার ডিজাইন, প্রিন্ট, বাঁধাই খরচা আছে ।
২য় অংশ
কিন্তু ওয়েবজিন প্রকাশের ক্ষেত্রে সেরকম খরচা নেই । তবে, ইদানীং সাহিত্য লেখকদের ওয়েবজিনের দিকে বেশি বেশি করে ঝুঁকতে দেখছি ।তার ফলে দিন দিন ওয়েব ম্যাগাজিনের সংখ্যা বাড়ছে ।বাংলাভাষায় প্রচুর ওয়েব ম্যাগাজিন প্রকাশিত হচ্ছে, মূলত যেগুলো বেশ ছড়িয়ে গেছে, কবিতা উৎসব, শব্দের মিছিল, রংরুট, জিরো বাউন্ডারি কবিতা, অন্যনিষাদ,পদক্ষেপ, বাক, এখন তরঙ্গ, জলফড়িং, মেঘ বৃষ্টি রোদ্দুর ইত্যাদি ইত্যাদি ।তবে ওয়েবজিনের কিছু কিছু ক্ষেত্রে সম্পাদনার ত্রুটি থাকছে ।ফলে লেখার দুর্বলতা ও মানহীনতা অনেক ওয়েবজিনে লক্ষ করছি ।বানান ভুল তো আছেই, ফলে শব্দের গাম্ভীর্য বিনষ্ট হচ্ছে ।আবার কিছু কিছু ওয়েব ম্যাগাজিন বিগ ম্যাগাজিনকেও টেক্কা দিতে সক্ষম বলা বাহুল্য ।
এখানে দুটো কথা না বলে পারছি না যে, ওয়েব ম্যাগাজিন বেশি বেশি প্রকাশ হতে থাকলে লিটল ম্যাগাজিন ও দৈনিক সাহিত্যের পাতার মূল্য কমে যাবে, এটা সম্পূর্ণ ঠিক কথা নয়,তবে পাঠক সংখ্যা কিছুটা কমবে নিঃসন্দেহে ।তাই,ওয়েব ম্যাগাজিন হোক প্রকৃত সৃজনশীল পত্র, শিক্ষা সংস্কৃতির ধারক ও বাহক ।সুস্থ সংস্কৃতি চেতনা, শুদ্ধ ভাষাজ্ঞান, নান্দনিক পরিশীলিত রুচি ও মানসিকতা গঠনের প্লাটফরম হিসেবে । লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ থেকে প্রেরণ করা পর্যন্ত যে সমস্যা থেকে থাকে, ওয়েব ম্যাগাজিনে সেই সমস্যা নেই । ফলে দ্রুততর পর্যায়ে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব এবং ক্ষনেকের মধ্যে সারা বিশ্বে ছড়িয়েও দেওয়া যায়।
ওয়েব ম্যাগাজিন প্রকাশের লাভ ক্ষতি বিচার করতে গেলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসে, তবে দক্ষ সম্পাদনার দ্বারা পরিশীলিত পত্রিকার মূল্য সর্বদাই থাকে ও থাকবে বলে মনে করি ।পরিশেষে, তবুও বলি যে,বাণিজ্য বৃদ্ধির পরোয়া না করে, পুঁজির শাসনতন্ত্র উপেক্ষা করে, প্রতিবাদী চেতনাকে উস্কে দেওয়ার সহজ মাধ্যম যেমন লিটল ম্যাগাজিন, তেমনি ওয়েবজিন বা ব্লগজিন । যা নতুন নতুন লেখক,কবি, প্রাবন্ধিকদের নির্মাণে এগিয়ে থাকে। এখানেই লিটল ম্যাগাজিনের মতো ওয়েবজিনের গুরুত্ব কম নয় আমার কাছে । ধন্যবাদ ।
** কৃতজ্ঞতা স্বীকার বিভিন্ন লেখকের লেখা ও ইন্টারনেট সহযোগিতা।
*******
নাসির ওয়াদেন
মুরারই, বীরভূম
শিক্ষকতার পেশায় নিযুক্ত
ফোন -- 8926625921
♦লেখা বই:-১| বুক ছুঁয়েছি নগ্নরাতে, কাঞ্চীদেশ প্রকাশনী, বীরভূম, ২| প্রিয় ফুল ও অভিমানী ইচ্ছেরা,কবিতা প্রতিমাসে, কলকাতা ৩| অন্ধকার কুরুক্ষেত্র খোঁজে , দৌড় প্রকাশনী, কলকাতা গল্প বই ১|অথবা অন্য পৃথিবী কাঞ্চীদেশ প্রকাশনী বীরভূম ,
সম্মান ও পুরস্কার :-সম্মান কাঞ্চীদেশ সাহিত্য পুরস্কার ২০১২।
নাসির ওয়াদেন
১ম অংশ
অন্তর্জাল সাহিত্য প্রসঙ্গে বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, আজকাল হু হু করে এর বিস্তার ঘটছে । এর ভালমন্দ আলোচনা করার আগে আমাদের সাহিত্য প্রকাশের মাধ্যমগুলো জানতে হবে । ম্যাগাজিন সাহিত্য সৃষ্টির অন্যতম হাতিয়ার এবং নিজের সাহিত্য সৃষ্টিকে অপরের কাছে পৌঁছানোর এক মাধ্যম । আমরা দেখেছি যে, প্রযুক্তিকরণ হওয়ার আগে মানুষ তাঁর সৃষ্টির কথা বহুমানুষের কাছে তুলে ধরতে বিভিন্ন ম্যাগাজিনের ব্যবহার করতো। তার মধ্যদিয়ে সাধারণ থেকে বুদ্ধিজীবীগণ সেই ব্যক্তির সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে অবহিত হতেন ।বর্তমান সময়ে চাহিদার সাথে সাথে প্রযুক্তিকরণের ফলে বিভিন্ন ধরনের প্রকাশ ক্ষেত্রেও সৃষ্টি হয়েছে, মানুষ সেই মাধ্যমকে ব্যবহার করে অল্প খরচে, স্বল্পশ্রমে, মূল্যবান সময় বাঁচিয়ে সহজে সম্পাদনা করে সাহিত্যকর্মকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে পারছে । ফলে বলতে দ্বিধা নেই যে, কেউ কেউ এই মাধ্যমে সাহিত্যিক হওয়ার চেষ্টা করছেন ।এই মাধ্যমকে বর্তমানে একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাবে না ।
আমরা সাহিত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে লিটল ম্যাগাজিন ও বিগ ম্যাগাজিন বলতে অনেক কিছু বুঝি। সুবিমল মিশ্র তাঁর " উল্টো দূরবীন " পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, 'লিটল ম্যাগাজিন ঘাঁটতে ঘাঁটতে এমন লেখা হঠাৎ হঠাৎ পেয়ে যাই বইকি চমকে ওঠার মতো, মূলত তরুণদের ।,,যা কিছু পেয়েছি চমকে দেবার মতো লিটল ম্যাগাজিনেই।বিগ ম্যাগে তথাকথিত সাহিত্য -সংস্কৃতির মাতব্বর পাক্ষিক কাগজে তো,,,"
আমার মনে হচ্ছে যে, বিগ ও লিটল ম্যাগাজিনে স্থানসংকুলনের ক্ষেত্রে এক মস্ত বড়ো বাধা । ফলে অগণিত তরুণ লেখকদের লেখার ক্ষেত্রভূমি এই অন্তর্জাল সাহিত্য হতে পারে ।তবে, " অন্তর্জালের ঝঞ্ঝাটে না গিয়ে কাগজে কলমে পত্রিকা করার একটা ভালো দিক হল দিনে ক'খানা লেখার কটা ' হিট' হল তা চেক করার কোন দায় থাকে না ।একবার হাত চালান হয়ে গেলেই হল। ক'জন পাঠক কোন লেখাটা কতবার পড়েছেন সেসব খুঁটিয়ে জানার দায়িত্ববোধ বা স্পৃহা সম্পাদকের থাকুক ছাই না থাকুক উপায় থাকে না ।" এ প্রসঙ্গে লিটল ম্যাগাজিন নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক, কারণ লিটল ম্যাগাজিন আঙ্গিকে ছোট হলেও এর অন্তর্নিহিত রূপ বা দর্শন সুতীব্র গভীরে প্রোত্থিত। বাঙালি কবি সাহিত্যিক বা প্রাবন্ধিকদের আঁতুরঘর। বিশ্ব সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রতিথযশা সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিকদের এই আঁতুর ঘরেই জন্ম। অবশ্য একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, লিটল ম্যাগাজিন সাহিত্যের মূল্যায়নে অস্পৃশ্য- মূল্যহীন প্রয়াস । তথাপি একথা জোর দিয়ে বলতে পারি যে, লিটল ম্যাগাজিনগুলোই প্রকৃত কবিদের উন্মোচনের একমাত্র ক্ষেত্রভূমি ,যেখানে ভাব ও ভাবনার সংমিশ্রণে ব্যঞ্জিত শব্দের মাধ্যমে বিকীর্ণ পথে অসংখ্য নবীন লেখক হাতকে মসৃণ ও কারুশীল করে তোলে । বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় যে সকল কবিলেখকের লেখনী, মেধাশক্তির স্ফূরণ ঘটেছে, তা এরই হাত ধরে ।অনেকে আবার এইভাবে মতামত প্রকাশ করে থাকে যে, লিটল ম্যাগাজিনের মূল্য বলতে শূন্য -- কেবলমাত্র প্রলাপ কথন,পাগলামি ব্যতীত আর কিছুই না ।কতকগুলি পাগল একসঙ্গে উপবিষ্ট হয়ে মতামত সরলীকরণের মধ্যদিয়ে একটা ছায়া রূপের সৃজনে সংঘবদ্ধ হয়ে সেই বৃক্ষের ডালে নকল পুষ্প গেঁথে তাকে সৌন্দর্যায়ন করার প্রচেষ্টা করে ।
যাক, এ নিয়ে নানাধরণের মতামত শোনা যায়, ফলে তাদের প্রত্যেকের মতের পক্ষে বিপক্ষে নানা যুক্তি তর্ক থাকতে পারে । আমার মূল বক্তব্য ছিল, ওয়েব ম্যাগাজিন বা ব্লগজিন আজকের দিনে কতখানি প্রাসঙ্গিক । এ বিষয়ে আলোচনা করার আগে ওয়েব ম্যাগাজিন নিয়ে কিছু বলা যাক । ছয়ের দশকের সময় থেকেই আমেরিকার নানা শহর থেকে ছাপা পত্রিকা বের হতো ।সংখ্যায় কম হলেও এখনো বেরোয় কিছু ।তবে এই সব সাময়িক ছাপা পত্রিকার চেয়ে মার্কিনমুলুকেও বাংলা ভাষা ও সাহিত্য চর্চার প্রসার এবং প্রচারে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে 'ওয়েবজিন ও ওয়েব ভিত্তিক প্রকাশনা ।সবচেয়ে পুরোনো ওয়েবজিন 'পরবাস'। কুড়ি বছর অতিক্রম করেছে।
২০০০ সালে আর এক ওয়েবজিনের প্রকাশ 'অবসর ' ,এতে মাসে দুবার মননশীল প্রবন্ধ, রম্যরচনা ইত্যাদি প্রকাশ করে থাকে ।২০০৪ সালে মার্কিন দেশে "গুরুচাণ্ডাঌ" ওয়েবজিনের প্রকাশ ।সাম্প্রতিক নানা নিয়ে সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলম উল্লেখযোগ্য । নয়ের দশকের শেষেরদিকে আমেরিকা থেকে আর্যনীল মুখোপাধ্যায় প্রকাশ করেন " কৌরব" অনলাইন পত্রিকা ।বাংলাদেশ থেকে ওয়েবজিন " গল্পপাঠ " প্রকাশ করেন কুলদা রায়।সুমিত রায় " গীতবিতান " সাইট তৈরি করেন রবীন্দ্রানুরাগীদের জন্য ।
যেহেতু প্রাত্যহিক জীবনে হাজারো কাজের সঙ্গে প্রযুক্তি যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। কেনাবেচা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের নানাকাজ অনলাইনে হচ্ছে ।ফলে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিও এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে ।খরচের তুলনা করলে লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করা ব্যয় সাপেক্ষ,কাগজ, কভার ডিজাইন, প্রিন্ট, বাঁধাই খরচা আছে ।
২য় অংশ
কিন্তু ওয়েবজিন প্রকাশের ক্ষেত্রে সেরকম খরচা নেই । তবে, ইদানীং সাহিত্য লেখকদের ওয়েবজিনের দিকে বেশি বেশি করে ঝুঁকতে দেখছি ।তার ফলে দিন দিন ওয়েব ম্যাগাজিনের সংখ্যা বাড়ছে ।বাংলাভাষায় প্রচুর ওয়েব ম্যাগাজিন প্রকাশিত হচ্ছে, মূলত যেগুলো বেশ ছড়িয়ে গেছে, কবিতা উৎসব, শব্দের মিছিল, রংরুট, জিরো বাউন্ডারি কবিতা, অন্যনিষাদ,পদক্ষেপ, বাক, এখন তরঙ্গ, জলফড়িং, মেঘ বৃষ্টি রোদ্দুর ইত্যাদি ইত্যাদি ।তবে ওয়েবজিনের কিছু কিছু ক্ষেত্রে সম্পাদনার ত্রুটি থাকছে ।ফলে লেখার দুর্বলতা ও মানহীনতা অনেক ওয়েবজিনে লক্ষ করছি ।বানান ভুল তো আছেই, ফলে শব্দের গাম্ভীর্য বিনষ্ট হচ্ছে ।আবার কিছু কিছু ওয়েব ম্যাগাজিন বিগ ম্যাগাজিনকেও টেক্কা দিতে সক্ষম বলা বাহুল্য ।
এখানে দুটো কথা না বলে পারছি না যে, ওয়েব ম্যাগাজিন বেশি বেশি প্রকাশ হতে থাকলে লিটল ম্যাগাজিন ও দৈনিক সাহিত্যের পাতার মূল্য কমে যাবে, এটা সম্পূর্ণ ঠিক কথা নয়,তবে পাঠক সংখ্যা কিছুটা কমবে নিঃসন্দেহে ।তাই,ওয়েব ম্যাগাজিন হোক প্রকৃত সৃজনশীল পত্র, শিক্ষা সংস্কৃতির ধারক ও বাহক ।সুস্থ সংস্কৃতি চেতনা, শুদ্ধ ভাষাজ্ঞান, নান্দনিক পরিশীলিত রুচি ও মানসিকতা গঠনের প্লাটফরম হিসেবে । লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ থেকে প্রেরণ করা পর্যন্ত যে সমস্যা থেকে থাকে, ওয়েব ম্যাগাজিনে সেই সমস্যা নেই । ফলে দ্রুততর পর্যায়ে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব এবং ক্ষনেকের মধ্যে সারা বিশ্বে ছড়িয়েও দেওয়া যায়।
ওয়েব ম্যাগাজিন প্রকাশের লাভ ক্ষতি বিচার করতে গেলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসে, তবে দক্ষ সম্পাদনার দ্বারা পরিশীলিত পত্রিকার মূল্য সর্বদাই থাকে ও থাকবে বলে মনে করি ।পরিশেষে, তবুও বলি যে,বাণিজ্য বৃদ্ধির পরোয়া না করে, পুঁজির শাসনতন্ত্র উপেক্ষা করে, প্রতিবাদী চেতনাকে উস্কে দেওয়ার সহজ মাধ্যম যেমন লিটল ম্যাগাজিন, তেমনি ওয়েবজিন বা ব্লগজিন । যা নতুন নতুন লেখক,কবি, প্রাবন্ধিকদের নির্মাণে এগিয়ে থাকে। এখানেই লিটল ম্যাগাজিনের মতো ওয়েবজিনের গুরুত্ব কম নয় আমার কাছে । ধন্যবাদ ।
** কৃতজ্ঞতা স্বীকার বিভিন্ন লেখকের লেখা ও ইন্টারনেট সহযোগিতা।
*******
নাসির ওয়াদেন
মুরারই, বীরভূম
শিক্ষকতার পেশায় নিযুক্ত
ফোন -- 8926625921
♦লেখা বই:-১| বুক ছুঁয়েছি নগ্নরাতে, কাঞ্চীদেশ প্রকাশনী, বীরভূম, ২| প্রিয় ফুল ও অভিমানী ইচ্ছেরা,কবিতা প্রতিমাসে, কলকাতা ৩| অন্ধকার কুরুক্ষেত্র খোঁজে , দৌড় প্রকাশনী, কলকাতা গল্প বই ১|অথবা অন্য পৃথিবী কাঞ্চীদেশ প্রকাশনী বীরভূম ,
সম্মান ও পুরস্কার :-সম্মান কাঞ্চীদেশ সাহিত্য পুরস্কার ২০১২।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন