ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭

আবার ও মেয়ে হয়েছে

অসংখ্য নিস্তব্ধতা    ঘরটা  অ শব্দ ও করেনা
চুপ চাপ চার্লি ব্যাপী  মুখ চাওয়া চাওয়ি
সুখবর না দু সংবাদ  বোঝা ভার
ফিস ফিস শব্দে      কে যেন বলে গেল
  ওর নাকি আবার ও মেয়ে হয়েছে ।
  জয়দীপ রায়
(চিত্রসংগ্রাহক)

শনিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৭

 😱  [ AMAZON  অভিযান ]  😱
                            .........   সুদীপ্ত সেন

আবার একটা নতুন পর্ব, শঙ্করের নতুন পথ
এলোমেলো পথ পেরোবে ঘোড়ার পা, সঙ্গে অ্যালভারেজের মত।

আবার হার্টবিট শান্ত,কেউটে বিলাসী,নিরুপায় টর্চ
শুধু হিংসার ভুলে হিংস্র,xender এর আগে করে নিও সার্চ।

শেষ পথে কিছু কঙ্কাল আর নুড়ি পাথরের ভিঁড়
পাহাড়ের পথে শঙ্কর হারিয়ে ফেলেছে নীড়।

গুহা চেনা আছে পথ চেনা নেয় আটকে পরেছে
প্রান
সিনেমা হলে গিয়ে দেখে নিও  AMAZON     অভিযান।









বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৭

     [প্রানের জন্য]
                     সুদীপ্ত সেন(পাইকর,বীরভূম)

 ছুটছে কত গাড়ীর চাকা
           ভোগ বিলাসের উদ্যগে
 গিয়ার ফেলে দাঁপিয়ে বেড়ায়
                        লড়ির চাকা খুব বেগে

কখনও শেষে গাড়ীর চাকায় স্থান পেয়েছে অনেক রাত
কিংবা আবার ওভার টেকে মদের নেশায়
করেছে মাত

এমন কতই কহিনুর জেনো শহর জুড়ে প্রান
হারায়
তবুও চাকা আইন মেরে কহিনুর ভাঙে সর্বদায়।

শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৭

আকাশের নীচে

ছবির দিকে তাকিয়ে ছবিই দেখেছি শুধু
পেছনের কিছু ঘাস ক্যামেরার কৃত্রিমতায় ম্লান
দূরে  মৌমাছির দল হয়তো তৈরী করছে মধু
আর আমি শুকতে চেয়েছি তোর কথা বলা চুলের ঘ্রান।।

কোনো এক অজানা স্বপ্নে মন পেতে চেয়েছিলো তোর
সঙ্গে দু- একটা কথা বলবো বলে স্থির হলাম
তোর লেখার সাংঘাতিক তেজ ঘুরিয়ে দিলো গল্পের মোড়;
শেষে তোর চোখের দিকে তাকিয়ে আমি হারিয়ে গেলাম।।
               ( ডট.পেন)
                 🌈🌈🌈🌈


                            

বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭


আজ ১৫ ই নভেম্বর প্রকাশ পেলো জলফড়িং ওয়েব ম্যাগাজিন। সুন্দর লেখা আর অন্য স্বদের জন্য কোনো কাঁটাতার না মেনেই জলফড়িং।
আমরা প্রথম বার কাজ করছি ভুল হলে ক্ষমা করবেন।
লেখাগুলোতে  ভালো মন্দ কমেন্ট করুন লাইক দিয়ে এরিয়ে যাবেন না, কারন একজন অভিনেতা যেমন হাততালি চাই তেমনই লেখকরা চাই কমেন্ট।
 
( যদি আপনাদের জলফড়িং কে ভালোলাগে তাহলে অবশ্যই জানাবেন)

                ♦সূচিপত্র♦
           
কবিতা                                   কবি

নষ্ট মেয়ে                      কেয়া অধিকারী

হয়ত মরতে পারি            বৈশাখী চ্যাটার্জি

রুপম দেহি                      সন্দীপ দাস

হতে চাই ক্যাকটাস             মৌসুমি ভৌমিক

ধূলিকণা                        গোলাম কাদের

ইচ্ছেপত্র                         সঞ্জয় সোম

তোমার শহরে                  দেব্ব্রত

আনন্দ তুমি কোথায়           রমলা মুখার্জি

তোতে মরণ আমার হোক   ফিরোজ আখতার

বিবেক                         আক্রম রাজা শেখ

আমিই দায়ী                    কামাল হোসেন


তুমি তো ধ্রুব                সুদিপ্তা পাল

যন্ত্রণা পিয়াসী                মহঃ আসিফ ইকবাল

সুখ                           রনিতা ভট্টাচার্য

ছিন্ন বন্ধন                    পুনম দেবদাস

স্বপ্নে                          নুর নেহার খাতুন

অ্যাসিমিলেটিং             অনুরূপা পাল চৌধুরী

সময় কাটেনা                 সঙ্গীতা পাল

জাতির ভবিষ্যৎ             অমরেশ বিশ্বাস

অ্যাসিডিটিক মজলিস       জ্যোতির্ময় মুখার্জী

শিশুত্ব                          সুনন্দ মণ্ডল

হাওয়াদের রঙ নেই           সুশোভন সেন

ভিখারি                           সুদীপ্ত সেন

সময়                          অভিষেক মিত্র

প্রেমের জন্য                   সুদিপ্তা পাল

এক অবহেলিত পথচারী     উইলিয়াম সাজিদ সুলতান

নিরক্ষীয় শহর             জয়দীপ রায়

স্বাধীনতার ইস্কাবন       সুদীপ নীল তন্তুবায়

 
শিউলি সত্ত্বা                  অর্ণব মণ্ডল

নারী ব্যথা                       মিলি ঝা

                 *********
 গল্প                               লেখক

আগ্নেয় গিরি                 সোম দে

আমি চোর নই         শ্যামাপদ মালালার

ভূতের বিয়ে              পবিত্র চক্রবর্তী

হার জিত                পায়েল খাড়া

রাতুল                   আবু আইয়ুব আনসারী।

বৈশ্যাম্পয়ন              পিনাকি


{ জলফড়িং এর আত্মপ্রকাশ সংখ্যায় }
     
   ♥আমি অতিথি তোমারই দ্বারে♥


   ১.) লেখিকা শ্রীমতি ভারতী ধর  মহাশয়া(Sampadak,Unmana Patrika.Mollarpur,Birbhum..)

  ২.) লেখক শ্রী সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায মহাশয়(সি এস আই আর কর্মরত ও বিশ্ববঙ্গ বাংলা সাহিত্য একাডেমী ও যুথিকা সাহিত্য পত্রিকা থেকে কাব‍্যশ্রী সন্মানিত কবি)

  ৩.)লেখিকা শ্রীমতি শাশ্বতী ভট্টাচার্য মহাশয়া( CTN Kolkata TV তে নক্ষত্রাণি কবিতার কোলাজ নামে কবি ও কবিতার অনুষ্ঠানের  সঞ্চালিকা)

  4.)লেখক শ্রী কুমার প্রনবেশ চক্রবর্ত্তি মহাশয়( কল্পনা সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক)

  ৫.)শাল্যদানী রুপম

  ৬.)বাবলু বাউরি

  ৭.)  আরিফুল ইসলাম

   ৮.)ব্রতীন বসু

  অতিথিদের লেখা
   ----------------------------




১.)
 ডানা মেলে ধরো
                     ভারতী ধর

জলফড়িং, জলফড়িং, তুমি বুঝি -,

জল হতে উঠে এলে,

জলপরীর মতো ভেজা নয়, ভেজানো

ডানা দুটি মেলে।


ডানা হতে ঝরে নাতো জল,

পৎ পৎ ঝরা নীড়ে নেই কোলাহল,

ডানা হতে ঝরে পড়ে কাব‍্যের মালা,

আড়ালেতে বসে কত লেখনীর মেলা।


এখন তো সবে ভোর,

রঙ তুলি উঁকি মারে আকাঙ্খার আকাশে,

জমায়েত শিশির বিন্দু,

ঝরে যায় হৃদয়ের গভীর বিশ্বাসে।


সুখ আর সখের কত নীরব সোহাগ,

দুঃখ আর শোকের কত রাগের বেহাগ,

রঙের পাহাড় বলে, জলফড়িং - ডানা মেলে ধরো,

তোমাকে হতেই হবে বড়ো, অনেক বড়ো।।

                                                   



২.)    

🌼তুমি নেই🌼
কবি:কার‍্যশ্রী সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়
তারিখ ০৯/১১/২০১৭

ওই দেহখানি দেখি শায়িত আজ,
কত পূর্বজন্মের স্মৃতি মনে পড়ে,
সহস্র হারানো আনন্দ দুঃখ নয়নে
জন্মান্তরে যেন ঋতুর গানে।

অনন্তকালের আমার সুখ দুঃখ‌ বেদনা,
এই জগতের মায়াকাননে মাঝে।
জগতে অমৃতাংষুর আলো কত
তোমার বিরহ ব‍্যাথা আজ মনে যত।

বহুদূরে তুমি আজ সহস্র যোজন দূরে,
কত হাসি কত ভালোবাসা আর অশ্রুজলে
মনে ভাসে সেই সব কথা আজও
তোমার শায়িত দেহ দেখে  নিরবতার মাঝে,
জীবনের মধুর স্মৃতিগুলো গুমড়ে কাঁদে।





৩.)
 স্বপ্ন যাপন - শাশ্বতী ভট্টাচার্য
======================

এই যে তুমি আমায় বোঝ , আমার এ ঘর শূন্য রাখো
এটাই আমার পছন্দ না,
মেঘের থেকে কাজল নিয়ে আমার চোখে রাত্রি আঁকো,
এটাই আমার পছন্দ না |
দিনের আগেই শাটার তুলে সূর্যটাকে ঝুলিয়ে দাও
মনের থেকে একটু পুবে,
এটাই আমার পছন্দ না |
বৃষ্টি থেকে বারুদ খুঁজে বসন্তকে আগুন মাখাও
সেই আগুনে ফাগুন লাগে
সেটাই আমার পছন্দ না |

যখন আমার মৌনতারা তোমার সাথে গল্প করে
মোটেও আমার পছন্দ না |
এইযে তোমার গরম দুচোখ, আমার শীতল আঁকড়ে ধরে ,
সেটাও আমার পছন্দ না |
তোমার সাথে একলা হওয়া রাত দুপুরে স্বপ্ন যাপন
জেনো আমার পছন্দ না ,
শব্দবতী আমার ভেতর শব্দ যখন ঘুমিয়ে পড়ে
তোমার সাথে পাগল হয়ে শূন্য জুড়ে বন্য হওয়া
একটুও অপছন্দ না ||





৪.)
      —প্রাক্তন—
(প্রনবেশ চক্রবর্ত্তি/কুমার প্রনবেশ )

নিঝুম শীতল সান্ত নিশীথে নিদ্রা নিরুদ্দেশী
জানিনা কোথায় গিয়েছে হারায়ে স্বপ্ন পুরের বাসি।
আমি আছি জাগি নিদ্রা বিরাগি কাটেনা রাত্রি অপার,
স্মৃতীর তরীতে করি আরহন করিছি সিন্ধু পার।
তোমা হতে আজ যাইতেছি  দূর তোমারি সুখের তরে,
তুমি যে করেছো আমারে অপর নিজ মন হতে দূরে।
অশ্রু সাগরে ডুবিয়াছে নাও প্রবল সমুদ্র ঝড়ে,
হবে না যে আর খেয়া পারাপার ফিরিব কেমন করে?
ভালবাসা ছিল পিছু টান মোর ছিল মায়া বন্ধন,
সময়ের সাথে গিয়াছে ছিড়িয়া আমি আজ প্রাক্তন।
তাই হবে যেতে দূর হতে দূরে বিঁধিছে কন্টক চরনে
তবু যাব চলি হব না কো বাধা কারো সুখ প্রাঙ্গণে।
বিধাতা মোরে রাখিলে জীবিত বাঁচিব কিছুটা কাল,
আজি অন্তরে মৃত আমি প্রানী জিবীত কায়ার জাল।
কামনা করিব হইয়ো সুখি থেকো সুখে চিরদিন,
আঁখি জল হোক্ শুধু সাথী মোর  থেকো তুমি গ্লানিহীন।
রুব্ধ দুয়ারে একলা একাকী ভাবিছি অন্তহীন,
আমারে ভুলিয়া আছো তুমি ভাল দীর্ঘ কয়েকটি দিন।
কুহেলিকা শুভ্র নীরব যামিনী পত্রে শিশির রব,
রাত্রি প্রহরে  নিদ্রা বিরাগি জাগিছি জিবীত শব।।




৫.)
 *ভাঙনের পথে*
       *শাল্যদানী*

*এক*

আমায় ভালোলাগলে আপত্তি নেই…
ভালোবাসলে আপত্তি আছে ।
তোমায় জড়িয়ে ধরতে ভালো লাগে বটে,
কিন্তু ভয়ও লাগে পাছে তোমায় ধর্ষন না করে ফেলি…
কারন নিজের ওপর ভরসা থাকলেও নিজের আবেগের ওপর ভরসা নেই…!

*দুই*

চলো আবার আগের মতো গল্প করি…
কাজের চাপে ভুলেছিলাম তোমায়,
কিন্তু এই অলস সময় কাটছে না।
চলো আবার আগের মতো নিষিদ্ধ হই…

*তিন*

হটাৎ করে প্রেমে পড়্লাম…
এই দৃশ্যটাতো চিত্রনাট্যে ছিল না…
লাইট-শাউন্ড-ক্যামেরা-অ্যাকশান বলার আগেও-
আর একটা গল্পো থাকে যা সিনেমার থেকেও অনেক দামি…

*চার*

ভালোবাসা কি তা বোঝার অনেক আগেই-
ভালোবাসি বলতে শিখেছিলাম।
সত্যি বলতে কি আজো ভাবি
ভালোবাসাটা আসলে কি আর কোথায় থাকে।

বিশ্বাস আর ভরসা শব্দ দুটো আমায় হাসায়।
স্বর্গের নন্দন কাননের পারিজাতের মতো-
স্বপ্নময় একটা পরিহাস মনে হয়-
যা আমার চিত্রনাট্যে লিখতেও বেমানান লাগে।

চুল্লীটা আজো জ্বালিয়ে রেখেছি।
অপ্সরার মতো আজো ক্লান্তিহীন পরকীয়া।
ভালোবাসা ভিখ্যা করে বেড়ায় জীবনের রাজপথে-
'বাবু একটু ভরসা দেবেন!'

*পাঁচ*

একদিন স্ব্প্ন দেখো,
যেকোনো স্বপ্ন,লাল-নীল বা সবুজ…
আমায় বুঝতে পারবে,
যদিও বোঝাটা দরকার এমনটা নয়…!

তারপর তাকিও জানালার বাইরে
মনেমনে নিজের একটা গল্প লিখো।
আমার গল্প বুঝতে পারবে,
যদিও বোঝাটা দরকার এমনটা নয়…!

তবু মনে রেখো অল্প-সল্প
সত্যি বলছি…একটি মিথ্যে গল্প…!

*ছয়*

শরীরতো কবেই পেয়েছিস
তাই মনের খবর রাখতেই ভুলে গেছিস।।

বিজনে বসে ভাবি দুবেলাই..

৬.)
ছুটি কিনতে চাই...
           বাবলু বাউরী

কেউ কি জানো..
   ছুটি কোথায় বিক্রি হয়?
আমাকে ছুটি কিনতে হবে....

আমি এবার ছুটি চাই।

এখানে নিত্য বিক্রি হচ্ছে খবর।
   বিক্রি হচ্ছে হিংসা,
প্রতিদ্বন্দ্বী, আর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।

টাকার স্কুলে বিক্রি হচ্ছে রক্তাক্ত শিশুর শব।
   বিক্রি হচ্ছে গনতন্ত্রের  আঙুল।

এখানে বিক্রি হচ্ছে সন্ত্রাস,
        মৃত লাশের 'পরে সভ্যতার বাস।

কিন্তু আমি তো এগুলো চাই না!
  এগুলোর জন্য আমি বড় হইনি!

দেখে  আমার সংশয় হচ্ছে।
আগামীকাল কি বিক্রি হবে রবীন্দ্রনাথ?
    বিক্রি হবে কি ইডেন গার্ডেন?
সেই কবেই নিলামে উঠেছে ধর্মতলা।
      ঘুণ ধরেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।
উপাচার্যের টেবিল_টেবিলের কলম আজ আক্রান্ত।

বিগত কয়েক দশক নির্বাসিত পুরুলিয়া,
     ক্ষুধার্ত মানভূমের লোকশিল্প,
ঝুমুর,ছৌ আর ডহরের ঝিঙাফুল।

আমি আজ ছুটি চাই।
  আমার চুরি গেছে পড়ন্ত বিকেল,
লাল মাটির ধুলোয় ভেজা ফুটবল।

সন্ধ্যা হলেই ভেসে আসে মদের গন্ধ।
  গতকাল মৃত্যু পেল অন্তঃসত্ত্বা বোবা পাগলীটা।
তাই বুঝি আজ রক্তাক্ত বাসি চোখ শরীরের গন্ধ শোঁকে..

 এসব দেখে যাওয়া আমার  অভ্যস্ত নয়...
  সখ নেই  রাজনীতি করে আখের গোছাবার

আমি ছুটি চাই।
   এই কয়েকদিন ছুটি পেলেই
আমি গড়ে আনতে পারবো আলোয় মোড়া পথ।
বিবেকের কুঁড়েঘর।
  আর একটা দেশালাই কাঠি।
সব কিছুর পুড়িয়ে ছাই করার এবার সময় এসেছে।

৭.)রাজার ধর্ম থাকতে নেই
আরিফুল ইসলাম সাহাজি

রাজার কোন্ ধর্ম থাকতে নেই ,প্রজার ধর্মই রাজার ধর্ম হওয়া উচিত ।
রাজার ব্যক্তিক ধর্ম যদি
থাকে ,এবং সেটা তিনি যদি চান প্রতিষ্ঠা করতে
তাহলে দেশে নেমে আসে নিন্মচাপের মেঘ ।

ধর্ম আর রাজনীতি পৃথক মেরুর
পাশাপাশি থাকলেই সংঘাত ,
একটি ব্যক্তিমনের ,অন্যটি সর্বজনীন .....

রাজার ধর্ম থাকতে নেই ,যদি থাকে
সে রাজ্যে প্রজা থাকতে নেই
থাকুক রাজা তাঁর ধর্ম নিয়ে ।


৮.) ফিউস
       ব্রতীন বসু

অদ্ভুত শক্তি চল্লিশ পাওয়ারের বালবটার
একবার জ্বাললেই হল
আনাচে কানাচে পৌঁছে যায় আলো নিয়ে
কোথায় ফাটল কোথায় মাকড়সা
টিকটিকি,ভয়,যা সব ভয়
সব বুজিয়ে দেয়
আলো।
অদ্ভুত শক্তি চল্লিশ পাওয়ারের কলঘরের বালবটার
একবার জ্বাললেই হল।
আমি সেদিন ভূত দেখেছিলাম প্রথম
যেদিন সুইচ দিলাম জ্বলল না বালবটা
টক টক শব্দ।
অন্ধকার জামার বোতাম বন্ধ কলারের মত।
ছায়া নাচানো মোমবাতি।
ফাটল গুলো জ্যান্ত হয়ে উঠছে ক্রমশ।
পরের দিন বাবা ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি ডেকে বদলে দিয়েছিল বালবটা
কিন্তু আলো পারেনি আর বুজিয়ে দিতে সব।

ছেলেবেলার ফিউসটা একবার কাটল তো
জুড়ল না আর মাইরি।

★★★নষ্ট মেয়ে★★★

★★কেয়া অধিকারী★★

তোমরা আমায় নষ্ট মেয়ে বলো-
    তাতে আমার কি-ই বা এমন  হল,
বরটা আমার অকালে চলে গেল-
    ছ'মাস পর খোকা কোলে এল।

ক্ষিদের জ্বালায় খোকাকে কোলে করে-
    বাটি হাতে ঘুরেছি দ্বারে-দ্বারে,
আপনজনরাও গেছে দূরে সরে-
    নেয়নি আমার দুঃখ ভাগ করে।

দুঃসময়ে জুটল এক মাসি-
    কাজের নামে দিল আমায় ফাঁসি,
নিয়ে গিয়ে করল আমায় দাসী-
    দেহ বেচে হলাম সর্বনাশী।

তখন থেকে আমি নষ্ট মেয়ে-
    আমি খারাপ অন্য সবার চেয়ে,
খোকার পেটে দুবেলা অন্ন দিয়ে-
    আমি আজ বাবুর ঘরে রক্ষিতা মেয়ে।

খোকা যখন একটু বড়ো হল-
    মাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিল,
যার তরে আজ নষ্ট জীবন পেল-
    সেই খোকা আজ মাকেও ভুলে গেল।।
হয়তো মরতে পারি
             বৈশাখী চ্যাটার্জি

হয়ত মরতে পারি -হয়ত আগুনও হতে পারি ।
হয়ত শেষ বারের মতো শেষ শব্দটা লিখে জ্বালিয়ে দিতে পারি ।
একটা আধটা দাবানল আমার কলমের কালি থেকে যদি উঠে আসে আসুক ।
হয়ত আমার পৃথিবীর সাথে আরও দু চারটে পৃথিবী পুড়বে ,
শব্দরা যে নিঃশব্দ দেশলাই হতে পারে সেটা আজ বুঝেছি ,
আমার পৃথিবী কখনো হাসেনি ফাগুনের বাতাসে -
যে তুমিতে ব্যর্থ করেছি জীবনের প্রত্যেকটি সার্থকতার দাবী ,সেই তুমি কি অনায়াসে আমাকে দাঁড় করিয়েছ ভ্রষ্ট লগ্নের সামনে ।
তুমি ছাড়া পৃথিবীতে খোলা নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে দেখেছি সেখানে শুধু নাইট্রোজেন গ্যাস ভরা আছে ।
আমার চোখের কালো কাজল যখন প্রেম নিয়ে এসেছে আমারই অপ্রত্যাশিত প্রত্যাশায় ,
তখন দেখেছি সেই প্রেম কি সহজে মৃত্যু উপকূলে নিয়ে আসে আমাকে ,
তারপর হয় শব্দের সংঘাত -সেটাই আগুন জ্বালায় -
হয়ত মরতে পারি তবে শেষ শব্দটা লিখে । 
রুপম দেহি
         সন্দীপ_দাস ( প্রকাশক, জলফড়িং)

রুপম দেহি জয়ং দেহি সুখং দেহি মা
বন্দে তুঁ'সে সব নারী , ত্রাহি ত্রাহি মা ।।
অসুর ভরা তুঁ'হার মেদিনী আজি ,
পথে পথে ঘোরে অসুর দানব সমাজ ।।
নারী রক্ষা ভিখ মাঙ্গে , তুঁ'সেহি জগৎ প্রধান
কালী তুঁ'হি , তুঁ'হি দুর্গা , অসুরদলনী দেবী মা ।।
শক্তি তুঁ'হি , ভক্তি তুঁ'হি , তুঁ'হি শ্রদ্ধা অপার
মুক্তি দে , শক্তি দে , তুঁ'সে জগ করে পুকার ।।
একবার দেখ , হালত ভারত মাকে
উরা কাটতে চায় অঙ্গ অঙ্গ , বন্দুকের ডগায় ।।
অব কৌন আপনা বল , তুঁ'হার মতন
পুকারে সন্তান তুঁ'হার , জাগ যা মা এখন ।।
শক্তি দে , ভক্তি দে , ধর্ম হমার সঙ্গ রহে
রুপম দেহি জয়ং দেহি যশ দেহি দৃষো জয়হে ।।
হতে চাই ক্যাকটাস
                    মৌসুমী ভৌমিক


চারিদিকে শুধু নেই।
থাকলেও তোমার নাগালের বাইরে।
এই নেই এর পৃথিবীতেও বেঁচে থাকতে হবে।
তাই হতে চাই ক্যাকটাস।

জল নেই, খাদ্য নেই
তবু ক্যাকটাস বাঁচে তো মরুভূমিতে।
তাই যতই হোক মাৎসন্যায়,
যতই হোক জুলুম-
আমি হতে চাই ক্যাকটাস।

এই সুন্দর পৃথিবীর বুকে আরও কিছুদিন বেঁচে থাকতে চাই।
এই পৃথিবীর বুকে বয়ে যাওয়া হাওয়া -
আরও কিছুদিন বুক ভরে নিতে চাই -
তাই আজ আমি নিদেনপক্ষে ক্যাকটাস হয়েও বেঁচে থাকতে চাই।

হ্যাঁ, আমি এই গনগনে উত্তপ্ত  পৃথিবীর বুকেই বেঁচে থাকতে চাই।
হোক উষ্ণায়ন, যত বরফই গলুক মরুদেশে,
মরুভূমিতে মরুদ্যান না থাকুক -
আমি ক্যকটাস হয়েই এই মরুভূমিতে বেঁচে থাকতে চাই।

                          ধূলিকণা

                      গোলাম কাদের


চোরাবালি থেকে অপ্রত্যাশিত জন্ম।

বামনের ছদ্মবেশে ধুলোর সাথে সংসার পেতেছি

পোড়া শরীরে আজও স্তনের স্বাদ !

ধুলোর আদর ব্যস্ত হয়ে বাজার মাতায়।।
ইচ্ছেপত্র
                     সঞ্জয় সোম

ইচ্ছেপত্র হাতে নিয়ে একা সূর্যের আলোর কাছে

অনেকটা সময় পেরোলাম
আকাশ দেখলাম বাতাস দেখলাম
বৃষ্টি দেখলাম            জোছনা দেখলাম প্রচুর

মানুষের জন্য মানুষের কাছে যাইনি
লিখলাম নিজের অপরাধ    
আয়নায় তাকিয়ে দেখলাম নিজের জঘন্য মুখ

স্পষ্ট দেখছি চার্দিক থেকে অন্ধকার এসে
ঘিরে ধরছে আমাদের

বোবা একটা জীবন কত কি না দেখলো  !

ইচ্ছেপত্রে  লিখেছি আমাদের স্বকাল

ভালোবাসতে পারলে প্রকৃতপক্ষে
কোথাও কি যেতে হয় ?

সূর্যের আলোকে সাক্ষী রেখে লিখছি নিজের  ইচ্ছেপত্র।
 তোমার শহরে
                  দেবব্রত
                  ‎
তোমার শহরে কলম দিয়ে আঁকতে পারি কথাকলি,
তোমার শহরে বড্ড একা আমার চলা ব়াস্তাগুলি ।
তোমার শহরে শরৎ রোদে প্রানের আবেগ পূর্ন জোয়ার,
তোমার শহরে ছাদের উপর তোমার জন্য একটু কেয়ার।
তোমার শহরে স্বরলিপি অভিধানের ভিতর অন্তরালে,
তোমার শহরে স্নান করে মন তোমার গন্ধে তোমার জলে।
তোমার শহরে ধূলোয় নেশা কাঠবিড়ালী লেজ গুটিয়ে ,
তোমার শহরে ট্রামের লাইন দাঁড়িয়ে আছে প্রেম জুটিয়ে।
তোমার শহরে আকাশকুসুম ইচ্ছে গুলো বাঁধনহারা,
তোমার শহরে প্রেমনিবেদন অপেক্ষাতে হাজার তারা।
তোমার শহরে ছেড়া চটি, তোমার শহরে একটা গোলাপ ,
প্রথমবার তোমার সাথে ,তোমার শহরে আমার আলাপ।।
 আনন্দ তুমি কোথায়
                      রমলা মুখার্জী

কিসের এত উগ্রতা, কিসের এত দ্বন্দ্ব?
মহাবিশ্বে ছড়িয়ে অসীম সুরেলা সুখ-ছন্দ ।
মন্দ-ভালোর বসুন্ধরায় খুশির খুসবু ছেঁকে......
সুখ- আতর অঙ্গেতে নিই না একটু মেখে ।
হৃদয় মাঝে অমৃত আর গরল পাশাপাশি...
গরলকে গুলি করে ভালোকে ভালোবাসি ।
কালো সাদার দোলাচলে মিথ্যে ঘুরে মরি....
অমানিশা সরিয়ে দূরে একমুঠো রোদ ধরি ।
আনন্দ গান গাইছে আকাশ শুনি কান পেতে....
হিংসা দ্বেষ করে শেষ উল্লাসে উঠি মেতে,
এসো, সবাই আনন্দে উঠি মেতে ।
তোতে মরন আমার হোক
            ফিরোজ আখতার

আমার গহন রাতের রাতপরী তুই,
শীতল দীঘল চোখ ।
ইচ্ছে করে ডুব দিয়ে রই,
মরণ আমার হোক ৷
স্বপ্নদেশে-
ভালোবেসে
তোর লালচে ভিজে ঠোঁট-
তোতে মরণ আমার হোক |

তোর সফেন চোখের লবণ সাগর,
অশ্রুজলের স্রোত -
পান করেছি দুহাত ভরে
তোর ডাগর ডাগর চোখ !
তোর গালের আভা
মনোলোভা,
আমার ওষ্ঠে জমে ক্ষোভ -
তোতে মরণ আমার হোক |

আমার অমানিশির জলপরী তুই,
পাতলা চেরা ঠোঁট ৷
গভীর নাভি বশ করেছে
তোর শত্রুুদলের জোট |
মারণবাণে-
আঘাত হানে
আমার বিদ্ধ বুকে লোভ-
তোতে মরণ আমার হোক ৷
বিবেক
              ‎    আক্রম রাজা শেখ

ছেলেবেলার 'দুটি স্বজনের'একজনের
হলাম আমি আজ মাটিহারা ।
আজকের আসর শেষে হবেনা
 জায়গা তার একমাত্র কবর ছাড়া ।

দুনিয়ায় দিতে পারিনি আমি
সময়কে পরিহার।
 কান্না ফেটে যাই,চুল ছিড়ে খায়
 মাঝে মাঝে বিবেকের কামড় ।

আমি সত্যি কি নিরুপায় হতবাক ?
হতভাগাদের মতোই কেউ পাচ্ছে
 না শুনতে কেবল 'একবার
দেখার জন্য' আমার নিরব ডাক।

আমি নিজেকে পারলেও
 সামলাতে
"জোৎ্স্নাময় আলোকের ছিদ্রে"
অবহেলিত বিবেক লেগে থাকবে
আমার দুহাতে ।
আমিই দায়ী
                    কামাল হোসেন

কলিঙ্গের রণপ্রাঙ্গণে দেখেছিলাম তোমাকে,
       কোমরে কোমর বন্ধক তোমার
       মস্তকে লোহার টুপি আর
       হস্তে চিকন তরবারি,
শ্বেত অশ্বারোহিনী তুমি মনমোহিনী
মুগ্ধ করেছিলে আমাকে।

তখনও দেখিনি আমি তোমার মুখমন্ডল,
      দেখেছিলাম শুধু তোমার
      মায়াবী চোখ,এলানো কেশ,
      আর উদ্দাম গতি,
নন্দিনী ওগো মন্দাকিনী,কর্তব্যের জালে
আমার প্রেম-প্রীতি হয়েছিল পন্ডল।

তুমি ছিলে কলিঙ্গের রক্ষিণী
        আর আমি ছিলাম হানাদার,
        তোমার নিপুণ আঘাতেও
        শুধু আমার ব্যঘাতে
মৃত্যু হয়েছিল তোমার,
আজও ফেটে যায় বুক,কাঁদে প্রাণখানি।

অশ্ব থেকে পর্যবসিত হয়েছিল ভূতলে
      আর মস্তক হয়েছিল অনাবৃত,
      বক্ষ বিদীর্ণ করেছিল বিষাক্ত তীর
      আর হারায় আমি প্রেমের নির।
তোমার মরণ যে আমার কারণ-
তাই আমার মস্তক নত তোমার পদ তলে।
তুমিতো ধ্রুব
                            সুদীপ্ত পাল

দূর থেকে ভেসে আসে সম্পর্কের হাতছানি
যার ক্ষমতা আছে সব ধ্বংস করার,
সে এক এক করে ভাসিয়ে দিতে পারে সব কিছু,
পারেনা শুধু আমাকে।

আমিও পারিনা ভালোবাসাকে খাঁচাবন্দি করতে,
সে যেমন স্বাধীন তেমন প্রবাহমান।
অনেকে চেষ্টা করেছে রঙিন খাম সাজিয়ে---
নিরক্ষরেখা বরাবর হেটে দেখেছি
সে সব ফেলে আসা যায় মাঝপথে,
আর উপেক্ষা করাযায় প্রেমের শিকল।

তবুও প্রয়োজন ফাকা ঘর পূরনের,
যে ঘরে পরে থাকবে তোমার অন্তর্বাস।
যখন ক্লান্ত হয়ে ফিরবো, আর
ফিরে আসবো অনেক হাতছানি উপেক্ষা করে,
না হয় শুনিও দুকথা মন ভরে আমাকে।
আগলে রেখো যেন ভেসে না যাই,
খাঁচা বন্দি করো যেন পালিয়ে না যাই।

মরুপথ যত দুর্গম হোক, মানুষতো যাবেই
আর আমিও আশ্রয় নেবো কোন আঁচলে,
তোমার হাতছানির প্রয়োজন নেই
তুমিতো ধ্রুব,  তোমাতেই ভেসে যাবো আমি।
যন্ত্রণা পিয়াসি
          মহঃ আসিফ ইকবাল
( সম্প্রচারক, জলফড়িং)

যন্ত্রণা যে মধুরও হয়, তোমার কাছে শেখা
এখন মাঝে মাঝেই স্বেচ্ছায় যন্ত্রণাকে ডাকি
কৃতজ্ঞতা জানিয়েই আমার এই সামান্য লেখা
তুমি চলে গেছ, ভিড়ের মাঝে আমি একাকী থাকি।

তোমাকে পাইনি বলেই আমি অনেক কিছু পেলাম
আমি কি তোমায় কখনও ছোট করতে পারি?
অপরিণত মনে হয়ত পাগলামি করে ফেলেছিলাম
আমায় ক্ষমা কোরো, ভুলটা ছিল আমারই।

তোমার চোখের ভিতর কবিতার পান্ডুলিপি
চিত্র শিল্পীর রঙ লেগে আছে তোমার আঙুলে
আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তোমায় চেয়ে দেখি
অনন্ত সুন্দর নেমে এসেছে তোমার মাথার চুলে।


যন্ত্রণাকে আপন করেছি শুধু কবিতার লোভে
আমার চোখে যখন জল এল তখন সূর্য ডোবে! 
             সুখ
       রনিতা ভট্টাচার্য্য

অন্ধকারের কালোর মধ্যেও যেন সুখ আছে
উন্মত্ততার সংজ্ঞা নিয়ে সুখ হাতরে মরি
জীবনের কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ি না আর
এক লহমায় বুঝে গেছি জীবন বলে কাকে

বিরহের কাঁটা যখন প্রতিটি নিশীথে
মনে করিয়ে দেয় তোমার কথা
আমি গোপনে শুনি বাঁশির সুর
যে সুরের প্রতিটি ব্যথা তোমার রচা

আকন্ঠ অমৃতে স্নান করেছি একদিন
বাঁধা দেওয়ার মত কতিপয় কালোও
সেদিন উপস্থিত ছিল না অনুরাগসভায়
আজ স্মৃতির সেই পটে বাস্তব চুঁইয়ে পড়ে।
          ---------------

ছিন্ন বন্ধন
                        পুনম দেবদাস

বিদায় আবেগে হঠাৎ করেই ভাসিয়ে তরী,
ভালো লাগার নিত্য নতুন সজ্ঞা তৈরী করি।

কালো মেঘে বৃষ্টি নামে, আকাশ ফেটে চৌচির,
ভালোবাসার বন্ধনেতে এ কেমন কঠোর প্রাচীর!

কান্না ভেজা আগুন লাগে আমার এ বুক জুড়ে,
ছেড়ে যাওয়ার দুঃখ আমায় খাচ্ছে কুঁড়ে কুঁড়ে।
পাবলিক ইস্কুল  
           ‎          নুরনেহার খাতুন
           ‎                              
পিঠে বোঝা নিয়ে খোকা
বিদ‍্যালয়ে যায়‌।
দেশ দুনিয়ায় যত ব ই
সব যেন তার কাধে রয়।

এতভারী ব‍্যাগ নিয়ে হায়
কেমন করে যাও,
আচ্ছা খোকা একটু থাম
একটা কথা ক ও।

তোমার সে সব স্কুলে
ইংরেজী তে পড়ায় খালি।
বাংলা পড়া হয় না সেথায়
বাংলা যে হায় হ‍্যাংলামি।

ইংরেজি তে বললে কথা smart হয়।
বাংলাতে বললে কথা সবাই বলে পচা বাঙালি।
বাংলা কর  অবহেলা
এটাই তোমার মাতৃভাষা
মোদের গব্ মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা।


কাড়ি কাড়ি লাগে টাকা
মাস না যেতেই ট‍্যাক টি ফাকা
কেমন করে দিচ্ছে টাকা যারা পড়ায় তারাই জানে।
সব কিছু তেই লাগে টাকা হাচতে গেলে কাশতে গেলে।
থাকুক টাকা নাই বা থাকুক দিতেই হবে মাসটা গেলে।
আচ্ছা বল বিদ‍্যা আবার যায় কি কেনা?
এখন আবার বিদ‍্যালয়ে বিদ‍্যা বিক্রির চলছে খেলা।

এটাই তোমার মাতৃভাষা।
অ্যাসিমিলেটিং
          অনুরূপা পালচৌধুরী
।১।
চোখতারা।পলক ছুলে চুঁয়ে পড়ে জলকাজল
আয়না আবডালে কুচানো কাচ
কিছুটা লুকানো অস্থিগুঁড়ো
সরলরেখা থেকে ত্রিকোন।কৌনিক সুখ।চেটে নিলে ০তার বিষাক্ত  থাবা
দুর্বার গতি।লতিয়ে যায় সবুজ সৃষ্টি
চাঁদ জরায়ুতে ঢুকে যায় জ্বলন্ত আনকোরা লাভা

|২|
পরাগসমীকরণত্রিঘাত।ভেজা জঞ্জাল।
এক মুট গাঢ় জলে গলা ডোবালেই নোনতা বিষ্ফোরণ
ধূসর ডাল ভর করে অপেক্ষমান জীবন
মিশরীয় লাল।আগাছার উদবৃত্ত
খুঁড়ে নেয় পোড়া মাংস
বৃত্ত ছিঁড়ে ঘন হলুদ।থ্রম্বোসিস
B বর্ণ: বারোমেসে সংকেত

|৩|
শীতলজল।নাভিচ্ছেদে সেমিকোলন
ফ্যানাফুঁতে উড়ে যায় বাদামী রহস্য
একান্ত।বাতায়ন পেড়িয়ে গলে পড়ে বিষবাষ্প
কাটাকুটি রাত।যন্ত্র মানবব্যোম
ফসফরাস জ্বলন।ইঞ্জেক্ট
দাহ্য ভালবাসায় গ্রহনের ছায়া
নগ্নতার আপেল।ফালি ফালি চাঁদ শিকার
আত্মকরনের অজুহাত। গোপন অভিঘাত

           


   
সময় কাটেনা
     সঙ্গীতা পাল

প্রেমে আছে অস্থিরতা আর স্মৃতি
কিছু ভালো লাগা মুহূর্ত নিয়ে রোজনামচা

দিন আসে দিন ফুরোয় প্রেম আসে না
ভালোবাসা কথা বলে না বহু বছর

শিউলি ফুলের গন্ধ এলেই শরতের কথা হয়
হাসি কত রকম মানুষের মুখ মেজাজ বদলে দেয়

বৃক্ষের থেকে নীরবতার ভাষা শিখতেই বারবার জঙ্গলের দিকে ছুটে যাই
আর মেঘ ছুঁতে ছুটে যাই পাহাড়ের দিকে

এভাবেই চুলের সাদা অংশগুলো প্রতিদিন আয়নার সামনে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে সময় কাটাই

1/08/15
জাতির ভবিষ্যৎ
                 অমরেশ বিশ্বাস

আমরা শিশু বড্ড ছোট
থাকি মায়ের কোলে
যা খুশি তাই করতে পার
ভেবো না তাই বলে।

ফোটেনি কথা এখনো মুখে
দেখতে সবই পাই
ভুল শেখানো ঠিক নয়তো
সেকথা বলতে চাই।

পাই শুনতে সকল কথাই
খোলা থাকে কান
বেফাঁস কিছু বললে জেনো
থাকবে না সম্মান।

সবাই জান আমরা হলাম
জাতির ভবিষ্যৎ
তাই দেখিও সকল সময়
শুধুই সঠিক পথ।
অ্যাসিডিক মজলিসে
                    জ্যোতির্ময় মুখার্জি


রাত্রিগুলো তোমার নিষিদ্ধ মুখে
               প্রতিটি সান্ত্বনা থেকে
চিলেকোঠার অ্যাসিডিক মজলিসে
                  ঝাপসা হয়ে আসে
যতটুকু আজ মোলায়েম ক্লান্তি
সাধারণ মানুষের সাবলীল হাহাকারে
                  জীবিত অথবা মৃত
অর্থহীন চিরকুটে নিরুদ্বেগ আঙুল
ছেঁড়া মুখ ও মুখোশের মাঝে
                          শান্তি খোঁজে



রঙচটা আঁটোসাঁটো বৃত্তে


শান্তভাবে রাত্রিকালীন সরীসৃপ
             তারও বেশি একদিন
রঙচটা আঁটোসাঁটো বৃত্তে
নাটকীয় সমস্ত কিছুই
               ভক্তিমূলক।দৃষ্টিকটু
____শিশুত্ব
         সুনন্দ মন্ডল ( সহ সম্পাদক, জলফড়িং)

আমি শিশু! আমি শিশু! আমি শিশু!

শৈশবের গন্ধ কাটেনি শরীরে,
হৃদয়ের পরতে পরতে সুকুমারবৃত্তি গুলির পরিস্ফুটন।

সারা জীবনকাল বয়ে নিয়ে যেতে চায় আমি,
শিশুর প্রাণজ্জ্বল আবেগ।
শিশুত্বে ভরে থাকুক অন্তর।
সরল কোমল প্রাক্ষোভিক চেতনার-
বিকিরণ ঘটুক পৃথিবীর নব সৃষ্টিতে।

শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পোঁছেছি,
ঝড়-ঝঞ্ঝা কালের শিশ্ন-
লাভা উদ্গীরণে বেরিয়ে আসতে চায়।
মাথা উঁচিয়ে নাচতে চায় সমাজ সংসারে,
বাস্তবিক পৃথিবীর মঞ্চে দাঁড়িয়ে নেতার ভাষণ
হতে চায়।

কিন্তু আমার অন্তর-সমুদ্র ঢাকা, কঠিন কপাট বুকে।

নান্দনিক সৌন্দর্যের বিকাশ শরীর মন জুরে,
শুধু সৌকুমার্য থেকে গেছি।
শিশুর সারল্য, কৈশোরের পাগলামি
এখনো কথায়, চেহারায়।

আমি বড় হতে চায়,
         অনেক বড়।
এটাই আমার সামাজিক চাহিদা!
তবে আমার 'আমি'টা যেন শিশুই থাকে।
হাওয়াদের রঙ নেই(এস.hhh)
-----------------------------------------------------
(@@সুশোভন সেন@@ )
                 ( সম্পাদক, জলফড়িং)

রাত জেগে তারাদের কখনও দেখেছ কী-
খুব কাছে গিয়ে চেয়ে দেখেছ?
তোমার চপল চোখের মণির মতোই
নেভে আর জ্বলে,জ্বলে আর বলে- কিছু কথা,
কি অসম্ভব সুন্দর তোমার হাসি-
অ্যারিস্টটলের দেশের রঙ্গমঞ্চ থেকে
আমাকে টেনে এনে ব্যস্ত করে,শান্তি দেয়,
আমি ইস্কাইলাস নই
তবু তোমার মিষ্টি চিৎকার আমাকে টেনে আনে।
হেঁটে যাবে একদিন,নামবে একদিন পাহাড়ের পথে?
রোজ রাতে যেমন নামো আমার ওপর-
জলপ্রপাতের মতো,
কখনও দেখেছ নিজেকে ?
না,না মেকআপ বক্স সামনে নিয়ে
নিজেকে সাজাবার সময় বলছিনা--
আমার মতো করে নিজেকে দেখেছ কী কখনও?
দেখো,ভূমধ্যসাগরীয় আলোকস্তম্ভ তুচ্ছ মনে হবে!
আমি শাহজাহানের মতো
তাজমহল বানাতে না পারলেও-
তাজমহল ঘিরে একশ হাজার পাক দিতে পারি,
জানি, হাওয়াদের কোনো রঙ নেই--
শুধু তুমি চাও যদি আমি হাওয়ায়
রঙ ভরে দিয়ে আঁকব লক্ষ স্বপ্ন!
শ্রাবণী,আমি আলেকজান্ডার নয়,
তবে বিশ্ব জয় করতে না পারলেও-
বিশ্বের সঙ্গে লড়াই করে কিছু টিউলিপ তুলে এনে তোমাকে দেবো!
শুধু সময় পেলে--নিজেকে একবার দেখো,
দেখো একবার আমার মতো করে।।
ভিখারী
             নাম -  সুদীপ্ত সেন

শহর থেকে শহর বলে নিঃস্ব
স্টেশন থেকে স্টেশনে কলরব
যেমন ছিল সবই তেমনই আছে
ওরাই হলো ভিখারী বেশে শিষ্য।।

তখন ছিল অন্যরকম সকাল
     ওদের কাছে নেই কিছু তার ভেদ
ওরা ভিখারী! মানুষ তো নই
    করছে সবাই ওদের প্রভেদ।

মানুষ থেকে মানুষ খুঁজে চলা
কোন মানুষে হাত পাতবে গিয়ে
চাইবে তারা তাদের ভাষা দিয়ে,
বাঁসায় ফিরে ভেজায় শুধু গলা।।

সময়
            অভিষেক মিত্র

সময়:

যা তোমার পকেট

ভিজিয়ে দেয় রক্তে।



জীবনের শেষ কণাটূকু

বেরিয়ে আসে উন্মুক্ত শরীর থেকে।



দিন আর

দিনের শেষের চেনা মানুষগুলো

হারিয়ে যাবে সময়ের বুকে।



একটা মাস নিজের ছবি এঁকে যায় বালির উপর,

পরের মাসের জন্য,

অচিরেই।



কোন অপার্থিব আবহাওয়া

হারাতে পারে না ক্যান্সারকে।



বছরের পর বছর ধরে সাজানো বইগুলো,

এক এক করে পুড়ে যায়।
প্রেমের জন্যে

কথার উপর কথা সাজিয়ে
মাথা ঠেকেছে ছাদে
এখনো শব্দ গোছানো হয়নি
প্রেমের রূপ ভেদে
ভালোবাসার শব্দ রচনা
স্নিগ্ধ নিলিমা রাতে
তখন আলো কেউ জ্বালেনি
প্রদীপ ছিলনা হাতে
শুধুই দেখা হয়েছিল
মানস চোখের পাড়ে
অনুভূতির আবেগ প্রবল
উষ্ন শরীর জুড়ে
চাঁদের আলো পড়েছিল
ক্লান্ত পাতার পরে
সেদিন হৃদয় কেঁপেছিল
মিলনকলি সুরে।।

সুদীপ্তার কলম থেকে
এক অবহেলিত পথচারী
       ‎             সাজিদ সুলতান

ওহে, কে তুমি ?

পথিক ?

পথের পথিক ? নাকি উচ্চ্যাকাঙ্খার পথিক?

নাকি লালসার ?

যদি হও পথের , তবে কোন পথের ?

তা কি অফুরন্ত ?

নাই কি তার অন্ত?


তবে উচ্চ্যাকাঙ্খার ?

কী তোমার আকাঙ্খা ?

তার উচ্চতার  সীমা কতখানি?

নাকি সীমাহীন ?


তবে কি লালসার ?

সে কি অসার ?


যায় হোক । একটা প্রশ্ন ।

কেন নাড়লে কড়া আমার দরজার ?

কেনই বা করলে আমাকে অসমাহত ?


আমিই কি তবে সেই অনন্ত পথ ?

আমিই কি সেই সীমাহিনাকাংখা ?

আমিই কি লালসা ?


ওহে , কে তুমি ? উত্তর দাও ।


২০ বছর ধরে চলেছি এই পথে


  • আমি শুধু জানি , আমি এক ক্লান্ত

 [ নিরক্ষীয় শহর]
         জয়দীপ রায় ( চিত্রসংগ্রাহক জলফড়িং)

নিরক্ষীয় শহর গুলোর ছিচকাঁদুনি বিকেল
মাইনাস পাওয়ার চশমা স্কেচ করে  টু বি পেন্সিল বুড়িটার ছবি আঁকে
ভেজা মাটির সন্ধ্যে  পানির খোঁজ বারণ
তুলির টান তখনও আই ভ্রু ছোঁয়নি
ওস্তাদের ফিনিশং টাচ গুলো  পেন্ডিং নয়
পেয়ালা হাতে নিশি ডাকের সন্ধ্যে নামা
তুমি হয়ে আসা রোয়াকে  আরও নিখুঁত হবে।

৯৮৭৪৫৯৪৪৬১

স্বাধীনতার ইস্কাবন
        - সুদীপ তন্তুবায় নীল


স্বাধীনতা, জৌহর ব্রতের সেঁজুতি বহ্নির ব্যানকনিতে

তোমার বিদূষী বাগদত্তা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে ক্রমশ ...

নারী নগর-নাগরীকত্ব বিসর্জন দিয়ে

আর চায় না কোনো জীবন জাহাজের লোথাল বন্দর !

টলেমীর ইমায়োসের কোনো সমতলে

বিক্ষত ইস্কাবনের ইগলু, রক্ত মাখা বরফ ...

তাদের শরীর জুড়ে শরীর বিছিয়ে তারা ক্লান্ত !


স্বাধীনতা, শত সহস্র প্রাচীন কালিবঙ্গান

তোমার দিকে চেয়েই শরীর বিছিয়েছিল একদিন

মনে পড়ে ?


তুমি এলে কেন ? বেশ তো ছিল না ভাঙা পৃথিবীটা...


তোমার হাত ধরেই মীরজাফরতায়

মানচিত্র থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে মহেঞ্জোদারোর যৌবন

কত শত নর্ডিক প্রেমের সভ্যতা !


মনে পড়ে সেই দিনটা- যেদিন বেআব্রু করে

চৌরাস্তার মোড়ে তোমার গলায় পরিয়ে দিয়েছিল

গিলোটিনের মালা ?

আল্লা-রাম যেদিন এক আত্মীকরনে ভেদ করেছিল

সমস্ত রহস্যের রাজপথ ?

মনে পড়ে ? দিনের শেষে চৈত্রের চৈতালীর মতো

তোমাকে ঘরে তোলার লড়াই ?


কি লাভ হলো ?

আড়ালে আবডালে বেপরোয়া ব্রিটিশিয়ানায় প্রসব হল

গিলোটিন গনতন্ত্র

এই লাভ !


এলে কেন এভাবে ?

তোমার শরীর থেকে রক্ত মুছতে মুছতে

কতজন ধুয়ে মুছে গেছে কালের প্লাবনে- হিসেব রেখেছে তার ?


নিষ্প্রয়োজন চাঁদের জ্যোৎস্না মাখা অভ্যাস

এখনও পোষা থাকে বাঙালিয়ানায় !

স্বাধীনতা, তাই তোমাকেই খুঁজে চলা

চানহুদাড়োর হারানো চাবিগাছার খোঁজ বুকে নিয়ে ...


কাল শুনেছি- শশ্মানের পাশে জ্বলন্ত দেহকে ঘিরে থাকা

মৌন আত্মীয়দের ফিসফাস,

তোমার অটোগ্রাফের উপকূল চিরন্তন জলধির নোনা জোয়ার এসে

গর্ভবতী করলেই নাকি মৃত্যুর দেখা মেলে ... !
শিউলি সত্ত্বা
     অর্ণব মণ্ডল

বুক পকেটের শিউলি
       থ্যাতলা অবজার্ভেশন--বেখেয়ালী
পাঁচ পাপড়ি বৃত্তের বাঁশি,
রক্ত রঙের কৃষ্ণলীলা মাখা উলঙ্গ স্ত্রীর ইতিহাস..
মানেই অভিশাপের গড ফাদার প্রপোর্শন
মোশনলেস হৃদয়:নিক্টান্থেস পত্তর
চিড়কাটা গ্লাসে ভৌগলিক সমীকরণে  রূপক
কেবল মহাযুগিয় সেক্সুয়াল সঞ্চারণ-
ঝরাফুল=অস্পৃশ্য
সঙ্গমে কুয়াশা মাখা বীর্যপাত
ইচ্ছেমৃত্যুর দূষণে শিউলিফুলে ব্যতিক্রমী ছাড়...
আননোন ইতিহাস:শিউলি সত্বা

মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৭

নারীর ব্যাথা
           মিলি ঝা

জাগ রে দেব জাগ রে জন
চেয়ে দেখরে আসনের ভবিষ্যৎ
দুর দুরান্তের যার চুরি রিনি ঝিনি
মাতায়ে তোদের
তারই দেখা নাইরে দিকে দিকে
কপালের টিপ সাজায়ে
বধু তোদের
আসত পায়ে নুপুর বাজিয়ে
হেন দিনে কোথায় সেই সুর
কোথায় সেই পদধ্বনি
দীর্ঘদিনের লাঞ্ছনায় মরেছে সেই বধু
জ্বালা যন্ত্রনা সহে না আর
দৃষ্টপট করে গেল দীর্ঘদিন
কেমন পাষাণ তোরা একটু মায়া হল না আর
ছিন্ন ভিন্ন করলি বস্ত্র
নিলি লুট করে বধু সম্মান
তোরই খড়ের আভরণ ছিল সে
তোরই অন্ধকার কুটিরের প্রদীপ
নিভে গেল চির তরের জন্য
দিন দিন নষ্ট করেছিস নারী সম্মান
কেড়ে নিয়ে বস্ত্র, কি পেলি রে পাষাণ
পুরুষ নামের কলঙ্ক তোরা
সে বধু জন্ম দিত তোদের সন্তানের

তারই গ্রীবায় দিলি ছোড়া
দুর রাখ আন্তর্জাতিক নারী দিবস
পারলে ফিরায় দে সম্মান কর রক্ষা
কিন্তু পাষাণের তো চায় শুধু সজ্জা সুখ
মাটি করে দিলি সব দ্যাখ রে চেয়ে ভবিষ্যৎ
নেই আর সে নারী 
আগ্নেয়গিরি
              ‎       সোমা দে

সেই যেদিন সোমবার সকালে অফিস যাওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে সুলতা গলা জড়িয়ে বললে, "আজ অফিস নাই বা গেলে", হঠাৎ আগ্নেয়গিরি অনুভব করেছিলেন ভিতরে ভিতরে। সেইদিনই ঠিক করেছিলেন অমিয়, একদিন সুলতাকে ঠিক আগ্নেয়গিরি দেখতে নিয়ে যাবেন। যদি যাবেন, তাহলে যাবেন একুয়াডোরে, যেখানে জ্বলছে পৃথিবীর অন্যতম জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি কোটোপোক্সি। প্রতিদিন অমিয় ভেবেছেন, ওখানে পৌঁছে হাত উঁচিয়ে চিৎকার করে বলবেন, "সুলতা, সেদিন যে আগুন জ্বালিয়েছিলে, দেখো উস্কে উস্কে আজ কি রকম লাভা। সুলতা, এই যে তোমার সামনে আমি, আমি নই, এ সব তোমারি আভা।" সরকারি চাকুরে অমিয় একটু একটু করে জমাতে শুরু করলেন খুচরো, নকশা, চিলতে উত্তেজনা, অফুরান মাতন আর বেশি বেশি করে মনখুশি। উত্তর কলকাতার ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলো এতদিনে ওনাকে চিনে গেছে, আজকাল মার্কেটিং স্পৃহা নিভিয়ে ওনাকে দেখলেই সবাই কিরকম উঠি উঠি করে। সুলতার পাসপোর্ট এক্সপায়ার করবে আগামী বছরে। অমিয় এখন অবসরপ্রাপ্ত। যদিও শুধুমাত্র ওই দশটা-পাঁচটা থেকেই। বাকিটা একইরকম। বোহেমিয়ান। সুলতার শরীরটাই যা চিন্তার। আগ্নেয়গিরি প্রতিরাত্রে স্বপ্নে ফুটে উঠে, সে যে এখনো অপেক্ষায়, তা মনে করিয়ে দিয়ে যায়। জানুয়ারির একসকালে নিজের আর সুলতার পাসপোর্ট নিয়ে পৌঁছে গেলেন ট্র্যাভেল এজেন্সিতে। সব কথাবার্তা যে স্পিডে এগোচ্ছিল, অ্যাডভান্সটা দিতেই কেমন তা হঠাৎ বেড়ে চারগুণ। ফ্লাইটে মাখাসন্দেশ আর হোটেলে পাশবালিশের অনুরোধ ছিল অমিয়র। ট্র্যাভেল এজেন্সির কর্ণধার বললেন, জায়গাটা যেহেতু একুয়াডোর, কলকাতার বাহুডোরে একেবারেই নয়, তাই নাকি এরকম প্রেফারেন্সগুলোতে বাগডোর লাগাতে হবে। যাক, আসল কাজটা হলেই হলো। মিট উইথ আগ্নেয়গিরি। বাড়ি গিয়ে সুলতাকে জানানোর উত্তেজনাটা যেন ক্রমশঃ স্ফীত। সুনীলের দোকান থেকে গরমাগরম বেগুনি আর আলুর চপ নিয়ে ঢুকলেন বাড়িতে। সুলতা তখন চা বানাচ্ছিল। হাতে প্যাকেট দেখতেই বলে উঠলে , "কোথায় গিয়েছিলে, এতো দেরি হলো? আমি ফোন করতে গিয়ে দেখি ফোনটা অন্ধকার হয়ে আছে। আলোটা জ্বললে তবেতো কল করতে পারবো বলেছিলে। দেখে দিও তো। এই আবার ভাজা ভুজি নিয়ে এসেছো? চা টা খেয়ো না তাহলে। এসিডিটি হয়ে রাতের ঘুমটা যাবে তোমার। বাসু-ঠাকুরপো বলেছে, তোমার ঘুমটা দরকার। ঘুমের ওষুধ   .... " অমিয় থামিয়ে বললেন,"উফ, একটু চুপ করবে। একটু দম নিয়ে নিয়ে বলো। একসাথে এতো কথার কি আছে। আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি? এস তো, পাশে বস। বল, সব শুনছি।" সুলতা বললে,"এখন আমার বসলে চলবে না, শান্তি আসেনি। বাসনগুলো না পরিষ্কার করলে অশান্তি বাড়বে।" অমিয় বললেন,"আহা হবে হবে। এসো না একবার।একটা কথা বলার আছে তোমাকে।"সুলতা পাশে বসতেই অমিয় বলেন,"বলছি, গলা জড়িয়ে ধরতো সেই বৌভাতের পরের দিনের মতো। কি হলো হাসছো কেন? আরে পাগল তো হয়েছি আমি সেইদিনই, এবার বোধহয় উন্মাদ। হা হা আচ্ছা বলছি জানতো এই মে তে বুঝলে? মানে আমরা যাবো বুঝলে? ফাইনাল। সব বুক করে দিয়ে এসেছি" সুলতা হা করে বলেন,"একুয়াডোর? বুক করে দিলে?" অমিয় বলেন,"একদম মহারানী" সুলতা বলেন,"সত্যি তুমি পারো বটে। সব ক্যানসেল কর। তোমার হার্ট চেকআপটা আগে দরকার। তারপর সব কিছু। তুমি সত্যিই বোঝোনা।" অমিয় বলেন,"সুলতা, শোনো।"  সুলতা বলেন,"কিচ্ছু না। একদম কিচ্ছু না। ক্যানসেল কর শিগগির। কি হলো, চললে কোথায়?" অমিয় গম্ভীরভাবে চলে গেলেন অন্য ঘরে। কিছুক্ষন পর সুলতা ধীর পায়ে ঘরে পৌঁছে অমিয়র মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,"আচ্ছা শোনো, আমি পারবো? আমার যা শরীর। তোমার স্বপ্নের জায়গা দেখার ইচ্ছে আমার মধ্যেও ধীরে ধীরে চাক বেঁধেছে যে" শুনেই লাফিয়ে উঠলেন অমিয়, বলেন,"সত্যি? সত্যি যাবে? তাহলে আমাকে এরকম ভয় পাওয়ালে কেন? তুমি সত্যি সুলতা। শোনো, কাল থেকেই প্যাকিং শুরু করতে হবে। ওহ কি আনন্দই যে হচ্ছে সুলতা। হে আমার একুয়াডোর, বাড়াও তোমার বাহুডোর।হিয়ার আই কাম। বলছি শোনোনা আমার ওই হার্ট চেকআপের জমানো থেকে কিছুটা লাগবে। দেবে? মানে বাকি সব হয়ে গেছে। শুধু লোকাল ট্যুরের খরচটা.... বলছি যে চিন্তা করোনা। ছেলের প্রতিমাসের পাঠানো টাকা থেকেই পরে চেকআপের টাকাটা ম্যানেজ হয়ে যাবে। যাবে না? বলো? দেখেছো সব কিরকম প্ল্যানড। কি হলো যাচ্ছো কোথায়?" সুলতা হাসতে হাসতে আস্তে আস্তে আলমারি থেকে কি একটা এনে গুঁজে দিলো অমিয়র হাতে। অমিয় বলেন,"এটাই? উফ সুলতা। বাপরে এতো জমিয়ে ফেলেছো। তুমিই আমার একুয়াডোরিয়া। মাই কুইন।"

ফেব্রুয়ারিতে হস্পিটালাইসড হলেন সুলতা। অমিয় পাগলের মতো ছুটোছুটি করে নার্সিংহোমে এডমিট করলেন সুলতাকে, একুয়াডোরের জমানো টাকা খরচ হতে থাকলো জলের মতো। অমিয় বন্ধু-ডাক্তারের সাথে দেখা করার পর জানলেন, সুলতার হার্ট বিপজ্জনক অবস্থায়। ফ্লাইট তো দূরের কথা, বাড়ির কাজকর্মেও রেস্ট্রিকশন এখন থেকে। অমিয় আরও জানলেন, সুলতা নিজের হার্টের এ অবস্থা অনেক আগে থেকেই জানেন। গতবছর থেকে যে পেসমেকারটি সুলতার হৃত্স্পন্দন নিয়মিত রাখছে, তা সুলতা ডোনেট করে দিয়েছেন সরকারিভাবে অমিয় র নামে। রহস্য চিরকালই অমিয়কে টানে। কিন্তু এতটা সামলাতে সময় লাগলো অমিয়র। অমিয় সব শুনে মুচকি হেসে সুলতার বেডের পাশে বসে পড়লেন। ভাবলেন,"আলমারি থেকে অমিয়র হার্ট চেকআপের টাকা অত সহজে বেড়োনোর পিছনে এমন সিরিয়াস কোনো রহস্য না থাকলেও চলতো।" ভোররাতে সুলতা চোখ মেলতেই অমিয় বললে,"সুলতা, সেদিন যে আগুন জ্বালিয়েছিলে, দেখো উস্কে উস্কে আজ কি রকম লাভা। সুলতা, এই যে তোমার সামনে আমি, আমি নই, এ সব তোমারি আভা।"  
আমি চোর নই
                         শ্যামাপদ মালাকার


সবজিবাজারের টাকা চুরি করা নিয়ে,-আমাকে কেন্দ্র করে গতকাল বড়বৌ-দি সবার
মাঝে যে তুমুল গণ্ডগোলটি পাকিয়ে- আমাকে যে চোর বলে প্রমাণ করেই ছাড়ল,
ইতিমধ্যে তুমি-- ওপাড়া হতে এসে নিজের কানে শ্রবণ করে গেছো।


বাসভূমি ত্যাগ করার আগে বা মৃত্যুর কয়েক মুহূর্ত পূর্বে, কোনো মানুষ
মিথ্যে কথা বলে যায় নি। আমার সেই রকম একটি চরম পরিস্হিতি এসে দাঁড়িয়েছে।
তোমার Picture পোষ্টে আমার কমেন্ট Like দাও বা না দাও,-আমাকে বোঝার মতো
তুমি ছাড়া এজনমে আমার আর কেউ নেই। তাই সত্যিটা তোমাকে বলে যাচ্ছি।

--তুমি অবগত আছো,-আমি ছোটো বেলাতে মা ও বাবাকে হারিয়েছে। তাই চাকরানীর
মতো,--সবজিবাজার করা - বাটনা বাটা -এমন কি এঁঠো বাসন মাজা পর্যন্ত- বাড়ির
সমস্ত কর্মই তুলে নিয়েছিলাম,--শুধু একমুঠো ভাতের জন্য।
তুমি জান! ঝামেলার আগের দিন সবজিবাজার করতে গিয়ে পাঁচ টাকা বাঁচিয়ে
ছিলাম। কারণ তোমার Pic- কমেন্ট করবো বলে। তুমি হয়তো এবার বিশ্বাস
করলে,-"নীলিমা চোর!"
দেখ,- তোমার মতো কোম্পানিরর Offer পেয়ে Net রিচার্জ করার মতো আমার অাজও সামর্থ নেই।
তুমি বিশ্বাস করো,- সবজির পরিমান কমিয়ে টাকা চুরি করিনি, শুধু,- পয়সা
দেওয়ার সময় সবজিবিক্রেতাদের,--খুচরো নেই বলে এক-আধ টাকা কম করে
দিলেই,-আমার পাঁচ টাকা Net টপাপের একটি দাম উঠে যেত।
তোমার Picture পোষ্ট দিনের পর দিন কমেন্ট করে যেতাম।
কেন যেতাম আমি জানিনা। একদিনও বোঝার চেষ্টা করিনি, আমি তোমার যোগ্য কি
না,-- তুমি পছন্দ করো কি না,-শুধু অন্ধের মতো তোমাকে পাওয়ার নেশায়
ইতিমধ্যে,- ছেলে পক্ষের বাড়ি থেকে অসা, নিজের কয়েকটি সম্বন্ধও ভেঙ্গে
দিয়েছি।
এর জন্য দাদা ও বৌদির নিকট- আমাকে কম অপমানিত হতে হয়নি, কিন্তু সেই অপমান
আমাকে বিন্দুমাত্র বিচলিত করতে পারেনি।

আমি তোমার হই বা না হই, মনে বড় সাহস পেতাম এই ভেবে,-তুমি তো আছো, ডাকলেই
তোমার কাছে চলে যাবো।
এই গরবেই অনেকখানি গরবিনী হয়ে উঠেছিলাম।
বৌদির এখানেই অাত্মজ্বালা। সে ভেবেছিল,-"কার গরবে অভাগীর এত অহংকার!"
এর অনুসন্ধান করতে গিয়ে হঠাৎ একদিন দেখে ফেলে,-আমি ফেসবুক ইউজ করছি।
তারপর হতে আমিও একটু সাবধান হলাম।

বৌদির মনে আমার প্রতি অসৎ সন্দেহের দানা বাঁধতে থাকে।
দিনের পর দিন,-দাদাকে উত্তেজিত করতে থাকে এই বলে--"তোমার বোন
নীলি,--সবজির টাকা চুরি করে- ফেসবুক ব্যবহার করছে।"
আর এজন্য সেদিন তুমুল গণ্ডগোলটি বাঁধিয়ে দিল,--যা আগাগোড়া সমস্তটাই তুমি
একজন সাক্ষী হয়ে রয়েছো যে,-"নীলিমা চোর।"
সেদিন বার বার মনে হয়েছিল, এ মিথ্যে অপবাদ আমি সয়লেও- তুমি সয়বে না।
বড় অাশাছিল- আমাকে অনেক দূরে নিয়ে চলে যাবে,-এই রকম ভাবতে ভাবতে এক সময়
নিবিড় নিশি প্রভাত হয়ে এল-- তবু তোমার Picture পোষ্ট হতে,-আমার কমেন্টের
একটিও Like এল না!।

আজ আমি পিছিয়ে পিছিয়ে এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়েছি--যে কোনো মুহূর্তে ক্ষয়িত
বারিধিতীরসঙ্গে পড়ে- তরঙ্গময় উত্তাল সমুদ্রে মিলিয়ে যেতে পারি।

ভাল যদি না বাস, তবে কেন সেদিন ওপাড়া হতে ছুটে এসেছিলে! শুধু কি চোর
হতভাগীর বিরুদ্ধে সারা জীবন সাক্ষী হয়ে থাকার জন্য!?

যেতে যেতে তোমায় একটি কথা বলে যাচ্ছি,-"এজগতে সবজিওয়ালারা যেটুকু দয়া
করতে পারে, সেটুকু দয়া আপনজনেরা করতে পারে না!!।
ভুতের বিয়ে
               পবিত্র চক্রবর্তী

                   ১

কয়েকদিন আগে মামা বাড়ী থেকে এলো নেমন্তন্ন পত্র । অবাক হওয়ারই পালা , কারণ মামার যা বয়েস তাতে আর যাইহোক বিয়ে অন্তত হবে না । মা ছোঁ মেরে কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে পড়তে থাকেন আর ভ্রূ জোড়া ধীরে ধীরে বক্র গতি নেয় ।

কার্ডে বড় বড় হরফে লেখা , আগামী ৩ ডিসেম্বর চতুর্থী তিথি কৃষ্ণপক্ষের মহা শুভক্ষণে , বেলতলা নিবাসী ব্রহ্ম বাবাজীবনের সহিত শেওড়াগাছির সুশ্রী শাঁকি মায়ের বিবাহ । আপনাদের উপস্থিতি কাম্য । নীচে , পুন: দিয়ে লেখা - হৃদয়ে প্রাণ ভরা সাহস একান্তই কাম্য ।

আমার মামার এ হেন ভুতুড়ে কম্ম নতুন নয় । মা ঝাঁঝিয়ে ওঠার আগেই আমি সরে গেলাম , আমার বেশ লাগে এসব ।

               ২

মা আর বাপী বেশ গজগজ করছিলেন আমার যাওয়া নিয়ে  , সামনেই উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট । আমার একটি মহত্ গুণ আছে , সেটি হল টুপি পড়াতে আমি ওস্তাদ । আর তার শিকার  মা বাপী আগে হন , এবারও হলেন ।

সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম , নইলে মামার বাড়ীতে পৌঁছানো বেশ কষ্ট দায়ক ।

দুটি ট্রেন , একটি টোটো অতঃপর হেঁটে যখন পৌঁছালাম তখন সুজ্জি মামা পশ্চিমে কাত হতে শুরু করেছে ।

লোহার ঢাউস গেট আর গোটা কয় পাড়ার নেড়ি আমার আগমনে সোচ্চার হয়ে উঠলো ।

কোন ক্রমে ফাটল ধরা আদ্যিকালের বাড়ীতে ঢুকে " মামা " বলে বারকয়েক ডাক ছাড়তেই মামা লুঙ্গির গিঁট বাঁধতে বাঁধতে হাজির ।

- " কি রে এসে পরেছিস ভালোই হল ,আর শোন  লোকজন বিশেষ কেউ নেই ।"

আমি আর কী বলি , মামা নিজেই বলে চলেছে । একটু থেমে আবার বলে --

" বুঝলি কিনা আমরাই বর পক্ষ আবার আমাতে আর তোতেই কনে পক্ষ । আর বাকীরা সব তেনাদের সম্বন্ধী ।"

আমার ভ্যাবলা মার্কা মুখ দেখে মামার ঠোঁটে হাসি খেলে যায় । কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিস করে বলে - " ঘড়ে ঢোক সব বলছি ।"

              ৩

রাত্রে জব্বর খাওয়া হল । মামা আর আমি দাদুর আমলের খাটে শুয়ে পড়লাম । কিন্তু মামা এখনো বলল না পুরো বিষয়টি । রাত কটা হবে মনে নেই , একটা হালকা  কান্নার শব্দে ঘুমটা ভেঙে গেল ।

অন্ধকারে ঘড়ের বাতি জ্বালাতে যাব কিন্তু বারকয়েক সুইচ টিপতে বুঝলাম লোডশেডিং । এদিকে কান্নার শব্দ থেমে থেমে হয়েই যাচ্ছে ।

উত্তরের জানলাটা আন্দাজে খুলতেই শিরশিরে ঠাণ্ডা হাওয়া ঢুকতে শুরু করে । গ্রামে গাছ গাছালি বেশী । ভাঙা চাঁদের আলোয় গাছগুলোর ছায়া যেন সামনের উঠোনটাকে ঘিরে ধরে গ্রাস করতে চাইছে ।

শীতের দীর্ঘ রাতে একটা মেয়েলী কান্না আর তার সাথে কে যেন ফিসফিস করে কথা বলে যাচ্ছে ।

ভাল করে বুঝতে যাব ঠিক এমন সময় , গাছের ছায়া ভেদ করে একটা বাদুড় অদ্ভুত চিঁ চিঁ শব্দ করতে করতে আমার মুখের সামনে ডানার ঝাপটা মেরে চলে গেল । আমি ভীতু না , তবে এই পরিবেশটা এমন হয়ে আছে যে , বেশ বুঝতে পারলাম শীতের রাতেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে ।

কান্নাটা যেমন আচমকা শুরু হয়েছিল তেমনি বন্ধও হয়ে গেল হঠাত্ করে । রাতটা মরা চাঁদের সাথে পাল্লা দিয়ে কুয়াশার চাদরে ঝিম মেরে গেল । শুধু গোটা কয়েক শেয়াল খ্যাঁক খ্যাঁক করে বিদঘুটে আওয়াজ করে রাতের নিস্তব্ধতাকে আরও বেশী জমাট করে দিয়ে গেল ।

মামার হেলদোল নেই । সেই যে নাকের বাদ্যি প্রথম থেকে শুরু হয়েছিল এখনো সপ্তম সুরে বেজে যাচ্ছে । আমারও চোখে ঘুম যেন থাবা মারতে বসেছে ।

                 ৪

অনেক আগেই সকাল হয়ে গেছে । চোখ মেলতেই দেখি পাশে চায়ের পেয়ালা ঢাকা । চোখে মুখে জল দিয়ে সবে মাত্র চায়ের কাপে ঠোঁট দিয়েছি , দেখি মামা আসছে । পিছনে এক তাল গাছের মত লোক । ঘাড়ে আর হাতে মস্ত থলে ।

- " আহা মেছো , সাবধানে রাখ বাবা জিনিষ পত্তর , আর হ্যাঁ গলা কাটার বৌকে বল গে মাছ কূটতে ।" মেছো বলে লোকটা মাথা দুলিয়ে চলে যেতেই মামা আমার দিকে তাকিয়ে বললে, " উঠে পরেছিস , বেশ বেশ , রাতে ঘুম হয়েছিল তো ভাল !"

-" মামা , আমি কিছু বুঝতে পারছি না ! কাল রাতে..."

মাঝ পথেই মামা হাতের ইশারায় থামিয়ে দিলো  । থাকতে না পেরে একটু রাগত গলায় জিজ্ঞাসা করলাম , " ব্যাপারটা কী বলতো তোমার ? অমন উদ্ভট বিয়ের কার্ড , রাত বিরেতে মেয়ের কান্না !!"

মামা ক্ষণিক থম মেরে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো , " শাঁকি মাকে বুঝিও আর পারা গেল না দেখছি । ব্রহ্ম ভাল ছেলে , জাত বামুন । "

- " তা তোমার শাঁকি মায়ের  কাঁদার কারণটা কি ভুতের মত !"

- " আর বলিস না ভাগ্নে , মা যে আমিষ ছাড়া থাকতে পারে না আর ব্রহ্ম টোটাল নিরামিষ...এই নিয়েই ঝামেলা ।"

- " মামা বিয়ের কার্ডে লিখেছ , যাদের সাহস আছে তারা এস , এটার অর্থ ?"

- " ওমা লিখবো না !! এ তো যে সে বিয়ে নয় রে ; রীতিমত ভুতের বিয়ে ।"

এরপর আমার মুখের বাক্য মুখেই থেকে গেল । মামা দিচ্ছে ভুতের বিয়ে ! মনের কথা বুঝতে পেরে মুখটা নামিয়ে বললেন , - " ওই যে বাজার করে নিয়ে এলো ও গেছো ভুত । মাছ কুটবে স্কন্ধ কাটা ভুতের বৌ । মরার পর আমিই তো এদের আশ্রয় দিয়েছি এই বাড়ী আর বাগানে ।"

আমার ভিরমি খাওয়ার জোগাড় । দাঁতে দাঁত যেন খটাখট করে লেগে যাচ্ছে ।

মামা স্বান্তনার স্বরে বললে , " বেচারীরা বড্ড ভাল , অপঘাতে মৃত্যুর পর ওরা বেশী ভাল হয়ে গেছে ।"

               ৫

বিয়ের রাত । মামার ভুত চ্যালারা প্রায় নিমেষেই বাগানের খানিক অংশ পরিষ্কার করে ম্যারাপ বেঁধেছে ইতিমধ্যে । অঘ্রাণ মাসের উত্তরের হাওয়ায় আজ চাঁদ ঢেকেছে মুখ মেঘের আড়ালে ।

ব্রহ্মদত্যি আর শাঁকচুন্নীর পরিণয়ে হাজির মামদো থেকে জোলো ভুতের ছা । সে এক হই হই ব্যাপার । জোনাকীরা টুনি বাল্বের মত জ্বলছে নিভছে । মাঝে মধ্যেই প্যাঁচার কর্কশ ডাক । মামার হাঁকডাক । আর আমার অবস্থা কহতব্য নয় । আমি শ্রী শ্যামা চরণ , মারপিট বিশারদ , আপাতত শ্যামা ছেড়ে মনে মনে শ্যাম নাম জপছি । মামা যতই বলুক , স্বচক্ষে ভুত বিবাহ আমার টনক নড়াতে শুরু করে দিয়েছে ।

মামা বলে ডাক গলা থেকে না বেরিয়ে মা - মা বলেই ডিগবাজি খাচ্ছে ।

-" হ্যাঁ রেঁ এঁখাঁনে কেঁন ? এঁগিয়ে বেঁ দেকেঁ আঁয়.....। " ঠাণ্ডা হাতটা পিঠে উপর ছুঁয়ে নাকি সুরে কে যেন বলে উঠলো । আর তারপরই ঘুটঘুটে অন্ধকার ।

দূরে বৈষ্ণবদের দল প্রতিদিনের মত গান গেয়ে সকালের আগমন জানাচ্ছে । চোখটা মেলতেই দেখি মা মাথার পাশে বসে চা খাচ্ছেন ।  আমি হতভম্ব । একটু উঠে বসতেই দেখি গত রাতের ব্রহ্মদৈত্য , শাঁকচুন্নী খোশ গল্প জুড়েছে বাপীর সাথে ।

আমি উঠতেই ওরা ঘরে ঢুকলো ।  ইতিমধ্য মামাও  হাজির । আমার চোখে মুখে হাজারটা প্রশ্ন ফুটছে দেখেই বাপী হাসতে হাসতে বললেন  - " এ হল শালার মস্ত প্ল্যান । সাহসী -ডোন্ট কেয়ার ভাব , দেখলি তো ভুতের গুঁতোতে ফিউজ কেমন হলি ।"

আমার থমথমে মুখ দেখেই মা বললেন , " আসলে এনারা গ্রামে শীতকালে যাত্রা করেন । পড়াশুনা ছেড়ে সারাদিন রক বাজী  করছিলি । তোর মামাকে বলতে , ঠিক করা হয় তোর আসল সাহস দেখার ।"

গুরুগম্ভীর অবস্থা দেখে  শ্যামলী মাসি ওরফে শাঁকচুন্নী কাছে এসে মিষ্টি গলায় বললেন -" দেখ সাহস আর সাহসী মুখে বললেই হয় না , ওটা থাকে মনের মধ্যে । তুমি পরীক্ষাতে ভাল ফল করার সাহস দেখাও , দেখবে তুমি অনায়াসে জিতবে ।"

এতক্ষণ পর মামা বললে , " অনেক হল ভুতুড়ে আলোচনা ।  ভুতদের যাত্রা রাতের বেলায় গ্রামের সবাই মিলে দেখবো  ; শহরে তো আর এ সব হয়ই না আর ।"

এতক্ষণ পর আমার মুখে হাসি দেখা গেল । মনে মনে ভাবলাম , আমার থেকেও টুপি পরানোর বড় বড় ওস্তাদ আছে । তবে এ টুপি ভালোর জন্য , শিক্ষার জন্য ।।
             ---------------
নামঃ পায়েল খাঁড়া
শিরোনামঃ অনুগল্প
হার-জিৎ

মার্কশিট হাতে প্রায় লাফাতে লাফাতেই স্কুল থেকে বেরোল রনিত। ক্লাসের মধ্যে ফার্স্ট হয়েছে সে__৯৭%--ছেলের গর্বে মাটিতে যেন পা’ই পড়ছে না মল্লিকার। এক্সট্রা টিউশনের ফিজ’টা সুদে-আসলে উসুল হয়ে গেছে তার।
অর্ঘ্যর রেজাল্টটা খুলেও দেখেনি তৃষা। মোটে ৭৫%_এখন সে মুখ দেখাবে কীভাবে মল্লিকার কাছে? সেদিন কিটি পার্টিতে কত বড় মুখ করে বলেছিল এবারের এক্সামে অর্ঘ্য রণিতকে টেক্কা দেবেই।হারের দুঃখ আর সবার তাচ্ছিল্য দুটোই এবার তাকে হজম করতে হবে__ছিঃ ছিঃ! লজ্জায় কালো করে এল তৃষার মুখ।
স্কুল-ফিরতি রাস্তায় সকলের সামনেই দৌড়ে এসে তৃষাকে প্রনাম করল পল্টুর মা। বলল ‘খোকাবাবুর দয়ায় এ’যাত্রায় আমার ছেলেটা পেরানে বেঁচে গেল মেমসাহেব! পল্টুর অপারেশনের জন্য টাকা চাইতেই সকলে কুকুরের মত দুঃচ্ছা করল।খোকাবাবু যদি টাকাটা না দিতেন তাহলে আজ আমার ছেলেটা__আপনি মানুষ নয় দেবী,যে এমন সোনার টুকরো ছেলেকে পেটে ধরেছেন।ভগবান আপনাদের মঙ্গল করুন,মঙ্গল করুন!’
“সরি মা আমি ফার্স্ট হতে পারিনি।পল্টুর জীবনটা আমার ৯৭% তোলার থেকে অনেক জরুরী মনে হয়েছিল।আমার জন্য তুমি হেরে গেলে__আই অ্যাম ভেরি সরি।” শুকনো মুখে বলল অর্ঘ্য।
তৃষা কথা বলতে পারল না।তার চোখ থেকে শুধু দু’ফোঁটা জল ঝরে পড়ল।

 পায়েল খাঁড়া(স্বত্ত্বাধিকারী) ১৯.৫.১৭


রাতুল
আবু আইয়ুব আনসারী

আলোকোজ্জ্বল শারদীয় দুপুর৷ আকাশ ঘন নীল ৷ বর্ষাধোয়া গাছগাছালির সবুজ পাতায় রৌদ্ররশ্মি আছড়ে পড়ে পিছলে যাচ্ছে স্বর্ণলতার মতো ৷ শেওলা-ধরা ঘরবাড়ি-দালানগুলো রোদে শুকুচ্ছে, যেন তারা বিছানা-বালিশ, বর্ষার আর্দ্রতা তাড়াতে তাদের কে যেন মেলে দিয়েছে রোদে ৷ রাস্তার কারুকার্যময় রিকশাগুলো ঝকমক করছে আলোয় আলোয় ৷ রিকশার ঘণ্টির ক্রিং ক্রিং আওয়াজও যেন রোদে ঝিলিক দিচ্ছে ৷ এই চনমনে রোদের নিচে ঘাসগুলোও নেতিয়ে পরেছে ৷ মানুষগুলো খুবজরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরথেকে বেরুয় না ৷ কিন্তু রাতুল...।
অজোপাড়া গায়ের ছেলে রাতুল। মা নেই। বাবা অনেক আগেই মারা গেছে। দাদীর তত্ত্বাবদনে বেড়ে উঠছে। সারাদিন খেয়ে নেয়ে কোন কাজ নেই। কখনো ঘুড়ির নাটাই নিয়ে দৌঁড়াদৌড়ি। মাঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত চষে বেরানো। ভর দুপুরে দাদার বারণ দাদীর নিষেধ উপেক্ষিয়ে বদনা-জাল নিয়ে বিল নদীতে মাছ ধরার চেষ্টা।পুঁজজোর মেলা থেকে কিনে আনা বলটা তার প্রিয় সঙ্গী। সকাল বিকাল খেলতে যাওয়া তার নেশা ও পেশা। খেলা শেষ করে ভর সন্ধ্যায় রাস্তার পাশের তেঁতুল গাছে উঠে তেঁতুল খাওয়া তার অভ্যাস। পাশের বাড়ির সামনের নারিকেল গাছে লুকিয়ে না উঠলে পেটের ভাত হজম হয় না। লেচু না থাকলেও প্রত্যহ নাদের কাকার লিচু গাছে উঠা বাদ যায় না। স্কুল ফাঁকি দিয়ে কয়েকজনের টিম নিয়ে পুকুরে লাফালাফি করা।
এমন হাজারো প্রশ্ন
আরিফকে মারলো কে?
সানিয়াকে গালি দিলো কে?
কুমারের বই ছিরলো কে?
রাকিবের সার্ট খারাপ করলো কে?
পুতুলের বই লুকালো কে?
মাস্টার মশাইয়ের বেত ভেঙ্গেছে কে?
আজ পড়া পারেনি কে?
সব প্রশ্নের উত্তর রাতুল!

  • আজ সকাল থেকে সে বসে আছে। খাবার মুখে দিচ্ছে না। চোখ দিয়ে অঝরে পানি ঝরছে । ঘুড়ির নাটাই পাশেই পড়ে আছে। ফুটবলটা যেন তার শোকে নিথর হয়ে গেছে। খেলার সাথীরা ডাকছে। স্কুলের ছাত্র ছাত্রিরা স্কুলে যেতে বলছে। কিন্তু এখন রাতুলের এসবে মন নেই। একটা এক্সিডেন্ট মানুষকে এতো পরিবর্তন করে দিতে পারে? কাল তার দাদী মারা গেছে। তাই আজ রাতুল আর আগের রাতুল নেই। সে এক অন্য রাতুল।
   

বৈশ্যাম্পয়ন  , একটি প্রলেতারিয়াত স্বপ্ন
পি না কি
                                       

  ১
সেই সকাল থেকে হাঁটছে , গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে  । মাথার উপরের সূর্য  এখন আকাশের মাঝখান থেকে  পশ্চিমে ঢলতে শুরু করল  ।  আকাশে  আলো আছে ।  সেই পাতলা ছায়ার মতন আলোয় , চারপাশে  একটা  দৃশ্য তৈরি হচ্ছে । কিছুক্ষণ খোলা  ভূমির মাঝখানে দাঁড়িয়ে রইল । আকশের দিকে তাকিয়ে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে ; সূর্যের  আয়ু  আজকের দিনের মতন আর মাত্র কিছুক্ষণ । আচমকাই অন্ধকারে ঢেকে যাবে পৃথিবী।  তখন আলো হারিয়ে যাওয়া মুহূর্তে  , নিজের অসহায়তা তাকে ঘিরে ধরবে ।  বৈশ্যাম্পয়ন  এখন থম মেরে থাকবে ।  এই সময় কাঁদতে হয় , আপন জন যদি কেউ তাকে ছেড়ে চলে যায় , তার কথা ভেবে চোখ ভিজে আসে জলে ; এমন ভাবে কাঁদতে –কাঁদতে মন হাল্কা হবে । সে কষ্ট পায় । বুঝতে পারে , পৃথিবীতে আলোর দরকার , কেননা এই  নিভে যাওয়ার  সময় নিজেকে খুব একা মনে হয়  ।   এখানে কেউই একা বেঁচে থাকতে চায়না।এই সময়টা , দিনের এই  নিভে যাওয়া সূর্যের  আলো যখন মিশতে থাকে আকাশের    শিরা –উপশিরায়  ঠিক তখনই  , মনটা ভীষণ একা হয়ে ওঠে ।
এই পৃথিবীতে সে একা কি ? এই প্রশ্ন বৈশ্যাম্পয়ন   নিজেকে আগেও করেছে । এখন সন্ধ্যা । পাখিরা  ফিরছে । এই ফিরতে থাকা পাখিরা ,  বুক  ছুঁয়ে থাকা অন্ধকারে সাঁতরে , নিজের বাসায় পৌঁছে যাবেই ! এরা অন্ধকারেও ঠিকানা ভুল করেনা । আসলে ঘর থাকলে , আপন জন থাকলে ,  ফিরবার তাগিদ থেকে যায় । নিজের এমন কোন তাগিদ নেই ।
 বৈশ্যাম্পয়ন  গুরু ব্যাসের ছায়ায় বেড়ে উঠেছে  । গুরুর দীক্ষায় পালিত । আশ্রমে যজ্ঞের তাগিদে যে কাঠ জমিয়ে রাখা হয় , যাদের অনবরত নিবেদিত সেবার কোন কদর নেই , অথচ তারা ভীষণ  ভাবে  প্রয়োজনীয় ; ব্যাসের কাছে বৈশ্যাম্পয়নের উপস্থিতি যজ্ঞের কাঠের মতনই । নিজের জ্ঞান  আর  আত্মত্যাগের আগুনে দাউ –দাউ করে জ্বলছে , সেই সবের মর্যাদা সে হয়ত এই জীবনে আর পাবেনা।
আবার হাঁটতে শুরু করেছে । সে  যেই জায়গায় থেমে গিয়েছিল , সেটা খুব বড় ফাঁকা সমতল ভূমি । ন্যাড়াই বলা যায় , ঘাসের দল মাথা তুলে আছে , তবে খাপছাড়া । মাঝে কিছু জায়গা উঁচু টিলা রয়েছে , তার পাশে আবার পাথরের পথ ।  সেই পথ আর টিলা বাদে গোটা ভূমি ধুলোয় ভরা । খুব বড়  ফাঁকা মাঠটা পেরিয়ে  যেতে হবে । হাতে সময় নেই । এই যে মাথার উপর আলোর শেষ আশ্রয়টুকু হারিয়ে গেল , এখন নিজের অসহায়তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছেনা ।
না , বৈশ্যাম্পয়নের মনে হচ্ছে মর্যাদা নয় , সে একটু ভালোবাসা চায় । এটা ঠিক মুনি বেদব্যাস নিজের পুত্র শুকদেবকে অতটা ভরসা করেন না , যতটা  তার প্রিয় শিষ্য । এই কথা সকলেই জেনেছে , এক বিশ্বস্থ   শিষ্য , কখনই পুত্রের স্থান নিতে পারবে না। । এই কথাটুকু যখনই ভাবছে , দু’ চোখ ভিজে গিয়েছে জলে । চোখের মনি দুটি , নিজের অজান্তেই ঝাপসা হয়ে গেল ! একে চারপাশে আলো নেই , তারউপর মনের দুর্বলতা , সব কিছু মিলিয়ে অবসন্ন দেহ , আশ্রয় খুঁজছে । সে চাইছে না আর  বেশি দূর এগিয়ে যেতে ।
আজ রাতের মতন থাকবার জায়গা খুঁজতে হবে ,  পাথুরে এলাকা  তাই সে নিজেও দুই বড় টিলার মাঝখানে কোন গুহা খুঁজছে  ।  তাকে এখন যে কাজটা করতে হবে , খুঁজতে হবে । মাথার উপরে যে আকাশটা , দ্রুতই রাতের দিকে চলেছে ! এই খোলা জমিতে বন্য জন্তুর অভাব নেই । দস্যুও রয়েছে ; তাতে অবশ্য ভয় পায়না । তবে আসল কথা হল এখানে দাঁড়িয়ে থাকতেও আর ভালো  লাগছিল না। সেই ভোর  হতেই আশ্রম  থেকে হাঁটছে , যেতে হবে  রাজর্ষি জনমেজয়ের রাজধানী । সেখানে তার কাঁধে এক বড় দায়িত্ব রয়েছে ।
একটু উঁচু –নিচু পাথুরে পথ টপকিয়ে , গুহার মুখে এসে দাঁড়ালো । বৈশ্যাম্পয়ন দুটো পাথরের মুখোমুখি ঘর্ষণে  , আলো জ্বালিয়ে নিয়েছে । নিম কালো  আকাশ , চারপাশের  ফাঁকা জমিতে জমে থাকা অন্ধকার ,  দূরে ময়লার মতন স্থবির  অরণ্য , মাঝে এক বছর তিরিশের যুবকের হাতে  কাঠের মুখে জ্বলতে থাকা আগুন ; লেলিহান শিখায় গুহা মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল । ভিতরে অনেকটাই জায়গা আছে , ময়লা , আর সবুজ রঙ হারানো  বুড়ো ঘাসে ভরে গিয়েছে । ভিতরে গিয়ে বসল । অন্ধকারের বুক চিঁড়ে  আলোর রেখা  যেন আচমকাই প্রবেশ করল , কয়েকটি চামচিকে উড়ে গেল । আজ রাতে অন্তত এখানে ঘুমানো যাবে ।

গুহার ভিতরে বসে , প্রথমে মুখে জলের ঝাপটা দিল । ঝোলা থেকে আপেল নিয়ে কামড়  দিতেই , গুরুর কথা মনে  পড়ল । এখন রাত   মধ্য  রজনী স্পর্শ করতে  কিছুটা সময় বাকি   , সে গুহার দেওয়ালে  দিয়ে শুয়ে পড়ল । অনেক রাত হবে ,  গভীর রাতে ক্লান্ত আর ক্ষিধে পেটে খাবারের আশ্বাস পৌঁছাতেই ; চোখে ঘুমের আদর  নেমেছে  ।

আগুনের শিখা এখন স্থির , এই সময় ঘুমিয়ে থাকা বৈশ্যাম্পয়নের  নাকে   পাতলা  গন্ধ ভেসে আসছে   । সেই গন্ধে  ঘুম ভাঙল । পাশে কাঠটা পুড়তে –পুড়তে  অনেক কম আলো নিয়ে এখনো জ্বলছে , সেই অপরিমিত আলোয় গুহার কোনায় একটা মূর্তি দেখতে পেল !
বৈশ্যাম্পয়ন বুঝতে পারছে না, গুহার মুখে সে বসে আছে । তার ডানদিকে আলোদণ্ড রাখা আছে ।  কোন পশু হবেনা । মানুষই হবে । সে  স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে । মূর্তিটি নড়ছে । হামাগুড়ি দিয়ে আলোর কিছুটা তফাতে থামল ।  এই দিকেই তাকিয়ে রয়েছে ।
                                                           ২
 আগুনের আলোরয় মানুষটির মুখ  দেখা যাচ্ছে  । নিম্মাঙ্গে  পশুর ছাল পড়ে আছে । মাথার চুল জট ধরা । গায়ের রঙ কালো । এই গুহায় তার উপস্থিতি , ময়লার থেকে বাড়তি কিছু নয় ।বৈশ্যাম্পয়ন দেখল , মানুষটি খুব দ্রুত নিঃশ্বাস নিয়ে চলেছে ! বুক  ওঠানামা করছে । এইবার , নাকে ভেসে আসা দুর্গন্ধের রহস্য বুঝতে অসুবিধা হল না । এই মানুষটি নির্ঘাত কাঁচা মাংস খায় । নাক – মুখের ভিতর থেকে যে  নিঃশ্বাস ঝরছে , সেখানেই  টের পাওয়া গেল ! এখানে এই অবাঞ্ছিত মানুষটির উপস্থিতি সহ্য  করতে পাচ্ছিল না। এই  বনবাসী , বন্য , কূট , আর  ম্লেচ্ছ জনজাতি ; যাদের সভ্য জগতে কোন স্থান নেই । এদের হত্যাই একমাত্র পথ । এরা সভ্য জগতে আসলেই , সেখানকার পরিবেশ দূষিত হবে ; এখানকার পরিবেশ এই এখন যেমন ভাবে নষ্ট হচ্ছে ।
-আপনার ঝুলিতে কিছু খাবার থাকলে দিন । খুব জ্বালা করছে পেটটা । মনে হচ্ছে ফেটে যাবে । ক্ষিধে চাপলে গোটা শরীরটা ছিঁড়ে যায় , প্রভু । দিননা । কিছু খাবার ।
-তুই কে ? চেহারা দেখে ঘেন্না লাগছে । গাঁ ঘিন ঘিন করছে । আমি  বেদজ্ঞ ব্যাস মুনির  শিষ্য  । এত বড় সাহস , আমাকে খাবার দিতে বলছিস !
-প্রভু , মরণাপন্ন মানুষের আবার জাতে বিচার থাকে নাকি ! আমি ক্ষিধের জ্বালায় মরতে বসেছি । এখন আমি যদি বিচার করি , আপনি আমার শত্রু না মিত্র , বা আমি আপনার হাতের খাওয়া খেতে পারব কিনা ? নিজের প্রাণ তাতে বাঁচবে ?
-তোর সারা শরীরে বিষ্ঠা মেখে আছে । বিশ্রী গন্ধ ছড়াচ্ছে ।
-আমি যে তিনদিন ধরে পালিয়ে বেরিয়েছি  ! আপনার  এই গুহার ভিতরেই একটা ছোট্ট গুহা আছে  ,পাশেই ।  সেখানেই আমি দু’দিন ছিলাম  লুকিয়ে । এই  আজ আপনাকে আগুন নিয়ে ঢুকতে , বুঝতে পারলাম এখন যদি না চাই , আর বাঁচব না। সবাই  বাঁচতে চায় । আমিও চেয়েছি । দোষ  কোথায় বলুন ?

বৈশ্যাম্পয়নের   মনে হল , ইতর শ্রেণীর  মানুষটা ভুল কিছু বলেনি ।  বেদে দেবতাদের অন্নসংস্থান করাই তাদের সহায়তা পাওয়ার একমাত্র পথ । তাই আশ্রম এক দীর্ঘ সময় ধরে  দেবতাদের সাথে চুক্তি বদ্ধ হয়েছে। এই ইতরতার থেকে পাওয়ার কিছু নেই , তাই তার প্রাণ রক্ষার দায় নেই । এটা বৈদিক সংস্কার । তবে এর বাইরেও এটাও ঠিক প্রতিটি মানুষ নিজের জন্য লড়াই করে । সে বলল
-তুই পালিয়ে বেরাচ্ছিস কেন ?  নিশ্চই  কোথাও উপদ্রব করেছিস ।
-হাসালেন । আমরা দুর্বল জাতি । ক্ষত্রিয়দের সামনে মাথা তুলবার সাহস নেই । উপদ্রব ! আমাদের অত অস্ত্র বল নেই , গোষ্ঠী বদ্ধ প্রচার নেই ।  দেখুন কেমন ছিন্ন হয়ে পড়েছি !
- তোর এমন অবস্থার পিছনে কারণ আছে ?
-হাসালেন , রাজা জনমেজয়ের অত্যাচারে সবাই কানে হাত দিয়েছে । আপনি ব্রাক্ষ্মণ, আপনারাও শুনেছি  কানে হাত রেখেছেন । তাই বলে সত্য স্বীকার করবেন না !
-মানে ?
-জনমেজয় আর তার সেনাবাহিনী নির্বিচারে সাপ মারবার পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছে । সেই অত্যাচারকে  সাংস্কৃতিক পরিচয়ের আড়াল দেওয়ার   জন্য আপনাদের সমর্থন চেয়েছে । আপনারা  দিচ্ছেন সহায়তা । আমি জানি সবাই নিজের দিকটা ভাবছে । তাই এত ভয়ঙ্কর আর নিষ্ঠুর  হত্যা যজ্ঞকে উৎসবের মতন আনন্দ যজ্ঞ করে তুলছেন । সর্প হত্যা করে , আমরা যারা  বনে থাকি , সাপের বিষ নিয়ে বানিজ্য করতাম , তাদের জনজাতিকে বিলুপ্ত করে দেবেন !
-এটা ঠিক রাজা জনমেজয় যজ্ঞ করছেন । আর এটাও ঠিক  দুর্বলের উপর অত্যাচার , রক্ষাকর্তা ক্ষত্রিয়দের  শোভা পায়না । তোরা রাজার বিরুদ্ধাচারণ   করেছো । শুধু তাই নয় , রাজাকে গুপ্ত হত্যা ক্রতে চেয়েছো। তোমাদের শাস্তি পাওয়া কি অন্যায় ?
-কিসের জন্য ? এই ভূমি থেকে আমাদের উৎখাত করবেন । আমরা মেনে নেব ? এই ভূমি যতটুকু আপনাদের ততটুকুই আমাদের নয় ? অথচ আজ আমরা নিজেদের জনবসতি চখের সামনে পুড়তে দেখছি! আমাদের  মেয়েদের চিৎকার ,   শিশুদের কান্না , এখনো আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে । আর  কত ?  এর পিছনে শুধুই  দখলের রাজনীতি রয়েছে ।
-রাজার সাথে এই বিবাদের কারণ ?
-রাজা আমাদের কাছে শুল্ক চাইছিল । এত দিন আমরা আমাদের ভূমিতে বসবাস করতাম স্বাধীন ভাবে । একদিন আচমকাই খবর এলো , রাজাকে কর দিতে হবে ।  নিজেদের মায়ের মতন এই ভূমি , ওদের হাতে তুলে দিতে হবে ! জীবন থাকতেও আমরা আমাদের স্বাধীনতা  বিসর্জন দেব না।
-যাদের প্রতিরোধের ক্ষমতাই নেই , তারা  নিজেদের ভূমি নিয়ে এত সজাগ  কেন ?
-ক্ষমতা নয় , প্রতিরোধ করবার জন্য  ইচ্ছা দরকার । নিজেদের জনজাতির সংস্কৃতির  প্রতি দায়বদ্ধতা থাকা  দরকার । আমাদের কাছে আমাদের সভ্যতাই সব , তাকে রক্ষা করবার জন্য  নিজেদের শেষ রক্তটুকু  দিয়ে লড়ে যাব  । যে সর্প যজ্ঞে  বিভিন্ন প্রান্ত থেকে  ক্ষত্রিয়রা এসেছে , নিজেদের ক্ষমতার কথা বলছে , তাদের  কাছে  নতুন করে কিছু বলবার নেই ।

এত কিছু শুনবার মাঝেই , ঝুলি থেকে আপেল নিয়ে , সামনের মানুষটির দিকে ছুঁড়ে দিল । সে  লুফে নিয়ে খুব দ্রুত খাচ্ছে । এই লোকটি সর্প গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত । ক্ষত্রিয়রা  অরণ্য , ভূমি দখল করে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইছে । সর্প গোষ্ঠীভুক্ত রা  তাদের পাওনা থেকে সরবে না । আসলে এই যে   প্রসারিত  বনজ সম্পদ , পশু  সম্পদ – তা একেবারে অসুরক্ষিত অবস্থায় থাকতে পারে না।  জনমেজয় আশ্রমের সহায়তা চেয়েছিল , আশ্রম সেই প্রস্তাবে সাড়া দিল । কেননা আশ্রম গুলোকেও   নিজেদের  ক্ষমতা  বজায় রাখবার জন্য  এই সর্প হত্যার যজ্ঞে সামিল হতে হয়েছে ।  কেননা ক্ষত্রিয়দের পাশে না থাকলে , সেখান থেকেও সহায়তা পাওয়া যাবে না । গুরুর কথা শুনে  , সে নিজে কয়েকদিন সর্প ভূমিতে ছিল । সেখান থেকেই সে এই ম্লেচ্ছ ভাষা  শিখেছে । এই  ভাষাকে কখনই স্বীকৃতি  দেওয়া  হবে না । এরা  এই দেশের অধিবাসী হলেও , আধুনিক ভারতে এদের ভূমিকা , অস্তিত্ব অতি সুকৌশলে মুছে ফেলা হবে । সেই কাজই চলছে ।
-তোদের এই অবস্থার জন্য , তোরাই দায়ি ।
কথাটা বলেই , বৈশ্যাম্পয়ন  ঝুলি থেকে কলা বের করে এগিয়ে দিল । মানুষটি দ্রুত তা নিয়ে বলল
-কেন ?
-এই সমাজ উচ্চবান , উচ্চ বৃত্তির সম্প্রদায়কে সুরক্ষা প্রদান করে । তাদের স্বার্থের  জন্য সমাজে সমান্তরাল ভাবে দু’ টো শ্রেণীর  সৃষ্টি হয়েছে । এরা দুজনেই প্রতারিত আর শোষিত । এই  দু’ টো শ্রেণীকেই  নিজেদের  অস্তিত্ব  রক্ষার জন্য ব্যবহার  করে উচ্চবৃত্তির সুরক্ষিত সম্প্রদায় । আমি আর তুই সেই দু’ টো  শ্রেণী    অবলম্বনকারী , যাদের উপর রাজা জনমেজয়ের ক্ষমতা নির্ভর করবে , তার হাতে ক্ষমতা  আছে , ভূমি আছে আর আমাদের বুদ্ধি আর তোদের শ্রম । রাজা জনমেজয় আমাদের বুদ্ধি ভাড়া করবে , তোদের শ্রমকে  দখল করবার জন্য । তোরাই সমাজের তলানিতে থাকা বর্বর ভিড় ।
-ঠিক বলেছেন । এটাই কারণ আপনার শ্রমকে খাটিয়েও আপনার গুরু তার পুত্র শুকদেবকেই  আগে এই মহান কাব্য  পাঠ করে শুনিয়েছেন !  আপনি শুধুই মানুষের  জন্য যে মহাকাব্য , তারই স্বত্বাধিকারী হলেন !  অথচ আপনি নিজেও জানেন , দেবতাদের কাছেও আপনার কদর হওয়া  উচিত ছিল । আপনিই প্রথম শ্রবণের  অধিকারী ছিলেন । শুধু তাই নয় , রক্তের সম্পর্ক শ্রমের থেকেও এগিয়ে রইল । আমরা দুই সম্প্রদায় পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়ছে , আর সুবিধা নিল আমাদের মাথায় থাকা  শ্রেণী ! আমরা সব কিছু জেনে –বুঝেও চুপ হয়ে আছি !
-মানে ?

আরে ! মানুষটি কোথায় ! আগুন নিভে গিয়েছে , পোড়া কাঠ  ছাই হয়ে ছড়িয়ে , কালো ।  পিছনের পথ থেকে ব্যাটা নির্ঘাত পালিয়েছে । গুহার মুখে , ভোরের ছাপ পড়েছে । কানেতে  কাকের ডাক এল ।
এতক্ষণ বৈশ্যাম্পয়ন   খেয়াল করেনি , সে দেখল  কথা গুলো বলেই  , কিছুক্ষণ আগেই হয়ত ইতর মানুষটি অন্তর্ধান হয়েছে !  তাকে দেখতে পেল না  ।
আলে গড়িয়ে যাওয়া জলের মতনই , গুহার বাইরে থেকে ভোরের আলো ক্রমশই ভিতরে এসে পড়েছে । এখন বসে থাকলে সন্ধ্যার আগে রাজা জনমেজয়ের রাজধানীতে পৌঁছাতে পারবে না।
                                                                     ৩
রাস্তায় নেমেই আগের রাতের দুঃস্বপ্ন , বৈশ্যাম্পয়নকে তাড়া করছিল । এখনো অব্দি যতটুকু মনে পড়ছে তা হল ,  আশ্রয়মুখর হয়ে সে গুহার ভিতর বসল । হাতে ছিল জ্বলন্ত কাঠ  আর কমণ্ডলু । বাঁ’ কাঁধের  ঝোলা থেকে  সে নিজে কিছু ফল খাবে , তাই গুহার মেঝেতে বসে পড়ল । কমণ্ডলুর  জল দিয়ে মুখ ধুয়েছে । ফল খেয়েছে । তারপরই চোখে তন্দ্রা ! ঘুম – ঘুম ভাব ।  এরপর আর কিছু মনে নেই ।
মাঝরাতেই হবে হয়ত , নাকে দুর্গন্ধের জন্য চোখ খুলে আগুনের উল্টো দিকে , সেই ইতর শ্রেণীর মানুষটা!
তারপর ?
এমনভাবে সে এসে প্রাণ ভিক্ষা চাইছিল , খাবার দিল ।  ইতরটি তারপর চলেও গেল ! সে গেলেও এমন অনেক  কথাই বলে গিয়েছে , যা বৈশ্যাম্পয়নের মনে প্রশ্ন তুলেছে । এই মানুষটি পূর্বপরিচিত না তো ? যদি  তাই হবে , তাহলে চিনতে এত অসুবিধা কেন ? আর যদি অপরিচিতই হবে , তাহলে যে মহাকাব্য এখনো পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি , জনসমক্ষে ; সেই সাহিত্যের পিছনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র টের পেয়ে গেল  ! এই ব্যাপারটা ভাবতেই , শরীরের রোম  খাড়া  হয়ে উঠল । সে ভাবছে , যে একমাস সে ক্ষত্রিয়দের মারণ যজ্ঞের   পৌরোহিত্য  করেছিল , সেই  দিন গুলোতে   তার পরিচিত কেউ ছিল ?
এইবার খুব ভালো করে , মোলায়েম ভাবে নিজের  স্মৃতিকে চাপ দিল ।

এক দীর্ঘ  সময়ের অপেক্ষার পর , শেষ পর্যন্ত  ব্যাস মুনি একটু স্বস্থির  নিঃশ্বাস ফেলল । সে অবশেষে  ভারতবর্ষের পরিচয় লিপিবদ্ধ করে ফেলেছে ।  যে দীর্ঘ স্ম্য ধরে ক্ষমতা দখলের লড়াই হয়েছে ,  শ্রেণী  সংগ্রামের জন্য চলেছে সংঘর্ষ , সব কিছু নিজের চোখে দেখেছে । এই দিন গুলোয় ব্যাসের খুব কাছের বিশ্বাসযোগ্য ছিল বৈশ্যাম্পয়ন । সে নিজেই সব কিছু সংগ্রহ করেছে । এখানেই নয় ক্ষত্রিয়রা যখন দেখল অরণ্যভূমি দখলের জন্য সর্পকূলের বিনাশ আবশ্যক । ঠিক তখনই ব্যাসের সাথে তারা চুক্তিতে বসল ।

ব্যাস এমনই এক  যুদ্ধ পরিস্থিতিতে  দেব ভূমি থেকে ফিরেছে । আশ্রমে মুনির ফিরে আসায় সকলেই বেশ আনন্দিত ।
তখন মধ্যসকাল । গ্রীষ্ম ঋতুতে , খোলামেলা হাওয়ায় ভাসছে গাছের পাতা । ব্যাস মুনি  প্রবেশ করলেন । সাথে দেবতাদের তরফ থেকে প্রচুর উপটৌকন  । এর সাথে অনেক পিছনে ,  জালের ভিতর কালো পশু । ভীষণ নোংরা আর বিশ্রী গন্ধে ভরা ।
বৈশ্যাম্পয়ন বলল – গুরুদেব  আপনার সাথে সমস্ত উপটৌকন  তাৎপর্য বুঝতে পারলেও । এই জালে কী আছে ?
ব্যাস মুনি বলল – সাক্ষাৎ মৃত্যু । সর্পকূলের এক জন্তু বিশেষ । রাজা জনমেজয়ের কাছে একে পাঠানো হবে। যাতে তিনি বুঝতে পারেন , আমাদের এই সর্প নিধন যজ্ঞে অনুমতি আছে । আমি জানিনা , এটা মারা গিয়েছে কিনা ! আমি অরণ্যে ঘুরছিলাম , দেখি একজায়গায় এদের জটলা হতে । আমার সাথে থাকা লোকেরা আক্রমণ করে ওদের হত্যা করল । আমি ভাবলাম কয়েকটাকে ধরে এনে প্রিচ্য করাই । তোমরা তরুণ সন্ন্যাসী । সব কিছুতেই অভিজ্ঞতা থাকা দরকার । একে নিয়ে পরীক্ষা করে নিজের জ্ঞান বৃদ্ধি কর । তুমিতো ওদের ভাষা কয়েকদিন আগেই চর্চা করছিলে ।
-ঠিকাছে গুরুদেব ।আমি এটাকে পিছনের পরীক্ষা কক্ষে নিয়ে গিয়ে রাখছি ।

বিকেলের আলো তখন মিশছিল , অরণ্যের পাতায় –পাতায় , ঘাসেদের তুলতুলে শরীরে , পাখিদের মোলায়েম স্বপ্ন ভরা চোখে । এই সময় পৃথিবীতে ধীরে –ধীরে রং পাল্টায় , মনের সংগোপনে  , জমা হয় কথা । এখনই গোধূলি সন্ধ্যার সাজে সেজেছে প্রকৃতি । খোলা সরবরের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছে ।
সূর্যাস্তের পরেই , বৈশ্যাম্পয়ন আশ্রমে ফিরে এলো । তার মনে হল , পরীক্ষা কক্ষে সেই জীবটি এখনো বেঁচে আছে ? যদি থাকে , তাহলে এটাই পর্যবেক্ষণের উত্তম মুহূর্ত  ।

খুব দ্রুত কক্ষে ঢুকে , দরজা বন্ধ করে দিল । কক্ষের ভিতর জালে জড়ানো জীবটি ধুঁকছে !
-আপনি ভয় পাচ্ছেন ! আমরা সাপেদের সংরক্ষণ করি । আমরা আপনাদের কাছে পশু হলেও , আমরা মানুষ । আমাদের হত্যা করছেন নির্বিচারে , আমাদের প্রজন্ম নষ্ট করা হচ্ছে । আর আপনারা এই মৃত্যু যজ্ঞকে ধর্ম যজ্ঞ বলছেন ! ভালো , এই আপনাদের বিচার ! সভ্যতা !  বৈদিক পরম্পরা ! আমাদের অরণ্যও আমাদের কাছে থেকে কেড়ে নেবেন !
-আমি ব্যাস মুনির শিষ্য  বৈশ্যাম্পয়ন ।
-আমি আপনার পরিচয় অনেক আগেই জেনেছি ।  আপানার  সাথে দেখা করবার জন্যই গিয়েছিলাম । আপনার গুরু বিনা দোষে আমায় আর আমার অনুচরদের আক্রমণ করল । আপনি আমাদের ভাষা বুঝতে পারছেন , আমিও  শিখেছি , কেননা এইরকম আশ্রম আমাদের অঞ্চলেও রয়েছে । তাই বলছি , আপনারা আমাদের কদাকার , ইতর ভাবেন । তা ভুল । আমরা সর্পকূলকে সংরক্ষণ দিয়েছি । আপনারা আমাদেরই সর্প বানিয়ে , হত্যা করছেন । সাপ আমাদের জীবিকার অঙ্গ । তাদের  পোষ মানিয়ে খেলা দেখাই , আবার তাদের বিষ বিক্রি করে জীবিকা চলে । তাদের রক্ষা করতে হয় বনভারসাম্য রক্ষার জন্য । আপনারা আমাদের এই  জীবনধারার সাথে একেবারেই পরিচিত নন । তাই আমাদের মেনে নিতে পারছেন না।
-তুই কী বলতে চাইছিস ?
-একটা সত্যি কথা , আপনারা এখনো লিখতে শেখেন নি । আমি এই সত্য  শুনে নিয়েছি  ।  এটাও জানি আপনারা যে মহাকাব্য রচনা করেছেন তা সংরক্ষণের জন্য , লিখতে হবে । তাই আপনার গুরু দেবতাদের শরণাপন্ন হয়েছে । তারা রাজী হয়েছে  , কেননা তাদেরও প্রশস্থির দরকার , এরজন্য  সাহিত্য উত্তম মাধ্যম । তারা সাহিত্যের মাধ্যমেই মানুষের মনে ভীতির সঞ্চয় করতে চায় ।  ভারতের সভ্যতার সাথে সাহিত্যের ধারা এমন ভাবে জড়িয়েছে , যেমন এখানকার নদী , অরণ্য । আমরা এর কদর করি । তাইতো বুঝেছি , আপনারা চক্রান্ত করে সাহিত্যই বদলে দেবেন !
-তুই এত সব গোপন কথা  জেনেছিস ! বাঃ ...
-প্রভু ,   ব্যাস নিজের পুত্র শুকদেবকে প্রথম মহাকাব্য পড়ে শুনিয়েছে  । এই কাজ তিনি অরণ্যে  একান্তে থাকাকালীন করে  ফেলেছেন। সেই অরণ্যে শুক আর ব্যাসের মধ্যে যখন কথা চলছিল , আমি শুনে ফেলেছিলাম । আপনাদের মহাকাব্য আমিও জানি  । এই মহাকাব্যে যতটা দেবতাদের ভূমিকা রয়েছে , ততটাই ক্ষত্রিয় , ব্রাক্ষ্মণ  আর আমাদের মতন বনবাসীদেরও ।অথচ  পরিকল্পনা করে আমাদের অস্তিত্ব  অস্বীকার করছেন ! আমাকে মুক্ত করুন   । আমি আপনাকে প্রধান পুরোহিত করব ,আমরা আমাদের শ্রেণীর  কথা  বলব ।  তার নেতৃত্ব দেবেন আপনি । আসুন আমরা বন্ধু হই ।
-কেন ?
-আমরাও প্রতারিত ,আর আপনিও । আমি বন্ধুত্বের মর্যাদা রাখব । কথা দিচ্ছি ।
-তুই কিছু খাবার খাবি । এই নে... আমি কাল আসব । তখনই এই নিয়ে কথা হবে ।
                                                            ৪

বৈশ্যাম্পয়ন দেখল , সে এই গরমে দ্বিগুণ ঘামছে !  আসলে সে একটা হত্যা কাণ্ডের সাথে জড়িত । সেই ইতর মানুষটি , মানে যাকে সে গুহায় দেখেছিল , তার মুখ  গুরুর  হাতে বন্দী হয়ে আশ্রমে নিয়ে আনা  ইতর সর্পকূলের ব্যাক্তিটির মতনই  । নিজের হাতে তাকে ফল খাইয়ে ছিল , এই ফলে মাখানো  ছিল বিষ ।  মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বার   আগেও সে বিশ্বাস করেছিল  বৈশ্যাম্পয়নের বন্ধুত্বে ।   শুধু তাই নয় , ফল যখন সে খাচ্ছিল , তার মুখ এক ক্ষুধা কাতর মানুষের মুখের  মতনই দেখাচ্ছিল ।
এই হত্যায় দুটো কাজ হয়ে গেল  । ব্রাক্ষ্মণ কখনই জীব হত্যার রক্ত হাতে মাখেনা , এই সত্যি যেমন রক্ষা পেল । তেমনই , ব্যাসের সাথে চুক্তি  স্থির হল - বৈশ্যাম্পয়নের  কাছে , সমাজে  নিজের প্রতিষ্ঠার  সুযোগ এসেছে  । এর পরিবর্তে অবশ্য তাকে নিজের সাথে আপোষ  করতে হবে ।

ব্যাস  কথা দিয়েছিল , ষাট লক্ষ শ্লোকের মধ্যে এক লক্ষ  রচিত  শ্লোক   প্রচারের অধিকার বৈশ্যাম্পয়নের  কাছে থাকবে । সে এই শ্লোক  মনুষ্যলোকে প্রচার করতে পারবে । এর বদলে সর্প কূলের  প্রতি অন্যায়ের যে অধ্যায়ের কথাটা , সে জেনে গিয়েছে , তা ভুলে যেতে হবে ।
জনমেজয়ের দরবারে মহাকাব্যের  প্রথম  কথাকার হয়ে উঠবার  লোভনীয় ঘুষটি , নিজের জাতির স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের থেকেও বেশি লোভনীয়  । সে অনন্ত যুদ্ধের কষ্ট ভোগ করতে চায়না । তার চেয়ে আপোষে  নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ ।
বৈশ্যাম্পয়ন বুঝতে পারল , গুহায় যে ইতর মানুষটির সাথে সে মুখোমুখি হয়েছিল , সেই মুহূর্ত  - আসলে একপ্রকার ভ্রমই  ছিল । এখন তাকে দ্রুত রাজা জনমেজয়ের দরবারে যেতে হবে । মহাকাব্যটি পাঠ করতে পারলেই ,  ইতিহাস  সৃষ্টি হবে ! বিবেকের অন্তর্ধান এখন খুবই জরুরি ।

  বৈশ্যাম্পয়নের  স্বপ্ন আজ এই গুহাতেই  বন্দী হয়ে রইল । সে এতটুকু বুঝেছে , এই পৃথিবীতে  সে একা  নয় । তার মতন আরও অনেক শোষিত মানুষ আছে । তাদের সাথে তফাৎ এতটুকুই , তারা লড়ছে আর  সে আত্মসমর্পণ করছে !
তাই কি ? এটাকে আত্মসমর্পণ না আত্মপ্রতিষ্ঠার লড়াই বলবে ? এখন আপাতত এত কিছু ভাবতে চায়না ।




-