ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৭

  অতিথিদের লেখা
   ----------------------------




১.)
 ডানা মেলে ধরো
                     ভারতী ধর

জলফড়িং, জলফড়িং, তুমি বুঝি -,

জল হতে উঠে এলে,

জলপরীর মতো ভেজা নয়, ভেজানো

ডানা দুটি মেলে।


ডানা হতে ঝরে নাতো জল,

পৎ পৎ ঝরা নীড়ে নেই কোলাহল,

ডানা হতে ঝরে পড়ে কাব‍্যের মালা,

আড়ালেতে বসে কত লেখনীর মেলা।


এখন তো সবে ভোর,

রঙ তুলি উঁকি মারে আকাঙ্খার আকাশে,

জমায়েত শিশির বিন্দু,

ঝরে যায় হৃদয়ের গভীর বিশ্বাসে।


সুখ আর সখের কত নীরব সোহাগ,

দুঃখ আর শোকের কত রাগের বেহাগ,

রঙের পাহাড় বলে, জলফড়িং - ডানা মেলে ধরো,

তোমাকে হতেই হবে বড়ো, অনেক বড়ো।।

                                                   



২.)    

🌼তুমি নেই🌼
কবি:কার‍্যশ্রী সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়
তারিখ ০৯/১১/২০১৭

ওই দেহখানি দেখি শায়িত আজ,
কত পূর্বজন্মের স্মৃতি মনে পড়ে,
সহস্র হারানো আনন্দ দুঃখ নয়নে
জন্মান্তরে যেন ঋতুর গানে।

অনন্তকালের আমার সুখ দুঃখ‌ বেদনা,
এই জগতের মায়াকাননে মাঝে।
জগতে অমৃতাংষুর আলো কত
তোমার বিরহ ব‍্যাথা আজ মনে যত।

বহুদূরে তুমি আজ সহস্র যোজন দূরে,
কত হাসি কত ভালোবাসা আর অশ্রুজলে
মনে ভাসে সেই সব কথা আজও
তোমার শায়িত দেহ দেখে  নিরবতার মাঝে,
জীবনের মধুর স্মৃতিগুলো গুমড়ে কাঁদে।





৩.)
 স্বপ্ন যাপন - শাশ্বতী ভট্টাচার্য
======================

এই যে তুমি আমায় বোঝ , আমার এ ঘর শূন্য রাখো
এটাই আমার পছন্দ না,
মেঘের থেকে কাজল নিয়ে আমার চোখে রাত্রি আঁকো,
এটাই আমার পছন্দ না |
দিনের আগেই শাটার তুলে সূর্যটাকে ঝুলিয়ে দাও
মনের থেকে একটু পুবে,
এটাই আমার পছন্দ না |
বৃষ্টি থেকে বারুদ খুঁজে বসন্তকে আগুন মাখাও
সেই আগুনে ফাগুন লাগে
সেটাই আমার পছন্দ না |

যখন আমার মৌনতারা তোমার সাথে গল্প করে
মোটেও আমার পছন্দ না |
এইযে তোমার গরম দুচোখ, আমার শীতল আঁকড়ে ধরে ,
সেটাও আমার পছন্দ না |
তোমার সাথে একলা হওয়া রাত দুপুরে স্বপ্ন যাপন
জেনো আমার পছন্দ না ,
শব্দবতী আমার ভেতর শব্দ যখন ঘুমিয়ে পড়ে
তোমার সাথে পাগল হয়ে শূন্য জুড়ে বন্য হওয়া
একটুও অপছন্দ না ||





৪.)
      —প্রাক্তন—
(প্রনবেশ চক্রবর্ত্তি/কুমার প্রনবেশ )

নিঝুম শীতল সান্ত নিশীথে নিদ্রা নিরুদ্দেশী
জানিনা কোথায় গিয়েছে হারায়ে স্বপ্ন পুরের বাসি।
আমি আছি জাগি নিদ্রা বিরাগি কাটেনা রাত্রি অপার,
স্মৃতীর তরীতে করি আরহন করিছি সিন্ধু পার।
তোমা হতে আজ যাইতেছি  দূর তোমারি সুখের তরে,
তুমি যে করেছো আমারে অপর নিজ মন হতে দূরে।
অশ্রু সাগরে ডুবিয়াছে নাও প্রবল সমুদ্র ঝড়ে,
হবে না যে আর খেয়া পারাপার ফিরিব কেমন করে?
ভালবাসা ছিল পিছু টান মোর ছিল মায়া বন্ধন,
সময়ের সাথে গিয়াছে ছিড়িয়া আমি আজ প্রাক্তন।
তাই হবে যেতে দূর হতে দূরে বিঁধিছে কন্টক চরনে
তবু যাব চলি হব না কো বাধা কারো সুখ প্রাঙ্গণে।
বিধাতা মোরে রাখিলে জীবিত বাঁচিব কিছুটা কাল,
আজি অন্তরে মৃত আমি প্রানী জিবীত কায়ার জাল।
কামনা করিব হইয়ো সুখি থেকো সুখে চিরদিন,
আঁখি জল হোক্ শুধু সাথী মোর  থেকো তুমি গ্লানিহীন।
রুব্ধ দুয়ারে একলা একাকী ভাবিছি অন্তহীন,
আমারে ভুলিয়া আছো তুমি ভাল দীর্ঘ কয়েকটি দিন।
কুহেলিকা শুভ্র নীরব যামিনী পত্রে শিশির রব,
রাত্রি প্রহরে  নিদ্রা বিরাগি জাগিছি জিবীত শব।।




৫.)
 *ভাঙনের পথে*
       *শাল্যদানী*

*এক*

আমায় ভালোলাগলে আপত্তি নেই…
ভালোবাসলে আপত্তি আছে ।
তোমায় জড়িয়ে ধরতে ভালো লাগে বটে,
কিন্তু ভয়ও লাগে পাছে তোমায় ধর্ষন না করে ফেলি…
কারন নিজের ওপর ভরসা থাকলেও নিজের আবেগের ওপর ভরসা নেই…!

*দুই*

চলো আবার আগের মতো গল্প করি…
কাজের চাপে ভুলেছিলাম তোমায়,
কিন্তু এই অলস সময় কাটছে না।
চলো আবার আগের মতো নিষিদ্ধ হই…

*তিন*

হটাৎ করে প্রেমে পড়্লাম…
এই দৃশ্যটাতো চিত্রনাট্যে ছিল না…
লাইট-শাউন্ড-ক্যামেরা-অ্যাকশান বলার আগেও-
আর একটা গল্পো থাকে যা সিনেমার থেকেও অনেক দামি…

*চার*

ভালোবাসা কি তা বোঝার অনেক আগেই-
ভালোবাসি বলতে শিখেছিলাম।
সত্যি বলতে কি আজো ভাবি
ভালোবাসাটা আসলে কি আর কোথায় থাকে।

বিশ্বাস আর ভরসা শব্দ দুটো আমায় হাসায়।
স্বর্গের নন্দন কাননের পারিজাতের মতো-
স্বপ্নময় একটা পরিহাস মনে হয়-
যা আমার চিত্রনাট্যে লিখতেও বেমানান লাগে।

চুল্লীটা আজো জ্বালিয়ে রেখেছি।
অপ্সরার মতো আজো ক্লান্তিহীন পরকীয়া।
ভালোবাসা ভিখ্যা করে বেড়ায় জীবনের রাজপথে-
'বাবু একটু ভরসা দেবেন!'

*পাঁচ*

একদিন স্ব্প্ন দেখো,
যেকোনো স্বপ্ন,লাল-নীল বা সবুজ…
আমায় বুঝতে পারবে,
যদিও বোঝাটা দরকার এমনটা নয়…!

তারপর তাকিও জানালার বাইরে
মনেমনে নিজের একটা গল্প লিখো।
আমার গল্প বুঝতে পারবে,
যদিও বোঝাটা দরকার এমনটা নয়…!

তবু মনে রেখো অল্প-সল্প
সত্যি বলছি…একটি মিথ্যে গল্প…!

*ছয়*

শরীরতো কবেই পেয়েছিস
তাই মনের খবর রাখতেই ভুলে গেছিস।।

বিজনে বসে ভাবি দুবেলাই..

৬.)
ছুটি কিনতে চাই...
           বাবলু বাউরী

কেউ কি জানো..
   ছুটি কোথায় বিক্রি হয়?
আমাকে ছুটি কিনতে হবে....

আমি এবার ছুটি চাই।

এখানে নিত্য বিক্রি হচ্ছে খবর।
   বিক্রি হচ্ছে হিংসা,
প্রতিদ্বন্দ্বী, আর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।

টাকার স্কুলে বিক্রি হচ্ছে রক্তাক্ত শিশুর শব।
   বিক্রি হচ্ছে গনতন্ত্রের  আঙুল।

এখানে বিক্রি হচ্ছে সন্ত্রাস,
        মৃত লাশের 'পরে সভ্যতার বাস।

কিন্তু আমি তো এগুলো চাই না!
  এগুলোর জন্য আমি বড় হইনি!

দেখে  আমার সংশয় হচ্ছে।
আগামীকাল কি বিক্রি হবে রবীন্দ্রনাথ?
    বিক্রি হবে কি ইডেন গার্ডেন?
সেই কবেই নিলামে উঠেছে ধর্মতলা।
      ঘুণ ধরেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।
উপাচার্যের টেবিল_টেবিলের কলম আজ আক্রান্ত।

বিগত কয়েক দশক নির্বাসিত পুরুলিয়া,
     ক্ষুধার্ত মানভূমের লোকশিল্প,
ঝুমুর,ছৌ আর ডহরের ঝিঙাফুল।

আমি আজ ছুটি চাই।
  আমার চুরি গেছে পড়ন্ত বিকেল,
লাল মাটির ধুলোয় ভেজা ফুটবল।

সন্ধ্যা হলেই ভেসে আসে মদের গন্ধ।
  গতকাল মৃত্যু পেল অন্তঃসত্ত্বা বোবা পাগলীটা।
তাই বুঝি আজ রক্তাক্ত বাসি চোখ শরীরের গন্ধ শোঁকে..

 এসব দেখে যাওয়া আমার  অভ্যস্ত নয়...
  সখ নেই  রাজনীতি করে আখের গোছাবার

আমি ছুটি চাই।
   এই কয়েকদিন ছুটি পেলেই
আমি গড়ে আনতে পারবো আলোয় মোড়া পথ।
বিবেকের কুঁড়েঘর।
  আর একটা দেশালাই কাঠি।
সব কিছুর পুড়িয়ে ছাই করার এবার সময় এসেছে।

৭.)রাজার ধর্ম থাকতে নেই
আরিফুল ইসলাম সাহাজি

রাজার কোন্ ধর্ম থাকতে নেই ,প্রজার ধর্মই রাজার ধর্ম হওয়া উচিত ।
রাজার ব্যক্তিক ধর্ম যদি
থাকে ,এবং সেটা তিনি যদি চান প্রতিষ্ঠা করতে
তাহলে দেশে নেমে আসে নিন্মচাপের মেঘ ।

ধর্ম আর রাজনীতি পৃথক মেরুর
পাশাপাশি থাকলেই সংঘাত ,
একটি ব্যক্তিমনের ,অন্যটি সর্বজনীন .....

রাজার ধর্ম থাকতে নেই ,যদি থাকে
সে রাজ্যে প্রজা থাকতে নেই
থাকুক রাজা তাঁর ধর্ম নিয়ে ।


৮.) ফিউস
       ব্রতীন বসু

অদ্ভুত শক্তি চল্লিশ পাওয়ারের বালবটার
একবার জ্বাললেই হল
আনাচে কানাচে পৌঁছে যায় আলো নিয়ে
কোথায় ফাটল কোথায় মাকড়সা
টিকটিকি,ভয়,যা সব ভয়
সব বুজিয়ে দেয়
আলো।
অদ্ভুত শক্তি চল্লিশ পাওয়ারের কলঘরের বালবটার
একবার জ্বাললেই হল।
আমি সেদিন ভূত দেখেছিলাম প্রথম
যেদিন সুইচ দিলাম জ্বলল না বালবটা
টক টক শব্দ।
অন্ধকার জামার বোতাম বন্ধ কলারের মত।
ছায়া নাচানো মোমবাতি।
ফাটল গুলো জ্যান্ত হয়ে উঠছে ক্রমশ।
পরের দিন বাবা ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি ডেকে বদলে দিয়েছিল বালবটা
কিন্তু আলো পারেনি আর বুজিয়ে দিতে সব।

ছেলেবেলার ফিউসটা একবার কাটল তো
জুড়ল না আর মাইরি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন