ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৭

রাতুল
আবু আইয়ুব আনসারী

আলোকোজ্জ্বল শারদীয় দুপুর৷ আকাশ ঘন নীল ৷ বর্ষাধোয়া গাছগাছালির সবুজ পাতায় রৌদ্ররশ্মি আছড়ে পড়ে পিছলে যাচ্ছে স্বর্ণলতার মতো ৷ শেওলা-ধরা ঘরবাড়ি-দালানগুলো রোদে শুকুচ্ছে, যেন তারা বিছানা-বালিশ, বর্ষার আর্দ্রতা তাড়াতে তাদের কে যেন মেলে দিয়েছে রোদে ৷ রাস্তার কারুকার্যময় রিকশাগুলো ঝকমক করছে আলোয় আলোয় ৷ রিকশার ঘণ্টির ক্রিং ক্রিং আওয়াজও যেন রোদে ঝিলিক দিচ্ছে ৷ এই চনমনে রোদের নিচে ঘাসগুলোও নেতিয়ে পরেছে ৷ মানুষগুলো খুবজরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরথেকে বেরুয় না ৷ কিন্তু রাতুল...।
অজোপাড়া গায়ের ছেলে রাতুল। মা নেই। বাবা অনেক আগেই মারা গেছে। দাদীর তত্ত্বাবদনে বেড়ে উঠছে। সারাদিন খেয়ে নেয়ে কোন কাজ নেই। কখনো ঘুড়ির নাটাই নিয়ে দৌঁড়াদৌড়ি। মাঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত চষে বেরানো। ভর দুপুরে দাদার বারণ দাদীর নিষেধ উপেক্ষিয়ে বদনা-জাল নিয়ে বিল নদীতে মাছ ধরার চেষ্টা।পুঁজজোর মেলা থেকে কিনে আনা বলটা তার প্রিয় সঙ্গী। সকাল বিকাল খেলতে যাওয়া তার নেশা ও পেশা। খেলা শেষ করে ভর সন্ধ্যায় রাস্তার পাশের তেঁতুল গাছে উঠে তেঁতুল খাওয়া তার অভ্যাস। পাশের বাড়ির সামনের নারিকেল গাছে লুকিয়ে না উঠলে পেটের ভাত হজম হয় না। লেচু না থাকলেও প্রত্যহ নাদের কাকার লিচু গাছে উঠা বাদ যায় না। স্কুল ফাঁকি দিয়ে কয়েকজনের টিম নিয়ে পুকুরে লাফালাফি করা।
এমন হাজারো প্রশ্ন
আরিফকে মারলো কে?
সানিয়াকে গালি দিলো কে?
কুমারের বই ছিরলো কে?
রাকিবের সার্ট খারাপ করলো কে?
পুতুলের বই লুকালো কে?
মাস্টার মশাইয়ের বেত ভেঙ্গেছে কে?
আজ পড়া পারেনি কে?
সব প্রশ্নের উত্তর রাতুল!

  • আজ সকাল থেকে সে বসে আছে। খাবার মুখে দিচ্ছে না। চোখ দিয়ে অঝরে পানি ঝরছে । ঘুড়ির নাটাই পাশেই পড়ে আছে। ফুটবলটা যেন তার শোকে নিথর হয়ে গেছে। খেলার সাথীরা ডাকছে। স্কুলের ছাত্র ছাত্রিরা স্কুলে যেতে বলছে। কিন্তু এখন রাতুলের এসবে মন নেই। একটা এক্সিডেন্ট মানুষকে এতো পরিবর্তন করে দিতে পারে? কাল তার দাদী মারা গেছে। তাই আজ রাতুল আর আগের রাতুল নেই। সে এক অন্য রাতুল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন