ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০

সম্পাদকীয় কলমে - শোভন অধিকারী

 

সম্পাদকীয় কলম:

শোভন অধিকারী

জন্ম, মৃত্যু, জরা, ব্যাধি এই চারটি প্রকারভেদের বিবর্তনেই ঘুরপাক খাচ্ছে গোটা জীব জগত। চাইলেও আমরা এটাকে এড়াতে পারব না, শেষের তিনটি বাস্তব অনেকটাই রুঢ়  যা ঘড়ির ঘন্টা সেকেন্ডের কাঁটা, হাসি- কান্না, ধনী – গরীব  কোনো পরিস্থিতি ই সে মানে না গর্জাতে না পারলেও নিয়তি মাফিক সে বর্ষাতে জানে। কালের নিয়মে বিনা মেঘে নামিয়ে আনে বজ্রপাতের ঘন্টা না আমরা সমাজের উন্নতম জীব হয়েও তাকে রুখতে পারিনা শত চেষ্টা করেও।তবে যেটা পারি সেটা হলো কম সময়ে রঙ্গ মঞ্চে নিজেকে ভালো রাখা সকলকে ভালোবাসা জীবনের চক্রবূহ্যে একটা পরিপূর্ণতার ছাপ রেখে যাওয়া। 




সাপ্তাহিক কলমে - সুনন্দ মন্ডল



  ত্রিতাপ ক্লেশ

  সুনন্দ মন্ডল


ক্লেশ মানেই জীবনের জাগতিক প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত। 

এক হস্তী শাবক

যার বড় বড় দাঁত, বিশাল দেহ কিংবা ঐ মোটা মোটা পায়ের ছাপ,

তবুও কিছু একটা থেকে বঞ্চিত!

তারও দুঃখ আছে, ক্লেশ আছে।


ভাষা জানি না, তাই ওদের কষ্ট বুঝিও না।

অবশ্য সব প্রাণীদেরই একই অবস্থা।

আসলে কথায় আছে না!

যে যা পায়, তা চায় না! 

আর যে যা চায়, তা পায় না।


আমরা তো নিমিত্ত মানুষ

কেবলই আত্মসুখে মগ্ন

একটু এদিক ওদিক হলেই 

বিস্বাদে ডুবিয়ে রাখি নিজেদের।


আমরা বুঝতেই চায় না, এই সমাজ ও প্রকৃতির সুখ পেতে গেলে স্বল্পতায় আবদ্ধ রাখতে হবে।

কোনোরকম অন্তহীন উচ্চাশা মানেই বঞ্চনা, হতাশা!


প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত দুঃখ হোক,

আর অন্য জীবের দ্বারা প্রাপ্ত অবহেলা

কিংবা নিজস্ব মন ও শরীর জাত কষ্টই হোক!

সবকিছুর মূলে আত্মদর্শন।


এই জরা থেকে মুক্তি পেতে গেলে বিলিয়ে দিতে হবে  সমাজদর্শনে, 

সবার মাঝে বিশ্বপ্রকৃতির সবুজ দোলনায়।

ভালোবাসতে হবে, দুঃখীদেরও আপন করতে হবে!

তখনই ত্রিতাপ ক্লেশ নয়, জাগতিক সুখটুকুই থেকে যাবে আমৃত্যু।

               





সাপ্তাহিক কলমে - পাখি পাল


"দুঃখের কিছু দাগ"

  পাখি পাল


আমি বলি দুঃখ,তুমি বলো কষ্ট,

সে বলে যন্ত্রনা, সত্যি এগুলো

ছাড়া জীবন ভাবাই যায় না,

প্রতিটা দিন মানুষ তো বাঁচতেই চায় নিজের মতো করে, কিন্তু কষ্ট-দুঃখ গুলো

তার পায়ে বেড়ির মতোই 

জড়িয়ে থাকে, পিছুটানে,

শিকলের দাগ যেমন লেগে

থাকে হাতে-পায়ে,ঠিক তেমনি

অদৃশ্যভাবে দুঃখের দাগ গুলো লেগে থাকে স্মৃতির গালিচায়, 

যেন প্রতিবার তারা আঘাত করে আমাদের মনোবল ভাঙতে চায়,

মনের গায়ে শত শত চাবুকের দাগ..দগদগে ক্ষত,

চোখ দুটো বুজে আসে, তবু ফুসফুস শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা চালায় অবিরত,

সাতরঙা রঙধনু ভাসে অল্পের জন্য,

জীবন-আকাশে রোদ-বৃষ্টির খেলায়,

এভাবেই চলে প্রতিনিয়ত বাঁচার লড়াই,

আর একটু..আর একটু..করে মনবলের চেষ্টায় ।





সাপ্তাহিক কলমে - শ্রেয়া রায়

 

অনুগল্প:-

শিরোনাম:-"ফিরে পাওয়া"

শ্রেয়া রায়



চার বছরের একটি ছোট্ট মেয়ে..গীত তার মায়ের সাথে দীঘার সমুদ্রের কাছে একটি ছোট্ট কুটিরে বাস করত। তার মা সমুদ্র থেকে মাছ ধরে তা বাজারে গিয়ে বিক্রি করতো এবং তা দিয়েই কোনো রকমে তাদের  দুজনের পেট চলত। মা আর মেয়ের দুনিয়াটা ছিল ভীষণ ছোট। আপনজন বলতে কেউই ছিল না। মায়ের সাথে সারাদিন গীত থাকতো, মা যেখানে যেখানে যেত গীতও মায়ের সাথে সাথে সেখানে যেত। সারাদিন কাজকর্মের পর সন্ধ্যা বেলা বাড়ি ফিরে আসত এবং রাতে ছোট্ট গীত মায়ের সাথে সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে বিভিন্ন গল্পে মেতে থাকতো। এই ভাবেই কেটে যেত তাদের সময়।


হঠাৎ একদিন এক ঝড় উঠল এবং তছনছ হয়ে গেল তাদের সাজানো জগৎ... স্বপ্নগুলো টুকরো টুকরো হয়ে গেল... বিচ্ছিন্ন করে দিলো তাদের এক দস্যু ঢেউ... ঘরবাড়ি তলিয়ে গেল জলের তলায়। মা আগলে রাখতে পারলেন না তাঁর ছোট্ট সন্তানটিকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেড়ে নিল সন্তানকে মায়ের কাছ থেকে। দিশেহারা মা পাগলের মত ঢেউয়ের সাথে লড়তে লড়তে সন্তানকে খুঁজে বেড়াতে লাগলেন... কিন্তু বারংবার চেষ্টার সত্বেও পেলেন না ছোট্ট শিশুটিকে খুঁজে। অবশেষে জ্ঞান হারিয়ে মা পড়ে রইলেন সমুদ্রের এক পাড়ে। এই ভাবেই কেটে গেল সেই দুর্যোগের দিনটা।


পরের দিন সকাল হতেই প্রথম সূর্যের কিরণে চোখ খুললেন মা.. চোখ খুলতেই সমুদ্রের চারপাশে তাকিয়ে দেখেন, তছনছ হয়ে গেছে সমস্ত কিছু, সবকিছুর ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে সমুদ্রের পাড়ে। তার মধ্যেই মা আবার অক্লান্ত ভাবে খুঁজে চলেছেন তার ছোট্ট শিশুটিকে। হঠাৎ এক পাশে দেখতে পেলেন তার শিশুটি অবচেতন ভাবে পড়ে রয়েছে। মা হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলেন শিশুটিকে দেখে এবং চিৎকার করে ডাকতে থাকলেন..জাগাতে থাকলেন তার সন্তানকে।অবশেষে মায়ের ডাকে চোখ খুলল ছোট্ট গীত এবং মা সন্তানটিকে বুকে আঁকড়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠে বললেন...

"শুনেছিলাম সমুদ্র যা কিছু নেয় তা সবই আবার ফিরিয়ে দিয়ে যায়... আজ তা স্বচক্ষে উপলব্ধি করতে পারলাম।"





সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০২০

কবি নীহার রঞ্জন দাসের কবিতা


 তুমি আদেশ করলে

------------------------নীহার রঞ্জন দাস

(এক)

তুমি আদেশ করলে

দ্রোহকাল ভেঙে দিতে পারি ।

তুমি আদেশ করলে...

(দুই)

তুমি আদেশ করলে

কুঁজো পিঠে এখনো

খোলা অরণ্যের হাওয়া

তোমার ওড়নায় ছোঁয়াতে পারি ।

(তিন)

তুমি আদেশ করলেই

এখনো সাইবেরিয়ার হলুদ পাখি

উপহার দিতে পারি ।

(চার)

তোমার মৌন যাপন ভাঙলে

এখনো আমি মেঘের জলে

আগুন জ্বালতে পারি ।

(পাঁচ)

তুমি চাইলে এখনো আমি

প্রদীপের নীচের অন্ধকারে

সূর্য বসাতে পারি ।

(ছয়)

তুমি চাইলে এখনো আমি

উপোসী রাত ভুলে

প্রেমের গান গাইতে পারি ।

(সাত)

তুমি চাইলে এখনো আমি

নিষিদ্ধ পল্লীর মেয়েকে

কুমারী পুজোয় বসাতে পারি।

(আট)

তুমি নীরবতা ভাঙলে

আমার ভাঙা ঘরে আলো জ্বলে

শুষ্ক হৃদপিন্ডটা আকাশে মুখ তুলে ।

সাপ্তাহিক কলমে - প্রীতম

 

কৃতকর্ম

প্রীতম রায় 


না না ভেবো না 

আজ আমি অভিযোগ জানাতে আসি নি।

বরং স্বস্তি পেয়েছি হুজুরের রায়ে।

জানি আমি দোষ করেছি, 

প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে দেখিয়েছি

বহু নিয়ম কে বুড়ো আঙুল। 

বহু বছরের শয্যা ত্যাগের পর ইচ্ছে হলো 

অন্ধকার টা ছেড়ে এবার একটু আলোর মুখোমুখি হই।

জানি তুমি সেই সুযোগ আমায় দেবে না

বহুদিনেএ আলোর বিপরীতে যাপন করা আমিটা 

এখন ও বোধ হয় যায় নি।

তাই হয়তো এখন ও স্বপ্ন দেখি সেই একদিনের।

আচ্ছা বলতে পারো আমার বয়স টা কত হবে।

বলতে পারো কুঁচকে যাওয়া চামড়ার পিছনে,

আমি কি তরুন না অর্ধমৃত 

এক বয়স্ক রোগ গ্রস্ত কঙ্কাল।

যে তোমার নিকট মৃত্যুর ভিক্ষা চাইছে

আর তুমি পাপ – পূন্যের দাড়ি পাল্লায় মাপছো

কৃতকর্মের দোষ গুন গুলো কে। 






রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২০

সাপ্তাহিক কলমে - জি কে নাথ

 

সন্ধান    

জি কে নাথ 


হলুদ পাখির মুখে ওড়ে জন্ডিসের হলদেটে আকাশ, খুদকুঁড়ো

 তামাটে সবুজ গড়নে আধখানা আর্তনাদ টুপটাপ এক ঢেউয়ে

বুক পেতে শুয়ে আছে মূর্ত শালুকপাতায় নিহিত বিষণ্নতা

 নিজের ভেতরে থৈ থৈ জল


এ মৃদু জলের তরঙ্গশব্দে বাঁধা আজন্ম সেতারভাঙা ছেঁড়া তারে বন্দি চেতনা,

আর্দ্র হয়ে আছে ঘুম

লোহিত সাগর পার হয়ে আসা সমুদ্রস্বর বিষাদ গম্ভীর বিরাট ছায়া ফেলে আলোড়িত নাগরিক সত্তায়

ক্রমে অক্ষর সরে গেলে , ফুরিয়ে যাওয়া খাতার পাশে কলতলার এঁটোবাসনগুলো জেগে ওঠে মৃত শব্দের শাদা জোছনায় 

তলে তলে পোড়ে শহর উল্লাস, তা ধিন ধিন মুখোশ নাচে ,

পুতুলের নিবিড় ছায়া নামে ক্ষেতে

হ্যাজাক জ্বেলে নীল পিকনিক 

আঠাশটা বছর হারিয়ে গেছে, একলা রয়েছি জীবন নির্মাণে 

সদ্য পাতী শীতলার মতন মুখরতায় উৎকীর্ণ পোড়ামাটির মুখ ফেটে গঙ্গা যমুনার মতো কবিতায় মিশে যাচ্ছে স্বদেশ

 এ শরীরের গাঢ় মনস্তাপে ঝলসে ওঠে 

ধিকি ধিকি বেগুনি আঁচে এখন  অন্ধকারের সেলাই করা সুতহীন শয্যা 

চোখের সামনে নামের আড়ালে স্বপ্নপূরণের বেদনামাখা ভাঙা ডানা মেলে ধূসর শব্দ ভেদ করি ক্রমে

নিবিড় বিরহের অভিমুখে ঘুরতে থাকে হাওয়াহীন বাতাসে ভরা ভাদরের পদধ্বনি, 

কুকুরে কুকুরে মৌতাত ,আঁতাত

চিহ্নে ভরে ওঠে ডোবা শরীরের সুলুকসন্ধান, চিহ্নে ডোবে চিহ্ন

এখন অবিরল ছায়ার স্রোত ভেঙে ভেসে পড়তে চায় বৃত্তের চাকভাঙা কথা

নিশ্চুপ আঁধারে বুকের সরীসৃপ বাড়ে সুদীর্ঘ ইতিহাস পরিক্রমার মতো 

 বিড়িপোড়া মুখে ধূসর আস্ট্রে উল্টে গেলে বিবেক হয়ে ওঠে মন্দার বাজারে সস্তার রেশন চাল! ....ফোটে রাতের তারায় তারায় উজ্জ্বল দানায়

শীতে হারিয়ে যাওয়া অস্পষ্ট ঘুমের ভিতর এখন মানুষ খুঁজতে বেরোই ।





                          


সাপ্তাহিক কলমে - রাজা অধিকারী

 


আজ আকাশটা দুঃখের

 রাজা অধিকারী


বৃষ্টি পড়ছে মাটিতে, করছে মৃদু শব্দ।

প্রতিদিন আমার একইরকম কাটছে, 

আমি যে আজও বাড়িতে আবদ্ধ।

চিন্তায় মগ্ন থাকি সারাক্ষণ,

এই জরাজীর্ণ শরীরে জমছে মনের কষ্ট, হচ্ছে রুক্ষ্ম।

সুখের পিছনে দৌড়াতে গিয়ে মিলেছে

শুধু অশেষ দুঃখ।

রাতদিন জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি,

বারে বারে ফিরে পেতে চায় ,

সেই ফেলা আসা দিন,

যেখানে রামধনুর মতো মিলিত ছিল সমস্ত স্মৃতিরা।

আজ মনের মধ্যে নেমে আশে দুঃখের ঢেউ।

অক্লান্ত পরিশ্রমের পরেও মুখে ছিল হাসি,

মনে হত মেঘের ভেলায় চড়ে আকাশেই শুধু ভাসি।

কিন্তু আজ সেই আগের আকাশটা নেই,

আজ আকাশটা শুধুই দুঃখের।




সাপ্তাহিক কলমে - জয়ীতা চ্যাটার্জী


 সীমান্তে

জয়ীতা চ্যাটার্জী


আজ বুঝি একা বসে আছি মহাশিলার ওপর, 

শরীরে ভরেছে বাতাস মন যেনো সাদা আস্তরণ কাপড়। 

সমুদ্র ফেনা ঘিরে থাকে বৃত্তাকারে আমায়, 

মনে পড়ে সে পরিচিত ধ্বনি, বারংবার আমাকে কাঁদায়

ভালোবাসি  বলে মুখে তাও এতো দীন ঘরে ঘরে, 

সমস্ত সত্তা জুড়ে সেই স্বর ভর করে

ভুলে গেছি চেনা নাম, যা ভোলার কথা ছিল না কখনো, 

সব ছাপিয়ে জেগে আছে  সেই ধ্বনি সরব এখনো

কে যেনো জিজ্ঞেস করে এ জীবন দিয়ে দিলি কাকে? 

হৃদয় ও হারিয়েছে সন্ন্যাস কি জানি কার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে? 

আজ ছড়িয়ে দিয়েছে পাতা প্রতিটা পথের বাঁকে বাঁকে, 

কে যেনো ডেকে যায় বারোমাস, কার ছবি আঁকে। 

হয়তো শোনে না কেউ তবু সে ডাক ভিতরে জীবিত থাকে, 

বুকের ভেতর হাহুতাশ দেশ কি জানি কাকে একমনে ডাকে?





শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০২০

সাপ্তাহিক কলমে :- সুদীপ নীল তন্তুবায়

 

সম্পর্ক ও শ্রাবন 

সুদীপ তন্তুবায় নীল 


একটা শ্রাবন শেষ হয়ে গেলেই 

অধ্যায় জুড়ে উপসংহার লেখে স্বাস্থ্যবতী বৃষ্টি।

ভাদ্রের মোহময়ী শরীর জুড়ে লেখা হয় 

স্থানান্তরের গল্প। 

পথের বৃত্তে মুখোমুখি দুটো যৌবন 

আবেগের ক্যানভাসে ষোড়শী নদীটির ছবি আঁকে।

এক একটি নিস্তারের লোভ 

অনিহার কচি হাতে তুলে দেয় 

পূর্ণচ্ছেদ ভালোবাসার দলিল।

সম্পর্ক বড্ড সহজাত।

একটা শ্রাবন শেষ হয়ে গেলেই সম্পর্ক শেষ হয় না।






সাপ্তাহিক কলমে : - শ্রেয়া রায়

শ্রাবণের শেষ বেলায় বিষাদের শ্রাবণধারা

শ্রেয়া রায়

সকাল থেকেই অঝোড়ে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, আকাশে কালো মেঘ ঘিরে চারিদিকে আঁধার নেমে এসেছে। রাস্তা ঘাটে জলে থৈ থৈ। তবুও কাজকর্ম তো আর থেমে থাকলে চলবে না। রোজের মত পেখম বেরিয়ে পড়ল অফিসের উদ্দেশ্যে। মুষলধারার বৃষ্টিতে অর্ধ ভিজে অবস্থায় পৌঁছালো অফিসে। 

অফিসে হাজার কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও পেখমের উদাসীন মন বারে বারে অতীত স্মৃতির ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। মনে পড়ে যাচ্ছে শ্রাবণের শেষ বেলায় হারিয়েছিল অভির চোখের প্রথমবার। 

মন গুনগুন করে উঠেছিল কবি গুরুর গানে..

"কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে,

হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব..."

প্রথম প্রেমের প্রথম অনুভূতি শুরু হয়েছিল এমন শ্রাবণ ধারায়। সেই বৃষ্টিভেজা দিন, একসাথে ভেজার জন্য অভির জোর করা, বৃষ্টিতে ভিজে আইসক্রিম খেয়ে আবার একসাথে দুজনের ঠান্ডা লেগে জ্বরে ভোগা... কতই না পাগলামিতে ভরা ছিল দিনগুলো। সেদিনের শ্রাবণ ধারায় ছিল এক অদ্ভুত প্রেম-আনন্দ-অনুভূতি। পেখমের মনময়ূরী আনন্দে নেচে উঠেছিল..মেতে উঠেছিল গুনগুনিয়ে সেই কবিগুরুর গানেই...

"এমন দিনে তারে বলা যায়,

এমন ঘনঘোর বরিষায়....."

বৃষ্টির সোঁদা গন্ধে ছিল অভি আর পেখমের মিষ্টি প্রেমের ঘ্রাণ।আজ সবই অতীত.. অতীত স্মৃতির পাতায় আজ সবই বন্দি। অভির উপহার দেওয়া মুহূর্ত গুলো পেখম আজও যত্নে সাজিয়ে রেখেছে তার একান্তের হৃদয় কুঠুরিতে। যদিও অভির মনে আজ পেখমের জন্য নেই কোনো অনুভূতি.. নেই কোনো স্থান... কারন সে ঘর বেঁধেছে অন্য মনের মানুষকে নিয়ে.. ভুলে গেছে পেখমকে..

আজ বাইরের শ্রাবণ ধারার সাথে পেখমের আঁখি জুড়ে ঝড়ছে অঝোরে কান্নার বরিষধারা। ব্যর্থ প্রেম আজও খুঁজে যায় সেই অভিকে... অভির স্পর্শকে... ফিরে পেতে চায় সেই অভির মনটাকে.. যেই মনটা একসময় ছিল শুধু পেখমের..।







সাপ্তাহিক কলমে :- জয়ীতা চ্যাটার্জী



শতাব্দী

জয়ীতা চ্যাটার্জী


আজ সে চলে যাচ্ছে দূরে, 

যে ভাবে আমার গান শীত তাড়িয়ে নেয়। 

সে চলে যাচ্ছে দূরে মিশে যাওয়া বিকেলের রোদ্দুরে

সে চলে যাচ্ছে মিলনের সমস্ত অসম্ভব সম্ভবনাকে ফেলে ছুড়ে, 

সে ছোটো হয়ে আসে বুনতে বুনতে উলের গোলার মতো

ঘুমন্ত হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নাতুর যেন কিশোর শরীর চুম্বনরত,

সে চলে যাচ্ছে দূরে গলতে গলতে ছোট হয়ে যাওয়া মোম, 

আগুনের মধ্যে জন্ম নিয়েছে যেমন হোম

মন খারাপ মুছতে মুছতে তার সে চলে যাওয়া

মেঘের দিকে ডুবিয়ে মুখ উড়িয়ে দেয় হাওয়া

সে চলে যাচ্ছে সন্ধের শেষের মতো প্রায়

সমুদ্রশূন্যে শতাব্দী এমন করেই একদিন দূরে চলে যায়।











সাপ্তাহিক কলমে :- শোভন অধিকারী


"শ্রাবণের শতরূপ"

 শোভন অধিকারী


হে শ্রাবণ প্রকৃতির মাঝে তুমি এক অপরূপ সৃষ্টি,

শ্রাবণ মাসে বৃষ্টির জল, মনে বয়ে আনে আনন্দের ঢল 

শ্রাবণ মাসের বৃষ্টিতে ভিজতে লাগে ভালো,

শ্রাবণ মাসের মেঘলা আকাশ হয়ে আসে কালো।

শ্রাবণ মাসে বাইশে শ্রাবণ মনে পড়ায় কবি গুরুর প্রয়ান দিবস।

শ্রাবণ মাসে কদমের ডালে চড়ুই গায় গান।

শ্রাবণ মাসে কদমের গন্ধে ভরে যায় প্রান।

শ্রাবণ মানেই গ্রাম বাংলার গাছে গাছে তালের রব রব।

শ্রাবণ মানেই কত শত ভক্ত ঢালছে জল ভোলানাথের মাথাতে।

শ্রাবণ মানেই ভালোবাসার আকাশ, 

সেই আকাশের নীচে প্রেমিক প্রেমিকা মত্ত 

ভালোবাসার ছোঁয়ায়।

যা সমস্ত চোখে ছড়িয়ে দেয় অন্যরকম মুগ্ধতা।

শ্রাবণ মাসের উদাসী হাওয়া বিকাল বেলায়,

তুমি আমি করবো দেখা নদীর ধারে,

শ্রাবণ মাসের শান্ত পরিবেশ 

তুমি আমি চিরকাল যাবো ভালোবেসে।



সাপ্তাহিক কলমে :- পাখি পাল



'শ্রাবণের বেলাশেষে' 

 পাখি পাল


চাতকের চাওয়ায় আর বৃষ্টি নামলো কই,

ভরা শ্রাবণেও তার গলা শুকিয়ে কাঠ,

এভাবেই বছর আসে বছর যায়,

বুকফাটা কান্নায় আজ চৌচির ধূসর মাঠ,

শ্রাবনের ধারায় আজ যখন সবটা সবুজ,

চারিদিকে প্রকাশ পাচ্ছে প্রকৃতির আকৃষ্ট রূপ,

তখনও শেষের এক দামামা বেজে চলেছে কানের কাছে,

আর ঈশ্বর শত ডাকাডাকিতেও চুপ,

উল্টে-পাল্টে চলে ভাঙা-গড়ার খেলা,

দুমড়ে মুচড়ে আবার হাত চেপে করতে হয় মসৃন,

ডাইরী শেষ হয়ে যাবার পরেও,

কিছু ছেঁড়া পাতা থেকে যায় অমলিন,

অধ্যায়গুলো শেষ হয় একে একে,

তবু উপসংহার টানতে এখনো কিছুটা বাকি,

জানিনা এ জীবনে শ্রাবনের শেষে,

বৃষ্টি কি পারবে হৃদয় ছুঁতে নাকি দেবে ফাঁকি।






সাপ্তাহিক কলমে :- আমিমোন ইসলাম

 

মিথ্যে

আমিমোন ইসলাম


টিপ টিপ জল পড়ে, সারা বিকেল ধরে,

ভেজা ভেজা ছাতায়, কেও এখনও অপেক্ষা করে।

গুমড়ে গুমড়ে মেঘ, প্রেমিকের মনে ক্ষত,

যাচ্ছে যাচ্ছে চলে, গোপন সময় যত।

সামলে সামলে চলো, রাস্তা শ্যাওলাময়

একটু একটু জোরে, আঁটকে রাখতে হয়৷

গুড়ুম গুড়ুম বাজে, সবাই পায় ভয়,

ভয় ভয় পেলে, তাকে জাপটে ধরতে হয়।

সেলাই সেলাই দেওয়াল, শহরজুড়ে বোনে,

নতুন নতুন প্রেমিক, আঙুলে সময় গোনে।

প্রথম প্রথম চুমু, ঠোঁটে রক্ত ঝরে,

আদর আদর চাপে, জামার বোতাম ছেঁড়ে। 

শান্ত শান্ত গাছও, বোশেখের ঝড়ে নড়ে,

ঘুপচি ঘুপচি ঘরেও, প্রেমিকেরা প্রেম করে।

কালো কালো মেঘ জমেছে, শ্রাবণের শেষ বেলায়,

মিথ্যে! মিথ্যে! প্রেম মিথ্যে গরীবের ফাঁকা থালায়।









সাপ্তাহিক কলমে :- সুনন্দ মন্ডল


 শ্রাবণে মঞ্চ সজ্জা

  সুনন্দ মন্ডল


  শ্রাবণ শেষের বেলা

  ভাদুর গানে নাচে মন।

  ঝরঝর বৃষ্টির খেলায়

  উৎফুল্ল হয় এ জীবন।


  রঙিন সূর্যের গলিত আভা

  বেলা শেষের ডাকে মজে।

  প্রকৃতির মঞ্চে মাহেন্দ্রক্ষণের সন্ধ্যা

  শাঁখের ফুঁয়ে আঁচল নামায় লাজে।


  অস্তগত রোজনামচায় জীবন

   নতুন দমে নতুন অধ্যায়ে।

   ভালোবেসে দৃঢ় সম্পর্কে বাঁধতে

   শ্রাবণ শেষের নতুনকে নেয় জড়িয়ে।

   





সম্পাদকীয় কলমে : সুদীপ নীল তন্তুবায়

 

 সম্পাদকীয় কলম :-

সুদীপ নীল তন্তুবায়  

 শ্রাবন শেষের বেলা পার হয়ে ভাদ্রের ভালোবাসা 

 জানালার কাঁচে যৌবন আঁকে। মেঘঢাকা চাঁদের চিবুক থেকে কেড়ে আনে অঝোর অন্তমিলের চুম্বন। ব্যক্তিগত গল্পগুলো স্নানের ঘরে ভিজতে ভিজতে ভুলে যায় অষ্টাদশী বৃষ্টির কথা।

বৃষ্টি ভোলে না। তাই তো ভালো থাকার বৃত্তটা ভালো রাখার কম্পাস দিয়ে বড়ো যত্নে এঁকে দেয়। 

সাপ্তাহিক বৃত্তে আজ শ্রাবন শেষের জলফড়িঙ ভুলে যায় নি ভেজা গন্ধের পূর্ণবৃত্ত।  

 যাঁদের লেখনীতে জলফড়িঙের এই সংখ্যা সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁদের প্রতি আমার এক ভারতবর্ষ ভালোবাসা। অষ্টাদশী বৃষ্টিময় অনন্ত শুভেচ্ছা। 




মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট, ২০২০

আমদের খরচ তুলে ধরা হলো। "সামান্য" ই-বুক বিক্রির

 নমস্কার আমি সুদীপ্ত সেন,জলফড়িং ওয়েব ম্যাগাজিনের ফাউন্ডার৷ আমরা আমফান ঘূর্ণিঝড়ের পর বিপর্যস্ত মানুষদের সাহায্যের জন্যে সামান্য নামে একটি ই-বুক আয়োজন করে ছিলাম আর ই-বুকটি বিক্রি করে যে অর্থ আমাদের হাতে আসে তার পরিমান ছিলো ৩০০০ টাকা।  


এখন সমস্ত খরচের হিসেব দেওয়া হলো। 


১.) কবি অতনু বর্মনের হাত ধরে আমরা সাহস পেয়েছিলাম একটা গঠনমূলক কাজ করার। আমরা তিতলি ভলেন্টিয়ারের কাছে ১৫০০ টাকা দিয়েছিলাম। তিতলির কাজটা হলো মূলত লকডাউন এর ফলে কর্মহীন মানুষ এবং ফুটপাতবাসী ও ভবঘুরেদের দুই বেলা প্রায় শতাধিক মানুষের দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে এরা খাবারের আয়োজন করে চলেছেন।

মূলত সিউড়ি এলাকা জুড়ে এদের কাজ।




২.) বীরভূমের পাইকর নামে একটি গ্রামে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার ব্লাস্ট হয়ে পুরো ঘর পুড়ে গিয়ে বাসস্থান এবং খাবারহীন হয়ে যায় একটি বাড়ি। আমরা তাদের কে কিছু খাবার দিয়েছিলাম । ৫০০ টাকা সাহায্য করতে পেরেছিলাম। ১০ কেজি চাল, এক কিলো তেল, সোয়াবিন তিন প্যাকেট আর লবন ১ প্যাকেট।


আলোর টিম বিপর্যয়টি পর্যবেক্ষণ করেছিলো নীচে ভিডিও দেওয়া হলো।



৩.) সৌম্যদীপ দা একটা NGO চালান সেখানে একটি বিশেষ রাখীবন্ধন কর্মসূচীর আয়োজন করে ছিলেন তিনি কোলাঘাটের কিছু বাচ্চাদের নিয়ে।    তাতে ৫০০ টাকা সাহায্য করে সেই কাজের ভাগীদার হতে পেরে আমরা আনন্দিত। বিস্তারিত নীচের  লিঙ্কে ক্লিক করলে জানতে পারবেন।


https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2720162731593947&id=100008007406887



৪.) আলো ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা এক সদ্যজাত বাচ্চার চোখের অপারেশনের  জন্য ববস্থা গ্রহণ করে। আমরা তাদেরকে দিতে পেরেছিলাম ৩০০ টাকা মতো যা নীচে জানানো হলো।




৫.) ই-বুকটি প্রায় ৯০ পাতার কাছাকাছি  হয়েছিলো তার জন্য শব্দলেখা প্রকাশনীকে আমরা দিয়েছিলাম ৬০০ টাকা।



আমাদের মোট খরচ ৩৪০০ টাকা

"PANI PANI RE" গানটিকে নতুনভাবে অ্যারেঞ্জ করেছে KMJ music Series production house

 



২৫ শে অক্টোবর ১৯৯৬ সালে 'MAACHIS' নামে যে সিনেমা রিলিজ করে সেই সিনেমায়  বিখ্যাত গায়িকা লতা মঙ্গেশকর জি গেয়েছিলেন "PANI PANI RE" নামে একটি গান। গানটির লিরিক্স লিখেছিলেন  অস্কার জয়ী  লিরিসিস্ট স্বয়ং গুলজার সাহেব  এবং মজার ব্যাপার হলো তিনিই সিনেমাটির ডিরেক্টর ছিলেন।

২৪ বছর পর গতকাল সেই গানেরই মিউজিক ভিডিও করছে  KMJ music Series production house যার কর্ণধার হলেন শ্রী প্রবীর জানা।

এখানে গানটি গেয়েছেন জি বাংলার 'সা রে গা মা পা' - ২০১৪ এর গায়িকা স্বর্ণালী বোস।
মিউজিক অ্যারেঞ্জ করেছেন আকাশদীপ ভট্টাচার্য।
গানটির DOP ছিলেন শুভদীপ দে এবং গানটিকে  দৃষ্টিসুন্দর করে তুলেছেন অর্থাৎ ভিডিও এডিট করেছেন শুভদীপ  বাবু এবং গানটি এক অপরূপ দৃষ্টি পেয়েছে দর্শকের কাছে।

গতকাল ছিলো গুলজারের জন্মদিন আর গতকালই রিলিজ করেছে এই গানটি। গানটিতে আকাশদীপকে দেখা যাচ্ছে কখনও গীটার এবং কখনও উকুলেলে হাতে করে। আর গায়িকা স্বর্ণালীর কন্ঠে এক ইউনিক লুক পেয়েছে "PANI PANI RE" যা নির্দ্বিধায় দর্শকের কাছে এক সুন্দর উপস্থাপনা  বলেই আমরা বিশ্বাস করি।

আপনি যদি গানটি না দেখে থাকেন তাহলে নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে দেখে আসতে পারেন একবার।
কথা দিচ্ছি ভালো  লাগবেই...

👇👇👇👇👇👇 👇👇👇👇
https://m.youtube.com/watch?feature=youtu.be&v=7z9WJWquZiA

শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২০

সম্পাদকীয় কলম

 

সম্পাদকীয় কলম

৭৪তম স্বাধীনতা দিবসে একটা প্রশ্ন বার বার আমাকে বিব্রত করছে আমরা কি সত্যি স্বাধীন। সত্যি কি স্বাধীন হতে পেরেছি বেরোতে  পেরেছে কুসংস্কারচ্ছন্ন শেঁকলের বেড়ি ছেড়ে।এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে বহুবার যেবার শেষবার চড়েছিলাম স্বাধীনতার নৌকা, পুষেছিলাম শখ করে টিয়া পুড়েছিলাম খাঁচায় ওর সম্মতি আছে কিনা না জেনেই।মর্জির মালিক হয়েছিলাম সেইদিনও একই প্রশ্ন এসেছিল ঊড়ে। আমরা কি আদৌ স্বাধীন?  উত্তরে বলবো কোথাও হ্যাঁ আর কোথাও না। আমরা শারীরিক ভাবে হলেও মানসিক ভাবে নই।চিন্তা চিন্তনে বার বার আবদ্ধ হয়ে পড়ি পরনির্ভরশীলতায়।নিজস্ব চিন্তাভাবনার যেদিন সঠিক বিকাশ ঘটবে সেদিন হব স্বাধীন।



কলমে - রৌদ্রাস্য চক্রবর্তী

 কমলার দেশ-দর্শন

রৌদ্রাস্য চক্রবর্তী


ঘনান্ধকার স্থানটি নির্ঝঞ্ঝাট-তুল্য এবং নিরিবিলি দেখিয়া কমলাকান্ত আফিঙ্গ সেবনাবস্থায় প্রসন্ন প্রদত্ত মঙ্গলার দুগ্ধ-পূর্ণ পাত্রটি রাখিয়া উপবেশন পূর্বক কিঞ্চিৎ ঝিমাইতেছিলেন, বলিতে হইলে নির্জনে বিশ্রাম করিবার উপক্রম করিতেছিলেন। কিন্তু আফিঙ্গর নেশাবস্থাতেও তিনি যেন সুস্পষ্ট দেখিতে পাইলেন যে কোনো একটি সজীব বস্তুর স্পর্শে দুগ্ধপাত্র আন্দোলিত হইলো। ক্ষণমাত্র বিলম্ব না করিয়া তিনি দক্ষিণ হস্ত দ্বারা উক্ত সজীব বস্তুটিকে চাপিয়া ধরিতে ধরিতেই বলিলেন, ‘ওহে মার্জারী, তুমি পুনরায় আসিয়াছ? সেদিন আমার ভাগের সম্পূর্ণ দুগ্ধটুকুই নিঃশেষ করিয়াছিলে। সেদিন সমাজধর্মের নিকট নতিস্বীকার করিয়া একপ্রকার নিরস্ত্র হইয়াছিলাম ঠিকই।  তথাপি বারংবার তাহা সওয়া যায়না। পুনরায় অদ্য তোমায় আমি দুগ্ধ ছাড়িব না। কিছুতেই না।’

কিন্তু এমন সময় আফিঙ্গর নেশা অতিক্রম করিয়াও তাঁহার কর্ণে এক কামিনীর ক্রন্দন-স্বর প্রবেশ করিল যেন। তাহার উৎসাভিমুখে দৃষ্টিপাত করিয়া  তিনি দেখিলেন এক সধবার চিহ্নযুক্ত রমণী আলুলাইত কেশে আনত-বদনে বসিয়া রোদন করিতেছে। পরনে একটি রক্তিম-পাড়যুক্ত শুভ্র বস্ত্র বিশেষ, কিন্তু তাহা মলীনতার স্পর্শযুক্ত। দুগ্ধ-পাত্র উপরিস্থিত তাহারই দক্ষিণ হস্তটি কমলাকান্ত স্বহস্তে চাপিয়া ধরিয়া আছেন।  বোধকরি চুরির দায়ে ধরা পড়িয়া সলজ্জ হইয়া ক্রন্দনে রত হইয়াছে। যথারীতি কমলাকান্ত রোদনের কারণ জিজ্ঞাসিলে সে রমণী উত্তর প্রদানে বিরতই থাকে। তথাপি কমলা পরোপকারজনিত মোহাবেশেও তাহাকে দুগ্ধপাত্রের প্রতি অধিকার অর্জন হইতে বিরত রাখিলেন। বেশ কয়েকবার ক্রন্দনের কারণ জানিতে চাহিয়াও উত্তর না পাইয়া কমলাকান্ত একাকিত্বকেই রমণীর দুঃখের কারণ জ্ঞান করিয়া আপন মনেই বলিতে থাকিলেন

- কেহ একা থাকিও না। যদি অন্য কেহ তোমার প্রণয়ভাগী না হইল, তবে তোমার মনুষ্যজন্ম বৃথা।… পুষ্প আপনার জন্য ফুটে না। পরের জন্য তোমার হৃদয়-কুসুমকে প্রস্ফুটিত করিও।…ওহে কামিনী-পুষ্প তুমি পরের জন্য তোমার হৃদয়-কুসুমকে প্রস্ফুটিত করনা কেন?

এইবারে রমণী ক্রন্দন সম্বরণপূর্বক বলিলেন, ‘পরের জন্য ভাবিতে ভাবিতেই তো আমি যে নিঃস্ব হইলাম ঠাকুর! আমার জন্য কে ভাবে! জন্ম-লগ্ন হইতেই যে আমায় মন্দার-পর্বত করিয়া গোষ্ঠীর পর গোষ্ঠী, শক্তির পর শক্তি নিজেদের ভাবনাই, আত্ম-স্বার্থ পূরণ করিয়া চলিতেছে। কিন্তু আমি-’ বক্তব্য অসমাপ্ত রাখিয়াই সে ক্লান্তি জুড়াইয়া লইলেন কিয়ৎক্ষণ। 

এমন সময় কমলাকান্ত নেশার ঘোরে যেন দেখিতে পাইলেন তাঁহার তিন দিক হইতে যথাক্রমে গেরুয়া, সাদা ও সবুজ বস্ত্র পরিহিত তিন মনুষ্য-গোষ্ঠী আসিতেছে। সকলের মুখে সেই কত বৎসর পূর্বে শ্রীযুক্ত বাবু বঙ্কিমচন্দ্র নামক জনৈক ব্যক্তি রচিত একটি অতীব জনপ্রিয় শ্লোক- ‘বন্দেমাতরম, বন্দেমাতরম, বন্দেমাতরম’। 

এবার কমলাকান্ত রমণীর সমস্যা সমাধান করিয়া তাহার ক্রন্দন জনিত উপদ্রব কাটাইতে তৎপর হইয়া বলিলেন, ‘নাও হে, তোমায় দেখিবার নিমিত্ত ত্যাগী, শান্তিকামী ও বীর সন্তান আসিয়াছে। এবার তুমি ক্রন্দনে বিরতি দিয়া আমার বিশ্রামে যথাসাধ্য সাহায্য করো হে বামা।’ বলিয়া কমলাকান্ত রমণীর প্রতি বিদায়-জ্ঞাপন জনিত করজোর করিলেন।

তথাপি রমণী গেরুয়া বসনের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া বলিলেন, ‘উহারা? উহারা আমায় মাধ্যম করিয়া নিজেরাই ক্ষমতার স্বার্থ পূরণ করিতে তৎপর যে। উহারা আমায় কি সঙ্গ দিবে!’ সবুজের দিকে নির্দেশ পূর্বক কহিলেন, ‘ইহারা ও অনুরূপ। আমায় সাক্ষী রাখিয়া নিজেরা যথেচ্ছাচার করে চলে! আর শুভ্র বেশধারী? ইহারা এতটাই শান্তিপ্রিয় যে, কাহারো কিছুতেই কোনো চিন্তা নাই। ইহারা নিজেরা উদরপূর্তি-পূর্বক গ্রাসাচ্ছাদনেই মগ্ন। নিজেদের জন্মদাত্রীর প্রতিও ইহাদের দৃষ্টি-করিবার সময় বোধ করি নাই। ইহার সকলেই যে একা। কেবলমাত্র কিছু লভ্যাংশের স্বার্থে পরস্পর প্রকাশ্যে মিত্রতা বজায় রেখে চলে। দেখিতেছ না ঠাকুর, আজ প্রভাত হইতে আমায় লইয়া কত হাঁক-ডাক, কত ভক্তি, কত উচ্চ-বক্তৃতা, সংগীত, নৃত্য হইবার পরেও আঁধার ঘনাইয়া আসার সঙ্গে সঙ্গেই এখানেই আমায় ফেলিয়া রাখিয়া উহারা ভোঁ-ভাঁ! কল্য হইতে আমার কথা ভাবিতে ইহাদের সময় কই?’

এবার কমলাকান্ত কামিনীর প্রতি বিশেষ মনোযোগ যুক্ত দৃষ্টি প্রেরণ করিয়া জিজ্ঞাসিলেন, ‘তোমার প্রকৃত পরিচয় কি কামিনী?’

   -আমি? আমি ভারতী।

রমণীর পরিচয় জানিয়া ইস্তক কমলাকান্ত নেশার ঝিমুনিতে বুঁদ হয়ে আফিঙ্গের কৃপা উপভোগ করিতে লাগিলেন। কিছুকাল এইরূপে অতিবাহিত হইবার পরে স্বপার্শ ও পশ্চাৎআদি চারিদিকে চাহিয়া দেখিলেন কিছু ত্রিবর্ণ রঞ্জিত ধ্বজা বিশেষ ছিন্নবস্থায় ভূলুণ্ঠিত, তাঁহার পার্শেই একটি উল্লম্ব দণ্ডাগ্রে বৃহদাকার অনুরূপ একটি ধ্বজা বিশেষ এবং কিঞ্চিৎ দূরত্বে কোন এক প্রতিকৃতি অযত্নে পড়িয়া আছে। প্রতিকৃতিটির প্রতি প্রবলভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ করিয়া বার কয়েক ‘ভারতী’ শব্দটি মৃদু স্বরে আবৃত্তি করিতে করিতেই কি জানি কি মনে করিয়া কমলাকান্ত রমণীর প্রতি শ্রদ্ধাবনত হইলেন।

সম্মুখে স্বয়ং দেশমাতৃকা-দর্শনের সৌভাগ্য বিষয়ে কমলাকান্ত বিশেষ আবেগবিহ্বল। ক্ষণকালের মধ্যে করজোড়ে ‘সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে, শিবে, আমার সর্বার্থসাধিকে! অসংখ্যসন্তানকুলপালিকে! ধর্ম, অর্থ, সুখ, দুঃখদায়িকে! আমার পুষ্পাঞ্জলি গ্রহণ কর।’ বলিতে বলিতে মাতৃ-চরণে প্রণত হইলেন।

এরপর দেশ-মাতৃকাকে প্রত্যয় প্রদান-পূর্বক বলিলেন, ‘যাঁহার প্রায় একশত আটত্রিশ কোটি সন্তান- তাঁহার ভাবনা কি?’

- ভাবনা নয় বাবা। ভাবনা নয়। ক্ষুধা। এই একশত আটত্রিশ কোটিই বৎসরে প্রায় বার তিনেক এমনি করিয়া কতনা পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করে, টানা-হ্যাঁচড়া করে, কতনা উচ্চাদর্শের বাণী আওড়ায়! কিন্তু আত্ম-স্বার্থ মিটিলেই সমাপ্তি। আমায় যে কেউই খাইতে দেয় না, আমার হিতার্থে কাহারো বিন্দুমাত্র ভাবনা নাই! আমার প্রতি ভাবনার মুখোশে ইহারা আপনাদের ভাবনাই পূর্ণ করে। তাই এই ক্ষুধার্ত-দুঃখী মা ভাবিয়াছিল তাঁর এক সন্তানের সম্মুখে রক্ষিত এই দুগ্ধটুকু দিয়া যদি সাময়িক ক্ষুধা টুকুও নিবৃত্তি করিয়া সন্তানকে পরোপকারের পুণ্যার্জনের সুযোগ করিয়া দিই! কিন্তু বাবা, এই সন্তানটিও ব্যতিক্রম নয় দেখিলাম-’ মা কে আর বাক্যব্যায় করিবার সুযোগ না দিয়া কমলাকান্ত অবশ্য কর্তব্য বোধে

- লও মা। গ্রহণ করো। সবল হও। 

বলিয়া দুগ্ধ-পাত্র দেশমাতৃকার হস্তে অর্পণ করিয়া আফিঙ্গের নেশায় কিঞ্চিৎ ঝিমাইয়া পরিলেন। পুনরায় মুখ তুলিয়া তিনি দেখিলেন কোথায় দেশ-মা! এ যে এক অস্থি-সার বিশিষ্ট অভুক্ত ও অপুষ্ট শিশু তাহার দুগ্ধ-পাত্র হস্তে দুগ্ধপান করিতেছে। 

সমাপ্ত

(বঙ্কিমচন্দ্র সৃষ্ট ‘কমলাকান্ত’ চরিত্রাবলম্বনে)

২৮/৪/১৪২৭




কলমে - ব্রতীন বসু

 

স্বাধীনতা দিবস 

 ব্রতীন বসু


কোন এক জন্মে আমি

তোমার মত মুক্ত হতে চাই

তোমার মত  হাসতে চাই

ছুটে যেতে চাই

রোজ 

জন্মদিন,

সামার ভেকেসান

পুজো,ক্রিসমাস,

তুমি যেভাবে 

সেভাবে কাটাতে চাই

কোন এক জন্মে

সকাল বিকেল গোলাপ ফুল খেলনা টুকিটাকি

আর স্বাধীনতার আগে কাগজের তেরঙা নিয়ে যেভাবে গাড়িতে গাড়িতে বিক্রি কর

হাসিতে খিদেতে,

হতে চাই তোমার মত 

আমি স্বাধীনতা দিবস

তুমি স্কুলে যাবে

আমি মুক্তি পাবো পনেরোই অগাস্টের বেড়াজাল থেকে।



কলমে - শোভন অধিকারী

ভারত আমার দেশ

শোভন অধিকারী


শত শত শহীদের রক্তে গড়া মোর ভারতভূমি!

বিন্দু বিন্দু গড়া শহীদভূমি।

শান্তি এই ভারতের বাণী,

অহিংসা যার মূল মহামন্ত্র ধ্বনি।

হিন্দু,মুসলিম,বৌদ্ধ,জৈনের বাসভূমি মোদের ভারতভূমি।

হিমালয় থেকে কন্যাকুমারী ,

বৈচিত্র্যের দেশ এই ভারতভূমি,

নদী নালা, মাঠ ঘাট, পথ প্রান্তর, বন জঙ্গল, পর্বত ও মালভূমি এসব নিয়েই মোদের মাতৃভূমি।অতীতের পরাধীনতার ভারতবর্ষ আজ বন্ধন মুক্ত।

ভারতে আজ নেই ইংরেজ মোঘল, শক ও পাঠান।

নেতাজী, ক্ষুদিরাম,গান্ধীজী ও ভগৎ সিং আজ হয়ে গেছে ইতিহাস।

বর্তমান ভারত আজ পরিচিত দেশ।

জ্ঞান বিজ্ঞানে, শিল্পে ও প্রযুক্তিতে ভারতের ঘটছে উন্নতি।

খাঁ খাঁ মাঠ,ধূ-ধূ প্রান্তরে আজ শোনা যায়

কলের শব্দ,দেখা যায় চিমনির কালো ধোঁয়া।

উন্নত বীজ,সার,কীটনাশক প্রয়োগে কৃষি হচ্ছে সমৃদ্ধ।

অট্টালিকা,ট্রেন, বিমান শহরে হয়েছে উদ্ভব।

অতীতের ভারত আজ অলংঙ্কারে সুসজ্জিত।

ভারত তুমি ধন্য! লুন্ঠন ও উৎপাতের মধ্যে দিয়েও বিদ্যমান তোমার ঐতিহ্য।

গরীব হলেও আমরা সবাই ভারতবাসী,

আমাদের মধ্যে মিশে আছে,

ভারতীয় ঐক্যে ভারতের জয় কামনা,ভারতীয় রক্তের টান। 

তাই ঈশ্বরের কাছে মোর প্রার্থনা--

নদী নালা,পথ ঘাট,বন জঙ্গল,পর্বত ও মালভূমি,

ভারতের একবিন্দু মাটিতে 

যেন আবার জন্মগ্রহণ করি।



চিঠি ও কলমে - অর্পণ বসাক

 

নেতাজী কে চিঠি 

অর্পণ বসাক 


প্রিয় নেতাজী,

              অনেকদিন ধরেই তোমায় লিখবো লিখবো করেছিলাম।কিন্তু লেখাটা আর হয়ে ওঠে নি। কি করেই বা লিখতাম বলো,আজ যখন তোমায় লিখবো বলে স্থির করলাম,হঠাৎ ই মনে হলো তোমায় লিখব কোন ঠিকানায়? কটকের সেই বাড়িতে তো তুমি আর ফেরো নি। তাই আমার এই চিঠি বাতাস কে দিয়ে পাঠালাম।ও হয়ত নিশ্চয় কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী যেখানেই থাকো তোমায় নিশ্চয় পৌঁছে দেবে,নিশ্চয়।

       জানতো দেখতে দেখতে স্বাধীনতার সত্তর টা বছর পার করে এলাম।তুমি যে ভারত দেখতে চেয়েছিলে সেই ভারতে আজ ব্রিটিশ রা নেই,পরাধীনতার নাগপাশ নেই, ইংরেজ বাবুদের অত্যাচার নেই।তোমার ভারত স্বাধীন!

      তোমার স্বপ্নের ভারতের লোকেরা আজকেও খুব সকাল করে ওঠে ,পতাকায় মালা চড়ায়, তোমার ছবি রাখে ।দেশাত্ববোধক গায়।আর একটা ছুটির দিন কাটায়।

        না !এসব বলতে তোমায় লিখছি না। যেটা বলার ছিল, জানো নেতাজী, তোমার স্বাদের ভারতবর্ষের মাটিতেই আজ কাঁটাতার পড়েছে হিন্দু আর মুসলিমের মাঝে। যে মেয়েটা মা কে বলে গেছিলো মা !এবার তুমি দেখে নিও, আমি মস্ত বড় টিচার হবো। আর আমার দেশ কে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করব।সন্ধ্যার পরে সে আর ফেরেনি টিউশন ক্লাস থেকে। পরদিন খবরের কাগজে তার রক্তাক্ত দেহের ছবি  খুঁজে পেয়েছি আমরা।

        একটা রুটির জন্য ছেলেটার খিচুড়ির স্কুল দেখা হয় নি। দুদিন পরেই সমাজ যাদের গড়ার কথা তারাই আজ গড়ার বদলে শুধু ভেঙেই চলেছে ইটের স্তূপ,একেকটা সভ্যতার স্তুপ। ওরা হয়ত সত্যি জানে না স্বাধীনতা আর স্ব-দীনতার তফাৎ টা।

        মানবতার মাঝে কাঁটাতার টেনে তোমার প্রিয় মাতৃভূমি টা কে কতটা মানচিত্রের স্কেল ঠিক রাখা হয়েছে আমার জানা নেই। তবে এ দেশের মানুষ তোমার মত করে প্রতিবাদ করা টা ভুলে যাচ্ছে,ভুলে যাচ্ছে উলঙ্গ রাজা কবিতার সেই শিশুর মত বলতে-"এই রাজা তোর কাপড় কোথায়?" কাঁটাতারের ওপারে থাকা শয়তান গুলোকে  জওয়ানরা দেখে নেয় জীবনের বিনিময়ে কিন্তু কাঁটাতারের মধ্যে থাকা মুখোশধারী মীরজাফর দের কে পাহারা দেয় বলতো? 

     নেতাজী এবার তোমার ফেরার সময় এসেছে, তুমি এবারটি ফিরে এসো। আবার তুমি তোমার দীপ্ত কণ্ঠে বলে উঠবে "তোমরা আমায় রক্ত দাও,আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব" এবারে পরাধীনতার অধীন থেকে স্বাধীন করতে নয়। এবার না হয় তুমি ডাক দিও একটা মুক্তমনা স্বাধীনতার, একটা মানবতার স্বাধীনতার, একটা সত্যি বলার সাহসের স্বাধীনতার।

        আর বেশি  কিছু লিখলাম না। সবশেষে আমার প্রণাম নিও নেতাজী।

©অর্পণ বসাক 



                           


কলমে - আমিমোন ইসলাম

 

শুভেচ্ছা

আমিমোন ইসলাম

একমাত্র মেয়ের কোনো স্বাধীনতা নেই

বিয়ে না পড়াশোনা ঠিক করার।

ছোটো ছেলের কোনো স্বাধীনতা নেই

সাইন্স না আর্টস পড়বে, বলার।

আমাদের কোনো স্বাধীনতা নেই,

চায়ের দোকানে মনের কথা খোলার।


এখনও ভারতবর্ষে, অর্ধেক মানুষ,

দুবেলা আধপেটা খায়।

এখনও নেতাজি মোড়ে, দিনদাহারে

গুলি চলে রক্ত বয়ে যায়।

স্বাধীন শুধু বইয়ের পাতায়,

আসলে আমরা পরাধীন সবাই।

তবুও, ভারতবর্ষ তোমাকে

জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই।



কলমে - জয়ীতা চ্যাটার্জী

হত্যা:

জয়ীতা চ্যাটার্জী

দেখিনি এমন কোনো আশ্চর্য সকাল , 

যেখানে কোনো হত্যা হয়নি গতকাল। 

দেখিনি এমন কোনো নিস্পাপ মুখ, 

 হত্যাকাণ্ড লুকোয়নি যেখানে মিথ্যে সুখ। 

তন্নতন্ন করে খুঁজেছি নিজের ভেতর, 

একটা একটা করে খুন হয়েছে খুনের ওপর। 

শেষ মুহূর্তে মনে পড়ে আমার টিকিট নেই, 

যে শহর থেকে জঙ্গলে আমায় ফেরাবেই।



কলমে - পাখি পাল



স্বাধীনতার খোঁজে

পাখি পাল

স্বাধীনতা বলতে তুমি কি বোঝো..

পরাধীনতা থেকে চিরতরে মুক্তি,

নাকি দাসত্ব মোচন করার শক্তি,

স্বাধীনতার মানে তো হরেকরকম..

আজাদি,স্বাচ্ছন্দ্য, নাগরিক সম্মান,

যা অর্জনে আজও স্মরণীয় বিপ্লবী তাজা প্রাণ,

তবে স্বেচ্ছাচারিতা তো আর স্বাধীনতা নয়..

স্বাধীনতা তো সুস্থ চিন্তার বিকাশ,

যার মধ্যে থাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়াস,

স্ব-এর অধীনতা যদি স্বাধীনতা হয়..

তাহলে তার অর্থগুলো বড্ড যে যার মতো,

সুখ,শান্তি'টুকুতেই আমরা স্বাধীনতা খুঁজি কত্ত।



অনুগল্পে - অর্পিতা ঘোষ


স্বাধীন হবো কবে

অর্পিতা ঘোষ


   সবে ঘুম এসেছে রানীর, মাইকের আওয়াজে তা ভেঙে গেল। এই সাত-সকালে জোরে মাইক চালিয়ে ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিলো দেখছি– আপন মনে বকবক করতে করতে জানালা বন্ধ করতে উঠলো রানী; আওয়াজ যাতে একটু কম আসে সেজন্য।

            জানালা বন্ধ করতে গিয়ে দেখে ওদের বাড়ির পাশে যে বড় মাঠ আছে তার উল্টো দিকে মাইক বাজছে। পুরো মাঠটাকে ছোট ছোট পতাকার মালা দিয়ে সাজিয়েছে। কোনায় একটা স্টেজ করেছে, স্টেজটাও তেরঙা দিয়ে সাজানো। মনে হচ্ছে যেন সাদা, গেরুয়া আর সবুজের মেলা বসেছে।

            রানীর মনে পড়লো আজ স্বাধীনতা দিবস। এই দিনে নাকি আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিল। রানী গত দু- বছর ধরে দেখে আসছে  আজকের দিনে সকালে একজন পতাকা উত্তোলন করে; তারপর জ্ঞান গম্ভীর বক্তৃতা চলে বেশ কিছুক্ষণ। দেশটা যেন হটাৎ সততায় ভরে ওঠে। সারাদিন খেলা আর গান বাজনা হয়। দুপুরে সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করে।

           রানীদের বাড়ির কারোর অধিকার নেই ওখানে অংশ গ্রহণ করার, এমনকি কেউ দেখতেও যেতে পারবে না। ওরা যেন অস্পৃশ্য। অথচ ওই সব ভদ্র লোকেরাই রাতের আঁধারে কিছু অর্থের বিনিময়ে ওদের কাছে জ্যোৎস্না মাখতে আসে।

             রানীর একটু একটু মনে পড়ছে ছোট বেলার কথা। ওদের গ্রামের স্কুল বাড়ির মাঠেও স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান হোতো, এতো বড় করে হোতো না, ছোট করে হোতো। খুব আনন্দ হোতো তখন।

             বাবা মারা যাবার পরে সৎমা রানীকে ওর এক পাতানো কাকার কাছে বেচে দিলো। সেই কাকা কিছুদিন হায়না হয়ে রক্ত চুষে খেয়ে অন্য আর একজনকে বেচে দিলো। তিন বাড়ি বদল করে দু- বছর হলো রানীর এ বাড়িতে ঠাঁই হয়েছে।

           না ঘুমিয়ে জানালায় দাঁড়িয়ে হা করে কি দেখছিস মহারানী; খদ্দের এলে রাতে ঢুলবি নাকি ?আজ রাতে অনেক বেশি খাটতে হবে--- মাসি জানালার সামনের বারান্দা দিয়ে যেতে যেতে রানীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো।

রানী– আমি শুয়েই ছিলাম মাসি, মাইকের আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল, তাই জানালা বন্ধ করতে উঠেছি।

              জানালা বন্ধ করে রানী বিছানায় শুয়ে ভাবলো… ও নিজে কবে স্বাধীন হবে, ওতো অন্যের হাতে বন্দি। কেউ কি আসবে না ওকে বন্ধন থেকে মুক্ত করতে।



কলমে - সুনন্দ মন্ডল


 এ এক অন্য স্বাধীনতার গল্প 

 সুনন্দ মন্ডল


চুয়াত্তর পেরিয়ে এসেছি,

সমাজ দেখেছি, সংস্কৃতি ছুঁয়েছি

পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক সভ্যতার গালমন্দ মেখেছি!


শুধু পারিনি নিজেকে সংকুচিত করতে,

নিজের কাপড়ে দাগ লাগাতে!


আজ সেই দাগ লেগেছে,

কালিমাময় সমাজ চূর্ণ আভিজাত্যের দাপটে।

চুনরঙের প্রলেপ দেওয়া সভ্যতায় প্রত্যেক ব্যক্তি

স্বধর্মে ও স্বচিন্তায় স্বাধীন।


বাঘ বনাকীর্ণ ঘর ছেড়েছে, অন্য পশুরাও বিপন্ন!

গাছের মূল উপরে ফেলে নিধন করা হচ্ছে বংশ।


নির্ধন হয়ে উঠছে সবুজ।


সবুজের আকালে মানববাগানে ঢুকে পড়েছে অসুখ,

আরোগ্যের ন্যূনতম উপায় না খুঁজে

শুধুই বাড়িয়ে তুলছি সম্পদ!

আর সম্পদে বাড়াচ্ছি স্বাধীন সুখে স্বাদ হীন গল্প।



             

কলমে - বিশ্বজিৎ হালদার

 স্বাধীনতা উপহার

বিশ্বজিৎ হালদার  


আমার সাধের স্বদেশভূমি,

 নিমেষে দেখি 

ভাঙ্গনের উঠোন!

 উদ্বাস্তুদের পোক্ত উপনিবেশ,

 আমরা বন্দি পরিচিত কারাগারে!


নতুন শাসক মেতেছে

অচেনা অত্যাচারে খেলায়, 

শিশুর ফোঁপানো কান্না থামাতে

এক ঝিনুক দুধের জোগান নেই! 

চাবুকের শব্দে কেঁপে ওঠে হৃদ যন্ত্র,


তরুনের রক্তে যে উদ্দোম 

রানারের মতো ছুটে, 

খুঁজতে চেয়েছে অরুণ আলো। 

টুকটুকে রাঙা বুকে তাজা রক্তক্ষরণ, 

লাল রঙে এঁকেছে এলোমেলো আলপনা 

ভারত ভৃধরে।


নোনা জলে ভিজেছে 

কত না মায়ের সাদা আঁচল, 

ভয় হয় প্রদীপ যখন নিভে যায়, 

বোধির দৃষ্টির বুড়িমার দুয়ারে পায় 

পুরনো রক্তের গন্ধ! 

খোকা সেই যে গেল মুখের খাবার খেলে 

আরতো এলো না? 


বড়ো উপহার দেবে বলেছিল-” স্বাধীনতা ”

সে আবার কেমন দেখতে?

 রক্ত ক্ষরণের নতুন নিয়োম না 

নতুন অন্ধকারে বন্দি? 


মন খারাপের বারান্দায়

এসেছে বিহান বেলা

আকাশ ভরা সেই পরিচিত 

চাঁদ, সূর্য, তারা ফুটেছে শিউলি। 

শেষ ডংকারে বাজে আমাদের জয়গান "বন্দেমাতরাম" 

সবার খোকা বলে গেল 

মাগো তোমায় স্বাধীনতা দিলেম উপহার। 






শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০২০

সম্পাদকীয় কলমে - শ্রেয়া রায়

 'জলফড়িং সাপ্তাহিক' আয়োজিত 'আপনি সম্পাদক আপনিই কবি' সাপ্তাহিক সংখ্যা বিভাগে এই সপ্তাহে আমার উপর সম্পাদনার ভার দেওয়া হয়েছে, এজন্য "জলফড়িং"-সহ সকলের প্রতি জানাই অশেষ কৃতজ্ঞতা। 

এই সপ্তাহের সংখ্যার নাম ছিল-"পরিবর্তন" 

 সময়ের সাথে আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন পরিবর্তন ঘটে থাকে, অর্থাৎ আমাদের জীবন সদা পরিবর্তনশীল এবং স্রোতে বয়ে যাওয়া ঠিক একটি নদীর মতন যা কখনই থেমে থাকে না। সময়ের সাথে সাথে প্রতিটা মুহূর্তেই প্রতিটা জিনিসের পরিবর্তন ঘটে থাকে,যেমন-আমাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন, সময়ের পরিবর্তন, স্থানগত পরিবর্তন, মানুষের মনের পরিবর্তন প্রভৃতি। কিছু পরিবর্তন জীবনে আনন্দদায়ক হয় এবং কিছু দুঃখজনক। আমাদের জীবনের পরিবর্তন গুলো কখন-কিভাবে-কোথায় ঘটে তা আমাদের সব সময় জানা থাকে না। 

তবে সকল পরিবর্তনের সাথে নিজেকে মানিয়ে অর্থাৎ অভিযোজিত হয়ে নিজেকে এগিয়ে যাওয়াই হল আমাদের জীবনের মূলমন্ত্র। 

 কবিগুরুর ভাষায়-

 "পরিবর্তনের স্রোতে আমি যাই ভেসে কালের যাত্রায়...।।" 

 এই ভাবনা নিয়েই তৈরি হয়েছে আমাদের কবি ও লেখকদের লেখা। পরিশেষে, যাদের এই সংখ্যায় লেখা পেলাম এবং যাদের লেখা পেলাম না সকলকেই জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ।



কলমে - পাখি পাল


পরিবর্তনের সাথেই অভিযোজন

পাখি পাল 

পরিবর্তন শব্দটা নাকি জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত,

তাই প্রতিটা মানুষের জীবনে রূপান্তর'টা চলেই আসে,

 সে পরিকল্পিতভাবেই হোক বা অপরিকল্পিতভাবে,

তবে যাই হোক,পরিবর্তন শব্দটা শুনলে 

একটা একঘেঁয়েমি হঠাৎ-ই যেন মুক্তির রাস্তা খুঁজে পায়,

গল্পের অনুচ্ছেদগুলো যেমন নতুন মোড় নিয়ে আসে,তেমনি 

জীবনের বাঁকে পরিবর্তনগুলো নিয়ে আসে চমক,

এই পরিবর্তনের হাত ধরেই হয়তো বয়স আর অভিজ্ঞতা বেড়ে চলে,

তবে সব অভিজ্ঞতাগুলো ভালো হয় না,

হঠাৎ-এর অবসরে বিনা মেঘেই নামিয়ে আনে বজ্রপাত,

যদিও বৃষ্টি এসে সব মলিনতা একসময় ধুয়ে দেয়,

উড়ে আসা ধূলোঝড় যে পাতাগুলোকে ঢেকে দিয়েছিলো,

আজ তা গাঢ় সবুজ রঙ-এ সূর্যের কাছে তাপ চায়,

এসবের মধ্যদিয়েই গাছ বেড়ে ওঠে ঠিক জীবনটার মতো,

ভালো হোক বা মন্দ,সুখ হোক বা শিক্ষা-সবটা নিয়েই পরিবর্তন 

আসে আর অভিযোজনের মধ্যদিয়ে আমাদের আরও শক্তিশালী করে যায় ।




কলমে - শোভন অধিকারী


প্রেমে জীবনের পরিবর্তন

শোভন অধিকারী 

প্রিয়তমা মনে পড়ে তোমার সেই দিনটার কথা,

যে দিন তুমি ছিলে, আমি ছিলাম।

ছিল আমাদের জমানো সমস্ত স্মৃতিরা।

হন্যে হয়ে ছুটে গেছি তোমার কাছে,

প্রেমের নেশায় মেতেছি,

প্রতিনিয়ত রাতের পর রাত জেগে,

জীবন্ত করে তুলতাম আমাদের বিবর্ন

সেই প্রেম গুলো।

প্রেমে কত রাত কেঁদেছি,

তোমার দেওয়া প্রথম গোলাপ টা আজও যত্ন করে রেখেছি।

ফ্রেমে বন্দি পুরনো সব স্মৃতিতে তোমাকে নতুন করে খুঁজেছি।

হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ের মতো তুমি চলে গেলে আমায় ছেড়ে বহুদূরে।

এলোমেলো জীবনটা আজ কাটছে একলা ঘরে।

যখন শূণ্যতা জীবন জুড়ে,

একাকীত্বে চাই তোমাকে ফিরে পেতে।

সময়ের পরিবর্তনে সব কিছু হারিয়ে আজ

নিঃস্ব আমি।

ভুলে যায় কী করে?সব স্বপ্ন ছিল আমার তোমাকে ঘিরে।

তোমার দেওয়া বিষ যন্ত্রণা,

ভুলিয়ে দিলো জ্ঞান আরাধনা।

মনে অনন্ত জ্ঞান পিপাসা,

এই নতুন প্রেম যে বাঁচার আশা,

আজ জীবন গেছে বদলে,

গড়েছি নিজেকে জ্ঞানের আলো দিয়ে,

এখন শুধুই মনে একটা প্রশ্ন দেয় উঁকি,

তোমার প্রেমের যোগ্য কী ছিলাম আমি?

তুমি আর আসবে না ফিরে কোনোদিন,

আজও অন্ধকার ঘরে অশ্র ঝরায় রাত দিন।

প্রতিদিন ভেবেছি তোমার কথা,

জীবনে আজ হৃদয় ভঙ্গের ব্যথা।

পুরোনো দিনের স্মৃতিতে আমি আজও

ভ্রমন করি, সেখানে তুমি রাঙিয়ে দাও,

আমার জীবন যা আজ বেরঙিন।




                



কলমে - রথীকান্ত সামন্ত

রূপ রূপান্তর 
রথীকান্ত সামন্ত 

চামড়ার নিচে বালিঘড়ি 
বেলা বাড়তে থাকে যত, তত আত্মদগ্ধ হই। 
মরা বালির চরে তীক্ষ্ণ শরবনে ছায়া খুঁজি মুখ নামিয়ে। 
পোড়াগন্ধী কালকূটশ্বাসে ভিতরের সমস্ত ছাকনি গলিয়ে 
বিকৃত করে তোলে আমার আজন্মলালিত দেহতত্ত্বের জ্ঞান, আমায় অস্থির করে তোলে। 
ভিতরে ভিতরে রক্তক্ষরণ। 
তার ছাপ পড়েনা বাইরে। 
পড়লেও তা চেনার মতো চেনা চোখগুলো অচেনা হয়ে যায়। একটা নির্জনপ্রান্তরে শতছিন্ন ছাউনি, টলমল খুঁটি। 
মায়ের ছবির নিচে বহু অযত্নের শীতবাগান। 
শুকনো ফুলঝরা বেদিতে শুয়ে আছে বিকল পিতৃপ্রতিমা। 
চোখের স্বপ্নশলাকা বেচে কিনে নিই একটা ইস্পাতের, 
যাতে আলো আছে। 
মিশে যাই রুগ্নপাখি আর উড়ন্ত মানুষের শহরে। 
শহর বদলাচ্ছে। 
আপনি থেকে তুমিতে, তুমি থেকে নগ্নতা ছুঁয়ে 
কত আলাপ ছড়িয়ে পড়ছে জানিনায়।
রাত বাড়লে নেশাঘন পরজীবীর গিজগিজে জঙ্গলে অনাহারের আওয়াজ এখনো একই আছে। 
ভালোবাসা বদলে গেছে নষ্ট ইচ্ছায়, 
তার সাথেই বদলে গেছে সিঁধ কাটার পদ্ধতি, 
কবিতা আর ভাষণের ধরন।





কলমে - জয়ীতা চ্যাটার্জী

অভিজ্ঞ

জয়ীতা চ্যাটার্জী 

দীর্ঘ নয় মাস পরীক্ষা চলল নিজেকে মুচড়ে দুমড়ে

বয়ে চলল রক্ত ধমনীতে অনির্দেশ্য খাতে,

প্রতিষেধকের খোঁজ করতে করতে। 

কত পরিচিত মুখের দোরে দোরে , 

দিনরাত ঘুরেছে গোটা একটা শরীর 

যেনো এক ভিক্ষার পাত্র মন,

ধিক্কার জমে ওঠে বাইরে ও ভিতরে অন্যান্য গভীর 

আজ দেখি ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে প্রনম্য সব, 

 দুচোখ ঢেকে যায় অলস্যময় হাতে নিশ্চুপ নীরব। 

 ভেসে যাওয়া নৌকা আজ কুয়াশারুদ্ধ, 

 নাবিকের চোখে ঘুম 

মাস্তুল দাঁড়িয়ে থাকে দূরে চির প্রতীক্ষারত, 

যাত্রীর গায়ে জ্বর ধুম। 

মুহুর্ত জুড়ে ঝড় তীরে বসে কবিতার সংলাপ 

খোঁজা, মাটির সাথে জল মিশে একাকার, 

শেষ প্রশ্নের বোঝা। 

দেবদারু বিথী দাঁড়িয়ে থাকে

আমি অনিমেষ তাকিয়ে থাকি, 

 এ পৃথিবী আমার ই পরীক্ষা নেয় 

ঠিক কতটা সইতে পারি আমি।





বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০২০

মাসিক সংখ্যা

 মা-মেয়ের ডাকাডাকি

©অঞ্জলি দে নন্দী, মম


এক যুবতী ঢাকিনী।

নন্দীদের পুজোয় ঢাক বাজায়।

              একদিন মনে মনে মনে

         বলে সে মাকে,

মা গো আমি কি তোকে 

মন থেকে ডাকিনি?

                  কত্ত কত্ত কত্ত জনে

      তোকে ফুলের মালায় সাজায়।

আমি ক্যানে তোকে

সাজ্জাতে পারি নি?

       আমি তো বোল তুলি ঢাকে-

দুগ্গা মাঈয়া  কী, জয়!

   বল দিকিনি মা!

আমি কী ভক্তিভরে 

বাজ্জাতে পারি নি?

      ক্যানে আমি ঢুকতে পারি নি

তোর ওই ঘরে?

ক্যানে দাঁইড়ে থাকি

শুধুই বাইরে, দূরে,

আঙিনার পরে?

      তুই নোস হামার মাইয়া কী?

            কত্তোই না ভক্তির সুরে

হামি বাজ্জাই হামার এই ঢাক ই!

কত্তো মন থিকে ডাকি

        আমি তোরে!

আমার ঢাক ই

          সদাই বোলে,

জয় দুগ্গা মাইয়া কী!

দ্যায় সারা আঙিনা তোর নামে ভরে।

     এবার তো তুই আমায় ডাক!

আমি ঢুকে তোর ঘরে

      পেন্নাম করি ছুঁয়ে তোরে!

শুনে মেয়ের কাতর ডাক,

দুর্গা মা বাইরে এলেন, ঘর ছেড়ে।

    পরনে তাঁর শাড়ি, লাল পেরে।

ঢাকিনীর হাত ধরে

             নিয়ে গেলেন আপন ঘরে।

    নিজের হাতে তুলে দিলেন ঢাকিনীর হাতে,

একটি মালা।

    আর বললেন, আমায় পড়া!

ওরে! আমি যে মা!

     আমি কী আর ভিন্ন দেখি নিচু জাতে?

তোর অন্তর তো এক পূর্ণ ভক্তির ডালা!

         শুদ্ধ বিশ্বাসে গড়া।

একটুও পাপ যে নেই তাতে।

      মা-মেয়ের ডাকাডাকি হল সম্পূর্ণ।

পৈতের হল দর্প চূর্ণ।

         মা হল সকলেরই মা......

মাসিক সংখ্যা

 কবিতা

অদল বদল

স্বপঞ্জয় চৌধুরী

সবার মাথার ভেতর একটা বিষয়ই  বাজতে থাকে অহর্নিশ

বদল করো নিজেকে বদল করো

ছোট খুপরির ভেতরে জ্বলা কুপিটা

 যার ফিতেতে এখনো লেগে আছে কেরোসিনের গন্ধ,

বদল করে চলে আসো আলো ঝলমল প্রিমিসেসে

সামনে দুটো ঘোড়া বাঁধা আছে 

তাদের দেহ থেকে দেবদূতের মতো সাদা আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে।

তুমি চাইলে একে বদল করে নিয়ে আসতে পারো

টয়োটা, মার্সিডিজ কিংবা রেঞ্জ রোভার।

তোমাকে বলা হল স্বভাব বদল করতে

তোমার প্রপিতামহের গৌরবগাঁথা

শুনতে শুনতে তুমি ক্লান্ত।

তোমার নিজের যা কিছু আছে সব বদল করো

সময় বদলেছে তাই তোমাকেও বদলাতে হবে

বদল করো মাটির চুলোতে লেগে থাকা পোড়া দাগ

রাইস কুকার থেকে তেড়ে আসা ঠিংরানো উত্তাপ

তোমায় বদলে যাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়,

তুমি ইজি চেয়ারে দোল খেতে খেতে ভুলে যাও

হাড়িভাংগা আমের গাছে লাগানো দোলনার দোদুল।

তোমাকে যতই বদলে যাওয়ার কথা বলা হোক

তুমি আসলে কখনোই বদলাও না

বদলাতে পারোনা

বদলে যাওয়ার ভান করো 

জলফড়িং-এর অডিও ম্যানের তৃতীয় পর্বের কলমে লেখিকা রিম্পা সাহা

 

অডিওটি শুনতে নীচের ভিডিওটি চালু করুন


মাসিক সংখ্যা

 শেষ আলো----

       অর্পিতা ঘোষ

মনের দরজা এখন খিল এটে বন্ধ করা...

যতোই ছুঁতে চাও,পাবেনা নাগাল তার,

দূষিত বাতাসে ভরে আছে বুকের আকাশ

পচা গন্ধময় ভাইরাসে তা কাতর।


দিগন্তখোলা দরাজ মনগুলো হাজার কষ্টের ভিড়ে

কয়লার খাদানে শান্তিতে আছে বেশ,

জ্যোৎস্নার স্বপ্ন স্বার্থের পসরা নিয়ে

আগ্নেয়গিরির তাপে হতে পারে শেষ।

গলিত লাভা হয়ে আজ শুধু প্রলোভনে

সমুদ্রের মাঝে স্তম্ভ গড়ার আশা,

ফেরেনা কেউ মাটির পৃথিবীর টানে..

আঁকতে চায়না কেউ সুন্দর নকশা।


হয়তো এভাবেই একদিন আগুনে ঝাঁপ দিয়ে–

নিজেকে পুড়িয়ে হতে হবে ছাই,

বুকের পাথর ভাঙবে গাইতি দিয়ে

আশার শেষ আলো যদি পৌঁছায়।

মাসিক সংখ্যা

 #বর্ষ_রেখা_ধরে

মলয় পাল

জঙ্গলের কোনো পিতা মাতা নেই,


কোনো সরকার নেই,কোনো রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ নেই।


তবুও তারা কাটাপড়ে ,তাদের বাঁচার 


অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়!


কে বা কারা ?


তার বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিলো উত্তর আসেনা!


এই বিশ্ব চরাচারে তার ও যে একটা বেঁচে থাকার জমি ছিল,


দলিল,পাট্টা সবই তার ছিল,অস্বীকার করি আমরা।


কেড়ে নেওয়া হয় জোর করে তার অধিকার ;


জঙ্গলের জোৎস্না কেড়ে চেটেখায় অর্থলোভী ঠিকাদার।


তার ধারালো জিভে পরিস্কার করেদেয় গভীর বন, ফাঁক হয়ে যায় গায়ের সবুজ চাদর।


কংক্রিটের চাদরে ঢেকে যায় সবুজ গালিচা।


কাটা দেহে নীরব বর্ষরেখায় বহন করে-

তার দেওয়া বাতাস,ফসল,ছায়া,পোষাক,আশ্রয়ের ইতিহাস;


যা আমারা চাইলেও অস্বীকার করতে পারিনা


কবিতা মাসিক সংখ্যা

 কবিতায় বাঁচা ।।


সময়ের ধারাস্রোত

হয়তোবা মুছে দিতে পারে জীবনের বহু সহস্র ক্ষত, কিন্তু ক্ষতের দাগ?

আমরন রয়ে যায়

দেহে কিংবা মনে,

অন্ধকার ঘুমের গভীরে

স্বপ্নের অন্ত:পুরে।

কে যেন বলেছিল —

'বা  হা  ত্তো  র'

একটা সংখ্যা বইতো নয়

হাসিগানে আনন্দে বাঁচুন

কিন্তু শুধু আমি নই,

চলমান জীবন কি জানে

সময়ের সীমারেখা?

কতটুকু সময় রয়েছে হাতে?

তাই কাগজ কলম আর

প্রসব-বেদনায়—

ঠায় বসে থাকি,যদি

দু-চারটে 'অক্ষত'কবিতার

জন্ম দিতে পারি।


এখন বেলা শেষের দিনগুলো কবিতায়

বেঁচে থাকতে চাই।।

মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট, ২০২০

লিঙ্কে ক্লিক করে পড়ুন 'প্রথম চুমুর বালক'

 

প্রথম চুমুর বালক

কলমেঃ- সুদীপ্ত সেন


আয় তো দেখি সহজ করে এবার

আয় তো এখন চুপটি করে কাছে 

দেখছে দেখুক লোকের ওটাই কাজ

আমার কাজ তো, ঠোঁটের ওপর আছে।


ভিজছে ভিজুক কলেজ স্কোয়ার তখন

ছাড় তো, হ্যাঁ দেখছে দেখুক, ও'তো  শালিক

শোন লজ্জা থাকুক ভয় করিস না আজ 

আর আমরা এখন নিজেই নিজের মালিক।


চুপটি করে সাজিয়ে তোকে ধরে 

বলব তোকে ঠোঁটের চাবি কোথায়

তোমার ঠোঁটের তালা ভাঙার নামে

কলেজ স্কোয়ার ডুবলো অসভ্যতায়।


এই টুকু থাক। বাদবাকিটা লিখে পাঠাবো তোর ঠিকানায়

ঠিক শুনেছো, প্রথম চুমুর জন্মটা হয় ভীষণ রকম উত্তেজনায়। 



ছবিটিঃ- সংগৃহীত 






মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট, ২০২০

সম্পাদকীয় কলমে - রথীকান্ত সামন্ত

সম্পাদকীয় কলম :-  

সম্পাদকীয় নিজের সচেতন "আমি" কে চিনে নেবার প্রয়াসে কখনো কখনো খনন করতে হয় নিজেকে। একটা আত্মপ্রতিবিম্ব প্রতিষ্ঠিত হয় নিজের মধ্যেই, যার কোনো বিবর্তন নেই, যা স্থির এবং অবিনশ্বর। বাইরের জগৎ থেকে এই "একান্ত আমি" কে নিয়েই ছিল এই সংখ্যা।


কলমে - শ্রেয়া রায়


"একান্ত আমি" 
শ্রেয়া রায় 

আমার একান্তের রূপকথার দেশ সবার মত আমার আমিটা যে আমার কাছে ভীষণ প্রিয়। আমার আমিকে ঘিরে রয়েছে কল্পনার এক সুন্দর রূপকথার দেশ।সেই দেশে আমি কখনো রূপকথার পরী হয়ে রাতের অন্ধকারে বা ভোরের আবছা আলোয় ফুলে ফুলে আনন্দে ঘুরি, আবার কখনো রূপকথার দেশের রাজকন্যা হয়ে রাজপুত্রের অপেক্ষা করতে করতে ভাবি কখন সে ঘোড়ায় চড়ে আসবে আর আমায় নিয়ে সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে দুর দেশেতে নিয়ে যাবে। ভালো লাগে রূপকথার দেশের রাণী সেজে আয়নায় বারে বারে নিজের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হতে। 
আমার রূপকথার দেশে রয়েছে একটা বিরাট ফুলের বাগান, যেখানে ইচ্ছা মতো আমি ফুলের সাজে আর গন্ধে নিজেকে ঘিরতে পারি, একান্তে সময় কাটাতে পারি,ফুলে ফুলে আসা ভ্রমর আর প্রজাপতিদের সাথে গল্পে মাতোয়ারা হতে পারি।আকাশ-বাতাস,গাছপালা, পশুপাখি সবার কাছে নিজের মনের কথা বলতে পারি । 
 
কবিগুরুর ভাষায়...

 "কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা..মনে মনে।
 মেলে দিলেম গানের সুরের এই ডানা...মনে মনে। 
 তেপান্তরের পাথার পেরোই রূপকথার, পথ ভুলে যাই দূর পারে   সেই চুপকথার...।" 
 এই কল্পনা ঘেরা রূপকথার দেশের মায়াজাল পেরিয়ে আসতে   একদম ইচ্ছে হয় না আমার। 
 কারণ বাস্তব জগৎ যে বড়ই জটিল..
 বড়ই একঘেয়েমীতে ভরা। 
 মনে হয়..সকলের ভালোবাসা গুলো যেন বড়ই অকৃত্রিম।





কলমে - প্রীতম রায়


চৌহদ্দি 
প্রীতম রায় 

না পারলাম না আর 
শেষ মেষ ফিরে আসতেই হলো 
চৌহদ্দির মায়ার কাছে। 
বেড়াজাল ভাঙতে কম তো চেষ্টা করিনি। 
তবে তুই ছিলিস নাছোড়বান্দা। 
শেষ মেষ জিতেই গেলি বল। 
আটকে দিলি; 
বেঁধে দিলি গাঁটছড়া ভালোবাসার 
সেই আঁচলের সাথে। 
বহুবার ভেবেছিলাম জানিস ,
চৌহদ্দির বাইরে গিয়ে একটু বাস্তব দেখবো। 
 কংক্রিটের কালো জগতে পাড়ি দেব। 
তবে পিচ গলা রাস্তায় পায়ে ফোস্কা পড়ার ভয়,
 ইঁটের ঘায়ে হোঁচট খাওয়ার ভয়, 
তোর ছিল বলেই পারলি না তুই। 
হাত টা ছাড়তে। 
বরং বেঁধে দিলি আমায় আরও শক্ত বাঁধনে। 
অনেক টা মায়ের মতো করে।