ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২০

অনুগল্পে - অর্পিতা ঘোষ


স্বাধীন হবো কবে

অর্পিতা ঘোষ


   সবে ঘুম এসেছে রানীর, মাইকের আওয়াজে তা ভেঙে গেল। এই সাত-সকালে জোরে মাইক চালিয়ে ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিলো দেখছি– আপন মনে বকবক করতে করতে জানালা বন্ধ করতে উঠলো রানী; আওয়াজ যাতে একটু কম আসে সেজন্য।

            জানালা বন্ধ করতে গিয়ে দেখে ওদের বাড়ির পাশে যে বড় মাঠ আছে তার উল্টো দিকে মাইক বাজছে। পুরো মাঠটাকে ছোট ছোট পতাকার মালা দিয়ে সাজিয়েছে। কোনায় একটা স্টেজ করেছে, স্টেজটাও তেরঙা দিয়ে সাজানো। মনে হচ্ছে যেন সাদা, গেরুয়া আর সবুজের মেলা বসেছে।

            রানীর মনে পড়লো আজ স্বাধীনতা দিবস। এই দিনে নাকি আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিল। রানী গত দু- বছর ধরে দেখে আসছে  আজকের দিনে সকালে একজন পতাকা উত্তোলন করে; তারপর জ্ঞান গম্ভীর বক্তৃতা চলে বেশ কিছুক্ষণ। দেশটা যেন হটাৎ সততায় ভরে ওঠে। সারাদিন খেলা আর গান বাজনা হয়। দুপুরে সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করে।

           রানীদের বাড়ির কারোর অধিকার নেই ওখানে অংশ গ্রহণ করার, এমনকি কেউ দেখতেও যেতে পারবে না। ওরা যেন অস্পৃশ্য। অথচ ওই সব ভদ্র লোকেরাই রাতের আঁধারে কিছু অর্থের বিনিময়ে ওদের কাছে জ্যোৎস্না মাখতে আসে।

             রানীর একটু একটু মনে পড়ছে ছোট বেলার কথা। ওদের গ্রামের স্কুল বাড়ির মাঠেও স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান হোতো, এতো বড় করে হোতো না, ছোট করে হোতো। খুব আনন্দ হোতো তখন।

             বাবা মারা যাবার পরে সৎমা রানীকে ওর এক পাতানো কাকার কাছে বেচে দিলো। সেই কাকা কিছুদিন হায়না হয়ে রক্ত চুষে খেয়ে অন্য আর একজনকে বেচে দিলো। তিন বাড়ি বদল করে দু- বছর হলো রানীর এ বাড়িতে ঠাঁই হয়েছে।

           না ঘুমিয়ে জানালায় দাঁড়িয়ে হা করে কি দেখছিস মহারানী; খদ্দের এলে রাতে ঢুলবি নাকি ?আজ রাতে অনেক বেশি খাটতে হবে--- মাসি জানালার সামনের বারান্দা দিয়ে যেতে যেতে রানীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো।

রানী– আমি শুয়েই ছিলাম মাসি, মাইকের আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল, তাই জানালা বন্ধ করতে উঠেছি।

              জানালা বন্ধ করে রানী বিছানায় শুয়ে ভাবলো… ও নিজে কবে স্বাধীন হবে, ওতো অন্যের হাতে বন্দি। কেউ কি আসবে না ওকে বন্ধন থেকে মুক্ত করতে।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন