ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

বুধবার, ২৯ জুলাই, ২০২০

বিরিয়ানির গন্ধে লেখা


        বিরিয়ানি 
-----------------সুদীপ্ত সেন

আলাপ বোধহয় ফেসবুকে হয় 
ডেট ফিকস্ডটা হোয়াটস অ্যাপে 
ছেলেই প্রথম পসন্দ্ শুধায়
মনের দলিল মন মাপে।

মাপতে গিয়েই ক্যাবলা হলো 
দু-চোখ কাজল, মেঘ করুক
বিরিয়ানি পসন্দ্ ছিলো 
ছেলের ছিলো মেয়ের ভ্রু।

আলাপ হলো অনেকটাই 
এখন তারা অভ্যেসে
সদ্য প্রেমের স্বভাব তাই...
এখন সে সব বদলেছে। 

একটা ঘরেই এখন তারা
বিরিয়ানির ভাগ বসে
ভাঁপেই তাদের গন্ধ ছড়ায়
আদর মেজাজ মজলুসে।

আস্তে আস্তে রাত গাঢ় হয়, ফুটছে বিরিয়ানির চাল
মাংসের স্বাদ চালের ভেতর। ঢাকলো ব্যথা লাল রুমাল।


















শনিবার, ২৫ জুলাই, ২০২০

সম্পাদকীয় কলমে : পাখি পাল



সম্পাদকীয় কলমে
পাখি পাল

'জলফড়িং সাপ্তাহিক' আয়োজিত 'আপনি সম্পাদক আপনিই কবি' সাপ্তাহিক সংখ্যা বিভাগে এই সপ্তাহে আমার উপর সম্পাদনার ভার দেওয়া হয়েছে, এজন্য "জলফড়িং"-সহ সকলের প্রতি জানাই অশেষ কৃতজ্ঞতা।
এই সপ্তাহের সংখ্যার নাম- 'ভাবনার মুক্তি', এবং লেখার বিষয়-"ইচ্ছেপূরণ" নির্বাচন করেছি। জনৈক লেখকের মতে--'জীবন হল পদ্মপাতার উপরিকার জলবিন্দুর মত'--অর্থাৎ জীবনের ধর্মই হলো প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ-এর সম্মুখীন হওয়া। আর এই চ্যালেঞ্জ-এর সম্মুখীন হতে হতে মানুষ নিজের অজান্তেই হয়ে উঠছে জটিল থেকে জটিলতর। মাঝে মাঝে তাই মনে হয়..যদি এত জটিলতা না থাকতো কিংবা মানুষ না হয়ে যদি অন্যকিছু হতাম..তাহলেও কি একইরকম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হতো।

অনেকেরই কোনো না কোনো সময়ে মনে হয়েছে....ইস, যদি মানুষ না হয়ে অন্যকিছু হতে পারতাম.., কিন্তু মানুষ হয়ে যখন জন্ম নিয়েই নিয়েছি বাস্তবে অন্য কিছু হওয়া তো সম্ভব নয়, তবে হ্যাঁ, আমাদের ভাবনায় আমরা ইচ্ছে পূরণ করতেই পারি, সেখানে তো অসম্ভব নয়, বরং এই ইচ্ছে পূরণের মধ্যদিয়েই ক্ষণিকের জন্য হলেও আমরা সকল জটিলতার বাইরে গিয়ে একটু সহজ অনুভূতিগুলোকে জাপটে ধরতে পারি, যাতে পরবর্তী পরিস্থিতিগুলোর জন্য অনেকটা অক্সিজেন পাওয়া যায়।

এই ভাবনা নিয়েই তৈরি হয়েছে আমাদের কবি ও লেখকদের "ভাবনার মুক্তি" সংখ্যা ও বিষয়-"ইচ্ছেপূরণ"। পরিশেষে, যাদের এই সংখ্যায় লেখা পেলাম এবং যাদের লেখা পেলাম না সকলকেই জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ।




কলমে : আমিমোন ইসলাম



ইচ্ছে
আমিমোন ইসলাম

 ইচ্ছে করে এক নতুন দেশ,
 তুমি-আমি একা থাকবো বেশ।
 যে দেশে কোনো প্রেম হয়না শেষ,
 যে দেশে মুখজুরে হাসির রেশ।
 উঠোন জুড়ে পরে শিউলি ফুল,
 তোমাকে বানিয়ে দেব কানের দুল।
 পাপ-পুণ্যের নেই কোনো হিসাব,
 তাই তোমাকে ভালোবেসে করছি পাপ।
 ফুলের বাগানে তুমি আর গোলাপ,
 সে দেশে আসবেনা নিম্নচাপ।
  ইচ্ছেদের যদি ডানা হত,
 সেই দেশ আমি খুঁজে পেতাম।



কলমে : রথীকান্ত সামন্ত



ইচ্ছেসূচী
রথীকান্ত সামন্ত

তোমায় যদি দেখতে পেতাম আগুন দিয়ে ছুঁয়ে
আমার প্রণয় ছড়িয়ে দিতাম চকমকিদের ভিড়ে
আপনি হতাম শুকনো পাতা রুক্ষতম ভূঁয়ে
আমার আভায় জ্বলতো আকাশ রাতমোহনার তীরে।

অনেক দূরে গভীর কুয়ো বরফশীতল যোনি
তার 'পরে মুখ নোয়ায় যারা জলের নাগাল পেতে
সেথায় আমি বীজ হতে চাই কিংবা প্রতিধ্বনি
তৃষ্ণা পথে চাই গো তাদের বিতৃষ্ণাতে যেতে।

তোমার নামে আগমনী পথ পেরিয়ে আসে
আমার বুকে আকাশ নামে স্পর্শ করে ভূমি
আমায় তুমি সাজাও তোমার যে রূপ চোখে ভাসে
তোমার মতন করে আমায় পূর্ন করো তুমি।

 তোমার সাথে বোঝাপড়ার ইচ্ছে আমার খাঁটি
 আমার ইচ্ছে ঝাড়বাতিময়, গোলাপগন্ধী জলে
 আমার ইচ্ছে মজলিশি খুব, আমার ইচ্ছে মাটির।
 আমার ইচ্ছে তোমায় পাওয়া বকুলবনের তলে।




কলমে : জয়ীতা চ্যাটার্জী



এক পৃথিবী হব
জয়ীতা চ্যাটার্জী

যদি বলি কবিতা হব, তোমার হারের ভেতরের
নির্ধূম আনন্দ হব।
পঙ্কিল সময়ের স্রোতে ভেসে যাব
ক্ষমাহীন রক্তে যেভাবে সব কিছু হারায় নিরুদ্দেশে,
সে ভাবেই একদিন তোমাকে না বলে হারিয়ে যাব,
আকাশের মতো দাঁড়িয়ে থাকবে তুমি,
আমি প্রভাতের কোনো তটিনী হব,
দূরে মেরুনিশীথের স্তব্ধ সমুদ্রে তোমাকে ফেরাব,
কোনো ভুল নেই পাখিদের গানে,
নিষ্ফল আলোক বিন্দু জ্বলে ওঠে পতঙ্গের প্রানে,
তুমি ফিরিয়ে দিলে প্রতারিত রাজপথ দিয়ে ফিরে যাব,
স্হির শান্ত সলিলের অন্ধকারে মিশে যাব,
তুমি খুঁজে পাবে না আমার ভেতর জিজ্ঞাসার মানে,
ওপারের নিরলোকের কবিতা হব বায়ুসন্তরণে,
প্রান্তরে অমরতা জেগে উঠবে কবিতার স্পর্শে,
একরাশ প্রাদেশিক ফুলের উন্মোচনে,
জীর্ণতম সমাধির ভাঙা ইঁট হব তোমার ইচ্ছের গা ঘেঁষে,
খিদের আবিষ্কার করে আমার সবুজ সোনালী চোখ
তাকাবে তোমার দিকে জ্যোৎস্নার উন্মেষে,
যদি তুমি দিয়ে যাও হে
আকাশ তোমার বুকের এক জন্মের ক্ষত,
আমি ও হব এক পৃথিবী,
হব প্রভাতের নদীটির প্রতিভার মতো।



কলমে : অর্পন বসাক




এবার মরলে গাছ হবো
অর্পণ বসাক

 শেষবার আমার জন্মদিনে
 তুমি একটা শিউলির গাছ দিয়েছিলে
 তোমার মনে আছে?
 হাতে গাছটা দিয়ে বলেছিলে
 আমি যেদিন তোমার ঘরের বউ হয়ে আসব
 সেদিন দেখো, সারা উঠোন জুড়ে
 শিউলি পরে থাকবে...
 আকাশে চাঁদ উঠবে,
আর আমি তোমার কাঁধে মাথা রেখে জোৎস্না দেখব।
জোৎস্না দেখতে দেখতে সারারাত তোমার কবিতা শুনবো
আমি বড্ড হেসেছিলাম সেদিন....
দেখতে দেখতে তিনটা বছর কেটে গেল...
এই তিনটে বছরের একেকটা দিন শুধু প্রতীক্ষায় থেকেছি,
কবে ফুল ফুটবে শিউলির গাছটায়?
আজ আবার আমার জন্মদিন...
জানো! গাছটা কথা রেখেছে।
সারা গাছ ভরে ফুল এসেছে..
শিউলির গন্ধে গোটা বাড়ি ম ম করছে।
আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে।
উঠোনের শিউলির ফুল গুলোই চাঁদের আলো পড়ে
সোনালী উঠোন হয়ে আছে।
আমি বারান্দায় তোমার প্রিয় স্মরণজিৎ এর লেখা
"জোনাকীদের বাড়ি" বইটি নিয়ে ঠায় বসে আছি।
কিন্তু বিশ্বাস করো একটা লাইনও পড়তে পারিনি...
সেই তিন বছর আগে তোমাকে লেখা শেষ চিঠিটা
আজ ছিঁড়ে ফেলছি।
যেটার আর কোনোদিন দরকার হলো না।
আচ্ছা তুমি অন্তত যাবার আগে চিঠিটা পড়ে যেতে পারতে।
বড় সাধ করে সেদিন লিখেছিলাম -
 প্রিয় কনকলতা,

 তুমি চিন্তা করো না, আমাদের মধ্যে যে আসতে চলেছে তাঁকে এই পৃথিবীর আমরা আলো দেখতে দেব।
বেকার ছেলেটাকে তোমার বাবা যদি না মেনে নেয়, তাহলে দূরে কোথাও পালিয়ে যাব।
ঠিক কিছু একটা করে নেব দেখো। একটু ভরসা রেখো ইতি তোমার প্রানের অনিমেষ।
 কিন্তু চিঠিটা সেদিন তোমার বাড়ি অবধি পৌঁছনোর আগেই শুনতে পেয়েছিলাম ,
মাটি থেকে কয়েক হাত উঁচুতে সিলিংয়ের সাথে ওড়নার ফাঁসে তোমার ঝুলন্ত দেহের খবর।
সেদিন চিঠিটা তুমি অবধি পৌঁছলে,
হয়ত গল্পটা অন্য হতে পারত, চিঠিটা তুমি অবধি পৌঁছালে হয়ত দুটো প্রাণ বেঁচে যেত।
 চিঠির শব্দ গুলো তোমার কান অবধি পৌঁছালে আমাদের না হওয়া একটা সংসার বেঁচে যেতে পারত।
 কি দোষ ছিল তোমার?
দোষ তো সেদিন আমি করেছিলাম।
নিজের প্রেমকে স্বীকৃতি দিতে একটা চাকরী জোগাড় করতে পারিনি।
তোমার দায়িত্ব নিতে পারি নি।
তোমার দুঃসময়ের সঙ্গী হতে পারি নি।
অথচ...
অথচ...
 আসলে আমি বরাবরই ভীতু ছিলাম।
দায়িত্ব কর্তব্যের কাছে বরাবরই নতজানু।
হুম, নিজেকে বড্ড বেশি অকৃতজ্ঞ লেগেছিলো সেদিন।
সেদিন তোমার মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে এসব বলতে পারি নি। কারন, সেদিন পায়ের নীচের মাটি বড্ড আলগা ছিল।
শরীরে ভরসা নামক মেরুদন্ডটি নেতিয়ে পড়েছিল।
তাই বোধয় তোমার কাছে গাছ হয়ে থাকতে পারি নি।
ছায়া হয়ে তোমায় আগলাতে পারি নি।
সেদিন আমার জন্মদিনে শিউলির গাছটা দিয়ে তুমি হয়ত আমাকে আগেই বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলে পুরুষ মানুষকে গাছ হতে হয়। গাছের মতো ছায়া দিতে জানতে হয়।
গাছের মতোই শত আঘাতে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
আর শত ঝড় ঝাপটায় গাছের শিকড় দিয়ে আগলে রাখতে হয় ভালোবাসার মাটি...
কথা দিলাম আর যা না পারি,
এবার মরলে গাছ হবো...
গাছ হবই হবো..
দেখে নিও...
যদি পরজন্ম বলে কিছু হয়,
সেখানে ভরসা হয়ে এবার তোমার পাশেই রবো।
ভালো বাসার মাটি আগলে তোমার পাশে সবুজ একটা গাছ হবো।








কলমে : শ্রেয়া রায়

ইচ্ছেঘুড়ি
শ্রেয়া রায়

 ইচ্ছে করে ভ্রমর হয়ে ফুলের কাছে যেতে
 অকৃত্রিম সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে থাকতে ।
 ইচ্ছে করে প্রজাপতির রঙিন পাখা হতে...
প্রকৃতিকে নবরূপে রঙিন করে তুলতে ।
 ইচ্ছা করে সুদূর ওই আসমানীর রামধনু হতে..
 সাত রঙাতে তোমায় ঘিরে থাকতে ।
 ইচ্ছে করে গোলাপ হয়ে চুলের খোঁপায় সাজতে...
আবার প্রেমিকের হাতের গোলাপ হয়ে প্রেমে নিবেদিত হতে ।
 ইচ্ছে করে জ্যোৎস্নার আলোয় তোমার ঘরের আঁধার দূর করতে... পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় তোমার শরীর স্পর্শ করতে ।
 ইচ্ছে করে শ্রাবণ ধারার বৃষ্টি হয়ে তোমার শাড়ির ভাঁজে
তোমায় আঁকড়ে ধরতে...
তোমার সিক্ত দেহে আলতো পরশে তোমায় আপন করে নিতে । ইচ্ছে করে সোনালী রোদের প্রথম কিরণে তোমার ঘুম ভাঙাতে... তোমার চোখের পলক জুড়ে তোমায় কাছে পেতে ।
 ইচ্ছে করে স্নিগ্ধ হাওয়ায় তোমার খোলা চুলে বিলি কেটে তোমায় ঘুম পাড়াতে...
ঘুমের দেশে আমায় নিয়ে রঙিন এক স্বপন এঁকে দিতে ।
 ইচ্ছে করে তোমায় ঠোঁটের কালচে তিলে আমার নাম লিখতে.. তোমার মিষ্টি ঠোঁটের মিষ্টি হাসি হতে ।
 ইচ্ছে করে দোলের আবীর হয়ে তোমায় রাঙিয়ে দিতে...
 ভালোবাসার বাহুডোরে তোমায় হৃদয়ে বেঁধে রাখতে ।



কলমে : সুদীপ তন্তুবায় নীল


ইচ্ছে শহর
সুদীপ তন্তুবায় নীল

 ইচ্ছে ছিলো - এক পেয়ালা আদর হবো।
শেষ বিকেলে সাঁঝ চুমুকে তোকেই ছোঁবো
ইচ্ছে ছিলো - বৃক্ষজন্ম, শ্যাওলা শাড়ি
কেউ না নিলেও, খবর নিতো দেয়ালঘড়ি।
ইচ্ছে ছিলো - হলুদ পাখি, ধানের ক্ষেতে
দেখতো মেয়ে আদর চোখে আসতে যেতে।
ইচ্ছে ছিলো - জলফড়িঙের ফুরুৎ ডানা।
বলতো না কেউ এ ঘাটে তোর আসতে মানা।
ইচ্ছে নিয়েই বইছে বাতাস, ফুটছে আলো
অনিচ্ছে তুই, বুক পকেটেই থাকিস ভালো।


কলমে : সুনন্দ মন্ডল

হাতটা বাড়িয়ে দাও  ‎
সুনন্দ মন্ডল

 পাঁচ বছর আগেও আমরা হাঁস ছিলাম
 ওই যাকে বলে একজন হাঁসা,
 আরেকজন হাঁসি! সারাদিন পুকুরে,
 খালে-বিলে কিলবিল করে বেড়াতাম।
 এবাড়ি সে বাড়ির খুদ কুটো কিংবা ধান খেতাম,
 আর প্যাকপ্যাক করে মাতিয়ে রাখতাম গৃহস্থের বাড়িও।
  রাতের বেলা মানুষ হতে চাইতাম।
  আজ মানুষ !
  মানুষের বেশ ধরে পেরিয়ে যাচ্ছি বহু শতাব্দী,
  স্বপ্নের ভেলায় মুক্তি দিতে চাইছি মনকে।
  হ্যাঁ, আমরা মানুষ! তাই এভাবেই হয়তো
 বেঁটে হয়ে যাচ্ছি ক্রমশ
 স্বপ্ন আঁকি! তা পূর্ণ করতে লাগে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি
 কিংবা রঙিন কাগজের তেজ,
 যাতে লেখা কিছু নম্বর!
 জৈবিক চাহিদাও কেমন ঝনঝনে ভাঙা টিনের মতো।
 তাই চলো, আজ আমরা পাখি হয়ে যায়!
 ওই নীল আকাশের শামিয়ানা গায়ে জড়িয়ে,
 নব বিপ্লবে বাতাসের পাখায় গতি বাড়িয়ে দিই,
 ছুটে যায় স্বপ্ন পূরণে!
 মানুষ বেশে যা অপূর্ণ।
 যাবে? তাহলে হাতটা বাড়িয়ে দাও।




কলমে : প্রীতম রায়




বর্ষাবরণ
প্রীতম রায়

এই মেয়ে পথ আটকালে যে
জানো না আমার বদনাম আছে,
ভুল করে কেউ ছায়া মাড়ালে 
জানো পন্ডিত মহাজনেরাও গঙ্গা স্নান করে।
ছুঁয়ে ও না আমায়! 
আরে তোমার পাপ লাগবে যে।
কেন লাগবে? 
জিজ্ঞেস করো না।
কথা শোন বলছি সরে দাঁড়াও
আচ্ছা মেয়ে তুমি ভয় নেই মনে?
না নেই মশাই।
পাপের তোয়াক্কা আমি করি না।
শুনেছি তোমার গান।
যেদিন আকাশ মেঘলা করে ,
বৃষ্টি নেমেছিল চিলেকোঠায় ।
শুনেছি তোমার সুর নাকি মেঘেরা শোনে,
আমায় নেবে তোমাদের সাথে।
শেখাবে কিভাবে ডাকতে হয় মেঘেদের।
কেন প্রেয়সী? কি করবে শিখে?
জানো না মল্লার আমি বৃষ্টি ভালোবাসি।
মেঘেদের বুকে মুখ ডুবিয়ে বসে।
শূন্য পাওয়া অঙ্কের খাতা দিয়ে বানাবো নৌকো
জল থৈ থৈ বাকা পথে ওরা চলবে।
তোমার সুর এঁকে দেবে ওদের পথ।
আর আমি জানলা দিয়ে দেখব
আমাদের এই বর্ষাবরণ ।



শনিবার, ১৮ জুলাই, ২০২০

সম্পাদকীয় কলমে : সুনন্দ মন্ডল

সম্পাদকীয় কলম:-

"শরতের শিশির মানেই মা দুর্গার আবাহন আর বর্ষার বৃষ্টি মানেই সোঁদা মাটির গন্ধ এক আত্মিক টান। অনুভূতির মিশেলে সংসার ও সম্পর্কে বিস্তৃত রজনী পেরিয়ে প্রথম সূর্যের আলো।

 জলফড়িং তেমনই আত্মিক মেলবন্ধনের উঠোন আমরা সকলেই সদস্য, পরিবারের সূত্রটা গাঁথি। সম্মান, যশ, প্রতিপত্তির বাইরেও মনের তারে মেলে দিতে প্রস্তুত হয়েছি আমরা। জীবনে যে যাই করি না কেন, এটুকু সময় অতিবাহিত করি জলফড়িংয়ের ডানায়।

"সমুদ্রের গভীরতায় কিংবা নদীর খরস্রোতায় জলফড়িংকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আপনাদের সকলের সাহায্য ও আন্তরিক সহযোগিতায় আমি কৃতজ্ঞ। আমি ধন্য এই সংখ্যার সম্পাদক হিসাবে সকল দায়িত্বভার কাঁধে তুলে পেরেছি বলে। আর আপনাদের যাদের পাশে পেলাম তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

সুনন্দ মন্ডল






কলমে : পাখি পাল

বিপন্ন মানবসমাজ
পাখি পাল

আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ বিপন্ন
শৈশব থেকে যৌবন
বাইরে সব ঘষে মেজে রঙ,
কিন্তু ভিতরের আমিটা যে নিরাভরণ
সভ্যতা, সমাজ সব এগোচ্ছে,
এগোচ্ছে তো মানুষও
তবু, যেন কোথাও পড়ে পড়ে,
ধুঁকছে হেরে যাওয়া মনুষত্ব
এ কোন যুগে দাঁড়িয়ে মোরা,
যেথা বেকার যৌবন ছটফটায়।
ভালোবাসার প্রেরণার অভাবে,
ক্লান্ত মন রাত জেগে কাটায়
শিশুকে নাকি হতে হবে বড়,
করতে হবে অনেক রোজগার।
কই বলা তো হলো না তাকে,
কখনো সত্যকে কোরোনা অস্বীকার।
আমরা হয়েছি আধুনিক,
আপনকে করেছি পর।
তাইতো আজ মন শিল্পী নয়,
ব্যাবসায়ী হয়ে বাড়িয়েছে দর।




কলমে : রথীকান্ত সামন্ত



 যন্ত্রজীব
রথীকান্ত সামন্ত 

অতঃপর উন্মাদের মতো শয্যা থেকে
উঠে পড়লো এক অস্থির প্রজন্মের অস্থিসার জীব।
পাশে পড়ে আছে গতযৌবনা জোৎস্না,
আত্মদগ্ধ, আকর্ষনহীন।
তার রুপোলি আভায় আর নেই মৌতাতের মদির আহ্বান।
যে বয়সে কান্না থাকে আকস্মিক সে বয়সে ঘন করে বাঁধা 
রুপোর তারে চোখ মুখ বেঁধে ধীর বিষক্রিয়ার মতো
মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় প্রতিষেধক, কৃত্রিম হাসি।
দিন যায়। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে পলি জমে আর
শালুমোড়া মহাকাব্যে জমে ওঠে পতঙ্গবাসর, নিত্যমহাভোজ।
যে সূর্য অস্ত গেছে শিশুসাহিত্যের পশ্চিমে সেদিক থেকে
উঠে আসে বস্ত্রহীনার মিছিল, যাদের দিকে জিভ বাড়ানো
ক্রমে পরিবর্তিত হয় প্রতিবর্ত ক্রিয়ায়।
ধ্বনি, ধ্বনি এবং আরো বিচিত্র ধ্বনি এবং একলহমায়
মনি জ্বালিয়ে দেওয়া রঙ একদিন উবে গেল একনিমেষে।
শুনতে পাওয়া গেল ঝিঁঝিঁর ডাক, শিশিরের শব্দ।
দেখতে পাওয়া গেল জোৎস্নার আলোয়
যে শুয়ে আছে পাশের বালিশে তার চোখ পাথরের।
অজস্র চুম্বনেও ভেজেনা তার ঠোঁট।
অতঃপর শয্যা ছেড়ে উঠে আসে এক পরিণত যন্ত্রজীব।
তার মাথার ভেতর থেকে আকাশের দিকে
ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায় একটি শূল, চাঁদের আলোয়।




কলমে : প্রীতম রায়


 হকার
প্রীতম রায়

কি বললেন চাকরি?
এর চেয়ে ঢের ভালো হকারি।
বিশ্বাস করবেন না লোভে পড়ে ছুটেছি হাজার! 
হেঁটেছি অনেক সিঁড়ি।
লাইটার ছেড়ে দেশলাইয়ে ঠেকেছি
ধরিয়েছি ইয়ে বিড়ি।
নো ভ্যাকেন্সি শব্দ গুলো ঘুমোলে কানে বাজে,
চাকরি চাই ভুলে দাদা লেগেছি হকারের কাজে।
টাকা নিয়ে ফিরলে বাড়ি ধরবে তখন উনুন।
তিন টাকায় চারটে লজেন্স লাগবে নাকি বলুন।



কলমে : জি কে নাথ

ভাঙা অঙ্কের কিউব
জি কে নাথ

খুন হওয়া স্বপ্নের জাল কেটে গুহার্তনাদ
নীলচে রঙিন শিরায় থেকে থেকে জমাট বাঁধে
এটা গতকালের একটা অনুভুতি,
যখন প্রথম লাফ দিয়েছিলাম সিঁড়ির উপর থেকে
শেষ অঙ্ক বুঝতে পেরে চরম কাটাছেঁড়া
করে উঠে দেখি নিজের থেকে নিজে
আলাদা হয়ে গেছি অনেক আগে।
ড্যাম ধরা সমাজের চারকোণা কামরাগুলো
গিলে খায় কিভাবে যেন হাঁ মুখে প্রতি রাতে।
নীরবে বাঁচা মানুষ থেকে মানুষের দূরের পথে
জেগে থাকা অজানা স্টেশনে হারিয়ে ফেলি
ক্ষয়ভয় মুক্ত নগরমানুষপাখির মিছিলে,
থেমে যাওয়া মুখের ভিতর রোজ হারিয়ে ও বেঁচে উঠি
নিভন্ত আড়ালের অন্তমিলে বিশ্বাসের জরিপ,
ওয়াচটাওয়ারের নীচে ছিন্নভিন্ন পুতুলের কান্না ..
আমার যৌবন নাশকতায় মিশে যায় ভোগের অন্ধকারের
আলোকণা
বোধের সীমানায় সমস্ত ভাঙা শব্দ হরফের শেষে
বিষাক্ত আঙুলের মশাল দূরত্বে ধুলোস্নানে
টুকরো হয়ে যাওয়া আজন্ম শীতকাল ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে।
নর্দমায় পেরিয়ে যায় সময়চেতনার কর্দমাক্ত জঞ্জাল
মাটির মৃত বেদনার গর্ভে বায়ুর প্রচ্ছায়ার ভ্রম
শুয়ে থাকে দিনের শেষে .....ঘুমের কণা পুঁতে রাখি
হালকা ছায়াস্পর্শে
চরাচরে শুধু মৃত্যুতর্পণ .....ভাঙা বোতলের কাচে
মরচে ওঠে নীলাভ ব্যথা
পড়ে থাকা হাড়গোড়ের লতায় জড়িয়ে থাকি
কতকাল জানিনা এ ঘুণের শহরে
দৃষ্টিহীন আলোর গন্ধে জন্মান্ধ ঘোরানো সিঁড়ির ভাঁজ
নির্বাকআকর্ষ এ জড়িয়ে ওঠে ক্রমে
প্রবেশের আগেই ছোট হয়ে আসে সমস্ত ছিদ্রগুলো
সময়ের নীচে.... নিজের নীচে...... হয়তো কোন কিছু না হওয়ার নীচে...
কুয়াশার জঙ্গলে হারিয়ে যায় এ ছদ্মবেশী শৈশব
একই গল্পের পুনরাবৃত্তিতে ডুবে যায় চোখের আয়না
এখন স্তব্ধতার কাছাকাছি নীরবতার পাশে বিন্দু
বিন্দু রেখা টেনে আঁকছি পুনর্জন্ম....
ঘরের পর ঘর ঘরের পর ঘর পেরিয়ে যাচ্ছি
নিঃশব্দ পায়ে ধূসর হাওয়ায় মরা স্মৃতি
ফাঁক করে ডেকে ওঠে কাক......কা কা কা কা কা!!!
 



শুক্রবার, ১৭ জুলাই, ২০২০

এমনিই কন্ট্রোভার্সি থেকে দূরে থাকা পছন্দ করি।


অনিমেষ : নমস্কার দাদা।

শয়তান : নমস্কার।

অনিমেষ : জলফড়িং পরিবার ও আমার তরফ থেকে তোমার প্রথম সন্তান 'অর্ক'-র জন্য জানাই একরাশ শুভেচ্ছা ।

শয়তান : এই সন্তান বলাতে আমার বিশেষ রকমের আপত্তি আছে,সে থাক। তবে 'সন্তান'ই যদি বলিস তবে এটা আমার প্রথম নয়, 'দ্বিতীয় সন্তান' প্রথম বই, 'রিসাইকেলবিনের সেন্সর্ড ভাবনারা', কবিতার বই। ওটা লেখার পর ঠিক করেছি কবিতা আর লিখব না। সবাই লিখছে। আর আমার জড়ো ছিল উপন্যাস। আর আমি যেহেতু থ্রিলার প্রেমি তাই থ্রিলার দিয়েই শুরু। আপাতত থ্রিলার উপন্যাস লিখে যাওয়ারই প্ল্যান আছে।

অনিমেষ : তোমার এই পরিকল্পনা যেন সফল হয়,আমরা আড্ডায় আসি ।

শয়তান : বেশ বেশ।

অনিমেষ : তুমি কোন ধরনের সাহিত্যচর্চা কে প্রাধান্য দাও অনলাইন না অফলাইন ?

শয়তান : আমার এ বিষয়ে বাছবিচার নেই তেমন যে করেই হোক পড়াশোনার চর্চাটা চালিয়ে গেলেই হল। অনেকসময় অনেক বিষয়ের পিডিএফ পাওয়া গেলেও বই পাওয়া যায় না তখন অনলাইনই ভরসা। তবে হ্যাঁ স্পেসিফিক ভাবে যদি চ্যুজ করতে বলা হয় তাহলে বলবো বই , বই হাতে নিয়ে পড়ার মধ্যে একটা আলাদা আমেজ থাকে যেটা অনলাইনে পাই না।

অনিমেষ : ফেসবুকে লেখালিখির জগতে পেজের ভূমিকা কি তোমার কাছে ?

শয়তান : পেজ একটা প্ল্যাটফর্ম। একসাথে সেখানে চর্চা করা যায় অনেক বিষয় সম্পর্কে অনেকেই নিজস্ব মতামত রাখেন সেগুলো থেকে সবাই অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে। সেটা শুধু লেখালেখি নয়, নাচ-গান, ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি যা খুশি হতে পারে। আলাদা করে শুধু সাহিত্য চর্চার জন্য পেজের যে ভূমিকা বিশাল তেমন কিছু বলার সময় এখনও আসে নি। কারণ, অধিকাংশ পেজ চলে নবিশদের দ্বারা তবে তারা চেষ্টা করছে কিন্তু বিরাট যে ভূমিকা পালন করেছে তেমন চোখে পড়ে নি।

অনিমেষ: তাহলে তোমার কোথায় পেজের ভূমিকা সাহিত্যচর্চায় ক্ষীণ !

শয়তান : হুম আংশিকভাবে যদিও , তবু তাই তো দাঁড়াচ্ছে।

অনিমেষ : তাহলে পেজ ব্লগ বা অনলাইন ম্যাগাজিন গুলির রাস্তা আরো কঠিন করে দিচ্ছে কি ? ম্যাগাজিন বা পোর্টাল কথা বলছি ।

শয়তান : বুঝলাম না। পেজ কিভাবে অনলাই ম্যাগাজিন বা পোর্টালের রাস্তা কঠিন করছে?
এগুলোতো পেজেই প্রমোট হয় বা সোশ্যাল মিডিয়াতেই।

অনিমেষ : না আসলে যখন আমরা ফেসবুক এ পেজে লেখা পরি সেটা চলে আসে বা নিউজ ফিডে স্ক্রল হয় আর ব্লগ ক্ষেত্রে একটা ওয়েবসাইটে যেতে হয় ।

শয়তান : হ্যাঁ তাতে অসুবিধা কিছুই হয় না। ব্লগের কন্টেন্ট ভাল থাকলে বা পরিচিত কেউ লিখলে পড়বে।
পড়া এখন ডিপেন্ড করে দু'টো জিনিসের ওপর৷ এক কে লিখছে এবং দুই কী লিখছে। মতবিরোধ অবশ্যই আছে এ নিয়ে।

অনিমেষ : এই প্রসঙ্গে ইতি টানলাম দাদা।
অর্ক-১ কি ভাবে তোমার মাথায় বিস্তার করলো মানে কি ভেবে লিখেছিলে কল্পনা না কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে ?

শয়তান : এটার উত্তর পেয়ে হয়তো অহংকার করছি ভাবতেই পারে সবাই। কিন্তু আমি ক্লাস সেভেন এইট থেকেই জানতাম আমি থ্রিলার লিখতে পারব। লিখতামও। খুব অখাদ্য হত, কিন্তু পারতাম।
আমি যে পরিবেশে বা যে জায়গায় বড় হয়েছে ওখানে খুন-মারপিট, ডাকাতি একটা সময়ে আমবাত ছিল। এখনও। মার্ডার কেস এখনও মাসে দু'টো এমনিই হয়ে যায়। এই সমস্ত বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি ছোট থেকেই। তার সাথে বড় হয়ে ওঠার সাথে সাথেই মিশেছে কিছু কল্পনা, পড়াশোনা কিংবা রিসার্চ। এভাবেই অর্ক তৈরি হল।

অনিমেষ : দাদা তুর্ণা আর অর্ক ভবিষ্যতে কি অর্ক ২ পাবো?

শয়তান : হ্যাঁ অবশ্যই। আমি যতদিন বেঁচে আছি অর্ক'র পার্ট বেরোতে থাকবে। অক্ষর সংলাপের প্রকাশক উৎপল বল্লভের তত্বাবধানেই আসবে অর্ক ২। ৩,৪,৫ আসবে কিনা জানি না। সে যদি কন্টিনিউ করতে চায় তবে সেখান থেকেই বেরোবে নইলে সেল্ফ পাব্লিশিং করব অর্ক। অন্য কোথাও থেকে বেরবে না। তবে বই আসবেই।

অনিমেষ : আচ্ছা দাদা ।
অর্ক-১ বই বেরানোর পর তোমার জীবনে কোনো পরিবর্তন এসেছে ?

শয়তান : পরিবর্তন ! সে তো পশ্চিবঙ্গের বাসিন্দা হিসেবে এমনিও এসেছে জীবনে। হা হা হা হা।
যাইহোক, পরিবর্তন বিরাট আসে নি। তবে এখন লোকে বলে, "প্লিজ দাদা কবিতা না। গল্পই হোক, থ্রিলার হোক। গল্প বা উপন্যাসই লেখো।"
হয়তো তাদের ধারণা, আমি কবিতাটা ঠিক লিখতে পারি না। যদিও এটা সর্বৈব সত্য। আমি কবিতার থেকে উপন্যাস বা গল্প বেশি ভাল লিখি। তাই কবিতা লিখিও না এখন।

অনিমেষ : তোমার আগের একটি কথায়, অধিকাংশ পেজ চলে নবিশদের দ্বারা এই কথা একটু যদি ব্যাখ্যা করো। তোমারও একটা পেজ আছে দাদা তার অভিজ্ঞতা যদি একটু ভাগ করো।

শয়তান : আমি পেজ নিয়ে কথা বলতে খুব একটা আগ্রহ বোধ করি না। 'দলছুটের কলম' শুধু আমার পেজ নয় , এটা সব্বার পেজ। পাঠক, লেখক, আর্ট ডিপার্টমেন্ট, ফটোগ্রাফার সব্বার।

অনিমেষ : আচ্ছা দাদা,আর ওই অধিকাংশ পেজ চলে নবিশের দ্বারা একটু যদি খুলে বলো ভালো হয়।

শয়তান : বলতেই হবে? স্কিপ করলে ভাল হয়, পেজ নিয়ে আমি সত্যিই কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এমনিই কন্ট্রোভার্সি থেকে দূরে থাকা পছন্দ করি।
কেন এসব প্রশ্ন আবার।
ওই আরকি। যেটুকু বলেছি সেটুকুই থাক না।

অনিমেষ : আচ্ছা দাদা কিছু রাপিড প্রশ্নে আসি
দাদা আমরা আড্ডার শেষে মুখে ।

শয়তান : বেশ বেশ হোক।

অনিমেষ : শরৎচন্দ্র না বঙ্কিমচন্দ্র?

শয়তান : শরৎচন্দ্র।
স্ক্রিনপ্লেটা ফুটে ওঠে একদম চোখের সামনে।

অস্পৃশ্য : স্মরণজিৎ না শ্রীজাত?

শয়তান : কেউ না।

অনিমেষ : গল্প না কবিতা?

শয়তান : গল্প।

অনিমেষ : বই পড়ে লেখা না বই না পড়ে লেখা ?

শয়তান : অবশ্যই বই পড়ে নিজের অভিজ্ঞতার সাথে যোগসূত্র সাধন করে লেখা৷

অনিমেষ : তোমার প্রিয় কবি ?

শয়তান : প্রচুর আছে। একটা বললে মন ভরবে না। টি.এস. ইলিয়ট, জন কিটস, জীবনানন্দ দাশ, গুলজার।

অনিমেষ : ব্যোমকেশ না ফেলুদা ?

শয়তান Daa: ফেলুদা। নো ডাউট। তবে ব্যোমকেশ ভীষণ সিন্যামেটিক। শরদিন্দু বাবু যেহেতু নিজেই বলিউডের নামকরা স্ক্রিনপ্লে রাইটার ছিলেন তাই হয়তো। ব্যাসিকালি কনফিউজড হয়ে যাই এই প্রশ্নটাতে। তবে সত্যজিৎ রায় এর আমি জাবড়া ফ্যান। ক্লাসিকস সব।

অনিমেষ :আচ্ছা সব শেষে তোমায় নিয়ে প্রশ্ন শয়তান নাম টা কেন ব্যাবহার করো? কারণ টা যদি ভাগ করে নাও ।

শয়তান : এক টাকা করে নিচ্ছি সবার থেকে। এই উত্তরটা দেওয়ার জন্য। বড়লোক হয়ে যাব।

খুব সিম্পল রিজন। এটা মায়ের দেওয়া নাম। ব্যবহার করি ওই জন্যই। আর কোনো রকম বিশাল কিছু একটা কারণ এর পিছনে নেই। যারা ভাবে বিশাল কোনো কারণ আছে, তাদের ভাবনায় জল ঢেলে দেওয়ার জন্য দুঃখিত।ভবিষ্যতে ভাল একটা কারণ বানিয়ে দেব চাপ নেই। হা হা হা হা।

অনিমেষ : আচ্ছা,সবশেষে জলফড়িং পরিবারের তরফ থেকে আগামী দিনের জন্য শুভেচ্ছা পৃথিবীর সুস্থ হোক ততদিন বাড়িতে থেকো ভালো থেকো। শুভ রাত্রি।
এরপর আবার আমার দিকে অর্ক লাগিয়ো না বলে রাখলাম।

শয়তান : ধন্যবাদ তোদের গোটা টিমকে। খুব ভাল থাকিস। কাজ করে যা আরও ভাল ভাল। হা হা হা হা। অর্ক আপাতত বেনারস যাওয়ার প্ল্যানে আছে। কলকাতা নিয়ে আপাতত ইন্টারেস্ট নেই।

অনিমেষ : ভালো থেকো।
"জীবিকা"
*তনুশ্রী গুহ*

জীবিকার সন্ধানে কেউ খোঁজে সুযোগ,

কেউবা বিসর্জন দেয় হারিয়ে যাওয়া ক্ষোভ।

কেউ চায় সরকারী চাকরি,

কেউ চায় বেঁচে থাকার কিছু একটা তড়িঘড়ি।

সবাই আজ ছুটছে জীবিকার পশ্চাতে,

কেউ বা জীবিকার লোভে বিসর্জন দিচ্ছে সততার মনুষ্যত্ব।

শিশুরাও যেনো নেমে পড়েছে এই জীবিকার প্রতিযোগিতায়,

তাইতো আজ শিশুশ্রমিক রাস্তায়- রাস্তায়।

জীবিকাই সব, জীবন নাইবা থাকুক,

তাইতো আজ শিশুশ্রম ঘোরে দু-মুঠো অন্নের অপেক্ষায়।

সবুজ পরিবেশ তাদের জন্য নয়,

খেলাধুলো! তা আবার কি জিনিস?

দায়িত্বের বোঝা কাধে নিয়ে চলে শিশুশ্রমের গতি,

জীবিকাই সব, জীবনের নতুন কি-বা প্রতিশ্রুতি!
ওরা গলা টিপে মারে
শুভাশিস্ চক্রবর্ত্তী


কত বর্ণমালা গেঁথেছি,
কত শব্দ দিয়েছি তোমায়,
আজ বাক্যময় আক্ষেপ শুধু কাঁদে।
রোজকার কমা, দাড়ি তেও তোমার ছোঁয়া,
সেদিন ও নেমেছিল চাঁদ আমার ছাদে।

এ লেখা শুধু লেখা নয়,
মাঝে মাঝে কত ভয় হয়,
উনুনের আঁচে জ্বলবে না তো !!
যেমন তুমি জ্বলেছিলে পাহাড়পুরের মাঠে।

এ কথা বলার নয়, বোঝার,
নামহীন কাব্যের মতই তোমায়,
কি সুখ পেয়েছিল তোমায় পুড়িয়ে ?

অঙ্কুরে তুমি ছিলে কত স্বপ্ন,
কত গাছে কত পাখি,
নিচে পথিকের শূন্য আসন আজ ও খালি।

বর্ণমালা ক্রমশ শুকিয়ে যায়।
ওরা গলা টিপে মারে তোমার বাক্য।



কালানুক্রম // বদরুদ্দোজা শেখু

অলকানন্দা গঙ্গাকে পবিত্র জল আমরা বলেছি
থান আখড়া মাজার  মঠকে পবিত্র স্থল আমরা করেছি
অরুণ বরুণ পবনকে দেবতা করেছি,সমুদ্রও দেবতা,
রুদ্র প্রকৃতিকে তুষ্টকল্পে বলির রুষ্টতা
আমাদের জড়ভরত মনের ফসল ,আমরা গুহামানব অসহায় প্রাণী
প্রতিকূল পরিবেশে পরিকীর্ণ জন্মজন্মান্তর
গ্রাসাচ্ছাদনে জননে ব্যতিব্যস্ত ,হিংসা হানাহানি আমাদের বুনো উত্তরাধিকার ---
তার কোনো ইতি কোনো কালে ঘটবে ব'লে আমি
বিশ্বাস করি না । গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আধিপত্যবাদ
আমাদের রক্তের ইন্ধন যাকে বলে প্রজাতি- জিনোম
'ওম্ শান্তি ওম্ শান্তি ওম্'  কেউ কেউ ছড়ান হৃদয়ে
অসময়ে আতরের বাণী ভীষণ উদ্বায়ী
স্থায়ী সমাধান ব্যর্থ প্রাণপাত,দিঙ্নাদে পরমবাদের ব্যঙ্গ হাততালি ।বিশ্বযুদ্ধগুলো সব ঘরগেরস্থালি - - পলাশীর প্রান্তর আজো  ভারতভূমির বেদনা,বঙ্গভূমির বেদনা।।
  

রবিবার, ১২ জুলাই, ২০২০

দৈনিক কলমে লেখিকা শ্রেয়া রায়


প্রেমের ঋতুরঙ্গ
শ্রেয়া রায়

যদি বলি...গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের তপ্ত দিনে তোমার ছায়ায় আবৃত হয়ে তৃপ্তি পেতে চাই....
তুমি কি বৃক্ষ হয়ে আমায় তোমার সমস্ত শরীর দিয়ে ঢেকে স্বস্তি দেবে ?
নাকি...কালবৈশাখী ঝড়ের মতো এসে আমার সমস্ত খেলাঘর ভেঙে তচনচ করে দিয়ে আমায় পথে বসাবে ?


যদি বলি...বর্ষার দিনে খোলা আকাশের নীচে আমি ভিজবো প্রাণ খুলে....
তুমি কি এক পশলা শ্রাবণ ধারার বৃষ্টি হয়ে আমার শরীর ছুঁয়ে আমার ভিজিয়ে দিয়ে যাবে ?
নাকি...আকাশে কালো মেঘের বজ্রপাতে আমায় স্তব্ধ করে দেবে ?


যদি বলি...শারদপ্রাতে নবরূপে সাজবো তোমারই জন্যে....
তুমি কি শিউলি সুবাসে আমায় ভরে দেবে ?
নাকি...তুমি অসময়ের বৃষ্টি হয়ে আমার গায়ে কাদা ছিটিয়ে যাবে ?


যদি বলি...হেমন্তের শিশির ভেজা সকাল হয়ে তোমার ওষ্ঠ ছুঁতে চাই....
তুমি কি পদ্মপাতার মাঝে আমায় যত্নে ধরে রাখবে ?
নাকি...দিঘির জলে টলমলিয়ে আমায় ছেড়ে দেবে ?


যদি বলি...শীতের ঘন কুয়াশার চাদরে তোমায় ঢাকতে চাই...
তুমি কি আমায় আপন ভেবে কাছে টেনে নেবে ?
নাকি...অবহেলায় আমায় তুচ্ছ করে আপন পথে চলবে?


যদি বলি...বসন্তের প্রেম হয়ে আমি তোমার হৃদয়ে থাকতে চাই....
তুমি কি তোমার ভালবাসার আবীর রঙে আমায় রাঙিয়ে দেবে ?
নাকি...জরা-জীর্ণ ব্যাধি হয়ে আমায় একলা করে যাবে?


দৈনিক কলমে কবি বিশাল ঘোষ


~ তোমারই এ স্থান ~

একটা একটা করে এই অশ্রুর হিসেব,
তুমি একবার বলো মিলিয়ে দিতে পারবে।
আমি না হয় আমার সমস্ত মন খারাপ ভুলে,
তোমাকে কাছে টেনে বুঝিয়ে দেবো ভালোবাসি ‌।।

তুমি একবার চিৎকার করে বলতে পারবে ?
যে হ্যাঁ, তুমি আমাকে ভালবাসো, শুধু আমাকেই।
আমি তখন কেঁদে পরলে তুমি আশ্বাস দাও,
আগের মতো বিশ্বাস ভেঙে ফেলে যাবেনা ।।

ওকি চুপ করে কেন ? ভয় হচ্ছে বুঝি ?
আচ্ছা বেশ‌ বুঝেছি, নীরবতার মানেটা কি।
ভয় নেই প্রতারকের আসনে তোমাকে বসাবো না,
তুমি ফিরে যাও, এই জায়গা তোমারই থাকবে ।।

                               - বিশাল ঘোষ (জাজিগ্ৰাম)

রবিবার, ৫ জুলাই, ২০২০

সম্পাদকীয়


গলার কাছে দলা হয়ে আসে হতাশা । নিত্য দিনের রুটিনে ক্লীশে হয়ে যায় বাস্তব ,একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচার জন্য আশ্রয় নি লেখার কাছে সাহিত্যে র ধারা স্নানে যারা ধুয়ে দেয় রোজ ।তাঁদের কাছে মাথা নত করতেই হয় তেমন ই একজন প্রতীম হলেন নবারুণ যার জন্মদিনে আমরা এই ক্ষুদ্র প্রয়াস নিয়ে উপস্থিত হয়েছি,
আমরা সকলে মিলে স্মরণ করেছি সেই প্রতিবাদী অধ্যায় কে।

ধন্যবাদন্তে
অরূপ সরকার
সম্পাদক, জল ফড়িং   ওয়েব ম্যাগাজিন 
 গল্প
   মনের ওপারে
____________
অনিকেতের আজ জন্মদিন। সকাল থেকেই ঘরে উৎসবের মেজাজ। মন্দিরে পুজো দিয়ে এসেই মা পায়েস বসিয়ে দিয়েছেন। বৌ সুচরিতা তো ওর পছন্দের রান্না নিয়ে ব্যস্ত। আর ওর সাত বছরের মেয়ে তুতান বাবাইয়ের জন্য নিজের হাতে বার্থডে কার্ড বানাচ্ছে। এবছর ওর আটত্রিশ বছরের জন্মদিন। বাবা বেঁচে থাকতে এই দিনটাই ওর বাবা-মা ওকে একটু ছোট্ট করে ঘুরতে নিয়ে যেতেন। ওর পছন্দের খাবার আর উপহার কিনে দিতেন। তারপর বাবার চলে যাওয়া, ওর চাকরি, বিয়ে... কেটে গেছে অনেক গুলো বছর।
বাবার মৃত্যুর পর থেকে তাই এইদিনটা ও ঘরেই থাকে। সবার সাথে একসঙ্গে সময় কাটায়।
সুচরিতা খুব ভালো মেয়ে। স্বামী, শাশুড়ি, মেয়ে, সংসারের খুটিনাটি নিয়েই দিব্যি হেসে খেলে থাকে। সবাইকে খুব যত্নে রাখে। আজও ভোর থেকে উঠে অনিকেতের প্রিয় রান্না নিয়ে মেতেছে। খুব ভালোবাসে ওরা দুজন দুজনকেই।
অনিকেতের নিজেকে খুব সুখী মনে হয়। ঈশ্বরকে মনে মনে ধন্যবাদ দেয় এতো ভালো একটি পরিবারের জন্য। কিন্তু তবুও আজ ওর মনের কোণে কোথাও যেন বিষন্নতার মেঘ জমে আছে।

সকালে ব্রেকফাস্ট করেই নিজের রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখল ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তায় ভরে গেছে। একে একে সব্বাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে হঠাৎই মনটা খুব বেশি খারাপ হয়ে গেল।
আজ খুব মনে পড়ছে মেঘনার কথা। বছর তিনেক আগে ফেসবুকে অনেক গুলো মিউচুয়াল ফ্রেণ্ড দেখেই রিকোয়েস্ট সেণ্ড করেছিল অনিকেত। কয়েকদিন পর রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্টেড হলেও বেশ কিছুদিন কেউই কারোর সাথেই কোনোভাবে যোগাযোগ করে নি। অনিকেতই প্রথম মেসেজ করে মেঘনাকে। কিছুদিনের টুকটাক কথাবার্তার পর দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মেঘনা খুব সাধাসিধে, বছর তেত্রিশের গৃহবধূ। স্বামী, মেয়েকে নিয়ে ওর সংসার। অনিকেত আর মেঘনা সমবয়সী। ওদের দুজনেরই সাংসারিক কথা থেকে শুরু করে পৃথিবীর সমস্ত বিষয়েই আলোচনা হত। ওরা আলাদা আলাদা শহরের বাসিন্দা। তবুও কি করে যে ওরা ভার্চুয়ালি খুব ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে, সেই প্রশ্নের উত্তর ওরাও দিতে পারবে না।
ওরা হোয়াটসঅ্যাপেও কথা বলে। নিয়মিত কথা বলাটা ওদের অভ্যাসের মধ্যে পড়ে এখন। তবে সেই অভ্যাসটা কখনোই বন্ধুত্বের সীমা অতিক্রম করে নি।

এভাবেই বছর দুই কাটার পর, বছর খানেক আগে অনিকেতের একদিন হঠাৎই মনে হল, ওরা একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে উঠছে। নিজের মনের সাথে অনেক যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত মেঘনাকে কথাটা ও বলেই ফেলল।

মেঘনা খুব অবাক হয়ে বলেছিল------"একজন বিবাহিত পুরুষ, আর বিবাহিতা মহিলা কি একে অপরের বন্ধু হতে পারে না? আমি তো আমার কলেজের বন্ধুদের সাথেও কথা বলি, খোঁজ খবর নিই, কই আমার তো এতে খারাপ কিছু মনে হয় না। হ্যাঁ আমি অস্বীকার করছি না, তোমার সাথে একদিন কথা না হলে আমার কেমন খারাপ লাগে। তার মানেই তো এই না, আমাদের সম্পর্কটা খারাপ বা আমরা আমাদের পরিবারের প্রতি অবহেলা করছি। সবার জন্য সব কর্তব্য পালন করে, আমরা সারাদিনে একটু কথা বলে যদি মনে শান্তি পাই, এতে অন্যায়টা কোথায়? এটাকে কি তুমি পরকীয়া বলবে?"

অনেকক্ষণ পর অনিকেত রিপ্লাই করেছিল------"বি প্রাকটিক্যাল মেঘনা। কি হবে এই ভার্চুয়াল সম্পর্কটা রেখে। আমার মনে হয় এটা থেকে বেরিয়ে গেলেই সবার  ভালো হবে। আমি আমার ফ্যামিলি নিয়ে আর তুমিও তোমার ফ্যামিলি নিয়ে খুব ভালো থাকবে দেখো।"

মেঘনা বলেছিল------"জানি অনিকেত সবাই ভালো থাকবে। কিন্তু দেখো, সবাইকে ভালো রাখতে গিয়ে নিজেদের ভালো থাকা হবে না।
এটাও জানি, আমাদের মধ্যে কোনো চাওয়া-পাওয়া, লাভ-ক্ষতি নেই। এমনকি আমাদের খারাপ সময়েও শুধুমাত্র মেসেজে খোঁজটুকু নেওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকে না। তবুও কি মনে হয় না... We are essential for each other without any reason?"

বিরক্ত হয়ে অনিকেত বলেছিল------ "তোমার মতো কল্পনায় ডুবে থাকলে তো চলবে না আমার। তোমার ওই জ্ঞানের কথাও আর শুনতে ভালো লাগে না।"

এরপর  ছাড়া ছাড়া ভাবে কেটেছিল আরও কিছুদিন। মেঘনা উপলব্ধি করে অনিকেত এখন এড়িয়ে চলে ওকে। তাই একদিন নিজে থেকেই বলল, তুমি যখন বলছ, সম্পর্কটা না রাখাই ভালো, তাই হোক তবে। আজ থেকে দুজনেই দুজনকে সব জায়গা থেকে ব্লক করো। চাইলেও যেন আর না ফিরতে পারি কেউ।"
আর কথা বাড়ায় নি অনিকেত। সঙ্গে সঙ্গে ব্লক করেছিল সব জায়গা থেকে। মনে হয়েছিল বুক থেকে একটা পাথর সরে গেল। নিজেকে বেশি বেশি করে ডুবিয়ে দিয়েছিল কাজ আর পরিবারের মধ্যে। তবুও কোন কোন সময় মনটা যে মোচড় দিত না তা নয়।
আজও সকাল থেকে বারবারই মনে হয়েছে মেঘনার কথা। গতবারও ওর জন্মদিনে কম ছেলেমানুষি করে নি মেয়েটা। সকালে ফোন সুইচড অন করতেই টুং টুং করে একসাথে মেইল, এস এম এস, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ সব জায়গা থেকে মেঘনার কাছ থেকে আসা বার্থডে উইশের নোটিশ। এই ছেলেমানুষি দেখে অজান্তেই ঠোঁটের ফাঁকে এক চিলতে হাসি ফুটেছিল অনিকেতের। আজ কথাটা মনে করে অজান্তেই চোখ ভিজে গেল ওর।
মনে পড়ল মেঘনার কথাগুলো-----"সবাইকে ভালো রাখতে গিয়ে, নিজেদের ভালো থাকা হবে না।"
" We are essential for each other without any reason."
বুকে কেমন যেন চাপ লাগলো ওর। ভাবল----"সত্যিই যদি ওকে সারাজীবন আমার কাছেই রাখতাম হয়তো সবার সঙ্গে আমরাও ভালো থাকতাম!"
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপচাপ শুয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর আবারো উঠে পড়ে, নিজেকে মিশিয়ে দিল সংসার সমুদ্রে।
__________________
পাপিয়া মণ্ডল











প্রবন্ধ- ডিপ্রেশন এবং বন্ধুত্ব

ঈশিতা মন্ডল

সম্প্রতি একটা ভীষণ বেদনাদায়ক খবর আমাদের আষ্টেপৃষ্টে ধরে রেখেছে, তা হল সুশান্ত সিং রাজপুতের হৃদয়বিদারক মৃত্যু সংবাদ।। কিছুদিন আগে নিজের বান্দ্রার ফ্ল্যাটে তিনি আত্মহত্যা করেন।। খবরটা শোনার পর থেকে প্রিয় অভিনেতা , প্রিয় একজন মানুষ চলে যাওয়ার যন্ত্রণার সাথে সাথে আমাদের মনে ঘনীভূত হয়েছে একটা প্রশ্ন, ঠিক কি হয়েছিলো আমাদের সবার প্রিয় সুশান্ত এর সাথে? লড়াকু, মেধাবী, জীবনীশক্তি তে ভরপুর, তারুণ্যে উজ্জ্বল এই মানুষ টার জীবনে কি এমন ঘটলো যে উনি জীবনযুদ্ধে হার স্বীকার করে নিলেন? অনেক থিওরি উঠে আসছে, তার ই মাঝে উঠে আসছে ডিপ্রেশন এর থিওরি। ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদ , সত্যি কথা বলতে , আজকের দিনে একটা জ্বলন্ত সমস্যা।। সুশান্ত কি কারণে এই চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিয়েছেন, কারণ কি শুধুই ডিপ্রেশন নাকি রয়েছে আরো কিছু অন্তর্নিহিত অন্তর্ঘাত!?! সে খবর নিশ্চয় দায়িত্বে থাকা তদন্তকারী অফিসার রা খুঁজে বার করবেন বলে আমার বিশ্বাস।। তাই সে চর্চায় আমরা আর নাই বা গেলাম।। তার চেয়ে আসুন, দুটো অন্য কথা বলি।। এই যে ডিপ্রেশন, এর মূলে কি আছে বলুন তো? সত্যিকারের বন্ধুত্বের অভাব।। হ্যাঁ, ক্ষণিকের মনোমালিন্যের জেরে কত বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যায় ।। মুহূর্তের ভুল বোঝাবুঝি তে এককালের অভিন্নহৃদয় বন্ধু যেন হঠাৎ করে হয়ে যায় অচেনা।। আর এভাবেই আমাদের জীবন থেকে একের পর এক চলে যেতে থাকে সম্পর্কগুলো, বন্ধুত্ব গুলো। আর দিনের শেষে সঙ্গ দিতে পড়ে থাকে তিক্ততা এবং একাকীত্ব, যা একদিন নিয়ে আসে মানসিক অবসাদ তথা ডিপ্রেশন। তার চেয়ে আমরা যদি জীবন টাকে একটু অন্য দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখি তাহলে কেমন হয়? ভাবুন না! কোনদিন আমরাও তো নিখিলেশ , মইদুল হয়ে যাবো।।। কেউ হয়ত অমলের মত জীবনযুদ্ধ লড়ব, কেউ বা আবার গোয়ানিজ বন্ধুর মত কালের নিয়মে হারিয়ে যাবো.. গিটারের সুর রয়ে যাবে কেবল মন - মস্তিষ্কের অনুরণন হয়ে।। আরেক কোনো রমা রায় হয়ত তৈরি হবে আমাদের মাঝে। আরেক কোনো সুজাতা হয়তো সাজাবে সংসার, সাড়ে চারটার আড্ডা বা যামিনী রায়- বিষ্ণু দে বিষয়ক আলোচনার থেকে স্বামীর চা, ছেলের টিফিন, নিজের সান্ধ্যকালীন দূরদর্শন ধারাবাহিক হয়ত আপন হয়ে যাবে তার। হাজার হাজার কফি হাউসের আড্ডা এভাবেই হারিয়ে যাবে... হারিয়ে যায়।তাই জীবনের বন্ধুত্ব গুলোকে, হৃদয়তারে বাঁধা সম্পর্কগুলোকে যতটা পারা যায়, যতদিন পারা যায়, আঁকড়ে ধরে বেঁচে নি না আমরা।। মন কষাকষি, জমে থাকা ক্ষোভ, অভিমানের কালো মেঘ কে দূরে সরিয়ে আরেকবার জড়িয়ে ধরি প্রিয় মানুষগুলোকে।। ভুল হলে ক্ষমা চেয়ে নিই ক্ষমা করে দিই।।  " ভালোবাসি" বলে আরেকবার ধরে নিই বন্ধুর হাত টা।। দূরত্ব মুছে যাক ভালোবাসার ফল্গুধারায়..  দুর হোক ডিপ্রেশন, মুছে যাক অবসাদ।।

ফিনিক্স

সায়ক দাস

এই তুমি যখন
পার্কস্ট্রিটে লেমোনেডে নিজেকে
ঘুলিয়ে নিলে আপাদমস্তক ,
তোমার থেকে বিদায় নিল
একটা মেছো , আঁশটে গন্ধের দিন ।

তোমার ঘামের গন্ধে
যে ইতর মৌমাছিরা পরাগযোগ করে
অমৃতকুন্ড আত্মসাৎ করল ,
তোমার থেকে হারিয়ে গেল
একটা কানা গলি , ছোট্ট রান্নাঘর ।

তোমার শরীরে বেড়ে ওঠা মেঘের বজ্রপাতে
একটা সাধারণের ঘরে কান্নার রোল উঠল
আগুনে পুড়ে সবটুকু শেষ !


                   ফিনিক্স
                   ‎    সুনন্দ মন্ডল

রবীন্দ্র সরণি তখনও ক্লান্ত, ভোরের মেঘ মেখে
স্থবিরতা ভাঙতে গিয়ে হোঁচট খেল না দেখে!

বিবর্ণ ওই বিষণ্ন আকাশের প্রত্যক্ষ সংলাপ
বিদীর্ণ কাঁথায় জড়ানো যত খেজুড়ে আলাপ।

ফিনিক্স পাখি বার্তা দিল সমাজ সংগঠনে
জাগরণী শক্তি হয়ে নতুন নিবেদনে।

সবুজ রঙের কথায় মাখা উজ্জীবনি মন্ত্র
ব্যস্ত পাহাড়ে আটকে রাখা জটিল সব তন্ত্র।

নবারুণ আজ অন্য দিগন্ত লিখেছে দেখো,
তারই থেকে মাথা তোলার প্রেরণা শেখো।

ব্রাত্য জীবনে আজ লিপিগাথা আর সংসার ধর্ম
অভিযোগহীন ভালোবাসাটাই হোক বাঁচার বর্ম।
       

#প্রিয়_শত্রু

কিশলয় গুপ্ত

আমায় যদি শত্রু ভাবো ভাবতে পারো
ভাবার উপর কারো কোন হাত নেই
খাবার যেমন দিন যত যায় কমছে আরও
কমছে প্রেমও- সংখ্যালঘুর জাত নেই

জাতের কথায় রাতের ভিতর প্রহর হাসে
শহর যেমন নিজ সুখে দেয় অনন্ত ঘুম
আমার ডাকে প্রগতিরা আর কি আসে
যথা নামে কালো খামে এই মরসুম।

ঋতুর তাড়ায় দু'হাত বাড়ায় অবুঝ বুক
চপলমতি- তোমার জন্য এই কবি
রাখলো পুষে গোপন ঘরে অলীক সুখ
শত্রু ভাবো- ভাবনাতেই আজনবি ।
একলা নবারুণ

ভুলে গিয়েছি গাছ, ফুল,  পাখি
মানুষ ভোলানোর ছিল যত ফাঁকি,

ভুলে গিয়েছি সবুজ পাহাড়
দেখেছি যখন দারুণ অনাহার,

তুলে দিয়েছি গানের ছন্দ
ওরা তো পায়নি ভাতের গন্ধ,

ভুলে গিয়েছি তোমার নীতিবাদ
ওদেরও নেই কোনো অপরাধ ,

ভুলে গিয়েছি আর সবকিছু
 তোমার আমার সুখ,
চাইছি শুধু আমার পাশে
ওরাও শ্বাস নিক একবুক;

মনে রাখ সব কবিতাই কোথাও
 খিদের আগুন ,
সেইখানেতেই  পথ হেঁটেছিল
 একলা নবারুণ ।

                   _____শ্রেয়া রায় চৌধুরী

প্রতিপক্ষ
অঙ্কুশ ভৌমিক

(১)
তুমি বহুদূর দিয়ে হেঁটে চলো
আমি তাতে কলঙ্ক খুঁজি।
অবিরাম অর্ধদগ্ধ মন
কাদা ছিটিয়ে শান্ত হয় না।
আরো অনেক শান্তি চাই আমার
অনেক বেশি...

(২)
হারতে আসিনি আমি
মনুমেন্টের চূড়ায় বসে
পা দোলাতে দোলাতে
তোমার মুখে ছুঁড়ে দিই-
থুতুর দলা

(৩)
ঝড়ে পড়ে যাওয়া তালগাছটার
পাশে বসে নেশা করি।
আস্তে আস্তে শান্তি আসে মনে
অনেক শান্তি

আমি তোমারই মতো
প্রতিপক্ষ ছাড়া বাঁচতে চাই,
কিংবা মরতে


চৈতি চাঁদের কাছে

চৈতি চাঁদ, তোমার কাছে প্রার্থনা  করেছিলাম
আরো কিছুটা স্বচ্ছ আলোর , জোনাক
থেকে আরো কিছু মাধুর্য-মাখানো রশ্মি
যাতে ঘাসের উপর ব'সে বই পড়তে পারি
অনায়াসে, অক্ষরগুলো স্পষ্ট দেখা যায়,
অন্ততঃকলমের রেখাগুলো দৃশ্যমান হয়।

তুমি জোনাক বাড়াতে বাড়াতে হলে

 পূর্ণিমার চাঁদ, বাঁধভাঙা মোহময়ী রূপসী
শশীকলাগুলো ভেসে গেল স্রোতের বন্যায়,
তবু আমার অক্ষর বই-পড়া লেখা
কোনোটাই হলো না অনায়াস, শুধু আভাসের মতো
ফুটলো কিছু রেখার আঁকিবুকি দুঃখী
নদীর মতো মন-মরা আটকে'-যাওয়া চড়ায় ।

আবার তোমার জোনাক কমতে কমতে কবে

আঁধার ঘনালো হৃদয়ের বিস্তীর্ণ গুহায়,
যেন তুমি ব'লে গেলে,আমার কাছে নয় , বন্ধু,
অংশুমালীর কাছে যাও,ওখানে যতো খুশী চাও,
আমার কাছে শুধু প্রেমের মহুয়া আছে,
অক্ষর-কালির কোনো কারুকার্য নাই, তাই
মায়ায় জড়াই শুধু, লাবণ্যে রহস্য ফুটে উঠে ।।

©  বদরুদ্দোজা শেখু 
অর্ধেক ওভাররুট

আঙুল সুবিধাবাদী নানাস্তরে হাঁটে
কলমের বুকের ক্ষত লিখতে পারে না
বলতে পারে না মুখরক্ত কথা

অদৃশ্য অর্থের কবিতা
পুরোনো ক্যালেন্ডারের মতো
শব্দরা প্রেমহীন হ্যালোজেন
অনুভূতি ব্যাঙাচিছানা
রং তুলির নানা ক্যানভাস
একটা লম্বা ব্যথার উপর
দাঁড়িয়ে আছে...

পাংচার হৃদপিন্ডের পথ আছে
পথিক নেই অথবা পথিক হাঁটে
 পথের শিরদাঁড়া ভাঙা

অ্যাশট্রেতে সিগারেট টুকরোর মতো অবাঞ্ছিত
পরিযায়ী অতিথি নিয়ত খুঁড়ছে মৃত্যু...





এসো আমার গাঁয়
মুনমুন চক্রবর্তী


 বন্ধু!
এই শহরের ব্যস্ততা পেরিয়ে
একটিবার এসো আমার গাঁয়,
দেখবে সবাই কেমন জড়িয়ে রাখে
তোমায় মায়া মমতায়।

তুমি দেখবে সূর্য ওঠা ভোরের আকাশ,
দেখবে কচি ধানের ক্ষেতে
বাতাসে খেলা করে ঘাস ফড়িংয়ের ঝাঁক!
আমি তোমায় নিয়ে কাক ভোরে
তুলবো শাপলা-শালুক আর কাটবো সাতাঁর বিলে!

তোমায় নিয়ে সারা গ্রাম ঘুরে,
বসবো বটের ছায়ায়।
তারই শীতল বাতাসে জুড়িয়ে যাবে,
তোমার ক্লান্ত মন।
রোদেলা আকাশে বহুদূরে উড়ে বেড়াবে
কয়েকটি গাঙচিল!

তুমি এসো,
তুমি এসো বন্ধু আমার ছোট্ট গাঁয়।
তোমায় নিয়ে যাবো আমি
স্বপ্নের সবুজ সীমানায়।
ভালোবাসার পুনর্জন্ম হোক


মলয় পাল


সীমাহীন কাল্পনিক নগরে অনিরুদ্ধ'রা হেঁটে যায়-
হেমন্তের নগর ঘুমিয়েপড়ে তখন;
শিশিরের মতো জমা কান্না ধূসর কুয়াশা হয়ে ছেয়েযায় নিয়ণ পথ।

হঠাৎ;প্রেমে পড়ে অনিত্য এক নারী,পৃথিবীর মসৃণ গৃবায় বিষ দাঁত বসায়!
এক শতাব্দী আচ্ছন্নতার পর নির্বাণ লাভ হয় একদিন।

অথাগতর মত;আগামী এক আলোকবর্ষ পথের দিকে নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অনিরুদ্ধ বলে যায়-
তোমার অভিনয় আর অবহেলার মাটিতেই আমার অকৃত্রিম ভালবাসার পুনর্জন্ম হোক!


youtube hits দিয়ে গানের মান বিচার করা ভুল। সত্যজিৎ রায়ের চেয়ে করন জোহার commercially অনেক বেশি successful


                               

১.) জলফড়িং এর পক্ষ থেকে এবং আমাদের তরফ থেকে দাদা তোমাকে প্রথমেই জানাই নমস্কার।

দেবায়ন দাঃ- নমস্কার। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে handshake  এর  চেয়ে নমস্কারটাই  কাম্য।


২.) তুমি যেমন গানের লোক তেমনই অন্যদিকে তুমি একজন ডাক্তার তাই প্রথমেই জানতে চাইবো এই অবস্থায় তোমার কীভাবে দিনযাপন চলছে?

উঃ- ডাক্তারি  জীবন এর বিশেষ  পরিবর্তন  হয়েছে তা নয়। হাসপাতালের কাজ চ্লছে আগের মতই। মাস্ক,  PPE  পরে কাজ করতে হচ্ছে। OT,  OPD সবই চলছে। মজার ব্যাপার হলো, যেহেতু  আমি নাক কান গলার ডাক্তার, দেখছি ইদানীং  অনেকেই  চলে আসছেন নাক গলার  check up করাতে শুধুমাত্র  corona এর panic এ। আর বাড়ি ফিরে বাকি সময় টা না-হয় গান লিখে বা গেয়ে,ছবি একে, বই পড়ে কাটাচ্ছি।

                                     
৩.) সাবধানে থেকো দাদা । আচ্ছা দাদা এবার জানতে চাই তোমার গানবাজানার শুরুটা ঠিক কবে থেকে?

উঃ- শুরু বলতে সেই ছোটবেলা থেকে। আমার মা  সুমিত্রা ধর, একসময়কার  ত্রিপুরার প্রথম সারির রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীদের মধ্যে  একজন।ছোটবেলায় মা-এর কাছে অনেকেই আসতেন গান শিখতে,তাই দেখে আমার গানের সূত্রপাত। মজার ব্যাপার  হলো  আমি ছাড়াও আমার ব্যান্ড এর  বাকি দুজন গায়ক তাপস এবং আবিরদা(সাগরনীল)  দুজনেরই গানে হাতেখড়ি  মা এর কাছে। আমরা সবাই একসাথেই শিখতাম।


৪.) গান লেখা, সুর করা এর পিছনে তোমার ইন্সপিরেশন কে?

উঃ- ছোটবেলা থেকেই বাবা কে দেখেছি  ডাক্তারির ফাঁকে ফাঁকে কবিতা লিখতে।ছড়া, কবিতা লেখার সূত্রপাতটা তখন  থেকেই। তারপর স্কুলজীবনে পরিচয় হল কবির সুমন, অঞ্জন দত্ত, নচিকেতা এঁদের গানের সাথে, সেই সাথে বাংলা ব্যান্ড এর গান- মহিনের ঘোড়াগুলি, ক্যাকটাস, ফসিলস, লক্ষিছাড়া,চন্দ্রবিন্দু, তখন বুঝতে পারলাম লেখা আর সুর মিলে গেলে একটা গান কি করে তৈরি  হতে পারে।শুরু টা এভাবেই হয়েছে। স্কুলেই আমরা  আমাদের  ব্যান্ড ' ঊড়ুম্ভুম ' শুরু করি।

                           

 শুভদীপ,আমি,তাপস,কুশল, কিশোর, সাগরনীল আর দীপ্তনয়। প্রথম দিন থেকেই ভেবেছিলাম নিজেদেরই গান গাইব, নিজেদের লেখা,নিজেদের সুর।


৫.) যেটা জানতে আমার খুব ইচ্ছে করে সেটা হলো। গানের সুর আগে করো নাকি আগে গানের কথা লেখা হয়?

উঃ- বলা শক্ত, কখনো আগে লেখা চলে আসে আগে,আসে পাশে সুর বাধতে হয়। কখনো  সুরটা মাথায় ঘুরপাক খায়,তখন লিখে নিই।


৬.) এবার যদি একটু পিছিয়ে যাওয়া যায় ধরো তোমার ছোটোবেলা, স্কুল এবং কলেজজীবন নিয়ে যদি কিছু আমাদের বন্ধুদের শেয়ার করো দাদা।


উঃ- স্কুলের কথা, আমাদের  ব্যান্ড এর প্রথম প্রোগ্রাম  মাধ্যমিক পরীক্ষার কদিন আগে, টেস্ট  পরীক্ষা  হয়ে গেছে, কৈলাসহর বই মেলায় সন্ধ্যে ৭ টার সময় হবে প্রোগ্রামটা, এর আগের রাত্রে ব্যান্ডের সবাই মিলে পুরো শহর জুড়ে হাতেলেখা পোস্টার  লাগালাম শ'খানেক,"ঊড়ুম্ভুম আসছে - সাবধান, স্থান - কৈলাসহর বই মেলা, কালকে সন্ধ্যে ৭ টা"।

হল পুরো  houseful পরদিন।


৭.) তোমার ব্যান্ড যখন প্রথম শুরু হলো তখন সবার মতোই শূন্য থেকে শুরু হয়েছিলো কিন্তু আজ বহু মানুষ জানে তোমাদের। কেমন লাগে?

উঃ- জানার চেয়েও শোনা টা বেশি দরকারী। আমরা কেউই বিখ্যাত  হওয়ার  জন্য  গান লিখি না, ভালবেসে  লিখি,যদি  শ্রোতারা  শুনে সেটা পছন্দ করেন তাতেই আমরা খুশি।

৮.) এই সময়ে দাঁড়িয়ে অনেকেই independent music করেছে কিন্তু সবাই তো আর ক্লিক করতে পারছে না অথচ দেবায়ন তরফদার তাঁর সৃষ্টি নিয়ে দর্শকের সামনে হাজির। এই বিষয়ে কি বলতে চাও নতুনদের?

উঃ-  ক্লিক শব্দ টা নিয়ে আমার একটু আপত্তি রয়েছে, যারাই আজ গান লিখছেন, তাদের ক্লিকের কথা না ভেবে উচিত নিজের ভালোলাগার গান তৈরি  করা।
বিরিয়ানি খাওয়ার লোক অনেকে থাকলেও উচ্ছে ভাজা খাওয়ারও লোক রয়েছে,তাই নিজের মত গান তৈরি  করে যেতে  হবে। সব গানেরই শ্রোতা রয়েছেন। youtube hits দিয়ে গানের মান বিচার  করা ভুল। সত্যজিৎ  রায়ের চেয়ে করন জোহার commercially  অনেক বেশি successful।


                       

৯.) "দূতাবাস" গানটার পিছনে যদি কোনো গল্প থাকে আর সেটা যদি শেয়ার করা যায় ছোটো করে জলফড়িং এর বন্ধুদের সাথে।

উঃ-দূতাবাস এর পিছনে গল্প নেই,তবে 'সত্যি' আছে। কটা ছাপানো কাগজের অভাবে যদি  কেউ দেশহীন হতে পারে তাহলে সেই দেশের মূল্যবোধ  কে খতিয়ে  দেখা দরকার।


১০.) তোমার এখন অবধি গাওয়া শেষ গান মনে হয় মধুমিতা দির সাথে গাওয়া। গানটা আমার মনে আছে সেটা হলো 'মন আমার কবে"।
পরবর্তী ক্ষেত্রে আর কি কি নতুন কাজ  দর্শক দেখবে তোমার থেকে?

উঃ-শেষ গান 'মন আমার কবে' নয়, এর পর আমার youtube channel এ আমাদের ব্যান্ড এর " ব্রিষ্টি ভিজি চল' গান টা রিলিজ  করেছে।সামনে আরও বেশ ক'টা কাজ রয়েছে, individual  কাজ ছাড়াও বেশ কটা webfilm, Series  আর সিনেমার  কাজ।তবে এই পরিস্থিতি তে সবকিছুই অবশ্য একটু  paused রয়েছে। সুরকার আম্লান দা ( অম্লান  চক্রবর্তী) এর সাথে অনেক ক'টা কাজ আগেও করেছি যেমন - কে তুমি নান্দিনি,থাই কারি,ফিল্টার কফি লিকার চা ইত্যাদি।সামনেও বেশ কটা  রয়েছে pipeline -এ।

১১.) "ভূত হাসছে" এই গানটা ডাক্তার দেবায়নের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

উঃ- গান টা ২০১২ তে তৈরি,২০১৩ নাগাদ আমরা গান টা রেকর্ড  করি,  youtube  একটা  Music video বানিয়ে রিলিজ করা হয়।অনুপমদা কে পাঠানো প্রথম  কটা গানের মধ্যে  এটা একটা। ২০১৮ এর শেষে অনুপমদার কথায় গানটা rearrange  করে,ARC  লেবেল এ রিলিজ  করা হল। সেই সুবাদে পরিচয় হল বেশ কজন গুনী independent artists দের সাথে।

                      
১২.) তুমি একজন ডক্টর, আবার একজন গায়ক। একটা ot আছে তোমার আর একই সময়ে একটা show আছে। যেকোনো একটা তোমায় ছাড়তে হবে। কোনটা participate করবে?

উঃ-হা হা। OT তেই  participate করব। প্রথমত  OT তে কারোর জীবন  নির্ভর  করছে আমার উপর।
আর দ্বিতীয়ত ওরম চাপে ভালোবাসার জিনিস হয় না। গানটা আমার ভালবাসা।




এই রাউন্ডের নাম★ [গায়ক কতটা শ্রোতা]

১.) "আজ রাস্তায় আমার শহরে"-- কার গাওয়া?
দেবায়নঃ- মাধুমিতা

২.)" ইস দেবাশীষ"-- কার লেখা গান?
দেবায়নঃ-আনুপম দা



দাদা এই রাউন্ডের নাম ★[ একজনই ১০ এ ১০ ]

মানে যেকোনো একজনকেই তুমি ১০ এ ১০ নম্বর দিতে পারবে তুমি

১.) অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় / উপল সেনগুপ্ত?

দেবায়নঃ-চন্দ্রবিন্দু  ১০/১০

২.) লগ্নজিতা নাকি ইমন চক্রবর্তী?

দেবায়নঃ-দুজনেই ভালো, দুজনেই আলাদা।দুজনেই ১০/১০


 এই রাউন্ডটা একটু অন্যরকম দাদা
এখানে তোমাকে হিংসে করতে হবেই। আমি একজনের নাম বলব আর তোমাকে বলতে হবে তুমি কেনো হিংসে করতে চাও?

১.) রূপঙ্কর বাগচি
উত্তরঃ- কন্ঠ

২.) শিলাজিৎ মজুমদার
উত্তরঃ-  arrangement

৩.)অনুপম রায়।
উত্তরঃ- লেখা



[ এবারে জেনে নিই তোমার কিছু পছন্দের কথা ]
             

১.) প্রিয় রঙঃ- নীল

২.) প্রিয় পোশাকঃ- হাফ প্যান্ট, পুরোনো সুতির গেঞ্জি।

৩.) ডক্টর দেবায়ন নাকি সুরকার দেবায়নঃ- দুটোই কেন নয়?

৪.) প্রিয় শব্দঃ- ল্যাদ

৫.) গান তোমার অবসর হতে পারে না আমি জানি। তাহলে তোমার অবসরে তুমি কি করো?

-আমি ঘুমোই।গান,সুর করা,লেখা, ছবি আকা,বই পড়া কোনোটাই  অবসর নয়।ভালোবাসা।

৬.) প্রিয় গায়িকাঃ-আমার মা।

৭.) গান বানানোর জন্য উপযুক্ত সময়ঃ-
গানের একটা পোকা আছে মগজে,যখন তখন নাড়াচাড়া  দেয়।নির্দিষ্ট সময় নেই তার।হাসপাতালে  বসেও গান এসছে মাথায়।আবার কখনো খুব ভোরে  বা গভীর রাতে কিংবা ভরদুপুরে।

                                         
                                   

★ ইন্টারভিউটি নিয়েছেন জলফড়িং-এর ফাউন্ডার সুদীপ্ত সেন। 

দুঃসময়ের ছবি এঁকে বাড়িতে থাকার অনুরোধ ৪ বছরের সায়ন্তিকার


ছবিটি এঁকেছে সায়ন্তিকা খাঁ
বয়স- ৪ বছর
ঠিকানা- রাতুরিয়া, দূর্গাপুর-১৫


                    সায়ন্তিকা খাঁ

শুক্রবার, ৩ জুলাই, ২০২০

সম্পাদকীয় : জয়ীতা চ্যাটার্জী

সম্পাদকীয় কথা:-
জয়ীতা চ্যাটার্জী

একজন কবি বা লেখক জেগে ওঠেন সময় অসময়ের বিভিন্ন অধ্যায়ের হাত ধরে। পরিপূর্ণ অধ্যায়ের অসীম দিগন্তেই একজন সৃষ্টিশীল মানুষের আশ্রয় খুঁজে ফেরা। সেই ভিন্ন ভিন্ন অধ্যায়ের দিগন্তে দাঁড়িয়েই আমরা উচ্চারণ করতে পারি -
'মানুষকে জড়িয়ে আমার বাঁচা মানুষের জন্যেই আমার ভালোবাসা'।
সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে আমরা দেশ ও কালের গন্ডির বাইরে পৌঁছে যেতে পারি। পরস্পরকে গভীর ভাবে দেখতে পারি। নিবিড় করে চিনতে পারি।
কবির ভাষায়:
'জরাজীর্ণ ইমারতের ভিত ধসিয়ে দিতে ডাক দিই 
যাতে উদ্বেলিত মিছিলে একটি মুখ দেহ পায়
আর সমস্ত পৃথিবীর শৃঙ্খল মুক্ত ভালোবাসা
দুটি হৃদয়ের সেতুপথে পারাপার করতে পারে'।
       
শব্দের কাঙাল আমি, অন্ধের মতো আমার পথ হাতড়ানো। এই কাঙাল মন নিয়েই প্রকাশিত হল জলফড়িং  সাপ্তাহিকের  এবারের সংকলন। অন্ধের মতো আমরাও হাতড়াচ্ছি ভালোবাসার পথ।



কবিতায় : রাজা অধিকারী



 সময়ের অধ্যায়
 রাজা অধিকারী

 মনে পড়ে আজ ও সেই দিন।
 শৈশবের সেই মধুর অধ্যায়,
 ছেলেবেলা, দুষ্টুমি, আন্তরিকতা,
 চারিদিকে ছিল মেঘলা আকাশ,
 বই ছিল মিষ্টি বাতাস,
 ছিল সবুজের ছড়াছড়ি ,
 আনমনা মন, চঞ্চল দৃষ্টি
 তোমার মুখেতে হাসি দেখে মনের অরণ্যে নেমে এসেছিল বৃষ্টি।
 তুমি ছিলে বিধাতার অপরূপা সৃষ্টি।
 ভালোলাগা ভালোবাসা সবই এখন অতীত।
 পথ চলেছি একা,
 বহু দূর এগিয়ে এসেছি,
 ফিরে আসার পথ হারিয়েছি,
 অতীতকে ভুলে বর্তমানে বাঁচতে শিখেছি।
 বেড়েছে বয়স, বদলে গেলো অধ্যায়,
 চারিদিকে হাহাকার, ছুটছে সবাই।
 কারো কাছে অন্যের জন্য নেইকো সময়।
 স্বার্থ সিদ্ধিতে মগ্ন সবাই ,
 মুখে হাসি, পিছনে অভিনয়।





কবিতায় : জি কে নাথ

অধ্যায়
জি কে নাথ

শব্দের শরীরে চলে নির্মাণ
দিনের ব্যস্ততার নীচে সবুজ সন্ধ্যা পৃথিবীর ফুটপাথ
আলোর উপর ঝুঁকে আসে নিভে আসা গান
তীব্র ব্যথায় ভর করে পা রাখি স্মৃতির সাঁকোয়,
নড়ে ওঠে ভবিতব্য
ভারী হয়ে ওঠে ক্রমশ মেঘেদের বিন্দু বিন্দু জলকণা,
সময়ের কোল জুড়ে দু এক পশলা বৃষ্টিতে ধুয়েযায় বোধ
সর্বাঙ্গ জুড়ে পুড়ে যায় তিলপরিমান মন্থর অনুভব
আলোর অলস ঠোঁটে রেখে দিই ব্যর্থ পথের শূন্য যত হিসেব
এখন ছুটি ঘোষণার পালা,ঢঙ ঢঙ ঢঙ বেজে ওঠে ঘন্টাধ্বনি
বিশুষ্ক নিঃসীম অনন্ত নিঃশ্বাসের পৃষ্ঠে আকাশ এখন নিঃসঙ্গ সকলকে সরাতে সরাতে একটা সময় স্বপ্নের পাঁচিল থেকে ঝাঁপ মারি চকিতে সন্ধ্যা পৃথিবীর জংলা ঘাসবনে,আত্মগোপন হয় নিজের পরিচয়।




কবিতায়: অর্পন বসাক


আগলে রাখার ব্যর্থতা
অর্পণ বসাক

তারপর জ্বর সেরে আসে,
কিন্তু রুক্ষ মুখে ভীষণ অরুচি।
সারা রাতের দেখা স্বপ্নের তোমাকে
ভাবতে বসি।
কাজল চোখ,কিরণ হাসি আর,আর আলতো
কন্ঠে তোমার কথা,"কিচ্ছু হবে নারে,
এই তো আমি আছি।ভয় কিসের।"
ভাবতে ভাবতে নিজেই পাগলের মতো হেসে উঠি।

তারপর মুঠোফোনটা হাতে নিয়ে কন্টাক্ট লিস্টে
থাকা তোমার নামটায় হাত বোলাই।
গ্যালারি জুড়ে থাকা তোমার সব ছবি গুলো
দেখে ঠোঁটের নীচে হাসির আলো পড়ে।
হঠাৎ করেই তোমায় না জানিয়েই চুমু খেয়ে নিই কপালে..

ধীরেধীরে আমাদের কথা হওয়া পুরোনো ম্যাসেজ
গুলোর দিকে তাকাই।
যদিও এখনো কথা হয়!
তবে সম্পূর্ণই কাজের কথা,সম্পূর্ণই নিজেদের কথার
বাইরের কথা।
তখন শুধু মনে হয় তুমি এভাবে মনের দিক থেকে
যোগাযোগটা নিভিয়ে না দিলেও পারতে।
শেষ বার তুমিও সবার মতোই না বললেও পারতে
"ভালো থাকিস"শুধু বদলে আমিই বলতে পারি নি;
আর যাই হয়ে যাক শুধু পাশে থাকিস।



কবিতায়: রথীকান্ত সামন্ত


অধ্যায়পাঠ
রথীকান্ত সামন্ত 

 আঙুল আর চোখের অসীম কৌতুহল সাদাকালো অরণ্যের
ভিতর দিয়ে বয়ে চলে আলাপ বিলাপ মাখা কোনো এক
শরীরি আবেশ থেকে প্রতীক্ষিত চেতনার দিকে,
এবং ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসে অন্ধকার আলোরছলনায়।
আলো কি ছলনা করে ?
এ প্রশ্ন থেকে চোখ না সরিয়েই চেয়ে থাকি
সন্ধ্যা , সকাল, বিকেল ও গোধূলির পানে ।
বালুতট শীতল হয়, পায়ের তলার আকাশে জ্বলে ওঠে
সিলিকন তারা, বিকেল ডিঙিয়ে ফুটে ওঠে পূর্ণিমা।
মঞ্জুভাষী জোৎস্না আমার চোখে স্পন্দন নিয়ে আসে।
নেমে আসে সেই নারী যার মুখ কোন
সুররিয়ালিস্ট শিল্পীর আঁকা।
সমস্ত অনিয়মের মাঝে তার অতলস্পর্শী
চিরাচরিত নাভিকুন্ডলি, যার ভিতরে অনায়াসে ঘুমিয়ে আছে সূর্য। তার অল্প আলো রুপোলি তরঙ্গে মিশে ছড়িয়ে দিচ্ছে
যে ইঙ্গিত
তার পাঠ নিই প্রহরের পর প্রহর। তার প্রতি
পলক একেকটা অধ্যায়।
ভাষার দৃশ্য আছে, দৃশ্যেরও যে ভাষা আছে
তার পাঠ শেষ করে আমি তর্জনী তুলি মহাকাশে।
 মৃদু হেসে মুখ ঢাকে শুক।
আমার সমস্ত অধ্যায় ভিজে গেছে শিশিরে।
শেষ চেষ্টায় মন্থনদন্ড প্রবেশ করাতে গিয়ে
 দেখি মন্থনপাত্রে
সোনালী বালি ছাড়া আর কিছু নেই।
কোনো কোনো অধ্যায় অর্থময়তায় নয়, দৃশ্যময়তায় বাঁচে।


 

কবিতায়: সুনন্দ মন্ডল


  অধ্যায়
‎ সুনন্দ মন্ডল

পরাজিত সৈনিক বারবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চায়
দেওয়ালে গা বেয়ে মাকড়সার মতোই।
জীবনের সাফল্যে বারবার ব্যর্থতা
তেমনি শিরদাঁড়া।
 শক্ত চোয়ালে মাংসের হাড় চিবানো অধ্যায়ে
ভেঙেচুরে নিঃশেষে গলাধঃকরণ
 করার পর মোক্ষম স্বাদের অনুভূতি পাওয়া যায়।
 প্রতিটি পাতায় ছাপার অক্ষরে
 অধ্যায় নির্মিত হলে
 স্বল্প বিরতির নির্দেশে
 পরের অংশ পড়ার কৌতূহল জাগে
 অদম্য নিশ্বাসে।
 অধ্যায়ের পর অধ্যায়ে তৈরি হয়
 ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছানোর সুগঠিত সিঁড়ি!
সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চাইলে তেমনি অধ্যায়ের
 সুপরিকল্পিত ও সুকঠিন বেড়া টপকাতে হবে।



কবিতায়: পাখি পাল

জীবনের অধ্যায়
পাখি পাল

শৈশবে যে অধ্যায়ের হয় সূচনা
সারাটা জীবন ধরে চলে তারই রচনা..
প্রথমে সমতলে হাঁটতে শেখা তারপর
চড়াই-উতরাই..
প্রথমে ছাতার ছায়া তারপর চলা ছাতা ছাড়াই..
নিয়মের বেড়াজালে বেড়ে ওঠে চারা
তারপর জন্মায় আগাছা আর উপড়ে ফেলার
তাড়া..
ধীরে ধীরে শক্ত হয় মূল
জীবন বোঝায় কতটা ঠিক আর কোনটা ভুল..
মাটির কৈশিক জলে গাছ বুঝে নেয় পূর্নতা
জলবায়ুর বৈচিত্র্যে ঠিক করে নেয় অভিযোজনের মাত্রা
জীবনের অধ্যায়গুলো একের পর এক আসে
মানুষ নিজেকে বুঝে কাঁদে কিংবা হাসে..
প্রতিটি অধ্যায়েই সে লিখতে চায় নতুন ইতিহাস
যেখানে থাকবে তৃপ্তি আর খুশি একরাশ..
তবু কিছু অধ্যায়ে চলে আসে পুনরাবৃত্তি
হেরে গিয়েও বাঁচা মন খোঁজে যন্ত্রণার নিস্পত্তি..
এতদসত্ত্বেও শেষ অধ্যায়ে জীবন উপসংহার লেখে,
জমা-খরচের হিসেব শেষে পঞ্চভূতেই নিজেকে দেখে।




কবিতায় : প্রেমা নাহা বসাক

শৈশব
প্রেমা নাহা বসাক

 ফিরে পাবো কি কখনও আর সেই শৈশব?
সেই বিকেলের লুকোচুরি আর কানামাছির দল,
ঘুম ঘুম চোখে সেই রোজ সকালের স্কুল
আর একঝাঁক ভোরের পাখিদের কোলাহল।
বন্ধুদের আড্ডা আর অভিমানের রেশ
সময়টা তখন কিভাবে জানি কেটে যেতো বেশ।
টিউশনের সেই গলি আর ছুটির শেষের ফুচকা খাওয়া
শুকনো পাপড়ির সাথে যেন এক্সট্রা খুশি পাওয়া।
রান্নাবাটি পুতুল খেলা আর বর-বউয়ের বিয়ে,
ভূতের গল্প রাজা-রানি ঠাকুমার ঝুলি নিয়ে।
লোডশেডিংয়ের অন্ধকারে গানের লড়াই খেলা,
দূর্গাপূজোয় ক্যাপ ফাটানো আর ঝুলনের মেলা।
দুপুর বেলায় ঝুলবারান্দায় বোম্বাই মিঠায়ের হাঁক,
ফুল পাতা গাছ রংবেরংয়ের কিংবা গুড়ের চাক।
বয়াম থেকে আচার চুরি কিংবা গুঁড়ো দুধ,
ভাই বোনেদের ভালোবাসা ছিল তখন অটুট।
ছুটির দিনের চড়ুইভাতি, স্কুলে ঝালমুড়ি মাখা,
টিফিনের অর্ধেকটা থাকতো প্রিয় বন্ধুর জন্য রাখা
সেসব দিনের স্মৃতিগুলো মনে আজ জলছবি রঙ আঁকে,
ব্যস্ত জীবনে ঘরের কোণে শৈশব ধূলো মাখে।