অনিমেষ : নমস্কার দাদা।
শয়তান : নমস্কার।
অনিমেষ : জলফড়িং পরিবার ও আমার তরফ থেকে তোমার প্রথম সন্তান 'অর্ক'-র জন্য জানাই একরাশ শুভেচ্ছা ।
শয়তান : এই সন্তান বলাতে আমার বিশেষ রকমের আপত্তি আছে,সে থাক। তবে 'সন্তান'ই যদি বলিস তবে এটা আমার প্রথম নয়, 'দ্বিতীয় সন্তান' প্রথম বই, 'রিসাইকেলবিনের সেন্সর্ড ভাবনারা', কবিতার বই। ওটা লেখার পর ঠিক করেছি কবিতা আর লিখব না। সবাই লিখছে। আর আমার জড়ো ছিল উপন্যাস। আর আমি যেহেতু থ্রিলার প্রেমি তাই থ্রিলার দিয়েই শুরু। আপাতত থ্রিলার উপন্যাস লিখে যাওয়ারই প্ল্যান আছে।
অনিমেষ : তোমার এই পরিকল্পনা যেন সফল হয়,আমরা আড্ডায় আসি ।
শয়তান : বেশ বেশ।
অনিমেষ : তুমি কোন ধরনের সাহিত্যচর্চা কে প্রাধান্য দাও অনলাইন না অফলাইন ?
শয়তান : আমার এ বিষয়ে বাছবিচার নেই তেমন যে করেই হোক পড়াশোনার চর্চাটা চালিয়ে গেলেই হল। অনেকসময় অনেক বিষয়ের পিডিএফ পাওয়া গেলেও বই পাওয়া যায় না তখন অনলাইনই ভরসা। তবে হ্যাঁ স্পেসিফিক ভাবে যদি চ্যুজ করতে বলা হয় তাহলে বলবো বই , বই হাতে নিয়ে পড়ার মধ্যে একটা আলাদা আমেজ থাকে যেটা অনলাইনে পাই না।
অনিমেষ : ফেসবুকে লেখালিখির জগতে পেজের ভূমিকা কি তোমার কাছে ?
শয়তান : পেজ একটা প্ল্যাটফর্ম। একসাথে সেখানে চর্চা করা যায় অনেক বিষয় সম্পর্কে অনেকেই নিজস্ব মতামত রাখেন সেগুলো থেকে সবাই অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে। সেটা শুধু লেখালেখি নয়, নাচ-গান, ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি যা খুশি হতে পারে। আলাদা করে শুধু সাহিত্য চর্চার জন্য পেজের যে ভূমিকা বিশাল তেমন কিছু বলার সময় এখনও আসে নি। কারণ, অধিকাংশ পেজ চলে নবিশদের দ্বারা তবে তারা চেষ্টা করছে কিন্তু বিরাট যে ভূমিকা পালন করেছে তেমন চোখে পড়ে নি।
অনিমেষ: তাহলে তোমার কোথায় পেজের ভূমিকা সাহিত্যচর্চায় ক্ষীণ !
শয়তান : হুম আংশিকভাবে যদিও , তবু তাই তো দাঁড়াচ্ছে।
অনিমেষ : তাহলে পেজ ব্লগ বা অনলাইন ম্যাগাজিন গুলির রাস্তা আরো কঠিন করে দিচ্ছে কি ? ম্যাগাজিন বা পোর্টাল কথা বলছি ।
শয়তান : বুঝলাম না। পেজ কিভাবে অনলাই ম্যাগাজিন বা পোর্টালের রাস্তা কঠিন করছে?
এগুলোতো পেজেই প্রমোট হয় বা সোশ্যাল মিডিয়াতেই।
অনিমেষ : না আসলে যখন আমরা ফেসবুক এ পেজে লেখা পরি সেটা চলে আসে বা নিউজ ফিডে স্ক্রল হয় আর ব্লগ ক্ষেত্রে একটা ওয়েবসাইটে যেতে হয় ।
শয়তান : হ্যাঁ তাতে অসুবিধা কিছুই হয় না। ব্লগের কন্টেন্ট ভাল থাকলে বা পরিচিত কেউ লিখলে পড়বে।
পড়া এখন ডিপেন্ড করে দু'টো জিনিসের ওপর৷ এক কে লিখছে এবং দুই কী লিখছে। মতবিরোধ অবশ্যই আছে এ নিয়ে।
অনিমেষ : এই প্রসঙ্গে ইতি টানলাম দাদা।
অর্ক-১ কি ভাবে তোমার মাথায় বিস্তার করলো মানে কি ভেবে লিখেছিলে কল্পনা না কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে ?
শয়তান : এটার উত্তর পেয়ে হয়তো অহংকার করছি ভাবতেই পারে সবাই। কিন্তু আমি ক্লাস সেভেন এইট থেকেই জানতাম আমি থ্রিলার লিখতে পারব। লিখতামও। খুব অখাদ্য হত, কিন্তু পারতাম।
আমি যে পরিবেশে বা যে জায়গায় বড় হয়েছে ওখানে খুন-মারপিট, ডাকাতি একটা সময়ে আমবাত ছিল। এখনও। মার্ডার কেস এখনও মাসে দু'টো এমনিই হয়ে যায়। এই সমস্ত বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি ছোট থেকেই। তার সাথে বড় হয়ে ওঠার সাথে সাথেই মিশেছে কিছু কল্পনা, পড়াশোনা কিংবা রিসার্চ। এভাবেই অর্ক তৈরি হল।
অনিমেষ : দাদা তুর্ণা আর অর্ক ভবিষ্যতে কি অর্ক ২ পাবো?
শয়তান : হ্যাঁ অবশ্যই। আমি যতদিন বেঁচে আছি অর্ক'র পার্ট বেরোতে থাকবে। অক্ষর সংলাপের প্রকাশক উৎপল বল্লভের তত্বাবধানেই আসবে অর্ক ২। ৩,৪,৫ আসবে কিনা জানি না। সে যদি কন্টিনিউ করতে চায় তবে সেখান থেকেই বেরোবে নইলে সেল্ফ পাব্লিশিং করব অর্ক। অন্য কোথাও থেকে বেরবে না। তবে বই আসবেই।
অনিমেষ : আচ্ছা দাদা ।
অর্ক-১ বই বেরানোর পর তোমার জীবনে কোনো পরিবর্তন এসেছে ?
শয়তান : পরিবর্তন ! সে তো পশ্চিবঙ্গের বাসিন্দা হিসেবে এমনিও এসেছে জীবনে। হা হা হা হা।
যাইহোক, পরিবর্তন বিরাট আসে নি। তবে এখন লোকে বলে, "প্লিজ দাদা কবিতা না। গল্পই হোক, থ্রিলার হোক। গল্প বা উপন্যাসই লেখো।"
হয়তো তাদের ধারণা, আমি কবিতাটা ঠিক লিখতে পারি না। যদিও এটা সর্বৈব সত্য। আমি কবিতার থেকে উপন্যাস বা গল্প বেশি ভাল লিখি। তাই কবিতা লিখিও না এখন।
অনিমেষ : তোমার আগের একটি কথায়, অধিকাংশ পেজ চলে নবিশদের দ্বারা এই কথা একটু যদি ব্যাখ্যা করো। তোমারও একটা পেজ আছে দাদা তার অভিজ্ঞতা যদি একটু ভাগ করো।
শয়তান : আমি পেজ নিয়ে কথা বলতে খুব একটা আগ্রহ বোধ করি না। 'দলছুটের কলম' শুধু আমার পেজ নয় , এটা সব্বার পেজ। পাঠক, লেখক, আর্ট ডিপার্টমেন্ট, ফটোগ্রাফার সব্বার।
অনিমেষ : আচ্ছা দাদা,আর ওই অধিকাংশ পেজ চলে নবিশের দ্বারা একটু যদি খুলে বলো ভালো হয়।
শয়তান : বলতেই হবে? স্কিপ করলে ভাল হয়, পেজ নিয়ে আমি সত্যিই কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এমনিই কন্ট্রোভার্সি থেকে দূরে থাকা পছন্দ করি।
কেন এসব প্রশ্ন আবার।
ওই আরকি। যেটুকু বলেছি সেটুকুই থাক না।
অনিমেষ : আচ্ছা দাদা কিছু রাপিড প্রশ্নে আসি
দাদা আমরা আড্ডার শেষে মুখে ।
শয়তান : বেশ বেশ হোক।
অনিমেষ : শরৎচন্দ্র না বঙ্কিমচন্দ্র?
শয়তান : শরৎচন্দ্র।
স্ক্রিনপ্লেটা ফুটে ওঠে একদম চোখের সামনে।
অস্পৃশ্য : স্মরণজিৎ না শ্রীজাত?
শয়তান : কেউ না।
অনিমেষ : গল্প না কবিতা?
শয়তান : গল্প।
অনিমেষ : বই পড়ে লেখা না বই না পড়ে লেখা ?
শয়তান : অবশ্যই বই পড়ে নিজের অভিজ্ঞতার সাথে যোগসূত্র সাধন করে লেখা৷
অনিমেষ : তোমার প্রিয় কবি ?
শয়তান : প্রচুর আছে। একটা বললে মন ভরবে না। টি.এস. ইলিয়ট, জন কিটস, জীবনানন্দ দাশ, গুলজার।
অনিমেষ : ব্যোমকেশ না ফেলুদা ?
শয়তান Daa: ফেলুদা। নো ডাউট। তবে ব্যোমকেশ ভীষণ সিন্যামেটিক। শরদিন্দু বাবু যেহেতু নিজেই বলিউডের নামকরা স্ক্রিনপ্লে রাইটার ছিলেন তাই হয়তো। ব্যাসিকালি কনফিউজড হয়ে যাই এই প্রশ্নটাতে। তবে সত্যজিৎ রায় এর আমি জাবড়া ফ্যান। ক্লাসিকস সব।
অনিমেষ :আচ্ছা সব শেষে তোমায় নিয়ে প্রশ্ন শয়তান নাম টা কেন ব্যাবহার করো? কারণ টা যদি ভাগ করে নাও ।
শয়তান : এক টাকা করে নিচ্ছি সবার থেকে। এই উত্তরটা দেওয়ার জন্য। বড়লোক হয়ে যাব।
খুব সিম্পল রিজন। এটা মায়ের দেওয়া নাম। ব্যবহার করি ওই জন্যই। আর কোনো রকম বিশাল কিছু একটা কারণ এর পিছনে নেই। যারা ভাবে বিশাল কোনো কারণ আছে, তাদের ভাবনায় জল ঢেলে দেওয়ার জন্য দুঃখিত।ভবিষ্যতে ভাল একটা কারণ বানিয়ে দেব চাপ নেই। হা হা হা হা।
অনিমেষ : আচ্ছা,সবশেষে জলফড়িং পরিবারের তরফ থেকে আগামী দিনের জন্য শুভেচ্ছা পৃথিবীর সুস্থ হোক ততদিন বাড়িতে থেকো ভালো থেকো। শুভ রাত্রি।
এরপর আবার আমার দিকে অর্ক লাগিয়ো না বলে রাখলাম।
শয়তান : ধন্যবাদ তোদের গোটা টিমকে। খুব ভাল থাকিস। কাজ করে যা আরও ভাল ভাল। হা হা হা হা। অর্ক আপাতত বেনারস যাওয়ার প্ল্যানে আছে। কলকাতা নিয়ে আপাতত ইন্টারেস্ট নেই।
অনিমেষ : ভালো থেকো।