ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

রবিবার, ৫ জুলাই, ২০২০

youtube hits দিয়ে গানের মান বিচার করা ভুল। সত্যজিৎ রায়ের চেয়ে করন জোহার commercially অনেক বেশি successful


                               

১.) জলফড়িং এর পক্ষ থেকে এবং আমাদের তরফ থেকে দাদা তোমাকে প্রথমেই জানাই নমস্কার।

দেবায়ন দাঃ- নমস্কার। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে handshake  এর  চেয়ে নমস্কারটাই  কাম্য।


২.) তুমি যেমন গানের লোক তেমনই অন্যদিকে তুমি একজন ডাক্তার তাই প্রথমেই জানতে চাইবো এই অবস্থায় তোমার কীভাবে দিনযাপন চলছে?

উঃ- ডাক্তারি  জীবন এর বিশেষ  পরিবর্তন  হয়েছে তা নয়। হাসপাতালের কাজ চ্লছে আগের মতই। মাস্ক,  PPE  পরে কাজ করতে হচ্ছে। OT,  OPD সবই চলছে। মজার ব্যাপার হলো, যেহেতু  আমি নাক কান গলার ডাক্তার, দেখছি ইদানীং  অনেকেই  চলে আসছেন নাক গলার  check up করাতে শুধুমাত্র  corona এর panic এ। আর বাড়ি ফিরে বাকি সময় টা না-হয় গান লিখে বা গেয়ে,ছবি একে, বই পড়ে কাটাচ্ছি।

                                     
৩.) সাবধানে থেকো দাদা । আচ্ছা দাদা এবার জানতে চাই তোমার গানবাজানার শুরুটা ঠিক কবে থেকে?

উঃ- শুরু বলতে সেই ছোটবেলা থেকে। আমার মা  সুমিত্রা ধর, একসময়কার  ত্রিপুরার প্রথম সারির রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীদের মধ্যে  একজন।ছোটবেলায় মা-এর কাছে অনেকেই আসতেন গান শিখতে,তাই দেখে আমার গানের সূত্রপাত। মজার ব্যাপার  হলো  আমি ছাড়াও আমার ব্যান্ড এর  বাকি দুজন গায়ক তাপস এবং আবিরদা(সাগরনীল)  দুজনেরই গানে হাতেখড়ি  মা এর কাছে। আমরা সবাই একসাথেই শিখতাম।


৪.) গান লেখা, সুর করা এর পিছনে তোমার ইন্সপিরেশন কে?

উঃ- ছোটবেলা থেকেই বাবা কে দেখেছি  ডাক্তারির ফাঁকে ফাঁকে কবিতা লিখতে।ছড়া, কবিতা লেখার সূত্রপাতটা তখন  থেকেই। তারপর স্কুলজীবনে পরিচয় হল কবির সুমন, অঞ্জন দত্ত, নচিকেতা এঁদের গানের সাথে, সেই সাথে বাংলা ব্যান্ড এর গান- মহিনের ঘোড়াগুলি, ক্যাকটাস, ফসিলস, লক্ষিছাড়া,চন্দ্রবিন্দু, তখন বুঝতে পারলাম লেখা আর সুর মিলে গেলে একটা গান কি করে তৈরি  হতে পারে।শুরু টা এভাবেই হয়েছে। স্কুলেই আমরা  আমাদের  ব্যান্ড ' ঊড়ুম্ভুম ' শুরু করি।

                           

 শুভদীপ,আমি,তাপস,কুশল, কিশোর, সাগরনীল আর দীপ্তনয়। প্রথম দিন থেকেই ভেবেছিলাম নিজেদেরই গান গাইব, নিজেদের লেখা,নিজেদের সুর।


৫.) যেটা জানতে আমার খুব ইচ্ছে করে সেটা হলো। গানের সুর আগে করো নাকি আগে গানের কথা লেখা হয়?

উঃ- বলা শক্ত, কখনো আগে লেখা চলে আসে আগে,আসে পাশে সুর বাধতে হয়। কখনো  সুরটা মাথায় ঘুরপাক খায়,তখন লিখে নিই।


৬.) এবার যদি একটু পিছিয়ে যাওয়া যায় ধরো তোমার ছোটোবেলা, স্কুল এবং কলেজজীবন নিয়ে যদি কিছু আমাদের বন্ধুদের শেয়ার করো দাদা।


উঃ- স্কুলের কথা, আমাদের  ব্যান্ড এর প্রথম প্রোগ্রাম  মাধ্যমিক পরীক্ষার কদিন আগে, টেস্ট  পরীক্ষা  হয়ে গেছে, কৈলাসহর বই মেলায় সন্ধ্যে ৭ টার সময় হবে প্রোগ্রামটা, এর আগের রাত্রে ব্যান্ডের সবাই মিলে পুরো শহর জুড়ে হাতেলেখা পোস্টার  লাগালাম শ'খানেক,"ঊড়ুম্ভুম আসছে - সাবধান, স্থান - কৈলাসহর বই মেলা, কালকে সন্ধ্যে ৭ টা"।

হল পুরো  houseful পরদিন।


৭.) তোমার ব্যান্ড যখন প্রথম শুরু হলো তখন সবার মতোই শূন্য থেকে শুরু হয়েছিলো কিন্তু আজ বহু মানুষ জানে তোমাদের। কেমন লাগে?

উঃ- জানার চেয়েও শোনা টা বেশি দরকারী। আমরা কেউই বিখ্যাত  হওয়ার  জন্য  গান লিখি না, ভালবেসে  লিখি,যদি  শ্রোতারা  শুনে সেটা পছন্দ করেন তাতেই আমরা খুশি।

৮.) এই সময়ে দাঁড়িয়ে অনেকেই independent music করেছে কিন্তু সবাই তো আর ক্লিক করতে পারছে না অথচ দেবায়ন তরফদার তাঁর সৃষ্টি নিয়ে দর্শকের সামনে হাজির। এই বিষয়ে কি বলতে চাও নতুনদের?

উঃ-  ক্লিক শব্দ টা নিয়ে আমার একটু আপত্তি রয়েছে, যারাই আজ গান লিখছেন, তাদের ক্লিকের কথা না ভেবে উচিত নিজের ভালোলাগার গান তৈরি  করা।
বিরিয়ানি খাওয়ার লোক অনেকে থাকলেও উচ্ছে ভাজা খাওয়ারও লোক রয়েছে,তাই নিজের মত গান তৈরি  করে যেতে  হবে। সব গানেরই শ্রোতা রয়েছেন। youtube hits দিয়ে গানের মান বিচার  করা ভুল। সত্যজিৎ  রায়ের চেয়ে করন জোহার commercially  অনেক বেশি successful।


                       

৯.) "দূতাবাস" গানটার পিছনে যদি কোনো গল্প থাকে আর সেটা যদি শেয়ার করা যায় ছোটো করে জলফড়িং এর বন্ধুদের সাথে।

উঃ-দূতাবাস এর পিছনে গল্প নেই,তবে 'সত্যি' আছে। কটা ছাপানো কাগজের অভাবে যদি  কেউ দেশহীন হতে পারে তাহলে সেই দেশের মূল্যবোধ  কে খতিয়ে  দেখা দরকার।


১০.) তোমার এখন অবধি গাওয়া শেষ গান মনে হয় মধুমিতা দির সাথে গাওয়া। গানটা আমার মনে আছে সেটা হলো 'মন আমার কবে"।
পরবর্তী ক্ষেত্রে আর কি কি নতুন কাজ  দর্শক দেখবে তোমার থেকে?

উঃ-শেষ গান 'মন আমার কবে' নয়, এর পর আমার youtube channel এ আমাদের ব্যান্ড এর " ব্রিষ্টি ভিজি চল' গান টা রিলিজ  করেছে।সামনে আরও বেশ ক'টা কাজ রয়েছে, individual  কাজ ছাড়াও বেশ কটা webfilm, Series  আর সিনেমার  কাজ।তবে এই পরিস্থিতি তে সবকিছুই অবশ্য একটু  paused রয়েছে। সুরকার আম্লান দা ( অম্লান  চক্রবর্তী) এর সাথে অনেক ক'টা কাজ আগেও করেছি যেমন - কে তুমি নান্দিনি,থাই কারি,ফিল্টার কফি লিকার চা ইত্যাদি।সামনেও বেশ কটা  রয়েছে pipeline -এ।

১১.) "ভূত হাসছে" এই গানটা ডাক্তার দেবায়নের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

উঃ- গান টা ২০১২ তে তৈরি,২০১৩ নাগাদ আমরা গান টা রেকর্ড  করি,  youtube  একটা  Music video বানিয়ে রিলিজ করা হয়।অনুপমদা কে পাঠানো প্রথম  কটা গানের মধ্যে  এটা একটা। ২০১৮ এর শেষে অনুপমদার কথায় গানটা rearrange  করে,ARC  লেবেল এ রিলিজ  করা হল। সেই সুবাদে পরিচয় হল বেশ কজন গুনী independent artists দের সাথে।

                      
১২.) তুমি একজন ডক্টর, আবার একজন গায়ক। একটা ot আছে তোমার আর একই সময়ে একটা show আছে। যেকোনো একটা তোমায় ছাড়তে হবে। কোনটা participate করবে?

উঃ-হা হা। OT তেই  participate করব। প্রথমত  OT তে কারোর জীবন  নির্ভর  করছে আমার উপর।
আর দ্বিতীয়ত ওরম চাপে ভালোবাসার জিনিস হয় না। গানটা আমার ভালবাসা।




এই রাউন্ডের নাম★ [গায়ক কতটা শ্রোতা]

১.) "আজ রাস্তায় আমার শহরে"-- কার গাওয়া?
দেবায়নঃ- মাধুমিতা

২.)" ইস দেবাশীষ"-- কার লেখা গান?
দেবায়নঃ-আনুপম দা



দাদা এই রাউন্ডের নাম ★[ একজনই ১০ এ ১০ ]

মানে যেকোনো একজনকেই তুমি ১০ এ ১০ নম্বর দিতে পারবে তুমি

১.) অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় / উপল সেনগুপ্ত?

দেবায়নঃ-চন্দ্রবিন্দু  ১০/১০

২.) লগ্নজিতা নাকি ইমন চক্রবর্তী?

দেবায়নঃ-দুজনেই ভালো, দুজনেই আলাদা।দুজনেই ১০/১০


 এই রাউন্ডটা একটু অন্যরকম দাদা
এখানে তোমাকে হিংসে করতে হবেই। আমি একজনের নাম বলব আর তোমাকে বলতে হবে তুমি কেনো হিংসে করতে চাও?

১.) রূপঙ্কর বাগচি
উত্তরঃ- কন্ঠ

২.) শিলাজিৎ মজুমদার
উত্তরঃ-  arrangement

৩.)অনুপম রায়।
উত্তরঃ- লেখা



[ এবারে জেনে নিই তোমার কিছু পছন্দের কথা ]
             

১.) প্রিয় রঙঃ- নীল

২.) প্রিয় পোশাকঃ- হাফ প্যান্ট, পুরোনো সুতির গেঞ্জি।

৩.) ডক্টর দেবায়ন নাকি সুরকার দেবায়নঃ- দুটোই কেন নয়?

৪.) প্রিয় শব্দঃ- ল্যাদ

৫.) গান তোমার অবসর হতে পারে না আমি জানি। তাহলে তোমার অবসরে তুমি কি করো?

-আমি ঘুমোই।গান,সুর করা,লেখা, ছবি আকা,বই পড়া কোনোটাই  অবসর নয়।ভালোবাসা।

৬.) প্রিয় গায়িকাঃ-আমার মা।

৭.) গান বানানোর জন্য উপযুক্ত সময়ঃ-
গানের একটা পোকা আছে মগজে,যখন তখন নাড়াচাড়া  দেয়।নির্দিষ্ট সময় নেই তার।হাসপাতালে  বসেও গান এসছে মাথায়।আবার কখনো খুব ভোরে  বা গভীর রাতে কিংবা ভরদুপুরে।

                                         
                                   

★ ইন্টারভিউটি নিয়েছেন জলফড়িং-এর ফাউন্ডার সুদীপ্ত সেন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন