ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

শনিবার, ২৫ জুলাই, ২০২০

কলমে : অর্পন বসাক




এবার মরলে গাছ হবো
অর্পণ বসাক

 শেষবার আমার জন্মদিনে
 তুমি একটা শিউলির গাছ দিয়েছিলে
 তোমার মনে আছে?
 হাতে গাছটা দিয়ে বলেছিলে
 আমি যেদিন তোমার ঘরের বউ হয়ে আসব
 সেদিন দেখো, সারা উঠোন জুড়ে
 শিউলি পরে থাকবে...
 আকাশে চাঁদ উঠবে,
আর আমি তোমার কাঁধে মাথা রেখে জোৎস্না দেখব।
জোৎস্না দেখতে দেখতে সারারাত তোমার কবিতা শুনবো
আমি বড্ড হেসেছিলাম সেদিন....
দেখতে দেখতে তিনটা বছর কেটে গেল...
এই তিনটে বছরের একেকটা দিন শুধু প্রতীক্ষায় থেকেছি,
কবে ফুল ফুটবে শিউলির গাছটায়?
আজ আবার আমার জন্মদিন...
জানো! গাছটা কথা রেখেছে।
সারা গাছ ভরে ফুল এসেছে..
শিউলির গন্ধে গোটা বাড়ি ম ম করছে।
আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে।
উঠোনের শিউলির ফুল গুলোই চাঁদের আলো পড়ে
সোনালী উঠোন হয়ে আছে।
আমি বারান্দায় তোমার প্রিয় স্মরণজিৎ এর লেখা
"জোনাকীদের বাড়ি" বইটি নিয়ে ঠায় বসে আছি।
কিন্তু বিশ্বাস করো একটা লাইনও পড়তে পারিনি...
সেই তিন বছর আগে তোমাকে লেখা শেষ চিঠিটা
আজ ছিঁড়ে ফেলছি।
যেটার আর কোনোদিন দরকার হলো না।
আচ্ছা তুমি অন্তত যাবার আগে চিঠিটা পড়ে যেতে পারতে।
বড় সাধ করে সেদিন লিখেছিলাম -
 প্রিয় কনকলতা,

 তুমি চিন্তা করো না, আমাদের মধ্যে যে আসতে চলেছে তাঁকে এই পৃথিবীর আমরা আলো দেখতে দেব।
বেকার ছেলেটাকে তোমার বাবা যদি না মেনে নেয়, তাহলে দূরে কোথাও পালিয়ে যাব।
ঠিক কিছু একটা করে নেব দেখো। একটু ভরসা রেখো ইতি তোমার প্রানের অনিমেষ।
 কিন্তু চিঠিটা সেদিন তোমার বাড়ি অবধি পৌঁছনোর আগেই শুনতে পেয়েছিলাম ,
মাটি থেকে কয়েক হাত উঁচুতে সিলিংয়ের সাথে ওড়নার ফাঁসে তোমার ঝুলন্ত দেহের খবর।
সেদিন চিঠিটা তুমি অবধি পৌঁছলে,
হয়ত গল্পটা অন্য হতে পারত, চিঠিটা তুমি অবধি পৌঁছালে হয়ত দুটো প্রাণ বেঁচে যেত।
 চিঠির শব্দ গুলো তোমার কান অবধি পৌঁছালে আমাদের না হওয়া একটা সংসার বেঁচে যেতে পারত।
 কি দোষ ছিল তোমার?
দোষ তো সেদিন আমি করেছিলাম।
নিজের প্রেমকে স্বীকৃতি দিতে একটা চাকরী জোগাড় করতে পারিনি।
তোমার দায়িত্ব নিতে পারি নি।
তোমার দুঃসময়ের সঙ্গী হতে পারি নি।
অথচ...
অথচ...
 আসলে আমি বরাবরই ভীতু ছিলাম।
দায়িত্ব কর্তব্যের কাছে বরাবরই নতজানু।
হুম, নিজেকে বড্ড বেশি অকৃতজ্ঞ লেগেছিলো সেদিন।
সেদিন তোমার মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে এসব বলতে পারি নি। কারন, সেদিন পায়ের নীচের মাটি বড্ড আলগা ছিল।
শরীরে ভরসা নামক মেরুদন্ডটি নেতিয়ে পড়েছিল।
তাই বোধয় তোমার কাছে গাছ হয়ে থাকতে পারি নি।
ছায়া হয়ে তোমায় আগলাতে পারি নি।
সেদিন আমার জন্মদিনে শিউলির গাছটা দিয়ে তুমি হয়ত আমাকে আগেই বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলে পুরুষ মানুষকে গাছ হতে হয়। গাছের মতো ছায়া দিতে জানতে হয়।
গাছের মতোই শত আঘাতে পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
আর শত ঝড় ঝাপটায় গাছের শিকড় দিয়ে আগলে রাখতে হয় ভালোবাসার মাটি...
কথা দিলাম আর যা না পারি,
এবার মরলে গাছ হবো...
গাছ হবই হবো..
দেখে নিও...
যদি পরজন্ম বলে কিছু হয়,
সেখানে ভরসা হয়ে এবার তোমার পাশেই রবো।
ভালো বাসার মাটি আগলে তোমার পাশে সবুজ একটা গাছ হবো।








1 টি মন্তব্য:

  1. অসাধারণ, অনেক অনেক এগিয়ে যাও ঠিক এভাবেই। অনেক শুভকামনা রইল। ভালোবাসা নিও।

    উত্তরমুছুন