"শুভ নববর্ষ "- শৈশবের কিছু টুকরো স্মৃতি
লেখাটি লিখতে বসেছি নববর্ষের ঠিক আগেরদিন অর্থাৎ আগামীকাল বাংলার নতুন বছর ১৪২৫ এ পা দিতে চলেছে। লিখতে বসে নানান পুরাতন স্মৃতি মনের মধ্যে আঁকিবুঁকি কেটে চলেছে সমানে, বিশেষত ছোটবেলার স্মৃতিগুলি।স্মৃতি সুখের সবসময় না হলেও আমার জীবনে নববর্ষের দিনগুলি আনন্দের ছিল।
নববর্ষ বলতে ছিল পয়লা বৈশাখ আর পয়লা বৈশাখ মানেই হালখাতা! পয়লা না ১লা এই নিয়ে মনে বেশ একটা দ্বন্দ্ব হতো মনে। নতুন বছরের প্রথম দিনটি সবার সাথে আনন্দ করে পয়লা নম্বর হয়ে থাকতো, ১লা নয়। বেশ মনে পড়ে মিষ্টির খুব একটা ভক্ত না হওয়া সত্ত্বেও হালখাতার মিষ্টির ওপর বেশ আগ্রহ ছিল! নববর্ষের সকালটা শুরু হতো দূরদর্শন ডি ডি বাংলার প্রভাতী অনুষ্ঠান দিয়ে। আমার ছোটবেলায় এতো চ্যানেল আর বিচিত্রানুষ্ঠানের ভিড় ছিল না; তাই সেই অনুষ্ঠানটির জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম। প্রিয় শিল্পীদের গান ও আবৃত্তিতে নতুন বছরের প্রথম সকাল ভরে উঠত যেন নতুন সুগন্ধে।
একান্নবর্তী পরিবারের মেয়ে হলেও বাবার চাকরী সূত্রে বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয়েছে; তাই নববর্ষের প্রথম দিন উদযাপন শুধু বাবা-মার সাথেই অত্যন্ত সাদামাটা ভাবেই। নতুন জামার কথা বলতে গেলে বলতে হয়, পয়লা বৈশাখে কোনো পোশাক কেনা হতো না আমাদের ; শুধু দূর্গাপুজোর সময় ছাড়া। তবে মা মাঝের মধ্যে কিনতেন আমাদের জন্য। সারাদিন ধরে নানা সুস্বাদু পদ রান্না করতেন। বাবা নাস্তিক হওয়ার প্রভাব আমার আর বোনের ওপর পড়েছিল। তাই সারাবছরের মতো এইদিনও কোনো পূজো হতো না বা প্রণাম করার প্রথাও ছিল না। সন্ধ্যে হলেই বাবার হাত ধরে পরিচিত দোকানগুলিতে যেতাম। সবার আগে দেওয়া হতো রঙিন পানীয়, তারপর মিষ্টির বাক্স আর তার সঙ্গে অবশ্যই নতুন সালের বাংলা ক্যালেন্ডার। বাড়িতে ফিরে দেখতাম ক্যালেন্ডারে কি ছবি আঁকা আছে। আমি আর বোন মিলে সেটা আঁকার চেষ্টা করতাম। এমনভাবেই কেটে যেতো দিনটা।
তারপর যত সময় চলে যেতে লাগল ততই পড়াশোনা ইত্যাদি নিয়ে ক্রমশ ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। নববর্ষ, হালখাতা সবকিছুই facebook, what's app এর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেল। নতুন বাংলা ক্যালেন্ডার বা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের প্রতি আকর্ষণ বোধ করি না আগের মতো। তাছাড়া বোনও থাকে হোস্টেলে, আমিও ব্যস্ত সরকারী চাকরীর পরীক্ষার প্রস্তুতিতে। তবে এসব তো অছিলা মাত্র ; চারপাশ যেভাবে পালটাতে দেখেছি সেকি কম ভয়ংকর! সাম্প্রদায়িক হিংসা, যুদ্ধ, হানাহানি সব কিছু ভুলে গিয়ে ১৪২৫ কাটুক নতুন ভরসা, নতুন আশা নিয়ে।
নাম: সায়ন্তনী বকসী
ঠিকানা: গ্রাম- দুইল্যা, জেলা- হাওড়া, রাজ্য- পশ্চিমবঙ্গ, দেশ- ভারতবর্ষ ( নতুন বছরে আমি পৃথিবীর মানুষ - যদি এই ঠিকানা লিখতে পারতাম তবে সবচেয়ে খুশি হতাম)
প্রিয় রবীন্দ্র কবিতা: সাধারণ মেয়ে ( বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে)
বার্তা : একজন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ হিসেবে চাই অন্তত একটি ধর্ষণহীন দিন নতুন বছরে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন