১৬.)
চরম পত্র
------ দেবাশিস কোনার
লতিকার ঘরবাড়ি নেই।লতিকার মা বাবা নেই।সে এর ওর বাড়ি কাজ করে পেট চালায়।যাদের বাড়ি কাজ করে তারা সকলেই যে ভাল ব্যবহার করে ,তা কিন্তু নয়।কারোর ব্যবহার রূঢ়, কিন্তু স্বভাব চরিত্র ভালো আবার কারও ছুকছুকুনি স্বভাব কিন্তু ব্যবহার বেশ ভাল।হাতে দু চার টাকা গুঁজে তুজে দেয়।এসবই লতিকার অভিজ্ঞতার উপলব্ধি।এত অভাব তবু আজ পর্যন্ত লতিকা কু পথে হাঁটে নি।হাঁটবেও না কোনও দিন।
মা সুরবালা মৃত্যু সজ্জ্বায় শুয়ে বলে গিয়েছিল, 'বেটা লতিকে কখনও দেহ নিয়ে ছেলে মানুষী করবি নে।এ দেহ এক পবিত্র সম্পদ।একে মন্দিরের মত রক্ষে করবি।' তাই তো সে হাজার প্রলোভনেও ওই ফাঁদে পা দেয় না।
তাদের সামান্য কুঁড়ে ঘর একটা ছেল । তো সেটা বাবা হটাৎ সাপের কামড়ে মারা যাবার পর বছর চারেক টিকে ছিল।কিন্তু মাটির কুঁড়ে ঘর বছর বছর চাপান উতর না পড়লে যে টেকে না । মায়ের কাল রোগ ধরা পড়ল ।তাই লতিকা ঘরের দিকে নজর দিতে পারে নাই।যা হবার তাই হল।চোখের সামনে তাসের ঘরের মত লতিকার বাবার নিজের হাতে তৈরি বাড়িটা ভেঙে চৌচির হয়ে গেল।বুক ফেটে কান্না পেয়েছিল লতিকার।কিন্তু কাঁদতে পারে নি।যার সব কিছুই চলে গেছে , সে সমন্বয় গৃহ হারা হয়ে আর কি করবে কেঁদে ?
চারিদিকে নাগিনিরা ফেলিছে নিশ্বাস।লতিকা বি এ পাশ করেছিল।হয়তো এতদিনে তার বিয়ে থাওয়া টাও হয়ে যেত।যদি না এরকম ভাবে পরপর বাবা এবং মায়ের মৃত্যু হত। এখন লতিকা প্রাণবাবুর আশ্রিতা।লোকটাকে প্রথম প্রথম খুব ভাল মনে হয়েছিল।কিন্তু এখন দেখছে স্বভাবটা একেবারেই ভাল না।ওর স্ত্রী শয্যাশায়ী।লতিকার কাজ , তার সেবা যত্ন করা।তাকে সময় মেপে ওষুধ খাওয়ানো ও পেচ্ছাপ পায়খানা করলে পরিষ্কার করা।এ সব কাজ করতে তার কোনও অসুবিধা হয় না।ভদ্রমহিলা তার মায়ের মত।কথা বলতে পারেন না।তবে চোখের ভাষায় তাকে বুঝিয়ে দেয় যে , সে ওর সেবা যত্নে তুষ্ট।এটুকুই লাভ।
দিগম্বর বাস্কে তার সাথে কলেজে পড়ত।কালো শরীরটা হলেও ওর মনটা ভীষন ভাল ছিল।ওর কলেজের রেজাল্ট বের হবার আগেই বাবার সর্পদংশনে মৃত্যু হয়েছিল।কলেজের আর কোন বন্ধু বান্ধবি তার পিতার মৃত্যু সংবাদে খোঁজ খবর নিতে আসে নি।এসেছিস কেবল দিগম্বর।
সেদিন মাসিমা অর্থাৎ প্রাণবাবুর স্ত্রী রত্নাদেবীকে নিয়ে শহরে গিয়েছিল ডাক্তার দেখাতে।সেখানে হটাৎ করে দেখা হয়ে গেল দিগম্বরের সাথে।ও জানতই না যে লতিকার মাও আর বেঁচে নেই।খুব দুঃখ পেল ছেলেটা।ওকে বলল, 'আমি থাকতে তুই পরের ঘরে কাজ করবি ? তোর বাড়ি নেই তো কি হয়েছে? আমার বাড়ি চল !'
যায় নি যদিও লতিকা।তবে দিগম্বরের মুখ থেকে কথা গুলো শুনে থেকে তার মনে একটা আনন্দের অনুভূতি পাক খাচ্ছে।এতদিন সে জানত , তার কথা ভাববার মত পৃথিবীতে বোধহয় কেউ নেই।তা কিন্তু নয়।আছে , একজন হলেও আছে।
অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে সেদিন দিগম্বরকে বাড়ি পাঠিয়েছিল লতিকা।বলেছিল, অসুস্থ মাসীমাটির দায়িত্ব তার ওপর।এনাকে কি হটাৎ করে ফেলে পালানো যায় ? দিগম্বর ও তো মানুষ।সে বুঝেছিল।তবে বলেছিল, আমি একটা চাকরি পেয়েছি।চাকরিতে জয়েন করে ছুটি পেলেই তোর খোঁজ নিতে আসব।তখন কিন্তু কোনও অজুহাত শুনব না।
প্রাণবাবুর স্বভাব এরপর থেকে আরো উগ্র হতে থাকে।আর সে সময় লতিকা রত্না মাসির কোলে ছুটে গিয়ে আশ্রয় নেয়।পশুটা বারণ মনে না।একদিন মাসির ঘর পর্যন্ত ধাওয়া করল।তা দেখে হটাৎ রত্না মাসি বিছানা থেকে উঠে বসল।সকলে অবাক ! যে মানুষটা শয্যাশায়ী, সে কি করে ভাল হয়ে গেল ? আর তা দেখে প্রাণ রনে ভঙ্গ দিল। লতিকা এখন বিপদ মুক্ত ।
[দেবাশিস কোনার
বাদশাহী রোড
রবীন্দ্রকানন
বর্ধমান-৭১৩১০১]
চরম পত্র
------ দেবাশিস কোনার
লতিকার ঘরবাড়ি নেই।লতিকার মা বাবা নেই।সে এর ওর বাড়ি কাজ করে পেট চালায়।যাদের বাড়ি কাজ করে তারা সকলেই যে ভাল ব্যবহার করে ,তা কিন্তু নয়।কারোর ব্যবহার রূঢ়, কিন্তু স্বভাব চরিত্র ভালো আবার কারও ছুকছুকুনি স্বভাব কিন্তু ব্যবহার বেশ ভাল।হাতে দু চার টাকা গুঁজে তুজে দেয়।এসবই লতিকার অভিজ্ঞতার উপলব্ধি।এত অভাব তবু আজ পর্যন্ত লতিকা কু পথে হাঁটে নি।হাঁটবেও না কোনও দিন।
মা সুরবালা মৃত্যু সজ্জ্বায় শুয়ে বলে গিয়েছিল, 'বেটা লতিকে কখনও দেহ নিয়ে ছেলে মানুষী করবি নে।এ দেহ এক পবিত্র সম্পদ।একে মন্দিরের মত রক্ষে করবি।' তাই তো সে হাজার প্রলোভনেও ওই ফাঁদে পা দেয় না।
তাদের সামান্য কুঁড়ে ঘর একটা ছেল । তো সেটা বাবা হটাৎ সাপের কামড়ে মারা যাবার পর বছর চারেক টিকে ছিল।কিন্তু মাটির কুঁড়ে ঘর বছর বছর চাপান উতর না পড়লে যে টেকে না । মায়ের কাল রোগ ধরা পড়ল ।তাই লতিকা ঘরের দিকে নজর দিতে পারে নাই।যা হবার তাই হল।চোখের সামনে তাসের ঘরের মত লতিকার বাবার নিজের হাতে তৈরি বাড়িটা ভেঙে চৌচির হয়ে গেল।বুক ফেটে কান্না পেয়েছিল লতিকার।কিন্তু কাঁদতে পারে নি।যার সব কিছুই চলে গেছে , সে সমন্বয় গৃহ হারা হয়ে আর কি করবে কেঁদে ?
চারিদিকে নাগিনিরা ফেলিছে নিশ্বাস।লতিকা বি এ পাশ করেছিল।হয়তো এতদিনে তার বিয়ে থাওয়া টাও হয়ে যেত।যদি না এরকম ভাবে পরপর বাবা এবং মায়ের মৃত্যু হত। এখন লতিকা প্রাণবাবুর আশ্রিতা।লোকটাকে প্রথম প্রথম খুব ভাল মনে হয়েছিল।কিন্তু এখন দেখছে স্বভাবটা একেবারেই ভাল না।ওর স্ত্রী শয্যাশায়ী।লতিকার কাজ , তার সেবা যত্ন করা।তাকে সময় মেপে ওষুধ খাওয়ানো ও পেচ্ছাপ পায়খানা করলে পরিষ্কার করা।এ সব কাজ করতে তার কোনও অসুবিধা হয় না।ভদ্রমহিলা তার মায়ের মত।কথা বলতে পারেন না।তবে চোখের ভাষায় তাকে বুঝিয়ে দেয় যে , সে ওর সেবা যত্নে তুষ্ট।এটুকুই লাভ।
দিগম্বর বাস্কে তার সাথে কলেজে পড়ত।কালো শরীরটা হলেও ওর মনটা ভীষন ভাল ছিল।ওর কলেজের রেজাল্ট বের হবার আগেই বাবার সর্পদংশনে মৃত্যু হয়েছিল।কলেজের আর কোন বন্ধু বান্ধবি তার পিতার মৃত্যু সংবাদে খোঁজ খবর নিতে আসে নি।এসেছিস কেবল দিগম্বর।
সেদিন মাসিমা অর্থাৎ প্রাণবাবুর স্ত্রী রত্নাদেবীকে নিয়ে শহরে গিয়েছিল ডাক্তার দেখাতে।সেখানে হটাৎ করে দেখা হয়ে গেল দিগম্বরের সাথে।ও জানতই না যে লতিকার মাও আর বেঁচে নেই।খুব দুঃখ পেল ছেলেটা।ওকে বলল, 'আমি থাকতে তুই পরের ঘরে কাজ করবি ? তোর বাড়ি নেই তো কি হয়েছে? আমার বাড়ি চল !'
যায় নি যদিও লতিকা।তবে দিগম্বরের মুখ থেকে কথা গুলো শুনে থেকে তার মনে একটা আনন্দের অনুভূতি পাক খাচ্ছে।এতদিন সে জানত , তার কথা ভাববার মত পৃথিবীতে বোধহয় কেউ নেই।তা কিন্তু নয়।আছে , একজন হলেও আছে।
অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে সেদিন দিগম্বরকে বাড়ি পাঠিয়েছিল লতিকা।বলেছিল, অসুস্থ মাসীমাটির দায়িত্ব তার ওপর।এনাকে কি হটাৎ করে ফেলে পালানো যায় ? দিগম্বর ও তো মানুষ।সে বুঝেছিল।তবে বলেছিল, আমি একটা চাকরি পেয়েছি।চাকরিতে জয়েন করে ছুটি পেলেই তোর খোঁজ নিতে আসব।তখন কিন্তু কোনও অজুহাত শুনব না।
প্রাণবাবুর স্বভাব এরপর থেকে আরো উগ্র হতে থাকে।আর সে সময় লতিকা রত্না মাসির কোলে ছুটে গিয়ে আশ্রয় নেয়।পশুটা বারণ মনে না।একদিন মাসির ঘর পর্যন্ত ধাওয়া করল।তা দেখে হটাৎ রত্না মাসি বিছানা থেকে উঠে বসল।সকলে অবাক ! যে মানুষটা শয্যাশায়ী, সে কি করে ভাল হয়ে গেল ? আর তা দেখে প্রাণ রনে ভঙ্গ দিল। লতিকা এখন বিপদ মুক্ত ।
[দেবাশিস কোনার
বাদশাহী রোড
রবীন্দ্রকানন
বর্ধমান-৭১৩১০১]
খুব সুন্দর হয়েছে।
উত্তরমুছুন