ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

সোমবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৮


২০. ||অবিশ্বাস্য সত্য||
------ বসন্ত কুমার প্রামানিক ( মালদা )

ভরত আমার খুব কাছের বন্ধু । স্কুল জীবনে বেশ কিছুটা বছর আমি ওর সঙ্গে          কাটিয়ে ছিলাম । সে ছিল প্রচণ্ড সাহসী ছেলে । ভূত জাতীয় কোন ভয় তার   ছিলনা । এটা পরীক্ষা করার  জন্য আমরা ওকে বলতাম – “ ঐ যে আমগাছটা  দেখছিস , সেটি রাত্রে ছুঁয়ে আসতে পারবি ? , তবে আমরা তোকে পঞ্চাশ টাকা দেবো “ । কারণ ঐ গাছটাতে কিছুদিন আগে একজন ফাঁসি দিয়ে মারা গেছিলো । সে নির্ভয়ে কোন পয়সার বিনিময়ে রাত্রে ঐ গাছে চড়ে বসতো । ঠিক যেন শরৎ চন্দ্রের লালুর মত ।
ভরত আমাকে বোলত জাদু – টোনা , ভূত ছাড়ানো ,বান মারা জাতীয় বিদ্যা তার জানা আছে । তাদের গ্রামে এই ধরনের সমস্যা প্রায়ই হত এবং সে সেটিকে সমাধান করতো । আমি একবার বোলে বসলাম “ ভরত আমাকে ভূত দেখাবি ? “ সে বলে – “ দেখাতে পারবো , শুধু তুই দেখতে পাড়লেই হল । “ কিন্তু সে সুযোগ আমার আর হয়ে ওঠেনি । কেননা চাকরী পেয়ে সে দিল্লী ছোলে যায় । সে তার জীবনের অনেক চাক্ষুস ঘটনা আমি তূলে ধরছি ।
 ভরত মালদা জেলার গাজোলের একটি গ্রামে বাস করত । তাদের বাড়ির পাস দিয়ে বেহুলা নদীর একটি একটি শাখা বয়ে গেছিলো । বর্ষার সময় সেটি একটি ছোটো নদীর আকার ধারণ করত । সেই শাখানদীটির সামনে ছিল একটি গড় । সেই গড় পেরিয়ে নদীতে যেতে হত । ভরত মালদা শহরে দাদার সঙ্গে থাকতো এবং মাঝে মাঝে সে তার গ্রামে যেত । গ্রামে গেলেই সব বন্ধুদের সঙ্গে বেশ মেতে যেত ।
একবার একটি বিয়ে উপলক্ষে গ্রামের বাড়ি যায় ভরত । সেখানে বেশ কিছুদিন কাটায় । সেইবার এক অদ্ভুদ ঘটনা ঘটে যায় । তারা মোটামুটি নয়টার মধ্যেই খাওয়া দাওয়া সেরে ফেলে । তারপর তারা বন্ধু- বান্ধব নিয়ে নৈশ ভ্রমনে বের হয় । তাদের প্রত্যেকের হাতে থাকে লাঠি , কেননা রাস্তায় যদি সাপ বা সিয়ালের সাক্ষাত হয় তবে মকাবিলা করতে হবে । তারা রাস্তায় ঘুরছে হঠাৎ তাদের চোখে পরে পূর্বদিকে বেশ আলোর ঘনঘটা । তারা সবাই হতবম্ব হয় । আলোর উৎস সন্ধান করতে তারা আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় । তারা বুঝতে পারে আলোটি গড়ের গাছ থেকে আসছে । তারা আস্তে আস্তে গড়ের গাছের উপরে উঠতেই তাদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় । শাখা নদীর পাশে একটি বড় তেঁতুল গাছ ছিল । সেই গাছটি মনে হচ্ছে কেউ টুনি বাল্ব ও অন্যান্য আলোর সমন্বয়ে সাজিয়ে রেখেছে । তা দেখে সব বন্ধুরা দে – দৌড় । কিন্তু ভরত একাই সেখানে রয়ে গেল । সে মনে মনে ভাবল এর সম্পূর্ণ কারন না জেনে সে বাড়ি যাবেনা । তখন ভরত এপাশে আস্তে করে বসে পড়ল । পরে আস্তে আস্তে মাথা উঠিয়ে দেখে – তেঁতুল গাছের দালে একটি মেয়ে হেলান দিয়ে বসে আছে , এবং চিরুনি দিয়ে চুল আঁচরাচ্ছে । তার যেমন অপূর্ব রুপ তেমনি ছিল সাজ – সজ্জা ।সমস্ত গাছে যেন আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছিলো । মেয়েটি নিজের মনে হাসছে ও চুল আঁচরাচ্ছে । ভরত কিছুক্ষনের জন্য অথর্ব হয়ে গিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছিল । তখন ভাব সুবিধার নয় জেনে  সেও আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে ফিরে আসে । সমস্ত রাত সে ঘুমতে পারেনি । অবশেষে গভীর রাতে ঘুম আসল ।
পরদিন একটু দেরী করে ঘুম থেকে উঠেছে ভরত । মুখে ব্রাশ নিয়ে বাড়ির গলির মরে আসতেই সে দেখে বেশ অনেক লকের আনাগোনা । সবাই মিলে নদীর ঘাটের দিকে ছুটে যাচ্ছে । ভরতও ঘাড়ে গামছা নিয়ে দৌড় দিল । ঘাটের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখে তেঁতুল গাছটার নিচে ঘাটের কাছে একটা মহিলার মৃত দেহ এসে ঠেকেছে । মুখ ঠিক মত চেনা যাচ্ছে না , শরীর ও ক্ষত-বিক্ষত । এবার ভরত বুঝতে পারল রাতের আসল রহস্যটি কি ? আসলে রহস্যটি সে ছাড়া আর কেউ জানতে পারল না । সেতা যেন রহস্যই রয়ে গেল । তারপর পুলিশ কেশ হওয়ার ভয়ে সবাই মিলে বাঁশ দিয়ে মৃতদেহটি জলের স্রতের দিকে থেলে দিল ।
ভরত গল্পটা আমার কাছেই করেছিল এবং সে বলেছিল ঘটনাটি পুরপুরি সত্য কারন সে নিজের চোখে ঘটনাটি দেখেছিল । এইরকম আরো অনেক ঘটনা সে আমাকে বলেছিল , তার মধ্যে একটি আমি তুলে ধরলাম ।

                          -------------x-------------

 বসন্ত কুমার প্রামানিক ।
প্রযত্নে / বিশ্বনাথ প্রামাণিক ,
মাধবনগর , বাঁধরোড , মকদুমপুর
জেলা – মালদা ।
পিন - ৭৩২১০৩
দূরভাষ – ৯৮৩২৫৫৯১৬৬ / ৮৯১৮১৭৪১৭৫       
ই –মেল – basantabharti@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন