**খুচরা পয়সার প্রমোদ **
------আবু আইয়ুব আনসারী
ছোটবেলায় শুনেছি আমার মা অনেক সুন্দরী ছিলো। সিনেমার নায়িকার মতো। তার যৌবনের উচ্ছ্বলতা ও তন্বী রুপ দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে যেতো। আর সেই
স্বভাবদোষ সে বিপথে পা বাড়লো। আমাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে সে অন্য একটি ছেলের হাত ধরে চলে গেলো নতুন সংসারে। মুখে একটু দুধ ও পরে নি। সে অবস্থায় আমাদের ঠাঁই হলো মামা মামীর উঠানে। মামী দশবাড়িতে ঝি এর কাজ করে। আমি একটু বড় হতে না হতেই আমাকে স্কুলে না পাঠিয়ে পরের বাড়িতে ঝি খাটতে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। উদয়াস্ত খাটাখাটুনির পর যখন ঘরে ফিরি তখন ভাবি এমন জীবনের কি লাভ? যেখানে দুবেলা দুমুঠো ভাত যোগার করতেই দিন কেটে যায়। তাও মামি কোনো কোনো দিন ঠিক মত খেতেও ডাকে না। ক্লান্ত দেহে চাদর মুড়ি দিয়ে খাটের নিচে ঘুমিয়ে পড়ি। পরের দিন ভোরে আবার সূর্য মুচকি হেসে বলে সুস্বাগতম। আবার তোকে নতুন করে কাজে লাগতে হবে। হটাৎ দিদা ঢেকে বলে এই নে পাঁচ টাকা। তুই আমার যে কাজটা কাল করে দিয়েছিলি। এই নে তার বকশিস দিলাম। টাকাটা হাতে পেয়ে আনন্দে মাটিতে পা পরে না আমার। ভাবি কি করা যায়? এটাকাটা কিভাবে কাজে লাগাবো, কিভাবে খরচ করবো কিছুই তো জানা নেই। হটাৎ পাড়ার মোড়ে একটা দোকান দেখতে পেলাম, ভাবলাম নিজের জন্য তো কোনোদিন কিছুই ভাবিনি। আজকে একটু নতুন করে বাঁচা যাক। হাত নিশপিশ করতে লাগলো। টাকাটা দোকানদার কে দিয়ে ফেললাম। দোকানদার টা বড্ড ধান্ধাবাজ। টাকাটা নিয়ে নিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে তিনটে ছোট ছোট জেলি লজেন্স দিয়ে বললো এটাই নিয়ে যা। প্যাকেট খুলতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো কার্টুন চিত্র। এগুলোই তো ভাই বোনরা সারাদিন টিভিতে দেখে । কিন্তু আমাকে দেখতে দেয় না। ভাবলাম এটাই তো সেই নতুন করে বাঁচার পথ। প্রতি বাড়িতেই আমি পাই অনেক ধরনের সম্পর্ক। যা রক্তের সম্পর্কের চেয়েও অনেক আপন। ঐ বাড়ি যে দাদু আছে না! ওর চেয়ারের পাশে দাড়ালেই আমার হাতে দশটাকা গুঁজে দেয়। আর আমি সেটা হাতে নিয়েই সটান দে সুট। ঠান্ডায় জবুধুবু শহর। চাদরের তলায় মধ্যবিত্ত মানুষ আরামে দিন কাটাতে ব্যস্ত। আমি দোকানে গিয়ে পুজোর দিনের স্পেশাল চকলেট কেক কিনলাম। দেখলাম রাস্তায় ছোট্ট ছোট্ট দু'টো ভাই বোন বসে আছে। তাদের কাছ দিয়ে যেতেই আমার জামাটা আঁকড়ে ধরে বলে ও দিদি আমাকে একটু খেতে দাওনা? আমরা অনেক দিন ধরে কিছু খাইনি। তখন ওদের কে দেখে আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলাম আজ যদি মামা মামী মাথায় ছাদ না দিতো! তাহলে হয়তো আমাদের ও আশ্রয় হতো ওদেরি মত ফুটপাতে। তারপর বসে কেকটাকে ভাগাভাগি করে ওদের, নিজের হাতে করে খাইয়ে দিলাম। আর ভাবলাম এরকম ছোট্ট ছোট্ট পায়ে খুচরো পয়সায় আনন্দ করে খেয়ে দেয়ে নিজের জন্য ভালো করে বাঁচবো একটু। ওদেরকে বললাম ভালো থাকিস আবার দেখা হবে।
**----------------------**
------আবু আইয়ুব আনসারী
ছোটবেলায় শুনেছি আমার মা অনেক সুন্দরী ছিলো। সিনেমার নায়িকার মতো। তার যৌবনের উচ্ছ্বলতা ও তন্বী রুপ দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে যেতো। আর সেই
স্বভাবদোষ সে বিপথে পা বাড়লো। আমাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে সে অন্য একটি ছেলের হাত ধরে চলে গেলো নতুন সংসারে। মুখে একটু দুধ ও পরে নি। সে অবস্থায় আমাদের ঠাঁই হলো মামা মামীর উঠানে। মামী দশবাড়িতে ঝি এর কাজ করে। আমি একটু বড় হতে না হতেই আমাকে স্কুলে না পাঠিয়ে পরের বাড়িতে ঝি খাটতে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। উদয়াস্ত খাটাখাটুনির পর যখন ঘরে ফিরি তখন ভাবি এমন জীবনের কি লাভ? যেখানে দুবেলা দুমুঠো ভাত যোগার করতেই দিন কেটে যায়। তাও মামি কোনো কোনো দিন ঠিক মত খেতেও ডাকে না। ক্লান্ত দেহে চাদর মুড়ি দিয়ে খাটের নিচে ঘুমিয়ে পড়ি। পরের দিন ভোরে আবার সূর্য মুচকি হেসে বলে সুস্বাগতম। আবার তোকে নতুন করে কাজে লাগতে হবে। হটাৎ দিদা ঢেকে বলে এই নে পাঁচ টাকা। তুই আমার যে কাজটা কাল করে দিয়েছিলি। এই নে তার বকশিস দিলাম। টাকাটা হাতে পেয়ে আনন্দে মাটিতে পা পরে না আমার। ভাবি কি করা যায়? এটাকাটা কিভাবে কাজে লাগাবো, কিভাবে খরচ করবো কিছুই তো জানা নেই। হটাৎ পাড়ার মোড়ে একটা দোকান দেখতে পেলাম, ভাবলাম নিজের জন্য তো কোনোদিন কিছুই ভাবিনি। আজকে একটু নতুন করে বাঁচা যাক। হাত নিশপিশ করতে লাগলো। টাকাটা দোকানদার কে দিয়ে ফেললাম। দোকানদার টা বড্ড ধান্ধাবাজ। টাকাটা নিয়ে নিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে তিনটে ছোট ছোট জেলি লজেন্স দিয়ে বললো এটাই নিয়ে যা। প্যাকেট খুলতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো কার্টুন চিত্র। এগুলোই তো ভাই বোনরা সারাদিন টিভিতে দেখে । কিন্তু আমাকে দেখতে দেয় না। ভাবলাম এটাই তো সেই নতুন করে বাঁচার পথ। প্রতি বাড়িতেই আমি পাই অনেক ধরনের সম্পর্ক। যা রক্তের সম্পর্কের চেয়েও অনেক আপন। ঐ বাড়ি যে দাদু আছে না! ওর চেয়ারের পাশে দাড়ালেই আমার হাতে দশটাকা গুঁজে দেয়। আর আমি সেটা হাতে নিয়েই সটান দে সুট। ঠান্ডায় জবুধুবু শহর। চাদরের তলায় মধ্যবিত্ত মানুষ আরামে দিন কাটাতে ব্যস্ত। আমি দোকানে গিয়ে পুজোর দিনের স্পেশাল চকলেট কেক কিনলাম। দেখলাম রাস্তায় ছোট্ট ছোট্ট দু'টো ভাই বোন বসে আছে। তাদের কাছ দিয়ে যেতেই আমার জামাটা আঁকড়ে ধরে বলে ও দিদি আমাকে একটু খেতে দাওনা? আমরা অনেক দিন ধরে কিছু খাইনি। তখন ওদের কে দেখে আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে গেলো। মনে মনে ভাবলাম আজ যদি মামা মামী মাথায় ছাদ না দিতো! তাহলে হয়তো আমাদের ও আশ্রয় হতো ওদেরি মত ফুটপাতে। তারপর বসে কেকটাকে ভাগাভাগি করে ওদের, নিজের হাতে করে খাইয়ে দিলাম। আর ভাবলাম এরকম ছোট্ট ছোট্ট পায়ে খুচরো পয়সায় আনন্দ করে খেয়ে দেয়ে নিজের জন্য ভালো করে বাঁচবো একটু। ওদেরকে বললাম ভালো থাকিস আবার দেখা হবে।
**----------------------**
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন