১৭.)
বুলেট বাহিনী (রহস্য গল্প)
---------রমলা মুখার্জী
বর্ধিষ্ণু গ্রাম বৈঁচী গ্রাম ।গ্রামের শেষ প্রান্তের উত্তর পাড়াটা বেশ নিরিবিলি ।সেখানেই থাকে বছর বারো-পনেরোর একদল ছেলেমেয়ে ।দলের পান্ডা হল বুলেট।নামেও বুলেট, কাজেও বুলেট ।গোলগাল চেহারা দেখে নাতির নাম আদর করে তার দাদু বুলেট রেথেছিলেন, কিন্তু তা যে নামে-কাজে এমন সত্যি হবে তা কে জানত! যত বড় হতে লাগলো, বুলেটের ডানপিটেমি ততই বাড়তে লাগলো ।পড়াশোনায় তার এতটুকু মন নেই।বাড়ির সবাই কত শিক্ষিত, আর তাদের বাড়ির ছেলে কিনা মুখ্যু হয়ে থাকবে! বাড়ির সবাই তার পেছনেই লেগে আছে, দিনরাত শাসন, তর্জন, কিন্তু কে শোনে কার কথা ।দিনরাত দলবল নিয়ে এপাড়া-ওপাড়া ঘুরে বেড়ানোই বুলেটের কাজ, তবে পরীক্ষায় সে খুব একটা খারাপ ফল করে না, তবে ঐ যে বাড়ির সবাইকার প্রত্যাশা বুলেট সব বিষয়েই পুরোপুরি নম্বর পাবে, হুঁ, বুলেটের ভারি রয়ে গেছে অত নম্বর পেতে ।
হঠাৎ একদিন রাতে বুলেটের পাশের রাড়ির বড় ব্যবসাদার নরেণ বাবুর বাড়ির সর্বস্ব চুরি হয়ে গেল ।এতবড় চুরি হল, অথচ বাড়ির লোকেরা কিছু জানতেই পারেনি, তাদের নাকি ঘুমই ভাঙে নি।বুলেটের কাকা একজন পুলিশ অফিসার, উনি সন্দেহ করছেন যে রাতের খাবারে এমন কিছু মিশিয়েছিল যার ফলেই বাড়ি শুদ্ধ লোক অমন অকাতরে ঘুমিয়ে পড়েছিল, আর এটা জানাশোনা লোকের কাজ বলেই উনি মনে করছেন ।কিন্তু ঠিক কে বা কারা এই কাজটি করেছে কিছুতেই ধরা যাচ্ছে না, জোর তদন্ত চনছে।পান্ডুয়া থানার সব পুলিশ একেবারে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কুড়ি ভরি সোনা আর নগদ আট লক্ষ টাকা চুরির কোনো কিনারাই করতে পারছে না।এদিকে বুলেটের ডানপিটেমি দিন দিন তো বাড়তেই থাকল।তার দলের আরও চারজন সদস্য - টুকুন, তুফান, কঙ্কা আর রূপাইদের জ্বালায় গ্রামবাসী একেবারে অস্হির।লোকের গাছের পেয়ারা,আম,জাম পাড়তে তাদের জুড়ি নেই, তবে সবার বিপদে - আপদে এই পাঁচ ক্ষুদে পালোয়ান সব সময়ে একপায়ে খাড়া, তাই ক্ষুদের দলকে কেউ চটাতে চায় না।চুরির ঘটনার দুদিন বাদে বুলেটের ঠাকুমা বুলেটকে নিয়ে চললেন তাঁর বাপের বাড়ির দেশ হরিপুরে।সেখানে এক সাধুবাবাএসেছেন, তিনি নাকি সাক্ষাত ভগবান, সবাইকার মনস্কামনা পূরণ করে দিচ্ছেন ।বুলেটকে অনিচ্ছাস্বত্তেও যেতে হল সেই 'ইচ্ছাপূরণ' সাধুবাবার কাছে ।গিয়ে সে দেখল সাধুবাবা ও তার চ্যালারা একটা পুরনো হরি-মূর্তির সামনে বসে বির্ বির্ করছে, তবে তা এতটাই অষ্ফুট যে মন্ত্রের 'ম'ও বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু ভক্ত প্রচুর জুটে গেছে ।একজন করে ভক্ত সাধুবাবার কাছে যাচ্ছে, প্রণামী অর্থ জমা দিচ্ছে আর তাদের সমস্যার কথা বলছে।সাধুবাবা তাঁর তৈরি কবচ হরি-মূর্তির পায়ে ঠেকিয়ে মন্ত্র পড়ে দিচ্ছেন আর হাত তুলে আশির্বাদ করছেন।বুলেট লক্ষ্য করল সাধুবাবা সবসময় তাঁর ডান হাতটি হরিনামের ঝোলার ভেতর ভরে রাখছেন, বাম হাত দিয়েই সব কাজকর্ম এমন কি আশির্বাদ পর্যন্তও করছেন।সারাদিনের মধ্যে ভুলেও কখনও ডান হাতটি উনি ঝোলা থেকে বার করেন নি।সাধুবাবার কবচ নিয়ে দাদু ঠাকুমার সঙ্গে বুলেট বাড়ি ফিরল।'ডানপিটে-দমন' কবচে নাতি শান্ত হবে এই আশায় দাদু ঠাকুমা কিছুটা নিশ্চিন্ত হলেও বুলেটের মা, বাবা, জ্যাঠা, কাকার সাধু-সন্ন্যাসীতে মোটেই বিশ্বাস নেই, তাঁরা সাধুবাবা যে ঠকবাজ সে কথাই বার বার বলতে লাগলেন।এসব শুনে বুলেটের সন্দেহটা আরও যেন দানা বাধতে লাগলো ।সাধুবাবার ডান হাতে কি এমন আছে তাকে দেখতেই হবে ।সে তার দলবলকে সাধুবাবার কথা বলল।পরের দিন রবিবার,বুলেট ও তার দলবল চলল হরিপুরের উদ্দেশ্যে ।
হরিপুরে এসে বুলেট বাহিনী দেখল যে মন্দিরের কিছুটা দুরে বিরাট এক পুকুর ।পুকুরের পাড়ে ঘন গাছের জঙ্গল ।বুলেট পুকুরের চারপাশটা ভালো করে ঘুরে তার দলবলকে নিয়ে বড় একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে রইলো ।বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল, কিন্তু কারুর দেখা নেই ।কঙ্কা সব থেকে ছোট, সে মাঝে মধ্যেই কথা বলে ফেলছে আর দলনেতার কাছে ধমকানি খাচ্ছে।শেষে তুফানও তডাক করে একটু লাফাবে বলে যেই মাথা তুলেছে, বুলেট এক গাঁট্টা মেরে ভাগ্যি বসিয়ে দিয়েছে, নতুবা বুলেটের পুরো প্ল্যানটাই আজ ভেস্তে যেতো।এতক্ষণে সাধুবাবা তাঁর এক চ্যালাকে সঙ্গে নিয়ে স্নান করতে এলেন হেলেদুলে ।আর একটু হলেই তুফানকে দেখে ফেলেছিলো আর কি।চ্যালাটি চারপাশটা আগে ভালোভাবে দেখে বলল, "ঠিক আছে ওস্তাদ"।সাধুবাবা তাঁর গেরুয়া কাপড়, হরিনামের ঝোলা, বিরাট জটার পরচুলা খুলে রেখে বেশ ভালো করে সারা শরীরে তৈল মর্দন করতে লাগলেন ।বুলেট অবাক হয়ে দেখল সাধুবাবার ডান হাতের বুড়ো আঙুলটা অস্বাভাবিক বড় আর জটাহীন সাধুবাবাকে তার খুব চেনা চেনা লাগছিল ।আরে এই লোকটাকেই তো বুলেট ক'দিন আগেই তাদের গ্রামে ঘোরাফেরা করতে দেখেছে, টুকুন, রূপাইদেরও দেখিয়েছিল আঙুলটা বড় বলে ।টুকুন বলল, 'বুলেট, আমি এই লোকটাকেই নরেণ বাবুর বাড়ির রাঁধুনী সরমাদির সঙ্গে কথা বলতে দেখেছি।' রূপাই বলল, 'নরেণ বাবুর বাড়ির সর্বক্ষণের কাজের ছেলেটা, জগাদা, ওর সঙ্গেও আমি সাধুবাবাকে কথা বলতে, এদিক-ওদিক ঘুরতে দেখেছি' ।বুলেট সবাইকে চুপ করে বসতে বলল ।সাধুবাবা স্নান করে চলে যাবার পর বুলেট দলবল নিয়ে বেরুল, খুব সন্তর্পনে চারদিক ঘুরে ঘুরে এমন সব তথ্য পেল যার সঙ্গে নরেণ বাবুর বাড়ির চুরির ঘটনার বেশ যোগাযোগ আছে বলেই বুলেটের মনে হল ।বাড়ি ফিরতেই তো বড়দের তুমুল বকুনির ঝড়।সাইক্লোন থামার পর বুলেট সব কথা তার পুলিশকাকুকে জানালো, কাকু তো সব কথা হেসেই উড়িয়ে দিলেন ।কিন্তু অফিসে গিয়ে ফাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে যে তথ্য তিনি আবিষ্কার করলেন তাতে তিনি একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন ।ক'দিন আগেই দাগী চোর ইফরাণ খাঁ জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে, তারও ডান হাতের বুড়ো আঙুলটাও অস্বাভাবিক বড় ।তৎক্ষণাৎ বুলেটদের দলবল আর কিছু পুলিশ সঙ্গে নিয়ে বুলেটের কাকা ছুটলেন হরিপুরের সেই পোড়ো মন্দিরের উদ্দেশ্যে ।এককালে এখানে খুব ধুমধাম করে শ্রীহরির পুজো হত, তাই গ্রামের নাম হরিপুর।এখন সব জঙ্গলে ভরে গেছে, সাপ-খোপের আড্ডা ।মন্দিরের ভারি পাথরের মূর্তির তলায় পাওয়া গেল বেশ কিছু সোনা, কিন্তু টাকা পয়সা বিশেষ কিছু পাওয়া গেল না।বামালশুদ্ধ সাধুবাবা ও তার চ্যালাচামুন্ডাদের ধরে ফেলা হল।বুলেট কাকাকে নিয়ে চলে এলো এবার জঙ্গলের মাঝে একটা খোঁড়া জায়গায় ।সে জায়গাটি আরও গভীর ভাবে খুঁড়ে একটি থলি পাওয়া গেল, যার মধ্যে পলিপ্যাকের মধ্যে বেশ কিছু অর্থ পাওয়া গেল, ঘুমের ওষুধের শিশি পাওয়া গেল ।সরমাকেও গ্রেপ্তার করা হল ।জেরার মুখে সরমা স্বীকার করল সেই ঘুমের ওষুধ খাবারে মিশিয়েছিল ।জগাকেও পুলিশ খুঁজে বের করল ।নরেণ বাবুর বাড়ির ঘর ও আলমারীর চাবির ডুপ্লিকেট বানাতে সে অসাধুবাবাকে সাহায্য করেছিল ।
গ্রামের সবাই বুলেট আর তার দলবলকে ধন্যি ধন্যি করতে লাগলো ।সরকার থেকে বুলেট বাহিনীকে পুরস্কৃত করা হল।যাক বাবা বুলেট বাহিনীর বাড়ির সবাই আর অত বকাবকি না করে ওদের কাজে বেশ উৎসাহ দিতে লাগলো আর বুলেট বাহিনীও নির্দ্বিধায় পুলিশকাকুকে সাহায্য করতে থাকলো।
[রমলা মুখার্জী, বৈঁচী, বিবেকানন্দ পল্লী, হুগলি ৭১২১৩৪]
বুলেট বাহিনী (রহস্য গল্প)
---------রমলা মুখার্জী
বর্ধিষ্ণু গ্রাম বৈঁচী গ্রাম ।গ্রামের শেষ প্রান্তের উত্তর পাড়াটা বেশ নিরিবিলি ।সেখানেই থাকে বছর বারো-পনেরোর একদল ছেলেমেয়ে ।দলের পান্ডা হল বুলেট।নামেও বুলেট, কাজেও বুলেট ।গোলগাল চেহারা দেখে নাতির নাম আদর করে তার দাদু বুলেট রেথেছিলেন, কিন্তু তা যে নামে-কাজে এমন সত্যি হবে তা কে জানত! যত বড় হতে লাগলো, বুলেটের ডানপিটেমি ততই বাড়তে লাগলো ।পড়াশোনায় তার এতটুকু মন নেই।বাড়ির সবাই কত শিক্ষিত, আর তাদের বাড়ির ছেলে কিনা মুখ্যু হয়ে থাকবে! বাড়ির সবাই তার পেছনেই লেগে আছে, দিনরাত শাসন, তর্জন, কিন্তু কে শোনে কার কথা ।দিনরাত দলবল নিয়ে এপাড়া-ওপাড়া ঘুরে বেড়ানোই বুলেটের কাজ, তবে পরীক্ষায় সে খুব একটা খারাপ ফল করে না, তবে ঐ যে বাড়ির সবাইকার প্রত্যাশা বুলেট সব বিষয়েই পুরোপুরি নম্বর পাবে, হুঁ, বুলেটের ভারি রয়ে গেছে অত নম্বর পেতে ।
হঠাৎ একদিন রাতে বুলেটের পাশের রাড়ির বড় ব্যবসাদার নরেণ বাবুর বাড়ির সর্বস্ব চুরি হয়ে গেল ।এতবড় চুরি হল, অথচ বাড়ির লোকেরা কিছু জানতেই পারেনি, তাদের নাকি ঘুমই ভাঙে নি।বুলেটের কাকা একজন পুলিশ অফিসার, উনি সন্দেহ করছেন যে রাতের খাবারে এমন কিছু মিশিয়েছিল যার ফলেই বাড়ি শুদ্ধ লোক অমন অকাতরে ঘুমিয়ে পড়েছিল, আর এটা জানাশোনা লোকের কাজ বলেই উনি মনে করছেন ।কিন্তু ঠিক কে বা কারা এই কাজটি করেছে কিছুতেই ধরা যাচ্ছে না, জোর তদন্ত চনছে।পান্ডুয়া থানার সব পুলিশ একেবারে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কুড়ি ভরি সোনা আর নগদ আট লক্ষ টাকা চুরির কোনো কিনারাই করতে পারছে না।এদিকে বুলেটের ডানপিটেমি দিন দিন তো বাড়তেই থাকল।তার দলের আরও চারজন সদস্য - টুকুন, তুফান, কঙ্কা আর রূপাইদের জ্বালায় গ্রামবাসী একেবারে অস্হির।লোকের গাছের পেয়ারা,আম,জাম পাড়তে তাদের জুড়ি নেই, তবে সবার বিপদে - আপদে এই পাঁচ ক্ষুদে পালোয়ান সব সময়ে একপায়ে খাড়া, তাই ক্ষুদের দলকে কেউ চটাতে চায় না।চুরির ঘটনার দুদিন বাদে বুলেটের ঠাকুমা বুলেটকে নিয়ে চললেন তাঁর বাপের বাড়ির দেশ হরিপুরে।সেখানে এক সাধুবাবাএসেছেন, তিনি নাকি সাক্ষাত ভগবান, সবাইকার মনস্কামনা পূরণ করে দিচ্ছেন ।বুলেটকে অনিচ্ছাস্বত্তেও যেতে হল সেই 'ইচ্ছাপূরণ' সাধুবাবার কাছে ।গিয়ে সে দেখল সাধুবাবা ও তার চ্যালারা একটা পুরনো হরি-মূর্তির সামনে বসে বির্ বির্ করছে, তবে তা এতটাই অষ্ফুট যে মন্ত্রের 'ম'ও বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু ভক্ত প্রচুর জুটে গেছে ।একজন করে ভক্ত সাধুবাবার কাছে যাচ্ছে, প্রণামী অর্থ জমা দিচ্ছে আর তাদের সমস্যার কথা বলছে।সাধুবাবা তাঁর তৈরি কবচ হরি-মূর্তির পায়ে ঠেকিয়ে মন্ত্র পড়ে দিচ্ছেন আর হাত তুলে আশির্বাদ করছেন।বুলেট লক্ষ্য করল সাধুবাবা সবসময় তাঁর ডান হাতটি হরিনামের ঝোলার ভেতর ভরে রাখছেন, বাম হাত দিয়েই সব কাজকর্ম এমন কি আশির্বাদ পর্যন্তও করছেন।সারাদিনের মধ্যে ভুলেও কখনও ডান হাতটি উনি ঝোলা থেকে বার করেন নি।সাধুবাবার কবচ নিয়ে দাদু ঠাকুমার সঙ্গে বুলেট বাড়ি ফিরল।'ডানপিটে-দমন' কবচে নাতি শান্ত হবে এই আশায় দাদু ঠাকুমা কিছুটা নিশ্চিন্ত হলেও বুলেটের মা, বাবা, জ্যাঠা, কাকার সাধু-সন্ন্যাসীতে মোটেই বিশ্বাস নেই, তাঁরা সাধুবাবা যে ঠকবাজ সে কথাই বার বার বলতে লাগলেন।এসব শুনে বুলেটের সন্দেহটা আরও যেন দানা বাধতে লাগলো ।সাধুবাবার ডান হাতে কি এমন আছে তাকে দেখতেই হবে ।সে তার দলবলকে সাধুবাবার কথা বলল।পরের দিন রবিবার,বুলেট ও তার দলবল চলল হরিপুরের উদ্দেশ্যে ।
হরিপুরে এসে বুলেট বাহিনী দেখল যে মন্দিরের কিছুটা দুরে বিরাট এক পুকুর ।পুকুরের পাড়ে ঘন গাছের জঙ্গল ।বুলেট পুকুরের চারপাশটা ভালো করে ঘুরে তার দলবলকে নিয়ে বড় একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে রইলো ।বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল, কিন্তু কারুর দেখা নেই ।কঙ্কা সব থেকে ছোট, সে মাঝে মধ্যেই কথা বলে ফেলছে আর দলনেতার কাছে ধমকানি খাচ্ছে।শেষে তুফানও তডাক করে একটু লাফাবে বলে যেই মাথা তুলেছে, বুলেট এক গাঁট্টা মেরে ভাগ্যি বসিয়ে দিয়েছে, নতুবা বুলেটের পুরো প্ল্যানটাই আজ ভেস্তে যেতো।এতক্ষণে সাধুবাবা তাঁর এক চ্যালাকে সঙ্গে নিয়ে স্নান করতে এলেন হেলেদুলে ।আর একটু হলেই তুফানকে দেখে ফেলেছিলো আর কি।চ্যালাটি চারপাশটা আগে ভালোভাবে দেখে বলল, "ঠিক আছে ওস্তাদ"।সাধুবাবা তাঁর গেরুয়া কাপড়, হরিনামের ঝোলা, বিরাট জটার পরচুলা খুলে রেখে বেশ ভালো করে সারা শরীরে তৈল মর্দন করতে লাগলেন ।বুলেট অবাক হয়ে দেখল সাধুবাবার ডান হাতের বুড়ো আঙুলটা অস্বাভাবিক বড় আর জটাহীন সাধুবাবাকে তার খুব চেনা চেনা লাগছিল ।আরে এই লোকটাকেই তো বুলেট ক'দিন আগেই তাদের গ্রামে ঘোরাফেরা করতে দেখেছে, টুকুন, রূপাইদেরও দেখিয়েছিল আঙুলটা বড় বলে ।টুকুন বলল, 'বুলেট, আমি এই লোকটাকেই নরেণ বাবুর বাড়ির রাঁধুনী সরমাদির সঙ্গে কথা বলতে দেখেছি।' রূপাই বলল, 'নরেণ বাবুর বাড়ির সর্বক্ষণের কাজের ছেলেটা, জগাদা, ওর সঙ্গেও আমি সাধুবাবাকে কথা বলতে, এদিক-ওদিক ঘুরতে দেখেছি' ।বুলেট সবাইকে চুপ করে বসতে বলল ।সাধুবাবা স্নান করে চলে যাবার পর বুলেট দলবল নিয়ে বেরুল, খুব সন্তর্পনে চারদিক ঘুরে ঘুরে এমন সব তথ্য পেল যার সঙ্গে নরেণ বাবুর বাড়ির চুরির ঘটনার বেশ যোগাযোগ আছে বলেই বুলেটের মনে হল ।বাড়ি ফিরতেই তো বড়দের তুমুল বকুনির ঝড়।সাইক্লোন থামার পর বুলেট সব কথা তার পুলিশকাকুকে জানালো, কাকু তো সব কথা হেসেই উড়িয়ে দিলেন ।কিন্তু অফিসে গিয়ে ফাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে যে তথ্য তিনি আবিষ্কার করলেন তাতে তিনি একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন ।ক'দিন আগেই দাগী চোর ইফরাণ খাঁ জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে, তারও ডান হাতের বুড়ো আঙুলটাও অস্বাভাবিক বড় ।তৎক্ষণাৎ বুলেটদের দলবল আর কিছু পুলিশ সঙ্গে নিয়ে বুলেটের কাকা ছুটলেন হরিপুরের সেই পোড়ো মন্দিরের উদ্দেশ্যে ।এককালে এখানে খুব ধুমধাম করে শ্রীহরির পুজো হত, তাই গ্রামের নাম হরিপুর।এখন সব জঙ্গলে ভরে গেছে, সাপ-খোপের আড্ডা ।মন্দিরের ভারি পাথরের মূর্তির তলায় পাওয়া গেল বেশ কিছু সোনা, কিন্তু টাকা পয়সা বিশেষ কিছু পাওয়া গেল না।বামালশুদ্ধ সাধুবাবা ও তার চ্যালাচামুন্ডাদের ধরে ফেলা হল।বুলেট কাকাকে নিয়ে চলে এলো এবার জঙ্গলের মাঝে একটা খোঁড়া জায়গায় ।সে জায়গাটি আরও গভীর ভাবে খুঁড়ে একটি থলি পাওয়া গেল, যার মধ্যে পলিপ্যাকের মধ্যে বেশ কিছু অর্থ পাওয়া গেল, ঘুমের ওষুধের শিশি পাওয়া গেল ।সরমাকেও গ্রেপ্তার করা হল ।জেরার মুখে সরমা স্বীকার করল সেই ঘুমের ওষুধ খাবারে মিশিয়েছিল ।জগাকেও পুলিশ খুঁজে বের করল ।নরেণ বাবুর বাড়ির ঘর ও আলমারীর চাবির ডুপ্লিকেট বানাতে সে অসাধুবাবাকে সাহায্য করেছিল ।
গ্রামের সবাই বুলেট আর তার দলবলকে ধন্যি ধন্যি করতে লাগলো ।সরকার থেকে বুলেট বাহিনীকে পুরস্কৃত করা হল।যাক বাবা বুলেট বাহিনীর বাড়ির সবাই আর অত বকাবকি না করে ওদের কাজে বেশ উৎসাহ দিতে লাগলো আর বুলেট বাহিনীও নির্দ্বিধায় পুলিশকাকুকে সাহায্য করতে থাকলো।
[রমলা মুখার্জী, বৈঁচী, বিবেকানন্দ পল্লী, হুগলি ৭১২১৩৪]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন