গল্প (06)
মিলনসুখ
বিকাশ দাস (বিল্টু )
(11-04-19)
রগচটা স্বভাবটা আর গেলো না তিন্নির ।কথায় কথায় রেগে যাওয়া ।আরে বাবা এটার নাম কি জীবন? সকাল বিকাল সন্ধ্যা নেই, রাত নেই শুধুই কাজ আর কাজ ।নিজের আর কি আলাদা জগৎ থাকতে পারে না? আর পাঁচ সাতটা মেয়ের মতোই ওরও তো সাধ জাগে চুল টা ভালো করে বেঁধে, ঠোঁটে একটা হালকা লিপস্টিক মেখে বেরিয়ে আসা কোথা থেকে ।
এই তো সেদিনও না ভবেশ আর তার স্ত্রীকে দেখলাম কত সুন্দর ওরা সিনেমা দেখে ফিরছে ।সত্যি জীবনটা কত সুন্দর ওদের ।আর আমার বেলাই ঈশ্বর শুধুই ছক বাঁধা গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছেন ।
তিন্নি বিবাহিতা, বেশ কিছুদিন হলো স্বামীর সাথে বনিবনা নেই।তাই শহরের পাশেই ফ্ল্যাটে থাকে একা। একটা অফিসে কাজ নিয়েছে ।তাই ছুটি খুব কম মেলে ।মনটাও তাই রগচটা ।
ফোনটা বেজে উঠলো তিন্নির --
"আবারও বিরক্ত, আর ভালো লাগেনা ।"
হ্যা ,হ্যালো, কে? তিন্নি কিছুটা কর্কশ হয়েই বললো ।
অনেকক্ষণ চুপ। ও পাশ থেকে কোনো সাড়া নেই ।তিন্নি রেগে ফোনটা কেটে দেয়। এই ফাঁকে রাগে গজগজ করে বলতে থাকে ,"মানুষও পারে যতসব ।কথা তো বল বাবা! তা না, চুপ ।ভনিতা পেয়েছে আমায় ।সার্কাস পেয়েছে ।"
বাথরুম থেকে ফিরে এসে দেখলো স্ক্রিনের আলোটা জ্বলে আছে.... মেসেজ ।সুমনের মেসেজ ।হ্যা সুমনের সাথেই তন্নীর বিয়ে হয়েছিল ।সুমন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার কিন্তু হঠাৎ তাদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয় দুজন দুজকে সন্দেহ কড়া শুরু করলো। আদতে দুজনের মধ্যেই তেমন কিছুই হয়নি ,ইচ্ছে করলেই মেঠাতে পারতো। কিন্তু কে কার কাছে ছোটো হবে ?
মেসেজটা এক ঝলক দেখে তন্নী আবার রেগে গজগজ করে বলতে লাগলো," ইস !কি সাধ বাবুর মেসেজ করেছেন,উনি ক্ষমা চাইছেন। যত সব! না বাবা ।আর না !"
"উত্তর দাও প্লিজ! "
কিছুক্ষন পরে আরও মেসেজ
"না আর পাড়া যায় না.. কি করবো উত্তর দিবো? "তিন্নি ভাবতে লাগলো ।
না থাক, বরং অফ থাকুক ফোন ।
কয়েকদিন হলো আর যোগাযোগ নেই ।সুমন খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। বাধ্য হয়ে তন্নীর অফিসে গিয়ে খবর নিলাম।
" তন্নী তো অফিস আসছেনা দাদা ।"
" তন্নীর ঠিকানাটা দিন তো "-তন্নীর অফিসে গিয়ে ঠিকানাটা সংগ্রহ করলো সুমন ।
বিকেলেই বেরিয়ে পড়লো তন্নীর ঠিকানায় ।
ঘরের কলিং বেল বেজে উঠলো ।আবারও বেল দিল সুমন ।
"বাবু কাকে চান?"
তন্নীর ফাইফরমাশ খাটার জন্য বয়স্ক একটা লোক সুমনকে জিজ্ঞাসা করলো ।
"আমি তন্নীর ---"
" ও বুঝেছি ।আসলে তন্নী ম্যাডাম সব বলেছেন ।
একটা কথা বলছি বেয়াদপি মনে করবেন না ।
আসলে উপরে যতটা খারাপ ও কিন্ত ততটা নয় ,ভিতের ভিতরে ঘুমরে মরে ।জানেন সেদিনও পায়েস রেঁধে খুব কেঁদেছিলো ।আর জানেন আপনাদের বিবাহবার্ষিকী পালন করলো ,কি দিয়ে জানেন? আপনার ফোটো দিয়ে --"
সুমনের চোখ জলে ভরে গেল ।
"কোথায় তন্নী?"
কদিন থেকে ম্যাডাম খুব অসুস্থ ,আর শুনলাম বুকের ব্যথাটাও খুব বেড়েছে সাথে খুব কাশি ।শুয়ে আছেন ভিতরে ।
"আমি গেলে খারাপ পাবেনাতো? "
" এই ভোলা কার সাথে কথা বলছিস রে? "..উপর থেকেতন্নীর গলা ।
--না ম্যাডাম ।
হু
বলতে বলতে সামনের দিকে আসল তন্নি ।এ যে সুমন! প্ৰথমে খুব রাগ হয়েছিল পরে ভাবলো বেশ তো ভালোই হলো, আমি যে আর বাচবনা সেটা বলেই যাই....
তিন্নির চোখ জলে টলমল করছে ।কি করবে না করবে কিছুই ভাবতে পারছিলো ।না খুব কষ্ট করে বললো
"এসো ভিতরে ।"
তন্নী --
আমি সব শুনেছি ভোলার কাছে ।সব ভুল আমার। আমায় ক্ষমা করে দিও প্লিজ। আর ভুল বুঝবনা প্রমিজ ,খুব কষ্ট হয়েছে জানো আমারও। দম বন্ধ হয়ে আসছিলো ,প্লিজ আর একবার আপন করে নাও --
খুব দেরি হয়ে গেছে মনে হয় সুমন ।আমার যে খুব অসুখ...
কিচ্ছু হবে না তোমার ।আমি আছি না ?
তিন্নিকে জড়িয়ে ধরে সুমন অঝোরে কাঁদতে লাগলো ।
এই সুখের স্মৃতির ভাগিদার হয়ে ভোলারও চোখে জল এসে গেলো ।
##@c@biltu@##
মিলনসুখ
বিকাশ দাস (বিল্টু )
(11-04-19)
রগচটা স্বভাবটা আর গেলো না তিন্নির ।কথায় কথায় রেগে যাওয়া ।আরে বাবা এটার নাম কি জীবন? সকাল বিকাল সন্ধ্যা নেই, রাত নেই শুধুই কাজ আর কাজ ।নিজের আর কি আলাদা জগৎ থাকতে পারে না? আর পাঁচ সাতটা মেয়ের মতোই ওরও তো সাধ জাগে চুল টা ভালো করে বেঁধে, ঠোঁটে একটা হালকা লিপস্টিক মেখে বেরিয়ে আসা কোথা থেকে ।
এই তো সেদিনও না ভবেশ আর তার স্ত্রীকে দেখলাম কত সুন্দর ওরা সিনেমা দেখে ফিরছে ।সত্যি জীবনটা কত সুন্দর ওদের ।আর আমার বেলাই ঈশ্বর শুধুই ছক বাঁধা গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছেন ।
তিন্নি বিবাহিতা, বেশ কিছুদিন হলো স্বামীর সাথে বনিবনা নেই।তাই শহরের পাশেই ফ্ল্যাটে থাকে একা। একটা অফিসে কাজ নিয়েছে ।তাই ছুটি খুব কম মেলে ।মনটাও তাই রগচটা ।
ফোনটা বেজে উঠলো তিন্নির --
"আবারও বিরক্ত, আর ভালো লাগেনা ।"
হ্যা ,হ্যালো, কে? তিন্নি কিছুটা কর্কশ হয়েই বললো ।
অনেকক্ষণ চুপ। ও পাশ থেকে কোনো সাড়া নেই ।তিন্নি রেগে ফোনটা কেটে দেয়। এই ফাঁকে রাগে গজগজ করে বলতে থাকে ,"মানুষও পারে যতসব ।কথা তো বল বাবা! তা না, চুপ ।ভনিতা পেয়েছে আমায় ।সার্কাস পেয়েছে ।"
বাথরুম থেকে ফিরে এসে দেখলো স্ক্রিনের আলোটা জ্বলে আছে.... মেসেজ ।সুমনের মেসেজ ।হ্যা সুমনের সাথেই তন্নীর বিয়ে হয়েছিল ।সুমন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার কিন্তু হঠাৎ তাদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয় দুজন দুজকে সন্দেহ কড়া শুরু করলো। আদতে দুজনের মধ্যেই তেমন কিছুই হয়নি ,ইচ্ছে করলেই মেঠাতে পারতো। কিন্তু কে কার কাছে ছোটো হবে ?
মেসেজটা এক ঝলক দেখে তন্নী আবার রেগে গজগজ করে বলতে লাগলো," ইস !কি সাধ বাবুর মেসেজ করেছেন,উনি ক্ষমা চাইছেন। যত সব! না বাবা ।আর না !"
"উত্তর দাও প্লিজ! "
কিছুক্ষন পরে আরও মেসেজ
"না আর পাড়া যায় না.. কি করবো উত্তর দিবো? "তিন্নি ভাবতে লাগলো ।
না থাক, বরং অফ থাকুক ফোন ।
কয়েকদিন হলো আর যোগাযোগ নেই ।সুমন খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। বাধ্য হয়ে তন্নীর অফিসে গিয়ে খবর নিলাম।
" তন্নী তো অফিস আসছেনা দাদা ।"
" তন্নীর ঠিকানাটা দিন তো "-তন্নীর অফিসে গিয়ে ঠিকানাটা সংগ্রহ করলো সুমন ।
বিকেলেই বেরিয়ে পড়লো তন্নীর ঠিকানায় ।
ঘরের কলিং বেল বেজে উঠলো ।আবারও বেল দিল সুমন ।
"বাবু কাকে চান?"
তন্নীর ফাইফরমাশ খাটার জন্য বয়স্ক একটা লোক সুমনকে জিজ্ঞাসা করলো ।
"আমি তন্নীর ---"
" ও বুঝেছি ।আসলে তন্নী ম্যাডাম সব বলেছেন ।
একটা কথা বলছি বেয়াদপি মনে করবেন না ।
আসলে উপরে যতটা খারাপ ও কিন্ত ততটা নয় ,ভিতের ভিতরে ঘুমরে মরে ।জানেন সেদিনও পায়েস রেঁধে খুব কেঁদেছিলো ।আর জানেন আপনাদের বিবাহবার্ষিকী পালন করলো ,কি দিয়ে জানেন? আপনার ফোটো দিয়ে --"
সুমনের চোখ জলে ভরে গেল ।
"কোথায় তন্নী?"
কদিন থেকে ম্যাডাম খুব অসুস্থ ,আর শুনলাম বুকের ব্যথাটাও খুব বেড়েছে সাথে খুব কাশি ।শুয়ে আছেন ভিতরে ।
"আমি গেলে খারাপ পাবেনাতো? "
" এই ভোলা কার সাথে কথা বলছিস রে? "..উপর থেকেতন্নীর গলা ।
--না ম্যাডাম ।
হু
বলতে বলতে সামনের দিকে আসল তন্নি ।এ যে সুমন! প্ৰথমে খুব রাগ হয়েছিল পরে ভাবলো বেশ তো ভালোই হলো, আমি যে আর বাচবনা সেটা বলেই যাই....
তিন্নির চোখ জলে টলমল করছে ।কি করবে না করবে কিছুই ভাবতে পারছিলো ।না খুব কষ্ট করে বললো
"এসো ভিতরে ।"
তন্নী --
আমি সব শুনেছি ভোলার কাছে ।সব ভুল আমার। আমায় ক্ষমা করে দিও প্লিজ। আর ভুল বুঝবনা প্রমিজ ,খুব কষ্ট হয়েছে জানো আমারও। দম বন্ধ হয়ে আসছিলো ,প্লিজ আর একবার আপন করে নাও --
খুব দেরি হয়ে গেছে মনে হয় সুমন ।আমার যে খুব অসুখ...
কিচ্ছু হবে না তোমার ।আমি আছি না ?
তিন্নিকে জড়িয়ে ধরে সুমন অঝোরে কাঁদতে লাগলো ।
এই সুখের স্মৃতির ভাগিদার হয়ে ভোলারও চোখে জল এসে গেলো ।
##@c@biltu@##
সত্যি সুন্দর
উত্তরমুছুনঅসাধারণ, খুব সুন্দর
উত্তরমুছুন